Header Ads Widget

সূরা কাহ্‌ফ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল কাহ্‌ফ বাংলা তরজমা,সূরা কাহ্‌ফ বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল কাহ্‌ফ, সকল আমল সূরা আল কাহ্‌ফ,

সূরা কাহ্‌ফ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল কাহ্‌ফ বাংলা তরজমা,সূরা কাহ্‌ফ বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল কাহ্‌ফ, সকল আমল সূরা আল কাহ্‌ফ,

 ১৮ . আল কাহ্‌ফ - ( الكهف ) | গুহা

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১১০


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَىٰ عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجًا ۜ


আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযীআনঝালা ‘আলা-‘আবদিহিল কিতা-বা ওয়ালাম ইয়াজ‘আল্লাহূ ‘ইওয়াজা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নিজ বান্দার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে কোনও রকমের বক্রতা রাখেননি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ র ই যিনি তাঁর বান্দার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন এবং এতে তিনি বক্রতা রাখেন নাই;



قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِّن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا


কাইয়িমাল লিইউনযিরা বা’ছান শাদীদাম মিল্লাদুনহু ওয়া ইউবাশশিরাল মু’মিনীনাল্লাযীনা ইয়া‘মালূনাসসা-লিহা-তি আন্না লাহুম আজরান হাছানা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নাযিল করেছেন এক সরল-সঠিক গ্রন্থরূপে, ১ মানুষকে নিজের পক্ষ থেকে এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার এবং যেসকল মুমিন সৎকর্ম করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট প্রতিদান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন করে এবং মুমিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে-তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাকে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্যে, এবং মু’মিনগণ, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দিবার জন্যে যে, তাদের জন্যে আছে উত্তম পুরস্কার,

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

তাফসীরঃ

১. অর্থাৎ কুরআন সর্বপ্রকার প্রান্তিকতামুক্ত এক সরল ও ভারসাম্যমান গ্রন্থ। এর ভাষা ও বিষয়বস্তুতে কোন ত্রুটি ও বক্রতা নেই। এ গ্রন্থ তার অনুসারীকে সরল পথের দিশা দান করে। ফলে তার বিপথগামিতার ভয় থাকে না। সে সোজা আল্লাহর সন্তষ্টিতে উপনীত হয় ও জান্নাতের অধিকারী হয়ে যায়। -অনুবাদক



مَّاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا


মা-কিছীনা ফীহি আবাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাতে তারা সর্বদা থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাতে তারা হবে চিরস্থায়ী,



وَيُنذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا


ওয়া ইউনযিরাল্লাযীনা কা-লুত্তাখাযাল্লা-হু ওয়ালাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই সকল লোককে সতর্ক করার জন্য, যারা বলে, আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করার জন্যে যারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং সতর্ক করার জন্যে এদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছেন,



مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ ۚ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ ۚ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا


মা-লাহুম বিহী মিন ‘ইলমিওঁ ওয়ালা-লিআ-বাইহিম কাবুরাত কালিমাতান তাখরুজু মিন আফওয়া-হিহিম ইয়ঁইয়াকূলূনা ইল্লা-কাযিবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এ বিষয়ে কোন জ্ঞানগত প্রমাণ না তাদের নিজেদের কাছে আছে আর না তাদের বাপ-দাদাদের কাছে ছিল। এটা অতি গুরুতর কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হচ্ছে। তারা যা বলছে তা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও নেই। কত কঠিন তাদের মুখের কথা। তারা যা বলে তা তো সবই মিথ্যা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই বিষয়ে এদের কোন জ্ঞান নেই এবং এদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। এদের মুখনিঃসৃত বাক্য কী সাংঘাতিক! এরা তো কেবল মিথ্যাই বলে।



فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَـٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا


ফালা‘আল্লাকা বা-খি‘উন্নাফছাকা ‘আলা আ-ছা-রিহিম ইল্লাম ইউ’মিনূ বিহা-যাল হাদীছিআছাফা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়) তারা (কুরআনের) এ বাণীর প্রতি ঈমান না আনলে যেন তুমি আক্ষেপ করে করে তাদের পেছনে নিজের প্রাণনাশ করে বসবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা এই বাণী বিশ্বাস না করলে সম্ভবত এদের পিছনে ঘুরে তুমি দুঃখে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে।



إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا


ইন্না-জা‘আলনা-মা-‘আলাল আরদি ঝীনাতাল্লাহা- লিনাবলুওয়াহুম আইয়ুহুম আহছানু ‘আমালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চিত জেন, ভূপৃষ্ঠে যা-কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য শোভাকর বানিয়েছি, মানুষকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্যে বেশি ভালো কাজ করে। ২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলিকে এর শোভা করেছি, মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্যে যে, এদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।


তাফসীরঃ

২. মুশরিকদের কুফর ও তাদের বৈরীসুলভ আচরণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে বড়ই দুঃখ পেতেন। এ আয়াতসমূহে তাঁকে সান্তনা দেওয়া হয়েছে যে, এ দুনিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। লক্ষ্য করা হবে কে দুনিয়ার সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়ে আল্লাহ তাআলাকে ভুলে যায় আর কে একে আল্লাহ তাআলার হুকুম মত ব্যবহার করে নিজের জন্য আখেরাতের পুঁজি সঞ্চয় করে। তো এটা যখন পরীক্ষাক্ষেত্র তখন এখানে দু’রকমের লোকই পাওয়া যাবে। একদল কৃতকার্য এবং একদল অকৃতকার্য। সুতরাং ওই সব লোক যদি কুফর ও শিরকে লিপ্ত হয়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই এবং সেজন্য আপনার এতটা দুঃখ পাওয়াও উচিত নয়, যদ্দরুণ আপনি আত্মবিনাশী হয়ে পড়বেন।



وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا


ওয়া ইন্না-লাজা-‘ইলূনা মা-‘আলাইহা-সা‘ঈদান জুরুঝা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আমি ভূপৃষ্ঠে যা-কিছু আছে, একদিন তা সমতল প্রান্তরে পরিণত করব। ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তার উপর যাকিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এর ওপর যা কিছু আছে তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত করব।


তাফসীরঃ

৩. অর্থাৎ, যেসব বস্তুর কারণে ভূ-পৃষ্ঠকে শোভাময় ও মনোরম দেখা যায়, একদিন তা সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। ঘর-বাড়ি, ইমারত, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষরাজি কিছুই থাকবে না। পৃথিবীকে এক সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। তখন এ সত্য পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, দুনিয়ার বাহ্যিক সৌন্দর্য বড়ই ক্ষণস্থায়ী। এটাই সেই সময়, যখন আপনার সাথে জেদ ও শত্রুতামূলক আচরণকারীরা নিজেদের অশুভ পরিণামে উপনীত হবে। সুতরাং দুনিয়ায় তাদেরকে যে ঢিল দেওয়া হচ্ছে তার মানে দুষ্কর্ম সত্ত্বেও তাদেরকে স্বাধীন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন নয়। সুতরাং তাদের আচরণে আপনি অতটা ব্যথিত হবেন না এবং তাদের কঠিন পরিণতির জন্যও চিন্তিত হবেন না। আপনার কাজ তাবলীগ ও প্রচারকার্য চালানো। আপনি তাতেই মশগুল থাকুন।



أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا


আম হাছিবতা আন্না আসহা-বাল কাহফি ওয়ার রাকীমি কা-নূমিন আ-য়া-তিনা‘আজাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি মনে কর গুহা ও রাকীমবাসীরা ৪ আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে (বেশি) বিস্ময়কর ছিল? ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর?


তাফসীরঃ

৪. যারা সে যুবক দলটি সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিল, তারা একথাও বলেছিল যে, তাদের ঘটনা বড়ই আশ্চর্যজনক। এ আয়াতে তাদের সে কথারই বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা অসীম কুদরত ও ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর কুদরতের প্রতি লক্ষ্য করলে এ ঘটনা অতি বিস্ময়কর কিছু নয়। কেননা তাঁর কুদরতের কারিশমা তো অগণন।সে কারিশমার তালিকায় এর চেয়েও বিস্ময়কর বহু ঘটনা আছে।


৫. কুরআন মাজীদের বর্ণনা অনুযায়ী তাদের ঘটনা সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ জনা কয়েক যুবক এক মুশরিক রাজার আমলে তাওহীদে বিশ্বাসী ছিল। এ কারণে তাদের উপর রাজার রোষদৃষ্টি পড়ে। তাই তারা নগর ছেড়ে একটা পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করেছিল। সেখানে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে গভীরভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন করে দিলেন। সেই গুহায় তারা তিনশ’ নয় বছর পর্যন্ত ঘুমের ভেতর পড়ে থাকল। আল্লাহ তাআলার কুদরতের কী মহিমা, এতটা দীর্ঘ কাল পরিক্রমা সত্ত্বেও তাদের জীবন সম্পূর্ণ সহীহ-সালামত থাকে। তাদের দেহে বিন্দুমাত্র পচন ধরেনি। তিনশ’ নয় বছর পর যখন তাদের চোখ খুলল, তখন তারা ধারণাই করতে পারেনি এতটা দীর্ঘ সময় তারা ঘুমে ছিল। সুতরাং যখন ক্ষুধা অনুভব হল নিজেদের একজনকে খাদ্য কেনার জন্য শহরে পাঠাল। তবে সতর্ক করে দিল যেন সাবধানে থাকে। রাজার লোক যেন জানতে না পারে। ওদিকে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় এই তিনশ’ বছর কালের ভেতর সেই জালেম রাজার মৃত্যু ঘটেছিল। তারপর বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের একজন ভালো লোক সিংহাসন লাভ করেছিল। এ যাবৎকালের ভেতর পরিবেশ-পরিস্থিতির বিপুল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিল। এহেন অবস্থায় প্রেরিত ব্যক্তি শহরে পৌঁছল এবং খাদ্য ক্রয়ের জন্য সেই তিনশ’ বছর আগের পুরানো মুদ্রা পেশ করল। দোকানী যখন সেই মুদ্রা দেখল তখন একে-একে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ পেয়ে গেল। বুঝতে বাকি রইল না যে, যুবক দল একাধারে তিনশ’ বছর ঘুমের ভেতর পার করেছে। নতুন রাজা ঘটনা জানতে পেরে তাদেরকে অত্যন্ত সম্মানজনকভাবে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। পরিশেষে যখন তাদের ওফাত হয়ে গেল, তিনি তাদের স্মৃতি স্বরূপ সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন। খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের কাছে এ ঘটনাটি ঝবাবহ Seven Sleepers (সপ্ত ঘুমন্ত) নামে প্রসিদ্ধ। বিখ্যাত ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড গিবন ‘রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন’ নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে বলেন, সেই রাজার নাম ছিল ‘ডোসিস’। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের উপর সে কঠিন জুলুম-নির্যাতন চালাত। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল তুরস্কের ‘আফসুস’ নামক শহরে। যেই ন্যায়পরায়ণ রাজার আমলে তাদের ঘুম ভেঙ্গেছিল, গিবনের বর্ণনা অনুযায়ী তার নাম থিওডোসিস। মুসলিম ঐতিহাসিক ও মুফাসসিরগণ ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন তা গিবনের বর্ণনারই কাছাকাছি। তারা জালেম রাজার নাম বলেছেন ‘দিকয়ানূস’। কোন কোন আধুনিক গবেষকের মতে এ ঘটনা ঘটেছিল জর্ডানের রাজধানী আম্মানের নিকটবর্তী এক স্থানে। সেখানে একটি গুহার ভেতর কয়েকটি লাশ অদ্যাবধি বিদ্যমান। আমি আমার ‘জাহানে দীদাহ’ নামক সফরনামায় তাদের সে গবেষণা-প্রতিবেদন সবিস্তারে উল্লেখ করেছি। কিন্তু এসব মতামতের কোনওটিই এমন প্রমাণসিদ্ধ নয়, যার উপর পরিপূর্ণ নির্ভর করা যেতে পারে। কুরআন মাজীদের রীতি হল ঘটনার কেবল শিক্ষণীয় অংশটুকুই বর্ণনা করা। তার অতিরিক্ত ঘটনার খুঁটিনাটি বিবরণ সে কখনও দেয় না। কাজেই আমাদেরও তার পেছনে পড়ার কোনও দরকার নেই। সে যুবক দল গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল বলে তাদেরকে আসহাবে কাহফ (গুহাবাসী) বলা হয়। এতটুকু তো স্পষ্ট। কিন্তু তাদেরকে ‘রাকীমবাসী’ বলার কারণ কী? এ সম্পর্কে মুফাসরিদের মধ্যে মতভিন্নতা রয়েছে। কারও মতে ‘রাকীম’ হল সেই গুহায় নিম্নস্থ উপত্যকার নাম। কেউ বলেন, রাকীম হল ফলকলিপি। যুবক দলটি মারা যাওয়ার পর একটি ফলকে তাদের নাম-পরিচয় লিখে দেওয়া হয়েছিল। তাই তাদেরকে ‘আসহাবুর রাকীম’ও বলা হয়। আবার কেউ মনে করেন, তারা যে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল সেই পাহাড়টির নাম ছিল রাকীম। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।


১০


إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا


ইয আওয়াল ফিতইয়াতুইলাল কাহফি ফাকা-লূরাব্বানাআ-তিনা-মিল্লাদুনকা রাহমাতাওঁ ওয়া হাইয়ি’ লানা-মিন আমরিনা-রাশাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা সেই সময়ের কথা, যখন যুবক দলটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং (আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করে) বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি আপনার নিকট থেকে বিশেষ রহমত নাযিল করুন এবং আমাদের এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কল্যাণকর পথের ব্যবস্থা করে দিন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন যুবকরা গুহায় আশ্রয় নিল তখন তারা বলেছিল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা কর।’


১১


فَضَرَبْنَا عَلَىٰ آذَانِهِمْ فِي الْكَهْفِ سِنِينَ عَدَدًا


ফাদারাবনা-‘আলাআ-যা-নিহিম ফিল কাহফি ছিনীনা ‘আদাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং আমি তাদের কানে চাপড় মেরে কয়েক বছর গুহার ভেতর রাখলাম। ৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ফেলে দেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি এদেরকে গুহায় কয়েক বৎসর ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম,


তাফসীরঃ

৬. ‘কানে চাপড় মারা’ একটি আরবী প্রবচন। এর অর্থ গভীর নিদ্রা চাপিয়ে দেওয়া। এর তাৎপর্য হল, মানুষ ঘুমের শুরুভাগে কানে শুনতে পায়। কানের শোনা বন্ধ হয় তখনই যখন ঘুম গভীর হয়ে যায়।


১২


ثُمَّ بَعَثْنَاهُمْ لِنَعْلَمَ أَيُّ الْحِزْبَيْنِ أَحْصَىٰ لِمَا لَبِثُوا أَمَدًا


ছু ম্মা বা‘আছনা-হুম লিনা‘লামা আইয়ুল হিঝবাইনি আহসা-লিমা-লাবিছূদ্মআমাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর তাদেরকে জাগিয়ে দিলাম, এটা লক্ষ্য করার জন্য যে, তাদের দুই দলের মধ্যে কোন দল নিজেদের ঘুমে থাকার মেয়াদকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। ৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি, একথা জানার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন দল তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয় করতে পারে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পরে আমি এদেরকে জাগরিত করলাম জানিবার জন্যে যে, দুই দলের মধ্যে কোন্টি এদের অবস্থিতিকাল সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে।


তাফসীরঃ

৭. সামনে আসছে, জাগ্রত হওয়ার পর যুবক দল পরস্পর বলাবলি করতে লাগল তারা কতক্ষণ ঘুমিয়েছিল। আয়াতের ইঙ্গিত সে দিকেই।


১৩


نَّحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُم بِالْحَقِّ ۚ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى


নাহনুনাকুসসু‘আলাইকা নাবাআহুম বিলহাক্কি ইন্নাহুম ফিতইয়াতুন আ-মানূ বিরাব্বিহিম ওয়াঝিদনা-হুম হুদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তোমার কাছে তাদের ঘটনা যথাযথভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল একদল যুবক, যারা নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি তাদেরকে হিদায়াতে প্রভূত উৎকর্ষ দান করেছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার নিকট এদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি : এরা ছিল কয়েকজন যুবক, এরা এদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি এদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেছিলাম,


১৪


وَرَبَطْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَن نَّدْعُوَ مِن دُونِهِ إِلَـٰهًا ۖ لَّقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا


ওয়া রাবাতনা-‘আলা-কুলূবিহিম ইয কা-মূফাকা-লূরাব্বুনা-রাব্বুছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিলান নাদ‘উওয়া মিন দূনিহীইলা-হাল লাকাদ কুলনাইযান শাতাতা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদের অন্তর সুদৃঢ় করে দিয়েছিলাম। ৮ এটা সেই সময়ের কথা, যখন তারা (রাজার সামনেই) দাঁড়াল এবং বলল, আমাদের প্রতিপালক তিনিই, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিক। আমরা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে কখনই ডাকব না। তাহলে তো আমরা চরম অবাস্তব কথাই বলব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদের মন দৃঢ় করেছিলাম, যখন তারা উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর তারা বললঃ আমাদের পালনকর্তা আসমান ও যমীনের পালনকর্তা আমরা কখনও তার পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি এদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম; এরা যখন উঠিয়া দাঁড়াইল তখন বলল, ‘আমাদের প্রতিপালক। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক। আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহ্কে আহ্বান করব না ; যদি করে বসি, তবে তা অতিশয় গর্হিত হবে।


তাফসীরঃ

৮. ইবনে কাছীর (রহ.)-এর একটি বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, পৌত্তলিক রাজা যখন তাদের আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানতে পারল, তখন তাদেরকে নিজ দরবারে ডেকে পাঠাল এবং তাদেরকে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তারা নির্ভীকচিত্তে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাওহীদের আকীদা তুলে ধরল, যেমন আয়াতে বলা হয়েছে। তাদের অন্তরের সেই দৃঢ়তা ও অবিচলতার প্রতিই এ আয়াতে ইশারা করা হয়েছে।


১৫


هَـٰؤُلَاءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِن دُونِهِ آلِهَةً ۖ لَّوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِم بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ ۖ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا


হাউলাই কাওমুনাত্তাখাযূমিন দূ নিহীআ-লিহাতাল লাওলা-ইয়া’তূনা ‘আলাইহিম বিছুলতা-নিম বাইয়িনিন ফামান আজলামুমিম্মানিফতারা-‘আলাল্লা-হি কাযিবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এই আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁর পরিবর্তে আরও বহু মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে। (তাদের বিশ্বাস সত্য হলে) তারা নিজ মাবুদদের সপক্ষে স্পষ্ট কোন প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক গোনাহগার আর কে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমাদেরই এই স্বজাতিগণ, তাঁর পরিবর্তে অনেক ইলাহ্ গ্রহণ করেছে। এরা এই সমস্ত ইলাহ্ সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন ? যে আল্লাহ্ সম্বন্ধে মিথ্যা উদ্ভাবন করে তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে ?’


১৬


وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنشُرْ لَكُمْ رَبُّكُم مِّن رَّحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُم مِّنْ أَمْرِكُم مِّرْفَقًا


ওয়া ইযি‘তাঝালতুমূহুম ওয়ামা-ইয়া‘বুদূনা ইল্লাল্লা-হা ফা’ঊইলাল কাহফি ইয়ানশুরুলাকুম রাব্বুকুম মির রাহমাতিহী ওয়া ইউহাইয়ি’ লাকুম মিন আমরিকুম মিরফাকা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(সাথী বন্ধুরা!) তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত করে তাদের থেকেও, তখন চলো, ওই গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। ৯ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য নিজ রহমত বিস্তার করে দেবেন এবং তোমাদের বিষয়টা যাতে সহজ হয় সেই ব্যবস্থা করে দেবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা যখন তাদের থেকে পৃথক হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করে তাদের থেকে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্যে দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ কর্মকে ফলপ্রসু করার ব্যবস্থা করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা যখন বিচ্ছিন্ন হলে এদের হতে ও এরা আল্লাহ্ র পরিবর্তে যাদের ‘ইবাদত করে তাদের হতে তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন।


তাফসীরঃ

৯. অর্থাৎ, তোমরা যখন সত্য দীন অবলম্বন করেছ এবং তোমাদের শহরবাসী তোমাদের শত্রু হয়ে গেছে, তখন এ দীন অনুসারে ইবাদত-বন্দেগী করার উপায় কেবল এই যে, তোমরা শহর ত্যাগ করে পাহাড়ে চলে যাও এবং তার গুহায় গিয়ে আশ্রয় নাও। তাহলে কেউ তোমাদের খুঁজে পাবে না।


১৭


۞ وَتَرَى الشَّمْسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَاوَرُ عَن كَهْفِهِمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقْرِضُهُمْ ذَاتَ الشِّمَالِ وَهُمْ فِي فَجْوَةٍ مِّنْهُ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ ۗ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا


ওয়া তারাশশামছা ইযা-তালা‘আততাঝা-ওয়ারু ‘আন কাহফিহিম যা-তাল ইয়ামীনি ওয়া ইযা-গারাবাত তাকরিদুহুম যা-তাশশিমা-লি ওয়া হুম ফী ফাজওয়াতিম মিনহু যালিকা মিন আ-য়া-তিল্লা-হি মাইঁ ইয়াহদিল্লা-হু ফাহুওয়াল মুহতাদি ওয়া মাই ইউদলিল ফালান তাজিদা লাহূত্তয়ালিইইয়াম মুরশিদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(সে গুহাটি এমন ছিল যে,) তুমি সূর্যকে তার উদয়কালে দেখতে পেতে তা তাদের গুহার ডান দিক থেকে সরে চলে যায় এবং অস্তকালে বা দিক থেকে তার পাশ কেটে যায়। ১০ আর তারা ছিল গুহার প্রশস্ত অংশে (শায়িত)। এসব আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। ১১ আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয় আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তার এমন কোন সাহায্যকারী পাবে না, যে তাকে সৎপথে আনবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি দেখতে পেতে এরা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত, সূর্য উদয়কালে এদের গুহার দক্ষিণ পার্শ্বে হেলিয়া যায় এবং অস্তকালে এদেরকে অতিক্রম করে বাম পার্শ্ব দিয়ে, এই সমস্ত আল্লাহ্ র নিদর্শন। আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।


তাফসীরঃ

১০. অর্থাৎ, গুহায় তাদের আশ্রয় গ্রহণ, সুদীর্ঘকাল নিদ্রা যাপন, রোদ থেকে রক্ষা পাওয়া-এসব কিছু ছিল আল্লাহ তাআলার কুদরত ও হিকমতের নিদর্শন।


১১. গুহাটির অবস্থানস্থল এমন ছিল যে, তাতে রোদ ঢুকত না, সকাল বেলা সূর্য ডান দিক থেকে এবং বিকাল বেলা বাম দিক থেকে ঘুরে যেত। এভাবে তারা রোদের তাপ থেকে রক্ষা পেত। আর এতে করে যেমন তাদের দেহ ও কাপড় নষ্ট হতে পারেনি, তেমনি কাছাকাছি স্থানে রোদ পড়ার কারণে তারা আলো ও উষ্ণতার উপকারও লাভ করত।


১৮


وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ ۚ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ ۖ وَكَلْبُهُم بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ ۚ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا


ওয়া তাহছাবুহুম আইকা-জাওঁ ওয়া হুম রুকূদুওঁ ওয়া নুকালিলবুহুম যা-তাল ইয়ামীনি ওয়া যা-তাশশিমা-লি ওয়াকালবুহুম বা-ছিতু ন যিরা-‘আইহি বিল ওয়াসীদি লাবিততালা‘তা ‘আলাইহিম লাওয়াল্লাইতা মিনহুম ফিরা-রাওঁ ওয়ালামুলি’তা মিনহুম রু‘বা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তাদের দেখলে) তোমার মনে হত তারা জাগ্রত, অথচ তারা ছিল নিদ্রিত। ১২ আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম ডানে ও বামে। আর তাদের কুকুর গুহামুখে সামনের পা দু’টি ছড়িয়ে (বসা) ছিল। তুমি যদি তাদেরকে উঁকি মেরে দেখতে, তবে তুমি তাদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে এবং তাদের ভয়ে পরিপূর্ণরূপে ভীত হয়ে পড়তে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাই ডান দিকে ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি মনে করতে এরা জাগ্রত, কিন্তু এরা ছিল নিদ্রিত। আমি এদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডান দিকে ও বাম দিকে এবং এদের কুকুর ছিল সামনের পা দুইটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। তাকিয়ে এদেরকে দেখলে তুমি পিছন ফিরে পলায়ন করতে ও এদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে;


তাফসীরঃ

১২. অর্থাৎ, ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের যেসব আলামত দর্শকের দৃষ্টিগোচর হয়, তাদের মাঝে তার কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। বরং তাদের দেখলে মনে হত, তারা জাগ্রত অবস্থায় শুয়ে আছে।


১৯


وَكَذَٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءَلُوا بَيْنَهُمْ ۚ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ ۖ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۚ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَـٰذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَىٰ طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا


ওয়া কাযা-লিকা বা‘আছনা-হুম লিইয়াতাছাআলূবাইনাহুম কা-লা কাইলুম মিনহুম কাম লাবিছতুম কা-লূলাবিছনা-ইয়াওমান আও বা‘দা ইয়াওমিন কালূরাব্বুকুম আ‘লামুবিমা-লাবিছতুম ফাব‘আছূআহাদাকুম বিওয়ারিকিকুম হাযিহীইলাল মাদীনাতি ফালইয়ানজু র আইয়ুহাআঝকা-তা‘আ-মান ফালইয়া’তিকুম বিরিঝকিম মিনহু ওয়াল ইয়াতালাততাফ ওয়ালা-ইউশ‘ইরান্না বিকুম আহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি (তাদেরকে যেমন নিদ্রাচ্ছন্ন করেছিলাম) এভাবেই তাদেরকে জাগিয়ে দিলাম, যাতে তারা পরস্পরে একে অন্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের মধ্যে একজন বলল, তোমরা এ অবস্থায় কতকাল থেকেছ? কেউ কেউ বলল, আমরা একদিন বা তার কিছু কম (ঘুমে) থেকে থাকব। অন্যরা বলল, তোমাদের প্রতিপালকই ভালো জানেন তোমরা এ অবস্থায় কতকাল থেকেছ। এখন নিজেদের কোন একজনকে রূপার মুদ্রা দিয়ে নগরে পাঠাও। সে গিয়ে দেখুক তার কোন এলাকায় ভালো খাদ্য আছে ১৩ এবং সেখান থেকে তোমাদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে আসুক। সে যেন সতর্কতার সাথে কাজ করে এবং সে যেন তোমাদের সম্পর্কে কাউকে অবহিত হতে না দেয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ শহরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র। অতঃপর তা থেকে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এভাবেই আমি এদেরকে জাগরিত করলাম যাতে এরা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদের একজন বলল, ‘তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ?’ কেউ কেউ বলল, ‘আমরা অবস্থান করেছি এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ।’ কেউ কেউ বলল, ‘তোমরা কত কাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের প্রতিপালকই ভাল জানেন। এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর। সে যেন দেখে কোন্ খাদ্য উত্তম ও তা হতে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্যে। সে যেন বিচক্ষণতার সহিত কাজ করে ও কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কাউকেও কিছু জানতে না দেয়।


তাফসীরঃ

১৩. এটাই প্রকাশ যে, উত্তম খাদ্য দ্বারা হালাল খাদ্য বোঝানো হয়েছে। তাদের ভাবনা ছিল, পৌত্তলিকদের শহরে হালাল খাদ্য পাওয়া তো সহজ নয়। তাই যাকে পাঠিয়েছিল তাকে সতর্ক করে দিল, যেন এমন জায়গা থেকে খাবার কেনে যেখানে হালাল খাদ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া তাদের ধারণা মতে সেখানে তখনও পর্যন্ত পৌত্তলিক রাজারই শাসন চলছিল। তাই তাদের দ্বিতীয় চিন্তা ছিল, পাছে এ গুহায় তাদের আত্মগোপনের কথা সে জেনে ফেলে। তাই তাকে সতর্ক করে দিল, সে যেন খাদ্য কিনতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে।


২০


إِنَّهُمْ إِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا


ইন্নাহুম ইয়ঁ ইয়াজহারূ‘আলাইকুম ইয়ারজুমূকুম আও ইউ‘ঈদূকুম ফী মিল্লাতিহিম ওয়ালান তুফলিহূইযান আবাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কেননা তারা (শহরবাসী) যদি তোমাদের সন্ধান পেয়ে যায়, তবে তারা তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরে যেতে বাধ্য করবে। আর তাহলে তোমরা কখনও সফলতা লাভ করতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এরা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে তবে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে বা তোমাদেরকে এদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনও সাফল্য লাভ করবে না।’


২১


وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ ۖ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِم بُنْيَانًا ۖ رَّبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَىٰ أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِم مَّسْجِدًا


ওয়া কাযা-লিকা আ‘ছারনা-‘আলাইহিম লিইয়া‘লামূআন্না-ওয়া‘দাল্লা-হি হাক্কুওঁ ওয়া আন্নাছছা-‘আতা লা-রাইবা ফীহা- ইয ইয়াতানা -ঝা‘ঊনা বাইনাহুম আমরাহুম ফাকালুবনূ‘আলাইহিম বুনইয়া-নার রাব্বুহুম আ‘লামুবিহিম কা-লাল্লাযীনা গালাবূ ‘আলাআমরিহিম লানাত্তাখিযান্না ‘আলাইহিম মাছজিদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এভাবে আমি মানুষের কানে তাদের সংবাদ পৌঁছিয়ে দিলাম, ১৪ যাতে তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পারে আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং এটাও যে, কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, ১৫ তাতে কোন সন্দেহ নেই। (অতঃপর সেই সময়ও আসল) যখন লোকে তাদের সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল। ১৬ কিছু লোক বলল, তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের প্রতিপালকই তাদের বিষয়ে ভালো জানেন। ১৭ (শেষ পর্যন্ত) তাদের বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বলল, আমরা অবশ্যই তাদের উপর একটি মসজিদ নির্মাণ করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইভাবে আমি মানুষকে এদের বিষয় জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল তখন অনেকে বলল, ‘এদের ওপর সৌধ নির্মাণ কর।’ এদের প্রতিপালক এদের বিষয় ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা বলল, আমরা তো নিশ্চয়ই এদের পার্শ্বে মসজিদ নির্মাণ করব।’


তাফসীরঃ

১৪. যাকে খাদ্য কিনতে পাঠানো হয়েছিল, কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী তার নাম ‘তামলীখা’। সে যথারীতি খাদ্য কেনার জন্য শহরে গেল এবং দোকানদারকে তিনশ’ বছর আগের মুদ্রা দিল, যাতে সেই যুগের রাজার ছাপ লাগানো ছিল। দোকানদার তো সে মুদ্রা দেখে অবাক। সে তাকে বর্তমান রাজার কাছে নিয়ে গেল। নতুন রাজা ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তার এই ঘটনা জানা ছিল যে, রাজা দিকয়ানূসের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদল যুবক নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। রাজা আরও খোঁজ-খবর নিলেন। শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেল, এরাই সেই যুবক দল। রাজা তাদেরকে খুব সম্মান ও খাতির-যত্ন করলেন। কিন্তু তারা পুনরায় সেই গুহায় চলে গেল এবং সেখানেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে মৃত্যু দান করলেন।


১৫. আসহাবে কাহফের এই সুদীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকা এবং তারপর আবার জেগে ওঠা নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতেরই নিদর্শন ছিল। এ ঘটনার প্রতি লক্ষ্য করলে যে-কোনও ব্যক্তির অতি সহজেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কথা যে, যেই সত্তা সেই যুবক দলকে তাদের সুদীর্ঘকালীন ঘুমের পর জীবিতরূপে জাগাতে পেরেছেন, নিঃসন্দেহে তিনি গোটা মানব জাতিকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম। কোন কোন রিওয়ায়াতে আছে, সে সময়ের রাজা নিজে তো কিয়ামত ও আখেরাতে বিশ্বাস রাখতেন, কিন্তু প্রজাদের মধ্যে কিছু লোক আখেরাত সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করত, তাই রাজা দু‘আ করেছিলেন, আল্লাহ তাআলা যেন তাদেরকে এমন কোন ঘটনা দেখিয়ে দেন, যা দ্বারা তারা আখেরাত সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তরে এ বিশ্বাস পাকাপোক্ত হয়ে যাবে যে, আখেরাত সত্যিই আছে। সেই পটভূমিতেই আল্লাহ তাআলা যুবক দলকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেন এবং এভাবে নিজ কুদরতের কারিশমা দেখিয়ে দেন।


১৬. যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, ঘুম থেকে জাগার পর যুবকেরা বেশিকাল বেঁচে থাকেনি। অবিলম্বে সেই গুহাতেই তাদের ইন্তিকাল হয়ে যায়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের আরেক কারিশমা দেখালেন। যে শহরে এককালে তাদের জীবনের কোন আশা ছিল না সেই শহরেই এখন তাদের আশাতীত সম্মান। তাদের জন্য এখন স্মৃতিসৌধ নির্মাণের চিন্তা করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল তারা সিদ্ধান্ত নিল, তাদের গুহার পাশে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে। প্রকাশ থাকে যে, আম্মানের কাছে যে গুহার সন্ধান পাওয়া গেছে, তাতে খনন কার্য চালানো হলে একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষও পাওয়া যায়। আরও প্রকাশ থাকে, তাদের মৃত্যুস্থানে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখনকার ক্ষমতাসীন লোকজন। কুরআন মাজীদে তাদের সে সিদ্ধান্তের পক্ষে কোন সমর্থন পাওয়া যায় না। কাজেই এ আয়াত দ্বারা কবরস্থানে স্মৃতিসৌধ বানানো বা কবরস্থানকে ইবাদতখানা বানানোর বৈধতা প্রমাণ হয় না। বরং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে এ জাতীয় কাজ করতে নিষেধ করেছেন।


১৭. বিভিন্ন রিওয়ায়াত দ্বারা জানা যায় যখন তাদের কবরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাব আসল, তখন অনেকে চিন্তা করছিল, তাদের সকলের নাম-ঠিকানা ধর্মমত ইত্যাদিও নামফলক আকারে লিখে দেওয়া হোক। কিন্তু তাদের বিস্তারিত অবস্থা সম্পর্কে যেহেতু কেউ জ্ঞাত ছিল না, তাই শেষে তারা বলল, তাদের অবস্থাদি সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান তো কেবল আল্লাহ তাআলারই আছে, অন্য কারও নয়। কাজেই আমরা তাদের নাম-ঠিকানা ইত্যাদির পেছনে না পড়ে, বরং কেবল স্মৃতিসৌধই নির্মাণ করে দেই


২২


سَيَقُولُونَ ثَلَاثَةٌ رَّابِعُهُمْ كَلْبُهُمْ وَيَقُولُونَ خَمْسَةٌ سَادِسُهُمْ كَلْبُهُمْ رَجْمًا بِالْغَيْبِ ۖ وَيَقُولُونَ سَبْعَةٌ وَثَامِنُهُمْ كَلْبُهُمْ ۚ قُل رَّبِّي أَعْلَمُ بِعِدَّتِهِم مَّا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا قَلِيلٌ ۗ فَلَا تُمَارِ فِيهِمْ إِلَّا مِرَاءً ظَاهِرًا وَلَا تَسْتَفْتِ فِيهِم مِّنْهُمْ أَحَدًا


ছাইয়াকূলূনা ছালা-ছাতুর রা-বি‘উহুম কালবুহুম ওয়া ইয়াকূলূনা খামছাতুন ছা-দিছুহুম কালবুহুম রাজমাম বিলগাইবি ওয়া ইয়াকূলূনা ছাব‘আতুওঁ ওয়া ছা-মিনুহুম কালবুহুম কুর রাববীআ‘লামুবি‘ইদ্দাতিহিম মা-ইয়া‘লামুহুম ইল্লা-কালীলুন ফালা-তুমারি ফীহিম ইল্লা-মিরাআন জা-হিরাওঁ ওয়ালা-তাছতাফতি ফীহিম মিনহুম আহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন আর চতুর্থটি তাদের কুকুর। কিছু লোক বলবে, তারা ছিল পাঁচজন আর ষষ্ঠটি তাদের কুকুর। এসবই তাদের অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া জাতীয় কথা। কিছু লোক বলবে, তারা ছিল সাতজন, আর অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলে দাও আমার প্রতিপালকই তাদের প্রকৃত সংখ্যা ভালো জানেন। অল্প কিছু লোক ছাড়া কেউ তাদের সম্পর্কে পুরোপুরি জানে না। সুতরাং তাদের সম্পর্কে সাদামাঠা কথাবার্তার বেশি কিছু আলোচনা করো না এবং তাদের সম্বন্ধে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও করো না। ১৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অজ্ঞাত বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করে এখন তারা বলবেঃ তারা ছিল তিন জন; তাদের চতুর্থটি তাদের কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ জন। তাদের ছষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ আমার পালনকর্তা তাদের সংখ্যা ভাল জানেন। তাদের খবর অল্প লোকই জানে। সাধারণ আলোচনা ছাড়া আপনি তাদের সম্পর্কে বিতর্ক করবেন না এবং তাদের অবস্থা সম্পর্কে তাদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ ও করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কেউ কেউ বলবে, ‘এরা ছিল তিনজন, এদের চতুর্থটি ছিল এদের কুকুর’ এবং কেউ কেউ বলবে, ‘এরা ছিল পাঁচজন, এদের ষষ্ঠটি ছিল এদের কুকুর’, অজানা বিষয়ে অনুমানের ওপর নির্ভর করে। আবার কেউ কেউ বলবে, ‘এরা ছিল সাতজন, এদের অষ্টমটি ছিল এদের কুকুর।’ বল, ‘আমার প্রতিপালকই এদের সংখ্যা ভাল জানেন’; এদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে। সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি এদের বিষয়ে বিতর্ক কর না এবং এদের কাউকেও এদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কর না।


তাফসীরঃ

১৮. এ আয়াত আমাদেরকে আলাদাভাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দান করছে। তা এই যে, যে বিষয়ে মানুষের কোনও ব্যবহারিক ও কর্মগত মাসআলা নির্ভরশীল নয়, সে বিষয়ে অহেতুক খোঁড়াখুঁড়ি ও তত্ত্ব তালাশে লেগে পড়া উচিত নয়। আসহাবে কাহফের ঘটনা থেকে মৌলিকভাবে যে শিক্ষা লাভ হয়, তা হল প্রতিকূল পরিস্থিতির ভেতর সত্যের উপর অটল থাকার চেষ্টা করলে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করেন, যেমন যুবক দলটি সত্যের উপর অটল থাকার চেষ্টা করেছিল এবং শত বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আপন বিশ্বাস থেকে টলেনি; বরং সত্যনিষ্ঠার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিল, ফলে আল্লাহ তাআলা কিভাবে তাদেরকে সাহায্য করেছিলেন! বাকি থাকল এই প্রশ্ন যে, তারা সংখ্যায় কতজন ছিল? বস্তুত এটা মজলিস সরগরম করে তোলার মত কোন প্রশ্ন নয়, যেহেতু এর উপর বিশেষ কোন মাসআলা নির্ভরশীল নয়। তাই এ নিয়ে মাথা গরম করারও কোন প্রয়োজন নেই। বরং উপদেশ দেওয়া হয়েছে, কেউ যদি এ নিয়ে আলোচনা উঠায়ও, তবে সাদামাঠা উত্তর দিয়ে কথা শেষ করে ফেল। অহেতুক এর পেছনে সময় নষ্ট করো না।


২৩


وَلَا تَقُولَنَّ لِشَيْءٍ إِنِّي فَاعِلٌ ذَٰلِكَ غَدًا


ওয়ালা-তাকূলান্না লিশাইয়িন ইন্নী ফা-‘ইলুন যা-লিকা গাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) কোন কাজ সম্পর্কেই কখনও বলো না ‘আমি এ কাজ আগামীকাল করব’।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামী কাল করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কখনই তুমি কোন বিষয়ে বল না, “আমি তা আগামী কাল করব,


২৪


إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ ۚ وَاذْكُر رَّبَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَىٰ أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَـٰذَا رَشَدًا


ইল্লাআইঁ ইয়াশাআল্লা-হু ওয়াযকুর রাব্বাকা ইযা-নাছীতা ওয়াকুল ‘আছাআইঁ ইয়াহদিয়ানি রাববী লিআকরাবা মিন হা-যা-রাশাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে (বলো) আল্লাহ যদি চান (তবে করব)। ১৯ আর কখনও ভুলে গেলে নিজ প্রতিপালককে স্মরণ কর এবং বল, আমি আশা করি আমার প্রতিপালক এমন কোনও বিষয়ের প্রতি আমাকে পথনির্দেশ করবেন, যা এর চেয়েও হিদায়াতের বেশি নিকটবর্তী হবে। ২০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে’ এই কথা না বলে।” যদি ভুলে যাও তবে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর এবং বল, ‘সম্ভবত আমার প্রতিপালক আমাকে এটা অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথনির্দেশ করবেন।’


তাফসীরঃ

১৯. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত সত্য কিনা তার প্রমাণ হিসেবেই প্রশ্নকর্তারা তাঁর কাছে আসহাবে কাহফের ঘটনা জানতে চেয়েছিল। এ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুওয়াতের আরও বহু দলীল-প্রমাণ দান করেছেন, যা তাঁর নবুওয়াত প্রতিষ্ঠার সপক্ষে আসহাবে কাহফের ঘটনা শোনানো অপেক্ষাও বেশি স্পষ্ট। কেউ ঈমান আনতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে সেগুলো আরও বেশি কার্যকর।


২০. যখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘আসহাবে কাহফ’ ও ‘যুলকারনাইন’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন তিনি প্রশ্ন কর্তাদেরকে এক ধরনের ওয়াদা দিয়েছিলেন যে, আমি এ প্রশ্নের উত্তর তোমাদেরকে আগামীকাল দেব। সে সময় তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁর আশা ছিল, আগামীকালের ভেতর ওহীর মাধ্যমে তাঁকে এসব ঘটনা সম্পর্কে অবগত করা হবে। এটাই আলোচ্য আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট। আয়াতে এ ঘটনার প্রতি ইশারা করে আল্লাহ তাআলা একটি স্বতন্ত্র নির্দেশনা দান করেছেন। ইরশাদ করেছেন যে, মুসলিম মাত্রেরই ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে অভ্যস্ত হওয়া উচিত। ভবিষ্যত সম্পর্কিত কোন কথাই ‘ইনশাআল্লাহ’ যোগ না করে বলা উচিত নয়। কোন কোন রিওয়ায়াত দ্বারা জানা যায়, এ বিষয়ে তিনি যে ওয়াদা করেছিলেন, তাতে যেহেতু ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাই পরবর্তী দিন ওহী আসেনি; বরং একাধারে কয়েক দিন ওহী বন্ধ থাকে। অবশেষে ওহী নাযিল হয় এবং প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সাথে সাথে তাতে এ বিষয়েও শিক্ষাদান করা হয়।


২৫


وَلَبِثُوا فِي كَهْفِهِمْ ثَلَاثَ مِائَةٍ سِنِينَ وَازْدَادُوا تِسْعًا


ওয়া লাবিছূফী কাহফিহিম ছালা-ছা মিআতিন ছিনীনা ওয়াঝদা-দূতিছ‘আ-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (অর্থাৎ আসহাবে কাহফ) তাদের গুহায় তিনশ’ বছর এবং অতিরিক্ত নয় বছর (নিদ্রিত অবস্থায়) ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের উপর তাদের গুহায় তিনশ বছর, অতিরিক্ত আরও নয় বছর অতিবাহিত হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা এদের গুহায় ছিল তিনশত বৎসর, আরও নয় বৎসর।


২৬


قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا ۖ لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ ۚ مَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا


কুল্লিলা-হু আ‘লামুবিমা-লাবিছূ লাহূগাইবুছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি আবসির বিহী ওয়া আছমি‘ মা-লাহুম মিন দূ নিহী মিওঁ ওয়ালিইয়িওঁ ওয়ালা-ইউশরিকুফী হুকমিহীআহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(কেউ যদি এ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তবে) বল, আল্লাহই ভালো জানেন, তারা কতকাল (ঘুমিয়ে) ছিল। ২১ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর যাবতীয় গুপ্ত জ্ঞান তাঁরই আছে। তিনি কত উত্তম দ্রষ্টা! কত উত্তম শ্রোতা! তিনি ব্যতীত তাদের আর কোন অভিভাবক নেই। তিনি নিজ কর্তৃত্বে কাউকে শরীক করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি বল, ‘তারা কতকাল ছিল তা আল্লাহ্ই ভাল জানেন’, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই। তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ব্যতীত এদের অন্য কোন অভিভাবক নেই। তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বের শরীক করেন না।


তাফসীরঃ

২১. আল্লাহ যদিও জানিয়ে দিয়েছেন যুবক দল তাদের গুহায় তিনশ’ নয় বছর নিদ্রিত ছিল। কিন্তু এটা জানানোর পর পুনরায় সে কথাই বলে দিয়েছেন যে, এ বিষয়ে কেবল অনুমানের ভিত্তিতে কোন কথা বলা উচিত নয়। কেউ যদি মেয়াদ সম্পর্কে ভিন্নমত প্রকাশ করে, তবে তর্কের দুয়ার বন্ধ করার জন্য বলে দাও, মেয়াদ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহ তাআলারই আছে। কাজেই তিনি যে মেয়াদ বর্ণনা করেছেন সেটাই সঠিক। ঈমানদার হয়ে থাকলে তোমার কর্তব্য সেটাই গ্রহণ করা।


২৭


وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن كِتَابِ رَبِّكَ ۖ لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَلَن تَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا


ওয়াতলুমাঊহিয়া ইলাইকা মিন কিতা-বি রাব্বিকা লা-মুবাদ্দিলা লিকালিমা-তিহী ওয়া লান তাজিদা মিন দূ নিহী মুলতাহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার কাছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে ওহী পাঠানো হয়েছে, তা পড়ে শোনাও। এমন কেউ নেই যে তাঁর বাণী পরিবর্তন করতে পারে এবং তুমি তাঁকে ছাড়া অন্য কোনও আশ্রয়স্থল পাবে না কখনই। ২২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব হতে পাঠ করে শোনাও। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউই নেই। তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় পাবে না।


তাফসীরঃ

২২. কাফেরগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাবী করত, আপনি আমাদের ইচ্ছা ও বিশ্বাস অনুযায়ী এ কুরআনকে পরিবর্তন করে দিন। তা করলে আমরা আপনার প্রতি ঈমান আনতে প্রস্তুত আছি। পূর্বে সূরা ইউনুসে (১০ : ১৫) তাদের এ দাবীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত তাদেরকে শোনানোর লক্ষ্যেই আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্ভাষণ করে এ আয়াতের বক্তব্য পেশ করেছেন। এতে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার কালামে রদবদল করার কোন এখতিয়ার কারও নেই। কেউ যদি এমনটা করে, তবে আল্লাহ তাআলার আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সে কোনও আশ্রয়স্থল পাবে না।


২৮


وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا


ওয়াসবির নাফছাকা মা‘আল্লাযীনা ইয়াদ‘ঊনা রাব্বাহুম বিলগাদা-তি ওয়াল ‘আশিইয়ি ইউরীদূ না ওয়াজহাহূওয়ালা-তা‘দুআইনা-কা ‘আনহুম তুরীদুঝীনাতাল হায়াতিদদুনইয়া- ওয়ালা তুতি‘ মান আগফালনা-কালবাহূ‘আন যিকরিনা-ওয়াত্তাবা‘আ হাওয়া-হু ওয়া কা-না আমরুহূফুরুতা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ধৈর্য-স্থৈর্যের সাথে নিজেকে সেই সকল লোকের সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় নিজেদের প্রতিপালককে এ কারণে ডাকে যে, তারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। ২৩ পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনায় তোমার দৃষ্টি যেন তাদের থেকে সরে না যায়। এমন কোন ব্যক্তির কথা মানবে না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে রেখেছি, যে নিজ খেয়াল-খুশীর পেছনে পড়ে রয়েছে এবং যার কার্যকলাপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি নিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে এদেরই সংসর্গে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে এদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে এদের হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তার আনুগত্য কর না-যার চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।


তাফসীরঃ

২৩. কুরাইশ গোত্রের নেতারা দাবি করেছিল, যে সব গরীব ও সাধারণ স্তরের মুসলিম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্যে থাকে, তিনি যেন তাদেরকে দূর করে দেন। তা করলে তারা তাঁর কথা শুনতে প্রস্তুত থাকবে। অন্যথায় ওইসব সাধারণ স্তরের লোকদের সাথে বসে তাঁর কথা শোনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের সে দাবীর রদকল্পেই এ আয়াত নাযিল হয়েছে। এতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তিনি যেন তাদের কথায় কর্ণপাত না করেন এবং গরীব সাহাবীগণের সাহচর্য ত্যাগ না করেন। প্রসঙ্গত গরীব সাহাবায়ে কেরামের ফযীলত এবং তাদের বিপরীতে ধনবান কাফেরদের হীনতা বর্ণনা করা হয়েছে। এই একই বিষয়বস্তু সূরা আনআমেও (৬ : ৫২) গত হয়েছে।


২৯


وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَن شَاءَ فَلْيُؤْمِن وَمَن شَاءَ فَلْيَكْفُرْ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا


ওয়া কুল্লি হাক্কুমির রাব্বিকুম ফামান শাআ ফালইউ’মিওঁ ওয়ামান শাআ ফালইয়াকফুর ইন্নাআ‘তাদনা-লিজ্জা-লিমীনা না-রান আহা-তা বিহিম ছুরাদিকুহা- ওয়াইয়ঁইয়াছতাগীছূইউগা-ছূবিমাইন কালমুহলি ইয়াশবিল উজূহা বি’ছাশ শারা-বু ওয়া ছাআত মুরতাফাকা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তো সত্য এসে গেছে। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফর অবলম্বন করুক। ২৪ আমি জালেমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি, যার প্রাচীর তাদেরকে বেষ্টন করে রাখবে। তারা পানি চাইলে তাদেরকে তেলের তলানী সদৃশ পানীয় দেওয়া হবে, যা তাদের চেহারা ঝলসে দেবে। কতই না মন্দ সে পানীয় এবং কতই না নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।’ নিশ্চয়ই আমি জালিমদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী এদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। এরা পানীয় চাইলে এদেরকে দেওয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা এদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; এটা নিকৃষ্ট পানীয়। আর জাহান্নাম কত নিকৃষ্ট আশ্রয়।


তাফসীরঃ

২৪. অর্থাৎ, সত্য পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর ঈমান আনার জন্য কারও উপর শক্তি আরোপ করা যায় না কিন্তু যে ব্যক্তি ঈমান আনবে না, আখেরাতে অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।


৩০


إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا


ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া‘আমিলুসসা-লিহা-তি ইন্না-লা-নুদী‘উ আজরা মান আহছানা ‘আমালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারা নিশ্চিত থাকুক, আমি সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে-আমি তো তার শ্রমফল নষ্ট করি না-সে উত্তমরূপে কার্য সম্পাদন করে।


৩১


أُولَـٰئِكَ لَهُمْ جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَيَلْبَسُونَ ثِيَابًا خُضْرًا مِّن سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ۚ نِعْمَ الثَّوَابُ وَحَسُنَتْ مُرْتَفَقًا


উলাইকা লাহুমজান্না-তু‘আদনিন তাজরী মিন তাহতিহিমুল আনহা-রু ইউহাল্লাওনা ফীহামিন আছা-বিরা মিন যাহাবিওঁ ওয়া ইয়ালবাছূনা ছিয়াবান খুদরাম মিন ছুনদুছিওঁ ওয়া ইছতাবরাকিম মুত্তাকিঈনা ফিহা-‘আলাল আরাইকি নি‘মাছছাওয়া-বু ওয়া হাছুনাত মুরতাফাকা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদেরই জন্য রয়েছে স্থায়ীভাবে থাকার উদ্যান, তাদের নিচে নহর প্রবহমান থাকবে। তাদেরকে সেখানে স্বর্ণকঙ্কনে অলংকৃত করা হবে। আর তারা উচ্চ আসনে হেলান দেওয়া অবস্থায় মিহি ও পুরু সবুজ রেশমী কাপড় পরিহিত থাকবে। কতই না উৎকৃষ্ট প্রতিদান এবং কত সুন্দর বিশ্রামস্থল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরই জন্যে আছে স্থায়ী জান্নাত যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে এদেরকে স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে, এরা পরিধান করবে সূ² ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সেখানে সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম আশ্রয়স্থল!


৩২


۞ وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لِأَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا


ওয়াদরিব লাহুম মাছালার রাজুলাইনি জা‘আলনা-লিআহাদিহিমা-জান্নাতাইনি মিন আ‘নাবিওঁ ওয়া হাফাফনা-হুমা বিনাখলিওঁ ওয়াজা‘আলনা-বাইনাহুমা-ঝার‘আ-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তাদের সামনে সেই দুই ব্যক্তির উপমা পেশ কর, ২৫ যাদের একজনকে আমি আঙ্গুরের দু’টি বাগান দিয়েছিলাম এবং সে দু’টিকে খেজুর গাছ দ্বারা ঘেরাও দিয়ে রেখেছিলাম আর বাগান দু’টির মাঝখানকে শস্যক্ষেত্র বানিয়েছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি তাদের কাছে দু ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা করুন। আমি তাদের একজনকে দুটি আঙ্গুরের বাগান দিয়েছি এবং এ দু’টিকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছি এবং দু এর মাঝখানে করেছি শস্যক্ষেত্র।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি এদের নিকট পেশ কর দুই ব্যক্তির উপমা : এদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দুইটি দ্রাক্ষা-উদ্যান এবং এই দুইটিকে আমি খর্জুর-বৃক্ষ দিয়ে পরিবেষ্টিত করেছিলাম ও এই দুইয়ের মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র।


তাফসীরঃ

২৫. ২৮ নং আয়াতে কাফের নেতৃবর্গের অহমিকার প্রতি ইশারা করা হয়েছিল, যে অহমিকার কারণে তারা গরীব মুসলিমদের সাথে বসতে পছন্দ করত না। এবার আল্লাহ তাআলা এমন একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যা দ্বারা অর্থ-সম্পদের স্বরূপ স্পষ্ট হয়ে যায় এবং সমঝদার ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে সক্ষম হয় সম্পদের প্রাচুর্য এমন কোন জিনিস নয়, যার কারণে অহমিকা প্রকাশ করা যায়। আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্কে মজবুত না থাকলে বড় বড় মালদারকেও পরিণামে আফসোস করতে হয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক যদি ঠিক থাকে, তবে নিতান্ত গরীবও ধনবানদেরকে পিছনে ফেলে বহু দূর এগিয়ে যায়। এখানে যে দুই ব্যক্তির উপমা দেওয়া হয়েছে, নির্ভরযোগ্য কোনও বর্ণনায় তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। কোন কোন মুফাসসির উল্লেখ করেছেন, তারা বনী ইসরাঈলের লোক। উত্তরাধিকার সূত্রে তারা তাদের পিতার থেকে বিপুল সম্পদ পেয়েছিল। তাদের একজন ছিল কাফের। সে অর্থ-সম্পদেই মত্ত থাকল। অপরজন তার সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করতে থাকল। এক পর্যায়ে অন্যজন অপেক্ষা তার সম্পদের পরিমাণ কমে গেল। কিন্তু তার প্রতি আল্লাহর রহমত ছিল। অপরজন কুফরী হেতু তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হল এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহর গযবে তার অর্থ-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল। তখন আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছু করার থাকল না।


৩৩


كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ آتَتْ أُكُلَهَا وَلَمْ تَظْلِم مِّنْهُ شَيْئًا ۚ وَفَجَّرْنَا خِلَالَهُمَا نَهَرًا


কিলতাল জান্নাতাইনি আ-তাত উকুলাহা-ওয়ালাম তাজলিম মিনহু শাইআওঁ ওয়া ফাজ্জারনাখিলা-লাহুমা-নাহারা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

উভয় বাগান পরিপূর্ণ ফল দান করত এবং তাতে কোন ত্রুটি করত না। আমি বাগান দু’টির মাঝখানে একটি নহর প্রবাহিত করেছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

উভয় বাগানই ফলদান করে এবং তা থেকে কিছুই হ্রাস করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নহর প্রবাহিত করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

উভয় উদ্যানই ফলদান করত এবং এতে কোন ত্রুটি করত না আর উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নহর।


৩৪


وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ فَقَالَ لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَنَا أَكْثَرُ مِنكَ مَالًا وَأَعَزُّ نَفَرًا


ওয়া কা-না লাহূছামারুন , ফাকা-লা লিসা-হিবিহী ওয়াহুওয়া ইউহা-বিরুহূআনা আকছারু মিনকা মা-লাওঁ ওয়া আ‘আঝঝুনাফারা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই ব্যক্তির প্রচুর ধন-সম্পদ অর্জিত হল। অতঃপর সে কথাচ্ছলে তার সঙ্গীকে বলল, আমার অর্থ-সম্পদও তোমার চেয়ে বেশি এবং আমার দলবলও তোমার চেয়ে শক্তিশালী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে ফল পেল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ আমার ধন-সম্পদ তোমার চাইতে বেশী এবং জনবলে আমি অধিক শক্তিশালী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল। এরপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ‘ধনসম্পদে আমি তোমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমার অপেক্ষা শক্তিশালী।’


৩৫


وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ قَالَ مَا أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَـٰذِهِ أَبَدًا


ওয়া দাখালা জান্নাতাহূওয়াহুওয়া জা-লিমুল লিনাফছিহী কা-লা মাআজুন্নুআন তাবীদা হা-যিহীআবাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিজ সত্তার প্রতি সে জুলুম করছিল ২৬ আর এ অবস্থায় সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, আমি মনে করি না এ বাগান কখনও ধ্বংস হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বললঃ আমার মনে হয় না যে, এ বাগান কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইভাবে নিজের প্রতি জুলুম করে সে তার উদ্যানে প্রবেশ করল। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটা কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে;


তাফসীরঃ

২৬. অর্থাৎ সে কুফর ও শিরকে লিপ্ত ছিল। ধন ও জনের মদমত্ততায় অন্যদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। আখিরাতকে ভুলে পার্থিব ধন-সম্পদের নেশায় বিভোর হয়ে পড়েছিল আর এভাবে সে আখিরাতের প্রকৃত জীবন ধ্বংস করে নিজের উপরই জুলুম করছিল। -অনুবাদক


৩৬


وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَائِمَةً وَلَئِن رُّدِدتُّ إِلَىٰ رَبِّي لَأَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا


ওয়ামাআজুন্নুছছা-‘আতা কাইমাতাওঁ ওয়ালাইর রুদিততুইলা-রাববী লাআজিদান্না খাইরাম মিনহা-মুনকালাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার ধারণা কিয়ামত কখনই হবে না। আর আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে যদি ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তবে আমি নিশ্চিত (সেখানে) আমি এর চেয়েও উৎকৃষ্ট স্থান পাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আমি মনে করি না যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও আমার পালনকর্তার কাছে আমাকে পৌঁছে দেয়া হয়, তবে সেখানে এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমি মনে করি না যে, কিয়ামত হবে; আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই-ই তবে আমি তো নিশ্চয়ই এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট স্থান পাইব।’


৩৭


قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلًا


কা-লা লাহূসা-হিবুহূওয়া হুওয়া ইউহা-বিরুহআকাফারতা বিল্লাযী খালাকাকা মিন তুরা-বিন ছু ম্মা মিন নুতফাতিন ছুম্মা ছাওওয়া-কা রাজুলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার সাথী কথাচ্ছলে তাকে বলল, তুমি কি সেই সত্তার সাথে কুফরী আচরণ করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে এবং তারপর তোমাকে একজন সুস্থ-সবল মানুষে পরিণত করেছেন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার সঙ্গী তাকে কথা প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর র্পূনাঙ্গ করেছেন তোমাকে মানবাকৃতিতে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তদুত্তরে তার বন্ধু তাকে বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা ও পরে শুক্র হতে এবং তার পর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য-আকৃতিতে ?’


৩৮


لَّـٰكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا


লা-কিন্না হুওয়াল্লা-হু রাববী ওয়ালাউশরিকুবিরাববীআহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার ব্যাপারে তো এই যে, আমি বিশ্বাস করি আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং আমি আমার প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক মানি না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিন্তু আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘কিন্তু তিনিই আল্লাহ্, আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক করি না।’


৩৯


وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ إِن تَرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالًا وَوَلَدًا


ওয়ালাওলাইযদাখালতা জান্নাতাকা কুলতা মা-শাআল্লা-হু লা-কুওওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহি ইন তারানি আনা আকাল্লা মিনকা মা-লাওঁ ওয়া ওয়ালাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি যখন নিজ বাগানে প্রবেশ করছিলে, তখন তুমি কেন বললে না ‘মা-শা-আল্লাহ, লা-কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ (আল্লাহ যা চান তাই হয়। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া কারও কোন ক্ষমতা নেই)। তোমার দৃষ্টিতে যদি আমার সম্পদ ও সন্তান তোমা অপেক্ষা কম হয়ে থাকে,


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি তুমি আমাকে ধনে ও সন্তানে তোমার চাইতে কম দেখ, তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন একথা কেন বললে না; আল্লাহ যা চান, তাই হয়। আল্লাহর দেয়া ব্যতীত কোন শক্তি নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি যখন তোমার উদ্যানে প্রবেশ করলে তখন কেন বলিলে না, ‘আল্লাহ্ যা চান তাই হয়, আল্লাহ্ র সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই ?’ তুমি যদি ধনে ও সন্তানে আমাকে তোমার অপেক্ষা নিকৃষ্টতর মনে কর-


৪০


فَعَسَىٰ رَبِّي أَن يُؤْتِيَنِ خَيْرًا مِّن جَنَّتِكَ وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاءِ فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا


ফা‘আছা-রাববীআই ইউ’তিয়ানি খাইরাম মিন জান্নাতিকা ওয়া ইউরছিলা ‘আলাইহা-হুছবানাম মিনাছছামাই ফাতুসবিহা সা‘ঈদান ঝালাকা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে আমার প্রতিপালকের পক্ষে অসম্ভব নয় যে, তিনি আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিস দান করবেন এবং তোমার বাগানে আসমান থেকে কোন বালা পাঠাবেন, ফলে তা তরুহীন প্রান্তরে পরিণত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আশাকরি আমার পালকর্তা আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তার (তোমার বাগানের) উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ করবেন। অতঃপর সকাল বেলায় তা পরিষ্কার ময়দান হয়ে যাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তবে হয়ত আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার উদ্যান অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর কিছু দিবেন এবং তোমার উদ্যানে আকাশ হতে নির্ধারিত বিপর্যয় প্রেরণ করবেন; যার ফলে তা উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত হবে।


৪১


أَوْ يُصْبِحَ مَاؤُهَا غَوْرًا فَلَن تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا


আও ইউসবিহা মাউহা-গাওরান ফালান তাছতাতী‘আ লাহূতালাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তার পানি ভূগর্ভে নেমে যাবে, অতঃপর তুমি তার সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা সকালে তার পানি শুকিয়ে যাবে। অতঃপর তুমি তা তালাশ করে আনতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অথবা এর পানি ভ‚গর্ভে অন্তর্হিত হবে এবং তুমি কখনও এর সন্ধান লাভে সক্ষম হবে না।’


৪২


وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَىٰ مَا أَنفَقَ فِيهَا وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا


ওয়া উহীতাবিছামারিহী ফাআছবাহা ইউকালিলবুকাফফাইহি ‘আলা-মাআনফাকা ফীহা-ওয়াহিয়া খা-বিয়াতুন ‘আলা-‘উরূশিহা-ওয়া ইয়াকূ লুইয়া-লাইতানী লাম উশরিক বিরাববীআহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অতঃপর এই ঘটল যে,) তার সমুদয় সম্পদ আযাববেষ্টিত হয়ে গেল এবং তার ভোর হল এমন অবস্থায় যে, বাগানে যা-কিছু ব্যয় করেছিল তজ্জন্য শুধু আক্ষেপ করতে লাগল যখন তার বাগান মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়েছিল। সে বলছিল, হায়! আমি যদি আমার প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক না করতাম!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তার সব ফল ধ্বংস হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল, তার জন্য সকালে হাত কচলিয়ে আক্ষেপ করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে লাগলঃ হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরীক না করতাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তার ফল-সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে এতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্যে আক্ষেপ করতে লাগল যখন তা মাচানসহ ভূমিসাৎ হয়ে গেল। সে বলিতে লাগল, ‘হায়, আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক না করতাম!’


৪৩


وَلَمْ تَكُن لَّهُ فِئَةٌ يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مُنتَصِرًا


ওয়ালাম তাকুল লাহূফিয়াতুইঁ ইয়ানসুরূনাহূমিন দূনিল্লা-হি ওয়ামা-কা-না মুনতাসিরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আল্লাহ ছাড়া তার এমন কোন দলবল মিলল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে আর সে নিজেও নিজেকে রক্ষা করতে সমর্থ ছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোক হল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর আল্লাহ্ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না।


৪৪


هُنَالِكَ الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ ۚ هُوَ خَيْرٌ ثَوَابًا وَخَيْرٌ عُقْبًا


হুনা-লিকাল ওয়ালা-ইয়াতুলিল্লা-হিল হাক্কি হুওয়া খাইরুন ছাওয়া-বাওঁ ওয়া খাইরুন ‘উকবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরূপ পরিস্থিতিতে (মানুষ উপলব্ধি করতে পারে) সাহায্য করার ক্ষমতা কেবল পরম সত্য আল্লাহরই আছে। তিনিই উত্তম পুরস্কার দান করেন এবং উত্তম পরিণাম প্রদর্শন করেন। ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরূপ ক্ষেত্রে সব অধিকার সত্য আল্লাহর। তারই পুরস্কার উত্তম এবং তারই প্রদত্ত প্রতিদান শ্রেষ্ঠ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এ ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব আল্লাহ্ র ই, যিনি সত্য। পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।


তাফসীরঃ

২৭. অর্থাৎ যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনে ও তাঁর আনুগত্য করে তাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করেন আর যারা তাঁর উপর নির্ভর করে এবং তাঁর কাছেই আশাবাদী থাকে, তাদের পরিণামকে শুভ করেন। -অনুবাদক


৪৫


وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا


ওয়াদরিব লাহুম মাছালাল হায়া-তিদদুনইয়া-কামাইন আনঝালনা-হু মিনাছ ছামাই ফাখতালাতা বিহী নাবা-তুল আরদিফাআসবাহা হাশীমান তাযরূহুর রিয়া-হু ওয়া কানাল্লা-হু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িম মুকতাদিরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের কাছে পার্থিব জীবনের এই উপমাও পেশ কর যে, তা পানির মত, যা আমি আকাশ থেকে বর্ষণ করি, ফলে ভূমিজ উদ্ভিদ নিবিড় ঘন হয়ে যায়, তারপর তা এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়, যা বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায়। ২৮ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের নিকট পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের : এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যা দিয়ে ভ‚মিজ উদ্ভিদ ঘন-সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, এরপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস একে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।


তাফসীরঃ

২৮. অর্থাৎ, ভূমিতে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি অতি ক্ষণস্থায়ী। প্রথম দিকে তো তার শোভা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু পরিশেষে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বাতাসে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। পার্থিব জীবনও এ রকমই। শুরুতে তো বড় মনোহর মনে হয়, কিন্তু শেষ পরিণতি ধ্বংস ছাড়া কিছুই নয়।


৪৬


الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا


আলমা-লুওয়াল বানূনা ঝীনাতুল হায়া-তিদদুনইয়া- ওয়াল বা-কিয়া-তুসসা-লিহাতুখাইরুন ‘ইনদা রাব্বিকা ছাওয়া-বাওঁ ওয়া খাইরুন আমালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের শোভা। তবে যে সৎকর্ম স্থায়ী, তোমার প্রতিপালকের নিকট তা সওয়াবের দিক থেকেও উৎকৃষ্ট এবং আশা পোষণের দিক থেকেও উৎকৃষ্ট। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা; এবং স্থায়ী সৎকর্ম তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্যে শ্রেষ্ঠ এবং কাক্সিক্ষত হিসেবেও উৎকৃষ্ট।


তাফসীরঃ

২৯. দুনিয়া ছলনাময়। এর সম্পদ ও সামগ্রীতে দিল লাগালে চিরকাল তা আপন হয়ে থাকে না। একদিন না একদিন ধোঁকা দিয়ে চলে যাবেই। পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তোষ লাভের উদ্দেশ্যে যে সব সৎকর্ম করা হয়, তা কখনও বিফল যায় না, তার জন্য যে সওয়াবের আশা করা হয় তা অবশ্যই পূরণ হবে।


৪৭


وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَى الْأَرْضَ بَارِزَةً وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا


ওয়া ইয়াওমা নুছাইয়িরুল জিবা-লা ওয়া তারাল আরদা বা-রিঝাতাওঁ ওয়া হাশারনা-হুম ফালাম নুগা-দির মিনহুম আহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (সেই দিনকেও স্মরণ রাখ) যে দিন আমি পর্বতসমূহ সঞ্চালিত করব ৩০ এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত পড়ে আছে ৩১ এবং আমি তাদের সকলকে একত্র করব, তাদের কাউকে ছাড়ব না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব এবং আপনি পৃথিবীকে দেখবেন একটি উম্মুক্ত প্রান্তর এবং আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, যেদিন আমি পর্বতমালাকে করব সঞ্চালিত এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্তর, সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্র করব এবং এদের কাউকেও অব্যাহতি দিব না,


তাফসীরঃ

৩০. এর দ্বারা যেমন বোঝানো হয়েছে, ভূগর্ভে যা-কিছু গুপ্ত আছে সব সামনে এসে যাবে। সূরা ইনশিকাকে (৮৪ : ৪)-এ কথা পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, তেমনি একথাও বোঝানো হয়েছে যে, পাহাড়-পর্বত, গাছপালা ও ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যতদূর দৃষ্টি যায় সারাটা পৃথিবী সমতল দেখা যাবে। কোথাও উচু-নিচু থাকবে না, যেমনটা সূরা তোয়াহার ইরশাদ হয়েছে (২০ : ১০, ১০৭)।


৩১. কুরআন মাজীদের আয়াতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায়, কিয়ামতের সময় পাহাড়সমূহকে প্রথমে আপন স্থান থেকে হটিয়ে সঞ্চালিত করা হবে। তারপর তাকে কুটে পিষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হবে এবং ধুলোবালির মত বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া হবে। সঞ্চালিত করার বিষয়টা সূরা নামল (২৭ : ৮৮) ও সূরা তাকবীর (৮১ : ৩)-এও বর্ণিত হয়েছে। আর কুটে-পিষে ধুলায় পরিণত করার কথা সূরা তোয়াহা (২০ : ১০৫), সূরা ওয়াকিয়া (৫৬ : ৫-৬) ও সূরা মুরসালাত (৭৭ : ১০)-এ উল্লেখ করা হয়েছে।


৪৮


وَعُرِضُوا عَلَىٰ رَبِّكَ صَفًّا لَّقَدْ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّن نَّجْعَلَ لَكُم مَّوْعِدًا


ওয়া ‘উরিদূ ‘আলা-রাব্বিকা সাফফাল লাকাদ জি’তুমূনা-কামা-খালাকনা-কুম আওওয়ালা মাররাতিম বাল ঝা‘আমতুম আল্লান নাজ‘আলা লাকুম মাও‘ইদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সকলকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধভাবে উপস্থিত করা হবে। (তাদেরকে বলা হবে) তোমাদেরকে আমি প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, পরিশেষে সেভাবেই তোমরা আমার কাছে চলে এসেছ। অথচ তোমাদের দাবী ছিল আমি তোমাদের জন্য (এই) নির্ধারিত কাল কখনই উপস্থিত করব না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আপনার পালনকর্তার সামনে পেশ হবে সারিবদ্ধ ভাবে এবং বলা হবেঃ তোমরা আমার কাছে এসে গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি করেছিলাম। না, তোমরা তো বলতে যে, আমি তোমাদের জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করব না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে এবং বলা হবে, ‘তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেইভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ, অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্যে প্রতিশ্রুত ক্ষণ আমি কখনও উপস্থিত করব না।’


৪৯


وَوُضِعَ الْكِتَابُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا مَالِ هَـٰذَا الْكِتَابِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلَّا أَحْصَاهَا ۚ وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا ۗ وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا


ওয়া উদি‘আল কিতা-বুফাতারাল মুজরিমীনা মুশফিকীনা মিম্মা-ফীহি ওয়া ইকূলূনা ইয়াওয়াইলাতানা-মা-লি হা-যাল কিতা-বি লা-ইউগা-দিরু সাগীরাতাওঁ ওয়ালা-কাবীরাতান ইল্লাআহসা-হা- ওয়া ওয়াজাদূমা-‘আমিলূহা-দিরা- ওয়ালা-ইয়াজলিমু রাব্বুকা আহাদা-।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর ‘আমলনামা’ সামনে রেখে দেওয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটা কেমন কিতাব, যা আমাদের ছোট-বড় যত কর্ম আছে, সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সমস্ত কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি কোন জুলুম করবেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং উপস্থিত করা হবে আমলনামা এবং এতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং এরা বলবে, ‘হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! তা তো ছোট-বড় কিছুই বাদ দেয় না; বরং তা সমস্ত হিসেব রেখেছে।’ এরা এদের কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে ; তোমার প্রতিপালক কারও প্রতি জুলুম করেন না।


৫০


وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ ۗ أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا


ওয়া ইযকুলনা-লিল মালাইকাতিছ জু দূলিআ-দামা ফাছাজাদূ ইল্লাইবলীছা কানা মিনাল জিন্নি ফাফাছাকা ‘আন আমরি রাব্বিহী আফাতাত্তাখিযূনাহূওয়া যুররিইইয়াতাহূআওলিয়াআ মিন দূ নী ওয়া হুম লাকুম ‘আদুওউম বি’ছা লিজ্জালিমীনা বাদালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমের সামনে সিজদা কর। তখন সকলেই সিজদা করল এক ইবলীস ছাড়া। ৩২ সে ছিল জিনদের একজন। সে তার প্রতিপালকের হুকুম অমান্য করল। তারপরও কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরদেরকে নিজেদের অভিভাবক বানাচ্ছ, অথচ তারা তোমাদের শত্রু? জালিমদের জন্য (এটা) কতই না নিকৃষ্ট বদল! ৩৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর, আমি যখন ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, ‘আদমের প্রতি সিজ্দা কর’, তখন তারা সকলেই সিজ্দা করল ইবলিস ব্যতীত; সে জিনদের একজন, সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে একে এবং এর বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছো ? এরা তো তোমাদের শত্রু। জালিমদের এই বিনিময় কত নিকৃষ্ট!


তাফসীরঃ

৩২. অর্থাৎ, তারা আল্লাহ তাআলার পরিবর্তে কত নিকৃষ্ট অভিভাবক বেছে নিয়েছে।


৩৩. বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা বাকারা (২ : ৩১-৩৬), টীকাসহ।


৫১


۞ مَّا أَشْهَدتُّهُمْ خَلْقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَا خَلْقَ أَنفُسِهِمْ وَمَا كُنتُ مُتَّخِذَ الْمُضِلِّينَ عَضُدًا


মাআশহাততুহুম খালকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিওয়ালা-খালকা আনফুছিহিম ওয়ামা-কুনতুমুত্তাখিযাল মুদিল্লীনা ‘আদুদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালেও তাদেরকে হাজির করিনি আর খোদ তাদেরকে সৃষ্টি করার সময়ও না। ৩৪ আমি এমন নই যে, পথভ্রষ্টকারীদেরকে নিজের সহযোগী বানাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য রাখিনি এবং তাদের নিজেদের সৃজনকালেও না। এবং আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্ত কারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলীর ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি এদেরকে ডাকি নাই এবং এদের সৃজনকালেও নয়, আমি বিভ্রান্তকারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করার নই।


তাফসীরঃ

৩৪. অর্থাৎ, কাফেরগণ যেই শয়তানদেরকে নিজেদের অভিভাবক বানিয়েছে, আমি বিশ্বজগত সৃজনের দৃশ্য দেখানো বা সৃজন কার্যে সাহায্য গ্রহণের জন্য তাদেরকে কাছে ডাকিনি যে, তারা সৃষ্টির রহস্যাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত থাকবে। অথচ কাফেরগণ মনে করছে, শয়তানেরা সব রহস্য জানে। ফলে তাদের প্ররোচনায় পড়ে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে তাদেরকে অথবা তাদের কথামত অন্য কাউকে শরীক করে এবং বিশ্বাস করে তারা প্রভুত্বে আল্লাহ তাআলার অংশীদার।


৫২


وَيَوْمَ يَقُولُ نَادُوا شُرَكَائِيَ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ فَدَعَوْهُمْ فَلَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُمْ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُم مَّوْبِقًا


ওয়া ইয়াওমা ইয়াকূ লুনা-দূশুরাকাইয়াল্লাযীনা ঝা‘আমতুম ফাদা‘আওহুম ফালাম ইয়াছতাজীবূলাহুম ওয়া জা‘আলনা-বাইনাহুম মাওবিকা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিনকে স্মরণ কর, যখন আল্লাহ (মুশরিকদেরকে) বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার প্রভুত্বের শরীক মনে করছ তাদেরকে ডাক। সুতরাং তারা ডাকবে। কিন্তু তারা তাদেরকে কোন সাড়া দেবে না। আমি তাদের মাঝখানে রেখে দেব এক ধ্বংসকর অন্তরাল। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন তিনি বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক। তারা তখন তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা এ আহবানে সাড়া দেবে না। আমি তাদের মধ্যস্থলে রেখে দেব একটি মৃত্যু গহবর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং সেই দিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন তিনি বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে আহ্বান কর।’ এরা তখন তাদেরকে আহ্বান করবে কিন্তু তারা এদের আহ্বানে সাড়া দিবে না এবং এদের উভয়ের মধ্যস্থলে রেখে দিব এক ধ্বংস-গহ্বর।


তাফসীরঃ

৩৫. অর্থাৎ সেই ভ্রান্ত উপাস্য ও তার উপাসকদের মাঝখানে রেখে দেব এমন এক ধ্বংস গহ্বরের প্রতিবন্ধক যদ্দরুণ তারা একে অন্যের সাথে মিলিতও হতে পারবে না। সে প্রতিবন্ধক হল জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের রক্ষা করুন। -অনুবাদক


৫৩


وَرَأَى الْمُجْرِمُونَ النَّارَ فَظَنُّوا أَنَّهُم مُّوَاقِعُوهَا وَلَمْ يَجِدُوا عَنْهَا مَصْرِفًا


ওয়া রাআল মুজরিমূনান্না-রা ফাজাননূআন্নাহুম মুওয়া-কি‘ঊহা-ওয়ালাম ইয়াজিদূ‘আনহা- মাসরিফা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝতে পারবে, তাদেরকে তাতে পতিত হতে হবে। তারা তা থেকে পরিত্রাণের কোন পথ পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অপরাধীরা আগুন দেখে বোঝে নেবে যে, তাদেরকে তাতে পতিত হতে হবে এবং তারা তা থেকে রাস্তা পরিবর্তন করতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝবে যে, এরা সেখানে পতিত হচ্ছে এবং এরা তা হতে কোন পরিত্রাণ স্থল পাবে না।


৫৪


وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَـٰذَا الْقُرْآنِ لِلنَّاسِ مِن كُلِّ مَثَلٍ ۚ وَكَانَ الْإِنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا


ওয়া লাকাদ সাররাফনা-ফী হা-যাল কুরআ-নি লিন্না-ছি মিন কুল্লি মাছালিওঁ ওয়া কানাল ইনছা-নুআকছারা শাইয়িন জাদালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মানুষের উপকারার্থে এই কুরআনে সব রকম বিষয়বস্তু বিভিন্নভাবে বিবৃত করেছি, কিন্তু মানুষ সর্বাপেক্ষা বেশি তর্কপ্রিয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ সব বস্তু থেকে অধিক তর্কপ্রিয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি মানুষের জন্যে এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দিয়ে আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্কপ্রিয়।


৫৫


وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلًا


ওয়ামা-মানা‘আন্না-ছা আইঁ ইউ’মিনূ ইয জাআহুমুল হুদা-ওয়াইয়াছতাগফিরূরাব্বাহুম ইল্লাআন তা’তিয়াহুম ছুন্নাতুল আওওয়ালীনা আও ইয়া’তিয়াহুমুল ‘আযা-বুকুবুলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষের কাছে যখন হিদায়াত এসে গেছে, তখন ঈমান আনয়ন ও নিজেদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা হতে তাদেরকে এ ছাড়া (অর্থাৎ, এই দাবী ছাড়া) অন্য কিছুই বিরত রাখছে না যে, তাদের ক্ষেত্রেও পূর্ববর্তীদের অনুরূপ ঘটনা ঘটুক অথবা আযাব তাদের একেবারে সামনে এসে যাক। ৩৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হেদায়েত আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে যে, কখন আসবে তাদের কাছে পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি অথবা কখন আসবে তাদের কাছেআযাব সামনাসামনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এদের নিকট পথনির্দেশ আসে তখন মানুষকে ঈমান আনা এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা হতে বিরত রাখে কেবল এটা যে, তাদের নিকট পূর্ববর্তীদের বেলায় অনুসৃত রীতি আসুক বা আসুক তাদের নিকট সরাসরি আযাব।


তাফসীরঃ

৩৬. অর্থাৎ, তাদের সামনে সব রকম দলীল-প্রমাণ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এখন নিজেদের কুফরের পক্ষে তাদের হাতে এছাড়া আর কোন প্রমাণ অবশিষ্ট নেই যে, তারা নবীর কাছে দাবী করবে, পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে যেমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে, আমরা ভুল পথে থাকলে আমাদের উপরও সে রকম শাস্তি নিয়ে এসো। সুতরাং তারা এ দাবীই করেছিল। আল্লাহ তাআলা সামনে এর উত্তর দিয়েছেন যে, নিজ এখতিয়ারে শাস্তি অবতীর্ণ করা নবীর কাজ নয়। নবীর কাজ কেবল মানুষকে শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করা। আর আল্লাহ তাআলার নীতি হল, অবাধ্যদেরকে চটজলদি শাস্তি না দেওয়া; বরং তিনি নিজ দয়ায় তাদেরকে অবকাশ দেন, যাতে সেই অবকাশের ভেতর যাদের ঈমান আনার তারা ঈমান আনতে পারে। হ্যাঁ, অবাধ্যদেরকে শাস্তি দানের জন্য তিনি একটা সময় ঠিকই স্থির করে রেখেছেন। সেই সময় যখন আসবে, তখন আর তাদের শাস্তি টলানো যাবে না।


৫৬


وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ ۚ وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ ۖ وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَمَا أُنذِرُوا هُزُوًا


ওয়ামা-নুরছিলুল মুরছালীনা ইল্লা-মুবাশশিরীনা ওয়া মুনযিরীনা ওয়া ইউজা-দিলুল্লাযীনা কাফারূবিলবা-তিলি লিইউদহিদূ বিহিল হাক্কা ওয়াত্তাখাযূআ-য়া-তী ওয়ামাউনযিরূ হুঝুওয়া-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি রাসূলগণকে তো পাঠাই কেবল (মুমিনদের জন্য) সুসংবাদদাতা এবং (কাফিরদের জন্য) সতর্ককারীরূপে। যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা মিথ্যাকে আশ্রয় করে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয় তার দ্বারা সত্যকে টলিয়ে দেওয়ার লক্ষে। তারা আমার আয়াতসমূহ এবং যে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তাকে ঠাট্টার বিষয় বানিয়ে নিয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি রাসূলগনকে সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শন কারীরূপেই প্রেরণ করি এবং কাফেররাই মিথ্যা অবলম্বনে বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার উদ্দেশে এবং তারা আমার নিদর্শনাবলীও যদ্বারা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করা হয়, সেগুলোকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই রাসূলগণকে পাঠিয়ে থাকি, কিন্তু কাফিররা মিথ্যা অবলম্বনে বিতণ্ডা করে, তা দিয়ে সত্যকে ব্যর্থ করে দিবার জন্যে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও যা দিয়ে এদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেই সমস্তকে এরা বিদ্রুপের বিষয়রূপে গ্রহণ করে থাকে।


৫৭


وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ۚ إِنَّا جَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۖ وَإِن تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ فَلَن يَهْتَدُوا إِذًا أَبَدًا


ওয়া মান আজলামুমিম্মান যুক্কিরা বিআ-য়া-তি রাব্বিহী ফাআ‘রাদা‘আনহা-ওয়া নাছিয়া মা-কাদ্দামাত ইয়াদা-হু ইন্না-জা‘আলনা-‘আলা-কুলূবিহিম আকিন্নাতান আইঁ ইয়াফকাহূহু ওয়া ফীআ-যা-নিহিম ওয়াকরাওঁ ওয়া ইন তাদ‘উহুম ইলাল হুদা-ফালাইঁ ইয়াহতাদূ ইযান আবাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নিজ কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? বস্তুত আমি (তাদের কৃতকর্মের কারণে) তাদের অন্তরের উপর ঘেরাটোপ লাগিয়ে দিয়েছি, যদ্দরুণ তারা এ কুরআন বুঝতে পারে না এবং তাদের কানে ছিপি এঁটে দিয়েছি। সুতরাং তুমি তাদেরকে হিদায়াতের দিকে ডাকলেও তারা কখনও সৎপথে আসবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার চাইতে অধিক জালেম কে, যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার পূর্ববর্তী কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়? আমি তাদের অন্তরের উপর পর্দা রেখে দিয়েছি, যেন তা না বোঝে এবং তাদের কানে রয়েছে বধিরতার বোঝা। যদি আপনি তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত দেন, তবে কখনই তারা সৎপথে আসবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায় তবে তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে ? আমি নিশ্চয়ই এদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন এরা কুরআন বুঝতে না পারে এবং এদের কানে বধিরতা এঁটে দিয়েছি। তুমি এদেরকে সৎপথে আহ্বান করলেও এরা কখনও সৎপথে আসবে না।


৫৮


وَرَبُّكَ الْغَفُورُ ذُو الرَّحْمَةِ ۖ لَوْ يُؤَاخِذُهُم بِمَا كَسَبُوا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ ۚ بَل لَّهُم مَّوْعِدٌ لَّن يَجِدُوا مِن دُونِهِ مَوْئِلًا


ওয়া রাব্বুকাল গাফূরু যুর রাহমাতি লাও ইউআ-খিযুহুম বিমা-কাছাবূলা‘আজ্জালা লাহুমুল ‘আযা-বা বাল্লাহুম মাও‘ইদুল লাইঁ ইয়াজিদূমিন দূ নিহী মাওইলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, দয়াময়। তিনি যদি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তাদেরকে অচিরেই শাস্তি দিতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক স্থিরীকৃত সময়, যা থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য তারা কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু, যদি তিনি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে পাকড়াও করেন তবে তাদের শাস্তি ত্বরাম্বিত করতেন, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে একটি প্রতিশ্রুত সময়, যা থেকে তারা সরে যাওয়ার জায়গা পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল, দয়াবান, এদের কৃতকর্মের জন্যে যদি তিনি এদেরকে পাকড়াও করতে চাইতেন, তবে তিনি অবশ্যই এদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু এদের জন্যে রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহ‚র্ত, যা হতে এরা কখনই কোন আশ্রয়স্থল পাবে না।


৫৯


وَتِلْكَ الْقُرَىٰ أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا


ওয়া তিলকাল কুরা আহলাকনা-হুম লাম্মা-জালামূওয়া জা‘আলনা- লিমাহলিকিহিম মাও‘ইদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ওইসব জনপদ (যা তোমাদের সামনে রয়েছে) আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দেই, যখন তারা জুলুম অবলম্বন করল। তাদের ধ্বংসের জন্য (-ও) আমি একটি সময় স্থির করেছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এসব জনপদও তাদেরকে আমি ধংস করে দিয়েছি, যখন তারা জালেম হয়ে গিয়েছিল এবং আমি তাদের ধ্বংসের জন্যে একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ঐসব জনপদ-এদের অধিবাসীবৃন্দকে আমি ধ্বংস করেছিলাম, যখন এরা সীমালংঘন করেছিল এবং এদের ধ্বংসের জন্যে আমি স্থির করেছিলাম এক নির্দিষ্ট ক্ষণ।


৬০


وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَاهُ لَا أَبْرَحُ حَتَّىٰ أَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ أَوْ أَمْضِيَ حُقُبًا


ওয়া ইযকা-লা মূছা-লিফাতা-হুলাআবরাহুহাত্তাআবলুগা মাজমা‘আল বাহরাইনি আও আমদিয়া হুকুবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (সেই সময়ের বৃত্তান্ত শোন) যখন মূসা তার যুবক (শিষ্য)কে বলেছিল, আমি দুই সাগরের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতেই থাকব অথবা আমি চলতে থাকব বছরের পর বছর। ৩৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন মূসা তাঁর যুবক (সঙ্গী) কে বললেনঃ দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌছা পর্যন্ত আমি আসব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, ‘দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না বা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।’


তাফসীরঃ

৩৭. এখান থেকে ৮২ নং আয়াত পর্যন্ত হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাথে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাক্ষাতকারের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দীর্ঘ হাদীসে এ ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বিবৃত করেছেন। বুখারী শরীফে কয়েকটি সনদে তা উদ্ধৃত হয়েছে। হাদীসটির সারসংক্ষেপ এস্থলে উল্লেখ করা হচ্ছে একবার কেউ হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করল, বর্তমান বিশ্বে সর্বাপেক্ষা বড় আলেম কে? যেহেতু প্রত্যেক নবী তার সমকালীন বিশ্বে দীনের সর্বাপেক্ষা বড় আলেম হয়ে থাকেন, তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম জবাব দিলেন, আমিই সবচেয়ে বড় আলেম। এ জবাব আল্লাহ তাআলার পছন্দ হল না। আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে অবহিত করা হল যে, প্রশ্নের সঠিক উত্তর ছিল আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন কে সবচেয়ে বড় আলেম। এতদসঙ্গে আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে জ্ঞানের এমন এক দিগন্ত উন্মোচিত করতে চাইলেন, যে সম্পর্কে এ যাবৎকাল তার কোন ধারণা ছিল না। সুতরাং তাঁকে হুকুম দেওয়া হল, তিনি যেন হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পথ সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হল যে, যেখানে দু’টি সাগর মিলিত হয়েছে, সেটাই হবে তার গন্তব্যস্থল। আর সেখানে একটা জায়গা এমন আসবে, যেখানে তাঁর সঙ্গে নেওয়া মাছ হারিয়ে যাবে। মাছ হারানোর সে জায়গাতেই হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাক্ষাত পাওয়া যাবে। সুতরাং হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তার যুবক শিষ্য হযরত ইউশা আলাইহিস সালামকে সঙ্গে নিয়ে, যিনি পরবর্তীকালে নবী হয়েছিলেন, সফর শুরু করে দিলেন। এর পরের ঘটনা কুরআন মাজীদেই আসছে। প্রকাশ থাকে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের এ সফরকে সাধারণ কোন ভ্রমণের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। তাঁর এ সফরের ভেতর আল্লাহ তাআলার বিশেষ উদ্দেশ্য নিহিত ছিল। একটা উদ্দেশ্য তো অতি পরিষ্কার। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা শিক্ষা দিতে চেয়েছেন, নিজেকে নিজে সকলের বড় আলেম বলা কারও পক্ষেই শোভা পায় না। ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে কুল-কিনারাহীন এক অথৈ সাগর। এর কোন দিক সম্পর্কে কে বেশি জানে তা বলা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, আল্লাহ তাআলা নিজ জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা মহা বিশ্ব কিভাবে চালাচ্ছেন তার একটা ঝলক হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া। মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে দুনিয়ায় বহু ঘটনা ঘটতে দেখে। অনেক সময় এমন কাণ্ড-কারখানাও তার চোখে পড়ে যার কোন ব্যাখ্যা সে খুঁজে পায় না এবং যার উদ্দেশ্য তার বুঝে আসে না। অথচ প্রতিটি ঘটনার ভেতরই আল্লাহ তাআলার কোন না কোন হিকমত নিহিত থাকে। মানুষের দৃষ্টি যেহেতু সীমাবদ্ধ তাই সে অনেক সময় তাঁর রহস্য বুঝতে সক্ষম হয় না। কিন্তু যেই সর্বশক্তিমান মালিকের হাতে বিশ্ব জগতের বাগডোর তিনি জানেন কখন কী ঘটনা ঘটা উচিত। ঘটনাটির শেষে এ বিষয়ে আরও আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ। (৪৬ নং টীকা দেখুন।)


৬১


فَلَمَّا بَلَغَا مَجْمَعَ بَيْنِهِمَا نَسِيَا حُوتَهُمَا فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ سَرَبًا


ফালাম্মা-বালাগা-মাজমা‘আ বাইনিহিমা-নাছিয়া-হুতাহুমা-ফাত্তাখাযা ছাবীলাহূফিল বাহরি ছারাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তারা যখন দুই সাগরের সঙ্গমস্থলে পৌঁছল, তখন উভয়েই তাদের মাছের কথা ভুলে গেল। সেটি সাগরের ভেতর সুড়ঙ্গের মত পথ তৈরি করে নিল। ৩৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন তাঁরা দুই সুমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌছালেন, তখন তাঁরা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেলেন। অতঃপর মাছটি সমুদ্রে সুড়ঙ্গ পথ সৃষ্টি করে নেমে গেল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা উভয়ে যখন দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে পৌঁছিল এরা নিজেদের মৎস্যের কথা ভুলে গেল; তা সুড়ংগের মত নিজের পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।


তাফসীরঃ

৩৮. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এক জায়গায় পৌঁছে একটি পাথরের চাঁইয়ের উপর কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, এ সময় সঙ্গে আনা মাছটি ঝুড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে গেল এবং ঘেঁষড়াতে ঘেঁষড়াতে সাগরে গিয়ে পড়ল। যেখানে সেটি পড়েছিল, সেখানে পানিতে সুড়ঙ্গের মত তৈরি হয়ে গেল এবং তার ভেতর সেটি অদৃশ্য হয়ে গেল। হযরত ইউশা আলাইহিস সালাম তখন জেগেই ছিলেন, তিনি মাছটির এ বিস্ময়কর কাণ্ড দেখতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ঘুমিয়ে থাকায় তিনি তাঁকে জাগানো সমীচীন মনে করলেন না। তারপর যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ঘুম ভাঙল এবং সামনে এগিয়ে চললেন, তখনও হযরত ইউশা আলাইহিস সালাম তাঁকে সে কথা জানাতে ভুলে গেলেন। তাঁর সে কথা মনে পড়ল যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে নাশতা চাইলেন।


৬২


فَلَمَّا جَاوَزَا قَالَ لِفَتَاهُ آتِنَا غَدَاءَنَا لَقَدْ لَقِينَا مِن سَفَرِنَا هَـٰذَا نَصَبًا


ফালাম্মা- জা-ওয়াঝা-কা-লা লিফাতা-হুআ-তিনা- গাদাআনা-লাকাদ লাকীনা মিন ছাফারিনা-হা-যা-নাসাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর তারা যখন সে স্থান অতিক্রম করে গেল, তখন মূসা তার (সঙ্গী) যুবককে বলল, আমাদের নাশতা লও। সত্যি বলতে কি, এ সফরে আমরা বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাঁরা সে স্থানটি অতিক্রম করে গেলেন, মূসা সঙ্গী কে বললেনঃ আমাদের নাশতা আন। আমরা এই সফরে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এরা আরো অগ্রসর হল মূসা তার সঙ্গীকে বলল, ‘আমাদের প্রাতঃরাশ আন, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’


৬৩


قَالَ أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الْحُوتَ وَمَا أَنسَانِيهُ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ ۚ وَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي الْبَحْرِ عَجَبًا


কা-লা আরাআইতা ইয আওয়াইনা ইলাসসাখরাতি ফাইন্নী নাছীতুল হূতা ওয়ামা আনছা-নীহু ইল্লাশশাইতা-নুআন আযকুরাহূ ওয়াত্তাখাযা ছাবীলাহূফিল বাহরি ‘আজাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আপনি কি জানেন (কী আজব কাণ্ড ঘটেছে?) আমরা যখন পাথরের চাঁইয়ের উপর বিশ্রাম করছিলাম, তখন মাছটির কথা (আপনাকে বলতে) ভুলে গিয়েছিলাম। সেটির কথা বলতে শয়তানই আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। আর সেটি (অর্থাৎ মাছটি) অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে সাগরে নিজের পথ করে নিয়েছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন প্রস্তর খন্ডে আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই আমাকে একথা স্মরণ রাখতে ভুলিয়ে দিয়েছিল। মাছটি আশ্চর্য জনক ভাবে সমুদ্রে নিজের পথ করে নিয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখণ্ডে বিশ্রাম করছিলাম তখন আমি মৎস্যের কথা ভুলে গিয়েছিলাম ? শয়তানই এর কথা বলিতে আমাকে ভুলাইয়া দিয়েছিল; মৎস্যটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে।’


৬৪


قَالَ ذَٰلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِ ۚ فَارْتَدَّا عَلَىٰ آثَارِهِمَا قَصَصًا


কা-লা যা-লিকা মা-কুন্না-নাবগি ফারতাদ্দা-‘আলাআ-ছা-রিহিমা-কাসাসা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, আমরা তো এটাই সন্ধান করছিলাম। ৩৯ অতএব তারা তাদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বললেনঃ আমরা তো এ স্থানটিই খুঁজছিলাম। অতঃপর তাঁরা নিজেদের চিহ্ন ধরে ফিরে চললেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘আমরা তো সেই স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম।’ এরপর এরা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলিল।


তাফসীরঃ

৩৯. হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে আলামত বলে দেওয়া হয়েছিল এটাই যে, যেখানে মাছটি হারিয়ে যাবে, সেখানেই হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাত হবে। তাই হযরত ইউশা আলাইহিস সালাম তো ঘটনাটি তাঁকে ভয়ে-ভয়ে শুনিয়েছিলেন, কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম শুনে অত্যন্ত খুশী হলেন। তিনি যে গন্তব্যের সন্ধান পেয়ে গেছেন!


৬৫


فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِندِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا


ফাওয়াজাদা- ‘আবদাম মিন ইবা-দিনা আ-তাইনা-হুরাহমাতাম মিন ‘ইনদিনা ওয়া ‘আল্লামনা-হু মিল্লাদুন্না-‘ইল মা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অনন্তর তারা আমার বান্দাদের মধ্য হতে এক বান্দার সাক্ষাত পেল, যাকে আমি আমার বিশেষ রহমত দান করেছিলাম এবং আমার পক্ষ হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। ৪০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর এরা সাক্ষাৎ পেল আমার বান্দাদের মধ্যে একজনের, যাকে আমি আমার নিকট হতে অনুগ্রহ দান করেছিলাম ও আমার নিকট হতে শিক্ষা দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।


তাফসীরঃ

৪০. বুখারী শরীফের একটি হাদীস দ্বারা জানা যায়, ইনিই ছিলেন হযরত খাজির আলাইহিস সালাম। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন পাথরের চাঁইটির কাছে ফিরে আসলেন, তখন তিনি সেখানে চাদর মুড়ি দিয়ে শোওয়া ছিলেন। তাঁকে যে বিশেষ জ্ঞান দেওয়ার কথা আয়াতে বলা হয়েছে, তা হল সৃষ্টি জগতের গুপ্ত রহস্য সংক্রান্ত জ্ঞান, যার ব্যাখ্যা এ ঘটনার শেষে আসছে।


৬৬


قَالَ لَهُ مُوسَىٰ هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا


কা-লা লাহূমূছা-হাল আত্তাবি‘উকা ‘আলাআন তু‘আলিলমানি মিম্মা-‘উলিলমতা রুশদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা তাকে বলল, আমি কি এই লক্ষে আপনার অনুগমন করতে পারি যে, আপনাকে যে কল্যাণকর জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তা থেকে খানিকটা আমাকে শেখাবেন? ৪১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা তাঁকে বললেনঃ আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা তাকে বলল, ‘সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন, এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি ?


তাফসীরঃ

৪১. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে এটা ছিল অত্যন্ত বিনীত অনুরোধ। এর দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায়, ছাত্রের কর্তব্য উসতাযের সাথে সর্বদা বিনীতভাবে কথা বলা ও বিনীত আচরণ করা। এক বর্ণনায় আছে, تواضعوالمن تعلمون منه ‘যার কাছে শিক্ষালাভ কর, তার সাথে বিনয় অবলম্বন কর’। -অনুবাদক


৬৭


قَالَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا


কা-লা ইন্নাকা লান তাছতাতী‘আ মা‘ইয়া সাবরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আমি নিশ্চিত আমার সঙ্গে থাকার ধৈর্য আপনি রক্ষা করতে পারবেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্যধারণ করে থাকতে পারবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, আপনি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবেন না,


৬৮


وَكَيْفَ تَصْبِرُ عَلَىٰ مَا لَمْ تُحِطْ بِهِ خُبْرًا


ওয়া কাইফা তাসবিরু ‘আলা-মা-লাম তুহিতবিহী খুবরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যে বিষয়ে আপনি পরিপূর্ণ জ্ঞাত নন, তাতে আপনি ধৈর্য রাখবেনই বা কিভাবে। ৪২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে বিষয় বোঝা আপনার আয়ত্তাধীন নয়, তা দেখে আপনি ধৈর্য্যধারণ করবেন কেমন করে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘যে বিষয় আপনার জ্ঞানায়ত্ত নয় সে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করবেন কেমন করে ?’


তাফসীরঃ

৪২. বুখারী শরীফের হাদীসে আছে, হযরত খাজির আলাইহিস সালাম হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে একথাও বলেছিলেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাকে এমন এক জ্ঞান দিয়েছেন, যে জ্ঞান আপনার নেই অর্থাৎ, সৃষ্টি জগতের গুপ্ত রহস্য সংক্রান্ত জ্ঞান। আবার আপনাকে এমন জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, যা আমার নেই অর্থাৎ, শরীয়তের জ্ঞান।


৬৯


قَالَ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا وَلَا أَعْصِي لَكَ أَمْرًا


কা-লা ছাতাজিদুনীইন শাআল্লা-হু সা-বিরাওঁ ওয়ালাআ‘সী লাকা আমরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন এবং আমি আপনার কোন হুকুম অমান্য করব না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বললেনঃ আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘আল্লাহ্ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।’


৭০


قَالَ فَإِنِ اتَّبَعْتَنِي فَلَا تَسْأَلْنِي عَن شَيْءٍ حَتَّىٰ أُحْدِثَ لَكَ مِنْهُ ذِكْرًا


কা-লা ফাইনিত তাবা‘তানী ফালা-তাছআলনী ‘আন শাইয়িন হাত্তাউহদিছালাকামিনহু যিকরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আচ্ছা! আপনি যদি আমার সঙ্গে চলেন, তবে যতক্ষণ না আমি নিজে কোন বিষয় আপনাকে খুলে বলি, ততক্ষণ পর্যন্ত সে বিষয়ে আপনি আমাকে কোন প্রশ্ন করবেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ যদি আপনি আমার অনুসরণ করেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আচ্ছা, আপনি যদি আমার অনুসরণ করবেনই তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে আপনাকে কিছু বলি।’


৭১


فَانطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا رَكِبَا فِي السَّفِينَةِ خَرَقَهَا ۖ قَالَ أَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا لَقَدْ جِئْتَ شَيْئًا إِمْرًا


ফানতালাকা-হাত্তাইযা-রাকিবা-ফিছছাফীনাতি খারাকাহা- কা-লা আখারাকতাহা-লিতুগরিকা আহলাহা- লাকাদ জি’তা শাইআন ইমরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর তারা চলতে শুরু করল। এক পর্যায়ে তারা যখন একটি নৌকায় চড়ল, তখন সে নৌকাটি ফুঁটো করে দিল। ৪৩ মূসা বলল, আরে! আপনি এটি ফুঁটো করে দিলেন এর যাত্রীদেরকে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য? আপনি তো একটা বিপজ্জনক কাজ করলেন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তারা চলতে লাগলঃ অবশেষে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল, তখন তিনি তাতে ছিদ্র করে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি কি এর আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্যে এতে ছিদ্র করে দিলেন? নিশ্চয়ই আপনি একটি গুরুতর মন্দ কাজ করলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর উভয়ে চলতে লাগল, পরে যখন এরা নৌকায় আরোহণ করল তখন সে তা বিদীর্ণ করে দিল। মূসা বলল, ‘আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করে দিবার জন্যে তা বিদীর্ণ করলেন ? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।’


তাফসীরঃ

৪৩. বুখারী শরীফের হাদীসে আছে, হযরত খাজির আলাইহিস সালাম নৌকার একটি তক্তা খুলে ফেলেছিলেন, যাতে সেটিতে এক বিশাল ছিদ্র হয়ে যায়।


৭২


قَالَ أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا


কা-লা আলাম আকুল ইন্নাকা লান তাছতাতী‘আ মা‘ইয়া সাবরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আমি কি বলিনি আমার সঙ্গে থেকে আপনি ধৈর্য রাখতে পারবেন না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য্য ধরতে পারবেন না ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আমি কি বলি নাই যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না ?’


৭৩


قَالَ لَا تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلَا تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا


কা-লা লা-তুআখিযনী বিমা -নাছীতুওয়ালা-তুরহিকনী মিন আমরী ‘উছরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, আমার দ্বারা যে ভুল হয়ে গেছে, তার জন্য আমাকে ধরবেন না এবং আমার কাজকে বেশি কঠিন করবেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বললেনঃ আমাকে আমার ভুলের জন্যে অপরাধী করবেন না এবং আমার কাজে আমার উপর কঠোরতা আরোপ করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘আমার ভুলের জন্যে আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’


৭৪


فَانطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَّقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُّكْرًا


ফানতালাকা-হাত্তাইযা-লাকিয়া-গুলা-মান ফাকাতালাহূকা-লা আকাতালতা নাফছান ঝাকিইইয়াতাম বিগাইরি নাফছিল লাকাদ জি’তা শাইআন নুকরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর তারা আবার চলতে শুরু করল। চলতে চলতে যখন একটি বালকের সঙ্গে তাদের সাক্ষাত হল তখন বালকটিকে সে হত্যা করে ফেলল। ৪৪ মূসা বলল, আপনি কি একটা নির্দোষ জীবন নাশ করলেন, যে কিনা কারও জীবন নাশ করেনি? আপনি খুবই অন্যায় কাজ করেছেন!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন একটি বালকের সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি তাকে হত্যা করলেন। মূসা বললেন? আপনি কি একটি নিস্পাপ জীবন শেষ করে দিলেন প্রাণের বিনিময় ছাড়াই? নিশ্চয়ই আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর উভয়ে চলতে লাগল, চলতে চলতে এদের সঙ্গে এক বালকের সাক্ষাৎ হলে সে একে হত্যা করল। তখন মূসা বলল, ‘আপনি কি এক নি®পাপ জীবন নাশ করলেন, হত্যার অপরাধ ছাড়াই ? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।


তাফসীরঃ

৪৪. বুখারী শরীফের উল্লিখিত হাদীসে আছে, বালকটি অন্যান্য বালকদের সাথে খেলায় লিপ্ত ছিল। হযরত খাজির আলাইহিস সালাম তার ধড় থেকে মাথা আলগা করে ফেললেন।


৭৫


۞ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكَ إِنَّكَ لَن تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا


কা- লা আলাম আকুল্লাকা ইন্নাকা লান তাছতাতী‘আ মা‘ইয়া সাবরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আমি কি আপনাকে বলিনি, আপনি আমার সাথে থাকার ধৈর্য রাখতে পারবেন না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ আমি কি বলিনি যে, আপনি আমার সাথে ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আমি কি আপনাকে বলি নাই যে, আপনি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না ?


৭৬


قَالَ إِن سَأَلْتُكَ عَن شَيْءٍ بَعْدَهَا فَلَا تُصَاحِبْنِي ۖ قَدْ بَلَغْتَ مِن لَّدُنِّي عُذْرًا


কা-লা ইন ছাআলতুকা ‘আন শাইয়িম বা‘দাহা-ফালা-তুসা-হিবনী কাদ বালাগতা মিল্লাদুন্নী ‘উযরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, এরপর যদি আপনাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করি, তবে আপনি আমাকে আর সাথে রাখবেন না। নিশ্চয়ই আপনি আমার দিক থেকে ওজরের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বললেনঃ এরপর যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে সাথে রাখবেন না। আপনি আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত হয়ে গেছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘এটার পর, যদি আমি আপনাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তবে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না ; আমার ‘ওযর-আপত্তির চূড়ান্ত হয়েছে।


৭৭


فَانطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا فَأَبَوْا أَن يُضَيِّفُوهُمَا فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَن يَنقَضَّ فَأَقَامَهُ ۖ قَالَ لَوْ شِئْتَ لَاتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا


ফানতালাকা-হাত্তাইযাআতাইয়াআহলা কারইয়াতিনিছতাত‘আমা আহলাহা-ফাআবাওঁআইঁ ইউদাইয়িফূহুমা-ফাওয়াজাদা-ফীহা-জিদা-রাইঁ ইউরীদুআইঁ ইয়ানকাদ্দা ফাআকা-মাহূ কা-লা লাও শি’তা লাত্তাখাযতা ‘আলাইহি আজরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর তারা চলতে থাকল। চলতে চলতে যখন এক জনপদবাসীর কাছে পৌঁছল, তখন তাদের কাছে খাবার চাইল। কিন্তু জনপদবাসী তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল। প্রাচীরটি সে খাড়া করে দিল। মূসা বলল, আপনি ইচ্ছা করলে এ কাজের জন্য কিছু পারিশ্রমিক নিতে পারতেন। ৪৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌছে তাদের কাছে খাবার চাইল, তখন তারা তাদের অতিথেয়তা করতে অস্বীকার করল। অতঃপর তারা সেখানে একটি পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন, সেটি তিনি সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মূসা বললেনঃ আপনি ইচ্ছা করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক আদায় করতে পারতেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর উভয়ে চলতে লাগল; চলতে চলতে এরা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে তাদের নিকট খাদ্য চাইল; কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। এরপর সেখানে তারা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল এবং সে একে সুদৃঢ় করে দিল। মূসা বলল, ‘আপনি তো ইচ্ছা করলে এটার জন্যে পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।’


তাফসীরঃ

৪৫. অর্থাৎ, এ জনপদের অধিবাসীরা আমাদেরকে মেহমানদারী করতে অস্বীকার করেছিল। এখন আপনি যে তাদের প্রাচীরটি মেরামত করে দিলেন, ইচ্ছা করলে তো এর জন্য কোন পারিশ্রমিক নিতে পারতেন, তাহলে আমরা তা দ্বারা আমাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারতাম।


৭৮


قَالَ هَـٰذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ ۚ سَأُنَبِّئُكَ بِتَأْوِيلِ مَا لَمْ تَسْتَطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا


কা-লা হা-যা-ফিরা-কুবাইনী ওয়া বাইনিকা ছাউনাব্বিউকা বিতা’বিলি মালাম তাছতাতি‘ ‘আলাইহি সাব রা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, এবার আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময় এসে গেছে। সুতরাং যেসব বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধরতে পারেননি, এখন আমি আপনাকে তার রহস্য বলে দিচ্ছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ এখানেই আমার ও আপনার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল। এখন যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য্য ধরতে পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে দিচ্ছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘এইখানেই আপনার এবং আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল, যে বিষয়ে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেন নাই আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।


৭৯


أَمَّا السَّفِينَةُ فَكَانَتْ لِمَسَاكِينَ يَعْمَلُونَ فِي الْبَحْرِ فَأَرَدتُّ أَنْ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَاءَهُم مَّلِكٌ يَأْخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصْبًا


আম্মাছ ছাফীনাতুফাকা-নাত লিমাছা-কীনা ইয়া‘মালূনা ফিল বাহরি ফাআরাততুআন আ‘ঈবাহা-ওয়া কা-না ওয়ারাআহুম মালিকুইঁ ইয়া‘খুযুকুল্লা ছাফীনাতিন গাসবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নৌকাটির ব্যাপার তো এই, সেটি ছিল কয়েকজন গরীব লোকের, যারা সাগরে কাজ করত। আমি সেটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দিতে চাইলাম। (কেননা) তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বলপ্রয়োগে সব (ভালো) নৌকা কেড়ে নিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নৌকাটির ব্যাপারে-সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘নৌকাটির ব্যাপার-এটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, এরা সমুদ্রে জীবিকা অনে¦ষণ করত; আমি, ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে; কারণ এদের পশ্চাতে ছিল এক রাজা, যে বলপ্রয়োগে নৌকাসকল ছিনিয়ে নিত।


৮০


وَأَمَّا الْغُلَامُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤْمِنَيْنِ فَخَشِينَا أَن يُرْهِقَهُمَا طُغْيَانًا وَكُفْرًا


ওয়া আম্মাল গুলা-মুফাকা-না আবাওয়া-হুমু’মিনাইনি ফাখাশীনাআইঁ ইউরহিকাহুমাতুগইয়া-নাওঁ ওয়া কুফরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর বালকটির ব্যাপার এই, তার পিতা-মাতা ছিল মুমিন। আমার আশঙ্কা হল, সে কিনা তাদেরকে অবাধ্যতা ও কুফরীতে ফাঁসিয়ে দেয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বালকটির ব্যাপার তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা করলাম যে, সে অবাধ্যতা ও কুফর দ্বারা তাদেরকে প্রভাবিত করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আর কিশোরটি, তার পিতামাতা ছিল মু’মিন। আমি আশংকা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দিয়ে এদেরকে বিব্রত করবে।


৮১


فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا


ফাআরাদনাআইঁ ইউবদিলাহুমা- রাব্বুহুমা- খাইরাম মিনহু ঝাকা-তাওঁ ওয়া আকারাবা রুহমা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাই আমি চাইলাম তাদের প্রতিপালক যেন তাদের এই বালকটির পরিবর্তে এমন এক সন্তান দান করেন, যে পবিত্রতায় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সদাচরণেও বেশি অগ্রগামী হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি ইচ্ছা করলাম যে, তাদের পালনকর্তা তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে পবিত্রতায় ও ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ সন্তান দান করুক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এরপর আমি চাইলাম যে, এদের প্রতিপালক যেন এদেরকে এর পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি-ভালবাসায় ঘনিষ্ঠতর।


৮২


وَأَمَّا الْجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَامَيْنِ يَتِيمَيْنِ فِي الْمَدِينَةِ وَكَانَ تَحْتَهُ كَنزٌ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَالِحًا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبْلُغَا أَشُدَّهُمَا وَيَسْتَخْرِجَا كَنزَهُمَا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ وَمَا فَعَلْتُهُ عَنْ أَمْرِي ۚ ذَٰلِكَ تَأْوِيلُ مَا لَمْ تَسْطِع عَّلَيْهِ صَبْرًا


ওয়া আম্মাল জিদা-রু ফাকা-না লিগুলা-মাইনি ইয়াতীমাইনি ফিল মাদীনাতি ওয়া কা-না তাহতাহূকানঝুল্লাহুমা-ওয়া কা-না আবূহুমা-সা-লিহান ফাআরা-দা রাব্বুকা আইঁ ইয়াবলুগাআশুদ্দা হুমা-ওয়া ইয়াছতাখরিজা-কানঝাহুমা- রাহমাতাম মির রাব্বিকা ওয়ামা-ফা‘আলতুহূ‘আন আমরী যা-লিকা তা’বীলুমা-লাম তাছতি‘ ‘আলাইহি সাবরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বাকি থাকল প্রাচীরটি। তো এটি ছিল এই শহরে বসবাসকারী দুই ইয়াতীমের। এর নিচে তাদের গুপ্তধন ছিল এবং তাদের পিতা ছিল একজন সৎলোক। সুতরাং আপনার প্রতিপালক চাইলেন ছেলে দু’টো প্রাপ্তবয়সে উপনীত হোক এবং নিজেদের গুপ্তধন বের করে নিক। এসব আপনার প্রতিপালকের রহমতেই ঘটেছে। আমি কোন কাজই মনগড়াভাবে করিনি। আপনি যেসব ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি, এই হল তার ব্যাখ্যা। ৪৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

প্রাচীরের ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন বালকের। এর নীচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং আপনার পালনকর্তা দায়বশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পন করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার ব্যাখ্যা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আর ঐ প্রাচীরটি, এটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এটার নিম্নদেশে আছে এদের গুপ্তধন এবং এদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। সুতরাং আপনার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, এরা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং এরা এদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক। আমি নিজ হতে কিছু করি নাই; আপনি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণে অপারগ হয়েছিলেন, এটাই তার ব্যাখ্যা।’


তাফসীরঃ

৪৬. হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে দিয়ে হযরত খাজির আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাত করানো এবং এসব ঘটনা তাকে প্রত্যক্ষ করানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বাস্তব সত্যের সাথে তাকে পরিচিত করানো। সে সত্যকে পরিষ্কার করে দেওয়ার লক্ষ্যেই কুরআন মাজীদ তাদের সাক্ষাতকারের ঘটনাটি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছে।অন্যের মালিকানায় তার অনুমতি ছাড়া কোনরূপ হস্তক্ষেপ করা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয। বিশেষত অন্যের মালিকানাধীন বস্তুর কোনরূপ ক্ষতিসাধন করার অনুমতি ইসলাম কাউকে দেয়নি। এমনকি সে ক্ষতি যদি মালিকের উপকার করার অভিপ্রায়েও হয়ে থাকে। কিন্তু কুরআন মাজীদ হযরত খাজির আলাইহিস সালামের যে ঘটনা বর্ণনা করেছে, আমরা তাতে অন্য রকম দৃশ্য দেখতে পাই। তিনি মালিকদের অনুমতি ছাড়াই নৌকার তক্তা খুলে ফেলেন। এমনিভাবে কোন নিরপরাধ লোককে হত্যা করা শরীয়তে একটি গুরুতর পাপ। বিশেষত কোন শিশুকে হত্যা করা তো যুদ্ধাবস্থায়ও জায়েয নয়। এমনকি যদি জানা থাকে সে শিশু বড় হয়ে দেশ ও দশের পক্ষে মুসিবতের কারণ হবে, তবুও এখনই তাকে হত্যা করা কোনক্রমেই বৈধ নয়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও হযরত খাজির আলাইহিস সালাম একটি শিশুকে হত্যা করে ফেলেন। তাঁর এ কাজ দু’টি যেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয ছিল না, তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব হয়নি। তিনি সঙ্গে-সঙ্গেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে হযরত খাজির আলাইহিস সালাম এহেন শরীয়ত বিরোধী কাজ কিভাবে করলেন? এ প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য প্রথমে একটা বিষয় বুঝে নেওয়া জরুরি। বিশ্ব-জগতে যত ঘটনা ঘটে, আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে তা ভালো মনে হোক বা মন্দ, প্রকৃতপক্ষে তার সম্পর্ক এক অলক্ষ্য জগতের সাথে; এমন এক জগতের সাথে যা আমাদের চোখের আড়ালে। পরিভাষায় তাকে ‘তাকবীনী জগত’ বলে। সে জগত সরাসরি আল্লাহ তাআলার হিকমত এবং সৃজন ও বিনাশ সংক্রান্ত বিধানাবলী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কোন ব্যক্তি কতকাল জীবিত থাকবে, কখন তার মৃত্যু হবে, কতকাল সুস্থ থাকবে, কখন রোগাক্রান্ত হবে, তার পেশা কী হবে এবং তার মাধ্যমে সে কী পরিমাণ উপার্জন করবে, এবংবিধ যাবতীয় বিষয় সম্পাদন করার জন্য তিনি বিশেষ কর্মীবাহিনী নিযুক্ত করে রেখেছেন, যারা আমাদের অলক্ষ্যে থেকে আল্লাহ তাআলার এ জাতীয় হুকুম বাস্তবায়িত করেন। উদাহরণত, আল্লাহ তাআলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যখন কোন ব্যক্তির মৃত্যুক্ষণ উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মৃত্যুর ফিরিশতা তার ‘রূহ কবয’ (প্রাণ সংহার)-এর জন্য পৌঁছে যায়। সে যখন আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে কারও মৃত্যু ঘটায়, তখন সে কোন অপরাধ করে না; বরং আল্লাহ তাআলার হুকুম তামিল করে মাত্র। কোন মানুষের কিন্তু অপর কোন মানুষের প্রাণনাশ করার অধিকার নেই, কিন্তু আল্লাহ তাআলা যেই ফিরিশতাকে এ কাজের জন্য নিযুক্ত করেছেন, তার পক্ষে এটা কোন অপরাধ নয়। বরং সম্পূর্ণ ন্যায়নিষ্ঠ আচরণ, যেহেতু সে আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করছে। আল্লাহ তাআলার তাকবীনী হুকুম কার্যকর করার জন্য সাধারণত ফিরিশতাদেরকেই নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। কিন্তু তিনি চাইলে যে-কারও উপর এ ভার অর্পণ করতে পারেন। হযরত খাজির আলাইহিস সালাম যদিও মানুষ ছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে ফিরিশতাদের মত তাকবীনী জগতের ‘বার্তাবাহক’ বানিয়েছিলেন। তিনি যা-কিছু করেছিলেন আল্লাহ তাআলার তাকবীনী হুকুমের অধীনে করেছিলেন সুতরাং মৃত্যুর ফিরিশতা সম্পর্কে যেমন প্রশ্ন তোলা যায় না সে একজন নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটাল কেন কিংবা বলা যায় না যে, এ কাজ করে সে একটা অপরাধ করেছে, যেহেতু সে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ কাজের জন্য আদিষ্ট ছিল, তেমনিভাবে হযরত খাজির আলাইহিস সালামের প্রতিও তাঁর কর্মকাণ্ডের কারণে কোন আপত্তি তোলা যাবে না। কেননা তিনিও নৌকাটিতে খুঁত সৃষ্টি করা ও শিশুটিকে হত্যা করার কাজে আল্লাহ তাআলার তাকবীনী হুকুমের দ্বারা আদিষ্ট ছিলেন। ফলে তাঁর সে কাজ কোন অপরাধ ছিল না। কিন্তু আমাদের ব্যাপার ভিন্ন। আমরা দুনিয়ায় শরয়ী বিধানাবলীর অধীন। আমাদেরকে তাকবীনী জগতের কোন জ্ঞানও দেওয়া হয়নি এবং সেই জগত সম্পর্কিত কোন দায়িত্বও আমাদের উপর অর্পিত হয়নি। আমরা দৃশ্যমান জগতে বাস করি, জাগ্রত জীবনে বিচরণ করি। চাক্ষুষ যা দেখতে পাই তাকে কেন্দ্র করেই আমাদের আবর্তন। তাই আমাদেরকে যেসব বিধান দেওয়া হয়েছে, তা দৃশ্যজগত ও চাক্ষুষ কার্যাবলীর সাথেই সম্পৃক্ত। তাকে ‘শরয়ী হুকুম’ বা শরীয়ত বলে। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এই চাক্ষুষ ও জাগ্রত জগতের নবী ছিলেন। তাকে এক শরীয়ত দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার অধীন ছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে না হযরত খাজির আলাইহিস সালামের কর্মকাণ্ড দেখে চুপ থাকা সম্ভব হয়েছে, আর না তিনি পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে সফর অব্যাহত রাখতে পেরেছেন। পর পর ব্যতিক্রমধর্মী তিনটি ঘটনা দেখে তিনি বুঝে ফেলেছেন হযরত খাজির আলাইহিস সালামের কর্মক্ষেত্র তাঁর নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং তাঁর পক্ষে তাঁর সঙ্গে চলা সম্ভব নয়। তবে তাঁর সঙ্গে আর থাকা সম্ভব না হলেও, এ ঘটনার মাধ্যমে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে খোলা চোখে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশ্বজগতে যা-কিছু ঘটছে তার পেছনে আল্লাহ তাআলার অপার হিকমত সক্রিয় রয়েছে। কোন ঘটনার রহস্য ও তাৎপর্য যদি খুঁজে পাওয়া না যায়, তবে তার ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলার ফায়সালা সম্পর্কে কোন আপত্তি তোলার সুযোগ আমাদের নেই। কেননা বিষয়টা যেহেতু তাকবীনী জগতের, তাই এর রহস্য উন্মোচনও সে জগতেই হতে পারে, কিন্তু সে জগত তো আমাদের চোখের আড়ালে। দৈনন্দিন জীবনে এমন বহু ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে যা আমাদের অন্তর ব্যথিত করে। অনেক সময় নিরীহ-নিরপরাধ লোককে নিগৃহীত হতে দেখে আমাদের অন্তরে নানা সংশয় দেখা দেয়, যা নিরসনের কোন দাওয়াই আমাদের হাতে ছিল না। আল্লাহ তাআলা হযরত খাজির আলাইহিস সালামের মাধ্যমে তাকবীনী জগতের রঙ্গমঞ্চ থেকে খানিকটা পর্দা সরিয়ে এক ঝলক তার দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন এবং এভাবে মুমিনের অন্তরে যাতে এরূপ সংশয় সৃষ্টি হতে না পারে তার ব্যবস্থা করে দিলেন। স্মরণ রাখতে হবে তাকবীনী জগত এক অদৃশ্য জগত এবং তার কর্মীগণ আমাদের চোখের আড়াল। হযরত খাজির আলাইহিস সালামও অদৃশ্যই ছিলেন। তাকবীনী জগতের খানিকটা দৃশ্য দেখানোর লক্ষ্যে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে ওহীর মাধ্যমে তাঁর সন্ধান দেওয়া হয়েছিল। এখন যেহেতু ওহীর দরজা বন্ধ, তাই এখন কারও পক্ষে নিশ্চিতভাবে তাকবীনী জগতের কোন কর্মীর সন্ধান ও সাক্ষাত লাভ সম্ভব নয়। এমনিভাবে দৃশ্যমান জগতের কোন ব্যক্তির পক্ষে এ দাবী করারও অবকাশ নেই যে, সে তাকবীনী জগতের একজন দায়িত্বশীল এবং সেই জগতের বিভিন্ন ক্ষমতা তার উপর ন্যস্ত আছে। কাজেই হযরত খাজির আলাইহিস সালামের ঘটনাকে ভিত্তি করে যারা শরীয়তের বিধি-বিধানকে স্থগিত করা বা তার বিপরীত কাজকে বৈধ সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছে, নিঃসন্দেহে তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত এবং তারা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ঘৃণ্য তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। কোন কোন নামধারী দরবেশ তাসাওউফের নাম দিয়ে বলে থাকে, ‘শরীয়তের বিধান কেবল স্থূলদর্শী লোকদের জন্য, আমরা তা থেকে ব্যতিক্রম’। নিঃসন্দেহে এটা চরম পথভ্রষ্টতা। এখন শরীয়তের বিধান সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কারও কাছে এমন কোন দলীল নেই, যার বলে সে শরীয়তের বিধান থেকে ব্যতিক্রম থাকতে পারে।


৮৩


وَيَسْأَلُونَكَ عَن ذِي الْقَرْنَيْنِ ۖ قُلْ سَأَتْلُو عَلَيْكُم مِّنْهُ ذِكْرًا


ওয়া ইয়াছআলূনাকা আন যিল কারনাইনি কুল ছাআতলূ‘আলাইকুম মিনহু যিকরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। ৪৭ বলে দাও, ‘আমি তার কিছুটা বৃত্তান্ত তোমাদেরকে পড়ে শোনাচ্ছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা তোমাকে যুল-কারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব।’


তাফসীরঃ

৪৭. সূরাটির পরিচিতিতে বলা হয়েছে, মুশরিকগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি প্রশ্ন করেছিল। একটি প্রশ্ন ছিল, এক ব্যক্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সারা পৃথিবী ভ্রমণ করেছিল। কে সেই ব্যক্তি এবং কী তার বৃত্তান্ত? এবার তাদের এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হচ্ছে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, সেই ব্যক্তি নাম ছিল ‘যুলকারনাইন’। ‘যুলকারনাইন’-এর শাব্দিক অর্থ দুই শিং-বিশিষ্ট। এটা এক বাদশাহর উপাধি। এ উপাধির কারণ অজ্ঞাত। কুরআন মাজীদে এ বাদশাহর পরিচয় এবং তার শাসনকাল সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। তবে আমাদের সমকালীন ঐতিহাসিক ও গবেষকদের অধিকাংশেই মনে করেন, ইনি ছিলেন ইরানের সম্রাট ‘সাইরাস’ [কায়খুসরূ. মৃ. খৃ, পূ. ৫৩৯] যিনি বনী ইসরাঈলকে বাবিলের নির্বাসিত জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় ফিলিস্তিনে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কুরআন মাজীদ কেবল তার তিনটি দীর্ঘ সফরের কথা উল্লেখ করেছে। প্রথম সফর ছিল পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত। দ্বিতীয় সফর ছিল পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত আর তৃতীয়টি উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, যেখানে তিনি ইয়াজুজ-মাজুজের বর্বরোচিত হামলা থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য একটি প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন।


৮৪


إِنَّا مَكَّنَّا لَهُ فِي الْأَرْضِ وَآتَيْنَاهُ مِن كُلِّ شَيْءٍ سَبَبًا


ইন্না-মাক্কান্না-লাহূফিল আরদিওয়া আ-তাইনা-হু মিন কুল্লি শাইয়িন ছাবাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে তাকে ক্ষমতা দান করেছিলাম এবং তাকে সবকিছুর উপকরণ দিয়েছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায়-উপকরণ দান করেছিলাম।


৮৫


فَأَتْبَعَ سَبَبًا


ফাআতবা‘আ ছাবাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফলে সে একটি পথের অনুগামী হল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর সে এক পথ অবলম্বন করল।


৮৬


حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَغْرِبَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَغْرُبُ فِي عَيْنٍ حَمِئَةٍ وَوَجَدَ عِندَهَا قَوْمًا ۗ قُلْنَا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِمَّا أَن تُعَذِّبَ وَإِمَّا أَن تَتَّخِذَ فِيهِمْ حُسْنًا


হাত্তাইযা-বালাগা মাগরিবাশ শামছি ওয়া জাদাহা-তাগরুবুফী ‘আইনিন হামিআতিওঁ ওয়া ওয়াজাদা ‘ইনদাহা-কাওমান কুলনা-ইয়া-যাল কারনাইনি ইম্মাআন তু‘আযযিবা ওয়া ইম্মাআন তাত্তাখিযা ফীহিম হুছনা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যেতে যেতে যখন সূর্যাস্তের স্থানে পৌঁছল, তখন সে দেখতে পেল, সেটি এক কর্দমাক্ত (কালো) জলাধারে অস্ত যাচ্ছে ৪৮ এবং সেখানে সে একটি সম্প্রদায়ের সাক্ষাত পেল। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! (তোমার সামনে দুটি পথ আছে।) হয় তুমি তাদেরকে শাস্তি দেবে, নয়ত তাদের ব্যাপারে উত্তম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৪৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

চলতে চলতে সে যখন সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছিল তখন সে সূর্যকে এক পংকিল জলাশয়ে অস্তগমন করতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল। আমি বললাম, ‘হে যুল-র্কানাইন! তুমি এদেরকে শাস্তি দিতে পার বা এদের ব্যাপার সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।’


তাফসীরঃ

৪৮. সে অঞ্চলে যারা বসবাস করত তারা ছিল কাফের। যুলকারনাইন যখন সেখানে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করলেন, আল্লাহ তাঁকে বললেন, তুমি ইচ্ছা করলে অন্যান্য বিজেতাদের মত ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদেরকে মিসমার করে দিতে পার কিংবা চাইলে তাদের সাথে ভালো ব্যবহারও করতে পার। দ্বিতীয় পন্থাকে ‘ভালো ব্যবহার’ শব্দে ব্যক্ত করে আল্লাহ তাআলা ইশারা করেছেন এ পন্থা অবলম্বনই শ্রেয়। ‘যুলকারনাইন’ নবী ছিলেন কিনা এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তিনি নবী হয়ে থাকলে আল্লাহ তাআলা তাকে একথা বলেছিলেন ওহীর মাধ্যমে। আর যদি নবী না হন, তবে সম্ভবত সে যুগের কোন নবীর মাধ্যমে তাকে একথা জানানো হয়েছিল। এমনও হতে পারে যে, ইলহামের মাধ্যমে একথা তার অন্তরে সঞ্চারিত করা হয়েছিল।


৪৯. এটা তাঁর প্রথম ভ্রমণ। তখন পশ্চিম দিকে মানব বসতি যতদূর বিস্তার লাভ করেছিল, তিনি তার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছিলেন। এরপর আর কোন লোকালয় ছিল না; ছিল আদিগন্ত বিস্তৃত সাগর। সে সাগরও ছিল কালো পঙ্কময়। সন্ধ্যাবেলা যখন সূর্য অস্ত যেত তখন দর্শকের কাছে মনে হত, যেন সেটি কোন কর্দমাক্ত জলাধারে অস্ত যাচ্ছে।


৮৭


قَالَ أَمَّا مَن ظَلَمَ فَسَوْفَ نُعَذِّبُهُ ثُمَّ يُرَدُّ إِلَىٰ رَبِّهِ فَيُعَذِّبُهُ عَذَابًا نُّكْرًا


কা-লা আম্মা-মান জালামা ফাছাওফা নু‘আযযি বুহূ ছু ম্মা ইউরাদ্দু ইলা-রাব্বিহী ফাইউ‘আযযি বুহূ‘আযা-বান নুকরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, তাদের মধ্যে যে-কেউ সীমালংঘন করবে তাকে আমি শাস্তি দেব। তারপর তাকে তার প্রতিপালকের কাছে পৌঁছানো হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দেবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী হবে আমি তাকে শাস্তি দেব। অতঃপর তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে ফিরে যাবেন। তিনি তাকে কঠোর শাস্তি দেবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘যে কেউ সীমালংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব, এরপর সে তার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।


৮৮


وَأَمَّا مَنْ آمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُ جَزَاءً الْحُسْنَىٰ ۖ وَسَنَقُولُ لَهُ مِنْ أَمْرِنَا يُسْرًا


ওয়া আম্মা-মান আ-মানা ওয়া ‘আমিলা সা-লিহান ফালাহূজাঝাআনিল হুছনা-,ওয়া ছানাকূলুলাহূমিন আমরিনা-ইউছরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে যে ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, সে উত্তম প্রতিদানের উপযুক্ত হবে এবং আমিও আদেশ দান কালে তাকে সহজ কথা বলব। ৫০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যে বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে তার জন্য প্রতিদান রয়েছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দেব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তবে যে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তার জন্যে প্রতিদানস্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তার প্রতি ব্যবহারে আমি নম্র কথা বলিব।’


তাফসীরঃ

৫০. যুলকারনাইন যে উত্তর দিয়েছিলেন তার সারমর্ম হল, আমি তাদেরকে সরল পথে চলার দাওয়াত দিব, যারা সে দাওয়াত কবুল করবে না এবং এভাবে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে আমি তাদেরকে শাস্তি দেব। আর যারা দাওয়াত কবুল করে ঈমান আনবে ও সৎকর্ম অবলম্বন করবে, তাদের প্রতি আমি সহজ ও সদয় আচরণ করব।


৮৯


ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا


ছুম্মা আতবা‘আ ছাবাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর সে আরেক পথ ধরে চলল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তিনি এক উপায় অবলম্বন করলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আবার সে এক পথ ধরিল,


৯০


حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ مَطْلِعَ الشَّمْسِ وَجَدَهَا تَطْلُعُ عَلَىٰ قَوْمٍ لَّمْ نَجْعَل لَّهُم مِّن دُونِهَا سِتْرًا


হাত্তাইযা-বালাগা মাতলি‘আশশামছি ওয়াজাদাহা-তাতলু‘উ ‘আলা-কাওমিল লাম নাজ‘আল লাহুম মিন দূনিহা-ছিতরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

চলতে চলতে যখন সূর্যোদয়ের স্থানে পৌঁছল, তখন সে দেখল সেটি উদয় হচ্ছে এমন এক জাতির উপর, যাদের জন্য আমি তা থেকে (অর্থাৎ তার রোদ থেকে) বাঁচার কোন অন্তরালের ব্যবস্থা করিনি। ৫১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয়-স্থলে পৌঁছিল তখন সে দেখল তা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদয় হচ্ছে যাদের জন্যে সূর্যতাপ হতে কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করি নাই;


তাফসীরঃ

৫১. এটা যুলকারনাইনের দ্বিতীয় সফরের বৃত্তান্ত। তিনি এ সফরে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখানে এমন কিছু লোক বাস করত, যারা তখনও পর্যন্ত সভ্যতার আলো পায়নি। তারা ঘর-বাড়ি নির্মাণ জানত না এবং রোদ থেকে বাঁচার জন্য ছাউনি তৈরির কলা-কৌশল বুঝত না। সকলে খোলা মাঠে থাকত। সূর্যের রোদ ও তাপ তাদের উপর সরাসরি পড়ত।


৯১


كَذَٰلِكَ وَقَدْ أَحَطْنَا بِمَا لَدَيْهِ خُبْرًا


কাযা-লিকা ওয়া কাদ আহাতনা-বিমা-লাদাইহি খুবরা


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ঘটনা এমনই ঘটল। যুলকারনাইনের কাছে যা-কিছু (উপকরণ) ছিল সে সম্পর্কে আমি পূর্ণ অবগত ছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

প্রকৃত ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

প্রকৃত ঘটনা এটাই, তার নিকট যা কিছু ছিল আমি সম্যক অবগত আছি।


৯২


ثُمَّ أَتْبَعَ سَبَبًا


ছু ম্মা আতবা‘আ ছাবাবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর সে আরেক পথ ধরে চলল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আবার তিনি এক পথ ধরলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আবার সে এক পথ ধরল,


৯৩


حَتَّىٰ إِذَا بَلَغَ بَيْنَ السَّدَّيْنِ وَجَدَ مِن دُونِهِمَا قَوْمًا لَّا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ قَوْلًا


হাত্তাইযা-বালাগা বাইনাছছাদ্দাইনি ওয়াজাদা মিন দূনিহিমা-কাওমাল লা-ইয়াকা-দূনা ইয়াফকাহূনা কাওলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

চলতে চলতে যখন দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল, তখন সে পাহাড়ের কাছে এমন এক জাতির সাক্ষাত পেল, যারা তার কোন কথা যেন বুঝতে পারছিল না। ৫২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অবশেষে যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে এক জাতিকে পেলেন, যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

চলতে চলতে সে যখন দুই পর্বত-প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছিল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল যারা কোন কথা বুঝার মত ছিল না।


তাফসীরঃ

৫২. এটা যুলকারনাইনের তৃতীয় সফর। কুরআন মাজীদে তাঁর এ সফরের কোন দিক বর্ণনা করা হয়নি। অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে তার এ সফর ছিল দুনিয়ার উত্তর দিকে। তিনি সে দিকে লোকালয়ের শেষ মাথায় গিয়ে পৌঁছান। সেখানকার মানুষের ভাষা সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। সম্ভবত আকার-আকৃতিও ভিন্ন ধরনের ছিল, যদ্দরুণ তারা কথা বুঝতে পারছে কি না তার কোন আভাস তাদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যে কথাবার্তা হয় তা সম্ভবত কোন দোভাষীর মাধ্যমে হয়েছিল কিংবা ইশারার মাধ্যমে।


৯৪


قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَىٰ أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا


কা-লূইয়া-যাল কারনাইনি ইন্না ইয়া’জূজা ওয়া মা’জূজা মুফছিদূনা ফিল আরদি ফাহাল নাজ‘আলুলাকা খারজান ‘আলাআন তাজ‘আলা বাইনানা-ওয়া বাইনাহুম ছাদ্দা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ এ দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায়। আমরা কি আপনাকে কিছু কর দেব, যার বিনিময়ে আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন? ৫৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘হে যুল-র্কানাইন! ইয়াজূজ ও মাজূজ তো পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে খরচ দিব যে, আপনি আমাদের ও এদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দিবেন’ ?


তাফসীরঃ

৫৩. ইয়াজুজ ও মাজুজ দু’টি অসভ্য মানবগোষ্ঠীর নাম। তারা পাহাড়ের অপর দিকে বাস করত। তারা কিছুদিন পর-পর গিরিপথ দিয়ে এ-পাশে আসত এবং লুটতরাজ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেত। তাদের কারণে এ-পাশের মানুষের দুঃখণ্ডদুর্দশার কোন সীমা ছিল না। কাজেই তারা যখন দেখল যুলকারনাইন একজন অমিত শক্তিশালী সম্রাট এবং সব রকম আসবাব-উপকরণ তার করায়ত্ত, তখন তারা তাকে অনুরোধ জানাল, যেন দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকাটি একটি প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দেন, যাতে ইয়াজুজ-মাজুজের আসার পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা আর এ-পাশে এসে উপদ্রব করতে না পারে। তারা এ কাজের জন্য কিছু অর্থ জোগাবে বলেও প্রস্তাব করল। কিন্তু হযরত যুলকারনাইন কোন রকম বিনিময় নিতে অস্বীকার করলেন। তবে তিনি তাদেরকে বললেন, তোমরা লোকবল দিয়ে আমাকে সাহায্য কর, তাহলে আমি নিজের তরফ থেকে এ প্রাচীর তৈরি করে দেব।


৯৫


قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا


কা-লা মা-মাকান্নী ফীহি রাববী খাইরুন ফাআ‘ঈনূনী বিকুওওয়াতিন আজ‘আল বাইনাকুম ওয়া বাইনাহুম রাদমা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যুলকারনাইন বলল, আল্লাহ আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেটাই (আমার জন্য) শ্রেয়। সুতরাং তোমরা (তোমাদের হাত-পায়ের) শক্তি দ্বারা আমাকে সহযোগিতা কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সমর্থ দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে এই বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তাই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও এদের মধ্যস্থলে এক মযবুত প্রাচীর গড়ে দিব।


৯৬


آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا سَاوَىٰ بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انفُخُوا ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا


আ-তূনী ঝুবারাল হাদীদি হাত্তাইযা-ছা-ওয়া-বাইনাসসাদাফাইনি কা-লানফুখূ হাত্তাইযা-জা‘আলাহূনা-রান কা-লা আ-তূনীউফরিগ ‘আলাইহি কিতরা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা আমাকে লোহার পিণ্ড এনে দাও। অবশেষে সে যখন (মাঝখানের ফাঁকা পূর্ণ করে) উভয় পাহাড়ের চূড়া পরস্পর বরাবর করে মিলিয়ে দিল, তখন বলল, এবার আগুনে হাওয়া দাও। ৫৪ যখন সেটিকে (প্রাচীর) জ্বলন্ত কয়লায় পরিণত করল, তখন বলল, তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো। আমি তা এর উপর ঢেলে দেব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমরা আমার নিকট লৌহপিণ্ডসমূহ আনয়ন কর’, এরপর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বলল, ‘তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক।’ যখন তা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত হল, তখন সে বলল, ‘তোমরা গলিত তাম্র আনয়ন কর, আমি তা ঢেলে দেই এটার ওপর।’


তাফসীরঃ

৫৪. যুলকারনাইন প্রথমে লোহার বড় বড় পিণ্ড ফেলে দুই পাহাড়ের মাঝখানটা ভরে ফেললেন। লোহার সে স্তূপ পাহাড় সমান উঁচু হয়ে গেল। তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। যখন তা পুরোপুরি উত্তপ্ত হল, তার উপর গলিত তামা ঢেলে দিলেন, যাতে তা লৌহপিণ্ডের ফাঁকে-ফাঁকে গিয়ে সব ফাঁক-ফোকর ভরাট করে ফেলে। এভাবে সেটি এক মজবুত প্রাচীর হয়ে গেল।


৯৭


فَمَا اسْطَاعُوا أَن يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا


ফামাছতা‘ঊআইঁ ইয়াজহারূহু ওয়া মাছতাতা-‘ঊ লাহূনাকবা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(এভাবে প্রাচীরটি নির্মিত হয়ে গেল) ফলে ইয়াজুজ মাজুজ না তাতে চড়তে সক্ষম হচ্ছিল আর না তাতে ফোকর বানাতে পারছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এর পর তারা তা অতিক্রম করতে পারল না এবং তা ভেদও করতে পারল না।


৯৮


قَالَ هَـٰذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي ۖ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاءَ ۖ وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا


কা-লা হা-যা-রাহমাতুম মির রাববী ফাইযা-জাআ ওয়া‘দুরাববী জা‘আলাহূ দাক্কাআ ওয়া কা-না ওয়া‘দুরাববী হাক্কা-।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যুলকারনাইন বলল, এটা আমার রবের রহমত (যে, তিনি এ রকম একটা প্রাচীর বানানোর তাওফীক দিয়েছেন)। অতঃপর আমার রবের প্রতিশ্রুত সময় যখন আসবে, তখন তিনি এ প্রাচীরটি ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবেন। ৫৫ আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত সত্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবেন এবং আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য।’


তাফসীরঃ

৫৫. মহাপ্রাচীর নির্মাণের এত বড় কাজ যখন সমাপ্তিতে পৌঁছল, তখন যুলকারনাইন দু’টি পরম সত্যের প্রতি তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। (এক) তিনি বললেন, এ-কাজ আমার বাহুবলের মাহাত্ম্য নয়। বরং এটা আল্লাহ তাআলারই রহমত। তিনি আমাকে তাওফীক দিয়েছেন বলেই আমার দ্বারা এটা করা সম্ভব হয়েছে। (দুই) দ্বিতীয়ত তিনি স্পষ্ট করে দেন, যদিও প্রাচীরটি এখন অত্যন্ত মজবুতভাবে তৈরি হয়েছে, যা শত্রুর পক্ষে ভেদ করা সম্ভব নয়, কিন্তু আল্লাহ তাআলার পক্ষে এটা ভেঙ্গে ফেলা কিছু কঠিন কাজ নয়। আল্লাহ তাআলা যত দিন চাইবেন এটা প্রতিষ্ঠিত থাকবে তারপর তিনি এর বিনাশের জন্য যেই সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছেন, সেই সময় যখন আসবে, তখন এটা বিধ্বস্ত হয়ে মাটির সাথে মিশে যাবে। যুলকারনাইনের এ বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করলে এ প্রাচীর কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকবে বলে নিশ্চিত হওয়া যায় না। কুরআন মাজীদের ভাষা দ্ব্যর্থহীনভাবে তার প্রতি নির্দেশ করে না। বরং কিয়ামতের আগেও এটা বিধ্বস্ত হওয়ার অবকাশ আছে। কোন কোন গবেষক মনে করেন, প্রাচীরটি নির্মিত হয়েছিল রাশিয়ার দাগিস্তানের অন্তর্গত ‘দরবন্দ’ নামক স্থানে। এখন সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত। [অবশ্য তার যে ধ্বংসাবশেষ এখনও সেখানে বিদ্যমান আছে, গবেষকগণ অনুসন্ধান করে দেখেছেন কুরআন মাজীদে বর্ণিত নির্মাণ পদ্ধতির সাথে তার বেশ মিল রয়েছে]। ইয়াজুজ-মাজুজের বিভিন্ন বাহিনী বিভিন্ন সময় সভ্য এলাকায় নেমে এসে মহা ত্রাস সৃষ্টি করেছে এবং পর্যায়ক্রমে সভ্য মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে তারা নিজেরাও সভ্য হয়ে গেছে। তাদের সর্বশেষ ঢল নামবে কিয়ামতের কিছু আগে (দ্র. সূরা আম্বিয়া ২১ : ৯৬)। এ বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণালব্ধ ও তথ্যবহুল আলোচনা হযরত মাওলানা হিফজুর রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি রচিত ‘কাসাসুল কুরআন’ ও হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর মাআরিফুল কুরআনে দেখা যেতে পারে। যুলকারনাইন সবশেষে বলেছেন, ‘আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য’। এর দ্বারা কিয়ামত সংঘটিত করার প্রতিশ্রুতি বোঝানো হয়েছে। তিনি বলতে চাচ্ছেন যে, আমি যে এই প্রাচীর নির্মাণ করলাম এটা কবে ধ্বংস হবে এবং তার জন্য আল্লাহ তাআলা কোন সময়কে নির্দিষ্ট করেছেন, তা তো এখনই কেউ বলতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ তাআলার একটা প্রতিশ্রুতি আমরা সুস্পষ্টভাবেই জানি। সকলেরই জানা আছে একদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। যখন তা ঘটবে তখন যত মজবুত জিনিসই হোক না কেন তা ভেঙ্গে-চুরে চুরমার হয়ে যাবে। যুলকারনাইন এস্থলে যে কিয়ামত বিষয়ের অবতারণা করেছেন, সেই প্রসঙ্গ ধরে আল্লাহ তাআলা সামনে কিয়ামতের কিছু অবস্থা তুলে ধরেছেন।


৯৯


۞ وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ ۖ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا


ওয়া তারাকনা- বা‘দাহুম ইয়াওমাইযিইঁ ইয়ামূজুফী বা‘দিওঁ ওয়া নুফিখা ফিসসূরি ফাজামা‘না-হুম জাম‘আ-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে দিন আমি তাদের অবস্থা এমন করে দেব যে, তারা তরঙ্গের মত একে অন্যের উপর আছড়ে পড়বে ৫৬ এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকে একত্র করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন আমি এদেরকে ছেড়ে দিব এই অবস্থায় যে, একদল আর একদলের ওপর তরঙ্গের ন্যায় পতিত হবে এবং শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে। এরপর আমি এদের সকলকেই একত্র করব।


তাফসীরঃ

৫৬. এর দ্বারা কিয়ামতের প্রাক্কালে ইয়াজুজ ও মাজুজের যে ঢল নেমে আসবে তাও বোঝানো হতে পারে আর সে হিসেবে এর ব্যাখ্যা হবে, কিয়ামতের কাছাকাছি সময়ে তারা যখন বের হয়ে আসবে, তখন তাদের অবস্থা হবে বিশৃঙ্খল ভেড়ার পালের মত এবং তারা ঢেউয়ের মত একে অন্যের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে অথবা এটাও সম্ভব যে, এর দ্বারা কিয়ামতের সময় মানুষের যে ভীত-বিহ্বল অবস্থা হবে সেটা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, কিয়ামতের বিভীষিকা দেখে মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোন সীমা থাকবে না। তারা দিশেহারা হয়ে একে অন্যের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়বে।


১০০


وَعَرَضْنَا جَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لِّلْكَافِرِينَ عَرْضًا


ওয়া ‘আরাদনা-জাহান্নামা ইয়াওমাইযিল লিলকা-ফিরীনা ‘আরদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে দিন আমি জাহান্নামকে কাফেরদের সামনে সরাসরিভাবে উপস্থিত করব


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেদিন আমি কাফেরদের কাছে জাহান্নামকে প্রত্যক্ষ ভাবে উপস্থিত করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং সেই দিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব কাফিরদের নিকট,


১০১


الَّذِينَ كَانَتْ أَعْيُنُهُمْ فِي غِطَاءٍ عَن ذِكْرِي وَكَانُوا لَا يَسْتَطِيعُونَ سَمْعًا


আল্লাযীনা কা-নাত আ‘ইউনুহুম ফী গিতাইন ‘আন যিকরী ওয়া কা-নূলা-ইয়াছতাতী‘ঊনা ছাম‘আ-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(দুনিয়ায়) যাদের চোখে আমার নিদর্শন সম্বন্ধে পর্দা পড়ে রয়েছিল এবং যারা শুনতেও সক্ষম ছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদের চক্ষুসমূহের উপর পর্দা ছিল আমার স্মরণ থেকে এবং যারা শুনতেও সক্ষম ছিল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাদের চোখ ছিল অন্ধ আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অক্ষম।


১০২


أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِن دُونِي أَوْلِيَاءَ ۚ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا


আফাহাছিবাল্লাযীনা কাফারূআইঁ ইয়াত্তাখিযূ‘ইবা-দী মিন দূ নীআওলিয়াআ ইন্না আ‘তাদনা-জাহান্নামা লিলকা-ফিরীনা নুঝুলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা কি এরপরও মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমারই বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? নিশ্চয়ই আমি এরূপ কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করেছে তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে ? নিশ্চয়ই আমি কাফিরদের আপ্যায়নের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম।


১০৩


قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُم بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا


কুল হাল নুনাব্বিউকুম বিলআখছারীনা আ‘মা-লা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব, কর্মে কারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের ?’


১০৪


الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا


আল্লাযীনা দাল্লা ছা‘ইউহুম ফিল হায়া-তিদদুনইয়া- ওয়াহুম ইয়াহছাবূনা আন্নাহুম ইউহছিনূনা সুন‘আ-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা সেই সব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সমস্ত দৌড়-ঝাঁপ সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, অথচ তারা মনে করে তারা খুবই ভালো কাজ করছে। ৫৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে,


তাফসীরঃ

৫৭. এ আয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি তুলে ধরেছে। বলা হচ্ছে যে, কোন কাজ গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কেবল সহীহ নিয়তই যথেষ্ট নয়। বরং পথ সঠিক হওয়াও জরুরি। বহু কাফেরও অনেক কাজ খাঁটি নিয়তে করে থাকে। কিন্তু সে কাজ যেহেতু তাদের মনগড়া, আল্লাহ তাআলা বা তাঁর প্রেরিত রাসূলগণ তা শিক্ষা দেননি, তাই নিয়ত সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সমস্ত শ্রম বিফল হয়ে যায়।


১০৫


أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا


উলাইকাল্লাযীনা কাফারূ বিআ-য়া-তি রাব্বিহিম ওয়ালিকাইহী ফাহাবিতাত আ‘মালুহুম ফালা-নুকীমুলাহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ওয়াঝনা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরাই সেই সব লোক, যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহ ও তাঁর সামনে উপস্থিতির বিষয়টিকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের যাবতীয় কর্ম নিষ্ফল হয়ে গেছে। আমি কিয়ামতের দিন তাদের কোন ওজন গণ্য করব না। ৫৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এরাই তারা, যারা অস্বীকার করে এদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সঙ্গে এদের সাক্ষাৎের বিষয়। ফলে এদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামতের দিন এদের জন্যে ওজনের কোন ব্যবস্থা রাখব না।


তাফসীরঃ

৫৮. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার কাছে তাদের কোন মূল্য ও ওযন থাকবে না। এক হাদীসে আছে, ‘অত্যধিক পানাহারকারী লম্বা-চওড়া ব্যক্তিকে (কিয়ামতের দিন) হাজির করা হবে, কিন্তু তার ওযন একটা মশার ডানার সমানও হবে না’। -অনুবাদক


১০৬


ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا


যা-লিকা জাঝাউহুম জাহান্নামুবিমা-কাফারূওয়াত্তাখাযূআ-য়া-তী ওয়ারুছুলী হুঝুওয়া-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

জাহান্নামরূপে এটাই তাদের শাস্তি। কেননা তারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহ ও আমার রাসূলগণকে পরিহাসের বস্তু বানিয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘জাহান্নাম-এটাই এদের প্রতিফল, যেহেতু এরা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রুপের বিষয়স্বরূপ।’


১০৭


إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ كَانَتْ لَهُمْ جَنَّاتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا


ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি কা-নাত লাহুম জান্না-তুল ফিরদাওছি নুঝুলা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অপর দিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তাদের আপ্যায়নের জন্য অবশ্যই ফিরদাউসের উদ্যান রয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্যে আছে জান্নাতুল ফেরদাউস।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্যে আছে ফিরদাওসের উদ্যান,


১০৮


خَالِدِينَ فِيهَا لَا يَبْغُونَ عَنْهَا حِوَلًا


খা-লিদীনা ফীহা-লা-ইয়াবগূনা ‘আনহা-হিওয়ালা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাতে তারা সর্বদা থাকবে (এবং) তারা সেখান থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে স্থান পরিবর্তন করতে চাইবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেখানে এরা স্থায়ী হবে, তা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না।


১০৯


قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ مَدَدًا


কুল লাও কা-নাল বাহরু মিদা-দাল লিকালিমা-তি রাববী লানাফিদাল বাহরু কাবলা আন তানফাদা কালিমা-তুরাববী ওয়ালাও জি’না-বিমিছলিহী মাদাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, আমার প্রতিপালকের কথা লেখার জন্য যদি সাগর কালি হয়ে যায়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাগর নিঃশেষ হয়ে যাবে, তাতে সাহায্যরূপে অনুরূপ আরও সাগর নিয়ে আসি না কেন! ৫৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমার পালনকর্তার কথা, লেখার জন্যে যদি সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবে আমার পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সাহায্যার্থে অনুরূপ আরেকটি সমুদ্র এনে দিলেও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্যে সমুদ্র যদি কালি হয়, তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে-আমরা এটার সাহায্যার্থে এটার অনুরূপ আরও সমুদ্র আনলেও।’


তাফসীরঃ

৫৯. ‘আল্লাহ তাআলার কথা’ দ্বারা তার সিফাত ও গুণাবলী বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার কুদরত, তাঁর হিকমত ও গুণাবলী এত বিপুল যে, যদি তা লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় আর সেজন্য সবগুলো সাগরের পানি কালি হয়ে যায়, তবে সবগুলো সাগর নিঃশেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আল্লাহ তাআলার গুণাবলী ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা শেষ হবে না। অনিঃশেষ আমাদের প্রতিপালকের মহিমা!


১১০


قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا


কুল ইন্নামাআনা-বাশারুম মিছলুকুম ইউহাইলাইইয়া আন্নামাইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়া-হিদুন ফামান কা-না ইয়ারজূলিকাআ রাব্বিহী ফালইয়া‘মাল ‘আমালান সালিহাওঁ ওয়ালা-ইউশরিক বি‘ইবা-দাতি রাব্বিহীআহাদা-।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই। (তবে) আমার প্রতি এই ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ কেবল একই মাবুদ। ৬০ সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। ৬১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ্। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ‘ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে।’


তাফসীরঃ

৬০. অর্থাৎ তাঁর যেহেতু কোন শরীক নেই, তাই ইবাদত করতে হবে ইখলাসের সাথে। তাতে স্থূল তো নয়ই, সূক্ষ্ম শিরকও পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ নিয়ত থাকবে কেবল আল্লাহ তাআলাকে খুশি করা। রিয়া বা মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করলে তাও এক ধরনের শিরক, তাতে ইবাদতের ভেতর সূক্ষ্মভাবে মানুষকে শরীক করা হয়। আর যে ইবাদতে অন্যকে শরীক করা হয়, তা ইবাদতকারীর মুখের উপর ছুঁড়ে মারা হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বপ্রকার শিরক থেকে হেফাজত করুন (আমীন)। -অনুবাদক


৬১. অর্থাৎ আমি একজন মানুষ, মাবুদ নই যে, সমস্ত জ্ঞান আপনা-আপনিই আমার আয়ত্তাধীন থাকবে। হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা আমাকে যেহেতু নবী বানিয়েছেন তাই ওহী মারফত তিনি মানুষের হিদায়াতের জন্য যা কিছু জ্ঞান দরকার তা আমাকে সরবরাহ করেন। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিষয় হল তাওহীদ অর্থাৎ তাঁর একত্বের জ্ঞান। আমাকে আদেশ করা হয়েছে যেন মানুষকে জানিয়ে দেই, ‘তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। -অনুবাদক

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

Post a Comment

0 Comments