সূরা আম্বিয়া বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা আম্বিয়া বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল আম্বিয়া বাংলা তরজমা,সূরা আম্বিয়া বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল আম্বিয়া, সকল আমল সূরা আল আম্বিয়া

 

সূরা আম্বিয়া বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা আম্বিয়া বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল আম্বিয়া বাংলা তরজমা,সূরা আম্বিয়া বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল আম্বিয়া, সকল আমল সূরা আল আম্বিয়া

২১ . আল আম্বিয়া - ( الأنبياء ) | নবীগণ (আঃ)

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১১২


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ


ইকতারাবা লিন্না-ছি হিছা-বুহুম ওয়া হুম ফী গাফলাতিম মু‘রিদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষের জন্য তাদের হিসাবের সময় কাছে এসে গেছে। অথচ তারা উদাসীনতায় বিমুখ হয়ে আছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের হিসেব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু এরা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।



مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ


মা-ইয়া’তীহিম মিন যিকরিম মির রাব্বিহিম মুহদাছিন ইল্লাছতামা‘উহু ওয়া হুম ইয়াল‘আবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখনই তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে নতুন কোন উপদেশ আসে, তখন তারা তামাশারত হয়ে তা এমনভাবে শোনে যে,


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখনই এদের নিকট এদের প্রতিপালকের কোন নূতন উপদেশ আসে এরা তা শ্রবণ করে কৌতুকচ্ছলে,

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


لَاهِيَةً قُلُوبُهُمْ ۗ وَأَسَرُّوا النَّجْوَى الَّذِينَ ظَلَمُوا هَلْ هَـٰذَا إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ ۖ أَفَتَأْتُونَ السِّحْرَ وَأَنتُمْ تُبْصِرُونَ


লা-হিয়াতান কুলূবুহুম ওয়া আছার রুন নাজওয়াল্লাযীনা জালামূ হাল হা-যা ইল্লা-বাশারুম মিছলুকুম আফাতা’তূনাছছিহরা ওয়া আনতুম তুবসিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের অন্তর ফজুল কাজে মগ্ন থাকে। জালেমগণ চুপিসারে (একে অন্যের সাথে) কানাকানি করে যে, এই ব্যক্তি (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি তোমাদের মত মানুষ ছাড়া আর কিছু? তারপরও কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর কথাই শুনে যাবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের অন্তর থাকে খেলায় মত্ত। জালেমরা গোপনে পরামর্শ করে, সে তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ; এমতাবস্থায় দেখে শুনে তোমরা তার যাদুর কবলে কেন পড়?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের অন্তর থাকে অমনোযোগী। যারা জালিম তারা গোপনে পরামর্শ করে, ‘এ তো তোমাদের মতো একজন মানুষই, তবুও কি তোমরা দেখে-শুনে জাদুর কবলে পড়বে ?’



قَالَ رَبِّي يَعْلَمُ الْقَوْلَ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ


কা-লা রাববী ইয়া‘লামুল কাওলা ফিছছামাই ওয়াল আরদি ওয়া হুওয়াছছামী‘উল ‘আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(উত্তরে) নবী বলল, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর যাবতীয় কথাই আমার প্রতিপালক জানেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। ১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পয়গম্বর বললেনঃ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের কথাই আমার পালনকর্তা জানেন। তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কথাই আমার প্রতিপালক অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’


তাফসীরঃ

১. কাফেরগণ গোপনে ইসলাম ও ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে যেসব কথা বলাবলি করত, কখনও কখনও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হত এবং তিনি তা তাদের কাছে প্রকাশ করতেন। তখন তারা একে যাদু বলে মন্তব্য করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন, এটা যাদু নয়; বরং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ ওহী। তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু বলা হয় তা ভালোভাবে অবগত আছেন।



بَلْ قَالُوا أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ بَلِ افْتَرَاهُ بَلْ هُوَ شَاعِرٌ فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ كَمَا أُرْسِلَ الْأَوَّلُونَ


বাল কা-লূআদগা-ছু আহলা-মিম বালিফ তারা-হু বাল হুওয়া শা-‘ইরুন ফালইয়া’তিনা-বিআ-য়াতিন কামাউরছিলাল আওওয়ালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এতটুকুই নয়; বরং তারা একথাও বলে যে, এটা (অর্থাৎ কুরআন) অসংলগ্ন স্বপ্ন সম্ভার; বরং সে নিজে এটা রচনা করেছে। কিংবা সে একজন কবি। ২ তা সে আমাদের সামনে কোন নিদর্শন নিয়ে আসুক না, যেমন পূর্ববর্তী নবীগণ (নিদর্শনসহ) প্রেরিত হয়েছিল! ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এছাড়া তারা আরও বলেঃ অলীক স্বপ্ন; না সে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে, না সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আনয়ন করুক, যেমন নিদর্শন সহ আগমন করেছিলেন পূর্ববর্তীগন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা এটাও বলে, ‘এই সমস্ত অলীক কল্পনা, হয় সে তা উদ্ভাবন করেছে, না হয় সে একজন কবি। অতএব সে আনয়ন করুক আমাদের নিকট এক নিদর্শন যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্ববর্তীগণ।’


তাফসীরঃ

২. ‘নিদর্শন’ দ্বারা মুজিযা (অলৌকিক বিষয়) বোঝানো হয়েছে। কাফেরদের সামনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু মুজিযাই প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা নিত্য-নতুন মুজিযার দাবি করত। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন, পূর্বের জাতিসমূহও তাদের মত মুজিযা দাবি করত। কিন্তু তাদের দাবি অনুযায়ী যখন তাদেরকে মুজিযা দেখানো হত, তখন যে তারা ঈমান আনত তা নয়; বরং তখন তারা নতুন বাহানা দেখাত। পরিণামে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলার জানা আছে ফরমায়েশী মুজিযা দেখার পরও তারা ঈমান আনবে না। অথচ আল্লাহ তাআলার নীতি হল, কোন সম্প্রদায় তাদের ফরমায়েশী মুজিযা দেখার পরও যদি ঈমান না আনে, তবে তাদেরকে তিনি ধ্বংস করে দেন। কিন্তু এদেরকে তো এখনই ধ্বংস করা তাঁর অভিপ্রেত নয়। এ কারণেই তিনি তাদেরকে তাদের দাবি অনুযায়ী মুজিযা দেখাচ্ছেন না।


৩. বস্তুত কুরআন মাজীদ আল্লাহ তাআলার কালাম ও অলৌকিক বাণী হওয়ার কারণে কোন মানব-রচনার সাথে মেলে না। আরবী সাহিত্যে পূর্ণ দখল থাকায় এ স্বাতন্ত্র্য তারা ভালোই বুঝত এবং মনে মনে ঠিকই উপলব্ধি করত এটা কোন মানুষের রচনা নয়, বরং আল্লাহ তালারই কালাম, কিন্তু পার্থিব হীন স্বার্থের বশবর্তীতে তারা তা স্বীকার করত না। কিন্তু কি বলবে তাও স্থির করতে পারত না। কেননা যাই বলা হবে সামান্য দৃষ্টিপাতেই তার সাথে কুরআনের প্রভেদ সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। তাই একেকবার একেকটা বলে দিত। কখনও বলত ‘অসংলগ্ন স্বপ্ন-কথা’, কখনও বলত ‘যাদু’ কখনও বলত কাব্য। এতে কুরআনের সত্যতা তো ক্ষুণ্ণ হত না, উল্টো তাদের সিদ্ধান্তহীনতাই প্রকাশ পেত। -অনুবাদক



مَا آمَنَتْ قَبْلَهُم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا ۖ أَفَهُمْ يُؤْمِنُونَ


মাআ-মানাত কাবলাহুম মিন কারইয়াতিন আহলাকনা-হা- আফাহুম ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথচ তাদের পূর্বে আমি যত জনপদ ধ্বংস করেছি, তারা ঈমান আনেনি। তবে কি এরা ঈমান আনবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের পূর্বে যেসব জনপদ আমি ধবংস করে দিয়েছি, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেনি; এখন এরা কি বিশ্বাস স্থাপন করবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের পূর্বে যেসব জনপদ আমি ধ্বংস করেছি এর অধিবাসীরা ঈমান আনে নাই; তবে কি এরা ঈমান আনবে ?



وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۖ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ


ওয়ামাআরছালনা-কাবলাকা ইল্লা-রিজা-লাননূহীইলাইহিম ফাছআলূআহলাযযিকরি ইন কুনতুম লা-তা‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমি তোমার আগে কেবল পুরুষ মানুষকেই রাসূল করে পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি ওহী নাযিল করতাম। সুতরাং (কাফেরদেরকে বল) তোমরা নিজেরা যদি না জান তবে উপদেশ সম্পর্কে জ্ঞাতদেরকে জিজ্ঞেস কর। ৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বে আমি ওহীসহ মানুষই পাঠিয়েছিলাম; তোমরা যদি না জান তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর।


তাফসীরঃ

৪. ‘উপদেশ সম্পর্কে জ্ঞাতদের’ দ্বারা কিতাবীদেরকে বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীগণ সম্পর্কে তোমাদের নিজেদের যদি জানা না থাকে, তবে কিতাবীদেরকে জিজ্ঞেস কর। তারা এ কথার সমর্থন করবে যে, সমস্ত নবী-রাসূল মানুষই ছিলেন, মানুষের কাছে মানুষকেই নবী করে পাঠানো হয়েছিল এবং তাও নারীকে নয়, পুরুষকেই।



وَمَا جَعَلْنَاهُمْ جَسَدًا لَّا يَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَمَا كَانُوا خَالِدِينَ


ওয়ামা-জা‘আলনা-হুম জাছাদাল্লা-ইয়া‘কুলূনাততা‘আ-মা ওয়ামা-কা-নূখা-লিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি তাদের (অর্থাৎ রাসূলদের)-কে এমন দেহবিশিষ্ট বানাইনি, যারা খাবার খাবে না। আর তারা চিরজীবীও ছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করি নাই যে, তারা আহার্য গ্রহণ করত না; তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।



ثُمَّ صَدَقْنَاهُمُ الْوَعْدَ فَأَنجَيْنَاهُمْ وَمَن نَّشَاءُ وَأَهْلَكْنَا الْمُسْرِفِينَ


ছু ম্মা সাদাকনা-হুমুল ওয়া‘দা ফাআনজাইনা-হুম ওয়া মান নাশাউ ওয়া আহলাকনাল মুছরিফীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর আমি তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা সত্যে পরিণত করি, অর্থাৎ আমি তাদেরকেও রক্ষা করি এবং (তাদের ছাড়া অন্য) যাদেরকে ইচ্ছা করেছিলাম তাদেরকেও। আর যারা সীমালংঘন করেছিল তাদেরকে করি ধ্বংস।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাদেরকে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম সুতরাং তাদেরকে এবং যাদেরকে ইচ্ছা বাঁচিয়ে দিলাম এবং ধবংস করে ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি তাদের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম,-যথা, আমি এদেরকে ও যাদেরকে ইচ্ছা রক্ষা করেছিলাম এবং জালিমদেরকে করেছিলাম ধ্বংস।


১০


لَقَدْ أَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيهِ ذِكْرُكُمْ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ


লাকাদ আনঝালনাইলাইকুম কিতা-বান ফীহি যিকরুকুম আফালা-তা‘কিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(পরিশেষে) আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি এমন এক কিতাব, যার ভেতর তোমাদের জন্য উপদেশ রয়েছে। ৫ তবুও কি তোমরা বুঝবে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব যাতে আছে তোমাদের জন্যে উপদেশ, তবুও কি তোমরা বুঝবে না ?


তাফসীরঃ

৫. এ আয়াতের তরজমা এভাবেও করা যেতে পারে যে, ‘আমি তোমাদের প্রতি এমন এক কিতাব নাযিল করেছি, যার ভেতর তোমাদের সুখ্যাতির ব্যবস্থা আছে’। তখন এর ব্যাখ্যা হল, আমি এ কিতাব আরবী ভাষায় নাযিল করেছি। এতে সরাসরি তোমাদের আরবদেরকেই সম্বোধন করা হয়েছে। নিশ্চয়ই এটা তোমাদের জন্য অতি মর্যাদার বিষয় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর সার্বজনীন সর্বশেষ কিতাব তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন এবং তাও তোমাদেরই ভাষায়। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে পৃথিবীর অস্তিত্ব যত দিন থাকবে তত দিন তোমাদের সুনাম-সুখ্যাতিও অব্যাহত থাকবে।


১১


وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا آخَرِينَ


ওকাম কাসামনা- মিন কারইয়াতিন কা-নাত জা-লিমাতাওঁ ওয়া আনশা’না- বা‘দাহাকাওমান আ-খারীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি কত জনপদ পিষ্ট করেছি, যারা ছিল জালেম! তাদের পর আমি অন্যান্য জাতি সৃষ্টি করেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ, যার অধিবাসীরা ছিল জালিম এবং তাদের পরে সৃষ্টি করেছি অপর জাতি।


১২


فَلَمَّا أَحَسُّوا بَأْسَنَا إِذَا هُم مِّنْهَا يَرْكُضُونَ


ফালাম্মাআহাছছূবা’ছানাইযা-হুম মিনহা-ইয়ারকুদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর তারা যখন আমার শাস্তির পূর্বাভাষ পেল, তখন তারা দ্রুত সেখান থেকে পালাতে লাগল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন তারা আমার আযাবের কথা টের পেল, তখনই তারা সেখান থেকে পলায়ন করতে লাগল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর যখন এরা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল তখনই এরা জনপদ হতে পলায়ন করতে লাগল।


১৩


لَا تَرْكُضُوا وَارْجِعُوا إِلَىٰ مَا أُتْرِفْتُمْ فِيهِ وَمَسَاكِنِكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْأَلُونَ


লা- তারকুদূ ওয়ারজি‘উ ইলা-মাউতরিফতুম ফীহি ওয়া মাছা-কিনিকুম লা‘আল্লাকুম তুছআলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তাদেরকে বলা হয়েছিল) পালিও না। বরং ফিরে এসো তোমাদের সেই ঘর-বাড়ি ও ভোগ-বিলাসের উপকরণের দিকে, যার মজা তোমরা লুটছিলে। হয়ত তোমাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হবে। ৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পলায়ন করো না এবং ফিরে এস, যেখানে তোমরা বিলাসিতায় মত্ত ছিলে ও তোমাদের আবাসগৃহে; সম্ভবত; কেউ তোমাদের জিজ্ঞেস করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে বলা হয়েছিল, ‘পলায়ন কর না এবং ফিরে আস তোমাদের ভোগ-সম্ভারের নিকট ও তোমাদের আবাসগৃহে, হয়ত এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে।’


তাফসীরঃ

৬. একথা বলা হয়েছে তাদের প্রতি পরিহাসস্বরূপ। অর্থাৎ তোমরা যখন ভোগ-বিলাসের ভেতর নিমজ্জিত ছিলে, তখন তোমাদের চাকর-বাকর তোমাদের হুকুম জানতে চাইত, কখন কী করতে হবে তা জিজ্ঞেস করত। সুতরাং এখন পালাও কেন, বাড়িতে ফিরে এসো, এসে দেখ তোমাদের চাকর-বাকর এখনও তোমাদের হুকুম জানতে চায় কি না। বস্তুত সেই অবকাশ আর নেই। তোমরা ফিরে আসলে তোমাদের ঘর-বাড়ির কোন চিহ্নই খুঁজে পাবে না। তোমাদের বিলাসিতার উপকরণও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আর কোথায়ই বা সেই চাকর-বাকর, যারা তোমাদের হুকুমের অপেক্ষায় থাকত!


১৪


قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ


কা-লূইয়া-ওয়াইলানাইন্না-কুন্না-জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! প্রকৃতপক্ষে আমরাই জালেম ছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের ! আমরা তো ছিলাম জালিম।’


১৫


فَمَا زَالَت تِّلْكَ دَعْوَاهُمْ حَتَّىٰ جَعَلْنَاهُمْ حَصِيدًا خَامِدِينَ


ফামা-ঝা-লাত তিলকা দা‘ওয়া-হুম হাত্তা-জা‘আলনা-হুম হাসীদান খা-মিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের এই চিৎকারই চলতে থাকে যতক্ষণ না আমি তাদেরকে করে ফেলি কর্তিত শস্য, নির্বাপিত আগুনতুল্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের এই আর্তনাদ সব সময় ছিল, শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে করে দিলাম যেন কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের এই আর্তনাদ চলতে থাকে আমি এদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নিসদৃশ না করা পর্যন্ত।


১৬


وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ


ওয়ামা-খালাকনাছছামাআ ওয়াল আরদা ওয়ামা-বাইনাহুমা-লা-‘ইবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি আকাশ, পৃথিবী ও এ দুয়ের মাঝখানে যা-কিছু আছে, তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। ৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আকাশ পৃথিবী এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশ ও পৃথিবী এবং যা এদের অন্তর্বর্তী তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করি নাই।


তাফসীরঃ

৭. যারা পার্থিব জীবনকেই শেষ কথা মনে করে, আখেরাতের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, তাদের কথার অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ তাআলা বিশ্ব জগতকে এমনিই সৃষ্টি করেছেন, এর পেছনে তাঁর বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নেই। এটা তার একটা খেলা মাত্র। তারা যেন বলছে, এ দুনিয়ায় যা-কিছু ঘটছে পরবর্তীতে কখনও এর কোন ফলাফল প্রকাশ পাবে না। না কেউ তার সৎকাজের কোন পুরস্কার পাবে, না কাউকে তার অসৎ কাজের শাস্তি ভোগ করতে হবে। বলার দরকার পড়ে না, আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে এরূপ ধারণা পোষণ গুরুতর বেয়াদবী ও চরম ধৃষ্টতা।


১৭


لَوْ أَرَدْنَا أَن نَّتَّخِذَ لَهْوًا لَّاتَّخَذْنَاهُ مِن لَّدُنَّا إِن كُنَّا فَاعِلِينَ


লাও আরাদনাআন নাত্তাখিযা লাহওয়াল্লাত্তাখাযনা -হু মিল্লাদুন্না ইন কুন্না-ফা-‘ইলীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যদি কোন খেলার ব্যবস্থা করতে চাইতাম, তবে আমি নিজের কাছ থেকেই তার কোন ব্যবস্থা করে নিতাম একান্ত যদি আমার তা করতেই হত। ৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যদি ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম তবে আমি আমার নিকট যা আছে তা নিয়েই তা করতাম ; আমি তা করি নাই।


তাফসীরঃ

৮. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কোন রকমের খেলা করতে চাচ্ছেন- এ রকমের ধারণা তাঁর সম্পর্কে করা বেহুদা অর্বাচীনতা। এই অসম্ভবকে যদি সম্ভব ধরেও নেওয়া হয় এবং বলা হয় একটু আনন্দ-স্ফূর্তি করাই তার উদ্দেশ্য ছিল (নাউযুবিল্লাহ), তবে সেজন্য এই বিস্ময়কর মহাবিশ্ব সৃষ্টির কী প্রয়োজন ছিল? তিনি তো তাঁর নিজের কাছে আগে থেকেই যেসব ফিরিশতা বা অন্যান্য সৃষ্টি আছে তাদের দ্বারাই খেলার কোন ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন।


১৮


بَلْ نَقْذِفُ بِالْحَقِّ عَلَى الْبَاطِلِ فَيَدْمَغُهُ فَإِذَا هُوَ زَاهِقٌ ۚ وَلَكُمُ الْوَيْلُ مِمَّا تَصِفُونَ


বাল নাকযিফুবিলহাক্কি‘আলাল বা-তিলি ফাইয়াদমাগুহূফাইযা-হুওয়া ঝা-হিকুও ওয়ালাকুমুল ওয়াইলুমিম্মা-তাসিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, যা মিথ্যার মাথা গুঁড়ো করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ তা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ৯ তোমরা যে সব কথা বলছ, তার জন্য দুর্ভোগ রয়েছে তোমাদেরই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তোমরা যা বলছ, তার জন্যে তোমাদের দুর্ভোগ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কিন্তু আমি সত্য দিয়ে আঘাত হানি মিথ্যার ওপর ; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা যা বলছ তার জন্যে।


তাফসীরঃ

৯. অর্থাৎ খেলাধুলা ও আনন্দ-স্ফূর্তি করা আমার কাজ নয়। আমি যা-কিছু করি তা হক ও সত্যই হয়ে থাকে। তার বিপরীতে কোন কিছু দাঁড়ালে তা হয় বাতিল ও মিথ্যা। আমি ‘হক’-এর দ্বারা বাতিলকে চূর্ণ করি। ফলে বাতিল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।


১৯


وَلَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَنْ عِندَهُ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَلَا يَسْتَحْسِرُونَ


ওয়া লাহূমান ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি;ওয়ামান ‘ইন্দাহূলা-ইয়াছতাকবিরূনা ‘আন ‘ইবা-দাতিহী ওয়ালা-ইয়াছতাহছিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারাই আছে, সকলেই আল্লাহর। আর যারা (অর্থাৎ যে সকল ফেরেশতা) তাঁর কাছে আছে, তারা অহংকারবশত তাঁর ইবাদত থেকে বিমুখ হয় না এবং তারা ক্লান্তিও বোধ করে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে যারা আছে, তারা তাঁরই। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে আছে তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না এবং অলসতাও করে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা তাঁরই : তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহঙ্কারবশে তাঁর ‘ইবাদত করা হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।


২০


يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ


ইউছাব্বিহূ নাল লাইলা ওয়ান নাহা-রা লা-ইয়াফতুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা রাত-দিন তার তাসবীহতে লিপ্ত থাকে, কখনও অবসন্ন হয় না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা রাত্রিদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা দিবারাত্র তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, তারা শৈথিল্য করে না।


২১


أَمِ اتَّخَذُوا آلِهَةً مِّنَ الْأَرْضِ هُمْ يُنشِرُونَ


আমিততাখাযূআ-লিহাতাম মিনাল আরদিহুম ইউনশিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি তারা যমীন থেকে এমন মাবুদ বানিয়েছে, যারা নতুন জীবন দিতে পারে? ১০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি মৃত্তিকা দ্বারা তৈরী উপাস্য গ্রহণ করেছে, যে তারা তাদেরকে জীবিত করবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা মৃত্তিকা হতে তৈরি যেসব দেবতা গ্রহণ করেছে সেগুলি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম ?


তাফসীরঃ

১০. অধিকাংশ মুফাসসির ‘নতুন জীবন দান’-এর ব্যাখ্যা করেছেন, মৃত্যুর পর জীবন দান করা। অর্থাৎ মুশরিকগণ যেই দেব-দেবীকে প্রভুত্বের মর্যাদা দান করেছে, তারা কি মৃতদেরকে নতুন জীবন দান করার ক্ষমতা রাখে? যদিও মুশরিকগণ মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে স্বীকার করত না, কিন্তু যখন কোন সত্তাকে প্রভুত্বের মর্যাদা দেওয়া হবে, তখন যুক্তির দাবি তো এটাই যে, সে সত্তা নতুন জীবন দানেও সক্ষম হবে। তা মুশরিকরা কি দেব-দেবীকে এরূপ ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করে? কিন্তু কোন কোন মুফাসসির নতুন জীবন দানের ব্যাখ্যা করেছেন এরূপ যে, মুশরিকদের বিশ্বাস ছিল দেব-দেবী ভূমিকে নতুন জীবন দান করে, ফলে তা সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে তাদের এ বিশ্বাসের ভিত্তি হল ‘ঈশ্বর দু’জন’এই মতবাদের উপর। এক শ্রেণীর কাফের বিশ্বাস করত আকাশের ঈশ্বর একজন এবং পৃথিবীর আরেকজন। আল্লাহ তাআলার প্রভুত্ব আকাশে আর দেব-দেবীর পৃথিবীতে। এই অবাস্তব ধারণা থেকেই তাদের এ বিশ্বাসের উৎপত্তি। সেটাকেই রদ করে বলা হয়েছে, তোমরা যাদেরকে পৃথিবীর প্রভু মনে করছ, তারা কি পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে?


২২


لَوْ كَانَ فِيهِمَا آلِهَةٌ إِلَّا اللَّهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ


লাও কা-না ফীহিমাআ-লিহাতুন ইল্লাল্লা-হু লাফাছাদাতা- ফাছুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল ‘আরশি ‘আম্মা-ইয়াসিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। ১১ সুতরাং তারা যা বলছে, আরশের মালিক আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি আল্লাহ্ ব্যতীত বহু ইলাহ্ থাকত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে, তবে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব এরা যা বলে তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ্ পবিত্র, মহান।


তাফসীরঃ

১১. এটা তাওহীদের একটি সহজ-সরল প্রমাণ। এর ব্যাখ্যা হল, বিশ্বজগতে যদি একের বেশি প্রভু থাকত, তবে প্রত্যেক প্রভু স্বতন্ত্র প্রভুত্বের অধিকারী হত এবং কেউ কারও অধীন হত না। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেকের সিদ্ধান্ত আলাদা হতে পারত, ফলে বিরোধ অনিবার্য হয়ে যেত। যখন দু’জনের সিদ্ধান্তে বিরোধ দেখা দিত, তখন তাদের একজন কি অন্যজনের কাছে হার মানত? হার মানলে সে কেমন ঈশ্বর হল, যে অন্যের বশ্যতা স্বীকার করে? আর যদি কেউ হার না মানে; বরং প্রত্যেকেই আপন-আপন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সচেষ্ট হয়, তবে পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত কার্যকর করার দ্বারা আসমান-যমীনের শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে যেত। এ দলীলের অন্য রকম ব্যাখ্যাও করা যায়। যেমন, যারা আসমান ও যমীনের জন্য ভিন্ন-ভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলে, তারা কি বিশ্ব জগতের ব্যবস্থাপনার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না? তা করলে তাদের এ আকীদা আপনিই বাতিল সাব্যস্ত হত। কেননা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সমগ্র জগত একই নিয়ম নিগড়ে বাঁধা, একই সূত্রে গাথা। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র থেকে শুরু করে নদী-সাগর, পাহাড়-পর্বত, উদ্ভিদ ও জড় পদার্থ পর্যন্ত সব কিছুই সুসমঞ্জস; কোথাও একটু বৈসাদৃশ্য নেই। এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে এগুলো একই ইচ্ছার প্রতিফলন এবং একই পরিকল্পনার অধীনে এরা নিজ-নিজ কাজে নিয়োজিত। আসমান ও যমীনের মালিক আলাদা হলে মহাবিশ্বের এই ঐকতান সম্ভব হত না, সর্বত্র এমন সাজুয্য থাকত না। বরং নানা ক্ষেত্রে নানা রকম অসঙ্গতি দেখা দিত। ফলে বিশ্ব জগতে ঘটত মহা বিপর্যয়।


২৩


لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ


লা-ইউছআলু‘আম্মা-ইয়াফ‘আলুওয়া হুম ইউছআলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি যা-কিছু করেন, সেজন্য কারও কাছে তাঁর জবাবদিহি করতে হবে না, কিন্তু সকলকেই তাঁর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি যা করেন, তৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না ; বরং এদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।


তাফসীরঃ

১২. কেননা আল্লাহ তাআলা সকলের মালিক ও মনিব। মালিক নিজ মালিকানাধীন জিনিসে যা ইচ্ছা করতে পারে। আর তিনি যেহেতু সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময় তার নিজ জ্ঞান-প্রজ্ঞা অনুযায়ী তিনি যা করেন যথার্থই করে থাকেন। সুতরাং তার কাজে জবাবদিহিতার প্রশ্নই আসে না। পক্ষান্তরে মানুষ যেহেতু তাঁর বান্দা। তাদের উপর তাঁর পক্ষ হতে বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তাই সে দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এক হাদীসে আছে, ‘জেনে রেখ, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই নিজ দায়িত্ব সম্পকে জিজ্ঞেস করা হবে’। -অনুবাদক


২৪


أَمِ اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً ۖ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ ۖ هَـٰذَا ذِكْرُ مَن مَّعِيَ وَذِكْرُ مَن قَبْلِي ۗ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ ۖ فَهُم مُّعْرِضُونَ


আমিত তাখাযূমিন দূ নিহীআ-লিহাতান কুল হা-তূবুরহা-নাকুম হা-যা-যিকরু মাম মা‘ইয়া ওয়া যিকরু মান কাবলী বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূনাল হাক্কা ফাহুম মু‘রিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি তারা তাকে ছেড়ে অন্য সব মাবুদ গ্রহণ করেছে? (হে নবী!) তাদেরকে বল, নিজেদের দলীল পেশ কর। এই তো (বর্তমান) রয়েছে (কুরআন, যা) আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য উপদেশবাণী এবং রয়েছে (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ, যা) আমার পূর্বে যারা ছিল তাদের উপদেশবাণী। ১৩ কিন্তু বাস্তবতা হল, তাদের অধিকাংশেই সত্যে বিশ্বাস করে না, ফলে তারা মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কি তাঁকে ব্যতীত বহু ইলাহ্ গ্রহণ করেছে ? বল, ‘তোমরা তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। এটাই, আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্যে উপদেশ এবং এটাই উপদেশ ছিল আমার পূর্ববর্তীদের জন্যে।’ কিন্তু এদের অধিকাংশই প্রকৃত সত্য জানে না, ফলে এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়।


তাফসীরঃ

১৩. আল্লাহ তাআলা যে এক, এর এক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ তো পূর্বের আয়াতে বর্ণিত হয়েছে এবং উপরের টীকায় তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে। এবার এ আয়াতে নকলী (বর্ণনানির্ভর) দলীল বর্ণিত হচ্ছে যে, সমস্ত আসমানী কিতাবে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে যে বিষয়টা বর্ণিত হয়েছে, তা হল তাওহীদের আকীদা। কুরআন মাজীদে তো বটেই, এর আগেও যত কিতাব নাযিল করা হয়েছে, এ আকীদাই ছিল সবগুলোর প্রধান প্রতিপাদ্য। [এ কালের উপদেশবাণী কুরআনও সামনে আছে। এতে চোখ বুলালে তোমরা তাওহীদের শিক্ষাই পাবে। আর পূর্বে যেসব উপদেশবাণী নাযিল হয়েছিল, যেমন তাওরাত, যাবূর, ইনজীল ইত্যাদি, তাতে হাজারও বিকৃতি সত্ত্বেও ভালোভাবে লক্ষ করলে তাওহীদের কথাই পাবে। তা সত্ত্বেও কিসের ভিত্তিতে তোমরা শিরকের পথে চলছ? উল্লেখ্য, هٰذا দ্বারা ইশারা করা হয়েছে কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাবের প্রতি। এ ছাড়া এর ইঙ্গিত তাওহীদের প্রতিও হতে পারে, যে সম্পর্কে আলোচনা চলছে। সে হিসেবে তরজমা হবে ‘ইহাই (অর্থাৎ এই একত্ববাদের কথাই) আমার সঙ্গে যারা আছে তাদের জন্য উপদেশ এবং ইহাই উপদেশ ছিল আমার পূর্ববর্তীদের জন্য’। -অনুবাদক]


২৫


وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ


ওয়ামাআরছালনা-মিন কাবলিকা মির রাছূলিন ইল্লা-নূহীইলাইহি আন্নাহূলাইলা-হা ইল্লাআনা-ফা‘বুদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল পাঠাইনি, যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর’।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল প্রেরণ করি নাই তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, ‘আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই; সুতরাং আমারই ‘ইবাদত কর।’


২৬


وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَـٰنُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۚ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ


ওয়া কা-লুততাখাযার রাহমা-নুওয়ালাদান ছুবহা-নাহূ বাল ‘ইবা-দুম মুকরামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলে, রহমান (আল্লাহ) সন্তান গ্রহণ করেছেন ১৪ (আর তাঁর সন্তান হল ফিরিশতাগণ)। সুবহানাল্লাহ! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছে। তাঁর জন্য কখনও ইহা যোগ্য নয়; বরং তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলে, ‘দয়াময় আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান ! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।


তাফসীরঃ

১৪. আরবগণ ফিরিশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলত। আয়াতে সেটাই রদ করা হয়েছে।


২৭


لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ


লা-ইয়াছবিকূ নাহূবিলকাওলি ওয়া হুম বিআমরিহী ইয়া‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তাঁকে ডিঙিয়ে কোন কথা বলে না এবং তারা তাঁর আদেশ মতই কাজ করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা আগে বাড়িয়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে।


২৮


يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ وَهُم مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ


ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়ালা-ইয়াশফা‘ঊনা ইল্লালিমানিরতাদা-ওয়া হুম মিন খাশইয়াতিহী মুশফিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তাদের সম্মুখ ও পিছনের সবকিছু জানেন। তারা কারও জন্য সুপারিশ করতে পারে না, কেবল তাদের ছাড়া, যাদের জন্য আল্লাহর পছন্দ হয়। তারা তাঁর ভয়ে থাকে ভীত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে, তা তিনি জানেন। তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের সামনে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু এদের জন্যে যাদের প্রতি তিনি সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।


২৯


۞ وَمَن يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَـٰهٌ مِّن دُونِهِ فَذَٰلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ


ওয়া মাইঁ ইয়াকুল মিনহুম ইন্নীইলা-হুম মিন দূ নিহী ফাযা-লিকা নাজঝীহি জাহান্নামা কাযা-লিকা নাজঝিজ্জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের মধ্যে কেউ যদি এমন কথা বলেও (যদিও সেটা অসম্ভব) যে, ‘আল্লাহ ছাড়া আমিও একজন মাবুদ’, তবে আমি তাকে জাহান্নামের শাস্তি দেব। এরূপ জালেমদেরকে আমি এভাবেই শাস্তি দেই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের মধ্যে যে বলবে, ‘আমিই ইলাহ্ তিনি ব্যতীত,’ তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম ; এভাবেই আমি জালিমদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি।


৩০


أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا ۖ وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ ۖ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ


আওয়ালাম ইয়ারাল্লাযীনা কাফারূআন্নছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা কা-নাতা-রাতকান ফাফাতাকনা-হুমা- ওয়া জা‘আলনা-মিনাল মাই কুল্লা শাইয়িন হাইয়ি আফালাইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা কি জানে না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী রুদ্ধ ছিল, তারপর আমি তা উন্মুক্ত করি ১৫ এবং পানি হতে প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করি? ১৬ তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, এরপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম ; এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবু কি এরা ঈমান আনবে না ?


তাফসীরঃ

১৫. এ আয়াত পরিষ্কার করে দিয়েছে, প্রতিটি প্রাণীর সৃজনে পানির কিছু না কিছু ভূমিকা আছে।


১৬. অধিকাংশ মুফাসসিরে কেরামের তাফসীর অনুযায়ী ‘আকাশমণ্ডলীর রুদ্ধ থাকা’ এর অর্থ হল, তা থেকে বৃষ্টি বর্ষিত না হওয়া আর ‘পৃথিবীর রুদ্ধ থাকা’ এর অর্থ তাতে কোন কিছু উৎপন্ন না হওয়া। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এ দু’টোকে উন্মুক্ত করেছেন, অর্থাৎ আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু করলেন এবং ভূমিতে বিভিন্ন ফল-ফসল উৎপন্ন করতে লাগলেন। বহু সাহাবী ও তাবেয়ী থেকে এরূপ ব্যাখ্যা বর্ণিত আছে। কিন্তু কোন কোন মুফাসসির তাফসীর করেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরস্পর মিলিত ছিল, এদের আলাদা-আলাদা সত্তা ছিল না। পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা এদেরকে পৃথক করে দেন।


৩১


وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ


ওয়া জা‘আলনা-ফিল আরদিরাওয়া-ছিয়া আন তামীদা বিহিম ওয়া জা‘আলনা ফীহাফিজাজান ছুবুলাল লা‘আল্লাহুম ইয়াহতাদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি পৃথিবীতে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত পাহাড় সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদেরকে নিয়ে তা দোল না খায় ১৭ এবং তাতে তৈরি করেছি প্রশস্ত রাস্তা, যাতে তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী এদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায় এবং আমি এতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ, যাতে এরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছিতে পারে।


তাফসীরঃ

১৭. কুরআন মাজীদ একাধিক জায়গায় উল্লেখ করেছে, প্রথমে যখন পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয়, তখন তা দোল খাচ্ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা বড় বড় পাহাড়-পর্বত তার উপর স্থাপিত করেন। ফলে পৃথিবী স্থির হয়ে যায়। শত-শত বছর পরে এসে আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করছে যে, বড়-বড় মহাদেশ এখনও সাগরের পানিতে মৃদু সঞ্চরণ করছে, কিন্তু সেটা এতই মৃদু যা সাধারণভাবে অনুভব করা যায় না।


৩২


وَجَعَلْنَا السَّمَاءَ سَقْفًا مَّحْفُوظًا ۖ وَهُمْ عَنْ آيَاتِهَا مُعْرِضُونَ


ওয়া জা‘আলনাছছামাআ ছাকফাম মাহফূজাওঁ ওয়া হুম ‘আন আ-য়া-তিহা মু‘রিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি আকাশকে করেছি এক সুরক্ষিত ছাদ। ১৮ কিন্তু তারা আকাশের নিদর্শনসমূহ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু এরা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে লয়।


তাফসীরঃ

১৮. অর্থাৎ ছাদসদৃশ আকাশকে এমনই সুরক্ষিত করেছেন, যা ধ্বসে যাওয়ার বা ভেঙ্গে-চুরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনিভাবে শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকেও তা সংরক্ষিত। শয়তান তাতে পৌঁছতেই পারবে না।


৩৩


وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ


ওয়াহুয়াল্লাযী খালাকাল লাইলা-ওয়ান্নাহা-রা ওয়াশ শামছা ওয়াল কামারা কুল্লুন ফী ফালাকিইঁ ইয়াছবাহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকেই কোনও না কোনও কক্ষপথে সাঁতার কাটছে। ১৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিবস এবং সূর্য ও চন্দ্র ; প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।


তাফসীরঃ

১৯. ‘কক্ষপথে সাঁতার কাটছে’। কুরআন মাজীদে ব্যবহৃত শব্দ হল فَلَكٌ যার প্রকৃত অর্থ বৃত্ত। এ আয়াত যখন নাযিল হয়েছে, তখন জ্যোতির্বিজ্ঞানে টলেমিক মতবাদের জয়-জয়কার। টলেমির মতে চন্দ্র, সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র আকাশমণ্ডলের সাথে সংস্থাপিত। ফলে আকাশের ঘুর্ণনের সাথে নক্ষত্ররাজিও অনিবার্যভাবে ঘুরছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে যে শব্দমালা ব্যবহার করেছেন, তা টলেমির চিন্তাধারার সাথে পুরোপুরি খাপ খায় না। বরং এ আয়াতের বক্তব্য মতে প্রতিটি নক্ষত্রের নিজস্ব গতিপথ আছে। প্রত্যেকে আপন-আপন গতিপথে সন্তরণ করছে। ‘সন্তরণ করা’ শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এর দ্বারা এটাই প্রকাশ যে, তারা শূন্যমণ্ডলে আবর্তন করছে। ‘গ্রহ-নক্ষত্ররা শূন্যমণ্ডলে আবর্তন করছে’ এই যে তত্ত্ব কুরআন মাজীদ বহু পূর্বেই জানিয়ে রেখেছে, বিজ্ঞানের এখানে পৌঁছতে অনেক দিন লেগেছে।


৩৪


وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ ۖ أَفَإِن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ


ওয়ামা-জা‘আলনা-লিবাশারিম মিন কাবলিকাল খুলদা আফাইম মিত্তা ফাহুমুল খা-লিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমি তোমার আগেও কোন মানুষের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকার ফায়সালা করিনি। ২০ সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করি নাই ; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে এরা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে ?


তাফসীরঃ

২০. সূরা ‘তূর’ (৫২ : ৩০)-এ আছে, মক্কার কাফেরগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলত, আমরা তার মৃত্যুর অপেক্ষা করছি। বোঝাতে চাচ্ছিল, তাঁর ইন্তিকালে তারা আনন্দ উদযাপন করবে। তারই উত্তরে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মরণ সকলেরই হবে। যারা আনন্দ উদযাপনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে, তারা নিজেরা কি মৃত্যু এড়াতে পারবে?


৩৫


كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ


কুল্লুনাফছিন যাইকাতুল মাওতি ওয়া নাবলূকুম বিশশাররি ওয়াল খাইরি ফিতনাতাও ওয়া ইলাইনা-তুর জা‘ঊন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

জীবমাত্রকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমি পরীক্ষা করার জন্য তোমাদেরকে মন্দ ও ভালোতে লিপ্ত করি, এবং ২১ তোমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরিয়ে আনা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দিয়ে বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যানীত হবে।


তাফসীরঃ

২১. অর্থাৎ আমি যে মানুষকে সুখ ও দুঃখ, বিপদ ও স্বস্তি, সুস্বাস্থ্য ও রুগ্নাবস্থা, দৈন্য ও সম্পন্নতা ইত্যাদি ভালো-মন্দ অবস্থাসমূহ দিয়ে থাকি, এর উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা। অর্থাৎ যাচাই করে দেখা কে মন্দ অবস্থায় সবর করে আর ভালো অবস্থায় শুকর করে আর কে মন্দ অবস্থায় অধৈর্য হয়ে তাকদীরকে দোষারোপ করে ভালো অবস্থায় উল্লসিত হয়ে অকৃতজ্ঞতা ও অহমিকায় লিপ্ত হয়। মোটকথা পরীক্ষার ভেতর আছে সকলেই এবং সে দৃষ্টিতে তোমাদের কেউ কারও অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নও। একদিন তোমাদের সকলকেই আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপিত হবে সেদিনই। সুতরাং যে ব্যক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, অর্থাৎ ভালো অবস্থায় শুকর ও মন্দ অবস্থায় সবর করবে সেই আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ গণ্য হবে এবং যে ব্যক্তির অবস্থা হবে এর বিপরীত সে দুনিয়ায় যে হালেই থাকুক এবং নিজের ও অন্যদের দৃষ্টিতে যে মান-মর্যাদারই হোক আল্লাহর কাছে তার কোন মূল্য থাকবে না। -অনুবাদক


৩৬


وَإِذَا رَآكَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَـٰذَا الَّذِي يَذْكُرُ آلِهَتَكُمْ وَهُم بِذِكْرِ الرَّحْمَـٰنِ هُمْ كَافِرُونَ


ওয়া ইযা-রাআ-কাল্লাযীনা কাফারূইয়ঁইয়াত্তাখিযূনাকা ইল্লা-হুঝুওয়ান আহাযাল্লাযী ইয়াযকুরু আ-লিহাতাকুম ওয়া হুম বিযিকরির রাহমা-নি হুম কা-ফিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তাদের কাজ হয় কেবল তোমাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা। (তারা বলে,) এই লোকই কি সেই, যে তোমাদের উপাস্যদের সমালোচনা করে (অর্থাৎ বলে, এদের কোন ভিত্তি নেই)। অথচ তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) অবস্থা হল, তারা ‘রহমান’-এর উল্লেখ করার বিরোধী। ২২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা যখন আপনাকে দেখে তখন আপনার সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ থাকে না, একি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করে? এবং তারাই তো রহমান’ এর আলোচনায় অস্বীকার করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কাফিররা যখন তোমাকে দেখে তখন এরা তোমাকে কেবল বিদ্রুপের পাত্ররূপেই গ্রহণ করে। এরা বলে, ‘এই কি সেই, যে তোমাদের দেব-দেবীগুলির সমালোচনা করে ?’ অথচ এরাই তো ‘রহমান’-এর উল্লেখের বিরোধিতা করে।


তাফসীরঃ

২২. অর্থাৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেব-দেবীর প্রভুত্ব যে ভিত্তিহীন একথা প্রচার করলে তারা এটাকে তাঁর একটা বড় দোষ গণ্য করছিল এবং বলছিল, তিনি আমাদের উপাস্যদের সমালোচনা করেন। অথচ তাদের নিজেদের অবস্থা হল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহ তাআলার ‘রহমান’ নামটি উল্লেখ করতেন, তখন তারা আপত্তি জানাত এবং বলত, রহমান আবার কী? দেখুন সূরা ফুরকান (২৫ : ৬০)।


৩৭


خُلِقَ الْإِنسَانُ مِنْ عَجَلٍ ۚ سَأُرِيكُمْ آيَاتِي فَلَا تَسْتَعْجِلُونِ


খুলিকাল ইনছা-নুমিন ‘আজালিন ছাঊরীকুম আ-য়া-তী ফালা-তাছতা‘জিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ত্বরাপ্রবণ করে। আমি অচিরেই তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ত্বরা চেও না। ২৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সৃষ্টিগত ভাবে মানুষ ত্বরাপ্রবণ, আমি সত্তরই তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব। অতএব আমাকে শীঘ্র করতে বলো না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ত্বরাপ্রবণ, শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব; সুতরাং তোমরা আমাকে ত্বরা করতে বল না।


তাফসীরঃ

২৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দুনিয়া বা আখেরাতের শাস্তি সম্পর্কে মানুষকে সাবধান করতেন, তখন কাফেরগণ তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। তারা বলত, বেশ তো সেই শাস্তি এখনই নিয়ে এসো না! এ আয়াতসমূহে তারই জবাব দেওয়া হয়েছে।


৩৮


وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ


ওয়া-ইয়াকূ লূনা মাতা-হা-যাল ও‘দুইন কুনতুম সা-দিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (মুসলিমদেরকে) বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে বল, (শাস্তির) এ ধমকি কবে পূর্ণ হবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তারা বলেঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে এই ওয়াদা কবে পুর্ণ হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এরা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে?’


৩৯


لَوْ يَعْلَمُ الَّذِينَ كَفَرُوا حِينَ لَا يَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ النَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمْ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ


লাও ইয়া‘লামুল্লাযীনা কাফারূহীনা লা-ইয়াকুফফূনা ‘আওঁউজুহিহিমুন্না-রা ওয়ালা-‘আন জু হূরিহিম ওয়ালা-হুম ইউনসারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হায়! কাফিরগণ যদি সেই সময়ের কথা জানত, যখন তারা তাদের চেহারা থেকে আগুন ফেরাতে পারবে না এবং তাদের পিঠ থেকেও নয় এবং তারা কোন সাহায্যও লাভ করবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি কাফেররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হায়, যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন এরা এদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং এদেরকে সাহায্য করাও হবে না!


৪০


بَلْ تَأْتِيهِم بَغْتَةً فَتَبْهَتُهُمْ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ


বাল তা’তীহিম বাগতাতান ফাতাবহাতুহুম, ফালা-ইয়াছতাতী‘উনা রাদ্দাহা-ওয়া লা-হুম ইউনজারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বরং তা (অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন) তাদের কাছে আসবে অতর্কিতভাবে এবং তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে, ফলে না তারা তা হটাতে পারবে এবং না তাদেরকে কিছুমাত্র অবকাশ দেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিত ভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বস্তুত তা এদের ওপর আসবে অতর্কিতভাবে এবং এদেরকে হতভম্ব করে দিবে। ফলে এরা তা রোধ করতে পারবে না এবং এদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না।


৪১


وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ


ওয়ালাকাদিছ তুহঝিআ বিরুছুলিম মিন কাবলিকা ফাহা-কাবিল্লাযীনা ছাখিরূমিনহুম মাকা-নূবিহী ইয়াছতাহঝিউন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার পূর্বেও রাসূলগণকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল। পরিশেষে তারা তাদেরকে যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, সেটাই তাদেরকে পরিবেষ্টন করে ফেলে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বেও অনেক রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা করত তা উল্টো ঠাট্টাকারীদের উপরই আপতিত হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছিল ; পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তা বিদ্রুপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল।


৪২


قُلْ مَن يَكْلَؤُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ مِنَ الرَّحْمَـٰنِ ۗ بَلْ هُمْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِم مُّعْرِضُونَ


কুল মাই ইয়াকলাউকুম বিল লাইলি ওয়ান নাহা-রি মিনার রাহমা-নি বাল হুম ‘আন যিকরি রাব্বিহিম মু‘রিদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বল, রাতে ও দিনে কে তোমাদেরকে রহমান (-এর আযাব) থেকে রক্ষা করবে। বরং তারা নিজ প্রতিপালকের স্মরণ থেকে বিমুখ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ ‘রহমান’ থেকে কে তোমাদেরকে হেফাযত করবে রাত্রে ও দিনে। বরং তারা তাদের পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘রহমান হতে কে তোমাদেরকে রক্ষা করবে রাত্রিতে ও দিবসে ?’ তবুও এরা এদের প্রতিপালকের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।


৪৩


أَمْ لَهُمْ آلِهَةٌ تَمْنَعُهُم مِّن دُونِنَا ۚ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَ أَنفُسِهِمْ وَلَا هُم مِّنَّا يُصْحَبُونَ


আম লাহুম আ-লিহাতুন তামনা‘উহুম মিন দূ নিনা- লা ইয়াছতাতী‘উনা নাছরা আনফুছিহিম ওয়ালা-হুম মিন্না-ইউছহাবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি তাদের জন্য আমি ছাড়া এমন কোন মাবুদও আছে, যে তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? তারা তো নিজেদেরই কোন সাহায্য করতে পারে না এবং আমার মুকাবিলায় কেউ তাদের সহযোগিতা করার ক্ষমতা রাখে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন দেব-দেবী আছে যারা তাদেরকে রক্ষা করবে? তারা তো নিজেদেরই সাহায্য করতে সক্ষম নয় এবং তারা আমার মোকাবেলায় সাহায্যকারীও পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তবে কি আমি ব্যতীত এদের এমন দেব-দেবীও আছে যারা এদেরকে রক্ষা করতে পারে ? এরা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে এদের সাহায্যকারীও থাকবে না।


৪৪


بَلْ مَتَّعْنَا هَـٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ طَالَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ ۗ أَفَلَا يَرَوْنَ أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ أَفَهُمُ الْغَالِبُونَ


বাল মাত্তা‘না-হাউলাই ওয়া আ-বাআহুম হাত্তা-তা-লা ‘আলাইহিমুল ‘উমরু আফালা-ইয়ারাওনা আন্না-না’তিল আরদা নানকুসুহা-মিন আতরা-ফিহা- আফাহুমুল গা-লিবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

প্রকৃত ব্যাপার হল, আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম, এমনকি (এ অবস্থায়ই) তাদের আয়ুষ্কাল হয়ে যায় দীর্ঘ, ২৪ তবে কি তারা দেখতে পাচ্ছে না আমি ভূমিকে তার চতুর্দিক থেকে সঙ্কুচিত করে আনছি? ২৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে ভোগসম্বার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের আয়ুস্কালও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে হ্রাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বস্তুত আমিই এদেরকে এবং এদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগসম্ভার দিয়েছিলাম ; অধিকন্তু এদের আয়ুষ্কালও হয়েছিল দীর্ঘ। এরা কি দেখতেছে না যে, আমি এদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে আনতেছি। তবুও কি এরা বিজয়ী হবে ?


তাফসীরঃ

২৪. এ আয়াতে যে ভূমি সংকোচনের কথা বলা হয়েছে এই একই কথা সূরা রাদ (১৩ : ৪১)-এও চলে গেছে। এর মানে আরব উপদ্বীপের চতুর্দিক থেকে শিরক ও কুফরের প্রভাব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে এবং ইসলাম ক্রমবিস্তার লাভ করছে ও মুসলিমদের প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।


২৫. অর্থাৎ আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাদেরকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছিলাম, তারা সুদীর্ঘকাল তা দ্বারা মজা লুটতে থাকে। তারা মনে করছিল সেটা তাদের অধিকার এবং তারা যা-কিছু করছে ঠিকই করছে। এই অহমিকা ও আত্মপ্রবঞ্চনাই তাদের সত্য প্রত্যাখ্যানের কারণ।


৪৫


قُلْ إِنَّمَا أُنذِرُكُم بِالْوَحْيِ ۚ وَلَا يَسْمَعُ الصُّمُّ الدُّعَاءَ إِذَا مَا يُنذَرُونَ


কুল ইন্নামাউনযিরুকুম বিল ওয়াহয়ি ওয়ালা-ইয়াছমা‘উসসুম্মুদ দু‘আআ ইযা-মাইউনযারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আমি তো কেবল ওহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু যারা বধির, তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা কোন ডাক শোনে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমি তো কেবল ওহীর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু বধিরদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সে সতর্কবাণী শোনে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমি তো কেবল ওহী দিয়েই তোমাদেরকে সতর্ক করি’, কিন্তু যারা বধির তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয় তখন তারা সতর্কবাণী শুনে না।


৪৬


وَلَئِن مَّسَّتْهُمْ نَفْحَةٌ مِّنْ عَذَابِ رَبِّكَ لَيَقُولُنَّ يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ


ওয়ালাইম মাছছাতহুম নাফহাতুমমিন‘আযা-বি রাব্বিকা লাইয়াকূলুন্না ইয়াওয়াইলানাইন্না-কুন্না-জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালকের শাস্তির একটা ঝাপটাও যদি তাদের লাগত, তবে তারা বলে ওঠত, হায় আমাদের দুর্ভোগ! বাস্তবিকই আমরা জালেম ছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তার আযাবের কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা বলতে থাকবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালকের শাস্তির কিছুমাত্রও এদেরকে স্পর্শ করলে এরা নিশ্চয়ই বলে উঠবে, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা তো ছিলাম জালিম !’


৪৭


وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ۖ وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَاسِبِينَ


ওয়া নাদা‘উল মাওয়া-ঝীনাল কিছতা লিইয়াওমিল কিয়া-মাতি ফালা-তুজলামুনাফছুন শাইআ- ওয়া ইন কা-না মিছকা-লা হাব্বাতিম মিন খারদালিন আতাইনা-বিহা- ওয়াকাফা-বিনা-হা-ছিবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়ানুগ তুলাদণ্ড স্থাপন করব। ২৬ ফলে কারও প্রতি কোন জুলুম করা হবে না। যদি কোন কর্ম তিল পরিমাণও হয়, তবে তাও আমি উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয় তবু তা আমি উপস্থিত করব ; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।


তাফসীরঃ

২৬. এ আয়াত স্পষ্ট জানাচ্ছে, কিয়ামতের দিন কেবল এতটুকুই নয় যে, সমস্ত মানুষের প্রতি ইনসাফ করা হবে, বরং সে ইনসাফ যাতে সমস্ত মানুষের নজরে আসে সে ব্যবস্থাও করা হবে। এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা সর্বসমক্ষে তুলাদণ্ড স্থাপন করবেন। তাতে মানুষের আমল পরিমাপ করা হবে এবং আমলের ওজন অনুসারে মানুষের পরিণাম স্থির করা হবে। মানুষ যে আমলই করে, দুনিয়ায় যদিও তার কোন বস্তুগত অস্তিত্ব দেখা যায় না এবং তার কোন ওজনও অনুভূত হয় না, কিন্তু আখেরাতে আল্লাহ তাআলা পরিমাপের এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন যা দ্বারা আমলের প্রকৃত অবস্থা স্পষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ যদি শীত ও তাপ মাপার জন্য নতুন-নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়, মানুষের স্রষ্টা বুঝি তাদের কর্ম পরিমাপের ব্যবস্থা করতে পারবেন না? আলবত পারবেন। তিনি অসীম ক্ষমতার মালিক।


৪৮


وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ وَهَارُونَ الْفُرْقَانَ وَضِيَاءً وَذِكْرًا لِّلْمُتَّقِينَ


ওয়া লাকাদ আ-তাইনা-মূছা-ওয়া হা-রূনাল ফুরকা-না ওয়া দিয়াআওঁ ওয়া যিকরাল লিলমুত্তাকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মূসা ও হারূনকে দিয়েছিলাম সত্য ও মিথ্যার এক মানদণ্ড, (হিদায়াতের) আলো ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ, ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি মূসা ও হারুণকে দান করেছিলাম মীমাংসাকারী গ্রন্থ, আলো ও উপদেশ, আল্লাহ ভীরুদের জন্যে


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো মূসা ও হারূনকে দিয়েছিলাম ‘ফুরকান’, জ্যোতি ও উপদেশ মুত্তাকীদের জন্যে-


তাফসীরঃ

২৭. অর্থাৎ তাওরাত গ্রন্থ, যা ছিল সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় ও সুপথ-কুপথের পার্থক্যকারী, অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টাতায় জ্ঞান ও হিদায়াতের আলোদানকারী এবং যারা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে চলে, তাদের জন্য উপদেশ-অনুশাসন সরবরাহকারী। -অনুবাদক


৪৯


الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَهُم مِّنَ السَّاعَةِ مُشْفِقُونَ


আল্লাযীনা ইয়াখশাওনা রাব্বাহুম বিলগাইবি ওয়া হুম মিনাছছা-‘আতি মুশফিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা নিজ প্রতিপালককে না দেখেও ভয় করে এবং কিয়ামত সম্পর্কে যারা ভীত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা না দেখেই তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা না দেখেও তাদের প্রতিপালককে ভয় করে এবং তারা কিয়ামত সম্পর্কে ভীত-সন্ত্রস্ত।


৫০


وَهَـٰذَا ذِكْرٌ مُّبَارَكٌ أَنزَلْنَاهُ ۚ أَفَأَنتُمْ لَهُ مُنكِرُونَ


ওয়া হা-যা-যিকরুমমুবা-রাকুন আনঝালনা-হু আফাআনতুম লাহূমুনকিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা (অর্থাৎ এই কুরআন) বরকতময় উপদেশবাণী, যা আমি নাযিল করেছি, তবুও কি তোমরা একে অস্বীকার কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং এটা একটা বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। অতএব তোমরা কি একে অস্বীকার কর?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা কল্যাণময় উপদেশ ; আমি এটা অবতীর্ণ করেছি। তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার কর ?


৫১


۞ وَلَقَدْ آتَيْنَا إِبْرَاهِيمَ رُشْدَهُ مِن قَبْلُ وَكُنَّا بِهِ عَالِمِينَ


ওয়া লাকাদ আ-তাইনাইবরা-হীমা রুশদাহূমিন কাবলুওয়া কুন্না-বিহী ‘আ-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এর আগে আমি ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার (উপযুক্ত) বুদ্ধিমত্তা। আমি তার সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত ছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর, আমি ইতিপূর্বে ইব্রাহীমকে তার সৎপন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত ও ছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো এটার পূর্বে ইব্রাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম সম্যক পরিজ্ঞাত।


৫২


إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ مَا هَـٰذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ


ইযকা-লা লিআবীহি ওয়া কাওমিহী মা-হা-যিহিততামা-ছীলুল্লাতীআনতুম লাহা-‘আকিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন সে নিজ পিতা ও নিজ সম্প্রদায়কে বলেছিল, এই মূর্তিগুলি কী, যার সামনে তোমরা ধর্না দিয়ে বসে থাক?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, ‘এই মূর্তিগুলি কী, যাদের পূজায় তোমরা রত রয়েছ!’


৫৩


قَالُوا وَجَدْنَا آبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ


কা-লূওয়াজাদনাআ-বাআনা-লাহা-‘আ-বিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমরা আমাদের পিতৃপুরুষগণকে এদের পূজা করতে দেখেছি।’


৫৪


قَالَ لَقَدْ كُنتُمْ أَنتُمْ وَآبَاؤُكُمْ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ


কা-লা লাকাদ কুনতুম আনতুম ওয়া আ-বাউকুম ফী দালা-লিম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবরাহীম বলল, প্রকৃতপক্ষে তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের বাপ-দাদাগণ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত রয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষগণও রয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।’


৫৫


قَالُوا أَجِئْتَنَا بِالْحَقِّ أَمْ أَنتَ مِنَ اللَّاعِبِينَ


কা-লূআজি’তানা-বিলহাক্কিআম আনতা মিনাল্লা-‘ইবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, তুমি কি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছ, না আমাদের সাথে পরিহাস করছ? ২৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য এনেছ, না তুমি কৌতুক করছো ?’


তাফসীরঃ

২৮. তাদের দেব-দেবী সম্পর্কে এরূপ কথা কেউ বলতে পারে এটা তাদের কল্পনায়ও ছিল না। তাই প্রথম দিকে তাদের সন্দেহ হয়েছিল হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম একথা হয়তবা পরিহাস ছলে বলছেন।


৫৬


قَالَ بَل رَّبُّكُمْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ


কা-লা বার রাব্বুকুম রাব্বুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিল্লাযী ফাতারাহুন্না ওয়া আনা ‘আলা-যা-লিকুম মিনাশশা-হিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবরাহীম বলল, না তোমাদের প্রতিপালক তো তিনিই, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিক, যিনি এদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দান করছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘না, তোমাদের প্রতিপালক তো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক, যিনি এদের সৃষ্টি করেছেন এবং এই বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী।’


৫৭


وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنَامَكُم بَعْدَ أَن تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ


ওয়া তাল্লা-হি লাআকীদান্না আসনা-মাকুম বা‘দা আন তুওয়াললূমুদবিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর কসম! তোমরা যখন পিছন ফিরে চলে যাবে, তখন তোমাদের মূর্তিদের উপর (এমন) কৌশল খাটাব (যা দ্বারা তাদের স্বরূপ উন্মোচন হয়ে যাবে)।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘শপথ আল্লাহ্ র , তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলি সম্বন্ধে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব।’


৫৮


فَجَعَلَهُمْ جُذَاذًا إِلَّا كَبِيرًا لَّهُمْ لَعَلَّهُمْ إِلَيْهِ يَرْجِعُونَ


ফাজা‘আলাহুম জুযা-যান ইল্লা-কাবীরাল লাহুম লা‘আল্লাহুম ইলাইহি ইয়ারজি‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং সবগুলো মূর্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলল তাদের প্রধানটি ছাড়া, যাতে তারা তার কাছে রুজূ করতে পারে। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ব্যতীতঃ যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল মূর্তিগুলিকে, এদের প্রধানটি ব্যতীত ; যাতে এরা তার দিকে ফিরে আসে।


তাফসীরঃ

২৯. এটা ছিল তাদের কোন উৎসবের দিন, যে দিন সমস্ত নগরবাসী আনন্দ উদযাপনের জন্য বাইরে চলে যেত, যেমন সূরা সাফফাতে আসবে (৩৭ : ৮৮-৮৯)। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের সাথে যেতে অপারগতা প্রদর্শন করেছিলেন। তারপর যখন সকলে শহরের বাইরে চলে গেল, তিনি দেবালয়ে ঢুকে সবগুলো মূর্তি ভেঙ্গে ফেললেন। শুধু একটি মূর্তি রেখে দিলেন, যেটি ছিল সকলের বড়। কোন কোন রেওয়ায়াতে আছে, যে কুড়ালটি দিয়ে তাদেরকে ভেঙ্গেছিলেন, সেটিও তিনি বড়টির গলায় ঝুলিয়ে দিলেন। এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল তাদের চোখ খুলে দেওয়া, যাতে তারা নিজ চোখে মূর্তিদের অক্ষমতা ও অসহায়তা দেখতে পায় এবং তাদের চিন্তা করার সুযোগ হয়, যে মূর্তি নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে পারে না, সে অন্যের সাহায্য করবে কি করে? বড় মূর্তিটিকে কি কারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন, তা ৬৩নং আয়াতে বর্ণিত প্রশ্নোত্তর দ্বারা স্পষ্ট করা হয়েছে।


৫৯


قَالُوا مَن فَعَلَ هَـٰذَا بِآلِهَتِنَا إِنَّهُ لَمِنَ الظَّالِمِينَ


কা-লূমান ফা‘আলা হা-যা বিআ-লিহাতিনাইন্নাহূলামিনাজ্জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ আচরণ কে করল? নিশ্চয়ই সে ঘোর জালেম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এইরূপ করল কে ? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী।’


৬০


قَالُوا سَمِعْنَا فَتًى يَذْكُرُهُمْ يُقَالُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ


কা-লূছামি‘না ফাতাইঁ ইয়াযকুরুহুম ইউকা-লুলাহূইবরা-হীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিছু লোক বলল, আমরা এক যুবককে তাদের সমালোচনা করতে শুনেছি। তাকে ‘ইবরাহীম’ বলা হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কতক লোকে বললঃ আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইব্রাহীম বলা হয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কেউ কেউ বলল, ‘এক যুবককে এদের সমালোচনা করতে শুনেছি ; তাকে বলা হয় ইব্রাহীম।’


৬১


قَالُوا فَأْتُوا بِهِ عَلَىٰ أَعْيُنِ النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَشْهَدُونَ


কা-লূফা’তূবিহী ‘আলাআ‘ইউনিন্না-ছি লা‘আল্লাহুম ইয়াশহাদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, তবে তাকে জনসমক্ষে হাজির কর, যাতে সকলে সাক্ষী হয়ে যায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘তাকে উপস্থিত কর লোকসামনে, যাতে এরা প্রত্যক্ষ করতে পারে।’


৬২


قَالُوا أَأَنتَ فَعَلْتَ هَـٰذَا بِآلِهَتِنَا يَا إِبْرَاهِيمُ


কা-লূআআনতা ফা‘আলতা হা-যা-বিআ-লিহাতিনা ইয়াইবরা-হীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তারপর যখন ইবরাহীমকে নিয়ে আসা হল, তখন) তারা বলল হে ইবরাহীম! আমাদের উপাস্যদের সাথে এটা কি তুমিই করেছ?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ হে ইব্রাহীম তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল ‘হে ইব্রাহীম ! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এইরূপ করেছ ?’


৬৩


قَالَ بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَـٰذَا فَاسْأَلُوهُمْ إِن كَانُوا يَنطِقُونَ


কা-লা বাল ফা‘আলাহূ কাবীরুহুম হা-যা-ফাছআলূহুম ইন কা-নূইয়ানতিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবরাহীম বলল, বরং এটা করেছে তাদের এই বড়টি। এই প্রতিমাদেরকেই জিজ্ঞেস কর না- যদি তারা কথা বলতে পারে। ৩০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ না এদের এই প্রধানই তো একাজ করেছে। অতএব তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তারা কথা বলতে পারে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘বরং এদের এই প্রধান, সে-ই তো এটা করেছে, এদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি এরা কথা বলতে পারে।’


তাফসীরঃ

৩০. একথা বলে মূলত তাদের বিশ্বাসের প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছিল। তারা মনে করত তাদের দেব-দেবীগণ বড় বড় কাজ করার ক্ষমতা রাখে। সর্বপ্রধান প্রতিমাটি সম্পর্কে বিশ্বাস ছিল, ছোটগুলোর উপর সে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রাখে। তারই প্রতি কটাক্ষ করে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলেছিলেন, ‘এ কাজ করেছে তাদের এই বড়টি’। অর্থাৎ বড়টিকে যখন তোমরা ছোট প্রতিমাদের সর্দার মনে করছ আর সর্দার তো তার অধীনস্থদের রক্ষক হয়ে থাকে, তখন এটা হতেই পারে না যে, অন্য কেউ তাদেরকে ভেঙ্গেছে। কেননা কেউ তাদেরকে ভাঙতে চাইলে বড় মূর্তিটি অবশ্যই তাকে বাধা দিত এবং তাদেরকে হেফাজত করত। এটা কখনওই সম্ভব নয় যে, হামলাকারী তাদের এ রকম নাকাল করবে আর বড়টি বসে বসে তামাশা দেখবে। কাজেই তোমাদের বিশ্বাস মতে সম্ভাবনা থাকে একটাই। এই বড়টিই কোন কারণে তাদের উপর নারাজ হয়ে গেছে এবং সেই তাদেরকে ভেঙ্গেছে। এটা যে একটা বিদ্রূপাত্মক কথা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কাজেই এ কথার ভেতর বিভ্রান্তির কোন কারণ নেই। অপর দিকে ছোট মূর্তিগুলোও তাদের বিশ্বাস মতে ছোট হওয়া সত্ত্বেও দেবতা ছিল অবশ্যই। তাই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ। অর্থাৎ, তাদের এতটুকু ক্ষমতা তো থাকা চাই যে, তাদের সাথে যে কা- করা হয়েছে, অন্ততপক্ষে তারা তা তোমাদেরকে বলতে পারবে। কাজেই তাদেরকেই জিজ্ঞেস কর তাদের এ দশা কে ঘটিয়েছে।


৬৪


فَرَجَعُوا إِلَىٰ أَنفُسِهِمْ فَقَالُوا إِنَّكُمْ أَنتُمُ الظَّالِمُونَ


ফারাজা‘উইলাআনফুছিহিম ফাকা-লূইন্নাকুম আনতুমুজ্জা-লিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এ কথায় তারা আপন মনে চিন্তা করতে লাগল এবং (স্বগতভাবে) বলতে লাগল, প্রকৃতপক্ষে তোমরা নিজেরাই জালেম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর মনে মনে চিন্তা করল এবং বললঃ লোক সকল; তোমরাই বে ইনসাফ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন এরা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো সীমালংঘনকারী!’


৬৫


ثُمَّ نُكِسُوا عَلَىٰ رُءُوسِهِمْ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا هَـٰؤُلَاءِ يَنطِقُونَ


ছু ম্মা নুকিছূ‘আলা-রুঊছিহিম লাকাদ ‘আলিমতা মা-হাউলাই ইয়ানতিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর তারা তাদের মাথা নুইয়ে দিল এবং বলল, তুমি তো জানই তারা কথা বলতে পারে না। ৩১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর এদের মস্তক অবনত হয়ে গেল এবং এরা বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।’


তাফসীরঃ

৩১. হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম প্রতিমাদের প্রকৃত অবস্থা তাদের সামনে পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন, তা অত্যন্ত কার্যকর ছিল। তার ফলে তারা অন্ততপক্ষে এতটুকু চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে, আমরা আসলে কী করছি, কাদের পূজায় নিজেদের রত রাখছি। তবে কি আমরা ভুল করছি, আমাদের পূজা-অর্চনা সব কি অন্যায়? পরিশেষে তাদের অন্তর থেকে সাক্ষ্য উদগত হল, হা এসবই অন্যায়, ‘মূলত আমরাই জালেম’। তবে যুগ-যুগ ধরে লালিত বিশ্বাস ত্যাগ করার মত মনের জোরও তাদের ছিল না। লা-জবাব হয়ে তারা মাথা তো ঝুঁকিয়ে দিল, কিন্তু মচকাতে চাইল না। ভাব দেখাল যেন কোন ভুল তাদের নেই। বলল, এরা যে কথা বলে না সেটা তো আমরা আগে থেকেই জানি এবং তোমারও এটা অজানা নয়।


৬৬


قَالَ أَفَتَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمْ شَيْئًا وَلَا يَضُرُّكُمْ


কা-লা আফাতা‘বুদূনা মিন দূনিল্লা-হি মা-লা-ইয়ানফা‘উকুম শাইআওঁ ওয়ালা-ইয়াদু ররুকুম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর উপাসনা করছ, যা তোমাদের কিছু উপকারও করতে পারে না এবং তোমাদের ক্ষতিও করতে পারে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইব্রাহীম বলল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহ্ র পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদত কর যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না ?’


৬৭


أُفٍّ لَّكُمْ وَلِمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ أَفَلَا تَعْقِلُونَ


উফফিল্লাকুম ওয়া লিমা-তা‘বুদূ না মিন দূ নিল্লা-হি আফালা-তা‘কিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আফসোস তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহকে ছেড়ে যাদের ইবাদত করছ তাদেরও প্রতি। তোমাদের কি এতটুকু বোধও নেই?

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরই এবাদত কর, ওদের জন্যে। তোমরা কি বোঝ না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্ র পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদত কর তাদেরকে! তবুও কি তোমরা বুঝবে না ?’


৬৮


قَالُوا حَرِّقُوهُ وَانصُرُوا آلِهَتَكُمْ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ


কা-লূহাররিকূহু ওয়ানসুরূআ-লিহাতাকুম ইন কুনতুম ফা-‘ইলীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (একে অন্যকে) বলতে লাগল, তোমরা তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দাও এবং নিজেদের দেবতাদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমাদের কিছু করার থাকে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘তাকে পুড়িয়ে দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, তোমরা যদি কিছু করতে চাও।’


৬৯


قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ


কুলনা-ইয়া-না-রু কূনী বারদাওঁ ওয়া ছালা-মান ‘আলাইবরা-হীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(সুতরাং তারা ইবরাহীমকে আগুনে নিক্ষেপ করল) এবং আমি বললাম, হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহীমের পক্ষে শান্তিদায়ক হয়ে যাও। ৩২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি বললাম, ‘হে অগ্নি ! তুমি ইব্রাহীমের জন্যে শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’


তাফসীরঃ

৩২. এ মুহূর্তে আল্লাহ তাআলা নিজ কুদরতের মহিমা প্রকাশ করলেন। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পক্ষে আগুন ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে গেল। এটা ছিল একটা মুজিযা বা আল্লাহ তাআলার কুদরতঘটিত অলৌকিক ব্যাপার। যারা মুজিযাকে অস্বীকার করে প্রকারান্তরে তারা আল্লাহ তাআলার কুদরত ও ক্ষমতার অসীমতাকে অস্বীকার করে। অথচ আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান থাকলে এটাও স্বীকার করা অপরিহার্য যে, আগুনের ভেতর উত্তাপ ও জ্বালানোর ক্ষমতা তাঁরই সৃষ্টি। তিনি যদি একজন মহান রাসূলকে শত্রুদের কবল থেকে মুক্তি দানের জন্য আগুনের সে শক্তি কেড়ে নেন তাতে আশ্চর্যের কি আছে?


৭০


وَأَرَادُوا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَخْسَرِينَ


ওয়া আরা-দূবিহী কাইদান ফাজা‘আলনা-হুমুল আখছারীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে এক দুরভিসন্ধি আঁটল, কিন্তু আমি তাদেরকেই করলাম মহা ক্ষতিগ্রস্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমি এদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।


৭১


وَنَجَّيْنَاهُ وَلُوطًا إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا لِلْعَالَمِينَ


ওয়া নাজ্জাইনা-হু ওয়া লূতান ইলাল আরদিল্লাতী বা-রাকনা-ফীহা-লিল‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে এমন এক ভূমিতে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখেছি। ৩৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই দেশে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্যে।


তাফসীরঃ

৩৩. হযরত লুত আলাইহিস সালাম ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভাতিজা। সূরা আনকাবুতের বর্ণনা (২৯ : ২৬) দ্বারা জানা যায় হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের প্রতি তাঁর গোটা সম্প্রদায়ের মধ্যে একা লুত আলাইহিস সালামই ঈমান এনেছিলেন। ইতিহাসের বর্ণনায় প্রকাশ, তাকে অগ্নিদগ্ধ করার পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে গেলে নমরূদ মনে মনে ভড়কে গিয়েছিল। সে ক্ষান্ত হয়ে তাঁর পথ ছেড়ে দিল। তিনি আল্লাহ তাআলার হুকুমে ভাতিজাকে নিয়ে ইরাক থেকে শাম এলাকায় হিজরত করলেন। কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াতে শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বরকতপূর্ণ এলাকা বলা হয়েছে।


৭২


وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ نَافِلَةً ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا صَالِحِينَ


ওয়া ওয়াহাবনা-লাহূইছহা-কা ওয়া ইয়া‘কূবা নাফিলাতাও ওয়া কুল্লান জা‘আলনা-সা-লিহীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি পুরস্কার স্বরূপ তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুব। আমি তাদের প্রত্যেককে বানিয়েছিলাম নেককার।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও পুরস্কার স্বরূপ দিলাম ইয়াকুব এবং প্রত্যেককেই সৎকর্ম পরায়ণ করলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি ইব্রাহীমকে দান করেছিলাম ইস্হাক এবং পৌত্ররূপে ইয়া‘ক‚ব ; আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ ;


৭৩


وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ ۖ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ


ওয়া জাআলনা-হুম আইম্মাতাইঁ ইয়াহদূ না বিআমরিনা-ওয়াআওহাইনাইলাইহিম ফি‘লাল খাইরা-তি ওয়া ইকা-মাসসালা-তি ওয়া ঈতাআঝঝাকা-তি ওয়া কা-নূলানা-‘আবিদীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে করেছিলাম নেতা, যারা আমার হুকুমে মানুষকে পথ দেখাত। আমি ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে সৎকর্ম করতে, নামায কায়েম করতে ও যাকাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারা আমারই ইবাদতগোজার ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, নামায কায়েম করার এবং যাকাত দান করার। তাঁরা আমার এবাদতে ব্যাপৃত ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা ; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত ; তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে ; তারা আমারই ‘ইবাদত করত।


৭৪


وَلُوطًا آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَت تَّعْمَلُ الْخَبَائِثَ ۗ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَاسِقِينَ


ওয়া লূতান আ-তাইনা-হু হুকমাওঁ ওয়া ‘ইল মাওঁ ওয়া নাজ্জাইনা-হু মিনাল কারয়াতিল্লাতী কা-নাত তা‘মালুল খাবাইছা ইন্নাহুম কা-নূকাওমা ছাওইন ফা-ছিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি লূতকে হিকমত ও ইলম দিয়েছিলাম এবং এমন এক জনপদ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, যার অধিবাসীরা এক কদর্য কাজ করত। ৩৪ বস্তুত তারা ছিল অত্যন্ত নিকৃষ্ট, নাফরমান সম্প্রদায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আমি লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাঁকে ঐ জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যারা নোংরা কাজে লিপ্ত ছিল। তারা মন্দ ও নাফরমান সম্প্রদায় ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ হতে যার অধিবাসীরা লিপ্ত ছিল অশ্লীল কর্মে ; এরা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়, সত্যত্যাগী।


তাফসীরঃ

৩৪. এমনিতে তো এ জাতি নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত ছিল। কিন্তু কুরআন মাজীদ বিশেষভাবে তাদের যে কদাচারের কথা উল্লেখ করেছে, যা তাদের আগে আর কোন জাতির মধ্যে ছিল না, তা হচ্ছে সমকাম বা পুরুষে-পুরুষে যৌনক্রিয়া। পূর্বে সূরা হুদে (১১ : ৭৭-৮৩) তাদের বৃত্তান্ত বিস্তারিতভাবে চলে গেছে।


৭৫


وَأَدْخَلْنَاهُ فِي رَحْمَتِنَا ۖ إِنَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ


ওয়া আদখাল না-হু ফী রাহমাতিনা- ইন্নাহূমিনাসসা-লিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি লূতকে আমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত করে নেই। নিশ্চয়ই সে ছিল নেক লোকদের একজন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাকে আমার অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। সে ছিল সৎকর্মশীলদের একজন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তাকে আমি আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম ; সে ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত।


৭৬


وَنُوحًا إِذْ نَادَىٰ مِن قَبْلُ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ مِنَ الْكَرْبِ الْعَظِيمِ


ওয়া নূহান ইযনা-দা-মিন কাবলুফাছতাজাবনা-লাহূফানাজ্জাইনা-হুওয়াআহলাহূমিনাল কারবিল ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং নূহকেও (হিকমত ও ইলম দিয়েছিলাম)। সেই সময়কে স্মরণ কর, (এ ঘটনার) আগে যখন সে আমাকে ডেকেছিল, আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে মহা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং স্মরণ করুন নূহকে; যখন তিনি এর পূর্বে আহবান করেছিলেন। তখন আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছিলাম, অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে মহা সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর নূহ্কে, পূর্বে সে যখন আহ্বান করেছিল তখন আমি সাড়া দিয়েছিলাম তার আহ্বানে এবং তাকে ও তার পরিজনবর্গকে মহাসংকট হতে উদ্ধার করেছিলাম,


৭৭


وَنَصَرْنَاهُ مِنَ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمَ سَوْءٍ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ


ওয়া নাসারনা-হু মিনাল কাওমিল্লাযীনা কাযযাবূবিআ-য়া-তিনা- ইন্নাহুম কা-নূ কাওমা ছাওইন ফাআগরাকনা-হুম আজমা‘ঈন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম। বস্তুত তারা ছিল অতি মন্দ লোক। তাই আমি তাদের সকলকে নিমজ্জিত করি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আমি তাঁকে ঐ সম্প্রদায়ের বিপক্ষে সাহায্য করেছিলাম, যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল। নিশ্চয়, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে নিমজ্জত করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল ; নিশ্চয়ই এরা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। এইজন্যে এদের সকলকেই আমি নিমজ্জিত করেছিলাম।


৭৮


وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ


ওয়া দাঊদা ওয়া ছুলাইমা-না ইযইয়াহকুমা-নি ফিল হারছি ইযনাফাশাত ফীহি গানামুল কাওমি ওয়াকুন্না-লিহুকমিহিম শা-হিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং দাঊদ ও সুলায়মানকেও (হিকমত ও ইলম দিয়েছিলাম), যখন তারা একটি শস্য ক্ষেত্রের ব্যাপারে বিচার করছিল। তাতে রাতের বেলা একদল লোকের মেষপাল প্রবেশ করেছিল। ৩৫ তাদের ফায়সালা আমি নিজে প্রত্যক্ষ করছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং স্মরণ করুন দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে ; এতে রাত্রিকালে প্রবেশ করেছিল কোন সম্প্রদায়ের মেষ ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার।


তাফসীরঃ

৩৫. ঘটনাটি এ রকম, এক ব্যক্তির মেষপাল রাতের বেলা অপর এক ব্যক্তির শস্যক্ষেত্রে ঢুকে সবটা ফসল নষ্ট করে দিয়েছিল। ক্ষেতের মালিক হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের আদালতে মামলা দায়ের করল। তিনি রায় দিলেন, মেষপালের মালিক ভুল করেছে। তার উচিত ছিল রাতে সেগুলো বেঁধে রাখা। কিন্তু সে তা রাখেনি। ফলে ক্ষেতের মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন দেখতে হবে তার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। পশুর মালিক তার সমমূল্যের মেষ তাকে প্রদান করবে। অতি সুন্দর ফায়সালা। এটা বিলকুল শরীয়তসম্মত ছিল। কিন্তু এ ফায়সালা নিয়ে তারা যখন বের হয়ে গেল, দরজার সামনে হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাত হল। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, মহান পিতা কী রায় দিয়েছেন? তারা তাঁকে রায় সম্পর্কে অবহিত করল। তিনি বললেন, আমার আরেকটি ফায়সালা বুঝে আসছে, যা উভয়ের পক্ষে কল্যাণকর হবে। তাঁর এ মন্তব্য হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের কাছে পৌঁছলে তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞেস করলেন, সে ফায়সালাটি কী? হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম বললেন, মেষপালের মালিক কিছু কালের জন্য তার মেষপালটি ক্ষেত-মালিকের হাতে সমর্পণ করবে। ক্ষেত-মালিক তা পালন করবে ও তার দুধ খাবে। আর সে তার শস্যক্ষেত্রটি মেষ মালিকের কাছে সমর্পণ করবে। সে তার যত্ন নিতে থাকবে। যখন ক্ষেতের ফসল পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে, অর্থাৎ মেষপাল নষ্ট করার আগে তা যে অবস্থায় ছিল, তখন মেষের মালিক ক্ষেতটিকে তার মালিকের হাতে প্রত্যার্পণ করবে এবং ক্ষেতওয়ালাও মেষপালটি তার মালিককে বুঝিয়ে দেবে। এটা ছিল এক রকমের আপোসরফা, যার ভেতর উভয়েরই উপকার ছিল। তাই হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের এটা পছন্দ হল এবং উভয় পক্ষ এতে খুশী হয়ে গেল।


৭৯


فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ ۚ وَكُلًّا آتَيْنَا حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ ۚ وَكُنَّا فَاعِلِينَ


ফাফাহহামনা-হা-ছুলাইমা-না ওয়া কুল্লান আ-তাইনা-হুকমাও ওয়া ‘ইলমাওঁ ওয়া ছাখখারনা-মা‘আ দা-ঊদাল জিবা-লা ইউছাব্বিহনা ওয়াততাইরা ওয়া কুন্না-ফা‘ইলীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালার বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং (এমনিতে তো) আমি উভয়কেই হিকমত ও ইলম দান করেছিলাম। ৩৬ আমি পর্বতসমূহকে দাঊদের অধীন করে দিয়েছিলাম, যাতে তারা পাখিদেরকে সাথে নিয়ে তাসবীহরত থাকে। ৩৭ এসব কিছুর কর্তা ছিলাম আমিই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের মীমাংসা বুঝাইয়া দিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমি পর্বত ও বিহঙ্গকুলকে অধীন করে দিয়েছিলাম-এরা দাঊদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত ; আমিই ছিলাম এই সমস্তের কর্তা।


তাফসীরঃ

৩৬. হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম যে রায় দিয়েছিলেন তা ছিল শরীয়তের আইন মোতাবেক আর হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের প্রস্তাবটি ছিল উভয় পক্ষের সম্মতিসাপেক্ষ একটি আপোসরফা। উভয়টিই আপন-আপন স্থানে সঠিক ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা উভয়ের সম্পর্কে বলেছেন, আমি তাদের দু’জনকেই ইলম ও হিকমত দান করেছিলাম, কিন্তু হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম আপোসরফার যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালার বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। এর দ্বারা বোঝা যায় মামলা-মোকদ্দমায় আইনগত ফায়সালা অপেক্ষা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে আপোসরফার এমন কোন পথ খোঁজা উত্তম, যা উভয় পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক।


৩৭. আল্লাহ তাআলা হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামকে অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী কণ্ঠস্বর দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে আল্লাহ তাআলা তাঁকে মুজিযা দিয়েছিলেন যে, যখন তিনি আল্লাহ তাআলার যিকির করতেন, তখন পাহাড়-পর্বতও তাঁর সঙ্গে যিকিরে মশগুল হয়ে যেত। এমনকি তাঁর যিকিরের আওয়াজ শুনে উড়ন্ত পাখিরাও থেমে যেত এবং তারাও তাঁর সাথে আল্লাহ তাআলার যিকিরে রত হত।


৮০


وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُم مِّن بَأْسِكُمْ ۖ فَهَلْ أَنتُمْ شَاكِرُونَ


ওয়া ‘আল্লামনা-হু সান‘আতা লাবূছিল লাকুম লিতুহছিনাকুম মিম বা’ছিকুম ফাহাল আনতুম শা-কিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের কল্যাণার্থে তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম সামরিক পোশাক (বর্ম) তৈরির কারিগরি, যাতে যুদ্ধকালে তা তোমাদেরকে পারস্পরিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ৩৮ এবার বল, তোমরা কৃতজ্ঞ হবে কি?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মান শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর আমি তাকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে ; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?


তাফসীরঃ

৩৮. সূরা সাবায় আছে (৩৪ : ১০) আল্লাহ তাআলা তাঁর হাতে লোহাকে নমনীয় করে দিয়েছিলেন। এটা ছিল হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের একটি মুজিযা। তিনি লোহাকে যেভাবে চাইতেন ঘুরাতে-বাঁকাতে পারতেন। তিনি লোহা দ্বারা এমন নিখুঁত ও পরিমাপ মত বর্ম তৈরি করতে পারতেন, যার অংশসমূহ পরস্পর সুসমঞ্জস হত। উলামায়ে কেরাম এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, এর দ্বারা ইশারা পাওয়া যায়, মানুষের উপকারে আসে এমন যে-কোন শিল্প ও কারিগরি বিদ্যা ইসলামে প্রশংসনীয়।


৮১


وَلِسُلَيْمَانَ الرِّيحَ عَاصِفَةً تَجْرِي بِأَمْرِهِ إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيْءٍ عَالِمِينَ


ওয়া লিছুলাইমা-নাররীহা ‘আ-সিফাতান তাজরী বিআমরিহীইলাল আরদিল্লাতী বা-রাকনাফীহা- ওয়াকুন্না-বিকুল্লি শাইয়িন ‘আ-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি ঝড়ো হাওয়াকে সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যা তার হুকুমে এমন ভূমির দিকে প্রবাহিত হত, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। ৩৯ আমি প্রতিটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে; তা তাঁর আদেশে প্রবাহিত হত ঐ দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ দান করেছি। আমি সব বিষয়েই সম্যক অবগত রয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং সুলায়মানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে ; তা তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি ; প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।


তাফসীরঃ

৩৯. আল্লাহ তাআলা লোহার মত কঠিন পদার্থকেও হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের জন্য নমনীয় করে দিয়েছিলেন আর হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের অধীন করেছিলেন বায়ুর মত কোমল জিনিসকে। হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম সিংহাসনে আরোহন করে বাতাসকে হুকুম দিতেন অমুক জায়গায় নিয়ে যাও। বাতাস তার হুকুমমত তাঁকে যথাস্থানে পৌঁছে দিত। সূরা সাবায় আছে (৩৪ : ১২) তিনি ভোরের ভ্রমণে এক মাসের পথ এবং বিকেলের ভ্রমণেও এক মাসের পথ অতিক্রম করতেন। আয়াতে যে বরকতপূর্ণ ভূমির কথা বলা হয়েছে, তা হল শাম ও ফিলিস্তিন এলাকা। বোঝানো উদ্দেশ্য, তিনি সফর করে বহু দূর-দূরান্তে চলে গেলেও বাতাস তাকে দ্রুতগতিতে তার নিজের বরকতপূর্ণ ভূমি ফিলিস্তিনে ফিরিয়ে নিয়ে আসত।


৮২


وَمِنَ الشَّيَاطِينِ مَن يَغُوصُونَ لَهُ وَيَعْمَلُونَ عَمَلًا دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَكُنَّا لَهُمْ حَافِظِينَ


ওয়া মিনাশশাইয়া-তীনি মাইঁ ইয়াগূছূনা লাহূওয়া ইয়া‘মালূনা ‘আমালান দূ না যা-লিকা ওয়া কুন্না-লাহুম হাফিজীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং কতক দুষ্ট জিনকেও আমি তার বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যারা তার জন্য ডুবুরির কাজ করত ৪০ এবং তাছাড়া অন্য কাজও করত। আর আমিই তাদের সকলের দেখাশোনা করছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং অধীন করেছি শয়তানদের কতককে, যারা তার জন্যে ডুবুরীর কাজ করত এবং এ ছাড়া অন্য আরও অনেক কাজ করত। আমি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করে রাখতাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং শয়তানদের মধ্যে কতক তার জন্যে ডুবুরীর কাজ করত, এটা ব্যতীত অন্য কাজও করত ; আমি এদের রক্ষাকারী ছিলাম।


তাফসীরঃ

৪০. ‘দুষ্ট জিন’ বলতে সেই সকল জিনকে বোঝানো উদ্দেশ্য যারা ঈমান আনেনি। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের বশীভূত করে দিয়েছিলেন। তারা তাঁর হুকুমে সাগরে ডুব দিয়ে তাঁর জন্য মণি-মুক্তা আহরণ করত। এছাড়া আরও বিভিন্ন কাজ করত, যা বিস্তারিতভাবে সূরা সাবায় আসবে ইনশাআল্লাহ (৩৪ : ১৩)।


৮৩


۞ وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ


ওয়া আইঁয়ুবা ইযনা-দা-রাব্বাহূআন্নী মাছছানিয়াদদু ররু ওয়া আনতা আরহামুররা-হিমীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আয়্যূবকে দেখ, যখন সে নিজ প্রতিপালককে ডেকে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার এই কষ্ট দেখা দিয়েছে এবং তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। ৪১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!’


তাফসীরঃ

৪১. কুরআন মাজীদে হযরত আয়্যূব আলাইহিস সালাম সম্পর্কে কেবল এতটুকুই বলা হয়েছে যে, তিনি কোন কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তাতে তিনি পরম ধৈর্য ধারণ করেন ও আল্লাহ তাআলাকে ডাকতে থাকেন। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁকে আরোগ্য দান করেন। বাকি তার রোগটা কী ছিল কুরআন মাজীদ তা প্রকাশের প্রয়োজন বোধ করেনি। কাজেই তার অনুসন্ধানে পড়ার কোন দরকার নেই। এ সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের বর্ণনা প্রসিদ্ধ ও লোকমুখে চালু আছে, কিন্তু তার কোনওটি নির্ভরযোগ্য নয়।


৮৪


فَاسْتَجَبْنَا لَهُ فَكَشَفْنَا مَا بِهِ مِن ضُرٍّ ۖ وَآتَيْنَاهُ أَهْلَهُ وَمِثْلَهُم مَّعَهُمْ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَذِكْرَىٰ لِلْعَابِدِينَ


ফাছতাজাবনা- লাহূফাকাশাফনা-মা-বিহী মিন দু ররিওঁ ওয়া আ-তাইনা-হু আহলাহূওয়া মিছলাহুম মা‘আহুম রাহমাতাম মিন ‘ইনদিনা-ওয়া যিকরা-লিল‘আ-বিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর আমি তার দু‘আ কবুল করলাম এবং সে যে কষ্টে আক্রান্ত ছিল তা দূর করে দিলাম। আর তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সমপরিমাণ আরও, ৪২ যাতে আমার পক্ষ হতে রহমতের প্রকাশ ঘটে এবং ইবাদতকারীদের লাভ হয় স্মরণীয় শিক্ষা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা এবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের মত আরো দিলাম আমার বিশেষ রহমতরূপে এবং ‘ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশস্বরূপ।


তাফসীরঃ

৪২. হযরত আয়্যূব আলাইহিস সালামের অসুস্থতাকালে একমাত্র তাঁর পতিব্রতা স্ত্রীই শেষ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন। পরিবারের অন্য সদস্যগণ এক-এক করে তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এ সময় তিনি ধৈর্যের যে পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন, তার প্রতিফল স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাঁকে কেবল আরোগ্যই দান করেননি, বরং ধনে-জনেও তাঁকে সম্পন্নতা দান করেছিলেন। তাঁর ছেলে-মেয়ে ও নাতী-নাতনীর সংখ্যা যারা তাকে ত্যাগ করেছিল তাদেরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।


৮৫


وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ ۖ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ


ওয়া ইছমা-‘ঈলা ওয়া ইদরীছা ওয়া যাল কিফলি কুল্লুম মিনাসসা-বিরীন।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং ইসমাঈল, ইদরীস ও যুলকিফলকে দেখ, তারা সকলেই ছিল ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত। ৪৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং ইসমাঈল, ই’দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদ্রীস ও যুল-কিফ্ল-এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল ;


তাফসীরঃ

৪৩. পূর্বে সূরা মারয়ামে হযরত ইসমাঈল ও হযরত ইদরীস আলাইহিস সালামের বৃত্তান্ত গত হয়েছে। হযরত যুলকিফল আলাইহিস সালামের কথা এর আগে আর যায়নি। কুরআন মাজীদে তাঁর কেবল নামই পাওয়া যায়, তাঁর কোন ঘটনা বর্ণিত হয়নি। তিনি নবী ছিলেন কিনা এ সম্পর্কে মতভিন্নতা আছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে তিনি নবী ছিলেন আবার কেউ বলেন, নবী নয়, বরং তিনি একজন উচ্চস্তরের ওলী এবং হযরত ইউশা আলাইহিস সালামের খলীফা ছিলেন।


৮৬


وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِي رَحْمَتِنَا ۖ إِنَّهُم مِّنَ الصَّالِحِينَ


ওয়া আদখাল না-হুম ফী রাহমাতিনা- ইন্নাহুম মিনাসসা-লিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে আমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। নিশ্চয়ই তারা নেক লোকদের মধ্যে গণ্য ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তাদেরকে আমি আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম; তারা তো ছিল সৎকর্মপরায়ণ।


৮৭


وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ


ওয়া যাননূনি ইযযাহাবা মুগা-দিবান ফাজান্না আল্লান নাকদিরা ‘আলাইহি ফানা-দাফিজজু লুমা-তি আল্লাইলা-হা ইল্লাআনতা ছুবহা-নাকা ইন্নী কুনতুমিনাজ্জালিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং মাছের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তি (নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম)কে দেখ, যখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল, আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে অন্ধকার থেকে ডাক দিয়েছিল, (হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তুমি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। ৪৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেনঃ তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর যুন্-নূন-এর কথা, যখন সে ক্রোধভরে বের হয়ে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তার জন্যে শাস্তি নির্ধারণ করব না। এরপর সে অন্ধকার হতে আহ্বান করেছিল : ‘তুমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই ; তুমি পবিত্র, মহান ! আমি তো সীমালংঘনকারী।’


তাফসীরঃ

৪৪. পূর্বে সূরা ইউনুসে (১০ : ৯৭) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা চলে গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তিনি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ পাওয়ার আগেই নিজ এলাকা ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর এ কাজ আল্লাহ তাআলার পছন্দ হয়নি। ফলে তিনি মহা পরীক্ষার সম্মুখীন হন। তিনি যে নৌকায় চড়ে যাচ্ছিলেন, তা থেকে তাঁকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলে। তিনি তিন দিন সেই মাছের পেটে থাকেন। আয়াতে যে অন্ধকারের কথা বলা হয়েছে, তা হল মাছের পেটের অন্ধকার। সেখানে তিনি আল্লাহ তাআলাকে এই বলে ডাকতে থাকেন - لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ۖۗ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ ‘তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি একজন অপরাধী’। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা মাছকে হুকুম দিলেন সে যেন তাঁকে তীরে নিয়ে নিক্ষেপ করে। এভাবে তিনি সেই মহাবিপদ থেকে মুক্তি লাভ করেন। ইনশাআল্লাহ সূরা আস-সাফফাতে তার ঘটনা বিস্তারিত আসবে (৩৭ : ১৩৯-১৪৮)।


৮৮


فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ


ফাছতাজাবনা-লাহূওয়া নাজ্জাইনা-হু মিনাল গাম্মি ওয়া কাযা-লিকা নুনজিল মু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তখন আমি তার দু‘আ কবুল করলাম এবং তাকে সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছিলাম। এভাবেই আমি ঈমানদারদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা হতে এবং এইভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।


৮৯


وَزَكَرِيَّا إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ


ওয়া ঝাকারিইইয়াইযনা-দা-রাব্বাহূরাব্বি লা-তাযারনী ফারদাওঁ ওয়া আনতা খাইরুল ওয়ারিছীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং যাকারিয়াকে দেখ, যখন সে নিজ প্রতিপালককে ডেকে বলেছিল, হে আমার রব্ব! আমাকে একা রেখে দিও না, আর তুমিই শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী। ৪৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যাকারিয়ার কথা স্মরণ করুন, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল; হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে একা রেখ না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী।’


তাফসীরঃ

৪৫. হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করলেন যেন তাঁকে এক পুত্র সন্তান দান করেন। তাঁর দু‘আ কবুল হল এবং হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের মত এক মহান পুত্র তাঁকে দেওয়া হল। এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে সূরা আলে-ইমরানে গত হয়েছে (৩ : ৩৭-৪০)।


৯০


فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَىٰ وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا ۖ وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ


ফছতাজাবনা-লাহূ ওয়া ওয়াহাবনা-লাহূইয়াহইয়া-ওয়া আসলাহনা-লাহূঝাওজাহূ ইন্নাহুম কা-নূইউছা-রি‘ঊনা ফিল খাইরা-তি ওয়া ইয়াদঊনানা-রাগাবাওঁ ওয়া রাহাবাও ওয়া কা-নূলানা-খা-শি‘ঈন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং আমি তার দু‘আ কবুল করলাম এবং তাকে ইয়াহইয়া (-এর মত পুত্র) দান করলাম। আর তার জন্য তার স্ত্রীকে (সন্তান ধারণের) উপযুক্ত করে দিলাম। ৪৬ নিশ্চয়ই তারা সৎকাজে দ্রুতগমন করত এবং আশা ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত আর তাদের অন্তর ছিল আমার সামনে বিনীত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া এবং তার জন্যে তার স্ত্রীকে প্রসব যোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহ্ইয়া এবং তার জন্যে তার স্ত্রীকে যোগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম। তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সঙ্গে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।


তাফসীরঃ

৪৬. অর্থাৎ, তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। আল্লাহ তাআলা তাকে সন্তান ধারণের ক্ষমতা দান করলেন।


৯১


وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا آيَةً لِّلْعَالَمِينَ


ওয়াল্লাতীআহসানাত ফারজাহা-ফানাফাখনা-ফীহা-মির রূহিনা-ওয়া জা‘আলনা-হাওয়াবনাহাআ-য়াতাল লিল‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং দেখ সেই নারীকে, যে নিজ সতীত্ব রক্ষা করেছিল, তারপর আমি তার ভেতর আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে সমগ্র জগতবাসীর জন্য এক নিদর্শন বানিয়েছিলাম। ৪৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর সেই নারীকে, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল, এরপর তার মধ্যে আমি আমার রূহ্ ফুঁকিয়া দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্যে এক নিদর্শন।


তাফসীরঃ

৪৭. এ আয়াতে বর্ণিত সতী-সাধ্বী নারী হলেন হযরত মারয়াম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা তাঁর পুত্র হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে বিনা পিতায় সৃষ্টি করে তাঁদের মাতা-পুত্রকে নিজ কুদরতের এক মহা নিদর্শন বানিয়েছিলেন।


৯২


إِنَّ هَـٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ


ইন্না হা-যিহীউম্মাতুকুম উম্মাতাওঁ ওয়া-হিদাতাওঁ ওয়া আনা রাব্বুকুম ফা‘বুদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে মানুষ!) নিশ্চয়ই এটাই তোমাদের দীন, যা একই দীন ৪৮ (সমস্ত নবী-রাসূল যার দাওয়াত দিত) এবং আমি তোমাদের প্রতিপালক। সুতরাং তোমরা আমার ইবাদত কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই যে তোমাদের জাতি-এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমার ‘ইবাদত কর।


তাফসীরঃ

৪৮. অর্থাৎ সমস্ত দীনের মূল কথা একই এক আল্লাহর ‘ইবাদত-আনুগত্য করা। সমস্ত নবীর মূল শিক্ষা ছিল এটাই। তাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল কেবল ইবাদত-আনুগত্যের রীতি-নীতি তথা দীনের শাখাগত বিষয়ে যাকে শরীআত বলে। শাখাগত সে পার্থক্য হয়েছে স্থান-কাল ভেদে এবং তাও আল্লাহপ্রদত্ত। আখেরী যমানায় সমগ্র বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য মুহাম্মাদী শরীআত দেওয়া হয়েছে। এখন এরই অনুসরণ অপরিহার্য। কিন্তু শরীআতেরও মূলকথা এক আল্লাহ তাআলার ‘ইবাদত-আনুগত্য, তথা তাওহীদ, যা অন্যান্য ধর্মেরও মূলকথা ছিল। কিন্তু ইয়াহুদী-নাসারা প্রভৃতি সম্প্রদায় তাতে নিজেদের পক্ষ থেকে শিরকের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। ফলে এসব ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। যা পরের আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। -অনুবাদক


৯৩


وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ ۖ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ


ওয়া তাকাততা‘ঊআমরাহুম বাইনাহুম কুল্লুন ইলাইনা-রা-জি‘উন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিন্তু মানুষ তাদের দীনকে নিজেদের মধ্যে খণ্ড খণ্ড করে ভাগ করেছে। সকলকেই (একদিন) আমার কাছে ফিরে আসতে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং মানুষ তাদের কার্যকলাপ দ্বারা পারস্পরিক বিষয়ে ভেদ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেকেই আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কিন্তু তারা নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে ভেদ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেকেই প্রত্যানীত হবে আমার নিকট।


৯৪


فَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا كُفْرَانَ لِسَعْيِهِ وَإِنَّا لَهُ كَاتِبُونَ


ফামাইঁ ইয়া‘মাল মিনাসসা-লিহা-তি ওয়া হুওয়া মু’মিনুন ফালা কুফরা-না লিছা‘য়িহী ওয়া ইন্না-লাহূকা-তিবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং যে ব্যক্তি মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে, তার প্রচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করা হবে না এবং আমি সে প্রচেষ্টা লিখে রাখি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং যদি কেউ মু’মিন হয়ে সৎকর্ম করে তার কর্মপ্রচেষ্টা অগ্রাহ্য হবে না এবং আমি তো তা লিখে রাখি।


৯৫


وَحَرَامٌ عَلَىٰ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا أَنَّهُمْ لَا يَرْجِعُونَ


ওয়া হারা-মুন ‘আলা-কারইয়াতিন আহলাকনা-হাআন্নাহুম লা-ইয়ারজি‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আমি যে জনপদ (-এর মানুষ)-কে ধ্বংস করেছি, তার পক্ষে এটা অসম্ভব যে, তারা (অর্থাৎ তার বাসিন্দাগণ) আবার (দুনিয়ায়) ফিরে আসবে। ৪৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি তার সম্পর্কে নিষিদ্ধ হয়েছে যে, তার অধিবাসীবৃন্দ ফিরে আসবে না,


তাফসীরঃ

৪৯. কাফেরগণ বলত, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়া যদি অবধারিত হয়ে থাকে, তবে এ যাবৎকাল যে সকল কাফের মারা গেছে তাদেরকে জীবিত করে এখনই কেন তাদের হিসাব নেওয়া হচ্ছে না? এ আয়াত তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। বলা হয়েছে, হিসাব-নিকাশ এবং পুরস্কার ও শাস্তির জন্য আল্লাহ তাআলা একটি সময় স্থির করে রেখেছেন। তার আগে কারও জীবিত হয়ে ইহলোকে ফিরে আসা সম্ভব নয়।


৯৬


حَتَّىٰ إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ


হাত্তাইযা-ফুতিহাত ইয়া’জুজুওয়ামা’জুজুওয়া হুম মিন কুল্লি হাদাবিইঁ ইয়ানছিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিশেষে যখন ইয়াজুজ ও মাজুজকে খুলে দেওয়া হবে এবং তাদেরকে প্রতিটি উঁচু ভূমি থেকে পিছলে নামতে দেখা যাবে। ৫০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এমনকি যখন ইয়া‘জূজ ও মা‘জূজকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং এরা প্রতি উচ্চভূমি হতে ছুটিয়া আসবে।


তাফসীরঃ

৫০. অর্থাৎ, মৃত্যুর পর মানুষকে যে পুনরায় জীবিত করা হবে, সেটা কিয়ামত কালে। কিয়ামতের বড়-বড় আলামতগুরোর মধ্যে একটি হল ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব। এই বিশাল বর্বর সম্প্রদায় এমন ক্ষিপ্রতায় সভ্য জগতে হামলা চালাবে, মনে হবে যেন তারা উঁচু স্থান থেকে পিছলে নেমে আসছে।


৯৭


وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَا وَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِّنْ هَـٰذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِينَ


ওয়াকতালাবাল ওয়া‘দুল হাক্কুফাইযা-হিয়া শা-খিসাতুন আবসা-রুল্লাযীনা কাফারূ ইয়া-ওয়াইলানা-কাদ কুন্না-ফী গাফলাতিম মিন হা-যা-বাল কুন্না-জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সত্য ওয়াদা পূরণ হওয়ার কাল সমাসন্ন হবে, তখন অকস্মাৎ যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, তাদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে যাবে (এবং তারা বলবে) হায় আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলাম বরং আমরা বড়ই অন্যায় করেছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; হায় আমাদের দূর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগরই ছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অমোঘ প্রতিশ্রুত কাল আসন্ন হলে অকস্মাৎ কাফিরদের চোখ স্থির হয়ে যাবে, এরা বলবে, ‘হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; না, আমরা সীমালংঘনকারীই ছিলাম।’


৯৮


إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ


ইন্নাকুম ওয়ামা-তা‘বুদূ না মিন দূ নিল্লা-হি হাসাবুজাহান্নামা আনতুম লাহা-ওয়া-রিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে মুশরিকগণ!) নিশ্চিত জেনে রেখ, তোমরা এবং আল্লাহকে ছেড়ে তোমরা যাদের ইবাদত কর, সকলেই জাহান্নামের জ্বালানি হবে। ৫১ তোমাদেরকে সে জাহান্নামেই গিয়ে নামতে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা এবং আল্লাহ্ র পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন ; তোমরা সকলে এতে প্রবেশ করবে।


তাফসীরঃ

৫১. মুশরিকগণ পাথরে গড়া যে সব দেব-দেবীর পূজা করত তাদেরকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অবশ্য সেটা তাদের শাস্তি হিসেবে নয়; বরং তাদের মুশরিক পূজারীদেরকে হাতেনাতে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে, তারা যাদেরকে ক্ষমতাবান মনে করে পূজা-অর্চনা করত, বাস্তবে তারা কতটা অক্ষম ও অসহায়।


৯৯


لَوْ كَانَ هَـٰؤُلَاءِ آلِهَةً مَّا وَرَدُوهَا ۖ وَكُلٌّ فِيهَا خَالِدُونَ


লাও কা-না হাঊলাই আ-লিহাতামমা-ওয়ারাদূ হা- ওয়া কুল্লুন ফীহা-খা-লিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বাস্তবিক মাবুদ হলে তাতে (অর্থাৎ জাহান্নামে) যেত না। তারা সকলেই তাতে সর্বদা থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি এরা ইলাহ্ হত তবে এরা জাহান্নামে প্রবেশ করত না ; এদের সকলেই এতে স্থায়ী হবে,


১০০


لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَهُمْ فِيهَا لَا يَسْمَعُونَ


লাহুম ফীহা-ঝাফীরুওঁ ওয়াহুম ফীহা-লা-ইয়াছমা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ। তারা সেখানে কিছুই শুনতে পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা সেখানে চীৎকার করবে এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেখানে থাকবে এদের আর্তনাদ এবং সেখানে এরা কিছুই শুনতে পাবে না ;


১০১


إِنَّ الَّذِينَ سَبَقَتْ لَهُم مِّنَّا الْحُسْنَىٰ أُولَـٰئِكَ عَنْهَا مُبْعَدُونَ


ইন্নাল্লাযীনা ছাবাকাত লাহুম মিন্নাল হুছনা উলাইকা ‘আনহা-মুব‘আদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অবশ্য যাদের জন্য পূর্ব থেকেই আমার পক্ষ হতে কল্যাণ লেখা হয়েছে (অর্থাৎ যারা নেক ও মুমিন) তাদেরকে তা (অর্থাৎ জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদের জন্য প্রথম থেকেই আমার পক্ষ থেকে কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে তারা দোযখ থেকে দূরে থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাদের জন্যে আমার নিকট হতে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা হতে দূরে রাখা হবে।


১০২


لَا يَسْمَعُونَ حَسِيسَهَا ۖ وَهُمْ فِي مَا اشْتَهَتْ أَنفُسُهُمْ خَالِدُونَ


লা-ইয়াছমা‘ঊনা হাছীছাহা- ওয়া হুম ফী মাশতাহাত আনফুছুহুম খা-লিদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তার মৃদু শব্দও শুনতে পাবে না। তারা সর্বদা তাদের মনের কাঙ্খিত বস্তুরাজির মধ্যে থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা তার ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং তারা তাদের মনের বাসনা অনুযায়ী চিরকাল বসবাস করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা এর ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং সেখানে তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল তা ভোগ করবে।


১০৩


لَا يَحْزُنُهُمُ الْفَزَعُ الْأَكْبَرُ وَتَتَلَقَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ هَـٰذَا يَوْمُكُمُ الَّذِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ


লা-ইয়াহঝুনুহুমুল ফাঝা‘উল আকবারু ওয়া তাতালাক্কা-হুমুল মালাইকাতু হা-যাইয়াওমুকুমুল্লাযী কুনতুম তূ‘আদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদেরকে (কিয়ামতের) মহাভীতি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে না এবং ফিরিশতাগণ তাদেরকে (এই বলে) অভ্যর্থনা জানাবে যে, এটাই তোমাদের সেই দিন, যার ওয়াদা তোমাদের সঙ্গে করা হত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মহা ত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেঃ আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মহাভীতি তাদেরকে বিষাদক্লিষ্ট করবে না এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে এই বলে, ‘এই তোমাদের সেই দিন যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল।’


১০৪


يَوْمَ نَطْوِي السَّمَاءَ كَطَيِّ السِّجِلِّ لِلْكُتُبِ ۚ كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُّعِيدُهُ ۚ وَعْدًا عَلَيْنَا ۚ إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ


ইয়াওমা নাতবিছছামাআ কাতাইয়িছছিজিলিল লিলকুতুবি কামা-বাদা’নাআওয়ালা খালকিন নু‘ঈদুহূ ওয়া‘দান ‘আলাইনা- ইন্না-কুন্না-ফা-‘ইলীন ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই দিনকে স্মরণ রাখ, যখন আমি আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, কাগজের বেলনে লেখাসমূহ গুটানোর মত। আমি পুনরায় তাকে সৃষ্টি করব, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম। ৫২ এটা এক প্রতিশ্রুতি, যা পূরণ করার দায় আমার। আমি তা অবশ্যই করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটান হয় লিখিত দফতর; যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য, আমি এটা পালন করবই।


তাফসীরঃ

৫২. অর্থাৎ প্রথমবার যেমন অতি সহজে সৃষ্টি করেছিলাম পুনর্বার সেই রকম সহজেই সৃষ্টি করব। এমনিভাবে প্রথমবার যেমন তোমাদেরকে বস্ত্রহীন ও খত্নাবিহীন সৃষ্টি করেছিলাম, পুনরায় তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে সেভাবেই উপস্থিত করা হবে। এক হাদীসে আছে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম পোশাক পরানো হবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে। -অনুবাদক


১০৫


وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ


ওয়া লাকাদ কাতাবনা-ফিঝঝাবূরি মিম বা‘দিযযিকরি আন্নাল আরদা ইয়ারিছু হা-ইবা দিয়াসসা-লিহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যাবুরে উপদেশের পর লিখে দিয়েছিলাম, ভূমির উত্তরাধিকারী হবে আমার নেক বান্দাগণ। ৫৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি ‘উপদেশের’ পর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্যতাসম্পন্ন বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।


তাফসীরঃ

৫৩. অর্থাৎ আখেরাতে সমগ্র বিশ্বে কোন কাফেরের কিছুমাত্র অংশ থাকবে না; বরং আল্লাহ তাআলার নেক বান্দাগণই সব কিছুর অধিকারী হবে। [অনেকের মতে এখানে الارض অর্থাৎ ভূমি দ্বারা জান্নাতের ভূমি বোঝানো হয়েছে। -অনুবাদক]


১০৬


إِنَّ فِي هَـٰذَا لَبَلَاغًا لِّقَوْمٍ عَابِدِينَ


ইন্না ফী হা-যা-লাবালা-গাল লিকাওমিন ‘আ-বিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই এতে (অর্থাৎ কুরআনে) ইবাদতনিষ্ঠদের জন্য যথেষ্ট বার্তা রয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই এতে রয়েছে বাণী সেই সম্প্রদায়ের জন্যে যারা ‘ইবাদত করে।


১০৭


وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ


ওয়ামাআরছালনা-কা ইল্লা-রাহমাতাল লিল‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো তোমাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।


১০৮


قُلْ إِنَّمَا يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ


কুল ইন্নামা-ইঊহাইলাইয়া আন্নামাইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়াহিদুন ফাহাল আনতুম মুছলিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আমার প্রতি এই ওহীই অবতীর্ণ হয় যে, তোমাদের প্রভু একই প্রভু। সুতরাং তোমরা আনুগত্য স্বীকার করবে কি?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাংতোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমার প্রতি ওহী হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একই ইলাহ্, সুতরাং তোমরা হয়ে যাও আত্মসমর্পণকারী।’


১০৯


فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ آذَنتُكُمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۖ وَإِنْ أَدْرِي أَقَرِيبٌ أَم بَعِيدٌ مَّا تُوعَدُونَ


ফাইন তাওয়াল্লাও ফাকুল আ-যানতুকুম ‘আলা-ছাওয়াইও ওয়া ইন আদরীআকারীবুন আম বা‘ঈদুম মা-তূ‘আদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবুও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দাও, আমি তোমাদেরকে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছি। আমি জানি না তোমাদেরকে যে বিষয়ের (অর্থাৎ যে শাস্তির) প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা নিকটবর্তী, না দূরে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিনঃ আমি তোমাদেরকে পরিস্কার ভাবে সতর্ক করেছি এবং আমি জানি না, তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা নিকটবর্তী না দূরবর্তী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তবে এরা মুখ ফিরিয়ে নিলে তুমি বল, ‘আমি তোমাদেরকে যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে যে বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আমি জানি না, তা আসন্ন, না দূরস্থিত।


১১০


إِنَّهُ يَعْلَمُ الْجَهْرَ مِنَ الْقَوْلِ وَيَعْلَمُ مَا تَكْتُمُونَ


ইন্নাহূইয়া‘লামুল জাহরা মিনাল কাওলি ওয়া ইয়া‘লামুমা-তাকতুমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন যা উচ্চস্বরে বলা হয় এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি জানেন, যে কথা সশব্দে বল এবং যে কথা তোমরা গোপন কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি জানেন যা কথায় ব্যক্ত এবং যা তোমরা গোপন কর।


১১১


وَإِنْ أَدْرِي لَعَلَّهُ فِتْنَةٌ لَّكُمْ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ


ওয়া ইন আদরী লা‘আল্লাহূফিতনাতুল লাকুম ওয়া মাতা-‘উন ইলা-হীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি জানি না হয়ত এটা (অর্থাৎ শাস্তিকে বিলম্বিত করা) তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা এবং নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত ভোগের অবকাশ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি জানি না সম্ভবতঃ বিলম্বের মধ্যে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং এক সময় পর্যন্ত ভোগ করার সুযোগ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমি জানি না হয়ত এটা তোমাদের জন্যে এক পরীক্ষা এবং জীবনোপভোগ কিছু কালের জন্যে।’


১১২


قَالَ رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ ۗ وَرَبُّنَا الرَّحْمَـٰنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ


কা-লা রাব্বিহকুম বিলহাক্কি ওয়া রাব্বুনার রাহমা-নুল মুছতা‘আ-নু‘আলা-মাতাসিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(পরিশেষে) রাসূল বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি সত্যের ফায়সালা করে দিন। আমাদের প্রতিপালক অতি দয়াবান, তোমরা যেসব কথা বলছ তার বিপরীতে তিনিই সাহায্য প্রার্থনার স্থল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পয়গাম্বর বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি ন্যায়ানুগ ফয়সালা করে দিন। আমাদের পালনকর্তা তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

রাসূল বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করে দিও, আমাদের প্রতিপালক তো দয়াময়, তোমরা যা বলতেছ সে বিষয়ে একমাত্র সহায়স্থল তিনিই।’


আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

Post a Comment

0 Comments