সূরা নাহ্‌ল বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল নাহ্‌ল বাংলা তরজমা,সূরা নাহ্‌ল বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল নাহ্‌ল, সকল আমল সূরা আল নাহ্‌ল,

 

১৬ . আন নাহ্‌ল - ( النحل ) | মৌমাছি মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১২৮  بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ ১  أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ  আতাআমরুল্লা-হি ফালা-তাছতা‘জিলূহু ছুবহা-নাহূওয়া তা‘আ-লা-‘আম্মাইউশরিকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহর হুকুম এসে গেছে। কাজেই তার জন্য তাড়াহুড়া করো না। ১ তারা যে শিরক করছে, তিনি তা থেকে পবিত্র ও সমুচ্চ।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ র আদেশ আসবেই; সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং এরা যাকে শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।  তাফসীরঃ ১. আরবী ভাষার বাকরীতি অনুযায়ী এটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ বাক্য। ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এরূপ ঘটনাকে আরবীতে অতীত ক্রিয়ায় ব্যক্ত করা হয়ে থাকে। এর শক্তি ও প্রভাব অন্য কোন ভাষায় আদায় করা খুবই কঠিন। এস্থলে যে ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তার পটভূমি এই, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফেরদেরকে বলতেন, কুফর করতে থাকলে তার পরিণামে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন এবং মুসলিমদেরকে বিজয়ী করবেন, তখন তারা ঠাট্টাচ্ছলে বলত, আল্লাহ তাআলা যদি আযাব নাযিল করেনই, তবে তাকে বলুন যেন এখনই তা নাযিল করেন। এই বলে তারা বোঝাতে চাচ্ছিল, শাস্তির শাসানি ও মুসলিমদের জয়লাভের প্রতিশ্রুতি তাঁর মনগড়া কথা, এর কোন বাস্তবতা নেই (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের সে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের উত্তর দ্বারাই সূরাটির সূচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রেরিতব্য শাস্তি ও মুসলিমদের জয়লাভের যে সংবাদকে তোমরা অসম্ভব মনে করছ, প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহ তাআলার অনড় ফায়সালা এবং তা এতটা নিশ্চিত, যেন তা ঘটেই গেছে। সুতরাং তোমরা তার আগমনের জন্য তাড়া দেখানোর ছলে তার প্রতি ব্যঙ্গ প্রদর্শন করো না। কেননা তা তোমাদের মাথার উপর খাড়া রয়েছে। পরবর্তী বাক্যে এ শাস্তির অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যকে শরীক করে থাক। অথচ আল্লাহ তাআলা যে কোনও রকমের অংশীদারিত্ব থেকে কেবল পবিত্রই নন, বরং তিনি তার বহু উর্ধ্বে। সুতরাং কাউকে তাঁর শরীক সাব্যস্ত করা তাঁর প্রতি চরম অমর্যাদা প্রকাশের নামান্তর। বিশ্ব-জগতের সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মান করার অনিবার্য পরিণাম তো এটাই যে, যে ব্যক্তি তাঁকে অসম্মান করবে তার উপর আযাব পতিত হবে। (তাফসীরুল মাহাইমী, ১ম খণ্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)  ২  يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ  ইউনাঝঝিলুল মালাইকাতা বিররূহি মিন আমরিহী ‘আলা- মাইঁ ইয়াশাউমিন ‘ইবাদিহীআন আনযিরূআন্নাহূলাইলা-হা ইল্লাআনা-ফাত্তাকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নিজ হুকুমে রূহ (অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চারক ওহী) সহ ফিরিশতা অবতীর্ণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করার জন্য যে, আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। ২ সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর (অন্য কাউকে নয়)।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এই বলে যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং আমাকে ভয় কর।  তাফসীরঃ ২. রূহ দ্বারা ‘ওহী’ বোঝানো হয়েছে, যেমন অন্যত্র কুরআন মাজীদকেও রূহ বলা হয়েছে। সূরা শূরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا আমার নির্দেশে ওহীরূপে তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক রূহ, অর্থাৎ কুরআন (সূরা শূরা ৪২ : ৫২)। ওহী ও কুরআনকে রূহ বলা হয়েছে এর সঞ্জীবনী শক্তির কারণে। রূহ যেমন দেহকে জীবিত করে তোলে, তেমনি ওহী ও কুরআন ও মানুষের মৃত আত্মায় জীবন সঞ্চার করে। -অনুবাদক  ৩  خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ تَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ  খালাকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা বিলহাক্কি তা‘আ-লা-‘আম্মা-ইউশরিকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে যথার্থ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি বহু উর্ধ্বে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যিনি যথাবিধি আকাশরাজি ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার বহু উর্ধ্বে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; এরা যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।  ৪  خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ  খালাকাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন ফাইযা-হুওয়া খাসীমুম মুবীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি মানুষকে শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর সহসা সে প্রকাশ্য বিতণ্ডার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। ৩  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্বেও সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে গেছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখ, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!  তাফসীরঃ ৩. অর্থাৎ, মানুষের সারবত্তা তো কেবল এই যে, সে এক অপবিত্র বিন্দু থেকে সৃষ্টি। কিন্তু সে যখন একটু বাকশক্তি লাভ করল, অমনি সে যেই মহান সত্তা তাকে অপবিত্র বিন্দু থেকে এক পূর্ণাঙ্গ মানব বানিয়েছেন এবং তাকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করেছেন, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে রীতিমত তার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল।  ৫  وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا ۗ لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ  ওয়াল আন‘আ-মা খালাকাহা- লাকুম ফীহা-দিফউওঁ ওয়া মানা-ফি‘উ ওয়া মিনহাতা’কুলূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনিই চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে তোমাদের জন্য শীত থেকে বাঁচার উপকরণ ৪ এবং তা ছাড়া আরও বহু উপকার রয়েছে এবং তা থেকেই তোমরা খেয়েও থাক।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্যে শীত বস্ত্রের উপকরণ আছে। আর অনেক উপকার হয়েছে এবং কিছু সংখ্যককে তোমরা আহার্যে পরিনত করে থাক।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্যে এতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে। এবং তা হতে তোমরা আহার করে থাক।  তাফসীরঃ ৪. অর্থাৎ, তোমরা চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা এমন পোশাক তৈরি কর, যা তোমাদেরকে শীত থেকে রক্ষা করে।  ৬  وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ  ওয়া লাকুম ফীহা-জামা-লুন হীনা তুরী হূনা ওয়াহীনা তাছরাহূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা সন্ধ্যাকালে যখন সেগুলোকে বাড়িতে ফিরিয়ে আন এবং ভোরবেলা যখন সেগুলোকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তার ভেতর তোমাদের জন্য দৃষ্টিনন্দন শোভাও রয়েছে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং তোমরা যখন গোধূলি লগ্নে এদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন এদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ কর।  ৭  وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَىٰ بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنفُسِ ۚ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ  ওয়া তাহমিলুআছকা-লাকুম ইলা-বালাদিল লাম তাকূনূবা-লিগীহি ইল্লা-বিশিক্কিল আনফুছি ইন্না রাব্বাকুম লারাঊফুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং তারা তোমাদের ভার বয়ে নিয়ে যায় এমন নগরে, যেখানে প্রাণান্তকর কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌঁছতে পারতে না। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের প্রতিপালক অতি মমতাময়, পরম দয়ালু।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত পৌছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়াদ্র, পরম দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং এরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।  ৮  وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً ۚ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ  ওয়াল খাইলা ওয়াল বিগা-লা ওয়াল হমীরা লিতারকাবূহা-ওয়াঝীনাতাওঁ ওয়া ইয়াখলুকু মা-লা-তা‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তিনিই সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে আরোহণ করতে পার এবং তা তোমাদের শোভা হয়। তিনি সৃষ্টি করেন এমন বহু জিনিস, যা তোমরা জান না। ৫  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমাদের আরোহণের জন্যে ও শোভার জন্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।  তাফসীরঃ ৫. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট এমন বহু বাহন আছে, যে সম্পর্কে এখন তোমাদের কোন জ্ঞান নেই। এভাবে এ আয়াত আমাদের জানাচ্ছে, যদিও বাহন হিসেবে এখন তোমরা ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাই ব্যবহার করছ, কিন্তু ভবিষ্যতে আল্লাহ তাআলা নতুন-নতুন বাহন সৃষ্টি করবেন। সুতরাং কুরআন নাযিলের পর থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত যে সব বাহন আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন মোটর গাড়ি, বাস, রেল, উড়োজাহাজ, স্টিমার ইত্যাদি কিংবা কিয়ামত পর্যন্ত আরও যা-কিছু আবিষ্কৃত হবে তা সবই এ আয়াতের মধ্যে এসে গেছে। আরবী ব্যাকরণের আলোকে এ আয়াতের তরজমা এভাবেও করা যায়- ‘তিনি এমন সব বস্তু সৃষ্টি করবেন, যে সম্পর্কে তোমরা এখনও জান না।’ এ তরজমা দ্বারা বক্তব্য আরও স্পষ্ট হয়।  ৯  وَعَلَى اللَّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَائِرٌ ۚ وَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ  ওয়া ‘আলাল্লা-হি কাসদুছছাবীলি ওয়া মিনহা-জাইরুওঁ ওয়া লাও শাআ লাহাদা-কুম আজমা‘ঈন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সরল পথ দেখানোর দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার। আর আছে বহু বাঁকা পথ। তিনি চাইলে তোমাদের সকলকে সরল পথে পরিচালিত করতেন। ৬  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরল পথ আল্লাহ্ র কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলির মধ্যে বক্র পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।  তাফসীরঃ ৬. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেমন দুনিয়ার পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এসব বাহন সৃষ্টি করেছেন, তেমনি আখেরাতের রূহানী সফরের জন্য তিনি সরল পথ দেখানোর দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। কেননা মানুষ এর জন্য বহু বাঁকা পথ তৈরি করে রেখেছে। তা থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল পাঠান ও কিতাব নাযিল করেন এবং তাদের মাধ্যমে মানুষকে সরল সোজা পথ দেখিয়ে দেন। তবে কাউকে তিনি জবরদস্তিমূলকভাবে এ পথে পরিচালিত করেন না। ইচ্ছা করলে তাও করতে পারতেন। কিন্তু তা করেন না এজন্য যে, তিনি চান মানুষ তাঁর প্রদর্শিত পথে জবরদস্তিমূলকভাবে নয়; বরং স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে চলুক। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নিজ নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষকে পথ দেখানোর ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হয়েছেন।  ১০  هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ  হুওয়াল্লাযীআনঝালা মিনাছছামাইমাআল্লাকুম মিনহু শারা-বুওঁ ওয়া মিনহু শাজারুন ফীহি তুছীমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, যা থেকে তোমাদের পানীয় লাভ হয় এবং তা থেকেই জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশু চরাও।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনিই আকাশ হতে বারিবর্ষণ করেন। এতে তোমাদের জন্যে রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক।  ১১  يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ  ইউমবিতুলাকুম বিহিঝঝার‘আ ওয়াঝঝাইতূনা ওয়ান্নাখীলা ওয়াল আ‘না-বা ওয়া মিন কুল্লিছছামারা-ত ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তা দ্বারাই তিনি তোমাদের জন্য ফসল, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করেন। ৭ নিশ্চয়ই যারা চিন্তা করে, তাদের জন্য এসব বিষয়ের মধ্যে নিদর্শন আছে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি তোমাদের জন্যে এর দিয়ে জন্মান শস্য, যায়তূন, খর্জুর বৃক্ষ, দ্রাক্ষা এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।  তাফসীরঃ ৭. ফসল দ্বারা সেই সব শস্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা মানুষ দৈনন্দিন খাদ্যরূপে ব্যবহার করে, যেমন গম, চাল, তরি-তরকারি ইত্যাদি। যয়তুন হল সেই সকল বস্তুর একটা নমুনা, যা খাদ্য প্রস্তুত ও তা সুস্বাদু করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর খেজুর, আঙ্গুর ও অন্যান্য ফল দ্বারা সেই সব জিনিসের প্রতি ইশারা করা হয়েছে, যা বাড়তি ভোগ-সৌখিনতায় কাজে আসে।  ১২  وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ  ওয়া ছাখখারা লাকুমুল লাইলা ওয়ান্নাহা-রা ওয়াশশামছা ওয়াল কামারা ওয়াননুজূমু মুছাখখারা-তুম বিআমরিহি ইন্না ফী যা-লিকা লা আ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইয়া‘কিলূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি দিন-রাত ও চন্দ্র-সূর্যকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। নক্ষত্ররাজিও তাঁর নির্দেশে কর্মরত রয়েছে। নিশ্চয়ই এর ভেতর বহু নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা বুদ্ধি কাজে লাগায়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকাসমূহ তাঁরই বিধানের কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন-  ১৩  وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ  ওয়ামা-যারাআ লাকুম ফিল আরদিমুখতালিফান আলওয়া-নুহূ ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াযযাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য রঙ-বেরঙের যে বস্তুরাজি পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাও তাঁর নির্দেশে কর্মরত আছে। নিশ্চয়ই যারা শিক্ষাগ্রহণ করে, সেই সব লোকের জন্য এর মধ্যে নিদর্শন আছে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং তিনি বিবিধ প্রকার বস্তুও যা তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্যে যারা উপদেশ গ্রহণ করে।  ১৪  وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ  ওয়াহুওয়াল্লাযী ছাখখারাল বাহরা লিতা’কুলূমিনহু লাহমান তারিইইয়াওঁ ওয়া তাছতাখরিজূ মিনহু হিলয়াতান তালবাছূনাহা- ওয়া তারাল ফুলকা মাওয়া-খিরা ফীহি ওয়া লিতাবতাগূ মিন ফাদলিহী ওয়া লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত ৮ খেতে পার এবং তা থেকে আহরণ করতে পার অলংকার, যা তোমরা পরিধান কর ৯ এবং তোমরা দেখতে পাও তাতে পানি কেটে কেটে নৌযান চলাচল করে, যাতে তোমরা সন্ধান করতে পার আল্লাহর অনুগ্রহ এবং যাতে তোমরা শোকর গোজার হয়ে যাও। ১০  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পার রতèাবলী, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখতে পাও, এর বুক চিরিয়া নৌযান চলাচল করে এবং তা এইজন্যে যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;  তাফসীরঃ ৮. এর দ্বারা মাছের গোশত বোঝানো হয়েছে।  ৯. সাগর থেকে মণি-মুক্তা আহরণ করা হয়, যা অলংকারাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।  ১০. অর্থাৎ, সাগর পথে বাণিজ্য-ভ্রমণ করে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও। কুরআন মাজীদে ‘আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান’-এর পরিভাষাটি বিভিন্ন আয়াতে ‘ব্যবসা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। দেখুন সূরা বাকারা (২ : ১৬৮), সূরা বনী ইসরাঈল (১৭ : ১২, ৬৬), সূরা কাসাস (২৮ : ৭৩), সূরা রূম (৩০ : ৪৬), সূরা ফাতির (৩৫ : ১২), সূরা জাছিয়া (৪৫ : ১২), সূরা জুমুআ (৬২ : ১০) ও সূরা মুযযাম্মিল (৭৩ : ২০)। তেজারতকে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ সাব্যস্ত করার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়, তবে ইসলামে তা পছন্দনীয় কাজ। দ্বিতীয়ত এ পরিভাষা দ্বারা ব্যবসায়ীদেরকে বোঝানো হচ্ছে যে, ব্যবসায় যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা মূলত আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ, কেবল ব্যবসায়ীর চেষ্টার ফসল নয়। কেননা মানুষ যতই চেষ্টা করুক, যদি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ না থাকে, তবে তা কখনই ফলপ্রসূ হতে পারে না। সুতরাং ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জিত হলে তাকে নিজ চেষ্টার্জিত মনে করে অহমিকা দেখানো সমীচীন নয়; বরং আল্লাহ তাআলার দান মনে করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত।  ১৫  وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ  ওয়া আলকা-ফিল আরদি রাওয়া-ছিয়া আন তামীদাবিকুমওয়াআনহা-রাওঁ ওয়া ছুবুলাল লা‘আল্লাকুম তাহতাদূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং তিনি পৃথিবীতে পাহাড়ের ভার স্থাপন করেছেন, যাতে তা তোমাদের নিয়ে দোল না খায় ১১ এবং নদ-নদী ও পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার;  তাফসীরঃ ১১. প্রথমে পৃথিবীকে যখন সাগরের উপর স্থাপন করা হয়েছিল, তখন পৃথিবী দোল খাচ্ছিল। আল্লাহ তাআলা পাহাড় দ্বারা তা স্থির করে দেন। আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা জানা যায়, এখনও বড়-বড় মহাদেশ সাগরের পানির উপর ঈষৎ নড়াচড়া করছে। কিন্তু সে নড়াচড়া অত্যন্ত মৃদু, যা মানুষ টের পায় না।  ১৬  وَعَلَامَاتٍ ۚ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ  ওয়া ‘আলা-মা-তিওঁ ওয়াবিন্নাজমি হুম ইয়াহতাদূ ন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং (পথ চেনার সুবিধার্থে) বহু আলামত তৈরি করেছেন, তাছাড়া মানুষ নক্ষত্র দ্বারা পথ চিনে নেয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং তিনি পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন, এবং তারকা দ্বারা ও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং পথনির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর এরা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।  ১৭  أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ ۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ  আফামাইঁ ইয়াখলুকুকামাল লা-ইয়াখলুকু আফালা-তাযাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সুতরাং বল, যেই সত্তা (এতসব বস্তু) সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার সমান হতে পারেন, যে কিছুই সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যিনি সৃষ্টি করে, তিনি কি সে লোকের সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না? তোমরা কি চিন্তা করবে না?  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না ? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না ?  ১৮  وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ  ওয়া ইন তা‘উদ্দূনি‘মাতাল্লা-হি লা-তুহসূহা- ইন্নাল্লা-হা লাগাফরুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা যদি আল্লাহর নি‘আমতসমূহ গুণতে শুরু কর, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না। বস্তুত আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ১২  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ্ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।  তাফসীরঃ ১২. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার নি‘আমত যখন এত বিপুল, যা গণা সম্ভব নয়, তখন তার তো দাবী ছিল মানুষ সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ে লিপ্ত থাকবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা জানেন, মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাই তিনি তাদের সঙ্গে মাগফিরাত ও রহমত সুলভ আচরণ করেন এবং তাদের দ্বারা শোকর আদায়ে যে কমতি ঘটে তা ক্ষমা করে দেন। তবে তিনি এটা অবশ্যই চান যে, মানুষ তাঁর আহকাম মোতাবেক জীবন যাপন করবে এবং প্রকাশ্য ও গোপন সর্বাবস্থায় তাঁর অনুগত হয়ে চলবে। এজন্য সর্বদা তার অন্তরে এ চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি কাজ জানেন, চাই সে তা প্রকাশ্যে করুক বা গোপনে। সুতরাং পরবর্তী আয়াতে এ সত্যই ব্যক্ত হয়েছে।  ১৯  وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ  ওয়াল্লা-হু ইয়া‘লামুমা-তুছিররূনা ওয়ামা-তু‘লিনূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা যা গোপনে কর তা আল্লাহ জানেন এবং তোমরা যা প্রকাশ্যে কর তাও।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর আল্লাহ্ তা জানেন।  ২০  وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ  ওয়াল্লাযীনা ইয়াদ‘ঊনা মিন দূনিল্লা-হি লা-ইয়াখলুকূ না শাইআওঁ ওয়া হুম ইউখলাকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যে সব দেব-দেবীকে) ডাকে, তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। তাদের নিজেদেরই তো সৃষ্টি করা হয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে, ওরা তো কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহ্বান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।  ২১  أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ ۖ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ  আমওয়া-তুন গাইরু আহইয়াইওঁ ওয়ামা-ইয়াশ‘উরূনা আইইয়া-না ইউব‘আছূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা নিষ্প্রাণ। তাদের ভেতর জীবন নেই। তাদেরকে কখন জীবিত করে উঠানো হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। ১৩  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা মৃত-প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে, জানে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তারা নি®প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।  তাফসীরঃ ১৩. এর দ্বারা তারা যাদের পূজা করত সেই প্রতিমাদের বোঝানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা অন্যকে সৃষ্টি করবে কি, নিজেরাই তো অন্যের হাতে তৈরি। তাদের না আছে জান, না জীবন। তাদের একথাও জানা নেই যে, মৃত্যুর পর তাদের পূজারীদেরকে কবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?  ২২  إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۚ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ  ইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়াহিদুন ফাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি কুলূবুহুম মুনকিরাতুওঁ ওয়াহুম মুছতাকবিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহমিকায় লিপ্ত।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমাদের ইলাহ একক ইলাহ। অনন্তর যারা পরজীবনে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকারী।  ২৩  لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ  লা-জারামা আন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমা-ইউছিররূনা ওয়ামা-ইউ‘লিনূন ইন্নাহু লাইউহিব্বুল মুছতাকবিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এটা সুনিশ্চিত যে, তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং তারা যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ১৪  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এটা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ্ জানেন যা এরা গোপন করে এবং যা এরা প্রকাশ করে। তিনি তো অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।  তাফসীরঃ ১৪. আল্লাহ তাআলা যেহেতু অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না তাই তিনি অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর সেজন্য আখেরাতের অস্তিত্ব থাকা অপরিহার্য। কাজেই আখেরাতকে অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই।  ২৪  وَإِذَا قِيلَ لَهُم مَّاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۙ قَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ  ওয়া ইযা- কীলা লাহুম মা-যাআনঝালা রাব্বুকুম কা-লূআছা-তীরুল আওওয়ালীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কী বিষয় অবতীর্ণ করেছেন? তারা বলে বিগতদের গল্প!  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন? তারা বলেঃ পূর্ববর্তীদের কিসসা-কাহিনী।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যখন এদেরকে বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন ?’ তখন এরা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা!’  ২৫  لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۙ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ  লিইয়াহমিলূআওঝা-রাহুম কা-মিলাতাইঁ ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ওয়া মিন আওঝারিল্লাযীনা ইউদিললূনাহুম বিগাইরি ‘ইলমিন আলা-ছাআ মা ইয়াঝিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (এসবের) পরিণাম হল এই যে, কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের (কৃত গুনাহের) পরিপূর্ণ ভারও বহন করবে এবং তাদেরও ভারের একটা অংশ, যাদেরকে তারা কোনরূপ জ্ঞান ব্যতিরেকে বিপথগামী করছে। ১৫ স্মরণ রেখ, তারা যা বহন করছে তা অতি মন্দ।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ফলে কেয়ামতের দিন ওরা পূর্ণমাত্রায় বহন করবে ওদের পাপভার এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা তাদের অজ্ঞতাহেতু বিপথগামী করে শুনে নাও, খুবই নিকৃষ্ট বোঝা যা তারা বহন করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফলে কিয়ামত দিবসে এরা বহন করবে এদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে এরা অজ্ঞতাহেতু বিভ্রান্ত করেছে। দেখ, এরা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট!  তাফসীরঃ ১৫. অর্থাৎ, তারা আল্লাহ তাআলার কালামকে গল্প-গুজব সাব্যস্ত করে যাদেরকে বিপথগামী করেছিল, তারা তাদের প্রভাব-বলয়ে থেকে যেসব গুনাহ করত, তার বোঝাও তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।  ২৬  قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَأَتَى اللَّهُ بُنْيَانَهُم مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِن فَوْقِهِمْ وَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ  কাদ মাকারাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাআতাল্লা-হুবুনইয়া-নাহুম মিনাল কাওয়া-‘ইদি ফাখাররা ‘আলাইহিমুছছাকফুমিন ফাউকিহিম ওয়া আতা-হুমুল ‘আযা-বুমিন হাইছু লাইয়াশ‘উরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তাদের পূর্ববর্তী লোকেও চক্রান্ত করেছিল। পরিণামে তারা যে (ষড়যন্ত্রের) ইমারত নির্মাণ করেছিল, আল্লাহ তার ভিত্তিমূল উপড়ে ফেললেন ফলে উপর থেকে ছাদও তাদের উপর ধ্বসে পড়ল। আর এমন স্থান থেকে তাদের উপর আযাব আপতিত হল, যা তারা টের করতেই পারছিল না। ১৬  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান নিশ্চয় চক্রান্ত করেছে তাদের পূর্ববর্তীরা, অতঃপর আল্লাহ তাদের চক্রান্তের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন। এরপর উপর থেকে তাদের মাথায় ছাদ ধ্বসে পড়ে গেছে এবং তাদের উপর আযাব এসেছে যেখান থেকে তাদের ধারণা ছিল না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল; আল্লাহ্ এদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ এদের ওপর ধসে পড়ল এবং এদের প্রতি শাস্তি এলো এমন দিক হতে যা ছিল এদের ধারণার অতীত।  তাফসীরঃ ১৬. অর্থাৎ মক্কাবাসীদের আগেও বহু জাতি তাদের নবীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের সাধ্যমত সবকিছুই করেছিল, কিন্তু পরিণামে এমনভাবে তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়েছিল, যা ছিল তাদের ধারণার অতীত। এটাই সর্বকালে আল্লাহ তাআলার নীতি। নবীগণ এবং তাদের যথার্থ অনুসারীগণ যখন দাওয়াতী কার্যক্রমে অবতীর্ণ হন, বাতিল শক্তি তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়ে। তারা থাকে দর্পিত-স্পর্ধিত। নিজেদের শক্তি-সামর্থের উপর অত্যধিক আস্থা থাকার কারণে কোনও রকম বিপর্যয়ের কথা তাদের মনেও আসে না। কিন্তু ওদিকে নিজেদের সক্ষমতার উপর নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কুদরতের উপর পূর্ণ আস্থা থাকার কারণে সত্যপন্থীদের পক্ষে আল্লাহ তাআলার সাহায্য থাকে। তাঁর ঘোষণা রয়েছে وَلَيَنْصُرَنَّ اللّٰهُ مَنْ يَّنْصُرُهُ যে আল্লাহর দীনের সাহায্য করে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন’। (সূরা হজ্জ ২২ : ৪০) সুতরাং একদিকে তিনি তাদেরকে জয়যুক্ত করেন আর অন্যদিকে সত্যের দুশমনদেরকে তাদের কল্পনার বাইরে জেরবার করে দেন। -অনুবাদক  ২৭  ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنتُمْ تُشَاقُّونَ فِيهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ إِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوءَ عَلَى الْكَافِرِينَ  ছু ম্মা ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইউখঝীহিম ওয়া ইয়াকূলুআইনা শুরাকাই ইয়াল্লাযীনা কুনতুম তুশাক্কূনা ফীহিম কা-লাল্লাযীনা ঊতুল ‘ইলমা ইন্নাল খিঝইয়াল ইয়াওমা ওয়াছছূআ ‘আলাল কা-ফিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার সেই শরীকগণ কোথায়, যাদেরকে নিয়ে তোমরা (মুসলিমদের সাথে) বিতণ্ডা করতে? ১৭ যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তারা (সে দিন) বলবে, আজ বড় লাঞ্ছনা ও দুর্দশা চেপেছে সেই কাফেরদের উপর  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতঃপর কেয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেনঃ আমার অংশীদাররা কোথায়, যাদের ব্যাপারে তোমরা খুব হঠকারিতা করতে ? যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছিল তারা বলবেঃ নিশ্চয়ই আজকের দিনে লাঞ্ছনা ও দুর্গতি কাফেরদের জন্যে,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরে কিয়ামতের দিন তিনি এদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তিনি বলবেন, ‘কোথায় আমার সেই সমস্ত শরীক যাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতণ্ডা করতে ?’ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে, ‘আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের-’  তাফসীরঃ ১৭. অর্থাৎ তোমাদের বিশ্বাস ছিল তারা তোমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে আর এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও করতে। ঠিক আছে, এখন তাদেরকে ডাক, তারা তোমাদের জন্য সুপারিশ করুক। আল্লাহ তাআলা এ কথা বলবেন, পরিহাস ও তিরস্কারস্বরূপ। -অনুবাদক  ২৮  الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ ۖ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِن سُوءٍ ۚ بَلَىٰ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ  আল্লাযীনা তাতাওয়াফফা-হুমুল মালাইকাতুজা-লিমীআনফুছিহিম ফাআলকাউছ ছালামা মা-কুন্না-না‘মালুমিন ছূইন বালাইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুম বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী ফিরিশতাগণ যাদের রূহ এই অবস্থায় সংহার করেছে, যখন তারা (কুফরীতে লিপ্ত থেকে) নিজ সত্তার উপর জুলুম করছিল। ১৮ এ সময় কাফেরগণ আত্মসমর্পণ করে বলবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। (তাদের বলা হবে) আলবৎ করতে! তোমরা যা-কিছু করতে সব আল্লাহ জানেন।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ফেরেশতারা তাদের জান এমতাঅবস্থায় কবজ করে যে, তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তখন তারা অনুগত্য প্রকাশ করবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। হঁ্যা নিশ্চয় আল্লাহ সববিষয় অবগত আছেন, যা তোমরা করতে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাদের মৃত্যু ঘটায় ফেরেশতাগণ এরা নিজেদের প্রতি জুলুম করতে থাকা অবস্থায়; এরপর এরা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না।’ এবং নিশ্চয়ই তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।  তাফসীরঃ ১৮. এর দ্বারা জানা গেল, যারা কুফর অবস্থায় মারা যায় শাস্তি কেবল তাদেরই হবে। মৃত্যুর আগে আগে যদি কেউ তাওবা করে ঈমান এনে ফেলে তবে তার তাওবা কবুল হয়ে যায় এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।  ২৯  فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ  ফাদখুলূআবওয়া-বা জাহান্নামা খালিদীনা ফীহা- ফালাবি’ছা মাছওয়াল মুতাকাববিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সুতরাং এখন স্থায়ীভাবে জাহান্নাম বাসের জন্য তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। অহংকারীদের এ ঠিকানা কতই না মন্দ!  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতএব, জাহান্নামের দরজসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে। দেখ, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!  ৩০  ۞ وَقِيلَ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا مَاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۚ قَالُوا خَيْرًا ۗ لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ ۚ وَلَدَارُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ ۚ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِينَ  ওয়া কীলা লিল্লাযীনাততাকাও মা-যাআনঝালা রাব্বুকুম কা-লূখাইরাল লিল্লাযীনা আহছানূফী হা-যিহিদদুনইয়া-হাছানাতুওঁ ওয়া লাদা-রুল আ-খিরাতি খাইরুওঁ ওয়ালানি‘মা দা-রুল মুত্তাকীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (অন্য দিকে) মুত্তাকীদের জিজ্ঞেস করা হল, তোমাদের প্রতিপালক কী নাযিল করেছেন? তারা বলল, সমূহ কল্যাণই নাযিল করেছেন। (এভাবে) যারা পুণ্যের কর্মপন্থা অবলম্বন করেছে তাদের জন্য ইহকালেও মঙ্গল আছে, আর আখেরাতের নিবাস তো আগাগোড়া মঙ্গলই। মুত্তাকীদের নিবাস কতই না উত্তম  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান পরহেযগারদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন? তারা বলেঃ মহাকল্যাণ। যারা এ জগতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। পরহেযগারদের গৃহ কি চমৎকার?  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং যারা মুত্তাকী ছিল তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছিলেন ?’ তারা বলবে, ‘মহাকল্যাণ’। যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে এই দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট এবং মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম!-  ৩১  جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَاءُونَ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْزِي اللَّهُ الْمُتَّقِينَ  জান্না-তু‘আদনিইঁ ইয়াদখুলূনাহা-তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু লাহুম ফীহা-মাইয়াশাঊনা কাযা-লিকা ইয়াজঝিল্লা-হুল মুত্তাকীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী স্থায়ী বসবাসের সেই উদ্যান, যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে এবং তারা সেখানে যা-কিছু চাবে তাই পাবে। আল্লাহ এ রকমই পুরস্কার দিয়ে থাকেন মুত্তাকীদেরকে  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয় তাদের জন্যে তাতে তা-ই রয়েছে, যা তারা চায় এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহর পরহেযগারদেরকে,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তা স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে; এর পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু কামনা করবে এতে তাদের জন্যে তাই থাকবে। এইভাবেই আল্লাহ্ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে,  ৩২  الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ ۙ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ  আল্লাযীনা তাতাওয়াফফা-হুমুল মালাইকাতুতাইয়িবীনা ইয়াকূলূনা ছালা-মুন ‘আলাইকুমু দ খুলুল জান্নাতা বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা ওই সকল লোক, ফিরিশতাগণ যাদের রূহ কবজ করে তাদের পাক-পবিত্র থাকা অবস্থায়। ১৯ তারা (তাদেরকে) বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যে আমল করতে, তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শাস্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিশতাগণ বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’  তাফসীরঃ ১৯. অর্থাৎ কুফর ও শিরক এবং পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে তারা পাক-পবিত্র থাকবে এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত। -অনুবাদক  ৩৩  هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ أَمْرُ رَبِّكَ ۚ كَذَٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ  হাল ইয়ানজু রূনা ইল্লাআন তা’তিয়াহুমুল মালাইকাতুআও ইয়া’তিয়া আমরু রাব্বিকা কাযা-লিকা ফা‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ওয়ামা জালামাহুমুল্লা-হু ওয়ালা-কিন কানূআনফুছাহুম ইয়াজলিমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ ঈমান আনার ব্যাপারে) কি কেবল এরই প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা এসে উপস্থিত হবে অথবা তোমার প্রতিপালকের হুকুম (আযাব বা কিয়ামতরূপে) এসে পড়বে? যেসব জাতি তাদের পূর্বে গত হয়েছে, তারাও এরূপই করেছিল। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন জুলুম করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান কাফেররা কি এখন অপেক্ষা করছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে কিংবা আপনার পালনকর্তার নির্দেশ পৌছবে? তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছিল। আল্লাহ তাদের প্রতি অবিচার করেননি; কিন্তু তারা স্বয়ং নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা শুধু প্রতীক্ষা করে এদের নিকট ফেরেশতা আগমনের বা তোমার প্রতিপালকের শাস্তি আগমনের। এদের পূর্ববর্তীরা এইরূপই করত। আল্লাহ্ এদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই, কিন্তু এরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করত।  ৩৪  فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا عَمِلُوا وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ  ফাআসা-বাহুম ছাইয়িআ-তু মা-‘আমিলূ ওয়া হা-কাবিহিমমা- কা-নূ বিহী ইয়াছতাহঝিঊন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সুতরাং তাদের উপর তাদের মন্দ কাজের কুফল আপতিত হয়েছিল এবং তারা যে জিনিস নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তাই এসে তাদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সুতরাং তাদের মন্দ কাজের শাস্তি তাদেরই মাথায় আপতিত হয়েছে এবং তারা যে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত, তাই উল্টে তাদের উপর পড়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুতরাং এদের ওপর আপতিত হয়েছিল এদেরই মন্দ কর্মের শাস্তি এবং এদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল তাই, যা নিয়ে এরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত।  ৩৫  وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ نَّحْنُ وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ ۚ كَذَٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ  ওয়া কালাল্লাযীনা আশরাকূলাও শাআল্লা-হু মা-‘আবাদনা-মিন দূ নিহী মিন শাইয়িন নাহনুওয়ালাআ-বাউনা-ওয়ালা-হাররামনা-মিন দূ নিহী মিন শাইয়িন কাযা-লিকা ফা‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাহাল ‘আলাররুছুলি ইল্লাল বালা-গুল মুবীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা শিরক অবলম্বন করেছে, তারা বলে, আল্লাহ চাইলে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতাম না না আমরা এবং না আমাদের বাপ-দাদাগণ এবং আমরা তার হুকুম ছাড়া কোন জিনিস হারামও সাব্যস্ত করতাম না। তাদের পূর্বে যে সকল জাতি গত হয়েছে তারাও এ রকমই করেছিল। কিন্তু স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছানো ছাড়া রাসূলগণের আর কোন দায়িত্ব নেই। ২০  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান মুশরিকরা বললঃ যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমরা তাঁকে ছাড়া কারও এবাদত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষেরাও করত না এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোন বস্তুই আমরা হারাম করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছে। রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুশরিকরা বলবে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃপুরুষেরা ও আমরা তাঁকে ব্যতীত অপর কোন কিছুর ‘ইবাদত করতাম না এবং তাঁর অনুজ্ঞা ব্যতীত আমরা কোন কিছু নিষিদ্ধ করতাম না।’ এদের পূর্ববর্তীরা এরূপই করত। রাসূলদের কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেওয়া।  তাফসীরঃ ২০. তাদের উক্তি ‘আল্লাহ চাইলে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতাম না’ এটা সম্পূর্ণ হঠকারিতাপ্রসূত কথা। এ রকম কথা তো যে-কোনও অপরাধীই বলতে পারে। কঠিন থেকে কঠিন অপরাধ করবে আর বলে দেবে, আল্লাহ চাইলে আমি এরূপ অপরাধ করতাম না। এরূপ জবাব কখনও গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা এর কোন প্রতিউত্তর না করে কেবল জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাসূলদের দায়িত্ব বার্তা পৌঁছানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। যেভাবেই হোক এরূপ জেদী লোকদেরকে সৎপথে আনতেই হবে এটা তাদের দায়িত্ব নয়। তারা যে বলছে, ‘আমরা কোন জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করতাম না’, এর দ্বারা তারা তাদের প্রতিমাদের নামে যেসব পশু হারাম করেছিল, তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিস্তারিত দেখুন সূরা আনআম (৬ : ১৩৯-১৪৫)।  ৩৬  وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ  ওয়ালাকাদ বা‘আছনা-ফী কুল্লি উম্মাতির রাছূলান আনি‘বুদুল্লা-হা ওয়াজতানিবুততাগূতা ফামিনহুম মান হাদাল্লা-হু ওয়া মিনহুম মান হাক্কাত ‘আলাইহিদ্দালা-লাতু ফাছীরূ ফিল আরদিফানজুরূকাইফা কা-না ‘আ-কিবাতুল মুকাযযি বীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোনও না কোনও রাসূল পাঠিয়েছি এই পথনির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে পরিহার কর। ২১ তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে একটু পরিভ্রমণ করে দেখ, (নবীদেরকে) অস্বীকারকারীদের পরিণতি কী হয়েছে?  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ র ‘ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দিবার জন্যে আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। এরপর এদের কতককে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং এদের কতকের ওপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে !  তাফসীরঃ ২১. ‘তাগুত’ শয়তানকেও বলে আবার প্রতিমাদেরকেও বলে। সে হিসেবে বাক্যটির দুই ব্যাখ্যা হতে পারে। (ক) তোমরা শয়তানকে পরিহার করো, তার অনুগামী হয়ো না। (খ) তোমরা মূর্তিপূজা হতে বেঁচে থাক।  ৩৭  إِن تَحْرِصْ عَلَىٰ هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ  ইন তাহরিস ‘আলা-হুদা-হুম ফাইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াহদী মাইঁ ইউদিল্লুওয়ামা-লাহুম মিন্নাসিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (হে নবী!) তাদের হিদায়াতপ্রাপ্তির লোভ যদি তোমার থাকে, তবে বাস্তবতা হল, আল্লাহ যাদেরকে (তাদের একরোখামির কারণে) পথভ্রষ্ট করেন তাদেরকে হিদায়াতে উপনীত করেন না এবং এরূপ লোকের কোন রকমের সাহায্যকারীও লাভ হয় না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আপনি তাদেরকে সুপথে আনতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন তিনি তাকে পথ দেখান না এবং তাদের কোন সাহায্যকারী ও নেই।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তুমি এদের পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না এবং এদের কোন সাহায্যকারীও নাই।  ৩৮  وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ ۙ لَا يَبْعَثُ اللَّهُ مَن يَمُوتُ ۚ بَلَىٰ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ  ওয়া আকছামূবিল্লা-হি জাহদা আইমা-নিহিম লা-ইয়াব‘আছুল্লা-হু মাইঁ ইয়ামূতু বালা-ওয়া‘দান ‘আলাইহি হাক্কাওঁ ওয়ালা-কিন্না আকছারান্না-ছি লা-ইয়া‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, যারা মারা যায় আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন না। কেন করবেন না? এটা তো এক প্রতিশ্রুতি, যাকে সত্যে পরিণত করার দায়িত্ব আল্লাহর, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে যে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই এর পাকাপোক্ত ওয়াদা হয়ে গেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক জানে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহ্ র শপথ করে বলে, ‘যার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না।’ কেন নয়, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়-  ৩৯  لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّهُمْ كَانُوا كَاذِبِينَ  লিইউবাইয়িনা লাহুমুল্লাযী ইয়াখতালিফূনা ফীহি ওয়া লিইয়া‘লামাল্লাযীনা কাফারূআন্নাহুম কা-নূকা-যিবীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (আল্লাহ পুনর্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি করেছেন) মানুষ যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে, তা তাদের সামনে স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য এবং যাতে কাফেরগণ জানতে পারে যে, তারা মিথ্যাবাদী ছিল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনি পুনরুজ্জীবিত করবেনই, যাতে যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল তা প্রকাশ করা যায় এবং যাতে কাফেরেরা জেনে নেয় যে, তারা মিথ্যাবাদী ছিল।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তিনি পুনরুত্থিত করবেন যে বিষয়ে এদের মতানৈক্য ছিল তা এদেরকে স্পষ্টভাবে দেখাবার জন্যে এবং যাতে কাফিররা জানতে পারে যে, এরাই ছিল মিথ্যাবাদী।  ৪০  إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ  ইন্নামা-কাওলুনা-লিশাইয়িন ইযাআরদনা-হু আন নাকূলা লাহূকুন ফাইয়াকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি যখন কোন জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছা করি, তখন আমার পক্ষ থেকে কেবল এতটুকু কথাই হয় যে, আমি তাকে বলি, ‘হয়ে যাও’, অমনি তা হয়ে যায়। ২২  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও,। সুতরাং তা হয়ে যায়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি কোন কিছু ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে আমার কথা কেবল এই যে, আমি বলি, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।  তাফসীরঃ ২২. পূর্বের আয়াতে আখেরাতে যে দ্বিতীয় জীবন আসছে, তার উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছিল। আর এ আয়াতে কাফেরগণ মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবনকে কী কারণে অসম্ভব মনে করত তা বর্ণনা করত তার জবাব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, তোমরা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অসম্ভব মনে করছ এ কারণে যে, তা তোমাদের চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বের জিনিস। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষে কোনও কাজই কঠিন নয়। কোন জিনিস সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে পরিশ্রম করতে হয় না। তিনি কেবল আদেশ দান করেন আর সঙ্গে সঙ্গে সে জিনিস সৃষ্টি হয়ে যায়।  ৪১  وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ  ওয়াল্লাযীনা হা-জারূফিল্লা-হি মিম বা‘দি মা-জু লিমূলানুবাওবিআন্নাহুম ফিদদুনইয়াহাছানাতাওঁ ওয়ালাআজরুল আ-খিরাতি আকবার । লাও কা-নূইয়া‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে হিজরত করেছে নিশ্চিত থেক আমি দুনিয়ায়ও তাদেরকে উত্তম নিবাস দান করব আর আখেরাতের প্রতিদান তো নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। হায়! তারা যদি জানত। ২৩  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে গৃহত্যাগ করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহ্ র পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দিব; এবং আখিরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ। হায়, এরা যদি তা জানত!  তাফসীরঃ ২৩. যেমন সূরাটির পরিচিতিতে বলা হয়েছিল, এ আয়াতে সেই সাহাবীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তবে আয়াতে ব্যবহৃত শব্দাবলী সাধারণ। কাজেই দীনের খাতিরে যে-কোনও দেশত্যাগী মুহাজিরের জন্য এ আয়াত প্রযোজ্য। সবশেষে যে বলা হয়েছে, ‘হায়, তারা যদি জানত!’ এর দ্বারাও দৃশ্যত সেই মুহাজিরগণকেই বোঝানো উদ্দেশ্য। এর অর্থ, তারা যদি এই প্রতিদান ও পুরস্কার সম্পর্কে জানতে পারত তবে নির্বাসনের কারণে তাদের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বিলকুল দূর হয়ে যেত। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এর দ্বারা কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ, হায় এই সত্য যদি তারাও জানতে পারত, তবে তারা অবশ্যই কুফর পরিত্যাগ করত।  ৪২  الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ  আল্লাযীনা সাবারূওয়া‘আলা-রাব্বিহিম ইয়া তাওয়াক্কালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা ওই সব লোক, যারা সবর অবলম্বন করে এবং নিজ প্রতিপালকের উপর ভরসা রাখে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা দৃঢ়পদ রয়েছে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করেছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা ধৈর্য ধারণ করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে।  ৪৩  وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۚ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ  ওয়ামা আরছালনা- মিন কাবলিকা ইল্লা- রিজা-লান নূহী ইলাইহিম ফাছআলূ আহলাযযিকরি ইন কুনতুম লা-তা‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (হে নবী!) তোমার পূর্বেও আমি অন্য কাউকে নয়, কেবল পুরুষ মানুষকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী নাযিল করতাম। ২৪ (হে অবিশ্বাসীগণ!) যদি এ বিষয়ে তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। ২৫  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে;  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ পুরুষই প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা কর-  তাফসীরঃ ২৪. এর দ্বারা আম-সাধারণকে উলামার শরণাপন্ন হওয়ার তালিম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শরীআতের কোন বিষয় যার জানা না থাকবে সে আন্দাজ-অনুমান ও নিজ যুক্তি বুদ্ধির পিছনে না পড়ে উলামাদের কাছ থেকে সমাধান জেনে নেবে। এর দ্বারা ইমামগণের তাকলীদ করার জরুরতও প্রমাণিত হয়। -অনুবাদক  ২৫. এ আয়াত নাযিল হয়েছে কুরাইশ মুশরিকদের এই উক্তির জবাবে যে, কোন মানুষ তাঁর রাসূল হবে, আল্লাহ এর বহু ঊর্ধ্বে। তিনি আমাদের প্রতি কোন ফিরিশতাকে পাঠালেন না কেন? আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন, হে নবী! আপনার আগেও আমি পুরুষ মানুষদেরকেই রাসূল করে পাঠিয়েছি, ফিরিশতাদেরকে নয়। মানুষের প্রতি মানুষকে রাসূল করে পাঠানোই আমার শাশ্বত নিয়ম। লক্ষ করে দেখুন অতীত জাতিসমূহের দিকে, তাদের কারও প্রতি মানুষ ছাড়া আর কাউকে কখনও নবী করে পাঠানো হয়েছে কিনা? এখন কেন তার ব্যতিক্রম করা হবে? আল্লাহ তার নিয়মের ব্যতিক্রম করেন না। কেননা তাতে মানুষের কল্যাণ নেই। মানুষের কাছে মানুষ ছাড়া কাউকে নবী করে পাঠানো হলে নবী পাঠানোর উদ্দেশ্যই হাসিল হবে না। প্রথমত মানুষ তাকে নবী বলে স্বীকারই করতে চাইবে না, দ্বিতীয়ত স্বজাতীয় না হওয়ার কারণে মানুষ তাকে আদর্শরূপেও গ্রহণ করতে পারবে না। কাজেই নবী-রাসূল পাঠানোর সার্থকতা মানুষকে পাঠানোর মধ্যেই নিহিত। আল্লাহ তাআলা শব্দ ব্যবহার করেছেন رجالا ‘অর্থাৎ পুরুষদেরকে’। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে নবী করে পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন। মুশরিকদেরকেও কটাক্ষ করা হয়ে থাকবে যে, তারা ফিরিশতাদেরকে নবী বানানোর কথা বলে কি করে, যখন তাদের ধারণা ফিরিশতারা নারী? অতীতেও তো আল্লাহ যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলেই পুরুষ ছিলেন। তাদের তালিকায় তারা কোন নারীর নাম পায় কি? তাদের নিজেদের জানা না থাকলে আসমানী কিতাবের জ্ঞান যাদের আছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুক কোন নারী নবীর নাম তারা কেউ কখনও শুনেছে কি না। বস্তুত ওহীর গুরুভার, দাওয়াতের মেহনত-সংগ্রাম ও অনুসারীদের দেখভাল করার বহুমুখী ঝক্কি-ঝামেলা বরদাশত করা নারীর পক্ষে সম্ভব ও শোভন নয়। তাই নারীকে নবী বানালে নবুওয়াতের লক্ষ-উদ্দেশ্যই ব্যাহত হত। এর দ্বারা ভবিষ্যতেও নারী নবীর সম্ভাবনা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। -অনুবাদক  ৪৪  بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ۗ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ  বিলবাইয়িনা-তি ওয়াঝঝুবুরি ওয়া আনঝালনাইলাইকাযযিকরা লিতুবাইয়িনা লিন্না-ছি মা-নুঝঝিলা ইলাইহিম ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সে রাসূলদেরকে উজ্জ্বল নিদর্শন ও আসমানী কিতাব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। (হে নবী!) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে প্রমানাদি ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্টভাবে প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্ট বুঝাইয়া দিবার জন্যে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে এরা চিন্তা করে।  ৪৫  أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ أَن يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ  আফাআমিনাল্লাযীনা মাকারুছছাইয়িআ-তি আইঁ ইয়াখছিফাল্লা-হুবিহিমুল আরদাআও ইয়া’তিয়াহুমুল ‘আযা-বুমিন হাইছুলা-ইয়াশ‘উরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তবে কি যারা নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা এ বিষয় থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ বোধ করছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেবেন বা তাদের উপর এমন স্থান থেকে শাস্তি আসবে, যা তারা ধারণাই করতে পারবে না  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে যা তাদের ধারণাতীত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়েছে যে, আল্লাহ্ এদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না বা এমন দিক হতে শাস্তি আসবে না, যা এদের ধারণাতীত ?  ৪৬  أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ  আও ইয়া’খুযাহুম ফী তাকাল্লুবিহিম ফামা-হুম বিমু‘জিঝীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী অথবা তাদেরকে চলাফেরা করা অবস্থায়ই ধৃত করবেন? তারা তো তাকে ব্যর্থ করতে পারবে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান কিংবা চলাফেরার মধ্যেই তাদেরকে পাকড়াও করবে, তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি এদের ধৃত করবেন না ? এরা তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না।  ৪৭  أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَىٰ تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ  আও ইয়া’খুযাহুম ‘আলা-তাখাওউফিন ফাইন্না রাব্বাকুম লারাঊফুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী অথবা তিনি তাদেরকে এভাবে পাকড়াও করবেন যে, তারা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকবে। ২৬ কেননা তোমার প্রতিপালক অতি মমতাময়, পরম দয়ালু। ২৭  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান কিংবা ভীতি প্রদর্শনের পর তাদেরকে পাকড়াও করবেন? তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত নম্র, দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন অথবা এদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ধৃত করবেন না ? তোমাদের প্রতিপালক তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।  তাফসীরঃ ২৬. ‘কেননা’-এর সম্পর্ক ‘নিরাপদ বোধ করা’এর সাথে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যেহেতু মমতাবান ও দয়াময়, তাই তিনি কাফেরদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। সহসাই তাদেরকে শাস্তি দেন না। এর ফলে কাফেররা নির্ভয় হয়ে গেছে এবং নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করছে। অথচ তাদের উচিত ছিল নির্ভয় নিশ্চিন্ত না হয়ে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের পরিণাম থেকে শিক্ষা নেওয়া।  ২৭. অর্থাৎ, এক দফায় তাদেরকে ধ্বংস করবেন না; বরং নিজ দুষ্কর্মের কারণে তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধরা হবে এবং ধীরে ধীরে তাদের জনশক্তি ও ধনবল হ্রাস পেতে থাকবে। ‘রূহুল মাআনী’ তে বহু সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে এ তাফসীর বর্ণিত আছে।  ৪৮  أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِّلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ  আওয়ালাম ইয়ারাও ইলা-মা-খালাকাল্লা-হু মিন শাইয়িইঁ ইয়াতাফাইয়াউ জিলা-লুহূ‘আনিল ইয়ামীনি ওয়াশশামাইলি ছুজ্জাদাল লিল্লা-হি ওয়াহুম দা-খিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা কি দেখেনি, আল্লাহ যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার ছায়া আল্লাহর প্রতি সিজদারত থেকে ডানে-বামে ঢলে পড়ে এবং তারা সকলে থাকে বিনয়াবনত? ২৮  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ্ র সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া দক্ষিণে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহ্ র প্রতি সিজ্দাবনত হয় ?  তাফসীরঃ ২৮. মানুষ যত বড় অহংকারীই হোক, তার ছায়া যখন মাটিতে পড়ে, তখন সে নিরুপায়। তখন আপনা-আপনিই তার দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। এভাবে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মাখলুকের সাথে ছায়ারূপে এমন একটা জিনিস সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা তার ইচ্ছা ছাড়াই সর্বদা আল্লাহ তাআলার সামনে সিজদায় পড়ে থাকে। এমনকি যারা সূর্যের পূজা করে, তারা নিজেরা তো সূর্যের সামনে সিজদাবনত থাকে, কিন্তু তাদের ছায়া থাকে তাদের বিপরীত দিকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদারত।  ৪৯  وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِن دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ  ওয়ালিল্লা-হি ইয়াছজুদুমা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদিমিন দাব্বাতিওঁ ওয়াল মালাইকাতুওয়া হুম লা-ইয়াছতাকবিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তারা এবং সমস্ত ফেরেশতা আল্লাহকেই সিজদা করে এবং তারা মোটেই অহংকার করে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে এবং ফেরেশতাগণ; তারা অহংকার করে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্কেই সিজ্দা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফিরিশতাগণও, এরা অহংকার করে না।  ৫০  يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ۩  ইয়াখা-ফূনা রাব্বাহু ম মিন ফাওকিহিম ওয়া ইয়াফ‘আলূনা মা-ইউ’মারূন (ছিজদাহ-৩)।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাদের উপরে এবং তারা সেই কাজই করে, যার আদেশ তাদেরকে করা হয়। ২৯  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা ভয় করে এদের ওপর এদের প্রতিপালককে এবং এদেরকে যা আদেশ করা হয় এরা তা করে।  তাফসীরঃ ২৯. এটি সিজদার আয়াত। অর্থাৎ, কেউ আরবী ভাষায় এ আয়াতটি পাঠ করলে তার উপর সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। একে ‘সিজদায়ে তিলাওয়াত’ [আয়াত পাঠজনিত সিজদা] বলে। এটা নামাযের সিজদা থেকে আলাদা। অবশ্য কেবল তরজমা পাঠ দ্বারা কিংবা আয়াত পাঠ ছাড়া কেবল দেখার দ্বারা সিজদা ওয়াজিব হয় না।  ৫১  ۞ وَقَالَ اللَّهُ لَا تَتَّخِذُوا إِلَـٰهَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ إِنَّمَا هُوَ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ  ওয়া কা-লাল্লাহু লা-তাত্তাখিযূইলা-হাইনিছনাইনি ইন্নামা-হুওয়া ইলা-হুওঁ ওয়াহিদুন ফাইয়্যা-ইয়া ফারহাবূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ বলেন, তোমরা দু’-দু’জন মাবুদ গ্রহণ করো না। তিনি তো একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ বললেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ কর না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় কর।’  ৫২  وَلَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا ۚ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَتَّقُونَ  ওয়া লাহূমা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়া লাহুদ্দীনুওয়া-সিবান আফাগাইরাল্লাহি তাত্তাকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা তাঁরই। সর্বাবস্থায় তাঁরই আনুগত্য করা অপরিহার্য। ৩০ তবুও কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করছ?  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যা কিছু নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আছে তা তাঁরই এবাদত করা শাশ্বত কর্তব্য। তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে ভয় করবে ?  তাফসীরঃ ৩০. অর্থাৎ মাবুদ যেহেতু এক আল্লাহ তাআলাই, তাই তার সাথে অন্য কাউকে যোগ করে দুই মাবুদ বানিয়ে নিও না। এর দ্বারা নির্দিষ্ট দুই সংখ্যা লক্ষবস্তু নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে অন্যের অংশীদারিত্বকে রদ করা উদ্দেশ্য, তা সংখ্যা যাই হোক না কেন। বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায় যে, তোমরা হক মাবুদ ও নাহক মাবুদ এই দুই মাবুদ গ্রহণ করো না, তাতে নাহক মাবুদের সংখ্যা যাই হোক না কেন। -অনুবাদক  ৫৩  وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ  ওয়ামা-বিকুম মিন নি‘মাতিন ফামিনাল্লা‘হি ছু ম্মা ইযা-মাছছাকুমুদ দুররু ফাইলাইহি তাজআরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমাদের যে নি‘আমতই অর্জিত হয়, আল্লাহরই পক্ষ হতে হয়। আবার যখন কোন দুঃখ-কষ্ট তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁরই কাছে সাহায্য চাও।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহ্ র ই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর।  ৫৪  ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنكُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ  ছু ম্মা ইযা-কাশাফাদদুররা ‘আনকুম ইযা-ফারীকুম মিনকুম বিরাব্বিহিম ইউশরিকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারপর তিনি যখন তোমাদের কষ্ট দূর করেন, অমনি তোমাদের মধ্য হতে একটি দল নিজ প্রতিপালকের সাথে শিরক শুরু করে দেয়  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দুরীভূত করে দেন, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আবার যখন আল্লাহ্ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন তখন তোমাদের একদল এদের প্রতিপালকের শরীক করে-  ৫৫  لِيَكْفُرُوا بِمَا آتَيْنَاهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ  লিয়াকফুরূবিমা আ-তাইনা-হুম ফাতামাত্তা‘ঊ ফাছাওফা তা‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি তাদেরকে যে নি‘আমত দিয়েছি তার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। ঠিক আছে, কিছুটা ভোগ-বিলাস করে নাও। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যাতে ঐ নেয়ামত অস্বীকার করে, যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব মজা ভোগ করে নাও-সত্বরই তোমরা জানতে পারবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি এদেরকে যা দান করেছি তা অস্বীকার করার জন্যে। সুতরাং ভোগ করে লও, অচিরেই জানতে পারবে।  ৫৬  وَيَجْعَلُونَ لِمَا لَا يَعْلَمُونَ نَصِيبًا مِّمَّا رَزَقْنَاهُمْ ۗ تَاللَّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ  ওয়া ইয়াজ‘আলূনা লিমা-লা-ইয়া‘লামূনা নাসীবাম মিম্মা-রাঝাকনা-হুম তাল্লা-হি লাতুছআলুন্না ‘আম্মা-কুনতুম তাফতারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তাতে তারা একটা অংশ নির্ধারণ করে তাদের (অর্থাৎ প্রতিমাদের) জন্য, যাদের স্বরূপ তারা নিজেরাই জানে না। ৩১ আল্লাহর কসম! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করতে, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা আমার দেয়া জীবনোপকরণ থেকে তাদের জন্যে একটি অংশ নির্ধারিত করে, যাদের কোন খবরই তারা রাখে না। আল্লাহর কসম, তোমরা যে অপবাদ আরোপ করছ, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি এদেরকে যে রিযিক দান করি এরা তার এক অংশ নির্ধারণ করে তাদের জন্যে যাদের সম্বন্ধে এরা কিছুই জানে না। শপথ আল্লাহ্ র ! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর সেই সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।  তাফসীরঃ ৩১. আরব মুশরিকগণ তাদের জমির ফসল ও গবাদি পশু থেকে একটা অংশ তাদের প্রতিমাদের নামে উৎসর্গ করত, আয়াতের ইশারা সেদিকেই। এটা কতই না মূর্খতা যে, রিযক দান করেন আল্লাহ তাআলা, অথচ তা উৎসর্গ করা হয় প্রতিমাদের নামে, যে প্রতিমাদের স্বরূপ সম্পর্কে তাদের কোনও জ্ঞান নেই এবং তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেও তাদের কাছে কোন দলীল-প্রমাণ নেই। এ সম্পর্কে সূরা আনআমে (৬ : ১৩৬) বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।  ৫৭  وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ الْبَنَاتِ سُبْحَانَهُ ۙ وَلَهُم مَّا يَشْتَهُونَ  ওয়া ইয়াজ‘আলূনা লিল্লা-হিল বানা-তি ছুবহা-নাহূ ওয়া লাহুম মা-ইয়াশতাহূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা তো আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান স্থির করছে। সুবহানাল্লাহ! অথচ নিজেদের জন্য (প্রার্থনা করে) তাই (অর্থাৎ পুত্র সন্তান) যা তাদের অভিলাষ মোতাবেক হয়। ৩২  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা আল্লাহর জন্যে কন্যা সন্তান নির্ধারণ করে-তিনি পবিত্র মহিমান্বিত এবং নিজেদের জন্যে ওরা তাই স্থির করে যা ওরা চায়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা নির্ধারণ করে আল্লাহ্ র জন্যে কন্যা সন্তান-তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং এদের জন্যে তাই, যা এরা কামনা করে!  তাফসীরঃ ৩২. আরব মুশরিকগণ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা সন্তান বলে বিশ্বাস করত। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রথমত আল্লাহ তাআলার কোন সন্তানের প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত তারা নিজেরা তো নিজেদের জন্য কন্যা সন্তান পছন্দ করে না। তারা সর্বদা পুত্র সন্তানই আশা করে। সন্দেহ নেই তাদের এ নীতি একটি মারাত্মক গোমরাহী। সেই তারাই আবার আল্লাহ সম্পর্কে বলে, তাঁর কন্যা সন্তান আছে। (যেন ভালো জিনিস তাদের প্রাপ্য, মন্দটা আল্লাহর (নাউযুবিল্লাহ)।  ৫৮  وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ  ওয়া ইযা-বুশশিরা আহাদুহুম বিলউনছা-জাল্লা ওয়াজহুহূমুছওয়াদ্দাওঁ ওয়া হুওয়া কাজীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান (জন্মগ্রহণ)-এর সুসংবাদ দেওয়া হয়, ৩৩ তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।  তাফসীরঃ ৩৩. আল্লাহ তাআলা শব্দ ব্যবহার করেছেন بُشِّرَ (সুসংবাদ দেওয়া হয়)। ইশারা হচ্ছে, পুত্র সন্তানের খবর যেমন সুখবর, কন্যা সন্তানেরও তাই। পুত্র সন্তান হলে সুসংবাদ আর কন্যা সন্তান হলে দুঃসংবাদ, এটা অমানবিক ও অনৈসলামিক ভাবনা দুটোই সুসংবাদ এবং দুই’ই আল্লাহর দান। কাজেই সন্তান পুত্র হোক বা কন্যা সর্বাবস্থায়ই তার জন্ম সংবাদকে খুশীমনে গ্রহণ করত আল্লাহ তাআলার শুকর আদায়ে রত হতে হবে। এটাই কুরআনের শিক্ষা এবং জগদ্বাসীকে সবার আগে কুরআনই এ শিক্ষা দান করেছে। -অনুবাদক  ৫৯  يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِن سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ  ইয়াতাওয়া-রা-মিনাল কাওমি মিন ছূই মা-বুশশিরা বিহী আইউমছিকুহূ‘আলা-হূনিন আম ইয়াদুছছুহূফিততুরা-বি আলা-ছাআ মা-ইয়াহকুমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে), হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। জেনে রেখ, তারা যে সিদ্ধান্ত স্থির করে তা অতি মন্দ!  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন একে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গøানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে একে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতিয়া দিবে! সাবধান! এরা যা সিদ্ধান্ত নেয় তা কত নিকৃষ্ট।  ৬০  لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ ۖ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ  লিলাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি মাছালুছছাওই ওয়া লিল্লা-হিল মাছালুল আ‘লা- ওয়া হুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যত সব মন্দ বিষয় তাদেরই মধ্যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না। আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুণাবলী আল্লাহ তাআলারই আছে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের উদাহরণ নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর উদাহরণই মহান, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না এরা নিকৃষ্ট প্রকৃতির, আর আল্লাহ্ তো মহত্তম প্রকৃতির; এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।  ৬১  وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِم مَّا تَرَكَ عَلَيْهَا مِن دَابَّةٍ وَلَـٰكِن يُؤَخِّرُهُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ  ওয়া লাও ইউআ-খিযু ল্লা-হুন্না-ছা বিজুলমিহিম মা-তারাকা ‘আলাইহা-মিন দাব্বাতিওঁ ওয়ালা-কিইঁ ইউআখরিম্নহুম ইলাআজালিম মুছাম্মান ফাইযা-জাআ আজালুহুম লাইয়াছতা’খিরূনা ছা-‘আতাওঁ ওয়ালা-ইয়াছতাকদিমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে (সহসা) ধৃত করলে ভূপৃষ্ঠে কোনও প্রাণীকে রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অবকাশ দেন। তারপর যখন তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে পড়বে, তখন তারা মুহূর্তকালও পেছনে যেতে পারে না এবং সামনেও যেতে পারে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্যে শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। এরপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারে না।  ৬২  وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ مَا يَكْرَهُونَ وَتَصِفُ أَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ أَنَّ لَهُمُ الْحُسْنَىٰ ۖ لَا جَرَمَ أَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَأَنَّهُم مُّفْرَطُونَ  ওয়া ইয়াজ আলূনা লিল্লা-হি মা ইয়াকরাহূনা ওয়া তাসিফুআলছিনাতুহুমুল কাযিবা আন্না লাহুমুল হুছনা লা-জারামা আন্না লাহুমুন না-রা ওয়া আন্নাহুম মুফরাতূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা আল্লাহর জন্য এমন জিনিস নির্ধারণ করে, যা নিজেরা অপছন্দ করে। তারপরও তাদের জিহ্বা (নিজেদের) মিথ্যা প্রশংসা করে যে, সমস্ত মঙ্গল তাদেরই জন্য। এটা সুনিশ্চিত (এরূপ আচরণের কারণে) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে তাতেই নিপতিত রাখা হবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যা নিজেদের মন চায় না তারই তারা আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করে এবং তাদের জিহবা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ। স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, তাদের জন্যে রয়েছে আগুন এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে নিক্ষেপ করা হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যা তারা অপছন্দ করে তাই তারা আল্লাহ্ র প্রতি আরোপ করে। তাদের জিহ্বা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল তাদেরই জন্যে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্যে আছে দোযখ এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে এতে নিক্ষেপ করা হবে।  ৬৩  تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَىٰ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ  তাল্লা-হি লাকাদ আরছালনাইলাউমামিম মিন কাবলিকা ফাঝাইইয়ানা লাহুমুশ শাইতা-নু আ‘মা-লাহুম ফাহুওয়া ওয়ালিইয়ুহুমুল ইয়াওমা ওয়া লাহুম ‘আযা-বুন আলীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (হে নবী!) আল্লাহর কসম! তোমার পূর্বে যেসব জাতি গত হয়েছে, আমি তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর শয়তান তাদের কর্মকাণ্ডকে তাদের সামনে চমৎকার রূপে তুলে ধরেছিল। ৩৪ সুতরাং সে-ই (অর্থাৎ শয়তান) আজ তাদের অভিভাবক এবং (এ কারণে) তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহর কসম, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্ম সমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন শপথ আল্লাহ্ র ! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ এদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে-ই আজ এদের অভিভাবক এবং এদেরই জন্যে মর্মন্তুদ শাস্তি।  তাফসীরঃ ৩৪. অর্থাৎ, তাদেরকে সবক দিল, তোমরা যে সব কাজ করছ সেটাই সর্বাপেক্ষা ভালো।  ৬৪  وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ ۙ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ  ওয়ামাআনঝালনা-‘আলাইকাল কিতা-বা ইল্লা লিতুবাইয়িনা লাহুমুল লাযীখ তালাফূফীহি ওয়াহুদাওঁ ওয়া রাহমাতাল লিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি তোমার উপর এ কিতাব এজন্যই নাযিল করেছি, যাতে তারা যে সব বিষয়ে বিভিন্ন পথ গ্রহণ করেছে, তাদের সামনে তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা কর এবং যাতে এটা ঈমান আনয়নকারীদের জন্য হিদায়াত ও রহমতের অবলম্বন হয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদের কে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে এবং মু’মিনদের জন্যে পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।  ৬৫  وَاللَّهُ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ  ওয়াল্লা-হু আনঝালা মিনাছছামা-ই মা-আন ফাআহইয়া-বিহিল আরদা বা‘দা মাওতিহা- ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াছমা’ঊন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলেন এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাতে প্রাণ সঞ্চার করলেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন আছে সেইসব লোকের জন্য, যারা কথা শোনে। ৩৫  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তদ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে এর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে, যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্যে।  তাফসীরঃ ৩৫. অর্থাৎ হৃদয়-মন দিয়ে শুনলে তারা বুঝতে পারবে, আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ হলে যেমন মৃত ভূমি সঞ্জীবিত হয়, তেমনি আসমানী ওহী দ্বারাও মৃত আত্মায় প্রাণ-সঞ্চার হয় এবং সহসা তা জাগ্রত হয়ে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে লিপ্ত হয় ও সত্যিকার মনুষ্যসুলভ কর্মানুষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তির মানবজন্মকে সার্থক করে তোলে। -অনুবাদক  ৬৬  وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ  ওয়া ইন্না লাকুম ফিল আন‘আ-মি লা‘ইবরাতান নুছকীকুম মিম্মা-ফী বুতূনিহী মিম বাইনি ফারছিওঁ ওয়া দামিল লাবানান খা-লিসান ছাইগাল লিশশা-রিবীন ।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী নিশ্চয়ই গবাদি পশুর ভেতর তোমাদের জন্য চিন্তা-ভাবনা করার উপকরণ আছে। তার পেটে যে গোবর ও রক্ত আছে, তার মাঝখান থেকে আমি তোমাদেরকে এমন বিশুদ্ধ দুধ পান করাই, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু হয়ে থাকে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন অবশ্যই গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্যে শিক্ষা রয়েছে। এদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু।  ৬৭  وَمِن ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ  ওয়া মিন ছামারা-তিন নাখীলি ওয়াল আ‘না-বি তাত্তাখিযূনা মিনহু ছাকারাওঁ ওয়ারিঝকান হাছানান ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়া‘কিলূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং খেজুরের ফল ও আঙ্গুর থেকেও (আমি তোমাদেরকে পানীয় দান করি), যা দ্বারা তোমরা মদ বানাও এবং উত্তম খাদ্যও। ৩৬ নিশ্চয়ই এর ভেতরও সেই সব লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মধ্য ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং খর্জুর-বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।  তাফসীরঃ ৩৬. এটি মক্কী সূরা। এ সূরা যখন নাযিল হয় তখনও পর্যন্ত মদ হারাম হয়নি। কিন্তু এ আয়াতে মদকে উত্তম খাদ্যের বিপরীতে উল্লেখ করে একটা সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মদ উত্তম খাবার নয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তার মন্দত্ব ও কদর্যতা তুলে ধরে এবং আস্তে-আস্তে তার ব্যবহারকে সঙ্কুচিত করে সবশেষে চূড়ান্তরূপে হারাম করে দেওয়া হয়েছে।  ৬৮  وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ  ওয়া আওহা- রাব্বুকা ইলান নাহলি আনিত্তাখিযীমিনালজিবা-লি বুইঊতাও ওয়া মিনাশশাজারি ওয়া মিম্মা-ইয়া‘রিশূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে এই নির্দেশ সঞ্চার করেন যে, পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষ যে মাচান তৈরি করে তাতে নিজ ঘর তৈরি কর। ৩৭  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর,  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এর অন্তরে ইঙ্গিত দিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে;  তাফসীরঃ ৩৭. مَا يَعْرِشُوْنَ যে মাচান তৈরি করে, অর্থাৎ, যার উপর বিভিন্ন প্রকার লতা চড়ানো হয়। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে মৌমাছির গৃহ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন এ কারণে যে, তারা যে চাক তৈরি করে, তা নির্মাণ শিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা। সাধারণত তারা মৌচাক বানায় উঁচু স্থানে, যাতে তাতে সঞ্চিত মধু মাটির মলিনতা থেকে রক্ষা পায় এবং সর্বদা বিশুদ্ধ বাতাসের স্পর্শের ভেতর থাকে। এর দ্বারা এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, মৌমাছিকে এসব শিক্ষা আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন (বিস্তারিত দেখুন, মাআরিফুল কুরআন, ৫ম খণ্ড ৩৬২-৩৬৭ পৃষ্ঠা)।  ৬৯  ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ  ছু ম্মা কুলী মিন কুল্লিছছামারা-তি ফাছলুকী ছুবুলা রাব্বিকি যুলুলান ইয়াখরুজুমিম বুতূনিহা-শারা-বুম মুখতালিফুন আলওয়া-নুহূফীহি শিফাউললিন্না-ছি ইন্না ফী যালিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারপর সব রকম ফল থেকে নিজ খাদ্য আহরণ কর। তারপর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সেই পথে চল। (এভাবে) তার পেট থেকে বিভিন্ন বর্ণের পানীয় বের হয়, যার ভেতর মানুষের জন্য আছে শেফা। নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ‘এটার পর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, এরপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর।’ এর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাতে মানুষের জন্যে রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে।  ৭০  وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ ثُمَّ يَتَوَفَّاكُمْ ۚ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰ أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْ لَا يَعْلَمَ بَعْدَ عِلْمٍ شَيْئًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ قَدِيرٌ  ওয়াল্লা-হু খালাকাকুম ছু ম্মা ইয়াতাওয়াফফা-কুম ওয়া মিনকুম মাইঁ ইউরাদ্দুইলা আরযালিল ‘উমুরি লিকাই লা-ইয়া‘লামা বা‘দা ‘ইলমিন শাইআন ইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুন কাদীর।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তোমাদের রূহ কবজ করেন। তোমাদের মধ্যে কতক এমন হয়, যাদেরকে বয়সের সর্বাপেক্ষা অকর্মণ্য স্তরে পৌঁছানো হয়, যেখানে পৌঁছার পর তারা সবকিছু জানার পরও কিছুই জানে না। ৩৮ নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এরপর তোমাদের মৃত্যুদান করেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ পৌছে যায় জরাগ্রস্ত অকর্মন্য বয়সে, ফলে যা কিছু তারা জানত সে সম্পর্কে তারা সজ্ঞান থাকবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সু-বিজ্ঞ সর্বশক্তিমান।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকেও কাউকেও উপনীত করা হবে নিকৃষ্টতম বয়সে; ফলে এরা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে এরা সজ্ঞান থাকবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।  তাফসীরঃ ৩৮. চরম বার্ধক্যকে ‘অকর্মণ্য বয়স’ বলা হয়েছে, যে বয়সে মানুষের দৈহিক ও মানসিক শক্তি অকেজো হয়ে যায়। ‘সবকিছু জানা সত্ত্বেও কিছুই না জানা’-এর এক অর্থ হল, মানুষ জীবনের বিগত দিনগুলোতে যেসব জ্ঞান অর্জন করে, বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর তার অধিকাংশই ভুলে যায়। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, বার্ধক্যকালে মানুষ সদ্য শোনা কথাও মনে রাখতে পারে না। প্রায়ই এমন হয় যে, এইমাত্র তাকে একটা কথা বলা হল, আর পরক্ষণেই সে একই কথা আবার জিজ্ঞেস করে, যেন সে সম্পর্কে তাকে কিছুই বলা হয়নি। এসব বাস্তবতা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য গাফেল মানুষকে সজাগ করা এবং তার দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করা যে, তার যা-কিছু শক্তি তা আল্লাহ তাআলারই দান। তিনি যখন ইচ্ছা করেন তা আবার কেড়েও নেন। কাজেই নিজের কোন যোগ্যতা ও ক্ষমতার কারণে বড়াই করা উচিত নয়; বরং তার অবস্থার এই চড়াই-উৎরাইয়ের দ্বারা তার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। উপলব্ধি করা উচিত যে, এই জগত-কারখানা এক মহাজ্ঞানী, মহাশক্তিমান স্রষ্টার সৃষ্টি। তাঁর কোনও শরীক নেই। শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে।  ৭১  وَاللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ ۚ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَىٰ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ ۚ أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ  ওয়াল্লা-হু ফাদ্দালা বা‘দাকুম ‘আলা-বা‘দিন ফির রিঝকি ফামাল্লাযীনা ফুদ্দিলূ বিরাদ্দী রিঝকিহিম ‘আলা-মা-মালাকাত আইমা-নুহুম ফাহুম ফীহি ছাওয়াউন আফাবিনি‘মাতিল্লা-হি ইয়াজহাদূ ন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ রিযকের ক্ষেত্রে তোমাদের কাউকে কারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের রিযক নিজ দাস-দাসীকে এভাবে দান করে না, যাতে তারা সকলে সমান হয়ে যায়। ৩৯ তবে কি তারা আল্লাহর নি‘আমতকে অস্বীকার করে? ৪০  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ তা’আলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকেও কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে এরা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি এরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করে ?  তাফসীরঃ ৩৯. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক করে এই দাবী করে যে, অমুক নি‘আমত আল্লাহ নয়; বরং তাদের মনগড়া দেবতা দিয়েছে।  ৪০. অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কেউ এরূপ করে না। কেউ তার দাস-দাসীকে নিজে অর্থ-সম্পদ এমনভাবে দেয় না, যদ্দরুণ সম্পদের দিক থেকে দাস মনিব সমান হয়ে যাবে। এবার চিন্তা কর, তোমরা নিজেরাও তো স্বীকার কর, তোমরা যে দেবতাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক মনে কর, তারা আল্লাহ তাআলার মালিকানাধীন ও তার দাস। সেই দাসদেরকে আল্লাহ নিজ প্রভুত্বের অংশ দিয়ে দেবেন আর তার ফলে তারা আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে মাবুদ বনার হকদার হয়ে যাবে এটা কী করে সম্ভব?  ৭২  وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَتِ اللَّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ  ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিন আনফুছিকুম আঝওয়া-জাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিন আঝওয়াজিকুম বানীনা ওয়া হাফাদাতাওঁ ওয়া রাঝাকাকুম মিনাততাইয়িবা-তি আফাবিলবাতিলি ইউ’মিনূনা ওয়া বিনি‘মাতিল্লা-হি হুম ইয়াকফুরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ তোমাদেরই মধ্য হতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন। আর ভালো-ভালো জিনিসের থেকে রিযকের ব্যবস্থা করেছেন। তবুও কি তারা ভিত্তিহীন জিনিসের প্রতি ঈমান রাখবে আর আল্লাহর নি‘আমতসমূহের অকৃতজ্ঞতা করবে?  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং আল্লাহ্ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্যে পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি এরা মিথ্যায় বিশ্বাস করবে এবং এরা কি আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?-  ৭৩  وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ  ওয়া ইয়া‘বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি মা-লা-ইয়ামলিকুলাহুম রিঝকাম মিনাছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিশাইআওঁ ওয়ালা-ইয়াছতাতী‘ঊন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা আল্লাহ ছাড়া এমন সব জিনিসের ইবাদত করে যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী থেকে তাদেরকে কোনওভাবে রিযক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং তা রাখতে সক্ষমও নয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে, যে তাদের জন্যে ভুমন্ডল ও নভোমন্ডল থেকে সামান্য রুযী দেওয়ার ও অধিকার রাখে না এবং মুক্তি ও রাখে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং এরা কি ‘ইবাদত করবে আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের যাদের আকাশমণ্ডলী বা পৃথিবী হতে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করার শক্তি নেই!- এবং এরা কিছুই করতে সক্ষম নয়।  ৭৪  فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ  ফালা-তাদরিবূলিল্লা-হিল আমছা-লা ইন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুওয়া আনতুম লা-তা‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করো না। ৪১ নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ র কোন সদৃশ স্থির কর না। আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।  তাফসীরঃ ৪১. আরব মুশরিকগণ অনেক সময় দৃষ্টান্ত পেশ করত যে, দুনিয়ার কোনও বাদশাহ নিজে একা রাজত্ব চালায় না। বরং রাজত্বের বহু কাজই সহযোগীদের হাতে ছাড়তে হয়। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলাও তার প্রভুত্বের বহু কাজ দেব-দেবীদের হাতে ন্যস্ত করে দিয়েছেন। তারা সেসব কাজ স্বাধীনভাবে আঞ্জাম দেয় (নাউযুবিল্লাহ)। এ আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার জন্য দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের কিংবা যে-কোনও মাখলুকের দৃষ্টান্ত পেশ করা চরম পর্যায়ের মূর্খতা। অতঃপর ৭৪ থেকে ৭৬ পর্যন্ত আয়াতসমূহ আল্লাহ তাআলা দু’টি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তা দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, যদি সৃষ্টির দৃষ্টান্তই দেখতে হয়, তবে এ দৃষ্টান্ত দু’টো লক্ষ্য কর। এর দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সৃষ্টিতে-সৃষ্টিতেও প্রভেদ আছে। কোন সৃষ্টি উচ্চ স্তরের হয়, কোন সৃষ্টি নিম্নস্তরের। যখন দুই সৃষ্টির মধ্যে এমন প্রভেদ, তখন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কেমন প্রভেদ থাকতে পারে? তা সত্ত্বেও ইবাদত-বন্দেগীতে কোনও সৃষ্টিকে স্রষ্টার অংশীদার কিভাবে বানানো যেতে পারে?  ৭৫  ۞ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا ۖ هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ  দারাবাল্লা-হু মাছালান ‘আবদাম মামলূকাল লা-ইয়াকদিরু ‘আলা-শাইইওঁ ওয়া মার রাঝাকনা-হু মিন্না-রিঝকান হাছানান ফাহুওয়া ইউনফিকুমিনহু ছিররাওঁ ওয়া জাহরান হাল ইয়াছতাঊনা আলহামদুলিল্লা-হি বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন- একদিকে এক গোলাম, যে কারও মালিকানাধীন আছে। কোনও বস্তুর মধ্যে তার কিছুমাত্র ক্ষমতা নেই। আর অন্যদিকে এমন এক ব্যক্তি, যাকে আমি আমার পক্ষ হতে উৎকৃষ্ট রিযক দিয়েছি এবং সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে। এই দু’জন কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশেই (এমন পরিষ্কার কথাও) জানে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর ওপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির যাকে তিনি নিজ হতে উত্তম রিযিক দান করেছেন এবং সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; এরা কি একে অপরের সমান ? সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র ই প্রাপ্য; অথচ এদের অধিকাংশই এটা জানে না।  ৭৬  وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَىٰ مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۖ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۙ وَهُوَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ  ওয়া দারাবাল্লা-হু মাছালার রাজুলাইনি আহাদুহুমাআবকামুলা-ইয়াকদিরু ‘আলাশাইইওঁ ওয়া হুওয়া কাল্লুন ‘আলা-মাওলা-হু আইনামা-ইউওয়াজজিহহু লা-ইয়া’তি বিখাইরিন হাল ইয়াছতাবী হুওয়া ওয়া মাইঁ ইয়া’মরু বিল‘আদলি ওয়া হুওয়া ‘আলা-সিরা-তিম মুছতাকীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন- দু’জন লোক, তাদের একজন বোবা। সে কোনও কাজ করতে পারে না, বরং সে তার মনিবের জন্য একটা বোঝা। মনিব তাকে যেখানেই পাঠায়, সে ভালো কিছু করে আনে না। এরূপ ব্যক্তি কি ওই ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে অন্যদেরকেও ন্যায়ের আদেশ দেয় এবং নিজেও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে?  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ আরও উপমা দিচ্ছেন দুই ব্যক্তির : এদের একজন মূক, কোন কিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার প্রভুর ভারস্বরূপ; তাকে যেখানেই পাঠান হোক না কেন সে ভাল কিছুই করে আসতে পারে না ; সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে ?  ৭৭  وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ  ওয়া লিল্লা-হি গাইবুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামা আমরুছ ছা-‘আতি ইল্লাকালামহিল বাসারি আও হুওয়া আকরাবু ইন্নাল্লা-হা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল রহস্য আল্লাহর মুঠোয়। কিয়ামতের বিষয়টি কেবল চোখের পলকতুল্য; বরং তার চেয়েও দ্রুত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমন, যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ্ র ই এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও সত্বর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।  ৭৮  وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ  ওয়াল্লা-হু আখরাজাকুম মিম বুতূনি উম্মাহা-তিকুম লা-তা‘লামূনা শাইআওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুমুছ ছাম‘আ ওয়াল আব সা-রা ওয়াল আফইদাতা লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তকরণ সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শোনেশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।  ৭৯  أَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاءِ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ  আলাম ইয়ারাও ইলাততাইরি মুছাখখারা-তিন ফী জাওবিছ ছামাই মা-ইউমছিকুহুন্না ইল্লাল্লা-হু ইন্নাফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা কি পাখিদের প্রতি লক্ষ্য করেনি, যারা আকাশের শূন্যমণ্ডলে আল্লাহর আজ্ঞাধীন? তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ স্থির রাখছে না। নিশ্চয়ই এতে বহু নিদর্শন আছে, তাদের জন্য যারা ঈমান রাখে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখে না? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখে না। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শনবলী রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহংগের প্রতি ? আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউই সেগুলিকে স্থির রাখে না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে।  ৮০  وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّن بُيُوتِكُمْ سَكَنًا وَجَعَلَ لَكُم مِّن جُلُودِ الْأَنْعَامِ بُيُوتًا تَسْتَخِفُّونَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ إِقَامَتِكُمْ ۙ وَمِنْ أَصْوَافِهَا وَأَوْبَارِهَا وَأَشْعَارِهَا أَثَاثًا وَمَتَاعًا إِلَىٰ حِينٍ  ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিমবুইউতিকুম ছাকানাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিন জূলূদিল আন‘আ-মি বুইঊতান তাছতাখিফফূনাহা-ইয়াওমা জা‘নিকুম ওয়া ইয়াওমা ইকা-মাতিকুম ওয়া মিন আসওয়া-ফিহা-ওয়া আওবা-রিহা-ওয়া আশ‘আ-রিহাআছা-ছাওঁ ওয়া মাতা‘আন ইলা-হীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি তোমাদের গৃহকে তোমাদের জন্য আবাসস্থল বানিয়েছেন এবং পশুর চামড়া দ্বারা তোমাদের জন্য এমন ঘর বানিয়েছেন, যা ভ্রমণে যাওয়ার সময় এবং কোথাও অবস্থান গ্রহণকালে তোমাদের কাছে বেশ হালকা-পাতলা মনে হয়। ৪২ আর তাদের পশম, লোম ও কেশ দ্বারা গৃহ-সামগ্রী ও এমন সব জিনিস তৈরি করেন, যা কিছু কাল তোমাদের উপকারে আসে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের গৃহকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুস্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমার জন্যে তাঁবুর ব্যবস্থা। তোমরা এগুলোকে সফরকালে ও অবস্থান কালে পাও। ভেড়ার পশম, উটের বাবরি চুল ও ছাগলের লোম দ্বারা কত আসবাবপত্র ও ব্যবহারের সামগ্রী তৈরী করেছেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং আল্লাহ্ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্যে পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা একে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। এবং তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন এদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ।  তাফসীরঃ ৪২. এসব ঘর দ্বারা তাঁবু বোঝানো হয়েছে, যা চামড়া দ্বারা তৈরি হয়। আরবের লোক সফরকালে তা সঙ্গে নিয়ে যায়। কেননা এর বিশেষ সুবিধা হল, যখন যেখানে ইচ্ছা খাটিয়ে বিশ্রাম করা যায়। আর হালকা হওয়ায় বহনের সুবিধা তো আছেই। [اَصْوَافٌ শব্দটিصُوْفٌ এর বহুবচন। অর্থ ভেড়ার পশম। اَوْبَارٌ হল وَبَرٌ এর বহুবচন। অর্থ উটের লোম। আর اَشْعَارٌ বলে অন্যান্য জীব-জন্তুর পশম বা কেশরাজিকে। এটা شَعْرٌ এর বহুবচন -অনুবাদক।]  ৮১  وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ  ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিম্মা-খালাকা জিলা-লাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিনাল জিবা-লি আকনা-নাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম ছারা-বীলা তাকীকুমুল হাররা ওয়া ছারা-বীলা তাকীকুম বা’ছাকুম কাযা-লিকা ইউতিম্মুনি‘মাতাহূ‘আলাইকুম লা‘আল্লাকুম তুছলিমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং আল্লাহই নিজ সৃষ্ট বস্তুসমূহ হতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, পাহাড়-পর্বতে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর তোমাদের জন্য বানিয়েছেন এমন পোশাক, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং এমন পোশাক, যা যুদ্ধকালে তোমাদেরকে রক্ষা করে। ৪৩ এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি নিজ অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা অনুগত হয়ে যাও।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃজিত বস্তু দ্বারা ছায়া করে দিয়েছেন এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন গোপনের জায়গা করেছেন এবং তোমাদের জন্যে পোশাক তৈরী করে দিয়েছেন, যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং আল্লাহ্ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্যে ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্যে পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্যে বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।  তাফসীরঃ ৪৩. অর্থাৎ, লোহার বর্ম, যা যুদ্ধকালে তরবারি ও অন্যান্য অস্ত্রের আঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য পরিধান করা হয়।  ৮২  فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ الْمُبِينُ  ফাইন তাওয়াল্লাও ফাইন্নামা -‘আলাইকাল বালা-গুল মুবীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারপরও যদি তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে নবী!) তোমার দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছানো।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতঃপর যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তবে আপনার কাজ হল সুস্পষ্ট ভাবে পৌছে দেয়া মাত্র।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরপর এরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেওয়া।  ৮৩  يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ  ইয়া‘রিফূনা নি‘মাতাল্লা-হি ছুম্মা ইউনকিরূনাহা-ওয়া আকছারুহুমুল কা-ফিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা আল্লাহর নি‘আমতসমূহ চেনে, তবুও তা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে, এরপর অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরা আল্লাহ্ র নিয়ামত চিনিতে পারে; তারপরও সেগুলি এরা অস্বীকার করে এবং এদের অধিকাংশই কাফির।  ৮৪  وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ثُمَّ لَا يُؤْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ  ওয়া ইয়াওমা নাব ‘আছুমিন কুল্লি উম্মাতিন শাহীদান ছু ম্মা লা-ইউ’যানুলিল্লাযীনা কাফারূ ওয়ালা-হুম ইউছতা‘তাবূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং সেই দিনকে স্মরণ রেখ, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব, ৪৪ তারপর যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, তাদেরকে (অজুহাত দেখানোর) অনুমতি দেওয়া হবে না এবং তাদেরকে তাওবা করার জন্যও ফরমায়েশ করা হবে না। ৪৫  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব, তখন কাফেরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাদের তওবা ও গ্রহণ করা হবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে না এবং এদের কোন ওযরও গৃহীত হবে না।  তাফসীরঃ ৪৪. কেননা তাওবার দরজা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত খোলা থাকে। মৃত্যুর পর তাওবা কবুল হয় না।  ৪৫. এর দ্বারা প্রত্যেক উম্মতের নবীকে বোঝানো হয়েছে। নবীগণ সাক্ষ্য দেবেন যে, তাঁরা তাদের উম্মতের কাছে সত্য বার্তা পৌঁছিয়েছিলেন, কিন্তু কাফেরগণ তা গ্রহণ করেনি।  ৮৫  وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ ظَلَمُوا الْعَذَابَ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ  ওয়া ইযা-রাআল্লাযীনা জালামুল ‘আযা-বা ফালা-ইউখাফফাফুআনহুম ওয়ালা-হুম ইউনজারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী জালেমগণ যখন শাস্তি দেখতে পাবে, তখন তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যখন জালেমরা আযাব প্রত্যক্ষ করবে, তখন তাদের থেকে তা লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যখন জালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন এদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং এদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হবে না।  ৮৬  وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ أَشْرَكُوا شُرَكَاءَهُمْ قَالُوا رَبَّنَا هَـٰؤُلَاءِ شُرَكَاؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُو مِن دُونِكَ ۖ فَأَلْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ  ওয়া ইযা-রাআল্লাযীনা আশরাকূশুরাকাআহুম কা-লূরাব্বানা-হাউলাই শুরাকাউনাল্লাযীনা কুন্না-নাদ‘ঊ মিন দূ নিকা ফাআলকাও ইলাইহিমুল কাওলা ইন্নাকুম লাকা-যিবূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করেছিল, তারা যখন তাদের (নিজেদের গড়া) শরীকদেরকে দেখবে, তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই সেই শরীক, তোমার পরিবর্তে যাদেরকে আমরা ডাকতাম। ৪৬ এ সময় তারা (অর্থাৎ মনগড়া শরীকগণ) তাদের দিকে কথা ছুঁড়ে মারবে যে, তোমরা বিলকুল মিথ্যুক! ৪৭  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান মুশরিকরা যখন ঐ সব বস্তুকে দেখবে, যেসবকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল, তখন বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা এরাই তারা যারা আমাদের শেরেকীর উপাদান, তোমাকে ছেড়ে আমরা যাদেরকে ডাকতাম। তখন ওরা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা মিথ্যাবাদী।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহ্ র শরীক করেছিল, তাদেরকে যখন দেখবে তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই তারা, যাদেরকে আমরা তোমার শরীক করেছিলাম, যাদেরকে আমরা আহ্বান করতাম তোমার পরিবর্তে; এরপর তদুত্তরে এরা বলবে, ‘তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’  তাফসীরঃ ৪৬. যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে আল্লাহ তাআলা সে দিন প্রতিমাদেরকে বাকশক্তি দান করবেন, ফলে তারা ঘোষণা করে দেবে তাদের উপাসকরা মিথ্যুক। কেননা নিষ্প্রাণ হওয়ার কারণে তাদের খবরই ছিল না যে, তাদের ইবাদত-উপাসনা করা হচ্ছে। এমনও হতে পারে, তারা একথা ব্যক্ত করবে তাদের অবস্থা দ্বারা। আর শয়তানগণ এ কথা বলবে তাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করার জন্য।  ৪৭. মুশরিকগণ যে প্রতিমাদের পূজা করত, তাদেরকেও তখন সামনে আনা হবে এবং তারা যে কতটা অক্ষম ও অসহায় সেটা সকলের সামনে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে। আর সেই শয়তানদেরকেও উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে তাদের অনুসারীরা এত বেশি মানত যে, তাদেরকে তারা আল্লাহ তাআলার শরীক বানিয়ে নিয়েছিল।  ৮৭  وَأَلْقَوْا إِلَى اللَّهِ يَوْمَئِذٍ السَّلَمَ ۖ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ  ওয়া আল কাও ইলাল্লা-হি ইয়াওমাইযিনিছছালামা ওয়াদাল্লা ‘আনহুম মা-কা-নূইয়াফতারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সে দিন আল্লাহর সামনে তারা আনুগত্যমূলক কথা বলবে। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, সে দিন তার কোন হদিসই তারা পাবে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সেদিন তারা আল্লাহর সামনে আত্নসমর্পন করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেই দিন তারা আল্লাহ্ র নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের জন্যে নিষ্ফল হবে।  ৮৮  الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُونَ  আল্লাযীনা কাফারূওয়াসাদ্দূ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ঝিদনা-হুম ‘আযা-বান ফাওকাল ‘আযা-বি বিমা-কা-নূইউফছিদূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা কুফর অবলম্বন করেছিল এবং আল্লাহর পথে অন্যদেরকে বাধা দিত, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব। কারণ তারা অশান্তি বিস্তার করত।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি শাস্তির পর শাস্তি বৃদ্ধি করব কাফিরদের ও আল্লাহ্ র পথে বাধাদানকারীদের; কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।  ৮৯  وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ ۚ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ  ওয়া ইয়াওমা নাব‘আছুফী কুল্লি উম্মাতিন শাহীদান ‘আলাইহিম মিন আনফুছিহিম ওয়া জি’নাবিকা শাহীদান ‘আলা-হাউলাই ওয়া নাঝঝালনা ‘আলাইকাল কিতা-বা তিবইয়া-নাল লিকুল্লি শাইইওঁ ওয়া হুদাওঁ ওয়া রাহমাতাওঁ ওয়া বুশরা-লিলমুছলিমীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সেই দিনকেও স্মরণ রেখ, যেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে, তাদের নিজেদের থেকে, তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব আর (হে নবী!) আমি তোমাকে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত করব। ৪৮ আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে এটা প্রতিটি বিষয় সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেয় এবং মুসলিমদের জন্য হয় হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেই দিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায়ে তাদেরই মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনব সাক্ষীরূপে এদের বিষয়ে। আমি আত্ম-সমর্পণকারীদের জন্যে প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম।  তাফসীরঃ ৪৮. অর্থাৎ প্রত্যেক নবী আপন আপন উম্মত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার দরবারে সাক্ষি দেবেন আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষি দেবেন। তাঁর ওফাত-উত্তর লোকদের সম্পর্কে তাঁর সাক্ষ্যদান সম্ভব হবে এ কারণে যে, তাঁদের আমল পবিত্র কবরে, তাঁর সামনে পেশ করা হয়। উম্মত সম্পর্কে তাঁর সাক্ষ্যদানের আরেক অর্থ হতে পারে এ রকম যে, অন্যান্য নবীগণ যখন আপন-আপন উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন আর তার বিপরীতে সেইসব উম্মত দাবি করবে যে, তাদের কাছে কেউ হিদায়াতের বাণী প্রচার করেনি, তখন এই উম্মত নবীগণের পক্ষে সাক্ষি দেবে যে, তারা আপন-আপন উম্মতের কাছে সত্য দীনের প্রচার করেছিলেন। এ সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের বিশ্বস্ততা ও তাদের সাক্ষের যথার্থতা সম্পর্কে সাক্ষি দেবেন, যেমন সূরা বাকারার ২ : ১৪৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে। -অনুবাদক  ৯০  ۞ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ  ইন্নাল্লা-হা ইয়া’মুরু বিল‘আদলি ওয়াল ইহছা-নি ওয়া ঈতাইযিল কুরবা-ওয়া ইয়ানহা‘আনিল ফাহশাই ওয়াল মুনকারি ওয়াল বাগই ইয়া‘ইজু কুম লা‘আল্লাকুম তাযাক্কারূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। ৪৯  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালংঘন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।  তাফসীরঃ ৪৯. হযরত ইবনে মাসঊদ (রাযি.) বলেন, ‘এটি কুরআন মাজীদের সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ আয়াত’, যাবতীয় ভালো কাজের আদেশ ও মন্দকাজের নিষেধ এর মধ্যে এসে গেছে। অনেকে বলেন, কুরআন যে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রের পূর্ণাঙ্গ-পথনির্দেশ, তার প্রমাণ হিসেবে এ আয়াতই যথেষ্ট। সম্ভবত এ কারণেই হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ) জুমআর খুতবায় এ আয়াতটি পাঠ করতেন এবং তাঁর অনুসরণে পরবর্তী খতীবগণও এটি পাঠ করে থাকেন। আয়াতটির তাফসীর জানার জন্য তাফসীরে উসমানী দেখুন। -অনুবাদক  ৯১  وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ  ওয়া আওফূবি‘আহদিল্লা-হি ইযা-‘আ-হাততুম ওয়ালা-তানকুদুল আইমা-না বা‘দা তাওকীদিহা-ওয়া কাদ জা‘আলতুমুল্লা-হা ‘আলাইকুম কাফীলান ইন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমাতাফ‘আলূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা যখন কোন অঙ্গীকার কর, তখন আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর। শপথকে দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করো না যখন তোমরা আল্লাহকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছ। তোমরা যা-কিছু কর, আল্লাহ নিশ্চয় তা জানেন।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না, অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমরা আল্লাহ্ র অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং তোমরা আল্লাহ্কে তোমাদের যামিন করে শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ কর না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন।  ৯২  وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِن بَعْدِ قُوَّةٍ أَنكَاثًا تَتَّخِذُونَ أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ أَن تَكُونَ أُمَّةٌ هِيَ أَرْبَىٰ مِنْ أُمَّةٍ ۚ إِنَّمَا يَبْلُوكُمُ اللَّهُ بِهِ ۚ وَلَيُبَيِّنَنَّ لَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ  ওয়ালা-তাকূনূ কাল্লাতী নাকাদাতগাঝলাহা-মিমবা‘দি কুওওয়াতিন আনকা-ছান তাত্তাখিযূনা আইমা-নাকুম দাখালাম বাইনাকুম আন তাকূনা উম্মাতুন হিয়া আরবা-মিন উম্মাতিন ইন্নামা-ইয়াবলূকুমুল্লা-হু বিহী ওয়ালা ইউবাইয়িনান্না লাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি মা-কুনতুম ফীহি তাখতালিফূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যে নারী তার সূতা মজবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে তা রোঁয়া-রোঁয়া করে ফেলেছিল, তোমরা তার মত হয়ো না। ৫০ ফলে তোমরাও নিজেদের শপথকে (ভেঙ্গে) পরস্পরের মধ্যে অনর্থ সৃষ্টির মাধ্যম বানাবে, কেবল একদল অপর একদল অপেক্ষা বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। ৫১ আল্লাহ তো এর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করে থাকেন। তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ কর, কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সামনে তা স্পষ্ট করে দিবেন।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমরা ঐ মহিলার মত হয়ো না, যে পরিশ্রমের পর কাটা সূতা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে, তোমরা নিজেদের কসমসমূহকে পারস্পরিক প্রবঞ্চনার বাহানা রূপে গ্রহণ কর এজন্যে যে, অন্য দল অপেক্ষা এক দল অধিক ক্ষমতাবান হয়ে যায়। এতদ্বারা তো আল্লাহ শুধু তোমাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ অবশ্যই কিয়ামতের দিন প্রকাশ করে দেবেন, যে বিষয়ে তোমরা কলহ করতে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমরা সেই নারীর মত হয়ো না, যে তার সূতা মযবুত করে পাকাইবার পর এর পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। তোমাদের শপথ তোমরা পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করার জন্যে ব্যবহার করে থাক, যাতে একদল অন্যদল অপেক্ষা অধিক লাভবান হও। আল্লাহ্ তো এটা দিয়ে কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তা নিশ্চয়ই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিবেন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে।  তাফসীরঃ ৫০. সাধারণত মিথ্যা শপথ করা বা শপথ করার পর তা ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্য হয় পার্থিব কোন স্বার্থ চরিতার্থ করা। তাই বলা হয়েছে, দুনিয়ার স্বার্থ, যা কিনা নিতান্তই তুচ্ছ বিষয়, চরিতার্থ করার জন্য কসম ভঙ্গ করো না। কেননা কসম ভঙ্গ করা কঠিন গুনাহ।  ৫১. বর্ণিত আছে, মক্কা মুকাররমায় খারকা নাম্নী এক উন্মাদিনী ছিল। সে দিনভর পরিশ্রম করে সুতা কাটত আবার সন্ধ্যা হলে তা খুলে-খুলে নষ্ট করে ফেলত। কালক্রমে তার এ কাণ্ডটি একটি দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। যেমন কেউ যখন কোন ভালো কাজ সম্পন্ন করার পর নিজেই তা নষ্ট করে ফেলে তখন ওই নারীর সাথে তাকে উপমিত করা হয়। এখানে তার সাথে তুলনা করা হয়েছে সেইসব লোককে, যারা কোন বিষয়ে জোরদারভাবে কসম করার পর তা ভেঙে ফেলে।  ৯৩  وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَـٰكِن يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَلَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ  ওয়া লাও শাআল্লা-হু লাজা‘আলাকুম উম্মাতাওঁ ওয়া-হিদাতাওঁ ওয়ালা-কিইঁ ইউদিল্লুমাইঁ ইয়াশাউ ওয়া ইয়াহদী মাইঁ ইয়াশাউ ওয়ালা তুছআলুন্না ‘আম্মা-কুনতুম তা‘মালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত (অর্থাৎ একই দীনের অনুসারী) বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা (তার জেদী আচরণের কারণে) বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। তোমরা যা-কিছু কর, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।  ৯৪  وَلَا تَتَّخِذُوا أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ فَتَزِلَّ قَدَمٌ بَعْدَ ثُبُوتِهَا وَتَذُوقُوا السُّوءَ بِمَا صَدَدتُّمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَلَكُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ  ওয়ালা-তাত্তাখিযূআইমা-নাকুম দাখালাম বাইনাকুম ফাতাঝিল্লা কাদামুম বা‘দা ছুবূতিহাওয়া তাযূকুছছূআ বিমা-সাদাততুম ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ওয়ালাকুম ‘আযা-বুন ‘আজীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা নিজেদের শপথকে পরস্পরের মধ্যে অনর্থ সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করো না। পরিণামে (কারও) পা স্থিত হওয়ার পর পিছলে যাবে। ৫২ অতঃপর (তাকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার কারণে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করতে হবে আর (সেক্ষেত্রে) তোমাদের জন্য থাকবে মহাশাস্তি।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমরা স্বীয় কসমসমূহকে পারস্পরিক কলহ দ্বন্দ্বের বাহানা করো না। তা হলে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পা ফসকে যাবে এবং তোমরা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করবে এ কারণে যে, তোমরা আমার পথে বাধা দান করেছ এবং তোমাদের কঠোর শাস্তি হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরস্পর প্রবঞ্চনা করার জন্যে তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার কর না ; করলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলে যাবে এবং আল্লাহ্ র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করবে; তোমাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।  তাফসীরঃ ৫২. এটা শপথ ভাঙ্গার আরেকটি ক্ষতি। বলা হচ্ছে যে, তোমরা যদি শপথ ভঙ্গ কর, তবে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, তোমাদের দেখাদেখি অন্য লোকও এ গুনাহ করতে উৎসাহিত হবে। প্রথমে তো সে অবিচলিত ছিল, কিন্তু তোমাদেরকে দেখার পর তাদের পদস্খলন হয়েছে। তোমরাই যেহেতু তাদের এ গুনাহের ‘কারণ’ হয়েছ, তাই তোমাদের দ্বিগুণ গুনাহ হবে। কেননা তোমরা তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছ।  ৯৫  وَلَا تَشْتَرُوا بِعَهْدِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ إِنَّمَا عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ  ওয়ালা-তাশতারূবি‘আহদিল্লা-হি ছামানান কালীলান ইন্নামা-‘ইনদাল্লা-হি হুওয়া খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম তা‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করো না। তোমরা যদি প্রকৃত সত্য উপলব্ধি কর, তবে আল্লাহর কাছে যে প্রতিদান আছে তোমাদের পক্ষে তাই শ্রেয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম তোমাদের জন্যে, যদি তোমরা জ্ঞানী হও।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমরা আল্লাহ্ র সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় কর না। আল্লাহর নিকট যা আছে কেবল তাই তোমাদের জন্যে উত্তম-যদি তোমরা জানতে!  ৯৬  مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ ۖ وَمَا عِندَ اللَّهِ بَاقٍ ۗ وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ  মা-‘ইনদাকুম ইয়ানফাদুওয়ামা-‘ইনদাল্লা-হি বা-কিওঁ ওয়ালা নাজঝিয়ান্নাল্লাযীনা সাবারূআজরাহুম বিআহছানি মা-কা-নূইয়া‘মালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমাদের কাছে যা-কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর ৫৩ করে, আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদের প্রতিদান দেব।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহ্ র নিকট যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।  তাফসীরঃ ৫৩. পূর্বে কয়েক জায়গায় বলা হয়েছে কুরআন মাজীদের পরিভাষায় ‘সবর’ শব্দটি অতি ব্যাপক অর্থবোধক। নিজের মনের চাহিদাকে দমন করে আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকামের অনুবর্তী থাকাকেও যেমন সবর বলে, তেমনি যে-কোন দুঃখ-কষ্টে আল্লাহ তাআলার ফায়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুলে তার অভিমুখী থাকাও সবর।  ৯৭  مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ  মান ‘আমিলা সা-লিহাম মিন যাকারিন আও উনছা-ওয়া হুওয়া মু’মিনুন ফালা নুহয়িইয়ান্নাহূ হায়া-তান তাইয়িবাতাওঁ ওয়া লানাজঝিয়ান্নাহুম আজরাহুম বিআহছানি মা-কানূ ইয়া‘মালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন মু’মিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।  ৯৮  فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ  ফাইযা-কারা’তাল কুরআ-না ফাছতা‘ইযবিল্লা-হিমিনাশশাইতা-নির রাজীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সুতরাং আপনি যখন কুরআন পড়বে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবেন। ৫৪  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহ্ র শরণ নিবে  তাফসীরঃ ৫৪. পূর্বের আয়াতসমূহে সৎকর্মের ফযীলত বর্ণিত হয়েছিল। যেহেতু শয়তানই সৎকর্মের সর্বাপেক্ষা বড় বাধা এবং বেশির ভাগ তার কারসাজির ফলেই মানুষ সৎকর্মে প্রস্তুত হতে পারে না, তাই এ আয়াতে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। কুরআন তিলাওয়াতও একটি সৎকর্ম। বলা হয়েছে, তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের আগে শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় গ্রহণ করবে। অর্থাৎ বলবে اَعُوْذُبِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি’। বিশেষভাবে কুরআন তিলাওয়াতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, কুরআন মাজীদই সমস্ত সৎকর্মের পথনির্দেশ করে ও উৎসাহ যোগায়। তবে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টা কেবল কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটা একটা সাধারণ নির্দেশ। যে-কোনও সৎকর্ম শুরুর আগে শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনার অভ্যাস গড়ে তুললে ইনশাআল্লাহ তার ছলনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।  ৯৯  إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ  ইন্নাহূলাইছা লাহূছুলতা-নুন ‘আলাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আলা রাব্বিহীম ইয়াতাওয়াক্কালূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ প্রতিপালকের উপর ভরসা রাখে, তাদের উপর তার কোন আধিপত্য চলে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন নিশ্চয়ই এর কোন আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকেরই ওপর নির্ভর করে।  ১০০  إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُم بِهِ مُشْرِكُونَ  ইন্নামা-ছুলতা-নুহূ‘আলাল্লাযীনা ইয়াতাওয়াল্লাওনাহূওয়াল্লাযীনা হুম বিহী মুশরিকূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তার আধিপত্য চলে কেবল এমন সব লোকের উপর যারা তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে এবং যারা আল্লাহর শরীক সাব্যস্তকারী।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তার আধিপত্য তো তাদের উপরই চলে, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর আধিপত্য তো কেবল তাদেরই ওপর যারা একে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহ্ র শরীক করে।  ১০১  وَإِذَا بَدَّلْنَا آيَةً مَّكَانَ آيَةٍ ۙ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مُفْتَرٍ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ  ওয়া ইযা-বাদ্দালনাআ-য়াতাম মাকা-না আ-য়াতিওঁ ওয়াল্লা-হু ‘আলামুবিমাইউনাঝঝিলুকা-লূইন্নামাআনতা মুফতারিম বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি যখন এক আয়াতকে অন্য আয়াত দ্বারা পরিবর্তন করি ৫৫ আর আল্লাহই ভালো জানে তিনি কী নাযিল করবেন, তখন তারা (কাফেরগণ) বলে, তুমি তো আল্লাহর প্রতি অপবাদ দিচ্ছ। অথচ তাদের অধিকাংশেই প্রকৃত বিষয় জানে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি-আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে, ‘তুমি তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবনকারী’; কিন্তু এদের অধিকাংশই জানে না।  তাফসীরঃ ৫৫. আল্লাহ তাআলা পরিবেশ-পরিস্থিতির পার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য করে অনেক সময় নিজ বিধানাবলীর মধ্যে রদ-বদল করেন। সূরা বাকারায় কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এটাও কাফেরদের একটা আপত্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তারা প্রশ্ন করত এ কুরআন ও এর বিধানসমূহ যদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়, তবে এতে এত রদবদল কেন? বোঝা যাচ্ছে, এটা আল্লাহর কালাম নয়; বরং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকেই এসব তৈরি করে আল্লাহর নামে চালাচ্ছেন। তাই এটা তাঁর পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি অপবাদ (নাউযুবিল্লাহ)। এ আয়াতে তাদের সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, কখন কোন বিধান নাযিল করতে হবে তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন এবং সে কারণেই এ রদবদল হচ্ছে। কিন্তু তারা অজ্ঞ হওয়ার কারণে এ রহস্য বুঝতে পারছে না। তাই এসব অবান্তর কথা বলছে।  ১০২  قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ  কুল নাঝঝালাহূরূহুলকুদুছি মির রাব্বিকা বিলহাক্কি লিইউছাব্বিতাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া হুদাওঁ ওয়া বুশরা-লিলমুছলিমীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী বলে দাও, এটা (অর্থাৎ কুরআন মাজীদ) তো রূহুল কুদস (জিবরাঈল আলাইহিস সালাম) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নিয়ে এসেছে, ঈমানদারদেরকে দৃঢ়পদ রাখার জন্য এবং মুসলিমদের পক্ষে হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরূপ।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন বল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে রুহুল-কুদুস জিব্রাঈল সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছে, যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এবং হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ মুসলিমদের জন্যে।’  ১০৩  وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّهُمْ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُ بَشَرٌ ۗ لِّسَانُ الَّذِي يُلْحِدُونَ إِلَيْهِ أَعْجَمِيٌّ وَهَـٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِينٌ  ওয়া লাকাদ না‘লামুআন্নাহুম ইয়াকূলূনা ইন্নামা-ইউ‘আলিলমুহূবাশারুল লিছা-নুল্লাযী ইউলহিদূ না ইলাইহি আ‘জামিইয়ুওঁ ওয়া হা-যা-লিছা-নুন ‘আরাবিইয়ুম মুবীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (হে নবী!) আমার জানা আছে যে, তারা (তোমার সম্পর্কে) বলে, তাকে তো একজন মানুষ শিক্ষা দেয়। (অথচ) তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা আরবী নয়। ৫৬ আর এটা (অর্থাৎ কুরআনের ভাষা) স্পষ্ট আরবী ভাষা।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমি তো ভালভাবেই জানি যে, তারা বলেঃ তাকে জনৈক ব্যক্তি শিক্ষা দেয়। যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে, তার ভাষা তো আরবী নয় এবং এ কোরআন পরিষ্কার আরবী ভাষায়।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি তো জানি, তারা বলে, ‘তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ।’ এরা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ভাষা।  তাফসীরঃ ৫৬. মক্কা মুকাররমায় একজন কামার ছিল, যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে-মাঝে তার কাছে যেতেন ও তাকে দীন ও ঈমানের কথা শোনাতেন। সেও কখনও কখনও তাঁকে ইনজীলের দু’-একটি কথা শুনিয়ে দিত। ব্যস! এরই ভিত্তিতে মক্কা মুকাররমার কোন কোন কাফের বলতে শুরু করল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে সেই কামারই এ কুরআন শিখাচ্ছে। তাদের সে মন্তব্য যে কতটা অবান্তর সেটাই এ আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেই বেচারা কামার তো এক অনারব লোক। সে এই অনন্যসাধারণ বাকশৈলীর অলংকারময় আরবী কুরআন কিভাবে রচনা করতে পারে?  ১০৪  إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ لَا يَهْدِيهِمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ  ইন্নাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি লা-ইয়াহদীহিমুল্লা-হু ওয়া লাহুম ‘আযাবুন আলীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা আল্লাহর আয়াতের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দান করেন না। তাদের জন্য আছে, যন্ত্রণাময় শাস্তি।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা আল্লাহর কথায় বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা আল্লাহ্ র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেন না এবং তাদের জন্যে আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।  ১০৫  إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ  ইন্নামা-ইয়াফতারিল কাযিবাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি ওয়া উলাইকা হুমুল কা-যিবূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ তো (নবী নয়, বরং) তারাই করে, যারা আল্লাহর আয়াতের উপর ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে তারাই মিথ্যাবাদী।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান মিথ্যা কেবল তারা রচনা করে, যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা আল্লাহ্ র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না তারা তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী।  ১০৬  مَن كَفَرَ بِاللَّهِ مِن بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَـٰكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ  মান কাফারা বিল্লা-হি মিম বা‘দি ঈমা-নিহীইল্লা-মান উকরিহা ওয়া কালবুহূমুতমাইননুম বিলঈমা-নি ওয়ালা-কিম মান শারাহা বিলকুফরি সাদরান ফা‘আলাইহিম গাদাবুম মিনাল্লা-হি ওয়ালাহুম ‘আযা-বুন ‘আজীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর তাঁর কুফরীতে লিপ্ত হয় অবশ্য যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে স্থির সে নয়; বরং যে কুফরীর জন্য নিজ হৃদয় খুলে দিয়েছে, এরূপ লোকের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব ৫৭ এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহ্কে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্যে হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহ্ র গযব এবং তার জন্যে আছে মহাশাস্তি ; তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফরীর জন্যে বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত।  তাফসীরঃ ৫৭. অর্থাৎ, কারও যদি প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়, হুমকি দেওয়া হয় কুফরী কথা উচ্চারণ না করলে তাকে জানে মেরে ফেলা হবে, তবে সে মাযূর। সে তা উচ্চারণ করলে ক্ষমাযোগ্য হবে। শর্ত হল, তার অন্তর ঈমানে অবিচলিত থাকতে হবে। কিন্তু কেউ যদি স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে কুফরী কথা বলে, তবে তার উপর আল্লাহ তাআলার গযব নাযিল হবে।  ১০৭  ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ  যা-লিকা বিআন্নাহুমুছ তাহাব্বুল হায়া-তাদদুনইয়া-‘আলাল আ-খিরাতি ওয়া আন্নাল্লাহা লা-ইয়াহদিল কাওমাল কা-ফিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তা এজন্য যে, তারা আখেরাতের বিপরীতে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি ভালোবেসেছে এবং এজন্য যে, আল্লাহ এরূপ অকৃতজ্ঞ লোকদেরকে হিদায়াতে উপনীত করেন না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এটা এ জন্যে যে, তারা পার্থিব জীবনকে পরকালের চাইতে প্রিয় মনে করেছে এবং আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এটা এইজন্যে যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেয় এবং আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।  ১০৮  أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ  উলাইকাল্লাযীনা তাবা‘আল্লা-হু ‘আলা-কুলূবিহিম ওয়া ছাম‘ইহিম ওয়া আবসা-রিহিম ওয়া উলাইকা হুমুল গা-ফিলূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তারা এমন লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর, কান ও চোখে মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই এমন লোক, যারা (নিজ পরিণাম সম্পর্কে) সম্পূর্ণ গাফেল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান এরাই তারা, আল্লাহ তা’য়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ড জ্ঞানহীন।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরাই তারা, আল্লাহ্ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চোখ মোহর করে দিয়েছেন এবং এরাই গাফিল।  ১০৯  لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْخَاسِرُونَ  লা-জারামা আন্নাহুম ফিল আ-খিরাতি হুমুল খা-ছিরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এটা সুনিশ্চিত যে, এরাই আখেরাতে সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান বলাবাহুল্য পরকালে এরাই ক্ষতি গ্রস্ত হবে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন নিশ্চয়ই এরা তো আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।  ১১০  ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِن بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ  ছু ম্মা ইন্না রাব্বাকা লিল্লাযীনা হা-জারূমিম বা‘দি মা-ফুতিনূছু ম্মা জা-হাদূওয়া সাবারূ ইন্না রাব্বাকা মিম বা‘দিহা-লাগাফূরুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যারা ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হিজরত করেছে, তারপর জিহাদ করেছে ও সবর অবলম্বন করেছে, তোমার প্রতিপালক এসব বিষয়ের পর অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৫৮  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যারা দুঃখ-কষ্ট ভোগের পর দেশত্যাগী হয়েছে অতঃপর জেহাদ করেছে, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা এসব বিষয়ের পরে অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করেন, তোমার প্রতিপালক এই সবের পর, তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  তাফসীরঃ ৫৮. এ আয়াতে ‘ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার’ কথা বলে সেই সকল সাহাবীর প্রতি ইশারা করা হতে পারে, যারা মক্কা মুকাররমায় কাফেরদের পক্ষ থেকে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। প্রথমে যেহেতু কাফেরদের অশুভ পরিণামের কথা জানানো হয়েছিল, তাই এবার সেই নিপীড়িত মুসলিমদের প্রতিদানের কথাও জানিয়ে দেওয়া হল। কোন কোন মুফাসসির এখানে ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার অর্থ এই করেছেন যে, তারা প্রথমে কুফরীতে লিপ্ত হয় এবং তারপর তাওবা করে নেয়। এ হিসেবে এর সম্পর্ক হবে মুরতাদদের সাথে। অর্থাৎ, পূর্বে যে মুরতাদ (ইসলামত্যাগী)দের সম্পর্কে আলোচনা চলছিল, আলোচনা আবার সে দিকেই ফিরে গেছে। এবার তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এখনও যদি তারা তাওবা করে এবং হিজরত ও জিহাদে শামিল হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা আগের সবকিছু ক্ষমা করে দেবেন।  ১১১  ۞ يَوْمَ تَأْتِي كُلُّ نَفْسٍ تُجَادِلُ عَن نَّفْسِهَا وَتُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ  ইয়াওমা তা’তী কুল্লুনাফছিন তুজা-দিলু‘আন নাফছিহা-ওয়া তুওয়াফফা-কুল্লুনাফছিম মা‘আমিলাত ওয়া হুম লা-ইউজলামূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তা সেই দিন, যে দিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মরক্ষামূলক কথা বলতে বলতে উপস্থিত হবে এবং প্রত্যেককে তার সমস্ত কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্ন-সমর্থনে সওয়াল জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্মরণ কর সেই দিনকে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে যুক্তি উপস্থিত করতে আসবে এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণফল দেওয়া হবে। এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।  ১১২  وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ  ওয়া দারাবাল্লা-হু মাছালান কারইয়াতান কা-নাত আ-মিনাতাম মুতমাইন্নাতাইঁ ইয়া’তীহারিঝকুহা-রাগাদাম মিন কুল্লি মাকা-নিন ফাকাফারাত বিআন‘উমিল্লা-হি ফাআযা-কাহাল্লা-হু লিবা-ছাল জূ‘ই ওয়াল খাওফি বিমা-কা-নূইয়াসনা‘ঊন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যা ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ। চতুর্দিক থেকে তার জীবিকা চলে আসত পর্যাপ্ত পরিমাণে। অতঃপর তা আল্লাহর নি‘আমতের অকৃতজ্ঞতা শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির পোশাক আস্বাদন করালেন। ৫৯  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সর্বদিক হতে এর প্রচুর জীবনোপকরণ; এরপর তা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত তার জন্যে আল্লাহ্ তাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।  তাফসীরঃ ৫৯. এখানে আল্লাহ তাআলা একটি সাধারণ দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। বলছেন যে, একটি জনপদ ছিল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর। কালক্রমে তারা আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতায় ডুবে গেল এবং কোনক্রমেই নিজেদেরকে শোধরাতে রাজি হল না। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তির স্বাদ চাখালেন। এক দিকে তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হল, অন্যদিকে শত্রুদের পক্ষ থেকে আক্রমণ ও লুট-তরাজের ভয়-ভীতি। এ দুটো বিপদ যেন পোশাকের মত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। কিন্তু কোন-কোন মুফাসসির বলেন, এর দ্বারা মক্কা মুকাররমার জনপদকে বোঝানো হয়েছে, যার বাসিন্দাগণ সুখণ্ডশান্তিতে জীবন যাপন করছিল। কিন্তু তারা যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করল, তখন তাদের উপর কঠিন দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হল। তাতে মানুষ চামড়া পর্যন্ত খেতে বাধ্য হল। শেষ পর্যন্ত তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আবেদন করল, আপনি দু‘আ করুন, যেন আমাদেরকে এ দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুতরাং তিনি দু‘আ করলেন। ফলে দুর্ভিক্ষ কেটে গেল। সূরা দুখানেও এ ঘটনা আসবে।  ১১৩  وَلَقَدْ جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُونَ  ওয়া লাকাদ জাআহুম রাছূলুম মিনহুম ফাকাযযাবূহু ফাআখাযাহুমুল‘আযা-বুওয়া হুম জা-লিমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করল। সুতরাং তারা যখন জুলুমে লিপ্ত হল তখন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে তাদরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিতই ওরা ছিল পাপাচারী।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের নিকট তো এসেছিল এক রাসূল তাদেরই মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল। ফলে সীমালংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।  ১১৪  فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ  ফাকুলূমিম্মা-রাঝাকাকুমুল্লা-হু হালা-লান তাইয়িবাওঁ ওয়াশকুরূনি‘মাতাল্লা-হি ইন কুনতুম ইয়্যা-হু তা‘বুদূ ন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আল্লাহ তোমাদেরকে রিযক হিসেবে যে হালাল, পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা খাও ৬০ এবং আল্লাহর নি‘আমতসমূহের শোকর আদায় কর যদি তোমরা সত্যিই তাঁর ইবাদত করে থাক।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন তা হতে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহ্ র অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ‘ইবাদত কর।  তাফসীরঃ ৬০. পূর্বে যে অকৃতজ্ঞতার নিন্দা করা হয়েছে, এখানে তারই একটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে, যে পদ্ধতি আরব মুশরিকগণ অবলম্বন করেছিল। তা এই যে, তারা মনগড়াভাবে বহু নি‘আমত হারাম সাব্যস্ত করেছিল। সূরা আনআমে (৬ : ১৩৯-১৪৫) তা সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। এখানে তাদের অকৃতজ্ঞতার এই বিশেষ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।  ১১৫  إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ  ইন্নামা-হাররামা ‘আলাইকুমুল মাইতাতা ওয়াদ্দামা ওয়া লাহমাল খিনঝীরি ওয়ামাউহিল্লা লিগাইরিল্লা-হি বিহী ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আদিন ফাইন্নাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তিনি তো তোমাদের জন্য কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেই পশু হারাম করেছেন, যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে। তবে যে ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে যাবে এবং মজা লুটার জন্য না খাবে আর (প্রয়োজনের) সীমা অতিক্রমও না করবে, (তার পক্ষে) তো আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৬১  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘন কারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ তো কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর-মাংস এবং যা যবেহ্কালে আল্লাহ্ র পরিবর্তে অন্যের নাম নেয়া হয়েছে তাই তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন, কিন্তু কেউ অবাধ্য কিংবা সীমালংঘনকারী না হয়ে অনন্যোপায় হলে আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  তাফসীরঃ ৬১. এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা মায়েদায় (৫ : ৩) চলে গেছে।  ১১৬  وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَـٰذَا حَلَالٌ وَهَـٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ  ওয়ালা-তাকূলূলিমা-তাসিফুআলছিনাতুকুমুল কাযিবা হা-যা-হালা-লুওঁ ওয়া হা-যাহারামুল লিতাফতারূ‘আলাল্লা-হিল কাযিবা ইন্নাল্লাযীনা ইয়াফতারূনা ‘আলাল্লা-হিল কাযিবা লা-ইউফলিহূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী যে সব বস্তু সম্পর্কে তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা রচনা করে, সে সম্পর্কে বলো না- এটা হালাল এবং এটা হারাম। কেননা তার অর্থ হবে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ। জেনে রেখ, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়, তারা সফলকাম হয় না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তোমাদের মুখ থেকে সাধারনতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহ্ র প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্যে তোমরা বল না, ‘এটা হালাল এবং তা হারাম।’ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না।  ১১৭  مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ  মাতা-‘উন কালীলুওঁ ওয়া লাহুম ‘আযা-বুন আলীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী (দুনিয়ায়) তাদের আরাম-আয়েশ অতি সামান্য। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান যৎসামান্য সুখ-সম্ভোগ ভোগ করে নিক। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং এদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।  ১১৮  وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا مَا قَصَصْنَا عَلَيْكَ مِن قَبْلُ ۖ وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ  ওয়া ‘আলাল্লাযীনা হা-দূহাররামনা-মা-কাসাসনা-‘আলাইকা মিন কাবলু ওয়ামাজালামনা-হুম ওয়ালা-কিন কা-নূআনফুছাহুম ইয়জলিমূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী ইয়াহুদীদের জন্য আমি হারাম করেছিলাম সেই সব জিনিস, যা আমি পূর্বেই তোমার নিকট উল্লেখ করেছি। ৬২ আমি তাদের উপর কোন জুলুম করিনি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান ইহুদীদের জন্যে আমি তো কেবল তাই হারাম করেছিলাম যা ইতিপূর্বে আপনার নিকট উল্লেখ করেছি। আমি তাদের প্রতি কোন জুলুম করিনি, কিন্তু তারাই নিজেদের উপর জুলুম করত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইয়াহূদীদের জন্যে আমি তো কেবল তাই হারাম করেছিলাম যা তোমার নিকট আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং আমি এদের ওপর কোন জুলুম করি নাই, কিন্তু এরাই জুলুম করত নিজেদের প্রতি।  তাফসীরঃ ৬২. বলা উদ্দেশ্য, মক্কার কাফেরগণ নিজেদেরকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী বলে দাবী করত, অথচ তারা যেসব হালাল জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করেছিল, তা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকেই হালালরূপে চলে আসছিল। তার মধ্যে কেবল গুটি কয়েক জিনিস ইয়াহুদীদের প্রতি শাস্তিস্বরূপ হারাম করা হয়েছিল। যেমন সূরা নিসায় (৪ : ১৬০) গত হয়েছে। বাকি সবই তখন থেকে হালাল হিসেবেই চলে আসছে।  ১১৯  ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ  ছু ম্মা ইন্না রাব্বাকা লিল্লাযীনা ‘আমিলুছছূআ বিজাহা-লাতিন ছুম্মা তা-বূমিম বা‘দি যালিকা ওয়া আসলাহূ ইন্না রাব্বাকা মিম বা‘দিহা-লাগাফরুর রাহীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তা সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক এমন যে, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে এবং তারপর তাওবা করে ও নিজেদেরকে শুধরিয়ে নেয়, তোমার প্রতিপালক তারপরও তাদের জন্য অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এরপর যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম করে তারা পরে তওবা করলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্যে তোমার প্রতিপালক অবশ্য অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।  ১২০  إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ  ইন্না ইবরা-হীমা কা-না উম্মাতান কা-নিতাল লিল্লা-হি হানীফাওঁ ওয়ালাম ইয়াকুমিনাল মুশরিকীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিল এক আদর্শপুরুষ আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইব্রাহীম ছিল এক ‘উম্মত’, আল্লাহ্ র অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত;  ১২১  شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ۚ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ  শা-কিরাল লিআন‘উমিহী ইজতাবা-হু ওয়াহাদা-হু ইলা-সিরা-তিম মুছতাকীম।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী সে আল্লাহর নি‘আমতের কৃতজ্ঞতা আদায়কারী ছিল। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন সে ছিল আল্লাহ্ র অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞ; আল্লাহ্ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।  ১২২  وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ  ওয়া আ-তাইনা-হু ফিদদুনইয়া-হাছানাতাওঁ ওয়া ইন্নাহূফিল আ-খিরাতি লামিনাসসালিহীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী আমি তাকে দুনিয়ায়ও কল্যাণ দিয়েছিলাম এবং আখেরাতেও সে নিশ্চয়ই সালেহীনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আমি তাঁকে দুনিয়াতে দান করেছি কল্যাণ এবং তিনি পরকালেও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমি তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং আখিরাতেও, সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।  ১২৩  ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ  ছু ম্মা আওহাইনাইলাইকা আনিত্তাবি‘ মিল্লাতা ইবরা-হীমা হানীফাওঁ ওয়ামা-কা-না মিনাল মুশরিকীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী অতঃপর (হে নবী!) আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার প্রতিও এই হুকুম নাযিল করেছি যে, তুমি ইবরাহীমের দীন অনুসরণ কর, যে নিজেকে আল্লাহরই অভিমুখী করে রেখেছিল এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন আমি তোমাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর; এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।  ১২৪  إِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ  ইন্নামা-জু‘ইলাছছাব তু‘আলাল্লাযীনাখ তালাফূফীহি ওয়া ইন্না রাব্বাকা লাইয়াহকুমু বাইনাহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফীমা-কা-নূফীহি ইয়াখাতালিফূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী শনিবার সম্পর্কিত বিধান তো কেবল তাদের উপরই বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করত। ৬৩ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করে কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে মীমাংসা করবেন।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান শনিবার দিন পালন যে, নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা তাদের জন্যেই যারা এতে মতবিরোধ করেছিল। আপনার পালনকর্তা কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন শনিবার পালন তো কেবল তাদের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করত। যে বিষয়ে এরা মতভেদ করত তোমার প্রতিপালক তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে এদের বিচার-মীমাংসা করে দিবেন।  তাফসীরঃ ৬৩. এটা দ্বিতীয় ব্যতিক্রম, যা ইয়াহুদীদের প্রতি হারাম করা হয়েছিল, অথচ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শরীয়তে তা বৈধ ছিল। ইয়াহুদীদের জন্য শনিবারে অর্থনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে যায়। কিছু লোক তো এ হুকুম পালন করল এবং কিছু লোক করল না। যাই হোক, এটাও একটা ব্যতিক্রম বিধান ছিল, যা কেবল ইয়াহুদীদের প্রতিই আরোপ করা হয়েছিল। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শরীয়ত এর থেকে মুক্ত ছিল। কাজেই কারও এ অধিকার নেই যে, নিজের পক্ষ থেকে কোন জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করবে।  ১২৫  ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ  উদ‘উ ইলা-ছাবীলি রাব্বিকা বিলহিকমাতি ওয়াল মাও‘ইজাতিল হাছানাতি ওয়া জা-দিলহুম বিল্লাতী হিয়া আহছানু ইন্না রাব্বাকা হুওয়া আ‘লামুবিমান দাল্লা ‘আন ছাবীলিহী ওয়া হুওয়া আ‘লামুবিলমুহতাদীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আর (যদি কখনও বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সাথে বিতর্ক করবে উৎকৃষ্ট পন্থায়। ৬৪ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞাত, যারা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিক্মত ও সদুপদেশ দিয়ে এবং এদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।  তাফসীরঃ ৬৪. এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত মূলনীতি হল তিনটি (ক) হিকমত (খ) সদুপদেশ ও (গ) উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক। হিকমতের মর্ম হল সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। সদুপদেশের অর্থ যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা। আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া। -অনুবাদক  ১২৬  وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ  ওয়া ইন ‘আ-কাবতুম ফা‘আকিবূবিমিছলি মা -‘ঊকিবতুম বিহী ওয়া লাইন সাবারতুম লাহুওয়া খাইরুল লিসসা-বিরীন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী তোমরা যদি (কোন জুলুমের) প্রতিশোধ নাও, তবে ঠিক ততটুকুই নেবে, যতটুকু জুলুম তোমাদের উপর করা হয়েছে আর যদি সবর কর, তবে নিশ্চয়ই সবর অবলম্বনকারীদের পক্ষে তাই শ্রেয়।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন যদি তোমরা শাস্তি দাওই, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দিবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্যে এটাই তো উত্তম।  ১২৭  وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ  ওয়াসবির ওয়ামা-সাবরুকা ইল্লা-বিল্লা-হি ওয়ালা-তাহঝান ‘আলাইহিম ওয়ালা-তাকুফী দাইকিম মিম্মা-ইয়ামকুরূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী এবং (হে নবী!) তুমি সবর অবলম্বন কর। তোমার সবর তো আল্লাহরই সাহায্যে হবে। তুমি কাফেরদের জন্য দুঃখ করো না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে তার কারণে কুণ্ঠিত হয়ো না।  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন তুমি ধৈর্য ধারণ কর, তোমার ধৈর্য তো আল্লাহ্ র ই সাহায্যে। এদের দরুন দুঃখ কর না এবং এদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।  ১২৮  إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوا وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ  ইন্নাল্লা-হা মা‘আল্লাযী নাত্তাকাওঁ ওয়াল্লাযীনা হুম মুহছিনূন।  অর্থঃ মুফতী তাকী উসমানী নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সাথী, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা ইহসানের অধিকারী হয়। ৬৫  মাওলানা মুহিউদ্দিন খান নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশন আল্লাহ্ তাদেরই সঙ্গে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ।  তাফসীরঃ ৬৫. ‘ইহসান’ অতি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সব রকম সৎকর্মই এর অন্তর্ভুক্ত। একটি হাদীসে এর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে- ‘মানুষ এভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে, যেন সে আল্লাহ তাআলাকে দেখছে কিংবা অন্ততপক্ষে এই চিন্তা করবে যে, তিনি তো আমাকে দেখছেন’। হে আল্লাহ! আমাকে ইহসানওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত কর।

১৬ . আন নাহ্‌ল - ( النحل ) | মৌমাছি

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১২৮


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ


আতাআমরুল্লা-হি ফালা-তাছতা‘জিলূহু ছুবহা-নাহূওয়া তা‘আ-লা-‘আম্মাইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর হুকুম এসে গেছে। কাজেই তার জন্য তাড়াহুড়া করো না। ১ তারা যে শিরক করছে, তিনি তা থেকে পবিত্র ও সমুচ্চ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র আদেশ আসবেই; সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং এরা যাকে শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।


তাফসীরঃ

১. আরবী ভাষার বাকরীতি অনুযায়ী এটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ বাক্য। ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই ঘটবে এরূপ ঘটনাকে আরবীতে অতীত ক্রিয়ায় ব্যক্ত করা হয়ে থাকে। এর শক্তি ও প্রভাব অন্য কোন ভাষায় আদায় করা খুবই কঠিন। এস্থলে যে ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তার পটভূমি এই, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফেরদেরকে বলতেন, কুফর করতে থাকলে তার পরিণামে আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর আযাব নাযিল করবেন এবং মুসলিমদেরকে বিজয়ী করবেন, তখন তারা ঠাট্টাচ্ছলে বলত, আল্লাহ তাআলা যদি আযাব নাযিল করেনই, তবে তাকে বলুন যেন এখনই তা নাযিল করেন। এই বলে তারা বোঝাতে চাচ্ছিল, শাস্তির শাসানি ও মুসলিমদের জয়লাভের প্রতিশ্রুতি তাঁর মনগড়া কথা, এর কোন বাস্তবতা নেই (নাউযুবিল্লাহ)। তাদের সে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের উত্তর দ্বারাই সূরাটির সূচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে প্রেরিতব্য শাস্তি ও মুসলিমদের জয়লাভের যে সংবাদকে তোমরা অসম্ভব মনে করছ, প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহ তাআলার অনড় ফায়সালা এবং তা এতটা নিশ্চিত, যেন তা ঘটেই গেছে। সুতরাং তোমরা তার আগমনের জন্য তাড়া দেখানোর ছলে তার প্রতি ব্যঙ্গ প্রদর্শন করো না। কেননা তা তোমাদের মাথার উপর খাড়া রয়েছে। পরবর্তী বাক্যে এ শাস্তির অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে অন্যকে শরীক করে থাক। অথচ আল্লাহ তাআলা যে কোনও রকমের অংশীদারিত্ব থেকে কেবল পবিত্রই নন, বরং তিনি তার বহু উর্ধ্বে। সুতরাং কাউকে তাঁর শরীক সাব্যস্ত করা তাঁর প্রতি চরম অমর্যাদা প্রকাশের নামান্তর। বিশ্ব-জগতের সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মান করার অনিবার্য পরিণাম তো এটাই যে, যে ব্যক্তি তাঁকে অসম্মান করবে তার উপর আযাব পতিত হবে। (তাফসীরুল মাহাইমী, ১ম খণ্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)



يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ


ইউনাঝঝিলুল মালাইকাতা বিররূহি মিন আমরিহী ‘আলা- মাইঁ ইয়াশাউমিন ‘ইবাদিহীআন আনযিরূআন্নাহূলাইলা-হা ইল্লাআনা-ফাত্তাকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি নিজ বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা নিজ হুকুমে রূহ (অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চারক ওহী) সহ ফিরিশতা অবতীর্ণ করেন, এই মর্মে সতর্ক করার জন্য যে, আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। ২ সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর (অন্য কাউকে নয়)।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি স্বীয় নির্দেশে বান্দাদের মধ্যে যার কাছে ইচ্ছা, নির্দেশসহ ফেরেশতাদেরকে এই মর্মে নাযিল করেন যে, হুশিয়ার করে দাও, আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অতএব আমাকে ভয় কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহীসহ ফেরেশতা প্রেরণ করেন এই বলে যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং আমাকে ভয় কর।


তাফসীরঃ

২. রূহ দ্বারা ‘ওহী’ বোঝানো হয়েছে, যেমন অন্যত্র কুরআন মাজীদকেও রূহ বলা হয়েছে। সূরা শূরায় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- وَكَذَٰلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِّنْ أَمْرِنَا আমার নির্দেশে ওহীরূপে তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক রূহ, অর্থাৎ কুরআন (সূরা শূরা ৪২ : ৫২)। ওহী ও কুরআনকে রূহ বলা হয়েছে এর সঞ্জীবনী শক্তির কারণে। রূহ যেমন দেহকে জীবিত করে তোলে, তেমনি ওহী ও কুরআন ও মানুষের মৃত আত্মায় জীবন সঞ্চার করে। -অনুবাদক



خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ تَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ


খালাকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা বিলহাক্কি তা‘আ-লা-‘আম্মা-ইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে যথার্থ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি বহু উর্ধ্বে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যিনি যথাবিধি আকাশরাজি ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার বহু উর্ধ্বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি যথাযথভাবে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; এরা যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।



خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ


খালাকাল ইনছা-না মিন নুতফাতিন ফাইযা-হুওয়া খাসীমুম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি মানুষকে শুক্রবিন্দু হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর সহসা সে প্রকাশ্য বিতণ্ডার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে। ৩

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি মানবকে এক ফোটা বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্বেও সে প্রকাশ্য বিতন্ডাকারী হয়ে গেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখ, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!


তাফসীরঃ

৩. অর্থাৎ, মানুষের সারবত্তা তো কেবল এই যে, সে এক অপবিত্র বিন্দু থেকে সৃষ্টি। কিন্তু সে যখন একটু বাকশক্তি লাভ করল, অমনি সে যেই মহান সত্তা তাকে অপবিত্র বিন্দু থেকে এক পূর্ণাঙ্গ মানব বানিয়েছেন এবং তাকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা দান করেছেন, তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে রীতিমত তার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিল।



وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا ۗ لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ


ওয়াল আন‘আ-মা খালাকাহা- লাকুম ফীহা-দিফউওঁ ওয়া মানা-ফি‘উ ওয়া মিনহাতা’কুলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে তোমাদের জন্য শীত থেকে বাঁচার উপকরণ ৪ এবং তা ছাড়া আরও বহু উপকার রয়েছে এবং তা থেকেই তোমরা খেয়েও থাক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

চতুষ্পদ জন্তুকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। এতে তোমাদের জন্যে শীত বস্ত্রের উপকরণ আছে। আর অনেক উপকার হয়েছে এবং কিছু সংখ্যককে তোমরা আহার্যে পরিনত করে থাক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্যে এতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে। এবং তা হতে তোমরা আহার করে থাক।


তাফসীরঃ

৪. অর্থাৎ, তোমরা চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা এমন পোশাক তৈরি কর, যা তোমাদেরকে শীত থেকে রক্ষা করে।



وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ


ওয়া লাকুম ফীহা-জামা-লুন হীনা তুরী হূনা ওয়াহীনা তাছরাহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা সন্ধ্যাকালে যখন সেগুলোকে বাড়িতে ফিরিয়ে আন এবং ভোরবেলা যখন সেগুলোকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তার ভেতর তোমাদের জন্য দৃষ্টিনন্দন শোভাও রয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এদের দ্বারা তোমাদের সম্মান হয়, যখন বিকালে চারণভূমি থেকে নিয়ে আস এবং সকালে চারণ ভূমিতে নিয়ে যাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তোমরা যখন গোধূলি লগ্নে এদেরকে চারণভূমি হতে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন এদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ কর।



وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَىٰ بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنفُسِ ۚ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ


ওয়া তাহমিলুআছকা-লাকুম ইলা-বালাদিল লাম তাকূনূবা-লিগীহি ইল্লা-বিশিক্কিল আনফুছি ইন্না রাব্বাকুম লারাঊফুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তারা তোমাদের ভার বয়ে নিয়ে যায় এমন নগরে, যেখানে প্রাণান্তকর কষ্ট ছাড়া তোমরা পৌঁছতে পারতে না। প্রকৃতপক্ষে তোমাদের প্রতিপালক অতি মমতাময়, পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরা তোমাদের বোঝা এমন শহর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যায়, যেখানে তোমরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম ব্যতীত পৌছাতে পারতে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু অত্যন্ত দয়াদ্র, পরম দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এরা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছতে পারতে না। তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।



وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً ۚ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ


ওয়াল খাইলা ওয়াল বিগা-লা ওয়াল হমীরা লিতারকাবূহা-ওয়াঝীনাতাওঁ ওয়া ইয়াখলুকু মা-লা-তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা তিনিই সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাতে আরোহণ করতে পার এবং তা তোমাদের শোভা হয়। তিনি সৃষ্টি করেন এমন বহু জিনিস, যা তোমরা জান না। ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের আরোহণের জন্যে এবং শোভার জন্যে তিনি ঘোড়া, খচ্চর ও গাধা সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেন যা তোমরা জান না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের আরোহণের জন্যে ও শোভার জন্যে তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু, যা তোমরা অবগত নও।


তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট এমন বহু বাহন আছে, যে সম্পর্কে এখন তোমাদের কোন জ্ঞান নেই। এভাবে এ আয়াত আমাদের জানাচ্ছে, যদিও বাহন হিসেবে এখন তোমরা ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাই ব্যবহার করছ, কিন্তু ভবিষ্যতে আল্লাহ তাআলা নতুন-নতুন বাহন সৃষ্টি করবেন। সুতরাং কুরআন নাযিলের পর থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত যে সব বাহন আবিষ্কৃত হয়েছে, যেমন মোটর গাড়ি, বাস, রেল, উড়োজাহাজ, স্টিমার ইত্যাদি কিংবা কিয়ামত পর্যন্ত আরও যা-কিছু আবিষ্কৃত হবে তা সবই এ আয়াতের মধ্যে এসে গেছে। আরবী ব্যাকরণের আলোকে এ আয়াতের তরজমা এভাবেও করা যায়- ‘তিনি এমন সব বস্তু সৃষ্টি করবেন, যে সম্পর্কে তোমরা এখনও জান না।’ এ তরজমা দ্বারা বক্তব্য আরও স্পষ্ট হয়।



وَعَلَى اللَّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَائِرٌ ۚ وَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ


ওয়া ‘আলাল্লা-হি কাসদুছছাবীলি ওয়া মিনহা-জাইরুওঁ ওয়া লাও শাআ লাহাদা-কুম আজমা‘ঈন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সরল পথ দেখানোর দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার। আর আছে বহু বাঁকা পথ। তিনি চাইলে তোমাদের সকলকে সরল পথে পরিচালিত করতেন। ৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সরল পথ আল্লাহ্ র কাছে পৌঁছায়, কিন্তু পথগুলির মধ্যে বক্র পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।


তাফসীরঃ

৬. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেমন দুনিয়ার পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এসব বাহন সৃষ্টি করেছেন, তেমনি আখেরাতের রূহানী সফরের জন্য তিনি সরল পথ দেখানোর দায়িত্বও গ্রহণ করেছেন। কেননা মানুষ এর জন্য বহু বাঁকা পথ তৈরি করে রেখেছে। তা থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূল পাঠান ও কিতাব নাযিল করেন এবং তাদের মাধ্যমে মানুষকে সরল সোজা পথ দেখিয়ে দেন। তবে কাউকে তিনি জবরদস্তিমূলকভাবে এ পথে পরিচালিত করেন না। ইচ্ছা করলে তাও করতে পারতেন। কিন্তু তা করেন না এজন্য যে, তিনি চান মানুষ তাঁর প্রদর্শিত পথে জবরদস্তিমূলকভাবে নয়; বরং স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে চলুক। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা নিজ নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষকে পথ দেখানোর ব্যবস্থা করেই ক্ষান্ত হয়েছেন।


১০


هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ


হুওয়াল্লাযীআনঝালা মিনাছছামাইমাআল্লাকুম মিনহু শারা-বুওঁ ওয়া মিনহু শাজারুন ফীহি তুছীমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, যা থেকে তোমাদের পানীয় লাভ হয় এবং তা থেকেই জন্মায় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা পশু চরাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এই পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়, যাতে তোমরা পশুচারণ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই আকাশ হতে বারিবর্ষণ করেন। এতে তোমাদের জন্যে রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক।


১১


يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ


ইউমবিতুলাকুম বিহিঝঝার‘আ ওয়াঝঝাইতূনা ওয়ান্নাখীলা ওয়াল আ‘না-বা ওয়া মিন কুল্লিছছামারা-ত ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা দ্বারাই তিনি তোমাদের জন্য ফসল, যায়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করেন। ৭ নিশ্চয়ই যারা চিন্তা করে, তাদের জন্য এসব বিষয়ের মধ্যে নিদর্শন আছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ পানি দ্বারা তোমাদের জন্যে উৎপাদন করেন ফসল, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সর্বপ্রকার ফল। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি তোমাদের জন্যে এর দিয়ে জন্মান শস্য, যায়তূন, খর্জুর বৃক্ষ, দ্রাক্ষা এবং সর্বপ্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।


তাফসীরঃ

৭. ফসল দ্বারা সেই সব শস্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা মানুষ দৈনন্দিন খাদ্যরূপে ব্যবহার করে, যেমন গম, চাল, তরি-তরকারি ইত্যাদি। যয়তুন হল সেই সকল বস্তুর একটা নমুনা, যা খাদ্য প্রস্তুত ও তা সুস্বাদু করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর খেজুর, আঙ্গুর ও অন্যান্য ফল দ্বারা সেই সব জিনিসের প্রতি ইশারা করা হয়েছে, যা বাড়তি ভোগ-সৌখিনতায় কাজে আসে।


১২


وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ


ওয়া ছাখখারা লাকুমুল লাইলা ওয়ান্নাহা-রা ওয়াশশামছা ওয়াল কামারা ওয়াননুজূমু মুছাখখারা-তুম বিআমরিহি ইন্না ফী যা-লিকা লা আ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইয়া‘কিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি দিন-রাত ও চন্দ্র-সূর্যকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। নক্ষত্ররাজিও তাঁর নির্দেশে কর্মরত রয়েছে। নিশ্চয়ই এর ভেতর বহু নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা বুদ্ধি কাজে লাগায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকাসমূহ তাঁরই বিধানের কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই নির্দেশে। অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন-


১৩


وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ


ওয়ামা-যারাআ লাকুম ফিল আরদিমুখতালিফান আলওয়া-নুহূ ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াযযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য রঙ-বেরঙের যে বস্তুরাজি পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাও তাঁর নির্দেশে কর্মরত আছে। নিশ্চয়ই যারা শিক্ষাগ্রহণ করে, সেই সব লোকের জন্য এর মধ্যে নিদর্শন আছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে যেসব রং-বেরঙের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন, সেগুলোতে নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্যে যারা চিন্তা-ভাবনা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তিনি বিবিধ প্রকার বস্তুও যা তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছেন, এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন সেই সম্প্রদায়ের জন্যে যারা উপদেশ গ্রহণ করে।


১৪


وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ


ওয়াহুওয়াল্লাযী ছাখখারাল বাহরা লিতা’কুলূমিনহু লাহমান তারিইইয়াওঁ ওয়া তাছতাখরিজূ মিনহু হিলয়াতান তালবাছূনাহা- ওয়া তারাল ফুলকা মাওয়া-খিরা ফীহি ওয়া লিতাবতাগূ মিন ফাদলিহী ওয়া লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই সেই সত্তা, যিনি সমুদ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত ৮ খেতে পার এবং তা থেকে আহরণ করতে পার অলংকার, যা তোমরা পরিধান কর ৯ এবং তোমরা দেখতে পাও তাতে পানি কেটে কেটে নৌযান চলাচল করে, যাতে তোমরা সন্ধান করতে পার আল্লাহর অনুগ্রহ এবং যাতে তোমরা শোকর গোজার হয়ে যাও। ১০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সমুদ্রকে, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাংস খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার পরিধেয় অলঙ্কার। তুমি তাতে জলযান সমূহকে পানি চিরে চলতে দেখবে এবং যাতে তোমরা আল্লাহর কৃপা অন্বেষণ কর এবং যাতে তার অনুগ্রহ স্বীকার কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা হতে তাজা মৎস্য আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে আহরণ করতে পার রতèাবলী, যা তোমরা ভূষণরূপে পরিধান কর; এবং তোমরা দেখতে পাও, এর বুক চিরিয়া নৌযান চলাচল করে এবং তা এইজন্যে যে, তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর;


তাফসীরঃ

৮. এর দ্বারা মাছের গোশত বোঝানো হয়েছে।


৯. সাগর থেকে মণি-মুক্তা আহরণ করা হয়, যা অলংকারাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


১০. অর্থাৎ, সাগর পথে বাণিজ্য-ভ্রমণ করে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাও। কুরআন মাজীদে ‘আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান’-এর পরিভাষাটি বিভিন্ন আয়াতে ‘ব্যবসা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। দেখুন সূরা বাকারা (২ : ১৬৮), সূরা বনী ইসরাঈল (১৭ : ১২, ৬৬), সূরা কাসাস (২৮ : ৭৩), সূরা রূম (৩০ : ৪৬), সূরা ফাতির (৩৫ : ১২), সূরা জাছিয়া (৪৫ : ১২), সূরা জুমুআ (৬২ : ১০) ও সূরা মুযযাম্মিল (৭৩ : ২০)। তেজারতকে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ সাব্যস্ত করার দ্বারা বোঝা যাচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য যদি শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করা হয়, তবে ইসলামে তা পছন্দনীয় কাজ। দ্বিতীয়ত এ পরিভাষা দ্বারা ব্যবসায়ীদেরকে বোঝানো হচ্ছে যে, ব্যবসায় যে মুনাফা অর্জিত হয়, তা মূলত আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ, কেবল ব্যবসায়ীর চেষ্টার ফসল নয়। কেননা মানুষ যতই চেষ্টা করুক, যদি আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ না থাকে, তবে তা কখনই ফলপ্রসূ হতে পারে না। সুতরাং ব্যবসার মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ অর্জিত হলে তাকে নিজ চেষ্টার্জিত মনে করে অহমিকা দেখানো সমীচীন নয়; বরং আল্লাহ তাআলার দান মনে করে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত।


১৫


وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ


ওয়া আলকা-ফিল আরদি রাওয়া-ছিয়া আন তামীদাবিকুমওয়াআনহা-রাওঁ ওয়া ছুবুলাল লা‘আল্লাকুম তাহতাদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তিনি পৃথিবীতে পাহাড়ের ভার স্থাপন করেছেন, যাতে তা তোমাদের নিয়ে দোল না খায় ১১ এবং নদ-নদী ও পথ তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তিনি পৃথিবীর উপর বোঝা রেখেছেন যে, কখনো যেন তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে-দুলে না পড়ে এবং নদী ও পথ তৈরী করেছেন, যাতে তোমরা পথ প্রদর্শিত হও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার;


তাফসীরঃ

১১. প্রথমে পৃথিবীকে যখন সাগরের উপর স্থাপন করা হয়েছিল, তখন পৃথিবী দোল খাচ্ছিল। আল্লাহ তাআলা পাহাড় দ্বারা তা স্থির করে দেন। আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা জানা যায়, এখনও বড়-বড় মহাদেশ সাগরের পানির উপর ঈষৎ নড়াচড়া করছে। কিন্তু সে নড়াচড়া অত্যন্ত মৃদু, যা মানুষ টের পায় না।


১৬


وَعَلَامَاتٍ ۚ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ


ওয়া ‘আলা-মা-তিওঁ ওয়াবিন্নাজমি হুম ইয়াহতাদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (পথ চেনার সুবিধার্থে) বহু আলামত তৈরি করেছেন, তাছাড়া মানুষ নক্ষত্র দ্বারা পথ চিনে নেয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তিনি পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন সৃষ্টি করেছেন, এবং তারকা দ্বারা ও মানুষ পথের নির্দেশ পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং পথনির্ণায়ক চিহ্নসমূহও। আর এরা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।


১৭


أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ ۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ


আফামাইঁ ইয়াখলুকুকামাল লা-ইয়াখলুকু আফালা-তাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং বল, যেই সত্তা (এতসব বস্তু) সৃষ্টি করেন, তিনি কি তার সমান হতে পারেন, যে কিছুই সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যিনি সৃষ্টি করে, তিনি কি সে লোকের সমতুল্য যে সৃষ্টি করতে পারে না? তোমরা কি চিন্তা করবে না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না ? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না ?


১৮


وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ


ওয়া ইন তা‘উদ্দূনি‘মাতাল্লা-হি লা-তুহসূহা- ইন্নাল্লা-হা লাগাফরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা যদি আল্লাহর নি‘আমতসমূহ গুণতে শুরু কর, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না। বস্তুত আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। আল্লাহ্ তো অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

১২. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার নি‘আমত যখন এত বিপুল, যা গণা সম্ভব নয়, তখন তার তো দাবী ছিল মানুষ সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার শোকর আদায়ে লিপ্ত থাকবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা জানেন, মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। তাই তিনি তাদের সঙ্গে মাগফিরাত ও রহমত সুলভ আচরণ করেন এবং তাদের দ্বারা শোকর আদায়ে যে কমতি ঘটে তা ক্ষমা করে দেন। তবে তিনি এটা অবশ্যই চান যে, মানুষ তাঁর আহকাম মোতাবেক জীবন যাপন করবে এবং প্রকাশ্য ও গোপন সর্বাবস্থায় তাঁর অনুগত হয়ে চলবে। এজন্য সর্বদা তার অন্তরে এ চেতনা জাগ্রত রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি কাজ জানেন, চাই সে তা প্রকাশ্যে করুক বা গোপনে। সুতরাং পরবর্তী আয়াতে এ সত্যই ব্যক্ত হয়েছে।


১৯


وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ


ওয়াল্লা-হু ইয়া‘লামুমা-তুছিররূনা ওয়ামা-তু‘লিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা যা গোপনে কর তা আল্লাহ জানেন এবং তোমরা যা প্রকাশ্যে কর তাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা যা গোপন রাখ এবং যা প্রকাশ কর আল্লাহ্ তা জানেন।


২০


وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ


ওয়াল্লাযীনা ইয়াদ‘ঊনা মিন দূনিল্লা-হি লা-ইয়াখলুকূ না শাইআওঁ ওয়া হুম ইউখলাকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে (অর্থাৎ যে সব দেব-দেবীকে) ডাকে, তারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। তাদের নিজেদেরই তো সৃষ্টি করা হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে, ওরা তো কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা আল্লাহ্ ব্যতীত অপর যাদেরকে আহ্বান করে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়।


২১


أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ ۖ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ


আমওয়া-তুন গাইরু আহইয়াইওঁ ওয়ামা-ইয়াশ‘উরূনা আইইয়া-না ইউব‘আছূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা নিষ্প্রাণ। তাদের ভেতর জীবন নেই। তাদেরকে কখন জীবিত করে উঠানো হবে সে বিষয়েও তাদের কোন চেতনা নেই। ১৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা মৃত-প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে, জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা নি®প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।


তাফসীরঃ

১৩. এর দ্বারা তারা যাদের পূজা করত সেই প্রতিমাদের বোঝানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, তারা অন্যকে সৃষ্টি করবে কি, নিজেরাই তো অন্যের হাতে তৈরি। তাদের না আছে জান, না জীবন। তাদের একথাও জানা নেই যে, মৃত্যুর পর তাদের পূজারীদেরকে কবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে?


২২


إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۚ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ


ইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়াহিদুন ফাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি কুলূবুহুম মুনকিরাতুওঁ ওয়াহুম মুছতাকবিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহমিকায় লিপ্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমাদের ইলাহ একক ইলাহ। অনন্তর যারা পরজীবনে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকার প্রদর্শন করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের অন্তর সত্যবিমুখ এবং তারা অহংকারী।


২৩


لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ


লা-জারামা আন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমা-ইউছিররূনা ওয়ামা-ইউ‘লিনূন ইন্নাহু লাইউহিব্বুল মুছতাকবিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা সুনিশ্চিত যে, তারা যা গোপনে করে তা আল্লাহ জানেন এবং তারা যা প্রকাশ্যে করে তাও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ১৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা নিঃসন্দেহ যে, আল্লাহ্ জানেন যা এরা গোপন করে এবং যা এরা প্রকাশ করে। তিনি তো অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না।


তাফসীরঃ

১৪. আল্লাহ তাআলা যেহেতু অহংকারীদেরকে পছন্দ করেন না তাই তিনি অবশ্যই তাদেরকে শাস্তি দেবেন। আর সেজন্য আখেরাতের অস্তিত্ব থাকা অপরিহার্য। কাজেই আখেরাতকে অস্বীকার করার কোনও কারণ নেই।


২৪


وَإِذَا قِيلَ لَهُم مَّاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۙ قَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ


ওয়া ইযা- কীলা লাহুম মা-যাআনঝালা রাব্বুকুম কা-লূআছা-তীরুল আওওয়ালীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমাদের প্রতিপালক কী বিষয় অবতীর্ণ করেছেন? তারা বলে বিগতদের গল্প!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন? তারা বলেঃ পূর্ববর্তীদের কিসসা-কাহিনী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এদেরকে বলা হয়, ‘তোমাদের প্রতিপালক কি অবতীর্ণ করেছেন ?’ তখন এরা বলে, ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা!’


২৫


لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۙ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ


লিইয়াহমিলূআওঝা-রাহুম কা-মিলাতাইঁ ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ওয়া মিন আওঝারিল্লাযীনা ইউদিললূনাহুম বিগাইরি ‘ইলমিন আলা-ছাআ মা ইয়াঝিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(এসবের) পরিণাম হল এই যে, কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের (কৃত গুনাহের) পরিপূর্ণ ভারও বহন করবে এবং তাদেরও ভারের একটা অংশ, যাদেরকে তারা কোনরূপ জ্ঞান ব্যতিরেকে বিপথগামী করছে। ১৫ স্মরণ রেখ, তারা যা বহন করছে তা অতি মন্দ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফলে কেয়ামতের দিন ওরা পূর্ণমাত্রায় বহন করবে ওদের পাপভার এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে তারা তাদের অজ্ঞতাহেতু বিপথগামী করে শুনে নাও, খুবই নিকৃষ্ট বোঝা যা তারা বহন করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফলে কিয়ামত দিবসে এরা বহন করবে এদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাদেরও যাদেরকে এরা অজ্ঞতাহেতু বিভ্রান্ত করেছে। দেখ, এরা যা বহন করবে তা কত নিকৃষ্ট!


তাফসীরঃ

১৫. অর্থাৎ, তারা আল্লাহ তাআলার কালামকে গল্প-গুজব সাব্যস্ত করে যাদেরকে বিপথগামী করেছিল, তারা তাদের প্রভাব-বলয়ে থেকে যেসব গুনাহ করত, তার বোঝাও তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।


২৬


قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَأَتَى اللَّهُ بُنْيَانَهُم مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِن فَوْقِهِمْ وَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ


কাদ মাকারাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাআতাল্লা-হুবুনইয়া-নাহুম মিনাল কাওয়া-‘ইদি ফাখাররা ‘আলাইহিমুছছাকফুমিন ফাউকিহিম ওয়া আতা-হুমুল ‘আযা-বুমিন হাইছু লাইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের পূর্ববর্তী লোকেও চক্রান্ত করেছিল। পরিণামে তারা যে (ষড়যন্ত্রের) ইমারত নির্মাণ করেছিল, আল্লাহ তার ভিত্তিমূল উপড়ে ফেললেন ফলে উপর থেকে ছাদও তাদের উপর ধ্বসে পড়ল। আর এমন স্থান থেকে তাদের উপর আযাব আপতিত হল, যা তারা টের করতেই পারছিল না। ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় চক্রান্ত করেছে তাদের পূর্ববর্তীরা, অতঃপর আল্লাহ তাদের চক্রান্তের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন। এরপর উপর থেকে তাদের মাথায় ছাদ ধ্বসে পড়ে গেছে এবং তাদের উপর আযাব এসেছে যেখান থেকে তাদের ধারণা ছিল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের পূর্ববর্তীরাও চক্রান্ত করেছিল; আল্লাহ্ এদের ইমারতের ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন; ফলে ইমারতের ছাদ এদের ওপর ধসে পড়ল এবং এদের প্রতি শাস্তি এলো এমন দিক হতে যা ছিল এদের ধারণার অতীত।


তাফসীরঃ

১৬. অর্থাৎ মক্কাবাসীদের আগেও বহু জাতি তাদের নবীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের সাধ্যমত সবকিছুই করেছিল, কিন্তু পরিণামে এমনভাবে তাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়েছিল, যা ছিল তাদের ধারণার অতীত। এটাই সর্বকালে আল্লাহ তাআলার নীতি। নবীগণ এবং তাদের যথার্থ অনুসারীগণ যখন দাওয়াতী কার্যক্রমে অবতীর্ণ হন, বাতিল শক্তি তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়ে। তারা থাকে দর্পিত-স্পর্ধিত। নিজেদের শক্তি-সামর্থের উপর অত্যধিক আস্থা থাকার কারণে কোনও রকম বিপর্যয়ের কথা তাদের মনেও আসে না। কিন্তু ওদিকে নিজেদের সক্ষমতার উপর নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কুদরতের উপর পূর্ণ আস্থা থাকার কারণে সত্যপন্থীদের পক্ষে আল্লাহ তাআলার সাহায্য থাকে। তাঁর ঘোষণা রয়েছে وَلَيَنْصُرَنَّ اللّٰهُ مَنْ يَّنْصُرُهُ যে আল্লাহর দীনের সাহায্য করে আল্লাহ তাকে অবশ্যই সাহায্য করেন’। (সূরা হজ্জ ২২ : ৪০) সুতরাং একদিকে তিনি তাদেরকে জয়যুক্ত করেন আর অন্যদিকে সত্যের দুশমনদেরকে তাদের কল্পনার বাইরে জেরবার করে দেন। -অনুবাদক


২৭


ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنتُمْ تُشَاقُّونَ فِيهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ إِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوءَ عَلَى الْكَافِرِينَ


ছু ম্মা ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইউখঝীহিম ওয়া ইয়াকূলুআইনা শুরাকাই ইয়াল্লাযীনা কুনতুম তুশাক্কূনা ফীহিম কা-লাল্লাযীনা ঊতুল ‘ইলমা ইন্নাল খিঝইয়াল ইয়াওমা ওয়াছছূআ ‘আলাল কা-ফিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার সেই শরীকগণ কোথায়, যাদেরকে নিয়ে তোমরা (মুসলিমদের সাথে) বিতণ্ডা করতে? ১৭ যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তারা (সে দিন) বলবে, আজ বড় লাঞ্ছনা ও দুর্দশা চেপেছে সেই কাফেরদের উপর


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর কেয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং বলবেনঃ আমার অংশীদাররা কোথায়, যাদের ব্যাপারে তোমরা খুব হঠকারিতা করতে ? যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছিল তারা বলবেঃ নিশ্চয়ই আজকের দিনে লাঞ্ছনা ও দুর্গতি কাফেরদের জন্যে,


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরে কিয়ামতের দিন তিনি এদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তিনি বলবেন, ‘কোথায় আমার সেই সমস্ত শরীক যাদের সম্বন্ধে তোমরা বিতণ্ডা করতে ?’ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছিল তারা বলবে, ‘আজ লাঞ্ছনা ও অমঙ্গল কাফিরদের-’


তাফসীরঃ

১৭. অর্থাৎ তোমাদের বিশ্বাস ছিল তারা তোমাদের পক্ষে সুপারিশ করবে আর এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কও করতে। ঠিক আছে, এখন তাদেরকে ডাক, তারা তোমাদের জন্য সুপারিশ করুক। আল্লাহ তাআলা এ কথা বলবেন, পরিহাস ও তিরস্কারস্বরূপ। -অনুবাদক


২৮


الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ ۖ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِن سُوءٍ ۚ بَلَىٰ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ


আল্লাযীনা তাতাওয়াফফা-হুমুল মালাইকাতুজা-লিমীআনফুছিহিম ফাআলকাউছ ছালামা মা-কুন্না-না‘মালুমিন ছূইন বালাইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুম বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফিরিশতাগণ যাদের রূহ এই অবস্থায় সংহার করেছে, যখন তারা (কুফরীতে লিপ্ত থেকে) নিজ সত্তার উপর জুলুম করছিল। ১৮ এ সময় কাফেরগণ আত্মসমর্পণ করে বলবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। (তাদের বলা হবে) আলবৎ করতে! তোমরা যা-কিছু করতে সব আল্লাহ জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরেশতারা তাদের জান এমতাঅবস্থায় কবজ করে যে, তারা নিজেদের উপর যুলুম করেছে। তখন তারা অনুগত্য প্রকাশ করবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করতাম না। হঁ্যা নিশ্চয় আল্লাহ সববিষয় অবগত আছেন, যা তোমরা করতে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাদের মৃত্যু ঘটায় ফেরেশতাগণ এরা নিজেদের প্রতি জুলুম করতে থাকা অবস্থায়; এরপর এরা আত্মসমর্পণ করে বলবে, ‘আমরা কোন মন্দ কর্ম করতাম না।’ এবং নিশ্চয়ই তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।


তাফসীরঃ

১৮. এর দ্বারা জানা গেল, যারা কুফর অবস্থায় মারা যায় শাস্তি কেবল তাদেরই হবে। মৃত্যুর আগে আগে যদি কেউ তাওবা করে ঈমান এনে ফেলে তবে তার তাওবা কবুল হয়ে যায় এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।


২৯


فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ


ফাদখুলূআবওয়া-বা জাহান্নামা খালিদীনা ফীহা- ফালাবি’ছা মাছওয়াল মুতাকাববিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং এখন স্থায়ীভাবে জাহান্নাম বাসের জন্য তার দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। অহংকারীদের এ ঠিকানা কতই না মন্দ!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, জাহান্নামের দরজসমূহে প্রবেশ কর, এতেই অনন্তকাল বাস কর। আর অহংকারীদের আবাসস্থল কতই নিকৃষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং তোমরা দ্বারগুলি দিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ কর, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে। দেখ, অহংকারীদের আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট!


৩০


۞ وَقِيلَ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا مَاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۚ قَالُوا خَيْرًا ۗ لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ ۚ وَلَدَارُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ ۚ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِينَ


ওয়া কীলা লিল্লাযীনাততাকাও মা-যাআনঝালা রাব্বুকুম কা-লূখাইরাল লিল্লাযীনা আহছানূফী হা-যিহিদদুনইয়া-হাছানাতুওঁ ওয়া লাদা-রুল আ-খিরাতি খাইরুওঁ ওয়ালানি‘মা দা-রুল মুত্তাকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অন্য দিকে) মুত্তাকীদের জিজ্ঞেস করা হল, তোমাদের প্রতিপালক কী নাযিল করেছেন? তারা বলল, সমূহ কল্যাণই নাযিল করেছেন। (এভাবে) যারা পুণ্যের কর্মপন্থা অবলম্বন করেছে তাদের জন্য ইহকালেও মঙ্গল আছে, আর আখেরাতের নিবাস তো আগাগোড়া মঙ্গলই। মুত্তাকীদের নিবাস কতই না উত্তম


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পরহেযগারদেরকে বলা হয়ঃ তোমাদের পালনকর্তা কি নাযিল করেছেন? তারা বলেঃ মহাকল্যাণ। যারা এ জগতে সৎকাজ করে, তাদের জন্যে কল্যাণ রয়েছে এবং পরকালের গৃহ আরও উত্তম। পরহেযগারদের গৃহ কি চমৎকার?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা মুত্তাকী ছিল তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের প্রতিপালক কী অবতীর্ণ করেছিলেন ?’ তারা বলবে, ‘মহাকল্যাণ’। যারা সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে এই দুনিয়ায় মঙ্গল এবং আখিরাতের আবাস আরও উৎকৃষ্ট এবং মুত্তাকীদের আবাসস্থল কত উত্তম!-


৩১


جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَاءُونَ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْزِي اللَّهُ الْمُتَّقِينَ


জান্না-তু‘আদনিইঁ ইয়াদখুলূনাহা-তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু লাহুম ফীহা-মাইয়াশাঊনা কাযা-লিকা ইয়াজঝিল্লা-হুল মুত্তাকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

স্থায়ী বসবাসের সেই উদ্যান, যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে এবং তারা সেখানে যা-কিছু চাবে তাই পাবে। আল্লাহ এ রকমই পুরস্কার দিয়ে থাকেন মুত্তাকীদেরকে


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সর্বদা বসবাসের উদ্যান, তারা যাতে প্রবেশ করবে। এর পাদদেশে দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হয় তাদের জন্যে তাতে তা-ই রয়েছে, যা তারা চায় এমনিভাবে প্রতিদান দেবেন আল্লাহর পরহেযগারদেরকে,


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা স্থায়ী জান্নাত যাতে তারা প্রবেশ করবে; এর পাদদেশে নদী প্রবাহিত; তারা যা কিছু কামনা করবে এতে তাদের জন্যে তাই থাকবে। এইভাবেই আল্লাহ্ পুরস্কৃত করেন মুত্তাকীদেরকে,


৩২


الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ ۙ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ


আল্লাযীনা তাতাওয়াফফা-হুমুল মালাইকাতুতাইয়িবীনা ইয়াকূলূনা ছালা-মুন ‘আলাইকুমু দ খুলুল জান্নাতা বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা ওই সকল লোক, ফিরিশতাগণ যাদের রূহ কবজ করে তাদের পাক-পবিত্র থাকা অবস্থায়। ১৯ তারা (তাদেরকে) বলে, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যে আমল করতে, তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শাস্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফেরেশতাগণ যাদের মৃত্যু ঘটায় পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফিরিশতাগণ বলবে, ‘তোমাদের প্রতি শান্তি! তোমরা যা করতে তার ফলে জান্নাতে প্রবেশ কর।’


তাফসীরঃ

১৯. অর্থাৎ কুফর ও শিরক এবং পাপাচারের পঙ্কিলতা থেকে তারা পাক-পবিত্র থাকবে এবং আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত। -অনুবাদক


৩৩


هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ أَمْرُ رَبِّكَ ۚ كَذَٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ


হাল ইয়ানজু রূনা ইল্লাআন তা’তিয়াহুমুল মালাইকাতুআও ইয়া’তিয়া আমরু রাব্বিকা কাযা-লিকা ফা‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ওয়ামা জালামাহুমুল্লা-হু ওয়ালা-কিন কানূআনফুছাহুম ইয়াজলিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ ঈমান আনার ব্যাপারে) কি কেবল এরই প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের কাছে ফিরিশতা এসে উপস্থিত হবে অথবা তোমার প্রতিপালকের হুকুম (আযাব বা কিয়ামতরূপে) এসে পড়বে? যেসব জাতি তাদের পূর্বে গত হয়েছে, তারাও এরূপই করেছিল। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন জুলুম করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা কি এখন অপেক্ষা করছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতারা আসবে কিংবা আপনার পালনকর্তার নির্দেশ পৌছবে? তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছিল। আল্লাহ তাদের প্রতি অবিচার করেননি; কিন্তু তারা স্বয়ং নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা শুধু প্রতীক্ষা করে এদের নিকট ফেরেশতা আগমনের বা তোমার প্রতিপালকের শাস্তি আগমনের। এদের পূর্ববর্তীরা এইরূপই করত। আল্লাহ্ এদের প্রতি কোন জুলুম করেন নাই, কিন্তু এরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করত।


৩৪


فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا عَمِلُوا وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ


ফাআসা-বাহুম ছাইয়িআ-তু মা-‘আমিলূ ওয়া হা-কাবিহিমমা- কা-নূ বিহী ইয়াছতাহঝিঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তাদের উপর তাদের মন্দ কাজের কুফল আপতিত হয়েছিল এবং তারা যে জিনিস নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তাই এসে তাদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুতরাং তাদের মন্দ কাজের শাস্তি তাদেরই মাথায় আপতিত হয়েছে এবং তারা যে ঠাট্টা বিদ্রুপ করত, তাই উল্টে তাদের উপর পড়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং এদের ওপর আপতিত হয়েছিল এদেরই মন্দ কর্মের শাস্তি এবং এদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল তাই, যা নিয়ে এরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত।


৩৫


وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ نَّحْنُ وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ ۚ كَذَٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ


ওয়া কালাল্লাযীনা আশরাকূলাও শাআল্লা-হু মা-‘আবাদনা-মিন দূ নিহী মিন শাইয়িন নাহনুওয়ালাআ-বাউনা-ওয়ালা-হাররামনা-মিন দূ নিহী মিন শাইয়িন কাযা-লিকা ফা‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিহিম ফাহাল ‘আলাররুছুলি ইল্লাল বালা-গুল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা শিরক অবলম্বন করেছে, তারা বলে, আল্লাহ চাইলে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতাম না না আমরা এবং না আমাদের বাপ-দাদাগণ এবং আমরা তার হুকুম ছাড়া কোন জিনিস হারামও সাব্যস্ত করতাম না। তাদের পূর্বে যে সকল জাতি গত হয়েছে তারাও এ রকমই করেছিল। কিন্তু স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছানো ছাড়া রাসূলগণের আর কোন দায়িত্ব নেই। ২০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মুশরিকরা বললঃ যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমরা তাঁকে ছাড়া কারও এবাদত করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষেরাও করত না এবং তাঁর নির্দেশ ছাড়া কোন বস্তুই আমরা হারাম করতাম না। তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই করেছে। রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মুশরিকরা বলবে, ‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমাদের পিতৃপুরুষেরা ও আমরা তাঁকে ব্যতীত অপর কোন কিছুর ‘ইবাদত করতাম না এবং তাঁর অনুজ্ঞা ব্যতীত আমরা কোন কিছু নিষিদ্ধ করতাম না।’ এদের পূর্ববর্তীরা এরূপই করত। রাসূলদের কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেওয়া।


তাফসীরঃ

২০. তাদের উক্তি ‘আল্লাহ চাইলে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতাম না’ এটা সম্পূর্ণ হঠকারিতাপ্রসূত কথা। এ রকম কথা তো যে-কোনও অপরাধীই বলতে পারে। কঠিন থেকে কঠিন অপরাধ করবে আর বলে দেবে, আল্লাহ চাইলে আমি এরূপ অপরাধ করতাম না। এরূপ জবাব কখনও গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আল্লাহ তাআলা এর কোন প্রতিউত্তর না করে কেবল জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাসূলদের দায়িত্ব বার্তা পৌঁছানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। যেভাবেই হোক এরূপ জেদী লোকদেরকে সৎপথে আনতেই হবে এটা তাদের দায়িত্ব নয়। তারা যে বলছে, ‘আমরা কোন জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করতাম না’, এর দ্বারা তারা তাদের প্রতিমাদের নামে যেসব পশু হারাম করেছিল, তার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিস্তারিত দেখুন সূরা আনআম (৬ : ১৩৯-১৪৫)।


৩৬


وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ


ওয়ালাকাদ বা‘আছনা-ফী কুল্লি উম্মাতির রাছূলান আনি‘বুদুল্লা-হা ওয়াজতানিবুততাগূতা ফামিনহুম মান হাদাল্লা-হু ওয়া মিনহুম মান হাক্কাত ‘আলাইহিদ্দালা-লাতু ফাছীরূ ফিল আরদিফানজুরূকাইফা কা-না ‘আ-কিবাতুল মুকাযযি বীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক উম্মতের ভেতর কোনও না কোনও রাসূল পাঠিয়েছি এই পথনির্দেশ দিয়ে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগূতকে পরিহার কর। ২১ তারপর তাদের মধ্যে কতক তো এমন ছিল, যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন আর কতক ছিল এমন, যাদের উপর বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে একটু পরিভ্রমণ করে দেখ, (নবীদেরকে) অস্বীকারকারীদের পরিণতি কী হয়েছে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র ‘ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দিবার জন্যে আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। এরপর এদের কতককে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং এদের কতকের ওপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল; সুতরাং পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছে !


তাফসীরঃ

২১. ‘তাগুত’ শয়তানকেও বলে আবার প্রতিমাদেরকেও বলে। সে হিসেবে বাক্যটির দুই ব্যাখ্যা হতে পারে। (ক) তোমরা শয়তানকে পরিহার করো, তার অনুগামী হয়ো না। (খ) তোমরা মূর্তিপূজা হতে বেঁচে থাক।


৩৭


إِن تَحْرِصْ عَلَىٰ هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ


ইন তাহরিস ‘আলা-হুদা-হুম ফাইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াহদী মাইঁ ইউদিল্লুওয়ামা-লাহুম মিন্নাসিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তাদের হিদায়াতপ্রাপ্তির লোভ যদি তোমার থাকে, তবে বাস্তবতা হল, আল্লাহ যাদেরকে (তাদের একরোখামির কারণে) পথভ্রষ্ট করেন তাদেরকে হিদায়াতে উপনীত করেন না এবং এরূপ লোকের কোন রকমের সাহায্যকারীও লাভ হয় না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি তাদেরকে সুপথে আনতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ যাকে বিপথগামী করেন তিনি তাকে পথ দেখান না এবং তাদের কোন সাহায্যকারী ও নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি এদের পথ প্রদর্শন করতে আগ্রহী হলেও আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাকে তিনি সৎপথে পরিচালিত করবেন না এবং এদের কোন সাহায্যকারীও নাই।


৩৮


وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ ۙ لَا يَبْعَثُ اللَّهُ مَن يَمُوتُ ۚ بَلَىٰ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ


ওয়া আকছামূবিল্লা-হি জাহদা আইমা-নিহিম লা-ইয়াব‘আছুল্লা-হু মাইঁ ইয়ামূতু বালা-ওয়া‘দান ‘আলাইহি হাক্কাওঁ ওয়ালা-কিন্না আকছারান্না-ছি লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, যারা মারা যায় আল্লাহ তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন না। কেন করবেন না? এটা তো এক প্রতিশ্রুতি, যাকে সত্যে পরিণত করার দায়িত্ব আল্লাহর, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহর নামে কঠোর শপথ করে যে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন না। অবশ্যই এর পাকাপোক্ত ওয়াদা হয়ে গেছে। কিন্তু, অধিকাংশ লোক জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহ্ র শপথ করে বলে, ‘যার মৃত্যু হয় আল্লাহ্ তাকে পুনর্জীবিত করবেন না।’ কেন নয়, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা অবগত নয়-


৩৯


لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّهُمْ كَانُوا كَاذِبِينَ


লিইউবাইয়িনা লাহুমুল্লাযী ইয়াখতালিফূনা ফীহি ওয়া লিইয়া‘লামাল্লাযীনা কাফারূআন্নাহুম কা-নূকা-যিবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(আল্লাহ পুনর্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি করেছেন) মানুষ যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে, তা তাদের সামনে স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য এবং যাতে কাফেরগণ জানতে পারে যে, তারা মিথ্যাবাদী ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি পুনরুজ্জীবিত করবেনই, যাতে যে বিষয়ে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল তা প্রকাশ করা যায় এবং যাতে কাফেরেরা জেনে নেয় যে, তারা মিথ্যাবাদী ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি পুনরুত্থিত করবেন যে বিষয়ে এদের মতানৈক্য ছিল তা এদেরকে স্পষ্টভাবে দেখাবার জন্যে এবং যাতে কাফিররা জানতে পারে যে, এরাই ছিল মিথ্যাবাদী।


৪০


إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ


ইন্নামা-কাওলুনা-লিশাইয়িন ইযাআরদনা-হু আন নাকূলা লাহূকুন ফাইয়াকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যখন কোন জিনিস সৃষ্টি করার ইচ্ছা করি, তখন আমার পক্ষ থেকে কেবল এতটুকু কথাই হয় যে, আমি তাকে বলি, ‘হয়ে যাও’, অমনি তা হয়ে যায়। ২২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি; তখন তাকে কেবল এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও,। সুতরাং তা হয়ে যায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি কোন কিছু ইচ্ছা করলে সে বিষয়ে আমার কথা কেবল এই যে, আমি বলি, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়।


তাফসীরঃ

২২. পূর্বের আয়াতে আখেরাতে যে দ্বিতীয় জীবন আসছে, তার উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়েছিল। আর এ আয়াতে কাফেরগণ মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবনকে কী কারণে অসম্ভব মনে করত তা বর্ণনা করত তার জবাব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, তোমরা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অসম্ভব মনে করছ এ কারণে যে, তা তোমাদের চিন্তা ও কল্পনার ঊর্ধ্বের জিনিস। কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষে কোনও কাজই কঠিন নয়। কোন জিনিস সৃষ্টি করার জন্য তাঁকে পরিশ্রম করতে হয় না। তিনি কেবল আদেশ দান করেন আর সঙ্গে সঙ্গে সে জিনিস সৃষ্টি হয়ে যায়।


৪১


وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ


ওয়াল্লাযীনা হা-জারূফিল্লা-হি মিম বা‘দি মা-জু লিমূলানুবাওবিআন্নাহুম ফিদদুনইয়াহাছানাতাওঁ ওয়ালাআজরুল আ-খিরাতি আকবার । লাও কা-নূইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে হিজরত করেছে নিশ্চিত থেক আমি দুনিয়ায়ও তাদেরকে উত্তম নিবাস দান করব আর আখেরাতের প্রতিদান তো নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ঠ। হায়! তারা যদি জানত। ২৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা নির্যাতিত হওয়ার পর আল্লাহর জন্যে গৃহত্যাগ করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়াতে উত্তম আবাস দেব এবং পরকালের পুরস্কার তো সর্বাধিক; হায়! যদি তারা জানত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা অত্যাচারিত হওয়ার পর আল্লাহ্ র পথে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই তাদেরকে দুনিয়ায় উত্তম আবাস দিব; এবং আখিরাতের পুরস্কারই তো শ্রেষ্ঠ। হায়, এরা যদি তা জানত!


তাফসীরঃ

২৩. যেমন সূরাটির পরিচিতিতে বলা হয়েছিল, এ আয়াতে সেই সাহাবীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তবে আয়াতে ব্যবহৃত শব্দাবলী সাধারণ। কাজেই দীনের খাতিরে যে-কোনও দেশত্যাগী মুহাজিরের জন্য এ আয়াত প্রযোজ্য। সবশেষে যে বলা হয়েছে, ‘হায়, তারা যদি জানত!’ এর দ্বারাও দৃশ্যত সেই মুহাজিরগণকেই বোঝানো উদ্দেশ্য। এর অর্থ, তারা যদি এই প্রতিদান ও পুরস্কার সম্পর্কে জানতে পারত তবে নির্বাসনের কারণে তাদের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বিলকুল দূর হয়ে যেত। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এর দ্বারা কাফেরদেরকে বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ, হায় এই সত্য যদি তারাও জানতে পারত, তবে তারা অবশ্যই কুফর পরিত্যাগ করত।


৪২


الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ


আল্লাযীনা সাবারূওয়া‘আলা-রাব্বিহিম ইয়া তাওয়াক্কালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা ওই সব লোক, যারা সবর অবলম্বন করে এবং নিজ প্রতিপালকের উপর ভরসা রাখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা দৃঢ়পদ রয়েছে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ধৈর্য ধারণ করে ও তাদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে।


৪৩


وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۚ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ


ওয়ামা আরছালনা- মিন কাবলিকা ইল্লা- রিজা-লান নূহী ইলাইহিম ফাছআলূ আহলাযযিকরি ইন কুনতুম লা-তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার পূর্বেও আমি অন্য কাউকে নয়, কেবল পুরুষ মানুষকেই রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী নাযিল করতাম। ২৪ (হে অবিশ্বাসীগণ!) যদি এ বিষয়ে তোমাদের জানা না থাকে, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও। ২৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে;


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ পুরুষই প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীগণকে জিজ্ঞাসা কর-


তাফসীরঃ

২৪. এর দ্বারা আম-সাধারণকে উলামার শরণাপন্ন হওয়ার তালিম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ শরীআতের কোন বিষয় যার জানা না থাকবে সে আন্দাজ-অনুমান ও নিজ যুক্তি বুদ্ধির পিছনে না পড়ে উলামাদের কাছ থেকে সমাধান জেনে নেবে। এর দ্বারা ইমামগণের তাকলীদ করার জরুরতও প্রমাণিত হয়। -অনুবাদক


২৫. এ আয়াত নাযিল হয়েছে কুরাইশ মুশরিকদের এই উক্তির জবাবে যে, কোন মানুষ তাঁর রাসূল হবে, আল্লাহ এর বহু ঊর্ধ্বে। তিনি আমাদের প্রতি কোন ফিরিশতাকে পাঠালেন না কেন? আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন, হে নবী! আপনার আগেও আমি পুরুষ মানুষদেরকেই রাসূল করে পাঠিয়েছি, ফিরিশতাদেরকে নয়। মানুষের প্রতি মানুষকে রাসূল করে পাঠানোই আমার শাশ্বত নিয়ম। লক্ষ করে দেখুন অতীত জাতিসমূহের দিকে, তাদের কারও প্রতি মানুষ ছাড়া আর কাউকে কখনও নবী করে পাঠানো হয়েছে কিনা? এখন কেন তার ব্যতিক্রম করা হবে? আল্লাহ তার নিয়মের ব্যতিক্রম করেন না। কেননা তাতে মানুষের কল্যাণ নেই। মানুষের কাছে মানুষ ছাড়া কাউকে নবী করে পাঠানো হলে নবী পাঠানোর উদ্দেশ্যই হাসিল হবে না। প্রথমত মানুষ তাকে নবী বলে স্বীকারই করতে চাইবে না, দ্বিতীয়ত স্বজাতীয় না হওয়ার কারণে মানুষ তাকে আদর্শরূপেও গ্রহণ করতে পারবে না। কাজেই নবী-রাসূল পাঠানোর সার্থকতা মানুষকে পাঠানোর মধ্যেই নিহিত। আল্লাহ তাআলা শব্দ ব্যবহার করেছেন رجالا ‘অর্থাৎ পুরুষদেরকে’। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে নবী করে পাঠানোর সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন। মুশরিকদেরকেও কটাক্ষ করা হয়ে থাকবে যে, তারা ফিরিশতাদেরকে নবী বানানোর কথা বলে কি করে, যখন তাদের ধারণা ফিরিশতারা নারী? অতীতেও তো আল্লাহ যত নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন সকলেই পুরুষ ছিলেন। তাদের তালিকায় তারা কোন নারীর নাম পায় কি? তাদের নিজেদের জানা না থাকলে আসমানী কিতাবের জ্ঞান যাদের আছে, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুক কোন নারী নবীর নাম তারা কেউ কখনও শুনেছে কি না। বস্তুত ওহীর গুরুভার, দাওয়াতের মেহনত-সংগ্রাম ও অনুসারীদের দেখভাল করার বহুমুখী ঝক্কি-ঝামেলা বরদাশত করা নারীর পক্ষে সম্ভব ও শোভন নয়। তাই নারীকে নবী বানালে নবুওয়াতের লক্ষ-উদ্দেশ্যই ব্যাহত হত। এর দ্বারা ভবিষ্যতেও নারী নবীর সম্ভাবনা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। -অনুবাদক


৪৪


بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ۗ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ


বিলবাইয়িনা-তি ওয়াঝঝুবুরি ওয়া আনঝালনাইলাইকাযযিকরা লিতুবাইয়িনা লিন্না-ছি মা-নুঝঝিলা ইলাইহিম ওয়া লা‘আল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে রাসূলদেরকে উজ্জ্বল নিদর্শন ও আসমানী কিতাব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। (হে নবী!) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে প্রমানাদি ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যে গুলো তোদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্টভাবে প্রমাণাদি ও গ্রন্থাবলীসহ এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্ট বুঝাইয়া দিবার জন্যে যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল, যাতে এরা চিন্তা করে।


৪৫


أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ أَن يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ


আফাআমিনাল্লাযীনা মাকারুছছাইয়িআ-তি আইঁ ইয়াখছিফাল্লা-হুবিহিমুল আরদাআও ইয়া’তিয়াহুমুল ‘আযা-বুমিন হাইছুলা-ইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি যারা নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে তারা এ বিষয় থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ বোধ করছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেবেন বা তাদের উপর এমন স্থান থেকে শাস্তি আসবে, যা তারা ধারণাই করতে পারবে না


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা কুচক্র করে, তারা কি এ বিষয়ে ভয় করে না যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন কিংবা তাদের কাছে এমন জায়গা থেকে আযাব আসবে যা তাদের ধারণাতীত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়েছে যে, আল্লাহ্ এদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না বা এমন দিক হতে শাস্তি আসবে না, যা এদের ধারণাতীত ?


৪৬


أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ


আও ইয়া’খুযাহুম ফী তাকাল্লুবিহিম ফামা-হুম বিমু‘জিঝীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তাদেরকে চলাফেরা করা অবস্থায়ই ধৃত করবেন? তারা তো তাকে ব্যর্থ করতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিংবা চলাফেরার মধ্যেই তাদেরকে পাকড়াও করবে, তারা তো তা ব্যর্থ করতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি এদের ধৃত করবেন না ? এরা তো এটা ব্যর্থ করতে পারবে না।


৪৭


أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَىٰ تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ


আও ইয়া’খুযাহুম ‘আলা-তাখাওউফিন ফাইন্না রাব্বাকুম লারাঊফুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তিনি তাদেরকে এভাবে পাকড়াও করবেন যে, তারা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকবে। ২৬ কেননা তোমার প্রতিপালক অতি মমতাময়, পরম দয়ালু। ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিংবা ভীতি প্রদর্শনের পর তাদেরকে পাকড়াও করবেন? তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত নম্র, দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অথবা এদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ধৃত করবেন না ? তোমাদের প্রতিপালক তো অবশ্যই দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

২৬. ‘কেননা’-এর সম্পর্ক ‘নিরাপদ বোধ করা’এর সাথে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যেহেতু মমতাবান ও দয়াময়, তাই তিনি কাফেরদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। সহসাই তাদেরকে শাস্তি দেন না। এর ফলে কাফেররা নির্ভয় হয়ে গেছে এবং নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করছে। অথচ তাদের উচিত ছিল নির্ভয় নিশ্চিন্ত না হয়ে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের পরিণাম থেকে শিক্ষা নেওয়া।


২৭. অর্থাৎ, এক দফায় তাদেরকে ধ্বংস করবেন না; বরং নিজ দুষ্কর্মের কারণে তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধরা হবে এবং ধীরে ধীরে তাদের জনশক্তি ও ধনবল হ্রাস পেতে থাকবে। ‘রূহুল মাআনী’ তে বহু সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে এ তাফসীর বর্ণিত আছে।


৪৮


أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِّلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ


আওয়ালাম ইয়ারাও ইলা-মা-খালাকাল্লা-হু মিন শাইয়িইঁ ইয়াতাফাইয়াউ জিলা-লুহূ‘আনিল ইয়ামীনি ওয়াশশামাইলি ছুজ্জাদাল লিল্লা-হি ওয়াহুম দা-খিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা কি দেখেনি, আল্লাহ যা-কিছু সৃষ্টি করেছেন, তার ছায়া আল্লাহর প্রতি সিজদারত থেকে ডানে-বামে ঢলে পড়ে এবং তারা সকলে থাকে বিনয়াবনত? ২৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সেজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে ঝুঁকে পড়ে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কি লক্ষ্য করে না আল্লাহ্ র সৃষ্ট বস্তুর প্রতি, যার ছায়া দক্ষিণে ও বামে ঢলে পড়ে আল্লাহ্ র প্রতি সিজ্দাবনত হয় ?


তাফসীরঃ

২৮. মানুষ যত বড় অহংকারীই হোক, তার ছায়া যখন মাটিতে পড়ে, তখন সে নিরুপায়। তখন আপনা-আপনিই তার দ্বারা বিনয় প্রকাশ পায়। এভাবে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মাখলুকের সাথে ছায়ারূপে এমন একটা জিনিস সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা তার ইচ্ছা ছাড়াই সর্বদা আল্লাহ তাআলার সামনে সিজদায় পড়ে থাকে। এমনকি যারা সূর্যের পূজা করে, তারা নিজেরা তো সূর্যের সামনে সিজদাবনত থাকে, কিন্তু তাদের ছায়া থাকে তাদের বিপরীত দিকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদারত।


৪৯


وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِن دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ


ওয়ালিল্লা-হি ইয়াছজুদুমা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদিমিন দাব্বাতিওঁ ওয়াল মালাইকাতুওয়া হুম লা-ইয়াছতাকবিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে তারা এবং সমস্ত ফেরেশতা আল্লাহকেই সিজদা করে এবং তারা মোটেই অহংকার করে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু নভোমন্ডলে আছে এবং যা কিছু ভুমন্ডলে আছে এবং ফেরেশতাগণ; তারা অহংকার করে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্কেই সিজ্দা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে যত জীবজন্তু আছে সে সমস্ত এবং ফিরিশতাগণও, এরা অহংকার করে না।


৫০


يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ۩


ইয়াখা-ফূনা রাব্বাহু ম মিন ফাওকিহিম ওয়া ইয়াফ‘আলূনা মা-ইউ’মারূন (ছিজদাহ-৩)।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাদের উপরে এবং তারা সেই কাজই করে, যার আদেশ তাদেরকে করা হয়। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা করে


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা ভয় করে এদের ওপর এদের প্রতিপালককে এবং এদেরকে যা আদেশ করা হয় এরা তা করে।


তাফসীরঃ

২৯. এটি সিজদার আয়াত। অর্থাৎ, কেউ আরবী ভাষায় এ আয়াতটি পাঠ করলে তার উপর সিজদা ওয়াজিব হয়ে যায়। একে ‘সিজদায়ে তিলাওয়াত’ [আয়াত পাঠজনিত সিজদা] বলে। এটা নামাযের সিজদা থেকে আলাদা। অবশ্য কেবল তরজমা পাঠ দ্বারা কিংবা আয়াত পাঠ ছাড়া কেবল দেখার দ্বারা সিজদা ওয়াজিব হয় না।


৫১


۞ وَقَالَ اللَّهُ لَا تَتَّخِذُوا إِلَـٰهَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ إِنَّمَا هُوَ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ


ওয়া কা-লাল্লাহু লা-তাত্তাখিযূইলা-হাইনিছনাইনি ইন্নামা-হুওয়া ইলা-হুওঁ ওয়াহিদুন ফাইয়্যা-ইয়া ফারহাবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বলেন, তোমরা দু’-দু’জন মাবুদ গ্রহণ করো না। তিনি তো একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ করো না উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ বললেন, ‘তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ কর না; তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং আমাকেই ভয় কর।’


৫২


وَلَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا ۚ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَتَّقُونَ


ওয়া লাহূমা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়া লাহুদ্দীনুওয়া-সিবান আফাগাইরাল্লাহি তাত্তাকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা তাঁরই। সর্বাবস্থায় তাঁরই আনুগত্য করা অপরিহার্য। ৩০ তবুও কি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ভয় করছ?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যা কিছু নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আছে তা তাঁরই এবাদত করা শাশ্বত কর্তব্য। তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য। তোমরা কি আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে ভয় করবে ?


তাফসীরঃ

৩০. অর্থাৎ মাবুদ যেহেতু এক আল্লাহ তাআলাই, তাই তার সাথে অন্য কাউকে যোগ করে দুই মাবুদ বানিয়ে নিও না। এর দ্বারা নির্দিষ্ট দুই সংখ্যা লক্ষবস্তু নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে অন্যের অংশীদারিত্বকে রদ করা উদ্দেশ্য, তা সংখ্যা যাই হোক না কেন। বিষয়টাকে এভাবেও বলা যায় যে, তোমরা হক মাবুদ ও নাহক মাবুদ এই দুই মাবুদ গ্রহণ করো না, তাতে নাহক মাবুদের সংখ্যা যাই হোক না কেন। -অনুবাদক


৫৩


وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ


ওয়ামা-বিকুম মিন নি‘মাতিন ফামিনাল্লা‘হি ছু ম্মা ইযা-মাছছাকুমুদ দুররু ফাইলাইহি তাজআরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের যে নি‘আমতই অর্জিত হয়, আল্লাহরই পক্ষ হতে হয়। আবার যখন কোন দুঃখ-কষ্ট তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁরই কাছে সাহায্য চাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের নিকট যে সমস্ত নিয়ামত রয়েছে তা তো আল্লাহ্ র ই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর।


৫৪


ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنكُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ


ছু ম্মা ইযা-কাশাফাদদুররা ‘আনকুম ইযা-ফারীকুম মিনকুম বিরাব্বিহিম ইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর তিনি যখন তোমাদের কষ্ট দূর করেন, অমনি তোমাদের মধ্য হতে একটি দল নিজ প্রতিপালকের সাথে শিরক শুরু করে দেয়


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরপর যখন আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দুরীভূত করে দেন, তখনই তোমাদের একদল স্বীয় পালনকর্তার সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করতে থাকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আবার যখন আল্লাহ্ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন তখন তোমাদের একদল এদের প্রতিপালকের শরীক করে-


৫৫


لِيَكْفُرُوا بِمَا آتَيْنَاهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ


লিয়াকফুরূবিমা আ-তাইনা-হুম ফাতামাত্তা‘ঊ ফাছাওফা তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে যে নি‘আমত দিয়েছি তার অকৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। ঠিক আছে, কিছুটা ভোগ-বিলাস করে নাও। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাতে ঐ নেয়ামত অস্বীকার করে, যা আমি তাদেরকে দিয়েছি। অতএব মজা ভোগ করে নাও-সত্বরই তোমরা জানতে পারবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদেরকে যা দান করেছি তা অস্বীকার করার জন্যে। সুতরাং ভোগ করে লও, অচিরেই জানতে পারবে।


৫৬


وَيَجْعَلُونَ لِمَا لَا يَعْلَمُونَ نَصِيبًا مِّمَّا رَزَقْنَاهُمْ ۗ تَاللَّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ


ওয়া ইয়াজ‘আলূনা লিমা-লা-ইয়া‘লামূনা নাসীবাম মিম্মা-রাঝাকনা-হুম তাল্লা-হি লাতুছআলুন্না ‘আম্মা-কুনতুম তাফতারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তাতে তারা একটা অংশ নির্ধারণ করে তাদের (অর্থাৎ প্রতিমাদের) জন্য, যাদের স্বরূপ তারা নিজেরাই জানে না। ৩১ আল্লাহর কসম! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করতে, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আমার দেয়া জীবনোপকরণ থেকে তাদের জন্যে একটি অংশ নির্ধারিত করে, যাদের কোন খবরই তারা রাখে না। আল্লাহর কসম, তোমরা যে অপবাদ আরোপ করছ, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদেরকে যে রিযিক দান করি এরা তার এক অংশ নির্ধারণ করে তাদের জন্যে যাদের সম্বন্ধে এরা কিছুই জানে না। শপথ আল্লাহ্ র ! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর সেই সম্বন্ধে তোমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।


তাফসীরঃ

৩১. আরব মুশরিকগণ তাদের জমির ফসল ও গবাদি পশু থেকে একটা অংশ তাদের প্রতিমাদের নামে উৎসর্গ করত, আয়াতের ইশারা সেদিকেই। এটা কতই না মূর্খতা যে, রিযক দান করেন আল্লাহ তাআলা, অথচ তা উৎসর্গ করা হয় প্রতিমাদের নামে, যে প্রতিমাদের স্বরূপ সম্পর্কে তাদের কোনও জ্ঞান নেই এবং তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কেও তাদের কাছে কোন দলীল-প্রমাণ নেই। এ সম্পর্কে সূরা আনআমে (৬ : ১৩৬) বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।


৫৭


وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ الْبَنَاتِ سُبْحَانَهُ ۙ وَلَهُم مَّا يَشْتَهُونَ


ওয়া ইয়াজ‘আলূনা লিল্লা-হিল বানা-তি ছুবহা-নাহূ ওয়া লাহুম মা-ইয়াশতাহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তো আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান স্থির করছে। সুবহানাল্লাহ! অথচ নিজেদের জন্য (প্রার্থনা করে) তাই (অর্থাৎ পুত্র সন্তান) যা তাদের অভিলাষ মোতাবেক হয়। ৩২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহর জন্যে কন্যা সন্তান নির্ধারণ করে-তিনি পবিত্র মহিমান্বিত এবং নিজেদের জন্যে ওরা তাই স্থির করে যা ওরা চায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা নির্ধারণ করে আল্লাহ্ র জন্যে কন্যা সন্তান-তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং এদের জন্যে তাই, যা এরা কামনা করে!


তাফসীরঃ

৩২. আরব মুশরিকগণ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা সন্তান বলে বিশ্বাস করত। আল্লাহ তাআলা বলেন, প্রথমত আল্লাহ তাআলার কোন সন্তানের প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয়ত তারা নিজেরা তো নিজেদের জন্য কন্যা সন্তান পছন্দ করে না। তারা সর্বদা পুত্র সন্তানই আশা করে। সন্দেহ নেই তাদের এ নীতি একটি মারাত্মক গোমরাহী। সেই তারাই আবার আল্লাহ সম্পর্কে বলে, তাঁর কন্যা সন্তান আছে। (যেন ভালো জিনিস তাদের প্রাপ্য, মন্দটা আল্লাহর (নাউযুবিল্লাহ)।


৫৮


وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ


ওয়া ইযা-বুশশিরা আহাদুহুম বিলউনছা-জাল্লা ওয়াজহুহূমুছওয়াদ্দাওঁ ওয়া হুওয়া কাজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তান (জন্মগ্রহণ)-এর সুসংবাদ দেওয়া হয়, ৩৩ তখন তার চেহারা মলিন হয়ে যায় এবং সে মনে মনে দুঃখ-ক্লিষ্ট হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কাল হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।


তাফসীরঃ

৩৩. আল্লাহ তাআলা শব্দ ব্যবহার করেছেন بُشِّرَ (সুসংবাদ দেওয়া হয়)। ইশারা হচ্ছে, পুত্র সন্তানের খবর যেমন সুখবর, কন্যা সন্তানেরও তাই। পুত্র সন্তান হলে সুসংবাদ আর কন্যা সন্তান হলে দুঃসংবাদ, এটা অমানবিক ও অনৈসলামিক ভাবনা দুটোই সুসংবাদ এবং দুই’ই আল্লাহর দান। কাজেই সন্তান পুত্র হোক বা কন্যা সর্বাবস্থায়ই তার জন্ম সংবাদকে খুশীমনে গ্রহণ করত আল্লাহ তাআলার শুকর আদায়ে রত হতে হবে। এটাই কুরআনের শিক্ষা এবং জগদ্বাসীকে সবার আগে কুরআনই এ শিক্ষা দান করেছে। -অনুবাদক


৫৯


يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِن سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ


ইয়াতাওয়া-রা-মিনাল কাওমি মিন ছূই মা-বুশশিরা বিহী আইউমছিকুহূ‘আলা-হূনিন আম ইয়াদুছছুহূফিততুরা-বি আলা-ছাআ মা-ইয়াহকুমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে এ সুসংবাদকে খারাপ মনে করে মানুষ থেকে লুকিয়ে বেড়ায় (এবং চিন্তা করে), হীনতা স্বীকার করে তাকে নিজের কাছে রেখে দেবে, নাকি তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে। জেনে রেখ, তারা যে সিদ্ধান্ত স্থির করে তা অতি মন্দ!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

একে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গøানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে। সে চিন্তা করে হীনতা সত্ত্বেও সে একে রেখে দিবে, না মাটিতে পুঁতিয়া দিবে! সাবধান! এরা যা সিদ্ধান্ত নেয় তা কত নিকৃষ্ট।


৬০


لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ ۖ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ


লিলাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি মাছালুছছাওই ওয়া লিল্লা-হিল মাছালুল আ‘লা- ওয়া হুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যত সব মন্দ বিষয় তাদেরই মধ্যে, যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না। আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের গুণাবলী আল্লাহ তাআলারই আছে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা পরকাল বিশ্বাস করে না, তাদের উদাহরণ নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর উদাহরণই মহান, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না এরা নিকৃষ্ট প্রকৃতির, আর আল্লাহ্ তো মহত্তম প্রকৃতির; এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


৬১


وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِم مَّا تَرَكَ عَلَيْهَا مِن دَابَّةٍ وَلَـٰكِن يُؤَخِّرُهُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ


ওয়া লাও ইউআ-খিযু ল্লা-হুন্না-ছা বিজুলমিহিম মা-তারাকা ‘আলাইহা-মিন দাব্বাতিওঁ ওয়ালা-কিইঁ ইউআখরিম্নহুম ইলাআজালিম মুছাম্মান ফাইযা-জাআ আজালুহুম লাইয়াছতা’খিরূনা ছা-‘আতাওঁ ওয়ালা-ইয়াছতাকদিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে (সহসা) ধৃত করলে ভূপৃষ্ঠে কোনও প্রাণীকে রেহাই দিতেন না। কিন্তু তিনি তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অবকাশ দেন। তারপর যখন তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে পড়বে, তখন তারা মুহূর্তকালও পেছনে যেতে পারে না এবং সামনেও যেতে পারে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্যে শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। এরপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারে না।


৬২


وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ مَا يَكْرَهُونَ وَتَصِفُ أَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ أَنَّ لَهُمُ الْحُسْنَىٰ ۖ لَا جَرَمَ أَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَأَنَّهُم مُّفْرَطُونَ


ওয়া ইয়াজ আলূনা লিল্লা-হি মা ইয়াকরাহূনা ওয়া তাসিফুআলছিনাতুহুমুল কাযিবা আন্না লাহুমুল হুছনা লা-জারামা আন্না লাহুমুন না-রা ওয়া আন্নাহুম মুফরাতূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহর জন্য এমন জিনিস নির্ধারণ করে, যা নিজেরা অপছন্দ করে। তারপরও তাদের জিহ্বা (নিজেদের) মিথ্যা প্রশংসা করে যে, সমস্ত মঙ্গল তাদেরই জন্য। এটা সুনিশ্চিত (এরূপ আচরণের কারণে) তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং তাদেরকে তাতেই নিপতিত রাখা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যা নিজেদের মন চায় না তারই তারা আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করে এবং তাদের জিহবা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ। স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, তাদের জন্যে রয়েছে আগুন এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে নিক্ষেপ করা হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যা তারা অপছন্দ করে তাই তারা আল্লাহ্ র প্রতি আরোপ করে। তাদের জিহ্বা মিথ্যা বর্ণনা করে যে, মঙ্গল তাদেরই জন্যে। নিঃসন্দেহে তাদের জন্যে আছে দোযখ এবং তাদেরকেই সর্বাগ্রে এতে নিক্ষেপ করা হবে।


৬৩


تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَىٰ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ


তাল্লা-হি লাকাদ আরছালনাইলাউমামিম মিন কাবলিকা ফাঝাইইয়ানা লাহুমুশ শাইতা-নু আ‘মা-লাহুম ফাহুওয়া ওয়ালিইয়ুহুমুল ইয়াওমা ওয়া লাহুম ‘আযা-বুন আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আল্লাহর কসম! তোমার পূর্বে যেসব জাতি গত হয়েছে, আমি তাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম। অতঃপর শয়তান তাদের কর্মকাণ্ডকে তাদের সামনে চমৎকার রূপে তুলে ধরেছিল। ৩৪ সুতরাং সে-ই (অর্থাৎ শয়তান) আজ তাদের অভিভাবক এবং (এ কারণে) তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর কসম, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্ম সমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

শপথ আল্লাহ্ র ! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ এদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে-ই আজ এদের অভিভাবক এবং এদেরই জন্যে মর্মন্তুদ শাস্তি।


তাফসীরঃ

৩৪. অর্থাৎ, তাদেরকে সবক দিল, তোমরা যে সব কাজ করছ সেটাই সর্বাপেক্ষা ভালো।


৬৪


وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ ۙ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ


ওয়ামাআনঝালনা-‘আলাইকাল কিতা-বা ইল্লা লিতুবাইয়িনা লাহুমুল লাযীখ তালাফূফীহি ওয়াহুদাওঁ ওয়া রাহমাতাল লিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তোমার উপর এ কিতাব এজন্যই নাযিল করেছি, যাতে তারা যে সব বিষয়ে বিভিন্ন পথ গ্রহণ করেছে, তাদের সামনে তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা কর এবং যাতে এটা ঈমান আনয়নকারীদের জন্য হিদায়াত ও রহমতের অবলম্বন হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই গ্রন্থ নাযিল করেছি, যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদের কে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন, যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং ঈমানদারকে ক্ষমা করার জন্যে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যারা এ বিষয়ে মতভেদ করে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে এবং মু’মিনদের জন্যে পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ।


৬৫


وَاللَّهُ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ


ওয়াল্লা-হু আনঝালা মিনাছছামা-ই মা-আন ফাআহইয়া-বিহিল আরদা বা‘দা মাওতিহা- ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াছমা’ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলেন এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাতে প্রাণ সঞ্চার করলেন। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন আছে সেইসব লোকের জন্য, যারা কথা শোনে। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তদ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন। নিশ্চয় এতে তাদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে, যারা শ্রবণ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তা দিয়ে তিনি ভূমিকে এর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে, যে সম্প্রদায় কথা শুনে তাদের জন্যে।


তাফসীরঃ

৩৫. অর্থাৎ হৃদয়-মন দিয়ে শুনলে তারা বুঝতে পারবে, আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ হলে যেমন মৃত ভূমি সঞ্জীবিত হয়, তেমনি আসমানী ওহী দ্বারাও মৃত আত্মায় প্রাণ-সঞ্চার হয় এবং সহসা তা জাগ্রত হয়ে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে লিপ্ত হয় ও সত্যিকার মনুষ্যসুলভ কর্মানুষ্ঠান দ্বারা ব্যক্তির মানবজন্মকে সার্থক করে তোলে। -অনুবাদক


৬৬


وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ


ওয়া ইন্না লাকুম ফিল আন‘আ-মি লা‘ইবরাতান নুছকীকুম মিম্মা-ফী বুতূনিহী মিম বাইনি ফারছিওঁ ওয়া দামিল লাবানান খা-লিসান ছাইগাল লিশশা-রিবীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই গবাদি পশুর ভেতর তোমাদের জন্য চিন্তা-ভাবনা করার উপকরণ আছে। তার পেটে যে গোবর ও রক্ত আছে, তার মাঝখান থেকে আমি তোমাদেরকে এমন বিশুদ্ধ দুধ পান করাই, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু হয়ে থাকে।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অবশ্যই গবাদিপশুর মধ্যে তোমাদের জন্যে শিক্ষা রয়েছে। এদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য হতে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুগ্ধ, যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু।


৬৭


وَمِن ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ


ওয়া মিন ছামারা-তিন নাখীলি ওয়াল আ‘না-বি তাত্তাখিযূনা মিনহু ছাকারাওঁ ওয়ারিঝকান হাছানান ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়া‘কিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং খেজুরের ফল ও আঙ্গুর থেকেও (আমি তোমাদেরকে পানীয় দান করি), যা দ্বারা তোমরা মদ বানাও এবং উত্তম খাদ্যও। ৩৬ নিশ্চয়ই এর ভেতরও সেই সব লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা বুদ্ধিকে কাজে লাগায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা মধ্য ও উত্তম খাদ্য তৈরী করে থাক, এতে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং খর্জুর-বৃক্ষের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।


তাফসীরঃ

৩৬. এটি মক্কী সূরা। এ সূরা যখন নাযিল হয় তখনও পর্যন্ত মদ হারাম হয়নি। কিন্তু এ আয়াতে মদকে উত্তম খাদ্যের বিপরীতে উল্লেখ করে একটা সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মদ উত্তম খাবার নয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তার মন্দত্ব ও কদর্যতা তুলে ধরে এবং আস্তে-আস্তে তার ব্যবহারকে সঙ্কুচিত করে সবশেষে চূড়ান্তরূপে হারাম করে দেওয়া হয়েছে।


৬৮


وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ


ওয়া আওহা- রাব্বুকা ইলান নাহলি আনিত্তাখিযীমিনালজিবা-লি বুইঊতাও ওয়া মিনাশশাজারি ওয়া মিম্মা-ইয়া‘রিশূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে এই নির্দেশ সঞ্চার করেন যে, পাহাড়ে, গাছে এবং মানুষ যে মাচান তৈরি করে তাতে নিজ ঘর তৈরি কর। ৩৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা মধু মক্ষিকাকে আদেশ দিলেনঃ পর্বতগাহ্রে, বৃক্ষ এবং উঁচু চালে গৃহ তৈরী কর,


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে এর অন্তরে ইঙ্গিত দিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে;


তাফসীরঃ

৩৭. مَا يَعْرِشُوْنَ যে মাচান তৈরি করে, অর্থাৎ, যার উপর বিভিন্ন প্রকার লতা চড়ানো হয়। আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে মৌমাছির গৃহ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন এ কারণে যে, তারা যে চাক তৈরি করে, তা নির্মাণ শিল্পের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা। সাধারণত তারা মৌচাক বানায় উঁচু স্থানে, যাতে তাতে সঞ্চিত মধু মাটির মলিনতা থেকে রক্ষা পায় এবং সর্বদা বিশুদ্ধ বাতাসের স্পর্শের ভেতর থাকে। এর দ্বারা এই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, মৌমাছিকে এসব শিক্ষা আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন (বিস্তারিত দেখুন, মাআরিফুল কুরআন, ৫ম খণ্ড ৩৬২-৩৬৭ পৃষ্ঠা)।


৬৯


ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ


ছু ম্মা কুলী মিন কুল্লিছছামারা-তি ফাছলুকী ছুবুলা রাব্বিকি যুলুলান ইয়াখরুজুমিম বুতূনিহা-শারা-বুম মুখতালিফুন আলওয়া-নুহূফীহি শিফাউললিন্না-ছি ইন্না ফী যালিকা লাআ-ইয়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর সব রকম ফল থেকে নিজ খাদ্য আহরণ কর। তারপর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সেই পথে চল। (এভাবে) তার পেট থেকে বিভিন্ন বর্ণের পানীয় বের হয়, যার ভেতর মানুষের জন্য আছে শেফা। নিশ্চয়ই এসবের মধ্যে নিদর্শন আছে সেই সকল লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে ভক্ষণ কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙে পানীয় নির্গত হয়। তাতে মানুষের জন্যে রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এটার পর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার কর, এরপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর।’ এর উদর হতে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাতে মানুষের জন্যে রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে।


৭০


وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ ثُمَّ يَتَوَفَّاكُمْ ۚ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰ أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْ لَا يَعْلَمَ بَعْدَ عِلْمٍ شَيْئًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ قَدِيرٌ


ওয়াল্লা-হু খালাকাকুম ছু ম্মা ইয়াতাওয়াফফা-কুম ওয়া মিনকুম মাইঁ ইউরাদ্দুইলা আরযালিল ‘উমুরি লিকাই লা-ইয়া‘লামা বা‘দা ‘ইলমিন শাইআন ইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুন কাদীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি তোমাদের রূহ কবজ করেন। তোমাদের মধ্যে কতক এমন হয়, যাদেরকে বয়সের সর্বাপেক্ষা অকর্মণ্য স্তরে পৌঁছানো হয়, যেখানে পৌঁছার পর তারা সবকিছু জানার পরও কিছুই জানে না। ৩৮ নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এরপর তোমাদের মৃত্যুদান করেন। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ পৌছে যায় জরাগ্রস্ত অকর্মন্য বয়সে, ফলে যা কিছু তারা জানত সে সম্পর্কে তারা সজ্ঞান থাকবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সু-বিজ্ঞ সর্বশক্তিমান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকেও কাউকেও উপনীত করা হবে নিকৃষ্টতম বয়সে; ফলে এরা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে এরা সজ্ঞান থাকবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।


তাফসীরঃ

৩৮. চরম বার্ধক্যকে ‘অকর্মণ্য বয়স’ বলা হয়েছে, যে বয়সে মানুষের দৈহিক ও মানসিক শক্তি অকেজো হয়ে যায়। ‘সবকিছু জানা সত্ত্বেও কিছুই না জানা’-এর এক অর্থ হল, মানুষ জীবনের বিগত দিনগুলোতে যেসব জ্ঞান অর্জন করে, বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার পর তার অধিকাংশই ভুলে যায়। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে, বার্ধক্যকালে মানুষ সদ্য শোনা কথাও মনে রাখতে পারে না। প্রায়ই এমন হয় যে, এইমাত্র তাকে একটা কথা বলা হল, আর পরক্ষণেই সে একই কথা আবার জিজ্ঞেস করে, যেন সে সম্পর্কে তাকে কিছুই বলা হয়নি। এসব বাস্তবতা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য গাফেল মানুষকে সজাগ করা এবং তার দৃষ্টি এদিকে আকর্ষণ করা যে, তার যা-কিছু শক্তি তা আল্লাহ তাআলারই দান। তিনি যখন ইচ্ছা করেন তা আবার কেড়েও নেন। কাজেই নিজের কোন যোগ্যতা ও ক্ষমতার কারণে বড়াই করা উচিত নয়; বরং তার অবস্থার এই চড়াই-উৎরাইয়ের দ্বারা তার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। উপলব্ধি করা উচিত যে, এই জগত-কারখানা এক মহাজ্ঞানী, মহাশক্তিমান স্রষ্টার সৃষ্টি। তাঁর কোনও শরীক নেই। শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে।


৭১


وَاللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ ۚ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَىٰ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ ۚ أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ


ওয়াল্লা-হু ফাদ্দালা বা‘দাকুম ‘আলা-বা‘দিন ফির রিঝকি ফামাল্লাযীনা ফুদ্দিলূ বিরাদ্দী রিঝকিহিম ‘আলা-মা-মালাকাত আইমা-নুহুম ফাহুম ফীহি ছাওয়াউন আফাবিনি‘মাতিল্লা-হি ইয়াজহাদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ রিযকের ক্ষেত্রে তোমাদের কাউকে কারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের রিযক নিজ দাস-দাসীকে এভাবে দান করে না, যাতে তারা সকলে সমান হয়ে যায়। ৩৯ তবে কি তারা আল্লাহর নি‘আমতকে অস্বীকার করে? ৪০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তা’আলা জীবনোপকরণে তোমাদের একজনকে অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্টত্ব দিয়েছেন। অতএব যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে স্বীয় জীবিকা থেকে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে। তবে কি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকেও কারও ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে এরা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি এরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করে ?


তাফসীরঃ

৩৯. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সাথে শরীক করে এই দাবী করে যে, অমুক নি‘আমত আল্লাহ নয়; বরং তাদের মনগড়া দেবতা দিয়েছে।


৪০. অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে কেউ এরূপ করে না। কেউ তার দাস-দাসীকে নিজে অর্থ-সম্পদ এমনভাবে দেয় না, যদ্দরুণ সম্পদের দিক থেকে দাস মনিব সমান হয়ে যাবে। এবার চিন্তা কর, তোমরা নিজেরাও তো স্বীকার কর, তোমরা যে দেবতাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক মনে কর, তারা আল্লাহ তাআলার মালিকানাধীন ও তার দাস। সেই দাসদেরকে আল্লাহ নিজ প্রভুত্বের অংশ দিয়ে দেবেন আর তার ফলে তারা আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে মাবুদ বনার হকদার হয়ে যাবে এটা কী করে সম্ভব?


৭২


وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَتِ اللَّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ


ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিন আনফুছিকুম আঝওয়া-জাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিন আঝওয়াজিকুম বানীনা ওয়া হাফাদাতাওঁ ওয়া রাঝাকাকুম মিনাততাইয়িবা-তি আফাবিলবাতিলি ইউ’মিনূনা ওয়া বিনি‘মাতিল্লা-হি হুম ইয়াকফুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তোমাদেরই মধ্য হতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের স্ত্রীদের থেকে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন। আর ভালো-ভালো জিনিসের থেকে রিযকের ব্যবস্থা করেছেন। তবুও কি তারা ভিত্তিহীন জিনিসের প্রতি ঈমান রাখবে আর আল্লাহর নি‘আমতসমূহের অকৃতজ্ঞতা করবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই শ্রেণী থেকে জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদেরকে পুত্র ও পৌত্রাদি দিয়েছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ তোমাদের হতেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের যুগল হতে তোমাদের জন্যে পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছেন। তবুও কি এরা মিথ্যায় বিশ্বাস করবে এবং এরা কি আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করবে ?-


৭৩


وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ


ওয়া ইয়া‘বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি মা-লা-ইয়ামলিকুলাহুম রিঝকাম মিনাছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিশাইআওঁ ওয়ালা-ইয়াছতাতী‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহ ছাড়া এমন সব জিনিসের ইবাদত করে যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী থেকে তাদেরকে কোনওভাবে রিযক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না এবং তা রাখতে সক্ষমও নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে, যে তাদের জন্যে ভুমন্ডল ও নভোমন্ডল থেকে সামান্য রুযী দেওয়ার ও অধিকার রাখে না এবং মুক্তি ও রাখে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এরা কি ‘ইবাদত করবে আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের যাদের আকাশমণ্ডলী বা পৃথিবী হতে কোন জীবনোপকরণ সরবরাহ করার শক্তি নেই!- এবং এরা কিছুই করতে সক্ষম নয়।


৭৪


فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ


ফালা-তাদরিবূলিল্লা-হিল আমছা-লা ইন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুওয়া আনতুম লা-তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করো না। ৪১ নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, আল্লাহর কোন সদৃশ সাব্যস্ত করো না, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং তোমরা আল্লাহ্ র কোন সদৃশ স্থির কর না। আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।


তাফসীরঃ

৪১. আরব মুশরিকগণ অনেক সময় দৃষ্টান্ত পেশ করত যে, দুনিয়ার কোনও বাদশাহ নিজে একা রাজত্ব চালায় না। বরং রাজত্বের বহু কাজই সহযোগীদের হাতে ছাড়তে হয়। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলাও তার প্রভুত্বের বহু কাজ দেব-দেবীদের হাতে ন্যস্ত করে দিয়েছেন। তারা সেসব কাজ স্বাধীনভাবে আঞ্জাম দেয় (নাউযুবিল্লাহ)। এ আয়াতে তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার জন্য দুনিয়ার রাজা-বাদশাহদের কিংবা যে-কোনও মাখলুকের দৃষ্টান্ত পেশ করা চরম পর্যায়ের মূর্খতা। অতঃপর ৭৪ থেকে ৭৬ পর্যন্ত আয়াতসমূহ আল্লাহ তাআলা দু’টি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। তা দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, যদি সৃষ্টির দৃষ্টান্তই দেখতে হয়, তবে এ দৃষ্টান্ত দু’টো লক্ষ্য কর। এর দ্বারা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সৃষ্টিতে-সৃষ্টিতেও প্রভেদ আছে। কোন সৃষ্টি উচ্চ স্তরের হয়, কোন সৃষ্টি নিম্নস্তরের। যখন দুই সৃষ্টির মধ্যে এমন প্রভেদ, তখন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে কেমন প্রভেদ থাকতে পারে? তা সত্ত্বেও ইবাদত-বন্দেগীতে কোনও সৃষ্টিকে স্রষ্টার অংশীদার কিভাবে বানানো যেতে পারে?


৭৫


۞ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا ۖ هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ


দারাবাল্লা-হু মাছালান ‘আবদাম মামলূকাল লা-ইয়াকদিরু ‘আলা-শাইইওঁ ওয়া মার রাঝাকনা-হু মিন্না-রিঝকান হাছানান ফাহুওয়া ইউনফিকুমিনহু ছিররাওঁ ওয়া জাহরান হাল ইয়াছতাঊনা আলহামদুলিল্লা-হি বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন- একদিকে এক গোলাম, যে কারও মালিকানাধীন আছে। কোনও বস্তুর মধ্যে তার কিছুমাত্র ক্ষমতা নেই। আর অন্যদিকে এমন এক ব্যক্তি, যাকে আমি আমার পক্ষ হতে উৎকৃষ্ট রিযক দিয়েছি এবং সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে। এই দু’জন কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। কিন্তু তাদের অধিকাংশেই (এমন পরিষ্কার কথাও) জানে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর উপর শক্তি রাখে না এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার রুযী দিয়েছি। অতএব, সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অনেক মানুষ জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ উপমা দিচ্ছেন অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর ওপর শক্তি রাখে না এবং এমন এক ব্যক্তির যাকে তিনি নিজ হতে উত্তম রিযিক দান করেছেন এবং সে তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; এরা কি একে অপরের সমান ? সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র ই প্রাপ্য; অথচ এদের অধিকাংশই এটা জানে না।


৭৬


وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَىٰ مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۖ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۙ وَهُوَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ


ওয়া দারাবাল্লা-হু মাছালার রাজুলাইনি আহাদুহুমাআবকামুলা-ইয়াকদিরু ‘আলাশাইইওঁ ওয়া হুওয়া কাল্লুন ‘আলা-মাওলা-হু আইনামা-ইউওয়াজজিহহু লা-ইয়া’তি বিখাইরিন হাল ইয়াছতাবী হুওয়া ওয়া মাইঁ ইয়া’মরু বিল‘আদলি ওয়া হুওয়া ‘আলা-সিরা-তিম মুছতাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন- দু’জন লোক, তাদের একজন বোবা। সে কোনও কাজ করতে পারে না, বরং সে তার মনিবের জন্য একটা বোঝা। মনিব তাকে যেখানেই পাঠায়, সে ভালো কিছু করে আনে না। এরূপ ব্যক্তি কি ওই ব্যক্তির সমান হতে পারে, যে অন্যদেরকেও ন্যায়ের আদেশ দেয় এবং নিজেও সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ আরেকটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু’ব্যক্তির, একজন বোবা কোন কাজ করতে পারে না। সে মালিকের উপর বোঝা। যেদিকে তাকে পাঠায়, কোন সঠিক কাজ করে আসে না। সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে কায়েম রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ আরও উপমা দিচ্ছেন দুই ব্যক্তির : এদের একজন মূক, কোন কিছুরই শক্তি রাখে না এবং সে তার প্রভুর ভারস্বরূপ; তাকে যেখানেই পাঠান হোক না কেন সে ভাল কিছুই করে আসতে পারে না ; সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির, যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে আছে সরল পথে ?


৭৭


وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ


ওয়া লিল্লা-হি গাইবুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়ামা আমরুছ ছা-‘আতি ইল্লাকালামহিল বাসারি আও হুওয়া আকরাবু ইন্নাল্লা-হা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল রহস্য আল্লাহর মুঠোয়। কিয়ামতের বিষয়টি কেবল চোখের পলকতুল্য; বরং তার চেয়েও দ্রুত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। কিয়ামতের ব্যাপারটি তো এমন, যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ্ র ই এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তা অপেক্ষাও সত্বর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।


৭৮


وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ


ওয়াল্লা-হু আখরাজাকুম মিম বুতূনি উম্মাহা-তিকুম লা-তা‘লামূনা শাইআওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুমুছ ছাম‘আ ওয়াল আব সা-রা ওয়াল আফইদাতা লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমন অবস্থায় বের করেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তকরণ সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন শোনেশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং হৃদয়, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


৭৯


أَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاءِ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ


আলাম ইয়ারাও ইলাততাইরি মুছাখখারা-তিন ফী জাওবিছ ছামাই মা-ইউমছিকুহুন্না ইল্লাল্লা-হু ইন্নাফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা কি পাখিদের প্রতি লক্ষ্য করেনি, যারা আকাশের শূন্যমণ্ডলে আল্লাহর আজ্ঞাধীন? তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ স্থির রাখছে না। নিশ্চয়ই এতে বহু নিদর্শন আছে, তাদের জন্য যারা ঈমান রাখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি উড়ন্ত পাখীকে দেখে না? এগুলো আকাশের অন্তরীক্ষে আজ্ঞাধীন রয়েছে। আল্লাহ ছাড়া কেউ এগুলোকে আগলে রাখে না। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসীদের জন্যে নিদর্শনবলী রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহংগের প্রতি ? আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউই সেগুলিকে স্থির রাখে না। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে।


৮০


وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّن بُيُوتِكُمْ سَكَنًا وَجَعَلَ لَكُم مِّن جُلُودِ الْأَنْعَامِ بُيُوتًا تَسْتَخِفُّونَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ إِقَامَتِكُمْ ۙ وَمِنْ أَصْوَافِهَا وَأَوْبَارِهَا وَأَشْعَارِهَا أَثَاثًا وَمَتَاعًا إِلَىٰ حِينٍ


ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিমবুইউতিকুম ছাকানাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিন জূলূদিল আন‘আ-মি বুইঊতান তাছতাখিফফূনাহা-ইয়াওমা জা‘নিকুম ওয়া ইয়াওমা ইকা-মাতিকুম ওয়া মিন আসওয়া-ফিহা-ওয়া আওবা-রিহা-ওয়া আশ‘আ-রিহাআছা-ছাওঁ ওয়া মাতা‘আন ইলা-হীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তোমাদের গৃহকে তোমাদের জন্য আবাসস্থল বানিয়েছেন এবং পশুর চামড়া দ্বারা তোমাদের জন্য এমন ঘর বানিয়েছেন, যা ভ্রমণে যাওয়ার সময় এবং কোথাও অবস্থান গ্রহণকালে তোমাদের কাছে বেশ হালকা-পাতলা মনে হয়। ৪২ আর তাদের পশম, লোম ও কেশ দ্বারা গৃহ-সামগ্রী ও এমন সব জিনিস তৈরি করেন, যা কিছু কাল তোমাদের উপকারে আসে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ করে দিয়েছেন তোমাদের গৃহকে অবস্থানের জায়গা এবং চতুস্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা করেছেন তোমার জন্যে তাঁবুর ব্যবস্থা। তোমরা এগুলোকে সফরকালে ও অবস্থান কালে পাও। ভেড়ার পশম, উটের বাবরি চুল ও ছাগলের লোম দ্বারা কত আসবাবপত্র ও ব্যবহারের সামগ্রী তৈরী করেছেন এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ তোমাদের গৃহকে করেন তোমাদের আবাসস্থল এবং তিনি তোমাদের জন্যে পশুচর্মের তাঁবুর ব্যবস্থা করেন, তোমরা একে সহজ মনে কর ভ্রমণকালে এবং অবস্থানকালে। এবং তিনি তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন এদের পশম, লোম ও কেশ হতে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহার-উপকরণ।


তাফসীরঃ

৪২. এসব ঘর দ্বারা তাঁবু বোঝানো হয়েছে, যা চামড়া দ্বারা তৈরি হয়। আরবের লোক সফরকালে তা সঙ্গে নিয়ে যায়। কেননা এর বিশেষ সুবিধা হল, যখন যেখানে ইচ্ছা খাটিয়ে বিশ্রাম করা যায়। আর হালকা হওয়ায় বহনের সুবিধা তো আছেই। [اَصْوَافٌ শব্দটিصُوْفٌ এর বহুবচন। অর্থ ভেড়ার পশম। اَوْبَارٌ হল وَبَرٌ এর বহুবচন। অর্থ উটের লোম। আর اَشْعَارٌ বলে অন্যান্য জীব-জন্তুর পশম বা কেশরাজিকে। এটা شَعْرٌ এর বহুবচন -অনুবাদক।]


৮১


وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ


ওয়াল্লা-হু জা‘আলা লাকুম মিম্মা-খালাকা জিলা-লাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম মিনাল জিবা-লি আকনা-নাওঁ ওয়া জা‘আলা লাকুম ছারা-বীলা তাকীকুমুল হাররা ওয়া ছারা-বীলা তাকীকুম বা’ছাকুম কাযা-লিকা ইউতিম্মুনি‘মাতাহূ‘আলাইকুম লা‘আল্লাকুম তুছলিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আল্লাহই নিজ সৃষ্ট বস্তুসমূহ হতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, পাহাড়-পর্বতে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর তোমাদের জন্য বানিয়েছেন এমন পোশাক, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং এমন পোশাক, যা যুদ্ধকালে তোমাদেরকে রক্ষা করে। ৪৩ এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি নিজ অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা অনুগত হয়ে যাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাদের জন্যে সৃজিত বস্তু দ্বারা ছায়া করে দিয়েছেন এবং পাহাড় সমূহে তোমাদের জন্যে আত্ন গোপনের জায়গা করেছেন এবং তোমাদের জন্যে পোশাক তৈরী করে দিয়েছেন, যা তোমাদেরকে গ্রীষ্ম এবং বিপদের সময় রক্ষা করে। এমনিভাবে তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্নসমর্পণ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্যে ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্যে পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্যে বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।


তাফসীরঃ

৪৩. অর্থাৎ, লোহার বর্ম, যা যুদ্ধকালে তরবারি ও অন্যান্য অস্ত্রের আঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য পরিধান করা হয়।


৮২


فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ الْمُبِينُ


ফাইন তাওয়াল্লাও ফাইন্নামা -‘আলাইকাল বালা-গুল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপরও যদি তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে (হে নবী!) তোমার দায়িত্ব তো শুধু স্পষ্টভাবে বার্তা পৌঁছানো।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তবে আপনার কাজ হল সুস্পষ্ট ভাবে পৌছে দেয়া মাত্র।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর এরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল স্পষ্টভাবে বাণী পৌঁছে দেওয়া।


৮৩


يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ


ইয়া‘রিফূনা নি‘মাতাল্লা-হি ছুম্মা ইউনকিরূনাহা-ওয়া আকছারুহুমুল কা-ফিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহর নি‘আমতসমূহ চেনে, তবুও তা অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে, এরপর অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা আল্লাহ্ র নিয়ামত চিনিতে পারে; তারপরও সেগুলি এরা অস্বীকার করে এবং এদের অধিকাংশই কাফির।


৮৪


وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ثُمَّ لَا يُؤْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ


ওয়া ইয়াওমা নাব ‘আছুমিন কুল্লি উম্মাতিন শাহীদান ছু ম্মা লা-ইউ’যানুলিল্লাযীনা কাফারূ ওয়ালা-হুম ইউছতা‘তাবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিনকে স্মরণ রেখ, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব, ৪৪ তারপর যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, তাদেরকে (অজুহাত দেখানোর) অনুমতি দেওয়া হবে না এবং তাদেরকে তাওবা করার জন্যও ফরমায়েশ করা হবে না। ৪৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব, তখন কাফেরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাদের তওবা ও গ্রহণ করা হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেওয়া হবে না এবং এদের কোন ওযরও গৃহীত হবে না।


তাফসীরঃ

৪৪. কেননা তাওবার দরজা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত খোলা থাকে। মৃত্যুর পর তাওবা কবুল হয় না।


৪৫. এর দ্বারা প্রত্যেক উম্মতের নবীকে বোঝানো হয়েছে। নবীগণ সাক্ষ্য দেবেন যে, তাঁরা তাদের উম্মতের কাছে সত্য বার্তা পৌঁছিয়েছিলেন, কিন্তু কাফেরগণ তা গ্রহণ করেনি।


৮৫


وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ ظَلَمُوا الْعَذَابَ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ


ওয়া ইযা-রাআল্লাযীনা জালামুল ‘আযা-বা ফালা-ইউখাফফাফুআনহুম ওয়ালা-হুম ইউনজারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

জালেমগণ যখন শাস্তি দেখতে পাবে, তখন তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন জালেমরা আযাব প্রত্যক্ষ করবে, তখন তাদের থেকে তা লঘু করা হবে না এবং তাদেরকে কোন অবকাশ দেয়া হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন জালিমরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন এদের শাস্তি লঘু করা হবে না এবং এদেরকে কোন অবকাশ দেওয়া হবে না।


৮৬


وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ أَشْرَكُوا شُرَكَاءَهُمْ قَالُوا رَبَّنَا هَـٰؤُلَاءِ شُرَكَاؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُو مِن دُونِكَ ۖ فَأَلْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ


ওয়া ইযা-রাআল্লাযীনা আশরাকূশুরাকাআহুম কা-লূরাব্বানা-হাউলাই শুরাকাউনাল্লাযীনা কুন্না-নাদ‘ঊ মিন দূ নিকা ফাআলকাও ইলাইহিমুল কাওলা ইন্নাকুম লাকা-যিবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করেছিল, তারা যখন তাদের (নিজেদের গড়া) শরীকদেরকে দেখবে, তখন বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই সেই শরীক, তোমার পরিবর্তে যাদেরকে আমরা ডাকতাম। ৪৬ এ সময় তারা (অর্থাৎ মনগড়া শরীকগণ) তাদের দিকে কথা ছুঁড়ে মারবে যে, তোমরা বিলকুল মিথ্যুক! ৪৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মুশরিকরা যখন ঐ সব বস্তুকে দেখবে, যেসবকে তারা আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করেছিল, তখন বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা এরাই তারা যারা আমাদের শেরেকীর উপাদান, তোমাকে ছেড়ে আমরা যাদেরকে ডাকতাম। তখন ওরা তাদেরকে বলবেঃ তোমরা মিথ্যাবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মুশরিকরা যাদেরকে আল্লাহ্ র শরীক করেছিল, তাদেরকে যখন দেখবে তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই তারা, যাদেরকে আমরা তোমার শরীক করেছিলাম, যাদেরকে আমরা আহ্বান করতাম তোমার পরিবর্তে; এরপর তদুত্তরে এরা বলবে, ‘তোমরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’


তাফসীরঃ

৪৬. যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে আল্লাহ তাআলা সে দিন প্রতিমাদেরকে বাকশক্তি দান করবেন, ফলে তারা ঘোষণা করে দেবে তাদের উপাসকরা মিথ্যুক। কেননা নিষ্প্রাণ হওয়ার কারণে তাদের খবরই ছিল না যে, তাদের ইবাদত-উপাসনা করা হচ্ছে। এমনও হতে পারে, তারা একথা ব্যক্ত করবে তাদের অবস্থা দ্বারা। আর শয়তানগণ এ কথা বলবে তাদের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করার জন্য।


৪৭. মুশরিকগণ যে প্রতিমাদের পূজা করত, তাদেরকেও তখন সামনে আনা হবে এবং তারা যে কতটা অক্ষম ও অসহায় সেটা সকলের সামনে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে। আর সেই শয়তানদেরকেও উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে তাদের অনুসারীরা এত বেশি মানত যে, তাদেরকে তারা আল্লাহ তাআলার শরীক বানিয়ে নিয়েছিল।


৮৭


وَأَلْقَوْا إِلَى اللَّهِ يَوْمَئِذٍ السَّلَمَ ۖ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ


ওয়া আল কাও ইলাল্লা-হি ইয়াওমাইযিনিছছালামা ওয়াদাল্লা ‘আনহুম মা-কা-নূইয়াফতারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে দিন আল্লাহর সামনে তারা আনুগত্যমূলক কথা বলবে। আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত, সে দিন তার কোন হদিসই তারা পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেদিন তারা আল্লাহর সামনে আত্নসমর্পন করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন তারা আল্লাহ্ র নিকট আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত তা তাদের জন্যে নিষ্ফল হবে।


৮৮


الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُونَ


আল্লাযীনা কাফারূওয়াসাদ্দূ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ঝিদনা-হুম ‘আযা-বান ফাওকাল ‘আযা-বি বিমা-কা-নূইউফছিদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছিল এবং আল্লাহর পথে অন্যদেরকে বাধা দিত, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করতে থাকব। কারণ তারা অশান্তি বিস্তার করত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা কাফের হয়েছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আযাবের পর আযাব বাড়িয়ে দেব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি শাস্তির পর শাস্তি বৃদ্ধি করব কাফিরদের ও আল্লাহ্ র পথে বাধাদানকারীদের; কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত।


৮৯


وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ ۚ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ


ওয়া ইয়াওমা নাব‘আছুফী কুল্লি উম্মাতিন শাহীদান ‘আলাইহিম মিন আনফুছিহিম ওয়া জি’নাবিকা শাহীদান ‘আলা-হাউলাই ওয়া নাঝঝালনা ‘আলাইকাল কিতা-বা তিবইয়া-নাল লিকুল্লি শাইইওঁ ওয়া হুদাওঁ ওয়া রাহমাতাওঁ ওয়া বুশরা-লিলমুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই দিনকেও স্মরণ রেখ, যেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে, তাদের নিজেদের থেকে, তাদের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব আর (হে নবী!) আমি তোমাকে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উপস্থিত করব। ৪৮ আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে এটা প্রতিটি বিষয় সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেয় এবং মুসলিমদের জন্য হয় হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেদিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন বর্ণনাকারী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব। আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন আমি উত্থিত করব প্রত্যেক সম্প্রদায়ে তাদেরই মধ্য হতে তাদের বিষয়ে এক একজন সাক্ষী এবং তোমাকে আমি আনব সাক্ষীরূপে এদের বিষয়ে। আমি আত্ম-সমর্পণকারীদের জন্যে প্রত্যেক বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যাস্বরূপ, পথনির্দেশ, দয়া ও সুসংবাদস্বরূপ তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করলাম।


তাফসীরঃ

৪৮. অর্থাৎ প্রত্যেক নবী আপন আপন উম্মত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার দরবারে সাক্ষি দেবেন আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষি দেবেন। তাঁর ওফাত-উত্তর লোকদের সম্পর্কে তাঁর সাক্ষ্যদান সম্ভব হবে এ কারণে যে, তাঁদের আমল পবিত্র কবরে, তাঁর সামনে পেশ করা হয়। উম্মত সম্পর্কে তাঁর সাক্ষ্যদানের আরেক অর্থ হতে পারে এ রকম যে, অন্যান্য নবীগণ যখন আপন-আপন উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন আর তার বিপরীতে সেইসব উম্মত দাবি করবে যে, তাদের কাছে কেউ হিদায়াতের বাণী প্রচার করেনি, তখন এই উম্মত নবীগণের পক্ষে সাক্ষি দেবে যে, তারা আপন-আপন উম্মতের কাছে সত্য দীনের প্রচার করেছিলেন। এ সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতের বিশ্বস্ততা ও তাদের সাক্ষের যথার্থতা সম্পর্কে সাক্ষি দেবেন, যেমন সূরা বাকারার ২ : ১৪৩ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে। -অনুবাদক


৯০


۞ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ


ইন্নাল্লা-হা ইয়া’মুরু বিল‘আদলি ওয়াল ইহছা-নি ওয়া ঈতাইযিল কুরবা-ওয়া ইয়ানহা‘আনিল ফাহশাই ওয়াল মুনকারি ওয়াল বাগই ইয়া‘ইজু কুম লা‘আল্লাকুম তাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফ, দয়া এবং আত্মীয়-স্বজনকে (তাদের হক) প্রদানের হুকুম দেন আর অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও জুলুম করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। ৪৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্নীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালংঘন; তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।


তাফসীরঃ

৪৯. হযরত ইবনে মাসঊদ (রাযি.) বলেন, ‘এটি কুরআন মাজীদের সর্বাপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ আয়াত’, যাবতীয় ভালো কাজের আদেশ ও মন্দকাজের নিষেধ এর মধ্যে এসে গেছে। অনেকে বলেন, কুরআন যে মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রের পূর্ণাঙ্গ-পথনির্দেশ, তার প্রমাণ হিসেবে এ আয়াতই যথেষ্ট। সম্ভবত এ কারণেই হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ) জুমআর খুতবায় এ আয়াতটি পাঠ করতেন এবং তাঁর অনুসরণে পরবর্তী খতীবগণও এটি পাঠ করে থাকেন। আয়াতটির তাফসীর জানার জন্য তাফসীরে উসমানী দেখুন। -অনুবাদক


৯১


وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ


ওয়া আওফূবি‘আহদিল্লা-হি ইযা-‘আ-হাততুম ওয়ালা-তানকুদুল আইমা-না বা‘দা তাওকীদিহা-ওয়া কাদ জা‘আলতুমুল্লা-হা ‘আলাইকুম কাফীলান ইন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমাতাফ‘আলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা যখন কোন অঙ্গীকার কর, তখন আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ কর। শপথকে দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করো না যখন তোমরা আল্লাহকে নিজেদের উপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছ। তোমরা যা-কিছু কর, আল্লাহ নিশ্চয় তা জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম করার পর তা ভঙ্গ করো না, অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা আল্লাহ্ র অঙ্গীকার পূর্ণ কর যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর এবং তোমরা আল্লাহ্কে তোমাদের যামিন করে শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ কর না। তোমরা যা কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা জানেন।


৯২


وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِن بَعْدِ قُوَّةٍ أَنكَاثًا تَتَّخِذُونَ أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ أَن تَكُونَ أُمَّةٌ هِيَ أَرْبَىٰ مِنْ أُمَّةٍ ۚ إِنَّمَا يَبْلُوكُمُ اللَّهُ بِهِ ۚ وَلَيُبَيِّنَنَّ لَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ


ওয়ালা-তাকূনূ কাল্লাতী নাকাদাতগাঝলাহা-মিমবা‘দি কুওওয়াতিন আনকা-ছান তাত্তাখিযূনা আইমা-নাকুম দাখালাম বাইনাকুম আন তাকূনা উম্মাতুন হিয়া আরবা-মিন উম্মাতিন ইন্নামা-ইয়াবলূকুমুল্লা-হু বিহী ওয়ালা ইউবাইয়িনান্না লাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি মা-কুনতুম ফীহি তাখতালিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে নারী তার সূতা মজবুত করে পাকানোর পর পাক খুলে তা রোঁয়া-রোঁয়া করে ফেলেছিল, তোমরা তার মত হয়ো না। ৫০ ফলে তোমরাও নিজেদের শপথকে (ভেঙ্গে) পরস্পরের মধ্যে অনর্থ সৃষ্টির মাধ্যম বানাবে, কেবল একদল অপর একদল অপেক্ষা বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। ৫১ আল্লাহ তো এর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করে থাকেন। তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ কর, কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের সামনে তা স্পষ্ট করে দিবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা ঐ মহিলার মত হয়ো না, যে পরিশ্রমের পর কাটা সূতা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে, তোমরা নিজেদের কসমসমূহকে পারস্পরিক প্রবঞ্চনার বাহানা রূপে গ্রহণ কর এজন্যে যে, অন্য দল অপেক্ষা এক দল অধিক ক্ষমতাবান হয়ে যায়। এতদ্বারা তো আল্লাহ শুধু তোমাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ অবশ্যই কিয়ামতের দিন প্রকাশ করে দেবেন, যে বিষয়ে তোমরা কলহ করতে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা সেই নারীর মত হয়ো না, যে তার সূতা মযবুত করে পাকাইবার পর এর পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। তোমাদের শপথ তোমরা পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করার জন্যে ব্যবহার করে থাক, যাতে একদল অন্যদল অপেক্ষা অধিক লাভবান হও। আল্লাহ্ তো এটা দিয়ে কেবল তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তা নিশ্চয়ই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিবেন যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করতে।


তাফসীরঃ

৫০. সাধারণত মিথ্যা শপথ করা বা শপথ করার পর তা ভেঙে ফেলার উদ্দেশ্য হয় পার্থিব কোন স্বার্থ চরিতার্থ করা। তাই বলা হয়েছে, দুনিয়ার স্বার্থ, যা কিনা নিতান্তই তুচ্ছ বিষয়, চরিতার্থ করার জন্য কসম ভঙ্গ করো না। কেননা কসম ভঙ্গ করা কঠিন গুনাহ।


৫১. বর্ণিত আছে, মক্কা মুকাররমায় খারকা নাম্নী এক উন্মাদিনী ছিল। সে দিনভর পরিশ্রম করে সুতা কাটত আবার সন্ধ্যা হলে তা খুলে-খুলে নষ্ট করে ফেলত। কালক্রমে তার এ কাণ্ডটি একটি দৃষ্টান্তে পরিণত হয়। যেমন কেউ যখন কোন ভালো কাজ সম্পন্ন করার পর নিজেই তা নষ্ট করে ফেলে তখন ওই নারীর সাথে তাকে উপমিত করা হয়। এখানে তার সাথে তুলনা করা হয়েছে সেইসব লোককে, যারা কোন বিষয়ে জোরদারভাবে কসম করার পর তা ভেঙে ফেলে।


৯৩


وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَـٰكِن يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَلَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ


ওয়া লাও শাআল্লা-হু লাজা‘আলাকুম উম্মাতাওঁ ওয়া-হিদাতাওঁ ওয়ালা-কিইঁ ইউদিল্লুমাইঁ ইয়াশাউ ওয়া ইয়াহদী মাইঁ ইয়াশাউ ওয়ালা তুছআলুন্না ‘আম্মা-কুনতুম তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত (অর্থাৎ একই দীনের অনুসারী) বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা (তার জেদী আচরণের কারণে) বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। তোমরা যা-কিছু কর, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমাদের সবাইকে এক জাতি করে দিতে পারতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইচ্ছা করলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে এক জাতি করতে পারতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তোমরা যা কর সে বিষয়ে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে।


৯৪


وَلَا تَتَّخِذُوا أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ فَتَزِلَّ قَدَمٌ بَعْدَ ثُبُوتِهَا وَتَذُوقُوا السُّوءَ بِمَا صَدَدتُّمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَلَكُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ


ওয়ালা-তাত্তাখিযূআইমা-নাকুম দাখালাম বাইনাকুম ফাতাঝিল্লা কাদামুম বা‘দা ছুবূতিহাওয়া তাযূকুছছূআ বিমা-সাদাততুম ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ওয়ালাকুম ‘আযা-বুন ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা নিজেদের শপথকে পরস্পরের মধ্যে অনর্থ সৃষ্টির কাজে ব্যবহার করো না। পরিণামে (কারও) পা স্থিত হওয়ার পর পিছলে যাবে। ৫২ অতঃপর (তাকে) আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার কারণে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করতে হবে আর (সেক্ষেত্রে) তোমাদের জন্য থাকবে মহাশাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা স্বীয় কসমসমূহকে পারস্পরিক কলহ দ্বন্দ্বের বাহানা করো না। তা হলে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পা ফসকে যাবে এবং তোমরা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করবে এ কারণে যে, তোমরা আমার পথে বাধা দান করেছ এবং তোমাদের কঠোর শাস্তি হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরস্পর প্রবঞ্চনা করার জন্যে তোমরা তোমাদের শপথকে ব্যবহার কর না ; করলে পা স্থির হওয়ার পর পিছলে যাবে এবং আল্লাহ্ র পথে বাধা দেওয়ার কারণে তোমরা শাস্তির আস্বাদ গ্রহণ করবে; তোমাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।


তাফসীরঃ

৫২. এটা শপথ ভাঙ্গার আরেকটি ক্ষতি। বলা হচ্ছে যে, তোমরা যদি শপথ ভঙ্গ কর, তবে যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, তোমাদের দেখাদেখি অন্য লোকও এ গুনাহ করতে উৎসাহিত হবে। প্রথমে তো সে অবিচলিত ছিল, কিন্তু তোমাদেরকে দেখার পর তাদের পদস্খলন হয়েছে। তোমরাই যেহেতু তাদের এ গুনাহের ‘কারণ’ হয়েছ, তাই তোমাদের দ্বিগুণ গুনাহ হবে। কেননা তোমরা তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রেখেছ।


৯৫


وَلَا تَشْتَرُوا بِعَهْدِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ إِنَّمَا عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ


ওয়ালা-তাশতারূবি‘আহদিল্লা-হি ছামানান কালীলান ইন্নামা-‘ইনদাল্লা-হি হুওয়া খাইরুল্লাকুম ইন কুনতুম তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করো না। তোমরা যদি প্রকৃত সত্য উপলব্ধি কর, তবে আল্লাহর কাছে যে প্রতিদান আছে তোমাদের পক্ষে তাই শ্রেয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারের বিনিময়ে সামান্য মূল্য গ্রহণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম তোমাদের জন্যে, যদি তোমরা জ্ঞানী হও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা আল্লাহ্ র সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় কর না। আল্লাহর নিকট যা আছে কেবল তাই তোমাদের জন্যে উত্তম-যদি তোমরা জানতে!


৯৬


مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ ۖ وَمَا عِندَ اللَّهِ بَاقٍ ۗ وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ


মা-‘ইনদাকুম ইয়ানফাদুওয়ামা-‘ইনদাল্লা-হি বা-কিওঁ ওয়ালা নাজঝিয়ান্নাল্লাযীনা সাবারূআজরাহুম বিআহছানি মা-কা-নূইয়া‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের কাছে যা-কিছু আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা স্থায়ী। যারা সবর ৫৩ করে, আমি তাদের উৎকৃষ্ট কাজ অনুযায়ী অবশ্যই তাদের প্রতিদান দেব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের কাছে যা আছে নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং আল্লাহর কাছে যা আছে, কখনও তা শেষ হবে না। যারা সবর করে, আমি তাদেরকে প্রাপ্য প্রতিদান দেব তাদের উত্তম কর্মের প্রতিদান স্বরূপ যা তারা করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহ্ র নিকট যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।


তাফসীরঃ

৫৩. পূর্বে কয়েক জায়গায় বলা হয়েছে কুরআন মাজীদের পরিভাষায় ‘সবর’ শব্দটি অতি ব্যাপক অর্থবোধক। নিজের মনের চাহিদাকে দমন করে আল্লাহ তাআলার হুকুম-আহকামের অনুবর্তী থাকাকেও যেমন সবর বলে, তেমনি যে-কোন দুঃখ-কষ্টে আল্লাহ তাআলার ফায়সালার বিরুদ্ধে অভিযোগ না তুলে তার অভিমুখী থাকাও সবর।


৯৭


مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ


মান ‘আমিলা সা-লিহাম মিন যাকারিন আও উনছা-ওয়া হুওয়া মু’মিনুন ফালা নুহয়িইয়ান্নাহূ হায়া-তান তাইয়িবাতাওঁ ওয়া লানাজঝিয়ান্নাহুম আজরাহুম বিআহছানি মা-কানূ ইয়া‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তিই মুমিন থাকা অবস্থায় সৎকর্ম করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি অবশ্যই তাকে উত্তম জীবন যাপন করাব এবং তাদেরকে তাদের উৎকৃষ্ট কর্ম অনুযায়ী তাদের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মু’মিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।


৯৮


فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ


ফাইযা-কারা’তাল কুরআ-না ফাছতা‘ইযবিল্লা-হিমিনাশশাইতা-নির রাজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং আপনি যখন কুরআন পড়বে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করবেন। ৫৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহ্ র শরণ নিবে


তাফসীরঃ

৫৪. পূর্বের আয়াতসমূহে সৎকর্মের ফযীলত বর্ণিত হয়েছিল। যেহেতু শয়তানই সৎকর্মের সর্বাপেক্ষা বড় বাধা এবং বেশির ভাগ তার কারসাজির ফলেই মানুষ সৎকর্মে প্রস্তুত হতে পারে না, তাই এ আয়াতে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। কুরআন তিলাওয়াতও একটি সৎকর্ম। বলা হয়েছে, তোমরা কুরআন তিলাওয়াতের আগে শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় গ্রহণ করবে। অর্থাৎ বলবে اَعُوْذُبِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি’। বিশেষভাবে কুরআন তিলাওয়াতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, কুরআন মাজীদই সমস্ত সৎকর্মের পথনির্দেশ করে ও উৎসাহ যোগায়। তবে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার বিষয়টা কেবল কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটা একটা সাধারণ নির্দেশ। যে-কোনও সৎকর্ম শুরুর আগে শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় প্রার্থনার অভ্যাস গড়ে তুললে ইনশাআল্লাহ তার ছলনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।


৯৯


إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ


ইন্নাহূলাইছা লাহূছুলতা-নুন ‘আলাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আলা রাব্বিহীম ইয়াতাওয়াক্কালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ প্রতিপালকের উপর ভরসা রাখে, তাদের উপর তার কোন আধিপত্য চলে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই এর কোন আধিপত্য নেই তাদের ওপর যারা ঈমান আনে ও তাদের প্রতিপালকেরই ওপর নির্ভর করে।


১০০


إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُم بِهِ مُشْرِكُونَ


ইন্নামা-ছুলতা-নুহূ‘আলাল্লাযীনা ইয়াতাওয়াল্লাওনাহূওয়াল্লাযীনা হুম বিহী মুশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার আধিপত্য চলে কেবল এমন সব লোকের উপর যারা তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে এবং যারা আল্লাহর শরীক সাব্যস্তকারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার আধিপত্য তো তাদের উপরই চলে, যারা তাকে বন্ধু মনে করে এবং যারা তাকে অংশীদার মানে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এর আধিপত্য তো কেবল তাদেরই ওপর যারা একে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহ্ র শরীক করে।


১০১


وَإِذَا بَدَّلْنَا آيَةً مَّكَانَ آيَةٍ ۙ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مُفْتَرٍ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ


ওয়া ইযা-বাদ্দালনাআ-য়াতাম মাকা-না আ-য়াতিওঁ ওয়াল্লা-হু ‘আলামুবিমাইউনাঝঝিলুকা-লূইন্নামাআনতা মুফতারিম বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যখন এক আয়াতকে অন্য আয়াত দ্বারা পরিবর্তন করি ৫৫ আর আল্লাহই ভালো জানে তিনি কী নাযিল করবেন, তখন তারা (কাফেরগণ) বলে, তুমি তো আল্লাহর প্রতি অপবাদ দিচ্ছ। অথচ তাদের অধিকাংশেই প্রকৃত বিষয় জানে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত উপস্থিত করি-আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেন তা তিনিই ভাল জানেন, তখন তারা বলে, ‘তুমি তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবনকারী’; কিন্তু এদের অধিকাংশই জানে না।


তাফসীরঃ

৫৫. আল্লাহ তাআলা পরিবেশ-পরিস্থিতির পার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য করে অনেক সময় নিজ বিধানাবলীর মধ্যে রদ-বদল করেন। সূরা বাকারায় কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এটাও কাফেরদের একটা আপত্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তারা প্রশ্ন করত এ কুরআন ও এর বিধানসমূহ যদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়, তবে এতে এত রদবদল কেন? বোঝা যাচ্ছে, এটা আল্লাহর কালাম নয়; বরং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ থেকেই এসব তৈরি করে আল্লাহর নামে চালাচ্ছেন। তাই এটা তাঁর পক্ষ হতে আল্লাহর প্রতি অপবাদ (নাউযুবিল্লাহ)। এ আয়াতে তাদের সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, কখন কোন বিধান নাযিল করতে হবে তা আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন এবং সে কারণেই এ রদবদল হচ্ছে। কিন্তু তারা অজ্ঞ হওয়ার কারণে এ রহস্য বুঝতে পারছে না। তাই এসব অবান্তর কথা বলছে।


১০২


قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ


কুল নাঝঝালাহূরূহুলকুদুছি মির রাব্বিকা বিলহাক্কি লিইউছাব্বিতাল্লাযীনা আ-মানূ ওয়া হুদাওঁ ওয়া বুশরা-লিলমুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, এটা (অর্থাৎ কুরআন মাজীদ) তো রূহুল কুদস (জিবরাঈল আলাইহিস সালাম) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে নিয়ে এসেছে, ঈমানদারদেরকে দৃঢ়পদ রাখার জন্য এবং মুসলিমদের পক্ষে হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, একে পবিত্র ফেরেশতা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিশ্চিত সত্যসহ নাযিল করেছেন, যাতে মুমিনদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটা মুসলমানদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সু-সংবাদ স্বরূপ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে রুহুল-কুদুস জিব্রাঈল সত্যসহ কুরআন অবতীর্ণ করেছে, যারা মু’মিন তাদেরকে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এবং হিদায়াত ও সুসংবাদস্বরূপ মুসলিমদের জন্যে।’


১০৩


وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّهُمْ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُ بَشَرٌ ۗ لِّسَانُ الَّذِي يُلْحِدُونَ إِلَيْهِ أَعْجَمِيٌّ وَهَـٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِينٌ


ওয়া লাকাদ না‘লামুআন্নাহুম ইয়াকূলূনা ইন্নামা-ইউ‘আলিলমুহূবাশারুল লিছা-নুল্লাযী ইউলহিদূ না ইলাইহি আ‘জামিইয়ুওঁ ওয়া হা-যা-লিছা-নুন ‘আরাবিইয়ুম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমার জানা আছে যে, তারা (তোমার সম্পর্কে) বলে, তাকে তো একজন মানুষ শিক্ষা দেয়। (অথচ) তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা আরবী নয়। ৫৬ আর এটা (অর্থাৎ কুরআনের ভাষা) স্পষ্ট আরবী ভাষা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তো ভালভাবেই জানি যে, তারা বলেঃ তাকে জনৈক ব্যক্তি শিক্ষা দেয়। যার দিকে তারা ইঙ্গিত করে, তার ভাষা তো আরবী নয় এবং এ কোরআন পরিষ্কার আরবী ভাষায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো জানি, তারা বলে, ‘তাকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ।’ এরা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ভাষা।


তাফসীরঃ

৫৬. মক্কা মুকাররমায় একজন কামার ছিল, যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনত। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে-মাঝে তার কাছে যেতেন ও তাকে দীন ও ঈমানের কথা শোনাতেন। সেও কখনও কখনও তাঁকে ইনজীলের দু’-একটি কথা শুনিয়ে দিত। ব্যস! এরই ভিত্তিতে মক্কা মুকাররমার কোন কোন কাফের বলতে শুরু করল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে সেই কামারই এ কুরআন শিখাচ্ছে। তাদের সে মন্তব্য যে কতটা অবান্তর সেটাই এ আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সেই বেচারা কামার তো এক অনারব লোক। সে এই অনন্যসাধারণ বাকশৈলীর অলংকারময় আরবী কুরআন কিভাবে রচনা করতে পারে?


১০৪


إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ لَا يَهْدِيهِمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ


ইন্নাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি লা-ইয়াহদীহিমুল্লা-হু ওয়া লাহুম ‘আযাবুন আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা আল্লাহর আয়াতের উপর ঈমান রাখে না, আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দান করেন না। তাদের জন্য আছে, যন্ত্রণাময় শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আল্লাহর কথায় বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্ র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ্ হিদায়াত করেন না এবং তাদের জন্যে আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।


১০৫


إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ


ইন্নামা-ইয়াফতারিল কাযিবাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিআ-য়া-তিল্লা-হি ওয়া উলাইকা হুমুল কা-যিবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ তো (নবী নয়, বরং) তারাই করে, যারা আল্লাহর আয়াতের উপর ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে তারাই মিথ্যাবাদী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মিথ্যা কেবল তারা রচনা করে, যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না এবং তারাই মিথ্যাবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্ র নিদর্শনে বিশ্বাস করে না তারা তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী।


১০৬


مَن كَفَرَ بِاللَّهِ مِن بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَـٰكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ


মান কাফারা বিল্লা-হি মিম বা‘দি ঈমা-নিহীইল্লা-মান উকরিহা ওয়া কালবুহূমুতমাইননুম বিলঈমা-নি ওয়ালা-কিম মান শারাহা বিলকুফরি সাদরান ফা‘আলাইহিম গাদাবুম মিনাল্লা-হি ওয়ালাহুম ‘আযা-বুন ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পর তাঁর কুফরীতে লিপ্ত হয় অবশ্য যাকে (কুফরীর জন্য) বাধ্য করা হয়েছে, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে স্থির সে নয়; বরং যে কুফরীর জন্য নিজ হৃদয় খুলে দিয়েছে, এরূপ লোকের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে গযব ৫৭ এবং তাদের জন্য আছে মহাশাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কেউ তার ঈমান আনার পর আল্লাহ্কে অস্বীকার করলে এবং কুফরীর জন্যে হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার ওপর আপতিত হবে আল্লাহ্ র গযব এবং তার জন্যে আছে মহাশাস্তি ; তবে তার জন্যে নয়, যাকে কুফরীর জন্যে বাধ্য করা হয় কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচলিত।


তাফসীরঃ

৫৭. অর্থাৎ, কারও যদি প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়, হুমকি দেওয়া হয় কুফরী কথা উচ্চারণ না করলে তাকে জানে মেরে ফেলা হবে, তবে সে মাযূর। সে তা উচ্চারণ করলে ক্ষমাযোগ্য হবে। শর্ত হল, তার অন্তর ঈমানে অবিচলিত থাকতে হবে। কিন্তু কেউ যদি স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে কুফরী কথা বলে, তবে তার উপর আল্লাহ তাআলার গযব নাযিল হবে।


১০৭


ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ


যা-লিকা বিআন্নাহুমুছ তাহাব্বুল হায়া-তাদদুনইয়া-‘আলাল আ-খিরাতি ওয়া আন্নাল্লাহা লা-ইয়াহদিল কাওমাল কা-ফিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা এজন্য যে, তারা আখেরাতের বিপরীতে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি ভালোবেসেছে এবং এজন্য যে, আল্লাহ এরূপ অকৃতজ্ঞ লোকদেরকে হিদায়াতে উপনীত করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা এ জন্যে যে, তারা পার্থিব জীবনকে পরকালের চাইতে প্রিয় মনে করেছে এবং আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা এইজন্যে যে, তারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের ওপর প্রাধান্য দেয় এবং আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।


১০৮


أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ


উলাইকাল্লাযীনা তাবা‘আল্লা-হু ‘আলা-কুলূবিহিম ওয়া ছাম‘ইহিম ওয়া আবসা-রিহিম ওয়া উলাইকা হুমুল গা-ফিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা এমন লোক, আল্লাহ যাদের অন্তর, কান ও চোখে মোহর করে দিয়েছেন এবং তারাই এমন লোক, যারা (নিজ পরিণাম সম্পর্কে) সম্পূর্ণ গাফেল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরাই তারা, আল্লাহ তা’য়ালা এদেরই অন্তর, কর্ণ ও চক্ষুর উপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই কান্ড জ্ঞানহীন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরাই তারা, আল্লাহ্ যাদের অন্তর, কর্ণ ও চোখ মোহর করে দিয়েছেন এবং এরাই গাফিল।


১০৯


لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْخَاسِرُونَ


লা-জারামা আন্নাহুম ফিল আ-খিরাতি হুমুল খা-ছিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা সুনিশ্চিত যে, এরাই আখেরাতে সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলাবাহুল্য পরকালে এরাই ক্ষতি গ্রস্ত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই এরা তো আখিরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।


১১০


ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِن بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ


ছু ম্মা ইন্না রাব্বাকা লিল্লাযীনা হা-জারূমিম বা‘দি মা-ফুতিনূছু ম্মা জা-হাদূওয়া সাবারূ ইন্না রাব্বাকা মিম বা‘দিহা-লাগাফূরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হিজরত করেছে, তারপর জিহাদ করেছে ও সবর অবলম্বন করেছে, তোমার প্রতিপালক এসব বিষয়ের পর অবশ্যই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৫৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা দুঃখ-কষ্ট ভোগের পর দেশত্যাগী হয়েছে অতঃপর জেহাদ করেছে, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা এসব বিষয়ের পরে অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা নির্যাতিত হওয়ার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য ধারণ করেন, তোমার প্রতিপালক এই সবের পর, তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

৫৮. এ আয়াতে ‘ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার’ কথা বলে সেই সকল সাহাবীর প্রতি ইশারা করা হতে পারে, যারা মক্কা মুকাররমায় কাফেরদের পক্ষ থেকে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। প্রথমে যেহেতু কাফেরদের অশুভ পরিণামের কথা জানানো হয়েছিল, তাই এবার সেই নিপীড়িত মুসলিমদের প্রতিদানের কথাও জানিয়ে দেওয়া হল। কোন কোন মুফাসসির এখানে ফিতনায় আক্রান্ত হওয়ার অর্থ এই করেছেন যে, তারা প্রথমে কুফরীতে লিপ্ত হয় এবং তারপর তাওবা করে নেয়। এ হিসেবে এর সম্পর্ক হবে মুরতাদদের সাথে। অর্থাৎ, পূর্বে যে মুরতাদ (ইসলামত্যাগী)দের সম্পর্কে আলোচনা চলছিল, আলোচনা আবার সে দিকেই ফিরে গেছে। এবার তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এখনও যদি তারা তাওবা করে এবং হিজরত ও জিহাদে শামিল হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা আগের সবকিছু ক্ষমা করে দেবেন।


১১১


۞ يَوْمَ تَأْتِي كُلُّ نَفْسٍ تُجَادِلُ عَن نَّفْسِهَا وَتُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ


ইয়াওমা তা’তী কুল্লুনাফছিন তুজা-দিলু‘আন নাফছিহা-ওয়া তুওয়াফফা-কুল্লুনাফছিম মা‘আমিলাত ওয়া হুম লা-ইউজলামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা সেই দিন, যে দিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মরক্ষামূলক কথা বলতে বলতে উপস্থিত হবে এবং প্রত্যেককে তার সমস্ত কর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্ন-সমর্থনে সওয়াল জওয়াব করতে করতে আসবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের পূর্ণ ফল পাবে এবং তাদের উপর জুলুম করা হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর সেই দিনকে, যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মসমর্থনে যুক্তি উপস্থিত করতে আসবে এবং প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণফল দেওয়া হবে। এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।


১১২


وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ


ওয়া দারাবাল্লা-হু মাছালান কারইয়াতান কা-নাত আ-মিনাতাম মুতমাইন্নাতাইঁ ইয়া’তীহারিঝকুহা-রাগাদাম মিন কুল্লি মাকা-নিন ফাকাফারাত বিআন‘উমিল্লা-হি ফাআযা-কাহাল্লা-হু লিবা-ছাল জূ‘ই ওয়াল খাওফি বিমা-কা-নূইয়াসনা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ এক জনবসতির দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, যা ছিল নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ। চতুর্দিক থেকে তার জীবিকা চলে আসত পর্যাপ্ত পরিমাণে। অতঃপর তা আল্লাহর নি‘আমতের অকৃতজ্ঞতা শুরু করে দিল। ফলে আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে ক্ষুধা ও ভীতির পোশাক আস্বাদন করালেন। ৫৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সর্বদিক হতে এর প্রচুর জীবনোপকরণ; এরপর তা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত তার জন্যে আল্লাহ্ তাদেরকে স্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।


তাফসীরঃ

৫৯. এখানে আল্লাহ তাআলা একটি সাধারণ দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। বলছেন যে, একটি জনপদ ছিল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরপুর। কালক্রমে তারা আল্লাহ তাআলার অকৃতজ্ঞতা ও অবাধ্যতায় ডুবে গেল এবং কোনক্রমেই নিজেদেরকে শোধরাতে রাজি হল না। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে শাস্তির স্বাদ চাখালেন। এক দিকে তাদের উপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হল, অন্যদিকে শত্রুদের পক্ষ থেকে আক্রমণ ও লুট-তরাজের ভয়-ভীতি। এ দুটো বিপদ যেন পোশাকের মত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। কিন্তু কোন-কোন মুফাসসির বলেন, এর দ্বারা মক্কা মুকাররমার জনপদকে বোঝানো হয়েছে, যার বাসিন্দাগণ সুখণ্ডশান্তিতে জীবন যাপন করছিল। কিন্তু তারা যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করল, তখন তাদের উপর কঠিন দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেওয়া হল। তাতে মানুষ চামড়া পর্যন্ত খেতে বাধ্য হল। শেষ পর্যন্ত তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে আবেদন করল, আপনি দু‘আ করুন, যেন আমাদেরকে এ দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। সুতরাং তিনি দু‘আ করলেন। ফলে দুর্ভিক্ষ কেটে গেল। সূরা দুখানেও এ ঘটনা আসবে।


১১৩


وَلَقَدْ جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُونَ


ওয়া লাকাদ জাআহুম রাছূলুম মিনহুম ফাকাযযাবূহু ফাআখাযাহুমুল‘আযা-বুওয়া হুম জা-লিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করল। সুতরাং তারা যখন জুলুমে লিপ্ত হল তখন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে তাদরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিতই ওরা ছিল পাপাচারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের নিকট তো এসেছিল এক রাসূল তাদেরই মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল। ফলে সীমালংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করল।


১১৪


فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ


ফাকুলূমিম্মা-রাঝাকাকুমুল্লা-হু হালা-লান তাইয়িবাওঁ ওয়াশকুরূনি‘মাতাল্লা-হি ইন কুনতুম ইয়্যা-হু তা‘বুদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তোমাদেরকে রিযক হিসেবে যে হালাল, পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা খাও ৬০ এবং আল্লাহর নি‘আমতসমূহের শোকর আদায় কর যদি তোমরা সত্যিই তাঁর ইবাদত করে থাক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, আল্লাহ তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু দিয়েছেন, তা তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই এবাদতকারী হয়ে থাক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ তোমাদেরকে হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন তা হতে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহ্ র অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ‘ইবাদত কর।


তাফসীরঃ

৬০. পূর্বে যে অকৃতজ্ঞতার নিন্দা করা হয়েছে, এখানে তারই একটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে, যে পদ্ধতি আরব মুশরিকগণ অবলম্বন করেছিল। তা এই যে, তারা মনগড়াভাবে বহু নি‘আমত হারাম সাব্যস্ত করেছিল। সূরা আনআমে (৬ : ১৩৯-১৪৫) তা সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। এখানে তাদের অকৃতজ্ঞতার এই বিশেষ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।


১১৫


إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ


ইন্নামা-হাররামা ‘আলাইকুমুল মাইতাতা ওয়াদ্দামা ওয়া লাহমাল খিনঝীরি ওয়ামাউহিল্লা লিগাইরিল্লা-হি বিহী ফামানিদতুররা গাইরা বা-গিওঁ ওয়ালা-‘আদিন ফাইন্নাল্লা-হা গাফূরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তো তোমাদের জন্য কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেই পশু হারাম করেছেন, যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নাম নেওয়া হয়েছে। তবে যে ক্ষুধায় অতিষ্ঠ হয়ে যাবে এবং মজা লুটার জন্য না খাবে আর (প্রয়োজনের) সীমা অতিক্রমও না করবে, (তার পক্ষে) তো আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ৬১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘন কারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ তো কেবল মৃত জন্তু, রক্ত, শূকর-মাংস এবং যা যবেহ্কালে আল্লাহ্ র পরিবর্তে অন্যের নাম নেয়া হয়েছে তাই তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন, কিন্তু কেউ অবাধ্য কিংবা সীমালংঘনকারী না হয়ে অনন্যোপায় হলে আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

৬১. এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা মায়েদায় (৫ : ৩) চলে গেছে।


১১৬


وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَـٰذَا حَلَالٌ وَهَـٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ


ওয়ালা-তাকূলূলিমা-তাসিফুআলছিনাতুকুমুল কাযিবা হা-যা-হালা-লুওঁ ওয়া হা-যাহারামুল লিতাফতারূ‘আলাল্লা-হিল কাযিবা ইন্নাল্লাযীনা ইয়াফতারূনা ‘আলাল্লা-হিল কাযিবা লা-ইউফলিহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে সব বস্তু সম্পর্কে তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা রচনা করে, সে সম্পর্কে বলো না- এটা হালাল এবং এটা হারাম। কেননা তার অর্থ হবে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ। জেনে রেখ, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়, তারা সফলকাম হয় না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের মুখ থেকে সাধারনতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে তেমনি করে তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মঙ্গল হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহ্ র প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্যে তোমরা বল না, ‘এটা হালাল এবং তা হারাম।’ নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না।


১১৭


مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ


মাতা-‘উন কালীলুওঁ ওয়া লাহুম ‘আযা-বুন আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(দুনিয়ায়) তাদের আরাম-আয়েশ অতি সামান্য। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যৎসামান্য সুখ-সম্ভোগ ভোগ করে নিক। তাদের জন্যে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের সুখ-সম্ভোগ সামান্যই এবং এদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।


১১৮


وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا مَا قَصَصْنَا عَلَيْكَ مِن قَبْلُ ۖ وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ


ওয়া ‘আলাল্লাযীনা হা-দূহাররামনা-মা-কাসাসনা-‘আলাইকা মিন কাবলু ওয়ামাজালামনা-হুম ওয়ালা-কিন কা-নূআনফুছাহুম ইয়জলিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইয়াহুদীদের জন্য আমি হারাম করেছিলাম সেই সব জিনিস, যা আমি পূর্বেই তোমার নিকট উল্লেখ করেছি। ৬২ আমি তাদের উপর কোন জুলুম করিনি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ইহুদীদের জন্যে আমি তো কেবল তাই হারাম করেছিলাম যা ইতিপূর্বে আপনার নিকট উল্লেখ করেছি। আমি তাদের প্রতি কোন জুলুম করিনি, কিন্তু তারাই নিজেদের উপর জুলুম করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইয়াহূদীদের জন্যে আমি তো কেবল তাই হারাম করেছিলাম যা তোমার নিকট আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং আমি এদের ওপর কোন জুলুম করি নাই, কিন্তু এরাই জুলুম করত নিজেদের প্রতি।


তাফসীরঃ

৬২. বলা উদ্দেশ্য, মক্কার কাফেরগণ নিজেদেরকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনুসারী বলে দাবী করত, অথচ তারা যেসব হালাল জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করেছিল, তা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকেই হালালরূপে চলে আসছিল। তার মধ্যে কেবল গুটি কয়েক জিনিস ইয়াহুদীদের প্রতি শাস্তিস্বরূপ হারাম করা হয়েছিল। যেমন সূরা নিসায় (৪ : ১৬০) গত হয়েছে। বাকি সবই তখন থেকে হালাল হিসেবেই চলে আসছে।


১১৯


ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ


ছু ম্মা ইন্না রাব্বাকা লিল্লাযীনা ‘আমিলুছছূআ বিজাহা-লাতিন ছুম্মা তা-বূমিম বা‘দি যালিকা ওয়া আসলাহূ ইন্না রাব্বাকা মিম বা‘দিহা-লাগাফরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক এমন যে, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে এবং তারপর তাওবা করে ও নিজেদেরকে শুধরিয়ে নেয়, তোমার প্রতিপালক তারপরও তাদের জন্য অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অনন্তর যারা অজ্ঞতাবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে নেয়, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম করে তারা পরে তওবা করলে ও নিজেদেরকে সংশোধন করলে তাদের জন্যে তোমার প্রতিপালক অবশ্য অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


১২০


إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ


ইন্না ইবরা-হীমা কা-না উম্মাতান কা-নিতাল লিল্লা-হি হানীফাওঁ ওয়ালাম ইয়াকুমিনাল মুশরিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিল এক আদর্শপুরুষ আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক সম্প্রদায়ের প্রতীক, সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহরই অনুগত এবং তিনি শেরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইব্রাহীম ছিল এক ‘উম্মত’, আল্লাহ্ র অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে ছিল না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত;


১২১


شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ۚ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ


শা-কিরাল লিআন‘উমিহী ইজতাবা-হু ওয়াহাদা-হু ইলা-সিরা-তিম মুছতাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে আল্লাহর নি‘আমতের কৃতজ্ঞতা আদায়কারী ছিল। আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি তাঁর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে ছিল আল্লাহ্ র অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞ; আল্লাহ্ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।


১২২


وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ


ওয়া আ-তাইনা-হু ফিদদুনইয়া-হাছানাতাওঁ ওয়া ইন্নাহূফিল আ-খিরাতি লামিনাসসালিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাকে দুনিয়ায়ও কল্যাণ দিয়েছিলাম এবং আখেরাতেও সে নিশ্চয়ই সালেহীনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁকে দুনিয়াতে দান করেছি কল্যাণ এবং তিনি পরকালেও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তাকে দুনিয়ায় দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং আখিরাতেও, সে নিশ্চয়ই সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।


১২৩


ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ


ছু ম্মা আওহাইনাইলাইকা আনিত্তাবি‘ মিল্লাতা ইবরা-হীমা হানীফাওঁ ওয়ামা-কা-না মিনাল মুশরিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর (হে নবী!) আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার প্রতিও এই হুকুম নাযিল করেছি যে, তুমি ইবরাহীমের দীন অনুসরণ কর, যে নিজেকে আল্লাহরই অভিমুখী করে রেখেছিল এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আপনার প্রতি প্রত্যাদেশ প্রেরণ করেছি যে, ইব্রাহীমের দ্বীন অনুসরণ করুন, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং শিরককারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এখন আমি তোমাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর; এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।


১২৪


إِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ


ইন্নামা-জু‘ইলাছছাব তু‘আলাল্লাযীনাখ তালাফূফীহি ওয়া ইন্না রাব্বাকা লাইয়াহকুমু বাইনাহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফীমা-কা-নূফীহি ইয়াখাতালিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

শনিবার সম্পর্কিত বিধান তো কেবল তাদের উপরই বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্পর্কে মতভেদ করত। ৬৩ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করে কিয়ামতের দিন সে সম্পর্কে মীমাংসা করবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

শনিবার দিন পালন যে, নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা তাদের জন্যেই যারা এতে মতবিরোধ করেছিল। আপনার পালনকর্তা কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

শনিবার পালন তো কেবল তাদের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করত। যে বিষয়ে এরা মতভেদ করত তোমার প্রতিপালক তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে এদের বিচার-মীমাংসা করে দিবেন।


তাফসীরঃ

৬৩. এটা দ্বিতীয় ব্যতিক্রম, যা ইয়াহুদীদের প্রতি হারাম করা হয়েছিল, অথচ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শরীয়তে তা বৈধ ছিল। ইয়াহুদীদের জন্য শনিবারে অর্থনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে যায়। কিছু লোক তো এ হুকুম পালন করল এবং কিছু লোক করল না। যাই হোক, এটাও একটা ব্যতিক্রম বিধান ছিল, যা কেবল ইয়াহুদীদের প্রতিই আরোপ করা হয়েছিল। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের শরীয়ত এর থেকে মুক্ত ছিল। কাজেই কারও এ অধিকার নেই যে, নিজের পক্ষ থেকে কোন জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করবে।


১২৫


ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ


উদ‘উ ইলা-ছাবীলি রাব্বিকা বিলহিকমাতি ওয়াল মাও‘ইজাতিল হাছানাতি ওয়া জা-দিলহুম বিল্লাতী হিয়া আহছানু ইন্না রাব্বাকা হুওয়া আ‘লামুবিমান দাল্লা ‘আন ছাবীলিহী ওয়া হুওয়া আ‘লামুবিলমুহতাদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি নিজ প্রতিপালকের পথে মানুষকে ডাকবে হিকমত ও সদুপদেশের মাধ্যমে আর (যদি কখনও বিতর্কের দরকার পড়ে, তবে) তাদের সাথে বিতর্ক করবে উৎকৃষ্ট পন্থায়। ৬৪ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যারা তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও পরিপূর্ণ জ্ঞাত, যারা সৎপথে প্রতিষ্ঠিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিক্মত ও সদুপদেশ দিয়ে এবং এদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।


তাফসীরঃ

৬৪. এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত মূলনীতি হল তিনটি (ক) হিকমত (খ) সদুপদেশ ও (গ) উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক। হিকমতের মর্ম হল সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। সদুপদেশের অর্থ যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা। আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া। -অনুবাদক


১২৬


وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ


ওয়া ইন ‘আ-কাবতুম ফা‘আকিবূবিমিছলি মা -‘ঊকিবতুম বিহী ওয়া লাইন সাবারতুম লাহুওয়া খাইরুল লিসসা-বিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা যদি (কোন জুলুমের) প্রতিশোধ নাও, তবে ঠিক ততটুকুই নেবে, যতটুকু জুলুম তোমাদের উপর করা হয়েছে আর যদি সবর কর, তবে নিশ্চয়ই সবর অবলম্বনকারীদের পক্ষে তাই শ্রেয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঐ পরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, যে পরিমাণ তোমাদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। যদি সবর কর, তবে তা সবরকারীদের জন্যে উত্তম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি তোমরা শাস্তি দাওই, তবে ঠিক ততখানি শাস্তি দিবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। তবে তোমরা ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্যে এটাই তো উত্তম।


১২৭


وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ


ওয়াসবির ওয়ামা-সাবরুকা ইল্লা-বিল্লা-হি ওয়ালা-তাহঝান ‘আলাইহিম ওয়ালা-তাকুফী দাইকিম মিম্মা-ইয়ামকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (হে নবী!) তুমি সবর অবলম্বন কর। তোমার সবর তো আল্লাহরই সাহায্যে হবে। তুমি কাফেরদের জন্য দুঃখ করো না এবং তারা যে ষড়যন্ত্র করে তার কারণে কুণ্ঠিত হয়ো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি সবর করবেন। আপনার সবর আল্লাহর জন্য ব্যতীত নয়, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না এবং তাদের চক্রান্তের কারণে মন ছোট করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি ধৈর্য ধারণ কর, তোমার ধৈর্য তো আল্লাহ্ র ই সাহায্যে। এদের দরুন দুঃখ কর না এবং এদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।


১২৮


إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوا وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ


ইন্নাল্লা-হা মা‘আল্লাযী নাত্তাকাওঁ ওয়াল্লাযীনা হুম মুহছিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সাথী, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা ইহসানের অধিকারী হয়। ৬৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ তাদেরই সঙ্গে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ।


তাফসীরঃ

৬৫. ‘ইহসান’ অতি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। সব রকম সৎকর্মই এর অন্তর্ভুক্ত। একটি হাদীসে এর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে- ‘মানুষ এভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে, যেন সে আল্লাহ তাআলাকে দেখছে কিংবা অন্ততপক্ষে এই চিন্তা করবে যে, তিনি তো আমাকে দেখছেন’। হে আল্লাহ! আমাকে ইহসানওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত কর।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

Post a Comment

0 Comments