Header Ads Widget

সূরা আর রাদ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল আর রাদ বাংলা তরজমা,সূরা আর রাদ বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল আর রাদ, সকল আমল সূরা আল আর রাদ,

 

১৩ . আর রা'দ - ( الرّعد ) | বজ্রপাত

মাদানী, মোট আয়াতঃ ৪৩


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


المر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ ۗ وَالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আলিফ-লাফ-মীম-রা। ১ এগুলো (আল্লাহর) কিতাবের আয়াত, (হে নবী!) তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা-কিছু নাযিল করা হয়েছে, তা সত্য কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনছে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলো কিতাবের আয়াত। যা কিছু আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আলিফ্-লাম-মীম্-রা, এইগুলি কুরআনের আয়াত, যা তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাই সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে ঈমান আনে না।


তাফসীরঃ

১. সূরা বাকারার শুরুতে বলা হয়েছে যে, এগুলোকে ‘আল-হুরূফুল মুকাত্তা‘আত’ বলে। এর প্রকৃত মর্ম আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ জানে না।



اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশমণ্ডলীকে উঁচুতে স্থাপন করেছেন এমন স্তম্ভ ছাড়া, যা তোমরা দেখতে পাবে। ২ অতঃপর তিনি আরশে ‘ইসতিওয়া’ গ্রহণ করেন। ৩ এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। ৪ প্রতিটি বস্তু এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি এসব নিদর্শন সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার যে, (একদিন) তোমাদেরকে স্বীয় প্রতিপালকের সঙ্গে মিলিত হতে হবে। ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত-তোমরা এটা দেখছ। এরপর তিনি র্আশে সমাসীন হলেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মাধীন করলেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।


তাফসীরঃ

২. অর্থাৎ, আকাশমণ্ডলী তোমাদের চোখে দেখার মত কোন স্তম্ভের উপর স্থাপিত নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার শক্তিরই সহায়তায় তা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। আয়াতের এ ব্যাখ্যা হযরত মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে (রূহুল মাআনী, ১৩ খণ্ড, ১১০ পৃষ্ঠা)।


৩. ‘ইসতিওয়া’ (استواء)-এর আভিধানিক অর্থ সোজা হওয়া, আয়ত্তাধীন করা ও আসীন হওয়া। আল্লাহ তাআলা কোনও সৃষ্টির মত নয়। তাই তাঁর ‘ইসতিওয়া’-ও সৃষ্টির মত হতে পারে না। এর প্রকৃত স্বরূপ আল্লাহ তাআলা ছাড়া কেউ জানে না। তাই আমরা শব্দটির তরজমা না করে হুবহু শব্দ রেখে দিয়েছি। কেননা আমাদের জন্য এতটুকু ঈমানই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা আরশে তাঁর শান মোতাবেক ‘ইসতিওয়া’ গ্রহণ করেছেন। এর বেশি তত্ত্বানুসন্ধানের পেছনে পড়ার কোনও দরকার নেই। আমাদের সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা তা আয়ত্ত করা সম্ভবও নয়।


৪. ইশারা করা হয়েছে যে, এই চাঁদ-সুরুজ উদ্দেশ্যবিহীনভাবে পরিভ্রমণ করছে না। এদের উপর বিশেষ কাজ ন্যস্ত আছে, যা এরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিতভাবে অবিরত পালন করে যাচ্ছে। এদের সময়সূচির ভেতর এক মুহূর্তের জন্যও কোন ব্যত্যয় ঘটে না। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এদের উপর সারা জাহানের সেবা ন্যস্ত রয়েছে। কাজেই একজন বোধ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চিন্তা করা উচিত এত বিশালাকার সৃষ্টি তার সেবায় কেন নিয়োজিত রয়েছে? যদি তার নিজের উপর কোন বড় কাজ ন্যস্ত না থাকে, তবে চাঁদ-সুরুজের মত এত বড় সৃষ্টির কি ঠেকা পড়ল যে, তারা স্বতন্ত্রভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকবে?


৫. অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের অন্তরে আখেরাতের ইয়াকীন সৃষ্টি করে নাও। আর তার পদ্ধতি এই যে, তোমরা গভীরভাবে চিন্তা কর, যেই সত্তা এই মহা বিস্ময়কর জগত সৃষ্টি করেছেন, তিনি মানুষের মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় জীবিত করতে কেন সক্ষম হবেন না? সেটা কি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি অপেক্ষা সহজ কাজ নয়? তাছাড়া তিনি অত্যন্ত হিকমতওয়ালা ও ন্যায়বিচারক। তাঁর হিকমত ও ইনসাফের প্রতি লক্ষ্য করলে এটা হতেই পারে না যে, তিনি ভালো ও মন্দ এবং জালেম ও মজলুম উভয়ের সাথে একই রকম আচরণ করবেন। তিনি যদি এই দুনিয়ার পর এমন কোনও জগত সৃষ্টি না করে থাকেন, যেখানে ভালো লোকদেরকে তাদের ভালো কাজের পুরস্কার ও মন্দ লোকদেরকে তাদের মন্দ কাজের শাস্তি দেওয়া হবে, তবে ভালো-মন্দের মধ্যে তো তার আচরণে কোনও পার্থক্য থাকে না। সুতরাং প্রমাণ হয় যে, আখেরাত অবশ্যই আছে।



وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, তাতে পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রত্যেক প্রকার ফল জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। ৬ তিনি দিনকে রাতের চাদরে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে সেই সকল লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই ভুমন্ডলকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড় পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক ফলের মধ্যে দু’দু প্রকার সৃষ্টি করে রেখেছেন। তিনি দিনকে রাত্রি দ্বারা আবৃত করেন। এতে তাদের জন্যে নিদর্শণ রয়েছে, যারা চিন্তা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং এতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। তিনি দিবসকে রাত্রি দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে।


তাফসীরঃ

৬. কুরআন মাজীদের এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যাচ্ছে উদ্ভিদের ভেতরও স্ত্রী-পুরুষের যুগল আছে। এক কালে এ তথ্য মানুষের জানা ছিল না যে, স্ত্রী-পুরুষের এই যুগলীয় ব্যবস্থা প্রত্যেক গুল্ম ও বৃক্ষের মধ্যেও কার্যকর। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের সামনে এ রহস্য উন্মোচিত করেছে।



وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর পৃথিবীতে আছে বিভিন্ন ভূখণ্ড, যা পাশাপাশি অবস্থিত। ৭ আর আছে আঙ্গুরের বাগান শস্য ক্ষেত্র ও খেজুর গাছ, যার মধ্যে কতক একাধিক কা-বিশিষ্ট এবং কতক এক কা-বিশিষ্ট। সব একই পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয়। আমি স্বাদে তার কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। ৮ নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে সেই সকল লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যমিনে বিভিন্ন শস্য ক্ষেত্র রয়েছে-একটি অপরটির সাথে সংলগ্ন এবং আঙ্গুরের বাগান আছে আর শস্য ও খজ্জুর রয়েছে-একটির মূল অপরটির সাথে মিলিত এবং কতক মিলিত নয়। এগুলো কে একই পানি দ্বারা সেচ করা হয়। আর আমি স্বাদে একটিকে অপরটির চাইতে উৎকৃষ্টতর করে দেই। এগুলোর মধ্যে নিদর্শণ রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর-সংলগ্ন ভ‚খণ্ড, এতে আছে দ্রাক্ষা কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শিরবিশিষ্ট বা এক শিরবিশিষ্ট খর্জুর-বৃক্ষ সিঞ্চিত একই পানিতে, এবং ফল হিসেবে এদের কতককে কতকের ওপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি। অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে এতে রয়েছে নিদর্শন।


তাফসীরঃ

৭. অর্থাৎ, কোন গাছে বেশি ফল ধরে কোন গাছে কম এবং কোন গাছের ফল বেশি স্বাদ এবং কোন গাছের ফল ততটা স্বাদের নয়।


৮. অর্থাৎ, সংলগ্ন ও পাশাপাশি হওয়া সত্ত্বেও গুণ ও বৈশিষ্ট্যে প্রত্যেক ভূখণ্ড অন্যটি থেকে স্বতন্ত্র হয়ে থাকে। দেখা যায়, জমির একটি অংশ উর্বর ও চাষাবাদের উপযোগী, কিন্তু অপর একটি অংশ তার একেবারে সংলগ্ন হওয়া সত্ত্বেও চাষাবাদযোগ্য নয়। এক জমি থেকে মিষ্টি পানি বের হয়, অথচ পাশাপাশি হওয়া সত্ত্বেও অন্য জমি থেকে বের হয় লোনা পানি। এমনিভাবে দেখা যায়, পাশাপাশি অবস্থিত দুই জমির একটি নরম, কিন্তু অন্যটি প্রস্তরময়।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ ) #file=(Al Quran Bangla) #icon=(download) #size=(25) #color=(#d10404) #info=(PDF Download)



۞ وَإِن تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَإِذَا كُنَّا تُرَابًا أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۗ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(ওই কাফেরদের উপর) যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে তাদের এ উক্তি (বাস্তবিকই) বিস্ময়ের ব্যাপার যে, আমরা মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি সত্যি সত্যিই নতুনভাবে জীবন লাভ করব? ৯ এরাই তারা, যারা নিজেদের প্রতিপালক (এর শক্তি)কে অস্বীকার করে এবং এরাই তারা, যাদের গলদেশে লাগানো রয়েছে বেড়ি। ১০ তারা জাহান্নামবাসী, যাতে তারা সর্বদা থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি আপনি বিস্ময়ের বিষয় চান, তবে তাদের একথা বিস্ময়কর যে, আমরা যখন মাটি হয়ে যাব, তখনও কি নতুন ভাবে সৃজিত হব? এরাই স্বীয় পালনকর্তার সত্তায় অবিশ্বাসী হয়ে গেছে, এদের গর্দানেই লৌহ-শৃংখল পড়বে এবং এরাই দোযখী এরা তাতে চিরকাল থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে বিস্ময়ের বিষয় এদের কথা-‘মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নূতন জীবন লাভ করব ?’ এরাই এদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে এবং এদেরই গলদেশে থাকবে লৌহশৃ´খল। এরাই দোযখবাসী ও সেখানে এরা স্থায়ী হবে।


তাফসীরঃ

৯. কারও গলায় বেড়ি পরানো থাকলে তার পক্ষে ডানে-বামে ফিরে তাকানো সম্ভব হয় না। ঠিক সে রকমই এসব কাফের সত্য দর্শন ও সত্যের প্রতি ধ্যান-মন দেওয়ার তাওফীক থেকে বঞ্চিত (রূহুল মাআনী)। তাছাড়া গলায় বেড়ি থাকা মূলত দাসত্বের আলামত। ইসলাম-পূর্ব সমাজে দাসদের প্রতি এ রকম আচরণ করা হত যে, তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে রাখা হত। সুতরাং আয়াতের ইশারা এদিকেও হতে পারে যে, ওই সব কাফেরের গলদেশে খেয়াল-খুশী ও ইন্দ্রিয়পরবশতা এবং শয়তানের দাসত্বের বেড়ি পরানো রয়েছে। এ কারণেই তারা নিরপেক্ষভাবে কোন কিছু চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা রাখে না। উপরিউক্ত তাফসীর একদল মুফাসসিরের। অর্থাৎ, তাদের মতে এ বেড়ির সম্পর্ক দুনিয়ার জীবনের সাথে। অপর একদল মুফাসসিরের মতে এ বাক্যের অর্থ হল, আখেরাতে তাদের গলায় বেড়ি লাগিয়ে দেওয়া হবে।


১০. অর্থাৎ, মৃতদেরকে জীবন দান করা আল্লাহ তাআলার পক্ষে আশ্চর্যের কোন বিষয় নয়। কেননা যেই সত্তা এই মহাবিশ্বকে নাস্তি থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করতে পারেন, তার জন্য মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা কঠিন কিসের? বরং বিস্ময়ের ব্যাপার তো এই যে, এসব কাফের চোখের সামনে আল্লাহ তাআলার অপার ক্ষমতার অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পাচ্ছে, তা সত্ত্বেও তারা পুনর্বার সৃষ্টি করাকে আল্লাহ তাআলার ক্ষমতার বাইরে মনে করে।



وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ ۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلْمِهِمْ ۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা ভালো অবস্থার (কাল শেষ হওয়ার) আগে মন্দ অবস্থার জন্য তাড়াহুড়া করছে। ১১ অথচ তাদের পূর্বে এরূপ লাঞ্ছনাকর শাস্তির বহু ঘটনা গত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের সীমালংঘন সত্ত্বেও তাদের প্রতি তোমার প্রতিপালক ক্ষমাপ্রবণ এবং এটাও সত্য যে, তার শাস্তি বড় কঠিন। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরা আপনার কাছে মঙ্গলের পরিবর্তে দ্রুত অমঙ্গল কামনা করে। তাদের পূর্বে অনুরূপ অনেক শাস্তিপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী অতিক্রান্ত হয়েছে। আপনার পালনকর্তা মানুষকে তাদের অন্যায় সত্বেও ক্ষমা করেন এবং আপনার পালনকর্তা কঠিন শাস্তিদাতা ও বটে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মঙ্গলের পূর্বে এরা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, যদিও এদের পূর্বে এটার বহু দৃষ্টান্ত গত হয়েছে। মানুষের সীমালংঘন সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে তো কঠোর।


তাফসীরঃ

১১. অর্থাৎ, মানুষের দ্বারা তাদের অজ্ঞাতসারে যেসব ছোট ছোট গুনাহ হয়ে যায় কিংবা বড় গুনাহ হয়ে গেলেও তারপর সে তাওবা করে নেয়, আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় তা ক্ষমা করে দেন। সীমালংঘন দ্বারা এসব গুনাহ বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কুফর, শিরক এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে জেদ ও হঠকারিতাপূর্ণ আচরণের ব্যাপারটা এমন যে, এর জন্য আল্লাহর তাআলার আযাব অতি কঠিন। কাজেই আল্লাহ তাআলা অতি ক্ষমাশীল একথা চিন্তা করে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া উচিত নয়। ভাবা উচিত নয় যে, তিনি ঢালাওভাবে সব গুনাহই অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন।


১২. মক্কার কাফেরগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাবী জানাত যে, আপনার কথা অনুযায়ী আমাদের দীন যদি ভ্রান্ত হয়, তবে আল্লাহ তাআলাকে বলুন, তিনি যেন আমাদের উপর আযাব নাযিল করেন। এ আয়াতে তাদের সেই বেহুদা দাবীর প্রতি ইশারা করা হয়েছে।



وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে তারা বলে, আচ্ছা! তার উপর (অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর) তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন মুজিযা কেন অবতীর্ণ করা হল না? ১৩ (হে নবী!) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, তুমি তো কেবল (বিপদ সম্পর্কে) সতর্ককারী। প্রত্যেক জাতির জন্যই হিদায়াতের পথ দেখানোর কেউ না কেউ ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা বলেঃ তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? আপনার কাজ তো ভয় প্রদর্শন করাই এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন ?’ তুমি তো কেবল সতর্ককারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে আছে পথপ্রদর্শক।


তাফসীরঃ

১৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বহু মুজিযাই দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু মক্কার কাফেরগণ তাঁর কাছে নিত্য-নতুন মুজিযার দাবী জানাত। তাদের কোন দাবী পূরণ না হলে তখন তারা যে মন্তব্য করত, এ আয়াতে সেটাই বর্ণিত হয়েছে। তাদের মন্তব্যের জবাবে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো নবী। তিনি আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে কোন মুজিযা দেখাতে পারেন না। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক জাতির কাছেই এরূপ নবী পাঠিয়েছেন। তাদের সকলের অবস্থা এ রকমই ছিল।



اللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ بِمِقْدَارٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

প্রত্যেক নারী যে গর্ভ ধারণ করে আল্লাহ তা জানেন এবং মাতৃগর্ভে যা কমে ও বাড়ে তাও ১৪ এবং তার নিকট প্রত্যেক জিনিসের এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। ১৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ জানেন প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা সঙ্কুচিত ও বর্ধিত হয়। এবং তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুরই একটা পরিমাণ রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ্ তা জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে।


তাফসীরঃ

১৪. অর্থাৎ নিজ সর্বব্যাপী জ্ঞান অনুযায়ী তিনি প্রত্যেকটি জিনিসকে প্রতিটি অবস্থায় এক নির্দিষ্ট পরিমাণ ও পরিমাপ অনুযায়ী রাখেন। এমনিভাবে তিনি নবীগণের নবুওয়াতের সমর্থনে যেসব নিদর্শন অবতীর্ণ করেছেন তাতেও পরিমাণ-পরিমাপের দিকে লক্ষ রেখেছেন। মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও যোগ্যতা অনুসারে যে পরিমাণ নিদর্শন দেখানো দরকার ছিল, ঠিক সেই পরিমাণেই তা দেখানো হয়েছে ও দেখানো হয়ে থাকে। কাজেই এ ব্যাপারে নিজেদের পক্ষ হতে কোন নিদর্শনের ফরমায়েশ করার অবকাশ নেই। -অনুবাদক


১৫. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা জানেন কোন মায়ের পেটে কি রকম বাচ্চা আছে ছেলে না মেয়ে, পূর্ণাঙ্গ না অপূর্ণ, ভালো না মন্দ এবং মাতৃগর্ভে ভ্রুণ বাড়ছে না কমছে।



عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান সব কিছুই জানেন। তাঁর সত্তা অনেক বড়, তাঁর মর্যাদা অতি উচ্চ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি সকল গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় অবগত, মহোত্তম, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।


১০


سَوَاءٌ مِّنكُم مَّنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَن جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের মধ্যে কেউ চুপিসারে কথা বলুক বা উচ্চস্বরে, কেউ রাতের বেলা আত্মগোপন করুক বা দিনের বেলা চলাফেরা করুক, তারা সকলে (আল্লাহর জ্ঞানে) সমান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের মধ্যে কেউ গোপনে কথা বলুক বা তা সশব্দে প্রকাশ করুক, রাতের অন্ধকারে সে আত্নগোপন করুক বা প্রকাশ্য দিবালোকে বিচরণ করুক, সবাই তাঁর নিকট সমান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে বা যে তা প্রকাশ করে, রাত্রিতে যে আত্মগোপন করে এবং দিবসে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবে আল্লাহ্ র জ্ঞানগোচর।


১১


لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

প্রত্যেকের সামনে পিছনে এমন প্রহরী (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, যারা আল্লাহর নির্দেশে পালাক্রমে তার হেফাজত করে। ১৬ জেনে রেখ, আল্লাহ কোনও জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। ১৭ আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর কোন বিপদ আনার ইচ্ছা করেন, তখন তা রদ করা সম্ভব নয়। আর তিনি ছাড়া তাদের কোন রক্ষাকর্তা থাকতে পারে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাঁর পক্ষ থেকে অনুসরণকারী রয়েছে তাদের অগ্রে এবং পশ্চাতে, আল্লাহর নির্দেশে তারা ওদের হেফাযত করে। আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। আল্লাহ যখন কোন জাতির উপর বিপদ চান, তখন তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের জন্যে তার সামনে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে; এরা আল্লাহ্ র আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। এবং আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না এরা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। কোন সম্প্রদায় সম্পর্কে যদি আল্লাহ্ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তবে তা রদ হওয়ার নয় এবং তিনি ব্যতীত এদের কোন অভিভাবক নেই।


তাফসীরঃ

১৬. মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ফেরেশতা নিয়োজিত আছে বলে কারও এই ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারত যে, আল্লাহ তাআলা যখন হেফাজতের এই ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তখন আর এ নিয়ে মানুষের চিন্তা করার কোন দরকার নেই। সে নিশ্চিন্তে সব কাজ করতে পারে। এমনকি গুনাহ ও সওয়াবেরও বিচার করার প্রয়োজন নেই। কেননা ফেরেশতারাই সকল ক্ষেত্রে রক্ষা করবে। আয়াতের এ অংশে সেই ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এমনিতে আল্লাহ তাআলা কোন জাতির ভালো অবস্থাকে মন্দ অবস্থা দ্বারা বদলে দেন না, কিন্তু তারা নিজেরাই যখন নাফরমানী করতে বদ্ধপরিকর হয়ে যায় এবং নিজেদের আমল-আখলাক পরিবর্তন করে ফেলে তখন তাদের উপর আল্লাহ তাআলার আযাব এসে যায়। সে আযাব আর কেউ রদ করতে পারে না। সুতরাং যে সকল ফেরেশতা হেফাজতের কাজে নিয়োজিত আছে, এরূপ ক্ষেত্রে তারাও কোন কাজে আসে না।


১৭. ‘প্রহরী’ দ্বারা ফেরেশতা বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তিনি প্রত্যেক ব্যক্তির হেফাজতের জন্য কিছু ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিয়েছেন। তারা পালাক্রমে এ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কুরআন মাজীদে এর জন্য مُعَقِّبٰتٌ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ ‘পালাক্রমে আগমনকারী’। বুখারী শরীফের এক হাদীসে এর ব্যাখ্যা এ রকম এসেছে যে, ফেরেশতাদের একটি দলকে দিনের বেলা মানুষের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে এবং অপর একটি দল রাতের বেলা তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে। আবু দাঊদের এক বর্ণনায় হযরত আলী (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এসব ফেরেশতা বিভিন্ন রকমের বিপদাপদ থেকে মানুষকে হেফাজত করে। অবশ্য কাউকে যদি কোন মুসিবতে ফেলা আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ফেরেশতাগণ তার থেকে দূরে সরে যায় (বিস্তারিত দ্র. মাআরিফুল কুরআন)।


১২


هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে বিজলীর চমক দেখান, যা দ্বারা তোমাদের (বজ্রপাতের) ভীতি দেখা দেয় এবং (বৃষ্টির) আশাও সঞ্চার হয় এবং তিনিই পানিবাহী মেঘ সৃষ্টি করেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্যে এবং আশার জন্যে এবং উক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী, ভয় ও ভরসা সঞ্চার করান এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ;


১৩


وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বজ্র তাঁরই তাসবীহ ও হামদ জ্ঞাপন করে ১৮ এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাসবীহরত রয়েছে)। তিনিই গর্জমান বিজলী পাঠান তারপর যার উপর ইচ্ছা তাকে বিপদরূপে পতিত করেন। আর তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) অবস্থা এই যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধেই তর্ক-বিতর্ক করছে, অথচ তাঁর শক্তি অতি প্রচণ্ড।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন, অতঃপর যাকে ইচছা, তাকে তা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি তারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বজ্রধ্বনি তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে, ফেরেশতাগণও করে তার ভয়ে। তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে আঘাত করেন। আর এরা আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, অথচ তিনি মহাশক্তিশালী।


তাফসীরঃ

১৮. ‘বজ্র কর্তৃক ‘তাসবীহ ও হামদ’ জ্ঞাপনের বিষয়টা প্রকৃত অর্থেও হতে পারে। সূরা বনী ইসরাঈলে সৃষ্টিজগতের প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা নিজ-নিজ পন্থায় আল্লাহ তাআলার হামদ ও তাসবীহ আদায় করে, কিন্তু মানুষ তাদের তাসবীহ বোঝে না (১৭ : ৪৪)। আবার এর এরূপ ব্যাখ্যাও হতে পারে যে, যে ব্যক্তিই মেঘের গর্জন, চমক এবং এর কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করবে সে দুনিয়ার দিকে দিকে পানি পৌঁছানোর এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা দেখে মহান স্রষ্টা ও মালিকের প্রশংসা আদায় না করে থাকতে পারবে না। সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠবে, কত মহান ও পবিত্র সেই সত্তা, যিনি এ সুনিপুণ ব্যবস্থা চালু করেছেন। তাছাড়া সে এ চিন্তার ফলে অবশ্যই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছবে যে, যে সত্তা এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা চালু করেছেন, তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত ও পবিত্র। তার নিজ প্রভুত্বের জন্য কোন শরীক বা সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই। আর ‘তাসবীহ’-এর অর্থ এটাই।


১৪


لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাঁরই কাছে দু‘আ করা যথার্থ। ১৯ তারা তাঁকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেব-দেবীদেরকে) ডাকে তারা তাদের দু‘আর কোনও জবাব দেয় না। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে পানির দিকে দু’হাত বাড়িয়ে আশা করে তা আপনিই তার মুখে পৌঁছে যাবে, অথচ তা কখনও নিজে-নিজে তার মুখে পৌঁছতে পারে না। আর (দেব-দেবীদের কাছে) কাফেরদের দু‘আ করার ফল এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, তা শুধু বৃথাই যাবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই এবং তাকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা তাদের কোন কাজে আসে না; ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দু’ হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়। অথচ পানি কোন সময় পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহবান তার সবই পথভ্রষ্টতা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সত্যের আহ্বান তাঁরই। যারা তাঁকে ব্যতীত আহ্বান করে অপরকে, তাদেরকে কোনই সাড়া দেয় না এরা; তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে তার মুখে পানি পৌঁছিবে-এই আশায় তার হস্তদ্বয় প্রসারিত করে পানির দিকে, অথচ তা তার মুখে পৌঁছিবার নয়, কাফিরদের আহ্বান নিষ্ফল।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ ) #file=(Al Quran Bangla) #icon=(download) #size=(25) #color=(#d10404) #info=(PDF Download)


তাফসীরঃ

১৯. অর্থাৎ যিনি সর্বপ্রকার উপকার-অপকারের মালিক, সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান, দুআ তো তাঁরই কাছে করা উচিত। আল্লাহ ছাড়া এমন কে আছে, যে নিজের ও অন্যের উপকার করার ও ক্ষতি রোধ করার ক্ষমতা রাখে। তা যারা রাখে না, সেই অক্ষমদের কাছে প্রার্থনা করা সম্পূর্ণ অর্থহীন। -অনুবাদক


১৫


وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُم بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ ۩


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আল্লাহকেই সিজদা করে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি, কেউ তো স্বেচ্ছায় এবং কেউ বাধ্য হয়ে। ২০ তাদের ছায়াও সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সামনে সিজদায় লুটায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে আছে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের প্রতিচ্ছায়াও সকাল-সন্ধ্যায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র প্রতি সিজ্দাবনত হয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়।


তাফসীরঃ

২০. এস্থলে সিজদা করা দ্বারা আল্লাহ তাআলার নির্দেশের সামনে আনুগত্য প্রকাশ বোঝানো হয়েছে। মুমিন তো স্বেচ্ছায়, সাগ্রহে তাঁর হুকুম শিরোধার্য করে এবং তার প্রতিটি ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে। আর কাফের আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগত ফায়সালা মানতে বাধ্য। কাজেই তারা চাক বা না-চাক সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তাআলা যা-কিছু ফায়সালা করেন তার সামনে তাদের মাথা নোয়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই। উল্লেখ্য, এটি সিজদার আয়াত। এটি তিলাওয়াত করলে বা শুনলে সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যায়।


১৬


قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! কাফেরদেরকে) বল, কে তিনি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালন করেন? বল, আল্লাহ! বল, তবুও তোমরা তাঁকে ছেড়ে এমন সব অভিভাবক গ্রহণ করলে, যাদের খোদ নিজেদেরও কোন উপকার সাধনের ক্ষমতা নেই এবং অপকার সাধনেরও না? বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? অথবা অন্ধকার ও আলো কি একই রকম হতে পারে? না-কি তারা আল্লাহর এমন সব শরীক সাব্যস্ত করেছে, যারা আল্লাহ যেমন সৃষ্টি করেন সে রকম কিছু সৃষ্টি করেছে, ২১ ফলে তাদের কাছে উভয়ের সৃষ্টিকার্য একই রকম মনে হচ্ছে? (কেউ যদি এ বিভ্রান্তির শিকার হয়ে থাকে, তবে তাকে) বলে দাও, কেবল আল্লাহই সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি একাই এমন যে, তাঁর ক্ষমতা সবকিছুতে ব্যাপ্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

জিজ্ঞেস করুন নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা কে? বলে দিনঃ আল্লাহ! বলুনঃ তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল-মন্দের ও মালিক নয়? বলুনঃ অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়। তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুনঃ আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক ?’ বল, ‘আল্লাহ্’। বল, ‘তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছ আল্লাহ্ র পরিবর্তে অপরকে যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয় ?’ বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান বা অন্ধকার ও আলো কি এক ?’ তবে কী তারা আল্লাহ্ র এমন শরীক করেছে, যারা আল্লাহ্ র সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে, যে কারণে সৃষ্টি এদের নিকট সদৃশ মনে হয়েছে ? বল, ‘আল্লাহ্ সকল বস্তুর স্রষ্টা; তিনি এক, পরাক্রমশালী।’


তাফসীরঃ

২১. আরবের মুশরিকরা যেসব দেবতাদেরকে মাবুদ মনে করত ও তাদের পূজা-অর্চনা করত, তাদের সম্পর্কে তারা সাধারণভাবে একথা স্বীকার করত যে, জগত সৃজনে তাদের কোনও অংশীদারিত্ব নেই। বরং সারা জাহান আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। তবে তাদের বিশ্বাস ছিল, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রভুত্বের বহু ক্ষমতা তাদের উপর ন্যস্ত করেছেন। তাই তাদেরও উপাসনা করা উচিত, যাতে তারা তাদের সে ক্ষমতা আমাদের অনুকূলে ব্যবহার করে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের পক্ষে সুপারিশও করে। এ আয়াতে প্রথমত বলে দেওয়া হয়েছে, এসব মনগড়া দেবতা খোদ নিজেদেরও কোনও উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না। কাজেই সে অন্যদের উপকার-অপকার করবে কি করে? তারপর বলা হয়েছে, এসব দেবতা যদি আল্লাহ তাআলার মত কোন কিছু সৃষ্টি করে থাকত, তবে না হয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক সাব্যস্ত করার কোন যুক্তি থাকত, কিন্তু না তারা বাস্তবে কোনও কিছু সৃষ্টি করেছে আর না আরববাসী এরূপ আকীদা পোষণ করত। এহেন অবস্থায় তাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক সাব্যস্ত করে তাদের ইবাদত-উপাসনা করার কী বৈধতা থাকতে পারে?


১৭


أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, ফলে নদীনালা আপন-আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্লাবিত হয়েছে, তারপর পানির ধারা স্ফীত ফেনাসমূহ উপরিভাগে তুলে এনেছে। এ রকমের ফেনা সেই সময়ও ওঠে, যখন লোকে অলংকার বা পাত্র তৈরির উদ্দেশ্যে আগুনে ধাতু উত্তপ্ত করে। আল্লাহ এভাবেই সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছেন যে, (উভয় প্রকারে) যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। ২২ এ রকমেরই দৃষ্টান্ত আল্লাহ বর্ণনা করে থাকেন। ২৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর স্রোতধারা প্রবাহিত হতে থাকে নিজ নিজ পরিমাণ অনুযায়ী। অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। এবং অলঙ্কার অথবা তৈজসপত্রের জন্যে যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও তেমনি ফেনারাশি থাকে। এমনি ভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি আকাশ হতে বৃষ্টিপাত করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ এদের পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরিস্থিত আবর্জনা বহন করে, এরূপে আবর্জনা উপরিভাগে আসে যখন অলংকার বা তৈজসপত্র নির্মাণ উদ্দেশ্যে কিছু অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়। এভাবে আল্লাহ্ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন। যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়। এইভাবে আল্লাহ্ উপমা দিয়ে থাকেন।


তাফসীরঃ

২২. এ দৃষ্টান্তের মধ্যে মানুষের জন্য অনেক বড় শিক্ষা আছে। এতে দেখানো হয়েছে যা মানুষের জন্য উপকারী নয় তা ধ্বংস হয়ে যায় আর যা উপকারী তা টিকে থাকে। বিষয়টা বস্তুর মধ্যেই সীমিত নয়। পশু-পাখী প্রাণীকুল এমনকি মানুষের ক্ষেত্রে এটাই আল্লাহ তাআলার শাশ্বত বিধান। হিতসাধনের গুণ না থাকার কারণে কত পশু-পাখীর অস্তিত্ব ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিলীন হয়ে গেছে। আবার যাদের মধ্যে এ গুণ আছে, তা কেবল প্রাকৃতিকভাবেই রক্ষা পায় না, কৃত্রিম প্রক্রিয়ায়ও তার রক্ষা ও প্রবৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বহু মানব-সম্প্রদায়েরও অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যখন তারা হিতসাধনের গুণ হারিয়ে ফেলেছে। বলা বাহুল্য, সত্যধর্ম তথা ঈমান ও ইসলাম মানব মনে হিতৈষণা জন্মায়। ইসলামের সামগ্রিক শিক্ষার ভেতরই এই আবেদন বিদ্যমান। কাজেই যে ব্যক্তি প্রকৃত মুসলিম সে একজন সত্যিকারের মানবহিতৈষী হবেই। কিন্তু বর্তমানকালে এর যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়, যা দ্বারা প্রতীয়মান হয় আমরা দীন ও ঈমানের মর্মবাণী যেন ঠিক হৃদয়াঙ্গম করছি না। এটা কি এ জাতির অস্তিত্বের পক্ষে কোন অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে না? ফেনায় পর্যবসিত জাতির তো টিকে থাকার অধিকার নেই। হিতসাধনের গুণ যদি তারা ধারণ করতে না পারে তবে তো তাদের স্থানে এমন কোন সম্প্রদায়কেই প্রতিষ্ঠিত করা হবে যারা ঠিক তাদের মত হবে না, বরং দীন ও ঈমানের রঙে রঙিন হয়ে তারা বিশ্বমানবতার কল্যাণসাধনে সমর্পিত থাকবে। ফলে ভূ-পৃষ্ঠে তারা ইজ্জত-সম্মানের সাথে টিকে থাকবে। -অনুবাদক


২৩. অর্থাৎ, বাতিল ও ভ্রান্ত মতাদর্শকে আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা ফেনার মত। তার ভেতর কোন উপকার নেই এবং ধ্বংসই তার পরিণতি। পক্ষান্তরে হক ও সত্য হল পানি ও অন্যান্য উপকারী বস্তুর মত। তার যেমন ফায়দা আছে, তেমনি তা স্থায়ীও বটে।


১৮


لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ ۚ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمِهَادُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মঙ্গল তাদেরই জন্য, যারা তাদের প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দিয়েছে। আর যারা তার ডাকে সাড়া দেয়নি, তাদের কাছে যদি দুনিয়ার সমস্ত জিনিসও থাকে এবং তার সমপরিমাণ আরও, তবে তারা (কিয়ামতের দিন) নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে তা সবই দিতে প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাদের জন্য রয়েছে কঠিন হিসাব এবং তাদের ঠিকানা জাহান্নাম; তা বড় মন্দ ঠিকানা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা পালনকর্তার আদেশ পালন করে, তাদের জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে এবং যারা আদেশ পালন করে না, যদি তাদের কাছে জগতের সবকিছু থাকে এবং তার সাথে তার সমপরিমাণ আরও থাকে, তবে সবই নিজেদের মুক্তিপণ স্বরূপ দিয়ে দেবে। তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর হিসাব। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। সেটা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মঙ্গল তাদের যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়। এবং যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয় না, তাদের যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সমস্তই থাকত এবং তার সঙ্গে সমপরিমাণ আরো থাকত এরা মুক্তিপণস্বরূপ তা দিত। এদের হিসেব হবে কঠোর এবং জাহান্নাম হবে এদের আবাস, তা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল।


১৯


۞ أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ ۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে যে, তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে তা সত্য, সে কি ওই ব্যক্তির মত হতে পারে, যে অন্ধ? বস্তুত উপদেশ কেবল তারাই গ্রহণ করে, যারা বোধ-বুদ্ধির অধিকারী,


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে আর যে অন্ধ তারা কি সমান ? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকশক্তি সম্পন্নগণই,


২০


الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ الْمِيثَاقَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অর্থাৎ) সেই সকল লোক, যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং চুক্তির বিপরীত কাজ করে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরা এমন লোক, যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্কে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না,


২১


وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তারা তা বজায় রাখে, ২৪ নিজেদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং ভয় রাখে কঠিন হিসাবের।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা বজায় রাখে ঐ সম্পর্ক, যা বজায় রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন এবং স্বীয় পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কঠোর হিসাবের আশঙ্কা রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসেবকে,


তাফসীরঃ

২৪. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যে সকল সম্পর্ক রক্ষা করার আদেশ করেছেন তা রক্ষা করে এবং সে সম্পর্কজনিত কর্তব্যসমূহ পালন করে। আত্মীয়-স্বজনের অধিকারসমূহ যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনি দীনি সম্পর্কের কারণে যেসব অধিকার জন্ম নেয়, তাও। সুতরাং আল্লাহ তাআলা যত নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনার হুকুম দিয়েছেন তারা তাদের প্রতি ঈমান আনে এবং যাদের আনুগত্য করার আদেশ করেছেন তাদের আনুগত্যও করে।


২২


وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তারা সেই সকল লোক, যারা নিজ প্রতিপালকের সন্তুষ্টিবিধানের উদ্দেশ্যে সবর অবলম্বন করেছে, ২৫ নামায কায়েম করেছে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং তারা দুর্ব্যবহারকে প্রতিরোধ করে সদ্ব্যবহার দ্বারা। ২৬ প্রকৃত নিবাসে উৎকৃষ্ট পরিণাম তাদেরই জন্য। ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা স্বীয় পালনকর্তার সন্তুষ্টির জন্যে সবর করে, নামায প্রতিষ্টা করে আর আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্য ব্যয় করে এবং যারা মন্দের বিপরীতে ভাল করে, তাদের জন্যে রয়েছে পরকালের গৃহ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যে ধৈর্য ধারণ করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং যারা ভাল দিয়ে মন্দ দূরীভূত করে, এদের জন্যে শুভ পরিণাম-


তাফসীরঃ

২৫. কুরআন মাজীদের পরিভাষায় ‘সবর’-এর মর্ম অতি ব্যাপক। মানুষ আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে যখন নিজ ইন্দ্রিয় চাহিদাকে সংযত করে রাখে, তখন সেটাই হয় সবর। যেমন নামাযের সময় যদি মনের চাহিদা হয় নামায না পড়া, তবে সেক্ষেত্রে মনের চাহিদাকে উপেক্ষা করে নামাযের রত হওয়াই সবর। কিংবা মনে যদি কোন গুনাহের প্রতি আগ্রহ দেখা দেয়, তবে সেই আগ্রহকে দমন করে সেই গুনাহ থেকে বিরত থাকাই হল সবর। এমনিভাবে কোনও কষ্টের সময় যদি মনের চাহিদা এই হয় যে, আল্লাহ তাআলার ফায়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হোক এবং অনাবশ্যক হল্লা-চিল্লা করা হোক, তবে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার ফায়সালায় সন্তুষ্ট থেকে ঐচ্ছিক উঁহু-আহা বন্ধ রাখাও সবর। এমনিভাবে সবর শব্দটি দীনের যাবতীয় বিধানের অনুসরণকে শামিল করে। ২৪ নং আয়াতেও এ বিষয়টাই বোঝানো হয়েছে।


২৬. অর্থাৎ, মন্দ ব্যবহারের বিপরীতে ভালো ব্যবহার করে। কুরআন মাজীদ ‘প্রতিরোধ’ শব্দ ব্যবহার করে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, ভালো ব্যবহারের পরিণামও ভালো হয়। এর দ্বারা শেষ পর্যন্ত অন্যের দুর্ব্যবহারের কুফল খতম হয়ে যায়।


২৭. এ আয়াতের বাক্য لَهُمْ عَقْبَى الدَّارِ এর اَلدَّارُ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘বাড়ি’। বহু মুফাসসিরের মতে এর দ্বারা আখেরাত বা পরজগত বোঝানো হয়েছে। ‘দেশ’ অর্থেও এ শব্দটির বহুল ব্যবহার রয়েছে। এখানে ‘আখেরাত’ শব্দ ব্যবহার না করে এ শব্দটির ব্যবহার দ্বারা সম্ভবত ইশারা করা হয়েছে যে, মানুষের আসল বাড়ি ও প্রকৃত নিবাস হল আখেরাত। কেননা দুনিয়ার জীবন তো এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। মানুষ স্থায়ীভাবে যেখানে থাকবে, সেটা পরজগতই। এ কারণেই এস্থলে اَلدَّارُ এর তরজমা করা হয়েছে ‘প্রকৃত নিবাস’। সামনে ২৪ ও ২৫ নং আয়াতেও এ বিষয়টা লক্ষ্য রাখা চাই


২৩


جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অর্থাৎ) স্থায়ীভাবে অবস্থানের সেই উদ্যানসমূহ, যার ভেতর তারা নিজেরাও প্রবেশ করবে এবং তাদের বাপ-দাদাগণ, স্ত্রীগণ ও সন্তানদের মধ্যে যারা নেককার হবে, তারাও। আর (তাদের অভ্যর্থনার জন্য) ফেরেশতাগণ তাদের নিকট প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে (আর বলতে থাকবে-)


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তা হচ্ছে বসবাসের বাগান। তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের সৎকর্মশীল বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানেরা। ফেরেশতারা তাদের কাছে আসবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতাগণ তাদের নিকট উপস্থিত হবে প্রত্যেক দ্বার দিয়ে,


২৪


سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা (দুনিয়ায়) যে সবর অবলম্বন করেছিলে, তার বদৌলতে এখন তোমাদের প্রতি কেবল শান্তিই বর্ষিত হবে এবং (তোমাদের) প্রকৃত নিবাসে এটা কতই না উৎকৃষ্ট পরিণাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলবেঃ তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং বলবে, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত উত্তম এই পরিণাম।


২৫


وَالَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَـٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অপর দিকে) যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকারে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং যমীনে অশান্তি বিস্তার করে, তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং প্রকৃত নিবাসে নিকৃষ্ট পরিণাম তাদেরই জন্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা আল্লাহর অঙ্গীকারকে দৃঢ় ও পাকা-পোক্ত করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে, সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে, ওরা ঐ সমস্ত লোক যাদের জন্যে রয়েছে অভিসম্পাত এবং ওদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্ র সঙ্গে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ্ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যে আছে লা‘নত এবং তাদের জন্যে আছে মন্দ আবাস।


২৬


اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন তার রিযক প্রশস্ত করে দেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) সংকীর্ণ করে দেন। ২৮ তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) পার্থিব জীবনেই মগ্ন, অথচ আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবন মামুলি পুঁজির বেশি কিছু নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রুযী প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। তারা পার্থিব জীবনের প্রতি মুগ্ধ। পার্থিবজীবন পরকালের সামনে অতি সামান্য সম্পদ বৈ নয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ যার জন্যে ইচ্ছা তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন; কিন্তু এরা পার্থিব জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র।


তাফসীরঃ

২৮. পূর্বে বলা হয়েছিল, যারা সত্য দীনকে অস্বীকার করে তাদের প্রতি আল্লাহর লানত। কারও খটকা লাগতে পারে আমরা তো দেখছি দুনিয়ায় তারা প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হচ্ছে এবং বড় সুখের জীবন যাপন করছে! এ আয়াতে সেই খটকা দূর করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, দুনিয়ায় জীবিকার প্রাচুর্য বা তার সংকীর্ণতা আল্লাহ তাআলার কাছে মকবুল বা সমাদৃত হওয়া-না হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার হিকমত অনুযায়ী যাকে ইচ্ছা প্রচুর অর্থ-সম্পদ দেন এবং যাকে ইচ্ছা অর্থ সংকটে নিপতিত করেন। কাফেরগণ যদিও এখানকার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে মগ্ন, কিন্তু আখেরাতের তুলনায় দিন কয়েকের এই পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যে নিতান্তই মূল্যহীন, সে খবর তাদের নেই।


২৭


وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে তারা বলে, তার প্রতি (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি) তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হল না কেন? ২৯ বলে দাও, আল্লাহ যাকে চান পথভ্রষ্ট করেন আর তিনি তাঁর পথে কেবল তাদেরকেই আনয়ন করেন, যারা তাঁর দিকে রুজু হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা বলেঃ তাঁর প্রতি তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন কেন অবতীর্ণ হলো না? বলে দিন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যে, মনোনিবেশ করে, তাকে নিজের দিকে পথপ্রদর্শন করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফ্রী করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন ?’ বল, ‘আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি তাদেরকে তাঁর পথ দেখান যারা তাঁর অভিমুখী,


তাফসীরঃ

২৯. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বহু মুজিযা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মক্কার কাফেরগণ নিত্য-নতুন মুজিযা দাবী করত। কখনও তাদের কোনও দাবী পূরণ না করা হলেই এই কথা বলত যা এ আয়াতে বিবৃত হয়েছে। পূর্বে ৭নং আয়াতেও এটা গত হয়েছে। সামনে ৩১নং আয়াতে এর জবাব আসছে। এখানে তাদের উক্তির জবাব না দিয়ে বলা হয়েছে, এসব দাবী তাদের গোমরাহীরই প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা যাকে চান গোমরাহীতে ফেলে রাখেন এবং হিদায়াত লাভ হয় কেবল তাদেরই, যারা আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হয়ে হিদায়াত প্রার্থনা ও সত্যের সন্ধান করে। এরূপ লোক ঈমান আনার পর তার দাবী মত কাজ করে এবং আল্লাহ তাআলার যিকির ও স্মরণ দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে। ফলে কোনও রকমের সংশয়-সন্দেহ দ্বারা তারা যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয় না। তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলার প্রতি আত্মনিবেদিত থাকে। সব হালেই থাকে সন্তুষ্ট। অবস্থা ভালো হলে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করে আর যদি দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়, তবে সবর অবলম্বন করে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করে যেন তিনি তা দূর করে দেন। তারা এই ভেবে স্বস্তিবোধ করে যে, সে দুঃখ যতক্ষণ থাকবে, তা আল্লাহ তাআলার হিকমতেরই অধীনে থাকবে। কাজেই সে ব্যাপারে আমার কোনও অভিযোগ নেই। এভাবে কষ্টের অবস্থায়ও তার মানসিক স্বস্তি থাকে। এর দৃষ্টান্ত হল অপারেশন। যদি চিকিৎসার স্বার্থে কারও অপারেশনের দরকার হয়, তবে কষ্ট সত্ত্বেও সে এই ভেবে শান্তিবোধ করে যে, এ কাজটি তার স্বার্থের অনুকূল; এতে তার রোগ ভালো হওয়ার আশা আছে।


২৮


الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরা সেই সব লোক, যার ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর যিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখ, কেবল আল্লাহর যিকিরেই অন্তরে প্রশান্তি লাভ হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহ্ র স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহ্ র স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়;


২৯


الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(মোটকথা) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে মঙ্গলময়তা এবং উৎকৃষ্ট পরিণাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরম আনন্দ এবং শুভ পরিণাম তাদেরই।’


৩০


كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَا أُمَمٌ لِّتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَـٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! যেমন অন্য নবীগণকে পাঠানো হয়েছিল) তেমনি আমি তোমাকে এমন এক জাতির কাছে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে, যাতে আমি তোমার প্রতি ওহীর মাধ্যমে যে কিতাব নাযিল করেছি তা পড়ে তাদেরকে শোনাও। অথচ তারা এমন এক সত্তার অকৃতজ্ঞতা করে যিনি সকলের প্রতি দয়াবান। বলে দাও, তিনি আমার প্রতিপালক। তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। তাঁরই উপর আমি নির্ভর করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমনিভাবে আমি আপনাকে একটি উম্মতের মধ্যে প্রেরণ করেছি। তাদের পূর্বে অনেক উম্মত অতিক্রান্ত হয়েছে। যাতে আপনি তাদেরকে ঐ নির্দেশ শুনিয়ে দেন, যা আমি আপনার কাছে প্রেরণ করেছি। তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে। বলুনঃ তিনিই আমার পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কারও উপাসনা নাই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করেছি এবং তাঁর দিকেই আমার প্রত্যাবর্তণ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এক জাতির প্রতি যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে, এদের নিকট তিলাওয়াত করার জন্যে, যা আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি। তথাপি এরা দয়াময়কে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। তাঁরই ওপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট।’


৩১


وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَل لِّلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا ۗ أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ آمَنُوا أَن لَّوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا ۗ وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُم بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ حَتَّىٰ يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যদি এমন কোনও কুরআনও নাযিল হত, যা দ্বারা পাহাড়কে আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়া যেত বা তার দ্বারা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত (ফলে তা থেকে নদী প্রবাহিত হত) কিংবা তার মাধ্যমে মৃতের সাথে কথা বলা সম্ভব হত (তবুও এরা ঈমান আনত না)। ৩০ প্রকৃতপক্ষে এসব কিছুই আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। তবুও কি মুমিনগণ একথা চিন্তা করে নিজেদের মনকে ভারমুক্ত করল না যে, আল্লাহ চাইলে সমস্ত মানুষকে (জোরপূর্বক) সৎপথে পরিচালিত করতেন? ৩১ যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তাদের উপর তাদের কৃতকর্মের কারণে সর্বদা কোনও না কোনও গর্জমান বিপদ পতিত হতে থাকবে অথবা তা নিপতিত হতে থাকবে তাদের বসতির আশেপাশে কোথাও, যাবত না (একদিন) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এসে পূর্ণ হয়ে যায়। ৩২ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি কোন কোরআন এমন হত, যার সাহায্যে পাহাড় চলমান হয় অথবা যমীন খন্ডিত হয় অথবা মৃতরা কথা বলে, তবে কি হত? বরং সব কাজ তো আল্লাহর হাতে। ঈমানদাররা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যে, যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে সব মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করতেন? কাফেররা তাদের কৃতকর্মের কারণে সব সময় আঘাত পেতে থাকবে অথবা তাদের গৃহের নিকটবর্তী স্থানে আঘাত নেমে আসবে, যে, পর্যন্ত আল্লাহর ওয়াদা না আসে। নিশ্চয় আল্লাহ ওয়াদার খেলাফ করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি কোন কুরআন এমন হত যা দিয়ে পর্বতকে গতিশীল করা যেত বা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেত বা মৃতের সঙ্গে কথা বলা যেত, তবুও এরা এতে বিশ্বাস করত না। কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহ্ র ইখ্তিয়ারভুক্ত। তবে কি যারা ঈমান এনেছে তাদের প্রত্যয় হয় নাই যে, আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে নিশ্চয়ই সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন ? যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্যে তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, বা বিপর্যয় তাদের আশেপাশে আপতিত হতেই থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি এসে পড়বে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।


তাফসীরঃ

৩০. মক্কার কাফেরগণ যে সকল মুজিযার ফরমায়েশ করত, এ আয়াতে সে রকম কয়েকটি উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বলত, মক্কা মুকাররমার আশপাশে যেসব পাহাড় আছে, সেগুলো সরিয়ে দাও এবং এখানকার ভূমি বিদারণ করে নদী প্রবাহিত করে দাও আর আমাদের মৃত বাপ-দাদাদেরকে জীবিত করে তাদের সাথে আমাদের কথা বলিয়ে দাও, তাহলে আমরা ঈমান আনব। এ আয়াতে বলা হয়েছে, কথার কথা যদি তাদের এসব বেহুদা দাবী পূরণ করাও হত, তবু তারা ঈমান আনার ছিল না। কেননা তারা তো সত্য সন্ধানের প্রেরণায় এসব ফরমায়েশ করছে না; বরং তারা কেবল তাদের জেদের বশবর্তীতেই এসব কথা বলছে। সূরা বনী ইসরাঈলে (১৭ : ৯০-৯৩) কাফেরদের এ রকমের আরও কিছু ফরমায়েশ উল্লেখ করা হয়েছে। এ সূরার ৫৯ নং আয়াতে ফরমায়েশী মুজিযা না দেখানোর কারণ বলা হয়েছে এই যে, কোনও সম্প্রদায়কে যদি তাদের বিশেষ ফরমায়েশী মুজিযা দেখানো হয় আর তা সত্ত্বেও তারা ঈমান না আনে তখন আযাব নাযিল করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। অতীতে আদ, ছামুদ প্রভৃতি জাতির বেলায় এ রকমই হয়েছে। আল্লাহ তাআলার জানা আছে, এসব ফরমায়েশী মুজিযা দেখার পরও তারা ঈমান আনবে না। আবার এখনই তাদেরকে ধ্বংস করার ইচ্ছাও আল্লাহ তাআলার নেই। এ কারণেও এ রকম মুজিযা দেখানো হয় না।


৩১. কখনও কখনও মুসলিমদের মনে হত তারা যেসব মুজিযা দাবী করছে, তা দেখানো হলে সম্ভবত তারা ইসলাম গ্রহণ করবে। এ আয়াত মুসলিমদেরকে উপদেশ দিচ্ছে, তারা যেন এই ভাবনা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করে ফেলে। বরং তাদের চিন্তা করা উচিত আল্লাহ তাআলার তো এ ক্ষমতাও আছে যে, তাদের সকলকে জবরদস্তিমূলক ইসলামের ভেতর নিয়ে আসবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তা করছেন না। করছেন না এ কারণে যে, সেটা তার হিকমতের পরিপন্থী। কেননা দুনিয়া হল পরীক্ষার স্থান। এ পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য এটা দেখা যে, কে নিজ বুদ্ধি-বিবেক খাটিয়ে স্বেচ্ছায়, সাগ্রহে ঈমান আনে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা এ ক্ষেত্রে নিজ ক্ষমতার প্রয়োগ করেন না। হাঁ, তিনি এরূপ দলীল-প্রমাণ তুলে ধরেন, মানুষ যদি নিজ গোঁয়ার্তুমি ছেড়ে মুক্ত মনে সেগুলো চিন্তা করে, তবে সত্যে উপনীত হতে সময় লাগার কথা নয়। এসব দলীল-প্রমাণের পর কাফেরদের সব ফরমায়েশ পূরণ করার কোন দরকার পড়ে না।


৩২. কোন কোন মুসলিমের মনে অনেক সময় এই খেয়ালও জাগত যে, এরা যখন ঈমান আনার নয়, তখন এখনই কেন তাদের উপর আযাব আসছে না। এ আয়াতে তার জবাব দেওয়া হয়েছে যে, তাদের উপর ছোট-ছোট মুসিবত তো ইহকালেও একের পর এক নিপতিত হয়ে থাকে, যেমন কখনও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, কখনও অন্য কোন বিপদ হানা দেয় আবার কখনও তাদের আশপাশের জনপদে এমন বিপর্যয় দেখা দেয়, যা দেখে তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত হয়। তবে তাদের প্রকৃত শাস্তি কিয়ামতেই হবে, যা সংঘটিত করার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ তাআলার রয়েছে।


৩২


وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) বস্তুত তোমার পূর্বের নবীগণকেও ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল এবং এরূপ কাফেরদেরকেও আমি অবকাশ দিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুকাল পর আমি তাদেরকে পাকড়াও করি। সুতরাং দেখে নাও কেমন ছিল আমার শাস্তি!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বে কত রাসূলের সাথে ঠাট্টা করা হয়েছে। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে কিছু অবকাশ দিয়েছি। , এর পর তাদেরকে পাকড়াও করেছি। অতএব কেমন ছিল আমার শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে এবং যারা কুফরী করেছে তাদেরকে আমি কিছু অবকাশ দিয়েছিলাম, তার পর এদেরকে শাস্তি দিয়েছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!


৩৩


أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَم بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আচ্ছা বল তো, একদিকে রয়েছেন সেই সত্তা, যিনি প্রত্যেকের প্রতিটি কাজ পর্যবেক্ষণ করেন আর অন্যদিকে তারা কি না আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছে? ৩৩ বল, একটু তাদের (অর্থাৎ আল্লাহর শরীকদের) নাম বল তো। (যদি কোন নাম বল) তবে কি আল্লাহকে এমন কোন অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত করবে, যা সারা পৃথিবীর কোথাও আছে বলে তিনি জানেন না? না কি কেবল মুখেই এমন নাম বলবে আসলে যার কোন বাস্তবতা নেই? ৩৪ প্রকৃতপক্ষে কাফেরদের কাছে তাদের ছলনামূলক আচরণ বড় চমৎকার মনে হয়। আর (এভাবে) তাদের হিদায়াতের পথে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি হয়ে গেছে। মূলত আল্লাহ যাকে বিভ্রান্তির ভেতর ফেলে রাখেন, সে এমন কাউকে পাবে না, যে তাকে সৎপথে আনয়ন করবে। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ওরা প্রত্যেকেই কি মাথার উপর স্ব স্ব কৃতকর্ম নিয়ে দন্ডায়মান নয়? এবং তারা আল্লাহর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলুন; নাম বল অথবা খবর দাও পৃথিবীর এমন কিছু জিনিস সম্পর্কে যা তিনি জানেন না? অথবা অসার কথাবার্তা বলছ? বরং সুশোভিত করা হয়েছে কাফেরদের জন্যে তাদের প্রতারণাকে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধা দান করা হয়েছে। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি এদের অক্ষম ইলাহ্গুলির মত ? অথচ এরা আল্লাহ্ র বহু শরীক করেছে। বল, ‘এদের পরিচয় দাও।’ তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও-যা তিনি জানেন না ? বা এটা বাহ্যিক কথা মাত্র ? না, কাফিরদের নিকট এদের ছলনা শোভন প্রতীয়মান হয়েছে এবং এদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করা হয়েছে, আর আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নাই।


তাফসীরঃ

৩৩. ইমাম রাযী (রহ.) ও আল্লামা আলুসী (রহ.) ‘হাল্লুল উকাদ’ প্রণেতার বরাতে এ আয়াতের যে তাফসীর বর্ণনা করেছেন, তার ভিত্তিতেই এ তরজমা করা হয়েছে। সে তাফসীর অনুযায়ী مَنْ هُوَ قَائِمٌ হল উদ্দেশ্য (مُبْتَدَأ) এবং এর বিধেয় (خَبْرٌ) হল (مَوْجُوْدٌ) যা এস্থলে উহ্য আছে। আর وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ شُرَكَاءَ হল অবস্থা জ্ঞাপক বাক্য। এ বান্দার দৃষ্টিতে বাক্যের অন্যান্য সম্ভাবনা অপেক্ষা এ বিশ্লেষণই বেশি উত্তম মনে হয়। (এর অন্য অর্থ হতে পারে এরকম ‘তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি কি তাদের অক্ষম ইলাহগুলোর মত?’ এ হিসেবে ‘অক্ষম ইলাহগুলোর মত’ কথাটি উহ্য আছে)। -অনুবাদক


৩৪. তারা তাদের মূর্তি ও দেবতাদের বহু নাম রেখে দিয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলছেন, এসব নামের পেছনে বাস্তবে কিছু থাকলে সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার চেয়ে বেশি আর কে জানতে পারে? কিন্তু তাঁর জানামতে তো এ রকম কোন অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও তোমরা যদি বাস্তব কোন অস্তিত্ব আছে বলে দাবী কর, তবে তার অর্থ দাঁড়াবে তোমরা আল্লাহ তাআলার চেয়েও বেশি জ্ঞানের দাবীদার; বরং তোমরা যেন বলতে চাও, যে অস্তিত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার কিছু জানা নেই, তোমরা তাকে সে সম্পর্কে জানাচ্ছ (নাউযুবিল্লাহ)। এর চেয়ে জঘন্য মূর্খতা আর কী হতে পারে? আর যদি এসব নামের পেছনে বাস্তব কোন অস্তিত্ব না থাকে, তবে তো কেবল নামই সার। কেবলই কথার কথা। এভাবে উভয় অবস্থায়ই প্রমাণ হয় তোমাদের শিরকী আকীদা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।


৩৫. অর্থাৎ, কেউ যখন এই জেদ নিয়ে বসে যায় যে, আমি যা করছি সেটাই ভালো কাজ। তার বিপরীতে যত বড় দলীলই দেওয়া হোক তা শুনতেও প্রস্তুত না থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তাকে তার পথভ্রষ্টতার ভেতরই পড়ে থাকতে দেন। ফলে শত চেষ্টা করেও কেউ তাকে হিদায়াতের পথে আনতে পারবে না।


৩৪


لَّهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনেও শাস্তি রয়েছে আর আখেরাতের শাস্তি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি কঠিন হবে। এমন কেউ নেই, যে তাদেরকে আল্লাহ (-এর শাস্তি) থেকে বাঁচাতে পারবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

দুনিয়ার জীবনেই এদের জন্য রয়েছে আযাব এবং অতি অবশ্য আখেরাতের জীবন কঠোরতম। আল্লাহর কবল থেকে তাদের কোন রক্ষাকারী নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের জন্যে দুনিয়ার জীবনে আছে শাস্তি এবং আখিরাতের শাস্তি তো আরো কঠোর! এবং আল্লাহ্ র শাস্তি হতে রক্ষা করার এদের কেউ নেই।


৩৫


۞ مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوا ۖ وَّعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অপর দিকে) মুত্তাকীদের জন্য যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে তার তলদেশে নহর প্রবাহিত রয়েছে, তার ফল সতত সজীব এবং তার ছায়াও। এটা সেই সকল লোকের পরিণাম, যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর কাফেরদের পরিণাম তো জাহান্নামের আগুন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পরহেযগারদের জন্যে প্রতিশ্রুত জান্নাতের অবস্থা এই যে, তার নিম্নে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। তার ফলসমূহ চিরস্থায়ী এবং ছায়াও। এটা তাদের প্রতিদান, যারা সাবধান হয়েছে এবং কাফেরদের প্রতিফল অগ্নি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার উপমা এইরূপ : এর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, এর ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ী। যারা মুত্তাকী এটা তাদের কর্মফল এবং কাফিরদের কর্মফল দোযখ।


৩৬


وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَن يُنكِرُ بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তোমার প্রতি যে কালাম নাযিল করা হয়েছে, তা শুনে আনন্দিত হয়। আবার তাদেরই কোন কোন দল এমন, যারা এর কিছু কথা মানতে অস্বীকার করে। ৩৬ বল, আমাকে তো এই আদেশ করা হয়েছে যে, আমি আল্লাহর ইবাদত করব এবং প্রভুত্বে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না। এ কথারই আমি দাওয়াত দিয়ে থাকি আর তারই (অর্থাৎ আল্লাহরই) দিকে আমাকে ফিরে যেতে হবে। ৩৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যাদেরকে আমি গ্রন্থ দিয়েছি, তারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তজ্জন্যে আনন্দিত হয় এবং কোন কোন দল এর কোন কোন বিষয় অস্বীকার করে। বলুন, আমাকে এরূপ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি আল্লাহর এবাদত করি। এবং তাঁর সাথে অংশীদার না করি। আমি তাঁর দিকেই দাওয়াত দেই এবং তাঁর কাছেই আমার প্রত্যাবর্তন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আনন্দ পায়, কিন্তু কোন কোন দল এর কতক অংশ অস্বীকার করে। বল, ‘আমি তো আল্লাহ্ র ‘ইবাদত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি। আমি তাঁরই প্রতি আহ্বান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।’


তাফসীরঃ

৩৬. এ আয়াতে ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের বিভিন্ন দলের অবস্থা ব্যক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কতক এমন যারা কুরআন মাজীদের আয়াত শুনে খুশী হয়। তারা উপলব্ধি করতে পারে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহে যার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এটাই আল্লাহ তাআলা সেই আখেরী কিতাব। ফলে তাদের মধ্যে অনেকেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিল, যেমন খৃষ্টানদের মধ্যে, তেমনি ইয়াহুদীদের মধ্যে। এ বাস্তবতা তুলে ধরার মাধ্যমে একদিকে তো মক্কার কাফেরদেরকে লজ্জা দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, যাদের কাছে আসমানী কিতাব আছে তারা তো ঈমান আনছে, অথচ যাদের কাছে না আছে কোন আসমানী কিতাব এবং না কোন ঐশী নির্দেশনা, তারা ঈমান আনতে গড়িমসি করছে। অন্য দিকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্যান্য মুসলিমদেরকে সান্তনা দেওয়া হয়েছে যে, যারা ইসলামের সাথে শত্রুতা করে তাদের মধ্যে বহু লোক তো হিদায়াতের এ বাণী গ্রহণও করছে! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের মধ্যে অপর দলটি হচ্ছে কাফেরদের। তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা কুরআন মাজীদের কিছু অংশ অস্বীকার করে। ‘কিছু অংশ’ বলে ইশারা করা হয়েছে যে, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের মধ্যে যারা ঈমান আনেনি, তারাও কুরআন মাজীদের সকল কথা অস্বীকার করতে পারে না। কেননা এর বহু কথা এমন, যা তাওরাত ও ইনজীলেও আছে, যেমন তাওহীদ, পূর্ববর্তী নবীদের প্রতি ঈমান, তাদের ঘটনাবলী, আখেরাতের প্রতি ঈমান ইত্যাদি। এর দাবী তো ছিল এই যে, তারা চিন্তা করবে, এসব বিষয় জানার বাহ্যিক কোন মাধ্যম তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেই। তা সত্ত্বেও তিনি এগুলো বলছেন কি করে? নিঃসন্দেহে তিনি এসব ওহীর মাধ্যমেই জেনেছেন। কাজেই তিনি একজন সত্য রাসূল। তাঁর রিসালাতকে স্বীকার করে নেওয়া উচিত।


৩৭. এ আয়াতে তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত, ইসলামের এই মৌলিক তিনটি আকীদার কথা বর্ণিত হয়েছে। প্রথম বাক্যটি তাওহীদের ঘোষণা সম্বলিত। দ্বিতীয় বাক্যে বলা হয়েছে, ‘আমি এ কথারই দাওয়াত দিয়ে থাকি’। এর দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতকে প্রমাণ করা হয়েছে। আর শেষ বাক্য হল, ‘তাঁরই দিকে আমাকে ফিরে যেতে হবে’ এটা আখেরাতের আকীদা তুলে ধরছে। বোঝানো উদ্দেশ্য যে, এ তিনওটি আকীদা তো পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও বর্ণিত হয়েছে। তাহলে কুরআন কারীমকে অস্বীকার করার কী যুক্তি থাকতে পারে?


৩৭


وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর এভাবেই আমি একে (অর্থাৎ কুরআনকে) আরবী ভাষায় এক নির্দেশপত্র রূপে নাযিল করেছি। ৩৮ (হে নবী!) তোমার নিকট যে জ্ঞান এসেছে, তারপরও যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর, তবে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোনও সাহায্যকারী ও রক্ষক থাকবে না। ৩৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমনিভাবেই আমি এ কোরআনকে আরবী ভাষায় নির্দেশরূপে অবতীর্ণ করেছি। যদি আপনি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেন আপনার কাছে জ্ঞান পৌঁছার পর, তবে আল্লাহর কবল থেকে আপনার না কোন সাহায্যকারী আছে এবং না কোন রক্ষাকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এভাবে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি বিধানরূপে আরবী ভাষায়। জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর তবে আল্লাহ্ র বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না।


তাফসীরঃ

৩৮. অর্থাৎ, কাফেরগণ কুরআন মাজীদের যেসব বিধান নিজেদের খেয়াল-খুশীর বিপরীত দেখতে পাচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদের মর্জিমত কোনরূপ রদবদল করার অধিকার আপনার নেই। যদিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে একথা চিন্তাও করা যায় না যে, তিনি আল্লাহ তাআলার বিধানে কোন রদবদল করবেন, কিন্তু একটি মূলনীতি হিসেবে একথা বলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।


৩৯. এখান থেকে ৩৮ নং আয়াত পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তা দ্বারা উদ্দেশ্য একথা স্পষ্ট করে দেওয়া যে, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানগণ কুরআন মাজীদের যে অংশ অস্বীকার করছে, তাও সত্য বাণী। তা অস্বীকার করারও কোন কারণ থাকতে পারে না। কুরআন মাজীদের যে সব বিধান তাওরাত ও ইনজীল থেকে আলাদা সেগুলো সম্পর্কেই তাদের আপত্তি। আল্লাহ তাআলা এখানে বলছেন, মৌলিক আকীদা-বিশ্বাস তো সমস্ত নবীর দাওয়াতেই সমান। কিন্তু শাখাগত বিধানসমূহের বিষয়টা ভিন্ন। এক্ষেত্রে নবীগণের শরীয়তে কিছু না কিছু পার্থক্য হয়েই আসছে। এর কারণ পরিবেশ-পরিস্থিতিগত প্রভেদ। প্রত্যেক যুগ ও প্রত্যেক উম্মতের অবস্থা অন্যদের থেকে পৃথক হয়ে থাকে। সে দিকে লক্ষ্য করে আল্লাহ তাআলা নিজ হিকমত অনুযায়ী যুগে-যুগে বিধি-বিধানের ভেতরও রদবদল করেছেন। হয়ত এক নবীর শরীয়তে অনেক জিনিস নাজায়েয ছিল, অতঃপর যখন নতুন যুগে নতুন নবী পাঠানো হয়েছে, তখন সেগুলো হালাল করে দেওয়া হয়েছে। আবার কখনও হয়েছে এর বিপরীত। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ভেতর যেমন বিধি-বিধানের এই রদবদল-প্রক্রিয়া চালু ছিল, তেমনি এ উম্মতের ক্ষেত্রেও সেটা কার্যকর করা হয়েছে। আর সে হিসেবেই আল্লাহ তাআলা আখেরী যামানার উপযোগী হিসেবে নতুন বিধানাবলী সম্বলিত এ কুরআন নাযিল করেছেন। ‘আরবী ভাষার’ কথা উল্লেখ করে ইশারা করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নাযিল হয়েছিল, এ কিতাব তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নাযিল হয়েছে। সে কারণেই এর জন্য আরবী ভাষাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এটা এক জীবন্ত ভাষা, যা কিয়ামত কাল পর্যন্ত চালু থাকবে। এতে আখেরী যুগের অবস্থাসমূহের প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রাখা হয়েছে।


৩৮


وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত তোমার আগেও আমি বহু রাসূল পাঠিয়েছি এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তানাদি দিয়েছি। কোনও রাসূলেরই এ এখতিয়ার ছিল না যে, সে আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটি মাত্র আয়াতও হাজির করবে। প্রত্যেক কালের জন্য পৃথক কিতাব দেওয়া হয়েছে। ৪০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বে আমি অনেক রসূল প্রেরণ করেছি এবং তাঁদেরকে পত্নী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছি। কোন রসূলের এমন সাধ্য ছিল না যে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করে। প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বে আমি তো অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম। আল্লাহ্ র অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়। প্রত্যেক বিষয়ের নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ।


তাফসীরঃ

৪০. কাফেরগণ প্রশ্ন তুলত, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আল্লাহ তাআলার রাসূল হন, তবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানাদি থাকবে কেন? এ আয়াতে তাদের সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, এক-দু’জন নবীকে বাদ দিলে সমস্ত নবী-রাসূলকেই স্ত্রী ও সন্তানাদি দেওয়া হয়েছিল। কেননা এর সাথে নবুওয়াতের কোনও সম্পর্ক নেই; বরং নবীগণ নিজেদের জীবনাচার দ্বারা দেখিয়ে দেন স্ত্রী ও সন্তানদের হক কিভাবে আদায় করতে হয় এবং তাদের হক ও আল্লাহ তাআলার হকের মধ্যে ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা করতে হয়। দ্বিতীয় এটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, নবীগণের শরীয়তে শাখাগত প্রভেদ সব সময়ই ছিল।


৩৯


يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ যা চান (অর্থাৎ যে বিধানকে ইচ্ছা করেন) রহিত করে দেন এবং যা চান বলবৎ রাখেন। সমস্ত কিতাবের যা মূল, তা তাঁরই কাছে। ৪১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাঁরই নিকট আছে উম্মুল কিতাব।


তাফসীরঃ

৪১. ‘সমস্ত কিতাবের মূল’ দ্বারা ‘লাওহে মাহফুজ’ বোঝানো হয়েছে। অনাদিকাল থেকে তাতে লেখা আছে কোন জাতিকে কোন কিতাব এবং কেমন বিধান দেওয়া হবে।


৪০


وَإِن مَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে (অর্থাৎ কাফেরদেরকে) যে বিষয়ের শাসানি দেই, তার অংশবিশেষ আমি তোমাকে (তোমার জীবদ্দশায়ই) দেখিয়ে দেই অথবা (তার আগেই) তোমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেই, সর্বাবস্থায় তোমার দায়িত্ব তো কেবল বার্তা পৌঁছানো। আর হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার। ৪২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদের সাথে যে ওয়াদা করেছি, তার কোন একটি যদি আপনাকে দেখিয়ে দেই কিংবা আপনাকে উঠিয়ে নেই, তাতে কি আপনার দায়িত্ব তো পৌছে দেয়া এবং আমার দায়িত্ব হিসাব নেয়া।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তার কিছু যদি তোমাকে দেখাই বা যদি এটার পূর্বে তোমার কাল পূর্ণ করে দেই-তোমার কর্তব্য তো কেবল প্রচার করা এবং হিসেব-নিকাশ তো আমার কাজ।


তাফসীরঃ

৪২. কোন কোন মুসলিমের মনে ভাবনা জাগত যে, এতটা অবাধ্যতা সত্ত্বেও কাফেরদের উপর কোন শাস্তি অবতীর্ণ হয় না কেন? এ আয়াতে তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, শাস্তি কখন দিতে হবে, তার প্রকৃত সময় আল্লাহ তাআলা নিজ হিকমত অনুযায়ী স্থির করে রেখেছেন। স্থিরীকৃত সেই সময় অনুসারেই তা ঘটবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হচ্ছে যে, তাঁর উচিত নিজের মনকে চিন্তামুক্ত রাখা এবং স্মরণ রাখা যে, তাঁর দায়িত্ব কেবল পৌঁছে দেওয়া। কাফেরদের হিসাব নেওয়া আল্লাহ তাআলার কাজ। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী যথাসময়ে তা সম্পাদন করবেন।


৪১


أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা কি এ বিষয়টা লক্ষ্য করে না যে, আমি তাদের ভূমি চারদিক থেকে সংকীর্ণ করে আনছি? ৪৩ প্রতিটি আদেশ আল্লাহই দান করেন। এমন কেউ নেই যে, তার আদেশ রদ করতে পারে। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে সমানে সঙ্কুচিত করে আসছি? আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কি দেখে না যে, আমি এদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে আনছি ? আল্লাহ্ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ রদ করার কেউ নেই এবং তিনি হিসেব গ্রহণে তৎপর।


তাফসীরঃ

৪৩. অর্থাৎ, জাযিরাতুল আরব (আরব উপদ্বীপ)-এ মুশরিক ও অংশীবাদী আকীদা-বিশ্বাসের যে আধিপত্য ছিল, তা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। মুশরিকদের প্রভাব-বলয় দিন দিন কমে আসছে। আর তার জায়গায় ইসলাম নিজ প্রভাব বিস্তার করছে। এটা এক সতর্ক সংকেত। মুশরিকদের উচিত এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।


৪২


وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে, তারাও চাল চেলেছিল, কিন্তু আল্লাহরই যত চাল কার্যকর হয়। প্রত্যেক ব্যক্তি যা-কিছু করে, সবই তিনি জানেন। কাফেরগণ শীঘ্রই জানতে পারবে প্রকৃত নিবাসের উৎকৃষ্ট পরিণাম কার ভাগে পড়ে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের পূর্বে যারা ছিল, তারা চক্রান্ত করেছে। আর সকল চক্রান্ত তো আল্লাহর হাতেই আছে। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি যা কিছু করে। কাফেররা জেনে নেবে যে, পর জীবনের আবাসস্থল কাদের জন্য রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল; কিন্তু সমস্ত চক্রান্ত আল্লাহ্ র ইখতিয়ারে। প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন এবং কাফিররা শীঘ্রই জানিবে শুভ পরিণাম কাদের জন্যে।


৪৩


وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا ۚ قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে তারা বলে, তুমি রাসূল নও। বলে দাও, আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষীরূপে আল্লাহ এবং প্রত্যেক ওই ব্যক্তি যথেষ্ট, যার কাছে কিতাবের জ্ঞান আছে। ৪৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা বলেঃ আপনি প্রেরিত ব্যক্তি নন। বলে দিন, আমার ও তোমাদের মধ্যে প্রকৃষ্ট সাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি, যার কাছে গ্রন্থের জ্ঞান আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তুমি আল্লাহ্ র প্রেরিত নও।’ বল, ‘আল্লাহ্ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে, তারা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’


তাফসীরঃ

৪৪. অর্থাৎ, তোমরা যে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রিসালাতকে অস্বীকার করছ তাতে কি আসে যায়? তোমাদের অস্বীকৃতির কারণে সত্য মিথ্যা হয়ে যেতে পারে না। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তার রিসালাতের সাক্ষী এবং আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখে এমন যে-কোনও ব্যক্তি যদি ন্যায়নিষ্ঠতার সাথে সেই জ্ঞানের আলোকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তবে ‘তিনি একজন সত্য নবী’ এ সাক্ষ্য দিতে সে বাধ্য হবে।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ ) #file=(Al Quran Bangla) #icon=(download) #size=(25) #color=(#d10404) #info=(PDF Download)


Post a Comment

0 Comments