সূরা ক্বাসাস ডাউনলোড, নামাজের শেষে সুরা ক্বাসাস পাঠের গুরুত্ব, ৫ ওয়াক্ত সালাতে ক্বাসাস পড়ার গুরুত্ব,৫ ওয়াক্ত নামাজে ক্বাসাস আমল ও ফজিলত, ৫০৫ বার সূরা ক্বাসাস, ৯৯৯ বার সূরা ক্বাসাস,

 

সূরা ক্বাসাস ডাউনলোড, নামাজের শেষে সুরা ক্বাসাস পাঠের গুরুত্ব, ৫ ওয়াক্ত সালাতে ক্বাসাস পড়ার গুরুত্ব,৫ ওয়াক্ত নামাজে ক্বাসাস আমল ও ফজিলত, ৫০৫ বার সূরা ক্বাসাস, ৯৯৯ বার সূরা ক্বাসাস,

২৮ . আল ক্বাসাস - ( القصص ) | কাহিনী

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৮৮


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


طٰسٓمّٓ


তা-ছিম মীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোয়া-সীন-মীম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ত্বা-সীন-মীম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা-সীন-মীম;



تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡکِتٰبِ الۡمُبِیۡنِ


তিলকা আ-য়া-তুল কিতা-বিল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এগুলো (সত্যকে) পরিস্ফুটকারী কিতাবের আয়াত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই আয়াতগুলি সুস্পষ্ট কিতাবের।



نَتۡلُوۡا عَلَیۡکَ مِنۡ نَّبَاِ مُوۡسٰی وَفِرۡعَوۡنَ بِالۡحَقِّ لِقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ


নাতলূ‘আলাইকা মিন নাবাই মূছা-ওয়াফির‘আওনা বিলহাক্কিলিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যে সকল লোক ঈমান আনে তাদের কল্যাণার্থে মূসা ও ফির‘আওনের কিছু বৃত্তান্ত তোমাকে যথাযথভাবে পড়ে শোনাচ্ছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনার কাছে মূসা ও ফেরাউনের বৃত্তান্ত সত্য সহকারে বর্ণনা করছি ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার নিকট মূসা ও ফির‘আওনের কিছু বৃত্তান্ত যথাযথভাবে বিবৃত করছি, মু’মিন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে।



اِنَّ فِرۡعَوۡنَ عَلَا فِی الۡاَرۡضِ وَجَعَلَ اَہۡلَہَا شِیَعًا یَّسۡتَضۡعِفُ طَآئِفَۃً مِّنۡہُمۡ یُذَبِّحُ اَبۡنَآءَہُمۡ وَیَسۡتَحۡیٖ نِسَآءَہُمۡ ؕ اِنَّہٗ کَانَ مِنَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ


ইন্না ফির‘আওনা ‘আলা-ফিল আরদিওয়াজা‘আলা আহলাহা-শিইয়া‘আইঁ ইয়াছতাদ‘ইফু তাইফাতাম মিনহুম ইউযাব্বিহুআবনাআহুম ওয়াইয়াছতাহয়ী নিছাআহুম ইন্নাহূ কা-না মিনাল মুফছিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত ফির‘আওন ভূমিতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল এবং সে তার অধিবাসীদেরকে পৃথক-পৃথক দলে বিভক্ত করেছিল। তাদের একটি শ্রেণীকে সে অত্যন্ত দুর্বল করে রাখছিল, যাদের পুত্রদেরকে সে যবাহ ১ করত ও তাদের নারীদেরকে জীবিত ছেড়ে দিত। প্রকৃতপক্ষে সে ছিল ফাসাদ বিস্তারকারীদের একজন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফির‘আওন দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সেখানকার অধিবাসীবৃন্দকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে এদের একটি শ্রেণীকে সে হীনবল করেছিল; এদের পুত্রগণকে সে হত্যা করত এবং নারীগণকে জীবিত থাকতে দিত। সে তো ছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।


তাফসীরঃ

১. পূর্বে সূরা তোয়াহা (২০ : ৩৬)-এর টীকায় বলা হয়েছে, কোন এক জ্যোতিষী ফির‘আওনকে বলেছিল, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির হাতে আপনার রাজত্বের অবসান হবে। তাই সে ফরমান জারি করেছিল, এখন থেকে বনী ইসরাঈলে যত শিশু জন্ম নেবে তাদেরকে যেন হত্যা করা হয়। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন জন্মগ্রহণ করলেন তাঁর মা এই ভেবে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন যে, ফির‘আওনের গুপ্তচরেরা তো তাকেও হত্যা করে ফেলবে, তাদের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করার উপায় কী? এহেন পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা তাঁর অন্তরে ইলহাম করলেন যে, শিশুটিকে একটি বাক্সের ভেতর রেখে নীল নদীতে ফেলে দাও। তিনি তাই করলেন। বাক্সটি ভাসতে ভাসতে ফির‘আওনের রাজপ্রাসাদের কাছে পৌঁছে গেল। রাজকর্মচারীগণ কৌতুহলবশে সেটি তুলে আনল। খুলে দেখল তার ভেতর একটি মানবশিশু। তারা শীঘ্র তাকে ফির‘আওনের কাছে নিয়ে গেল। তার পত্নী হযরত আছিয়া (আ.) শিশুটির মায়ায় পড়ে গেলেন। তিনি তাকে পুত্র হিসেবে লালন-পালন করার জন্য ফির‘আওনকে উদ্বুদ্ধ করলেন। সামনে ৬-৯ নং আয়াতে এ ঘটনাই বর্ণিত হয়েছে।



وَنُرِیۡدُ اَنۡ نَّمُنَّ عَلَی الَّذِیۡنَ اسۡتُضۡعِفُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَنَجۡعَلَہُمۡ اَئِمَّۃً وَّنَجۡعَلَہُمُ الۡوٰرِثِیۡنَ ۙ


ওয়ানুরীদুআন্নামুন্না ‘আলাল্লাযীনাছতুদ‘ইফূফিল আরদি ওয়া নাজ‘আলাহুম আয়িম্মাতাওঁ ওয়া নাজ‘আলাহুমুল ওয়া-রিছীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আমি চাচ্ছিলাম সেদেশে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকেই (সে দেশের ভূমি ও সম্পদের) উত্তরাধিকারী বানাতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি ইচ্ছা করলাম, সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে ও উত্তরাধিকারী করতে;



وَنُمَکِّنَ لَہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَنُرِیَ فِرۡعَوۡنَ وَہَامٰنَ وَجُنُوۡدَہُمَا مِنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَحۡذَرُوۡنَ


ওয়া নুমাক্কিনা লাহুম ফিল আরদি ওয়া নুরিয়া ফির‘আওনা ওয়া হা-মা-না ওয়া জুনূদাহুমামিনহুম মা-কা-নূইয়াহযারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সে দেশে তাদেরকে ক্ষমতাসীন করতে আর ফির‘আওন, হামান ও তাদের সৈন্যদেরকে সেই জিনিস দেখিয়ে দিতে, যার আশঙ্কা তারা তাদের (অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের) দিক থেকে করছিল। ২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তাদেরকে দেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে, আর ফির‘আওন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা এদের নিকট তারা আশংকা করত।


তাফসীরঃ

২. বনী ইসরাঈলের কোন এক শিশু বড় হয়ে তার পতন ঘটাবে এই ভবিষ্যদ্বাণী শুনে ফির‘আওন ভীষণভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। সে তা থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি তাকে দেখাতে চাচ্ছিলাম কিভাবে তার সকল ব্যবস্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং যার জন্য সে শঙ্কিত ছিল তা সত্য হয়ে সামনে দেখা দেয়।



وَاَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوۡسٰۤی اَنۡ اَرۡضِعِیۡہِ ۚ فَاِذَا خِفۡتِ عَلَیۡہِ فَاَلۡقِیۡہِ فِی الۡیَمِّ وَلَا تَخَافِیۡ وَلَا تَحۡزَنِیۡ ۚ اِنَّا رَآدُّوۡہُ اِلَیۡکِ وَجَاعِلُوۡہُ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ


ওয়া আওহাইনাইলাউম্মিা মূছাআন আরদি‘ঈহি ফাইযা-খিফতি ‘আলাইহি ফাআলকীহি ফিল ইয়াম্মি ওয়ালা-তাখা-ফী ওয়ালা-তাহঝানী ইন্না-রাদ্দূহু ইলাইকি ওয়া জা-‘ইলূহু মিনাল মুরছালীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মূসার মায়ের প্রতি ইলহাম করলাম, তুমি তাকে দুধ পান করাতে থাক। যখন তার ব্যাপারে কোন আশঙ্কা বোধ করবে তখন তাকে নদীতে ফেলে দিও। আর ভয় পেও না ও দুঃখ করো না। বিশ্বাস রেখ, আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলগণের মধ্য হতে একজন রাসূল বানিয়ে দেব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাক। অতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা-জননীর অন্তরে আমি ইঙ্গিতে নির্দেশ করলাম, ‘শিশুটিকে স্তন্য দান করতে থাক। যখন তুমি তার সম্পর্কে কোন আশংকা করবে তখন এটাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় কর না, দুঃখও কর না। আমি অবশ্যই এটাকে তোমার নিকট ফিরিয়ে দিব এবং এটাকে রাসূলদের একজন করব।’



فَالۡتَقَطَہٗۤ اٰلُ فِرۡعَوۡنَ لِیَکُوۡنَ لَہُمۡ عَدُوًّا وَّحَزَنًا ؕ اِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَہَامٰنَ وَجُنُوۡدَہُمَا کَانُوۡا خٰطِئِیۡنَ


ফালতাকাতাহূ আ-লুফির‘আওনা লিয়াকূনা লাহুম ‘আদুওওয়াওঁ ওয়া হাঝানান ইন্না ফির‘আওনা ওয়া হা-মা-না ওয়া জুনূদাহুমা-কা-নূখা-তিঈন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর ফির‘আওনের লোকজন তাকে (অর্থাৎ শিশু মূসা আলাইহিস সালামকে) তুলে নিল। এর পরিণাম তো ছিল এই যে, সে হবে তাদের শত্রু ও তাদের দুঃখের কারণ। নিশ্চয়ই ফির‘আওন, হামান ও তাদের সৈন্যরা বড়ই ভুলের উপর ছিল। ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যান। নিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর ফির‘আওনের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিল। এটার পরিণাম তো এই ছিল যে, সে এদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে। অবশ্যই ফির‘আওন, হামান ও এদের বাহিনী ছিল অপরাধী।


তাফসীরঃ

৩. ‘তারা ভুলের উপর ছিল’ এর দুই ব্যাখ্যা হতে পারে। (ক) তারা ভুল পথের অনুসারী ছিল। তারা ছিল কাফের ও গুনাহগার। (খ) অথবা এর অর্থ তারা শিশুটিকে তুলে ভুল করেছিল। কেননা তারা ঈমান না আনার ফলে সেই শিশুই শেষ পর্যন্ত তাদের পতন ও ধ্বংসের কারণ হয়েছিল।



وَقَالَتِ امۡرَاَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَیۡنٍ لِّیۡ وَلَکَ ؕ لَا تَقۡتُلُوۡہُ ٭ۖ عَسٰۤی اَنۡ یَّنۡفَعَنَاۤ اَوۡ نَتَّخِذَہٗ وَلَدًا وَّہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ


ওয়া কা-লাতিমরাআতুফির‘আওনা কুররাতু‘আইনিললী ওয়ালাকা লা-তাকতুলূহু ‘আছা আইঁ ইয়ানফা‘আনাআও নাত্তাখিযাহূওয়ালাদাওঁ ওয়া হুম লা-ইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফেরাউনের স্ত্রী (ফির‘আওনকে) বলল, এ শিশু আমার ও তোমার পক্ষে নয়নপ্রীতিকর। একে হত্যা করো না হয়ত সে আমাদের উপকারে আসবে অথবা আমরা একে পুত্রও বানাতে পারি। আর (এ সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে) তারা পরিণাম বুঝতে পারছিল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফির‘আওনের স্ত্রী বলল, ‘এই শিশু আমার ও তোমার নয়ন-প্রীতিকর। এটাকে হত্যা কর না, সে আমাদের উপকারে আসতে পারে, আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও গ্রহণ করতে পারি।’ প্রকৃতপক্ষে এরা এটার পরিণাম বুঝতে পারে নাই।


১০


وَاَصۡبَحَ فُؤَادُ اُمِّ مُوۡسٰی فٰرِغًا ؕ اِنۡ کَادَتۡ لَتُبۡدِیۡ بِہٖ لَوۡلَاۤ اَنۡ رَّبَطۡنَا عَلٰی قَلۡبِہَا لِتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ


ওয়াআসবাহা ফুআ-দুউম্মি মূছা-ফা-রিগান ইন কা-দাত লাতুবদী বিহী লাওলাআর রাবাতনা-‘আলা-কালবিহা-লিতাকূনা মিনাল মু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এদিকে মূসার মায়ের মন ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল। সে তো রহস্য ফাঁস করেই দিচ্ছিল যদি না আমি তার অন্তরকে সংযত রাখতাম (আমার ওয়াদার প্রতি) দৃঢ় বিশ্বাসী থাকার জন্য। ৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সকালে মূসা জননীর অন্তর অস্থির হয়ে পড়ল। যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মূসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন। দৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্ববাসীগণের মধ্যে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা-জননীর হৃদয় অস্থির হয়ে পড়েছিল। যাতে সে আস্থাশীল হয় তার জন্যে আমি তার হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিলে সে তার পরিচয় তো প্রকাশ করেই দিত।


তাফসীরঃ

৪. অর্থাৎ, শিশু মূসার মা যখন জানতে পারলেন তাঁর কলিজার টুকরা শত্রুরই হাতে গিয়ে পড়েছে তখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কি কিয়ামত তার উপর দিয়ে যাচ্ছিল তা তার মতো কোন ভুক্তভোগী মায়ের পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব। তখন হিতাহিত-জ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি প্রায় বলেই ফেলছিলেন যে, ‘এটি আমার বাচ্চা! কিংবা হায় ‘আমার যাদুধন’ বলে চীৎকার দিয়েই ফেলছিলেন যদি না আল্লাহ তাআলা তাকে আটকে রাখতেন। আল্লাহ তাআলার তো নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার ছিল। তিনি শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার ও তাকে নবী বানানোর ওয়াদাও করেছিলেন। সে ওয়াদায় যাতে মায়ের ঈমান পাকাপোক্ত থাকে তাই তিনি তার অন্তরে সবর ও সংযম ঢেলে দিচ্ছিলেন, যদ্দরুণ রহস্য ফাঁস করতে গিয়েও নিজেকে সামাল দিয়ে ফেলেন। -অনুবাদক


১১


وَقَالَتۡ لِاُخۡتِہٖ قُصِّیۡہِ ۫  فَبَصُرَتۡ بِہٖ عَنۡ جُنُبٍ وَّہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ ۙ


ওয়া কা-লাত লিউখতিহী কুসসীহি ফাবাসুরাত বিহী ‘আন জুনুবিওঁ ওয়াহুম লাইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে মূসার বোনকে বলল, শিশুটির একটু খোঁজ নাও। সে তাকে দূর থেকে এমনভাবে দেখছিল যে, তারা টের পাচ্ছিল না।

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি মূসার ভগিণীকে বললেন, তার পেছন পেছন যাও। সে তাদের অজ্ঞাতসারে অপরিচিতা হয়ে তাকে দেখে যেতে লাগল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে মূসার ভগ্নিকে বলল, ‘এটার পিছনে পিছনে যাও।’ সে এদের অজ্ঞাতসারে দূর হতে তাকে দেখতেছিল।


১২


وَحَرَّمۡنَا عَلَیۡہِ الۡمَرَاضِعَ مِنۡ قَبۡلُ فَقَالَتۡ ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰۤی اَہۡلِ بَیۡتٍ یَّکۡفُلُوۡنَہٗ لَکُمۡ وَہُمۡ لَہٗ نٰصِحُوۡنَ


ওয়া হাররামনা- ‘আলাইহিল মারা-দি‘আ মিন কাবলুফাকা-লাত হাল আদুললকুম ‘আলাআহলি বাইতিইঁ ইয়াকফুলূনাহূলাকুম ওয়াহুম লাহূনা-সিহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি পূর্ব থেকেই ধাত্রীদুগ্ধ গ্রহণে তার প্রতি নিরোধ আরোপ করে দিয়েছিলাম। শেষে মূসার বোন বলল, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের সন্ধান দেব, যারা তোমাদের পক্ষ হতে এ শিশুর লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার কল্যাণকামী? ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীদেরকে মূসা থেকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগিনী বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পূর্ব হতেই আমি ধাত্রী-স্তন্যপানে তাকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগ্নি বলল, ‘তোমাদেরকে কি আমি এমন এক পরিবারের সন্ধান দিব যারা তোমাদের হয়ে এটাকে লালন-পালন করবে এবং এটার মঙ্গলকামী হবে ?’


তাফসীরঃ

৫. ফির‘আওনের স্ত্রী শিশুটিকে লালন-পালন করার সিদ্ধান্ত নিলে তাকে দুধ পান করানোর জন্য একজন ধাত্রীর দরকার হল, সুতরাং ধাত্রী খোঁজা শুরু হল। কিন্তু হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কোন ধাত্রীর দুধই মুখে নিচ্ছিলেন না। হযরত আছিয়া (আ.) একজন উপযুক্ত ধাত্রী খুঁজে আনার জন্য তাঁর দাসীদেরকে চারদিকে পাঠিয়ে দিলেন। ওদিকে হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে নদীতে ফেলে দেওয়ার পর তাঁর মা অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বোনকে পাঠিয়ে দিলেন। বোন খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় এসে দেখে রাণীর দাসীগণ বড় পেরেশান। তারা উপযুক্ত ধাত্রী খুঁজে পাচ্ছে না। সে এটাকে এক অপ্রত্যাশিত সুযোগ মনে করল। প্রস্তাব দিল এ দায়িত্ব তার মাকে দেওয়া যেতে পারে। তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকে নিয়েও আসল। তিনি যখন শিশুটিকে বুকে নিয়ে দুধ খাওয়াতে শুরু করলেন, শিশু মহানন্দে খেতে লাগল। এভাবে আল্লাহ তাআলার ওয়াদা মত শিশু তার মায়ের কোলে ফিরে আসল।


১৩


فَرَدَدۡنٰہُ اِلٰۤی اُمِّہٖ کَیۡ تَقَرَّ عَیۡنُہَا وَلَا تَحۡزَنَ وَلِتَعۡلَمَ اَنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّلٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ٪


ফারাদাদনা-হুইলাউম্মিহী কাই তাকাররা ‘আইনুহা- ওয়ালা-তাহঝানা, ওয়ালিতা‘লামা আন্না ওয়া‘দাল্লা-হি হাক্কুওঁ ওয়ালা-কিন্না আকছারাহুম লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এভাবে আমি মূসাকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে চিন্তিত না থাকে এবং যাতে সে ভালোভাবে জানতে পারে আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। ৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার জননীর নিকট যাতে তার চোখ জুড়ায়, সে দুঃখ না করে এবং বুঝতে পারে যে, আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি সত্য ; কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এটা জানে না।


তাফসীরঃ

৬. অর্থাৎ, আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়িত হয়েই থাকে, কিন্তু তার আগে পরীক্ষাস্বরূপ নানা চড়াই-উৎড়াই দেখা দিয়ে থাকে। ঈমান মজবুত না থাকার কারণে অধিকাংশ মানুষ তাতে ধৈর্য রাখতে পারে না। আগেই হাল ছেড়ে দিয়ে ওয়াদার সত্যতায় সন্দিহান হয়ে পড়ে। -অনুবাদক


১৪


وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّہٗ وَاسۡتَوٰۤی اٰتَیۡنٰہُ حُکۡمًا وَّعِلۡمًا ؕ وَکَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ


ওয়ালাম্মা-বালাগা আশুদ্দাহূওয়াছতাওয়াআ-তাইনা-হু হুকমাওঁ ওয়া ‘ইলমাওঁ ওয়া কাযা-লিকা নাজঝিল মুহছিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন মূসা বলবত্তায় উপনীত হল ও হয়ে গেল পূর্ণ যুবা, তখন আমি তাকে দান করলাম হিকমত ও ইলম। আমি সৎকর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন মূসা পূর্ণ যৌবনে উপনীত ও পরিণত বয়স্ক হল তখন আমি তাকে হিক্মত ও জ্ঞান দান করলাম; এইভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কার প্রদান করে থাকি।


১৫


وَدَخَلَ الۡمَدِیۡنَۃَ عَلٰی حِیۡنِ غَفۡلَۃٍ مِّنۡ اَہۡلِہَا فَوَجَدَ فِیۡہَا رَجُلَیۡنِ یَقۡتَتِلٰنِ ٭۫ ہٰذَا مِنۡ شِیۡعَتِہٖ وَہٰذَا مِنۡ عَدُوِّہٖ ۚ فَاسۡتَغَاثَہُ الَّذِیۡ مِنۡ شِیۡعَتِہٖ عَلَی الَّذِیۡ مِنۡ عَدُوِّہٖ ۙ فَوَکَزَہٗ مُوۡسٰی فَقَضٰی عَلَیۡہِ ٭۫ قَالَ ہٰذَا مِنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّہٗ عَدُوٌّ مُّضِلٌّ مُّبِیۡنٌ


ওয়া দাখালাল মাদীনাতা ‘আলা-হীনি গাফলাতিম মিন আহলিহা-ফাওয়াজাদাফীহারাজুলাইনি ইয়াকতাতিলা-নি হা-যা-মিন শী‘আতিহী ওয়া হা-যা-মিন আদুওবিহী ফাছতাগা-ছাহুল্লাযী মিন শী‘আতিহী ‘আলাল্লাযী মিন ‘আদুওবিহী ফাওয়াকাঝাহূ মূছা-ফাকাদা-‘আলাইহি কা-লা হা-যা-মিন ‘আমালিশশাইতা-নি ইন্নাহূ ‘আদুওউম মুদিল্লুম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (একদা) সে নগরে এমন এক সময় প্রবেশ করল, যখন তার বাসিন্দাগণ ছিল অসতর্ক। ৭ সে দেখল সেখানে দু’জন লোক মারামারি করছে। একজন তো তার নিজ দলের এবং আরেকজন তার শত্রুপক্ষের। যে ব্যক্তি ছিল তার নিজ দলের, সে তার শত্রুপক্ষের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্যের জন্য ডাকল। তখন মূসা তাকে একটি ঘুষি মারল আর তা তার কর্ম সাবাড় করে দিল। ৮ (তারপর) সে (আক্ষেপ করে) বলল, এটা শয়তানের কাণ্ড। মূলত সে এক প্রকাশ্য শত্রু, যার কাজই ভুল পথে নিয়ে যাওয়া।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মূসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে নগরীতে প্রবেশ করল, যখন এটার অধিবাসীরা ছিল অসতর্ক। সেখানে সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখল, একজন তার নিজ দলের এবং অপর জন তার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি এর শত্রুর বিরুদ্ধে তার সাহায্য প্রার্থনা করল, তখন মূসা একে ঘুষি মারল; এভাবে সে তাকে হত্যা করে বসল। মূসা বলল, ‘এটা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান্তকারী।’


তাফসীরঃ

৭. হযরত মূসা আলাইহিস সালামের উদ্দেশ্য ছিল কেবল লোকটির অত্যাচার থেকে ইসরাঈলী ব্যক্তিকে রক্ষা করা, হত্যা করার কোন অভিপ্রায় তাঁর ছিল না। কিন্তু নিয়তি বলে কথা! এক ঘুষিতেই তার জীবন সাঙ্গ হয়ে গেল।


৮. অর্থাৎ, সময়টা ছিল দুপুর। অধিকাংশ লোক বেখবর হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল।


১৬


قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِیۡ فَاغۡفِرۡ لِیۡ فَغَفَرَ لَہٗ ؕ اِنَّہٗ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

কা-লা রাব্বি ইন্নী জালামতুনাফছী ফাগফিরলী ফাগাফারা লাহূ ইন্নাহূহুওয়াল গাফূরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলতে লাগল, হে আমার প্রতিপালক! আমি নিজ সত্তার প্রতি জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। ৯ সুতরাং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা কর।’ এরপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

৯. বাস্তবে তো হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কোন দোষ ছিল না। কেননা তিনি বুঝে শুনে তাকে হত্যা করেননি। হত্যা করার কোন ইচ্ছাই তাঁর ছিল না, কিন্তু তারপরও নরহত্যা যেহেতু একটি গুরুতর ব্যাপার এবং তিনি মনে করেছিলেন অনিচ্ছাকৃত হলেও আপাতদৃষ্টিতে তাতে তাঁর কিছুটা ভূমিকাও রয়েছে, যা আগামী দিনের একজন নবীর পক্ষে শোভনীয় নয়, তাই তিনি খুবই অনুতপ্ত হলেন এবং আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এ আয়াত দ্বারা জানা গেল, যেখানে মুসলিম ও অমুসলিম শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে সেখানে অমুসলিমকে হত্যা করা বা তার জান-মালের কোন রকম ক্ষতিসাধন করা তার জন্য জায়েয নয়।


১৭


قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ فَلَنۡ اَکُوۡنَ ظَہِیۡرًا لِّلۡمُجۡرِمِیۡنَ


কা-লা রাব্বি বিমাআন‘আমতা আলাইইয়া ফালান আকূনা জাহীরাল লিলমুজরিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তাই ভবিষ্যতে আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না। ১০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে আরও বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।’


তাফসীরঃ

১০. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এতদিন ফির‘আওনের সাথেই থাকছিলেন এবং তার সাথেই আসা-যাওয়া করছিলেন। কিন্তু এই যে ঘটনাটি ঘটল, এটি তার অন্তর্জগতে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করল। তিনি উপলব্ধি করলেন এসব কলহ-বিবাদ মূলত ফির‘আওনের দুঃশাসনেরই প্রতিফল। তার স্বৈরাচারই মিসরবাসীকে ইসরাঈলীদের উপর জুলুম-নির্যাতন করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। সুতরাং এ ঘটনার পর তিনি মনস্থির করে ফেললেন ফির‘আওন ও তার আমলাদের সঙ্গে তিনি আর কোন রকম সংশ্রব রাখবেন না। তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন, যাতে তাদের অন্যায়-অনাচারে তার কোন রকম পরোক্ষ ভূমিকাও না থাকে।


১৮


فَاَصۡبَحَ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ خَآئِفًا یَّتَرَقَّبُ فَاِذَا الَّذِی اسۡتَنۡصَرَہٗ بِالۡاَمۡسِ یَسۡتَصۡرِخُہٗ ؕ قَالَ لَہٗ مُوۡسٰۤی اِنَّکَ لَغَوِیٌّ مُّبِیۡنٌ


ফাআসবাহা ফিল মাদীনাতি খাইফাইঁ ইয়াতারাক্কাবুফাইযাল্লাযিছ তানসারাহূবিলআমছি ইয়াছতাসরিখুহু কা-লা লাহূমূছাইন্নাকা লাগাবিইউম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর সে সকাল বেলা ভীতাবস্থায় নগরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। হঠাৎ সে দেখতে পেল গতকাল যে ব্যক্তি তার কাছে সাহায্য চেয়েছিল, সেই ব্যক্তিই তাকে ফের সাহায্যের জন্য ডাকছে। মূসা তাকে বলল, বোঝা গেল তুমি এক প্রকাশ্য দুষ্ট লোক। ১১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তিনি প্রভাতে উঠলেন সে শহরে ভীত-শংকিত অবস্থায়। হঠাৎ তিনি দেখলেন, গতকল্য যে ব্যক্তি তাঁর সাহায্য চেয়েছিল, সে চিৎকার করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছে। মূসা তাকে বললেন, তুমি তো একজন প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ব্যক্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর ভীত সতর্ক অবস্থায় সেই নগরীতে তার প্রভাত হল। হঠাৎ সে শুনতে পেল পূর্বদিন যে ব্যক্তি তার সাহায্য চাহিয়াছিল, সে তার সাহায্যের জন্যে চিৎকার করতেছে। মূসা তাকে বলল, ‘তুমি তো স্পষ্টই একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি।’


তাফসীরঃ

১১. অর্থাৎ, ঝগড়া-বিবাদ করাটা মনে হচ্ছে তোমার প্রাত্যহিক কাজ। গতকাল একজনের সাথে মারামারি করছিলে আবার আজ করছ অন্য একজনের সাথে।


১৯


فَلَمَّاۤ اَنۡ اَرَادَ اَنۡ یَّبۡطِشَ بِالَّذِیۡ ہُوَ عَدُوٌّ لَّہُمَا ۙ قَالَ یٰمُوۡسٰۤی اَتُرِیۡدُ اَنۡ تَقۡتُلَنِیۡ کَمَا قَتَلۡتَ نَفۡسًۢا بِالۡاَمۡسِ ٭ۖ اِنۡ تُرِیۡدُ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ جَبَّارًا فِی الۡاَرۡضِ وَمَا تُرِیۡدُ اَنۡ تَکُوۡنَ مِنَ الۡمُصۡلِحِیۡنَ


ফালাম্মাআন আরা-দা আইঁ ইয়াবতিশা বিল্লাযী হুওয়া ‘আদুওউল্লাহুমা- কা-লা ইয়া-মূছাআতুরীদুআন তাকতুলানী কামা-কাতালতা নাফছাম বিলআমছি ইন তুরীদু ইল্লাআন তাকূনা জাব্বা-রান ফিল আরদিওয়ামা-তুরীদুআন তাকূনা মিনাল মুসলিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর যে (ফেরাউনী) ব্যক্তি তাদের উভয়ের শত্রু মূসা যখন তাকে ধরতে উদ্যত হল, তখন সে (অর্থাৎ ইসরাঈলী ব্যক্তি) বলল, হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, আমাকেও কি তুমি সেভাবে হত্যা করতে চাও? ১২ তোমার উদ্দেশ্য তো এছাড়া কিছুই নয় যে, তুমি ভূমিতে নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে চাও আর তুমি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাও না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে শায়েস্তা করতে চাইলেন, তখন সে বলল, গতকল্য তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ এবং সন্ধি স্থাপনকারী হতে চাও না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে ধরতে উদ্যত হল, তখন সে ব্যক্তি বলে উঠল, ‘হে মূসা! গতকাল তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছ, সেভাবে আমাকেও কি হত্যা করতে চাইছো ? তুমি তো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী হতে চাইছো, শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না।’


তাফসীরঃ

১২. হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মূলত মিসরীয় কিবতী লোকটিকে জুলুম থেকে নিবৃত্ত করার জন্য তার দিকে হাত বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু ইসরাঈলী ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে যেহেতু তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি এক প্রকাশ্য দুষ্ট লোক’, তাই সে মনে করল তাকে মারার জন্যই তিনি হাত বাড়িয়েছেন আর সে কারণেই সে ভয় পেয়ে বলে উঠেছিল, গতকালের লোকটির মত কি তুমি আমাকেও হত্যা করতে চাও?


২০


وَجَآءَ رَجُلٌ مِّنۡ اَقۡصَا الۡمَدِیۡنَۃِ یَسۡعٰی ۫ قَالَ یٰمُوۡسٰۤی اِنَّ الۡمَلَاَ یَاۡتَمِرُوۡنَ بِکَ لِیَقۡتُلُوۡکَ فَاخۡرُجۡ اِنِّیۡ لَکَ مِنَ النّٰصِحِیۡنَ


ওয়া জাআ রাজুলুম মিন আকসাল মাদীনাতি ইয়াছ‘আ- কা-লা ইয়া-মূছাইন্নাল মালায়া ইয়া’তামিরূনা বিকা লিইয়াকতুলূকা ফাখরুজ ইন্নী লাকা মিনান না-সিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তারপরের বৃত্তান্ত এই যে,) নগরের বিলকুল দূর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে আসল ও বলল, হে মূসা! নেতৃবর্গ তোমাকে হত্যা করার জন্য পরামর্শ করছে। সুতরাং তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। বিশ্বাস কর, আমি তোমার কল্যাণকামীদের একজন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এসময় শহরের প্রান্ত থেকে একব্যক্তি ছুটে আসল এবং বলল, হে মূসা, রাজ্যের পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরমর্শ করছে। অতএব, তুমি বের হয়ে যাও। আমি তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নগরীর দূর প্রান্ত হতে এক ব্যক্তি ছুটে এলো ও বলল, ‘হে মূসা! পারিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ করছে। সুতরাং তুমি বাইরে চলে যাও, আমি তো তোমার মঙ্গলকামী।’


২১


فَخَرَجَ مِنۡہَا خَآئِفًا یَّتَرَقَّبُ ۫  قَالَ رَبِّ نَجِّنِیۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ٪


ফাখারাজা মিনহা-খা-ইফাইঁ ইয়াতারাক্কাবু কা-লা রাব্বি নাজ্জিনী মিনাল কাওমিজ্জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং মূসা ভীতাবস্থায় পরিস্থিতির প্রতি নজর রেখে নগর থেকে বের হয়ে পড়ল। বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের থেকে রক্ষা কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে। তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ভীত সতর্ক অবস্থায় সে সেখান হতে বের হয়ে পড়ল এবং বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি জালিম সম্প্রদায় হতে আমাকে রক্ষা কর।’


২২


وَلَمَّا تَوَجَّہَ تِلۡقَآءَ مَدۡیَنَ قَالَ عَسٰی رَبِّیۡۤ اَنۡ یَّہۡدِیَنِیۡ سَوَآءَ السَّبِیۡلِ


ওয়া লাম্মা-তাওয়াজ্জাহা তিলকাআ মাদইয়ানা কা-লা ‘আছা-রাববীআই ইয়াহদিয়ানী ছাওয়াআছছাবীল।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন সে মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করল, তখন বলল, আমার পূর্ণ আশা আছে, আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথে পরিচালিত করবেন। ১৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আশা করা যায় আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন মূসা মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করল তখন বলল, ‘আশা করি আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন করবেন।’


তাফসীরঃ

১৩. মাদইয়ান ছিল হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের জনপদ, যা ফির‘আওনের শাসন ক্ষমতার বাইরে ছিল। তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সেখানে যেতে মনস্থ করলেন। কিন্তু তাঁর সম্ভবত পথ চেনা ছিল না। কেবল অনুমানের ভিত্তিতেই চলছিলেন। তাই আশাবাদ ব্যক্ত করলেন যে, আমার প্রতিপালক আমাকে সঠিক পথে চালাবেন।


২৩


وَلَمَّا وَرَدَ مَآءَ مَدۡیَنَ وَجَدَ عَلَیۡہِ اُمَّۃً مِّنَ النَّاسِ یَسۡقُوۡنَ ۬۫ وَوَجَدَ مِنۡ دُوۡنِہِمُ امۡرَاَتَیۡنِ تَذُوۡدٰنِ ۚ قَالَ مَا خَطۡبُکُمَا ؕ قَالَتَا لَا نَسۡقِیۡ حَتّٰی یُصۡدِرَ الرِّعَآءُ ٜ وَاَبُوۡنَا شَیۡخٌ کَبِیۡرٌ


ওয়া লাম্মা-ওয়ারাদা মাআ মাদইয়ানা ওয়াজাদা ‘আলাইহি উম্মাতাম মিনান্না-ছি ইয়াছকূনা ওয়া ওয়াজাদা মিন দূনিহিমুমরাআতাইনি তাযূদা-নি কা-লা মা-খাতবুকুমা- কা-লাতা-লা-নাছকী হাত্তা-ইউসদিরার রি‘আউ ওয়া আবূনা-শাইখুন কাবীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন সে মাদইয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছল, সেখানে একদল মানুষকে দেখল, যারা তাদের পশুদেরকে পানি পান করাচ্ছে। আরও দেখল তাদের পেছনে দু’জন নারী, যারা তাদের পশুগুলোকে আগলিয়ে রাখছে। মূসা তাদেরকে বলল, তোমরা কী চাও? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে ততক্ষণ পর্যন্ত পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না সমস্ত রাখাল তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে চলে যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ। ১৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রত। এবং তাদের পশ্চাতে দূ’জন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছে। তিনি বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন সে মাদইয়ানের ক‚পের নিকট পৌঁছিল, দেখল, একদল লোক তাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাচ্ছে এবং এদের পশ্চাতে দু’জন নারী তাদের পশুগুলিকে আগলাচ্ছে। মূসা বলল, ‘তোমাদের কী ব্যাপার ?’ এরা বলল, ‘আমরা আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ রাখালেরা এদের জানোয়ারগুলিকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ।’


তাফসীরঃ

১৪. অর্থাৎ, আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ হওয়ার কারণে নিজে পশুকে পানি পান করাতে আসতে পারেন না। আবার আমরা যেহেতু নারী, তাই পুরুষদের ভীড়ের মধ্যে ঢুকে পানি পান করাতে পারি না। তাই অপেক্ষা করছি কখন পুরুষ রাখালগণ চলে যাবে ও কুয়ার পাড় খালি হয়ে যাবে। তখন আমরা আমাদের পশুগুলোকে ওখানে নিয়ে পানি পান করাব। প্রকাশ থাকে যে, এই নারীদ্বয়ের পিতা ছিলেন বিখ্যাত নবী হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম। মাদইয়ানবাসীদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবী করে পাঠিয়েছিলেন। সূরা আরাফ, সূরা হুদ প্রভৃতি সূরায় তাঁর ঘটনা বিস্তারিতভাবে বিবৃত হয়েছে। এ ঘটনা দ্বারা জানা যায়, প্রয়োজনে নারীদের বাইরে গমন জায়েয। তবে পুরুষ যদি সে কাজ করে দিতে পারে তবে ভিন্ন কথা। তখন পুরুষদেরই সেটা করা উচিত। এ কারণেই হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের কন্যাদ্বয় তাদের বাইরে আসার কারণ বলেছেন যে, আমাদের পিতা অত্যন্ত বুড়ো মানুষ। তাছাড়া ঘরে অন্য কোন পুরুষও নেই। এজন্যই এ কাজে আমাদের আসতে হয়েছে। এর দ্বারা আরও জানা গেল, নারীদের সাথে কথা বলা জায়েয, বিশেষত তাদেরকে কোন সঙ্কটের সম্মুখীন দেখলে তখন তাদের সাহায্যার্থে অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং যথাসম্ভব তাদের সাহায্য করা অবশ্য কর্তব্য। তবে কোন ফেতনা তথা চরিত্রগত কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে সতর্কতা অবলম্বনও জরুরি।


২৪


فَسَقٰی لَہُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤی اِلَی الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ


ফাছাকা-লাহুমা-ছু ম্মা তাওয়াল্লাইলাজজিলিল ফাকা-লা রাব্বি ইন্নী লিমাআনঝালতা ইলাইইয়া মিন খাইরিন ফাকীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তখন মূসা তাদের সম্মানার্থে তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিল। ১৫ তারপর একটি ছায়াস্থলে ফিরে আসল। তারপর বলল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ বর্ষণ করবে আমি তার ভিখারী। ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা তখন এদের পক্ষে জানোয়ারগুলিকে পানি পান করাল। তৎপর সে ছায়ার নিচে আশ্রয় গ্রহণ করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবে আমি তো তার কাঙ্গাল।’


তাফসীরঃ

১৫. ‘তুমি আমার প্রতি যে কল্যাণ বর্ষণ করবে আমি তার ভিখারী’ হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সংক্ষিপ্ত দোয়া আল্লাহ তাআলার প্রতি তাঁর আবদিয়াত ও দাসত্ববোধের এক চমৎকার অভিব্যক্তি। একদিকে তো আল্লাহ তাআলার সমীপে নিজের অভাব ও অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেছেন, জানাচ্ছেন যে, এই বিদেশ বিভূঁইয়ে নিজের পরিচিত কোন লোক নেই, জীবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কোন কিছুরই ব্যবস্থা নেই। অপর দিকে নিজের পক্ষ থেকে ঠিক কি-কি বস্তু চাই তা ঠিক করে দিচ্ছেন না; বরং বিষয়টা আল্লাহ তাআলার উপর ছেড়ে দিচ্ছেন যে, আপনি আমার জন্য কল্যাণকর যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করবেন এবং উপর থেকে আমার প্রতি যে অনুগ্রহই বর্ষণ করবেন, আমি তারই কাঙ্গাল এবং আমি তাই আপনার কাছে চাচ্ছি। নিজের পক্ষ হতে সুনির্দিষ্টভাবে কোন কিছু চাব, সেই অবস্থায় আমি নেই।


১৬. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নারীদ্বয়কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এখানে কি আর কোনও কুয়া আছে? তারা বললেন, আরেকটি কুয়া আছে বটে, কিন্তু একটি বিশাল পাথর পড়ে সেটির মুখ আটকে আছে। আর সে পাথরটি সরানোও খুব সহজ নয়। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম সেখানে গেলেন এবং পাথরটি সরিয়ে তাদের মেষগুলোকে পানি পার করিয়ে দিলেন (রূহুল মাআনী, আবদ ইবনে হুমায়দ-এর বরাতে ২০ খণ্ড, ৩৬৭ পৃষ্ঠা)।


২৫


فَجَآءَتۡہُ اِحۡدٰىہُمَا تَمۡشِیۡ عَلَی اسۡتِحۡیَآءٍ ۫ قَالَتۡ اِنَّ اَبِیۡ یَدۡعُوۡکَ لِیَجۡزِیَکَ اَجۡرَ مَا سَقَیۡتَ لَنَا ؕ فَلَمَّا جَآءَہٗ وَقَصَّ عَلَیۡہِ الۡقَصَصَ ۙ قَالَ لَا تَخَفۡ ٝ۟ نَجَوۡتَ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ


ফাজাআতহু ইহদা-হুমা-তামশী ‘আলাছ তিহইয়া-ইন, কা-লাত ইন্না আবী ইয়াদ‘ঊকা লিইয়াজঝিয়াকা আজরামা-ছাকাইতা লানা- ফালাম্মা-জাআহূওয়া কাসসা ‘আলাইহিল কাসাসা কা-লা লা-তাখাফ নাজাওতা মিনাল কাওমিজ্জালিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিছুক্ষণ পর সেই দুই নারীর একজন লাজুক ভঙ্গিমায় হেঁটে হেঁটে তার কাছে আসল। ১৭ সে বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে দিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য। ১৮ সুতরাং যখন সে নারীদ্বয়ের পিতার কাছে এসে পৌঁছল এবং তাকে তার সমস্ত বৃত্তান্ত শোনাল, তখন সে বলল, কোন ভয় করো না। তুমি জালেম সম্প্রদায় হতে মুক্তি পেয়ে গিয়েছ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন। অতঃপর মূসা যখন তাঁর কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বললেন, ভয় করো না, তুমি জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন নারীদ্বয়ের একজন শরম-জড়িত চরণে তার নিকট এলো এবং বলল, ‘আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের জানোয়ারগুলিকে পানি পান করানোর পারিশ্রমিক দেয়ার জন্যে।’ এরপর মূসা তার নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় কর না, তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল হতে বেঁচে গেছ।’


তাফসীরঃ

১৭. যদিও উপকার করার পর তার প্রতিদান আনতে যাওয়াটা ভদ্রতা ও আত্মমর্যাদাবোধের পরিপন্থী, বিশেষত হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মত একজন মহান রাসূলের পক্ষে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি গেলেন এজন্য যে, তিনি এটাকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে একটি অনুগ্রহ মনে করেছিলেন, তিনি তো একটু আগেই আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন, হে প্রতিপালক! তোমার পক্ষ হতে আমার প্রতি যে অনুগ্রহই বর্ষিত হবে আমি তার কাঙ্গাল। এ নারীর নিমন্ত্রণ তো সে অনুগ্রহ বর্ষণেরই পূর্বাভাষ। তিনি ভেবেছিলেন, এ নিমন্ত্রণ দ্বারা এ জনপদের একজন সম্মানিত লোকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে গেল। বোঝাই যাচ্ছে তিনি একজন শরীফ ও বুযুর্গ লোক। কেননা উপকারী বিদেশীকে ডেকে আনার জন্য তিনি কন্যাকেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এ নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করা উচিত হবে না। করলে তা নাশুকরী এবং সেই আবদিয়াত ও দাসত্ববোধের পরিপন্থী হবে, যাতে উজ্জীবিত হয়ে তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। এমনও তো হতে পারে, এই মহান ব্যক্তির কাছে উপযুক্ত কোন পরামর্শ পাওয়া যাবে, যা এই বিদেশ বিভূঁইয়ে বড় কাজে আসবে। সুতরাং তিনি দাওয়াত গ্রহণ করে তাঁর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। ইবনে আসাকিরের এক বর্ণনায় আছে আবু হাযিম (রহ.) বলেন, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন সেখানে পৌঁছলেন, হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম তাঁর সামনে খাবার পেশ করলেন, কিন্তু তিনি বললেন, আমি এর থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাই। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, কেন? আপনার কি ক্ষুধা নেই? হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ক্ষুধা আছে বটে, কিন্তু আমার সন্দেহ আমি যে মেষপালকে পানি পান করিয়ে দিয়েছিলাম, এটা হয়ত তারই প্রতিদান। আমি সে প্রতিদান নিতে রাজি নই। কেননা আমি সে কাজ করেছিলাম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আর আমি এভাবে যে কাজ করি তার কোন বিনিময় গ্রহণ করি না, হোক না তা দুনিয়া ভর্তি সোনা। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ তাআলার কসম! বিষয়টা সে রকম নয়। বরং এটা অতিথিসেবা। এটা আমাদের বংশীয় রেওয়াজ যে, মেহমান আসলে আমরা তার সেবা-যত্ন করে থাকি। এ চরিত্র আমরা পুরুষানুক্রমে পেয়েছি। এ কথায় হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আশ্বস্ত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে খেতে বসে গেলেন (রূহুল মাআনী, পূর্বোক্ত বরাতে)। এ বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের কন্যা যে বলেছিলেন, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, আপনি আমাদের যে কাজ করে দিয়েছেন, তার বিনিময় দেওয়ার জন্য, এটা ছিল তার নিজ ধারণাপ্রসূত। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম নিজে এরূপ কথা বলেননি।


১৮. বোঝা গেল, কুরআন মাজীদ পর্দা সংক্রান্ত যে বিধানাবলী দিয়েছে, সেকালে যথারীতি এসব বিধান না থাকলেও নারীগণ তখনও তাদের পোশাক-আশাক ও চাল-চলনে শালীনতাবোধের পরিচয় দিত এবং পুরুষদের সাথে কথাবার্তা ও আচার-আচরণের সময় লজ্জা-শরমের প্রতি পুরোপুরি খেয়াল রাখত। ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) ইবনে আবী হাতিম (রহ.) ও সাঈদ ইবনে মানসুর (রহ.) হযরত উমর (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে আসার সময় হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের কন্যা জামার হাতা দ্বারা চেহারা ঢেকে রেখেছিলেন।


২৬


قَالَتۡ اِحۡدٰىہُمَا یٰۤاَبَتِ اسۡتَاۡجِرۡہُ ۫ اِنَّ خَیۡرَ مَنِ اسۡتَاۡجَرۡتَ الۡقَوِیُّ الۡاَمِیۡنُ


কা-লাত ইহদা-হুমা-ইয়াআবাতিছ তা’জিরহু ইন্না খাইরা মানিছতা’জারতাল কাবিইয়ুউল আমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নারীদ্বয়ের একজন বলল, আব্বাজী! আপনি একে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোন কাজ দিন। আপনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কারও থেকে কাজ নিতে চাইলে সেজন্য এমন ব্যক্তিই উত্তম, যে শক্তিশালী হবে এবং আমানতদারও। ১৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বালিকাদ্বয়ের একজন বলল পিতাঃ তাকে চাকর নিযুক্ত করুন। কেননা, আপনার চাকর হিসেবে সে-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের একজন বলল, ‘হে পিতা! তুমি এটাকে মজুর নিযুক্ত কর, কারণ তোমার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’


তাফসীরঃ

১৯. ইনি হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের সেই কন্যা, যিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তাঁর নাম ছিল সাফুরা। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে তাঁরই বিবাহ হয়েছিল। বাইরের কাজকর্ম দেখাশুনার জন্য হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের পরিবারে একজন পুরুষের দরকার ছিল, যাতে মেষ চরানো ও তাদেরকে পানি পান করানোর জন্য ঘরের মেয়েদের বাইরে যেতে না হয়। এজন্যই হযরত সাফুরা (রাযি.) তার পিতার কাছে প্রস্তাব দিলেন, যেন তিনি এই যুবককে কাজে নিযুক্ত করেন এবং যথারীতি তার পারিশ্রমিকও ধার্য করে দেন। তিনি যে বললেন, আপনি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কারও থেকে কাজ নিতে চাইলে সেজন্য এমন ব্যক্তিই উত্তম, যে শক্তিশালী হবে এবং বিশ্বস্তও’এটা তার গভীর বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা তার এ বাক্যটি বিবৃত করে ‘কর্মচারী নিয়োগদান’ সংক্রান্ত চমৎকার মাপকাঠি দিয়ে দিয়েছেন। আমরা এর দ্বারা জানতে পারি, যে-কোন কাজে যাকে নিয়োগ দান করা হবে, মৌলিকভাবে তার মধ্যে দু’টি গুণ থাকতে হবে। (ক) যে দায়িত্ব তার উপর অর্পণ করা হবে, তা আঞ্জাম দেওয়ার মত দৈহিক ও মানসিক শক্তি এবং (খ) আমানতদারী। হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যে এ উভয় গুণের অধিকারী সে অভিজ্ঞতা শুআইব-তনয়া লাভ করেছিলেন। পানি পান করানোর জন্য তিনি যে কাজ করেছিলেন তা তার দৈহিক ও মানসিক কর্মক্ষমতার পরিচায়ক ছিল। রাখালেরা কখন পানি খাওয়ানো শেষ করবে সেই প্রতীক্ষাজনিত পীড়া হতে নারীদ্বয়কে মুক্তিদানের জন্য তিনি পৃথক একটি কুয়ায় চলে যান এবং তার মুখে পড়ে থাকা বিশাল পাথর খণ্ডটিকে কারও সাহায্য ছাড়া একাই সরিয়ে ফেলেন। তার এ বুদ্ধি ও শক্তি তারা প্রত্যক্ষ করেছিল। আর তিনি যে একজন বিশ্বস্ত লোক তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল এভাবে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম যখন শুআইব-তনয়ার সাথে তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তাকে বলেছিলেন, আপনি আমার পেছনে থাকুন এবং কোন দিকে যেতে হবে তা বলে দিন। এভাবে তিনি সে মহিয়সীর লজ্জাশীলতা, পবিত্রতা ও চরিত্রবত্তার প্রতি সম্মান দেখালেন। এ জাতীয় আমানতদারী যেহেতু কদাচ নজরে পড়ে, তাই তিনি উপলব্ধি করলেন, আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা এই ব্যক্তির একটি বিশেষ গুণ।


২৭


قَالَ اِنِّیۡۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اُنۡکِحَکَ اِحۡدَی ابۡنَتَیَّ ہٰتَیۡنِ عَلٰۤی اَنۡ تَاۡجُرَنِیۡ ثَمٰنِیَ حِجَجٍ ۚ فَاِنۡ اَتۡمَمۡتَ عَشۡرًا فَمِنۡ عِنۡدِکَ ۚ وَمَاۤ اُرِیۡدُ اَنۡ اَشُقَّ عَلَیۡکَ ؕ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ


কা-লা ইন্নীউরীদুআন উনকিহাকা ইহদাব নাতাইইয়া হা-তাইনি ‘আলাআন তা’জুরানী ছামা-নিয়া হিজাজিন ফাইন আতমামতা ‘আশরান ফামিন ‘ইনদিকা ওয়ামাউরীদু আন আশুক্কা ‘আলাইকা ছাতাজিদুনীইন শাআল্লা-হু মিনাসসা-লিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার পিতা বলল, আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই, এই শর্তে যে তুমি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আট বছর আমার এখানে কাজ করবে ২০ আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, সেটা তোমার নিজ এখতিয়ার। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। ইনশাআল্লাহ তুমি আমাকে সচাদারীদের একজন পাবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে মূসাকে বলল, ‘আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সঙ্গে বিবাহ দিতে চাই, এই শর্তে যে, তুমি আট বৎসর আমার কাজ করবে, যদি তুমি দশ বৎসর পূর্ণ কর, সে তোমার ইচ্ছা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তুমি আমাকে সদাচারী পাবে।’


তাফসীরঃ

২০. একথা বলার সময় হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম যদিও নির্দিষ্ট করেননি কোন মেয়েকে তাঁর সাথে বিবাহ দেবেন, কিন্তু যখন বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়, তখন যথারীতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করার দ্বারা বকরী চরানোর কাজ বোঝানো হয়েছে। অনেক ফকীহ ও মুফাসসিরের মতে হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম ছাগল চরানোকে কন্যার মোহরানা স্থির করেছিলেন। কিন্তু এর উপর প্রশ্ন আসে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর কোন কাজ করে দেওয়াটা কি তার মোহরানা হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারে? এ মাসআলায় ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে মতভেদ আছে। তদুপরি এ ঘটনায় চুক্তি তো স্ত্রীর কাজ নয়; বরং স্ত্রীর পিতার কাজ করা সম্পর্কে হয়েছিল। যারা এটাকে মোহরানা সাব্যস্ত করতে চান, তারা এর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু লক্ষ্য করলে ধরা পড়ে সে চেষ্টায় জবরদস্তির ছাপ স্পষ্ট। এর বিপরীতে কোন কোন মুফাসসির ও ফকীহের অভিমত হল, আসলে এখানে বিষয় ছিল দুটো। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে সে দুটো বিষয়েই সিদ্ধান্ত স্থির করতে চেয়েছিলেন। একটি তো এই যে, তিনি চাচ্ছিলেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তার মেষপাল চরাবেন এবং সেজন্য আলাদাভাবে মজুরি ধার্য করা হবে আর দ্বিতীয়টি হল, মূসা আলাইহিস সালাম তার কন্যাকে বিবাহও করুন, যার জন্য নিয়ম মাফিক মোহরানা স্থির করা হবে। উভয়টির ব্যাপারে তিনি হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মর্জি জানতে চাচ্ছিলেন এবং সে উদ্দেশ্যে উভয়টিই আলোচনায় এনেছিলেন, যদি উভয়টিতে তিনি সম্মত থাকেন, তবে প্রত্যেকটি তার আপন-আপন রীতি অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। বিবাহের ক্ষেত্রে কন্যা কোনটি তা স্থির করা হবে, সাক্ষী রাখা হবে এবং মোহরানাও ধার্য করা হবে। আর চাকুরির ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হবে এবং তার জন্য স্বতন্ত্র মজুরি ধার্য করা হবে। উভয় চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে তো পরে, তবে এই মুহূর্তে তার জন্য উভয় পক্ষ হতে ওয়াদা হয়ে যাক। এই শেষোক্ত ব্যাখ্যাটি খুবই যুক্তিযুক্ত। এ অবস্থায় একটি চুক্তিকে আরেকটি চুক্তির সাথে শর্তযুক্ত করার প্রশ্নও আসে না। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহ.) ‘উমদাতুল কারী’ গ্রন্থে এ ব্যাখ্যাই অবলম্বন করেছেন (দ্রষ্টব্য উক্ত গ্রন্থ কিতাবুল ইজারাত, ১২ খণ্ড, ৮৫ পৃষ্ঠা)।


২৮


قَالَ ذٰلِکَ بَیۡنِیۡ وَبَیۡنَکَ ؕ  اَیَّمَا الۡاَجَلَیۡنِ قَضَیۡتُ فَلَا عُدۡوَانَ عَلَیَّ ؕ  وَاللّٰہُ عَلٰی مَا نَقُوۡلُ وَکِیۡلٌ ٪


কা-লা যা-লিকা বাইনি ওয়া বাইনাকা আইইয়ামাল আজালাইনি কাদাইতুফালা‘উদওয়া-না ‘আলাইইয়া ওয়াল্লা-হু ‘আলা-মা-নাকূলুওয়াকীল।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, আমার ও আপনার মধ্যে এ বিষয়টা স্থির হয়ে গেল। আমি দুই মেয়াদের যেটিই পূর্ণ করি তাতে আমার প্রতি কোন বাড়াবাড়ি চলবে না। আর আমরা যে কথা বলছি, আল্লাহই তার রক্ষাকর্তা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হল। দু’টি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তিই রইল। এই দুইটি মেয়াদের কোন একটি আমি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে না। আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি আল্লাহ্ তার সাক্ষী।’


২৯


فَلَمَّا قَضٰی مُوۡسَی الۡاَجَلَ وَسَارَ بِاَہۡلِہٖۤ اٰنَسَ مِنۡ جَانِبِ الطُّوۡرِ نَارًا ۚ قَالَ لِاَہۡلِہِ امۡکُثُوۡۤا اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا لَّعَلِّیۡۤ اٰتِیۡکُمۡ مِّنۡہَا بِخَبَرٍ اَوۡ جَذۡوَۃٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّکُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ


ফালাম্মা-কাদা-মূছাল আজালা ওয়াছা-রা বিআহলিহীআ-নাছা মিন জা-নিবিততুরি নারান কা-লা লিআহলিহিমকুছূদ্ম ইন্নীআ-নাছতুনা-রাল্লা‘আললীআ-তীকুম মিন হাবিখাবারিন আও জাযওয়াতিম মিনান্না-রি লা‘আল্লাকুম তাসতালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করল এবং নিজ স্ত্রীকে নিয়ে রওয়ানা হয়ে গেল, ২১ তখন তিনি তূর পাহাড়ের দিকে এক আগুন দেখতে পেলেন। তিনি নিজ পরিবারবর্গকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি এক আগুন দেখেছি, হয়ত আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব কোন সংবাদ ২২ অথবা আগুনের একটা জ্বলন্ত কাঠ, যাতে তোমরা উত্তাপ গ্রহণ করতে পার।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসতে পারি অথবা কোন জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা যখন তার মেয়াদ পূর্ণ করার পর সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তূর পর্বতের দিকে আগুন দেখতে পেল। সে তার পরিজনবর্গকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবত আমি সেখান হতে তোমাদের জন্যে খবর আনতে পারি বা একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।’


তাফসীরঃ

২১. মুফাসসিরগণ বলেন, রাতটা ছিল শীতের। তিনি পথও হারিয়ে ফেলেছিলেন। প্রচণ্ড বাতাসে তার সঙ্গে আনা মেষপালও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিল। এদিকে স্ত্রীর প্রসববেদনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এসব কারণে তখন আগুনের বড় প্রয়োজন ছিল। কাজেই তিনি দূরে আগুন দেখতে পেয়ে স্ত্রী ও খাদেমকে (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী সঙ্গে দু’জন পুত্রও ছিল) বললেন, তোমরা এখানে অপেক্ষা কর। ওই যে আগুন দেখা যাচ্ছে ওখানে হয়ত মানুষজন আছে। আমি ওখানে যাই। হয়ত তারা আামকে পথ বলে দিতে পারবে। অন্ততপক্ষে আগুন তো নিয়ে আসতে পারব, যা তোমাদের অনেক কাজে লাগবে। -অনুবাদক


২২. কোন কোন বর্ণনায় প্রকাশ, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের বাড়িতে পূর্ণ দশ বছর কাজ করেছিলেন। খুব সম্ভব তারপর তিনি নিজ মা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য মিসরে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি মনে করে থাকবেন, কিবতী হত্যার ঘটনা এখন সকলে ভুলে গেছে। কাজেই মিসরে ফিরে গেলে কোন বিপদের আশঙ্কা নেই।


৩০


فَلَمَّاۤ اَتٰىہَا نُوۡدِیَ مِنۡ شَاطِیَٴ الۡوَادِ الۡاَیۡمَنِ فِی الۡبُقۡعَۃِ الۡمُبٰرَکَۃِ مِنَ الشَّجَرَۃِ اَنۡ یّٰمُوۡسٰۤی اِنِّیۡۤ اَنَا اللّٰہُ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ


ফালাম্মাআতা-হা-নূদিয়া মিন শা-তিইল ওয়া-দিল আইমানি ফিল বুক‘আতিল মুবা-রাকাতি মিনাশশাজারাতি আইঁ ইয়া-মূছাইন্নীআনাল্লা-হু রাব্বুল ‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং সে যখন আগুনের কাছে পৌঁছল, তখন ডান উপত্যকার কিনারায় অবস্থিত বরকতপূর্ণ ভূমির একটি বৃক্ষ থেকে ডেকে বলা হল, হে মূসা! আমিই আল্লাহ জগতসমূহের প্রতিপালক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন মূসা আগুনের নিকট পৌঁছিল তখন উপত্যকার দক্ষিণ পার্শ্বে পবিত্র ভ‚মিস্থিত এক বৃক্ষের দিক হতে তাকে আহ্বান করে বলা হল, ‘হে মূসা ! আমিই আল্লাহ, জগতসমূহের প্রতিপালক;’


৩১


وَاَنۡ اَلۡقِ عَصَاکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰہَا تَہۡتَزُّ کَاَنَّہَا جَآنٌّ وَّلّٰی مُدۡبِرًا وَّلَمۡ یُعَقِّبۡ ؕ یٰمُوۡسٰۤی اَقۡبِلۡ وَلَا تَخَفۡ ۟ اِنَّکَ مِنَ الۡاٰمِنِیۡنَ


ওয়া আন আলকি‘আসা-কা ফালাম্মা-রাআ-হা-তাহতাঝঝুকাআন্নাহা-জান্নুওঁ ওয়াল্লা-মুদবিরাওঁ ওয়া লাম ইউআক্কিব ইয়া-মূছা আকবিল ওয়ালা-তাখাফ ইন্নাকা মিনাল আ-মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আরও বলা হল, তোমার লাঠিটি নিচে ফেলে দাও। অতঃপর সে যখন লাঠিটিকে দেখল সাপের মত ছোটাছুটি করছে, তখন সে পিছন দিকে ঘুরে পালাতে লাগল এবং সে ফিরেও তাকাল না। ২৩ (তাকে বলা হল,) হে মূসা! সামনে এসো। ভয় করো না। তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আরও বলা হল, তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর। অতঃপর যখন সে লাঠিকে সর্পের ন্যায় দৌড়াদৌড়ি করতে দেখল, তখন সে মুখ ফিরিয়ে বিপরীত দিকে পালাতে লাগল এবং পেছন ফিরে দেখল না। হে মূসা, সামনে এস এবং ভয় করো না। তোমার কোন আশংকা নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আরও বলা হল, ‘তুমি তোমার যষ্টি নিক্ষেপ কর।’ এরপর, যখন সে একে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখল তখন পিছনের দিকে ছুটতে লাগল এবং ফিরে তাকাল না। তাকে বলা হল, ‘হে মূসা! সামনে আস, ভয় কর না; তুমি তো নিরাপদ।


তাফসীরঃ

২৩. এটা মানুষের স্বভাবগত ভয়, যা নবুওয়াতের পরিপন্থী নয়।


৩২


اُسۡلُکۡ یَدَکَ فِیۡ جَیۡبِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ ۫ وَّاضۡمُمۡ اِلَیۡکَ جَنَاحَکَ مِنَ الرَّہۡبِ فَذٰنِکَ بُرۡہَانٰنِ مِنۡ رَّبِّکَ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَمَلَا۠ئِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ


উছলুক ইয়াদাকা ফী জাইবিকা তাখরুজ বাইদাআ মিন গাইরি ছূইওঁ ওয়াদমুম ইলাইকা জানা-হাকা মিনাররাহবি ফাযা-নিকা বুরহা-না-নি মিররাব্বিকা ইলা-ফির‘আওনা ওয়া মালাইহী ইন্নাহুম কা-নূকাওমান ফা-ছিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি তোমার হাত জামার সামনের ফোকড়ের ভেতর ঢোকাও। তা কোন রোগ ব্যতিরেকে সমুজ্জ্বলরূপে বের হয়ে আসবে। ভয় দূর করার জন্য তোমার বাহু নিজ শরীরে চেপে ধর। ২৪ এ দু’টি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে বলিষ্ঠ প্রমাণ, ফির‘আউন ও তার পারিষদবর্গের প্রতি। তারা ঘোর অবাধ্য সম্প্রদায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমার হাত বগলে রাখ। তা বের হয়ে আসবে নিরাময় উজ্জ্বল হয়ে এবং ভয় হেতু তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধর। এই দু’টি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের প্রতি তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রমাণ। নিশ্চয় তারা পাপাচারী সম্প্রদায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র-সমুজ্জ্বল নির্দোষ হয়ে। ভয় দূর করার জন্যে তোমার হস্তদ্বয় নিজের দিকে চাপিয়া ধর। এই দুইটি তোমার প্রতিপালক-প্রদত্ত প্রমাণ, ফির‘আওন ও তার পারিষদবর্গের জন্যে। এরা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।


তাফসীরঃ

২৪. লাঠিটির সাপে পরিণত হওয়া ও হাত থেকে অকস্মাৎ আলো ঠিকরানোর কারণে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের অন্তরে যে ভীতি দেখা দিয়েছিল, তা ছিল একটি স্বভাবগত ব্যাপার। সে ভীতি দূর করার জন্য আল্লাহ তাআলা ব্যবস্থাও দিলেন বিস্ময়কর। বললেন, বগলের ভেতর থেকে বের করার কারণে যে হাত চমকাতে শুরু করেছিল, তাকে পুনরায় নিজ দেহের সাথে জড়াও। দেখবে সে ভীতি সহসাই দূর হয়ে গেছে।


৩৩


قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ قَتَلۡتُ مِنۡہُمۡ نَفۡسًا فَاَخَافُ اَنۡ یَّقۡتُلُوۡنِ


কা-লা রাব্বি ইন্নী কাতালতুমিনহুম নাফছান ফাআখা-ফুআইঁ ইয়াকতুলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি তাদের একজন লোককে হত্যা করেছিলাম। তাই আমি আশংকা করি তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। কাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো এদের একজনকে হত্যা করেছি। ফলে আমি আশংকা করছি এরা আমাকে হত্যা করবে।


৩৪


وَاَخِیۡ ہٰرُوۡنُ ہُوَ اَفۡصَحُ مِنِّیۡ لِسَانًا فَاَرۡسِلۡہُ مَعِیَ رِدۡاً یُّصَدِّقُنِیۡۤ ۫ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اَنۡ یُّکَذِّبُوۡنِ


ওয়া আখী হা-রূনুহুওয়া আফসাহুমিন্নী লিছা-নান ফাআরছিলহু মা‘ইয়া রিদআইঁ ইউসাদ্দিকু নীইন্নী আখা-ফুআইঁ ইউকাযযি বূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার ভাই হারূনের যবান আমা অপেক্ষা বেশি স্পষ্ট। ২৫ তাকেও আমার সঙ্গে আমার সাহায্যকারীরূপে পাঠিয়ে দিন, যাতে সে আমার সমর্থন করে। আমার আশঙ্কা তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষী। অতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুন। সে আমাকে সমর্থন জানাবে। আমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমার ভাই হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী; অতএব তাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করবে। আমি আশংকা করি এরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে।’


তাফসীরঃ

২৫. পূর্বে সূরা তোয়াহায় (২০ : ২৫) গত হয়েছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তার শৈশবকালে জ্বলন্ত আগুন মুখে দিয়েছিলেন। যদ্দরুণ তার মুখে কিছুটা তোত্লামি সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই তিনি প্রার্থনা জানিয়েছিলেন, যেন তাঁর ভাই হযরত হারূন আলাইহিস সালামকেও তাঁর সাথে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়। কেননা তার যবান বেশি স্পষ্ট।


৩৫


قَالَ سَنَشُدُّ عَضُدَکَ بِاَخِیۡکَ وَنَجۡعَلُ لَکُمَا سُلۡطٰنًا فَلَا یَصِلُوۡنَ اِلَیۡکُمَا ۚۛ بِاٰیٰتِنَاۤ ۚۛ اَنۡتُمَا وَمَنِ اتَّبَعَکُمَا الۡغٰلِبُوۡنَ


কা-লা ছানাশুদ্দু‘আদুদাকা বিআখীকা ওয়া নাজ‘আলুলাকুমা-ছুলতা-নান ফালা-ইয়াসিলূনা ইলাইকুমা-বিআ-য়া-তিনা আনতুমা-ওয়া মানিততাবা‘আকুমাল গা-লিবূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, আমি তোমার ভাইয়ের দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করে দিচ্ছি এবং তোমাদের উভয়কে এমন প্রভাব দান করছি যে, আমার নিদর্শনাবলীর বরকতে তারা তোমাদের পর্যন্ত পৌঁছতেই পারবে না। তোমরা ও তোমাদের অনুসারীরাই জয়ী হয়ে থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেন, আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাই দ্বারা এবং তোমাদের প্রধান্য দান করব। ফলে, তারা তোমার কাছে পৌছাতে পারবে না। আমার নিদর্শনাবলীর জোরে তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা প্রবল থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ বললেন, ‘আমি তোমার ভাইকে দিয়ে তোমার বাহু শক্তিশালী করব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করব। এরা তোমাদের নিকট পৌঁছতে পারবে না। তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা আমার নিদর্শনবলে এদের ওপর প্রবল হবে।’


৩৬


فَلَمَّا جَآءَہُمۡ مُّوۡسٰی بِاٰیٰتِنَا بَیِّنٰتٍ قَالُوۡا مَا ہٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّفۡتَرًی وَّمَا سَمِعۡنَا بِہٰذَا فِیۡۤ اٰبَآئِنَا الۡاَوَّلِیۡنَ


ফালাম্মা- জাআহুম মূছা- বিআ-য়া-তিনা বাইয়িনা-তিন কা-লূমা- হা-যা ইল্লাছিহরুম মুফতারাওঁ ওয়ামা-ছামি‘না-বিহা-যা-ফীআ-বাইনাল আওওয়ালীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন মূসা আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হল, তখন তারা বলল, এটা আর কিছুই নয়, কেবল বানোয়াট যাদু। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কালে এরূপ কথা শুনিনি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে পৌছল, তখন তারা বলল, এতো অলীক জাদু মাত্র। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এ কথা শুনিনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা যখন এদের নিকট আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলি নিয়ে এলো, এরা বলল, ‘এটা তো অলীক ইন্দ্রজাল মাত্র। আমাদের পূর্বপুরুষগণের কালে কখনও এরূপ কথা শুনি নাই।’


৩৭


وَقَالَ مُوۡسٰی رَبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِمَنۡ جَآءَ بِالۡہُدٰی مِنۡ عِنۡدِہٖ وَمَنۡ تَکُوۡنُ لَہٗ عَاقِبَۃُ الدَّارِ ؕ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الظّٰلِمُوۡنَ


ওয়া কা-লা মূছা-রাববীআ‘লামুবিমান জাআ বিলহুদা-মিন ‘ইনদিহী ওয়া মান তাকূনুলাহূ ‘আ-কিবাতুদ দা-রি ইন্নাহূলা-ইউফলিহুজ্জা-লিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, আমার প্রতিপালক ভালো করেই জানেন কে তার নিকট থেকে হেদায়াত নিয়ে এসেছে এবং পরিণামে কে লাভ করবে উৎকৃষ্ট ঠিকানা। ২৬ এটা নিশ্চিত যে, জালেমগণ সফলকাম হবে না। ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসা বলল, আমার পালনকর্তা সম্যক জানেন যে তার নিকট থেকে হেদায়েতের কথা নিয়ে আগমন করেছে এবং যে প্রাপ্ত হবে পরকালের গৃহ। নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলল, ‘আমার প্রতিপালক সম্যক অবগত, কে তাঁর নিকট হতে পথনির্দেশ এনেছে এবং আখিরাতে কাহার পরিণাম শুভ হবে। জালিমরা কখনো সফলকাম হবে না।’


তাফসীরঃ

২৬. হযরত মূসা (আ.)-এর মুজিযাকে তারা যাদু ঠাওরালে তিনি সংক্ষেপে যে উত্তর দিলেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তার উত্তরের ভেতর দিয়ে মুজিযা ও যাদুর স্বরূপ ও উভয়ের মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, আমার রবই জানেন, কে তার নিকট থেকে হিদায়াত নিয়ে এসেছে। অর্থাৎ, আমি যা নিয়ে এসেছি তা কোন মিথ্যা তেলেসমাতি নয় যে, ভোজভাজিতেই শেষ হয়ে যাবে, কারও জন্য কোনও কল্যাণ বয়ে আনবে না এবং মুক্তির কোন পথ-নির্দেশ করবে না। বরং এটা আল্লাহপ্রদত্ত নিদর্শন। এটা সত্যের নির্দেশনা দেয়। এতে বিশ্বাস আনলে মুক্তির পথ লাভ হয়, যে পথে চললে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জিত হয়। আর এটা প্রত্যাখ্যান করলে সত্যকেই প্রত্যাখ্যান করা হয়। সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা মহা জুলুম ও অবিচার। যারা তা করে, তারা কখনও সফল হয় না। -অনুবাদক


২৭. ‘ঠিকানা’ দ্বারা দুনিয়াও বোঝানো যেতে পারে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন দুনিয়ায় ভালো পরিণাম কার হবে, কে ঈমান নিয়ে মারা যাবে। আবার আখেরাতও বোঝানো হতে পারে। অর্থাৎ, আখেরাতে কে উৎকৃষ্ট পরিণামের অধিকারী তথা জান্নাতবাসী হবে তাও তিনিই জানেন।


৩৮


وَقَالَ فِرۡعَوۡنُ یٰۤاَیُّہَا الۡمَلَاُ مَا عَلِمۡتُ لَکُمۡ مِّنۡ اِلٰہٍ غَیۡرِیۡ ۚ فَاَوۡقِدۡ لِیۡ یٰہَامٰنُ عَلَی الطِّیۡنِ فَاجۡعَلۡ لِّیۡ صَرۡحًا لَّعَلِّیۡۤ اَطَّلِعُ اِلٰۤی اِلٰہِ مُوۡسٰی ۙ وَاِنِّیۡ لَاَظُنُّہٗ مِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ


ওয়া কা-লা ফির‘আওনুইয়াআইয়ুহাল মালাউ মা-‘আলিমতুলাকুম মিন ইলা-হিন গাইরী ফাআওকিদ লী ইয়া-হা-মা-নু‘আলাততীনি ফাজ‘আললী সারহাল লা‘আললীআত্তালি‘উ ইলাইলা-হি মূছা-ওয়া ইন্নী লাআজুন্নুহূমিনাল কা-যিবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফির‘আউন বলল, হে পারিষদবর্গ! আমি তো আমার নিজেকে ছাড়া তোমাদের অন্য কোন মাবুদ আছে বলে জানি না। আর হে হামান! তুমি আমার জন্য আগুন দিয়ে মাটি জ্বালাও (অর্থাৎ ইট তৈরি কর) এবং আমার জন্য একটি উঁচু ইমারত তৈরি কর, যাতে আমি তার উপর উঠে মূসার প্রভুকে উঁকি মেরে দেখতে পারি। ২৮ আমার পূর্ণ বিশ্বাস সে একজন মিথ্যাবাদী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে। হে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারি। আমার তো ধারণা এই যে, সে একজন মিথ্যাবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফির‘আওন বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্ আছে বলে জানি না। হে হামান! তুমি আমার জন্যে ইট পোড়াও এবং একটি সুউচ্চ প্রাসাদ তৈয়ার কর; হয়ত আমি এতে উঠিয়া মূসার ইলাহ্কে দেখতে পারি। তবে আমি অবশ্যই মনে করি সে মিথ্যাবাদী।’


তাফসীরঃ

২৮. এসব কথা বলে সে মূলত ঠাট্টা করছিল।


৩৯


وَاسۡتَکۡبَرَ ہُوَ وَجُنُوۡدُہٗ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَظَنُّوۡۤا اَنَّہُمۡ اِلَیۡنَا لَا یُرۡجَعُوۡنَ


ওয়াছতাকবারা হুওয়া ওয়া জুনূদুহূফিল আরদি বিগাইরিল হাক্কি ওয়া জাননূআন্নাহুম ইলাইনা-লা-ইউরজা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত ফির‘আউন ও তার বাহিনী ভূমিতে অন্যায় অহমিকা প্রদর্শন করেছিল। তারা মনে করেছিল তাদেরকে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফির‘আওন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করেছিল এবং এরা মনে করেছিল যে, এরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না।


৪০


فَاَخَذۡنٰہُ وَجُنُوۡدَہٗ فَنَبَذۡنٰہُمۡ فِی الۡیَمِّ ۚ فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الظّٰلِمِیۡنَ


ফাআখাযনা-হু ওয়া জুনূদাহূফানাবাযনা-হুম ফিল ইয়াম্মি ফানজু র কাইফা কা-না ‘আকিবাতুজ্জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং আমি তাকে ও তার সৈন্যদেরকে ধৃত করে সাগরে নিক্ষেপ করলাম। এবার দেখ জালেমদের পরিণতি কী হয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, তৎপর আমি তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। অতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অতএব আমি তাকে ও তার বাহিনীকে ধরিলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। দেখ, জালিমদের পরিণাম কি হয়ে থাকে।


৪১


وَجَعَلۡنٰہُمۡ اَئِمَّۃً یَّدۡعُوۡنَ اِلَی النَّارِ ۚ وَیَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ لَا یُنۡصَرُوۡنَ


ওয়া জা‘আলনা-হুম আইম্মাতাইঁ ইয়াদ‘ঊনা ইলান্না-রি ওয়া ইয়াওমাল কিয়া-মাতি লাইউনসারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে বানিয়েছিলাম নেতা, যারা মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডাকত। কিয়ামতের দিন তারা কারও সাহায্য পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম। তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করত। কেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে আমি নেতা করেছিলাম; এরা লোকদেরকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করত; কিয়ামতের দিন এদেরকে সাহায্য করা হবে না।


৪২


وَاَتۡبَعۡنٰہُمۡ فِیۡ ہٰذِہِ الدُّنۡیَا لَعۡنَۃً ۚ  وَیَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ہُمۡ مِّنَ الۡمَقۡبُوۡحِیۡنَ ٪


ওয়া আতবা‘না-হুম ফী হা-যিহিদদুনইয়া-লা‘নাতাওঁ ওয়া ইয়াওমাল কিয়া-মাতি হুম মিনাল মাকবূহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

দুনিয়ায় আমি তাদের পেছনে অভিসম্পাত লাগিয়ে দিয়েছি আর কিয়ামতের দিন তারা হবে সেই সব লোকের অন্তর্ভুক্ত, যাদের অবস্থা হবে অতি মন্দ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি এই পৃথিবীতে অভিশাপকে তাদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি এবং কেয়ামতের দিন তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই পৃথিবীতে আমি এদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন এরা হবে ঘৃণিত।


৪৩


وَلَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَاۤ اَہۡلَکۡنَا الۡقُرُوۡنَ الۡاُوۡلٰی بَصَآئِرَ لِلنَّاسِ وَہُدًی وَّرَحۡمَۃً لَّعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ


ওয়া লাকাদ আ-তাইনা-মূছাল কিতা-বা মিম বা‘দি মাআহলাকনাল কুরূনাল ঊলাবাসাইরা লিন্না-ছি ওয়াহুদাওঁ ওয়া রাহমাতাল লা‘আল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে ধ্বংস করার পর মূসাকে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব, যা ছিল মানুষের জন্য জ্ঞান-তত্ত্বসমৃদ্ধ এবং হেদায়াত ও রহমত, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পর মূসাকে কিতাব দিয়েছি মানুষের জন্যে জ্ঞানবর্তিকা। হেদায়েত ও রহমত, যাতে তারা স্মরণ রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো পূর্ববর্তী বহু মানবগোষ্ঠীকে বিনাশ করার পর মূসাকে দিয়েছিলাম কিতাব, মানবজাতির জন্যে জ্ঞানবর্তিকা, পথনির্দেশ ও অনুগ্রহস্বরূপ, যাতে এরা উপদেশ গ্রহণ করে।


তাফসীরঃ

২৯. এর দ্বারা তাওরাত গ্রন্থ বোঝানো হয়েছে।


৪৪


وَمَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الۡغَرۡبِیِّ اِذۡ قَضَیۡنَاۤ اِلٰی مُوۡسَی الۡاَمۡرَ وَمَا کُنۡتَ مِنَ الشّٰہِدِیۡنَ ۙ


ওয়ামা-কুনতা বিজানিবিল গারবিইয়ি ইযকাদাইনাইলা- মূছাল আমরা ওয়ামা- কুনতা মিনাশশা-হিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) আমি যখন মূসার উপর বিধানাবলী অর্পণ করেছিলাম, তখন তুমি (তূর পাহাড়ের) পশ্চিম পার্শ্বে উপস্থিত ছিলে না এবং যারা তা প্রত্যক্ষ করছিল, তুমি তাদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলে না। ৩০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসাকে যখন আমি বিধান দিয়েছিলাম তখন তুমি পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না এবং তুমি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলে না।


তাফসীরঃ

৩০. এখান থেকে ৬১নং পর্যন্ত আয়াতসমূহে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কুরআন মাজীদের সত্যতা প্রমাণ করা উদ্দেশ্য। প্রথম দলীল দেওয়া হয়েছে এই যে, কুরআন মাজীদে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের বহু ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেমন তূর পাহাড়ের পশ্চিম পার্শ্বে তাঁকে তাওরাত দান করা, সিনাই মরুভূমিতে তাঁকে ডেকে নবুওয়াত দান করা, দীর্ঘকাল মাদইয়ানে অবস্থান, সেখানে তাঁর বিবাহ ও তারপর মিসরে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি। এসব ঘটনা যখন ঘটে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং তিনি এসবের প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না, তাছাড়া এগুলো জানার মত কোন মাধ্যমও তাঁর কাছে ছিল না। তা সত্ত্বেও এমন বিস্তারিত ও যথাযথভাবে তিনি এগুলো বর্ণনা করেছেন কি করে? এর জবাব এ ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না যে, তাঁর কাছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হয়েছে এবং সেই সূত্রে অবগত হয়েই তিনি এসব মানুষকে জানিয়েছেন। সুতরাং তিনি একজন সত্য নবী এবং কুরআন মাজীদও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এক সত্য কিতাব।


৪৫


وَلٰکِنَّاۤ اَنۡشَاۡنَا قُرُوۡنًا فَتَطَاوَلَ عَلَیۡہِمُ الۡعُمُرُ ۚ وَمَا کُنۡتَ ثَاوِیًا فِیۡۤ اَہۡلِ مَدۡیَنَ تَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِنَا ۙ وَلٰکِنَّا کُنَّا مُرۡسِلِیۡنَ


ওয়ালা-কিন্না আনশা’না-কুরূনান ফাতাতা-ওয়ালা ‘আলাইহিমুল ‘উমুরু ওয়ামা-কুনতা ছা-বিয়ান ফীআহলি মাদইয়ানা তাতলূ‘আলাইহিম আ-য়া-তিনা- ওয়া লা-কিন্নাকুন্না-মুরছিলীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত আমি তাদের পর বহু মানবগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছি, যাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে এবং তুমি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলে না যে, তাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনাবে; বরং আমিই (তোমাকে) রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিন্তু আমি অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছে। আর আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতেন। কিন্তু আমিই ছিলাম রসূল প্রেরণকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বস্তুত আমি অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম ; এরপর এদের বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে। তুমি তো মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বিদ্যমান ছিলে না এদের নিকট আমার আয়াত আবৃত্তি করার জন্যে। আমিই তো ছিলাম রাসূল প্রেরণকারী।


৪৬


وَمَا کُنۡتَ بِجَانِبِ الطُّوۡرِ اِذۡ نَادَیۡنَا وَلٰکِنۡ رَّحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ لِتُنۡذِرَ قَوۡمًا مَّاۤ اَتٰىہُمۡ مِّنۡ نَّذِیۡرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ


ওয়ামা-কুনতা বিজা-নিবিততূরি ইয না-দাইনা-ওয়ালা-কির রাহমাতাম মির রাব্বিকা লিতুনযিরা কাওমাম মাআতা-হুম মিন নাযীরিম মিন কাবলিকা লা‘আল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি যখন (মূসাকে) ডাক দিয়েছিলাম তখন তুমি তূর পাহাড়ের পাদদেশে উপস্থিত ছিলে না। বস্তুত এটা তোমার প্রতিপালকের রহমত (যে, তোমাকে ওহীর মাধ্যমে এসব বিষয় অবহিত করা হচ্ছে) যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের কাছে তোমার আগে কোন সতর্ককারী আসেনি। হয়ত তারা উপদেশ গ্রহণ করবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন না। কিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আগমন করেনি, যাতে তারা স্মরণ রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসাকে যখন আমি আহ্বান করেছিলাম তখন তুমি ত‚র পর্বতপার্শ্বে উপস্থিত ছিলে না। বস্তুত এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে দয়াস্বরূপ, যাতে তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পার, যাদের নিকট তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসে নাই, যেন এরা উপদেশ গ্রহণ করে ;


৪৭


وَلَوۡلَاۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُوۡا رَبَّنَا لَوۡلَاۤ اَرۡسَلۡتَ اِلَیۡنَا رَسُوۡلًا فَنَتَّبِعَ اٰیٰتِکَ وَنَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ


ওয়া লাওলাআন তুসীবাহুম মুসীবাতুম বিমা-কাদ্দামাত আইদীহিম ফাইয়াকূলূরাব্বানালাওলাআরছালতা ইলাইনা-রাছূলান ফানাত্তাবি‘আ আ-য়া-তিকা ওয়া নাকূনা মিনাল মু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তাদের কৃতকার্যের কারণে তাদের উপর কোন মুসিবত আসলে তারা যাতে বলতে না পারে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠালেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াতসমূহ অনুসরণ করতাম এবং আমরাও ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর এ জন্য যে, তাদের কৃতকর্মের জন্যে তাদের কোন বিপদ হলে তারা বলত, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে কোন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম এবং আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়ে যেতাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

রাসূল না পাঠালে এদের কৃতকর্মের জন্যে এদের কোন বিপদ হলে এরা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের নিকট কোন রাসূল প্রেরণ করলে না কেন ? করলে আমরা তোমার বিধান মেনে চলতাম এবং আমরা হতাম মু’মিন।’


৪৮


فَلَمَّا جَآءَہُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡا لَوۡلَاۤ اُوۡتِیَ مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی ؕ اَوَلَمۡ یَکۡفُرُوۡا بِمَاۤ اُوۡتِیَ مُوۡسٰی مِنۡ قَبۡلُ ۚ قَالُوۡا سِحۡرٰنِ تَظٰہَرَا ۟ٝ وَقَالُوۡۤا اِنَّا بِکُلٍّ کٰفِرُوۡنَ


ফালাম্মা-জাআহুমুল হাক্কুমিন ‘ইনদিনা কা-লূলাওলা ঊতিয়া মিছলা মাঊতিয়া মূছা- আওয়ালাম ইয়াকফুরূবিমাঊতিয়া মূছা-মিন কাবলু কা-লূছিহরা-নি তাজাহারা- ওয়া কা-লূইন্না-বিকুল্লিন কা-ফিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর যখন তাদের কাছে আমার পক্ষ হতে সত্য এসে গেল, তখন তারা বলতে লাগল, মূসা (আলাইহিস সালাম)কে যেমনটা দেওয়া হয়েছিল, সে রকম জিনিস একে (অর্থাৎ এই রাসূলকে) কেন দেওয়া হল না? ৩১ পূর্বে মূসাকে যা দেওয়া হয়েছিল, তারা কি পূর্বেই তা প্রত্যাখ্যান করেনি? তারা বলেছিল, এ দুটোই যাদু, যার একটি অন্যটিকে সমর্থন করে। আমরা এর প্রত্যেকটিই অস্বীকার করি। ৩২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমার কাছ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য আগমন করল, তখন তারা বলল, মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, এই রসূলকে সেরূপ দেয়া হল না কেন? পূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল, তারা কি তা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিল, উভয়ই জাদু, পরস্পরে একাত্ম। তারা আরও বলেছিল, আমরা উভয়কে মানি না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর যখন আমার নিকট হতে এদের নিকট সত্য এলো, এরা বলতে লাগল, ‘মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, তাকে সেরূপ দেওয়া হল না কেন ?’ কিন্তু পূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি এরা অস্বীকার করে নাই ? এরা বলেছিল, ‘দুইটিই জাদু, একে অপরকে সমর্থন করে।’ এবং এরা বলেছিল, ‘আমরা সকলকেই প্রত্যাখ্যান করি।’


তাফসীরঃ

৩১. অর্থাৎ যখন তাওরাত সম্পর্কে তারা জানতে পেরেছিল তা মূর্তিপূজার বিরোধিতা করে এবং এমন সব আলামত বর্ণনা করে, যা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতকে প্রমাণ করে, তখন সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং বলেছিল তাওরাত ও কুরআন দুটোই যাদুর বই (নাউযুবিল্লাহ), যার একটি অন্যটিকে সমর্থন করে। তাই আমরা সবটাই অস্বীকার করি। -অনুবাদক


৩২. অর্থাৎ, হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে সম্পূর্ণ তাওরাত যেমন একবারেই দেওয়া হয়েছিল, তেমনিভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সম্পূর্ণ কুরআন কেন একেবারেই নাযিল করা হল না? সামনে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে, তোমরা তাওরাতের প্রতি কতটুকু ঈমান এনেছিলে যে, কুরআন সম্পর্কে এরূপ দাবি করছ?


৪৯


قُلۡ فَاۡتُوۡا بِکِتٰبٍ مِّنۡ عِنۡدِ اللّٰہِ ہُوَ اَہۡدٰی مِنۡہُمَاۤ اَتَّبِعۡہُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ


কুল ফা’তূবিকিতা-বিম মিন ‘ইনদিল্লা-হি হুওয়া আহদা-মিনহুমাআত্তাবি‘হু ইন কুনতুম সাদিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তাদেরকে) বল, আচ্ছা, তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আল্লার পক্ষ থেকে এমন কোন কিতাব আনয়ন কর, যা এ দু’টি অপেক্ষা বেশি হেদায়াত সম্বলিত। তাহলে আমি তার অনুসরণ করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়। আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহ্ র নিকট হতে এক কিতাব আনয়ন কর, যা পথনির্দেশে এতদুভয় হতে উৎকৃষ্টতর হবে ; আমি সে কিতাব অনুসরণ করব।’


৫০


فَاِنۡ لَّمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَکَ فَاعۡلَمۡ اَنَّمَا یَتَّبِعُوۡنَ اَہۡوَآءَہُمۡ ؕ  وَمَنۡ اَضَلُّ مِمَّنِ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ بِغَیۡرِ ہُدًی مِّنَ اللّٰہِ ؕ  اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ٪


ফাইল লাম ইয়াছতাজীবূলাকা ফা‘লাম আন্নামা-ইয়াত্তাবি‘ঊনা আহওয়া-আহুম ওয়ামান আদালুল মিম মানিত্তাবা‘আ হাওয়া -হু বিগাইরি হুদাম মিনাল্লা-হি ইন্নাল্লা-হা লা-ইয়াহদিল কাওমাজ্জা-লিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা যদি তোমার ফরমায়েশ মত কাজ না করে, তবে বুঝবে, তারা মূলত তাদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ হতে আগত হেদায়াত ছাড়া কেবল নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দান করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর এরা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তা হলে জানিবে এরা তো কেবল নিজেদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে। আল্লাহ্ র পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে তা অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে ? আল্লাহ্ জালিম সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না।


৫১


وَلَقَدۡ وَصَّلۡنَا لَہُمُ الۡقَوۡلَ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ ؕ


ওয়ালাকাদ ওয়াসসালনা-লাহুমুল কাওলা লা‘আল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা এক বাস্তবতা যে, আমি তাদের কল্যাণার্থে একের পর এক (উপদেশ) বাণী পাঠাতে থাকি, ৩৩ যাতে তারা সতর্ক হয়ে যায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদের কাছে উপর্যুপরি বাণী পৌছিয়েছি। যাতে তারা অনুধাবন করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো এদের নিকট পরপর বাণী পৌঁছে দিয়েছি; যাতে এরা উপদেশ গ্রহণ করে।


তাফসীরঃ

৩৩. সম্পূর্ণ কুরআন কেন একবারেই নাযিল করা হল না? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে যে, কুরআন মাজীদকে অল্প-অল্প নাযিল করা হয়েছে তোমাদেরই কল্যাণার্থে। কেননা এর ফলে তোমাদের প্রতিটি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত দিক-নির্দেশনা করা সম্ভব হয়েছে। তাছাড়া একের পর এক উপদেশ-বাণী নাযিলের ফলে তোমরা সত্য সম্পর্কে তাজা-তাজা চিন্তা করার ফুরসত পেয়েছে এবং এভাবে তোমাদেরকে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, কোনও একটা কথা তো কবুল করে নাও!


৫২


اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِہٖ ہُمۡ بِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ


আল্লাযীনা আ-তাইনা-হুমুল কিতা-বা মিন কাবলিহী হুম বিহী ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি কুরআনের আগে যাদেরকে আসমানী কিতাব দিয়েছি, তারা এর (অর্থাৎ কুরআনের) প্রতি ঈমান আনে। ৩৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কোরআনের পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটার পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা এতে বিশ্বাস করে।


তাফসীরঃ

৩৪. এটা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কুরআন মাজীদের সত্যতার আরেকটি দলীল। বলা হয়েছে, পূর্বে যাদেরকে আসমানী কিতাব দেওয়া হয়েছিল, সেই ইয়াহুদী খ্রিস্টানদের মধ্যকার সত্যের সন্ধানীগণ এর প্রতি ঈমান এনেছে। তারা স্বীকার করেছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাব ও কুরআন মাজীদের অবতরণ অপ্রত্যাশিত ব্যাপার নয়। পূর্বের কিতাবসমূহে এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের আগে থেকেই তারা তাঁকে ও কুরআন মাজীদকে স্বীকার করত।


৫৩


وَاِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِہٖۤ اِنَّہُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّنَاۤ اِنَّا کُنَّا مِنۡ قَبۡلِہٖ مُسۡلِمِیۡنَ


ওয়া ইযা-ইউতলা-‘আলাইহিম কা-লূআ-মান্না-বিহীইন্নাহুল হাক্কুমির রাব্বিনাইন্না-কুন্না-মিন কাবলিহী মুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদেরকে যখন তা পড়ে শোনানো হয়, তখন বলে আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম। নিশ্চয়ই এটা সত্য বাণী, যা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এসেছে। আমরা তো এর আগেও অনুগত ছিলাম। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। এটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য। আমরা এর পূর্বেও আজ্ঞাবহ ছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এদের নিকট এটা আবৃত্তি করা হয় তখন এরা বলে, ‘আমরা এতে ঈমান আনি, নিশ্চয়ই এটা আমাদের প্রতিপালক হতে আগত সত্য। আমরা তো পূর্বেও আত্মসমর্পণকারী ছিলাম;


তাফসীরঃ

৩৫. অর্থাৎ কুরআন নাযিল হওয়ার আগেও আমরা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিলাম, তাঁর আনুগত্য করতাম এবং বিশ্বাস করতাম শেষ নবীরূপে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব হবে, যার প্রতি শেষ কিতাব কুরআন মাজীদ নাযিল করা হবে। -অনুবাদক


৫৪


اُولٰٓئِکَ یُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَہُمۡ مَّرَّتَیۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَیَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ


উলাইকা ইউ’তাওনা আজরাহুম মাররাতাইনি বিমা-সাবারূওয়া ইয়াদরাঊনা বিলহাছানাতিছ ছাইয়িআতা ওয়া মিম্মা-রাঝাকনা-হুম ইউনফিকূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরূপ ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে দ্বিগুণ। কেননা তারা সবর অবলম্বন করেছে, ৩৬ তারা মন্দকে প্রতিহত করে ভালোর দ্বারা ৩৭ এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছে, তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণে। তারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে দুইবার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে, যেহেতু এরা ধৈর্যশীল এবং এরা ভাল দিয়ে মন্দের মুকাবিলা করে ও আমি এদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে এরা ব্যয় করে।


তাফসীরঃ

৩৬. অর্থাৎ, তাদের সাথে কেউ মন্দ আচরণ করলে তার বিপরীতে তারা ভালো আচরণ করে।


৩৭. পূর্বে থেকে যে ব্যক্তি কোন একটি দীন অনুসরণ করে এবং এক আসমানী কিতাবের অনুসারী হওয়ার কারণে সে গর্বিতও বটে, তার পক্ষে নতুন কোন দীন গ্রহণ করা নিশ্চয়ই কঠিন কাজ। এক তো এ কারণে যে, মানুষের পক্ষে তার পুরানো অভ্যাস ছাড়া কঠিন হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত স্বধর্মীয়গণ বিরোধিতা করে ও জুলুম-নির্যাতন চালায়। সে জুলুম-নির্যাতনকে অগ্রাহ্য করে সত্য দীনকে মেনে নেওয়ার সৎ সাহস সকলে দেখাতে পারে না, কিন্তু যে সকল সত্যসন্ধানী ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান সে সৎ সাহস দেখাতে পেরেছে, সকল জুলুম-নির্যাতনের মুখে সবরের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে ও সত্যের উপর অবিচলিত থেকেছে, তারা দ্বিগুণ সওয়াব লাভ করবে।


৫৫


وَاِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡہُ وَقَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَلَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ ۫ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۫ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰہِلِیۡنَ


ওয়া ইযা-ছামি‘উল লাগওয়া আ‘রাদূ ‘আনহু ওয়া কা-লূলানাআ‘মা-লুনা-ওয়ালাকুম আ‘মা-লুকুম ছালা-মুন ‘আলাইকুম লা-নাবতাগিল জা-হিলীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা যখন কোন বেহুদা কথা শোনে, তা এড়িয়ে যায় এবং বলে, আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদেরকে সালাম। ৩৮ আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা যখন অসার বাক্য শোনে তখন এরা তা উপেক্ষা করে চলে এবং বলে, ‘আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্যে এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্যে ; তোমাদের প্রতি ‘সালাম’। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাহি না।’


তাফসীরঃ

৩৮. অর্থাৎ, আমরা তোমাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়াতে চাই না। দোয়া করি, আল্লাহ তাআলা যেন তোমাদেরকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দেন এবং সেই সুবাদে তোমরা নিরাপত্তা লাভ কর।


৫৬


اِنَّکَ لَا تَہۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَلٰکِنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ


ইন্নাকা লা-তাহদী মান আহবাবতা ওয়ালাকিন্নাল্লা-হা ইয়াহদী মাইঁ ইয়াশাঊ ওয়া হুওয়া আ‘লামুবিলমুহতাদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) সত্যি কথা হল, তুমি নিজে যাকে ইচ্ছা করবে তাকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করতে পারবে না; বরং আল্লাহ যাকে চান হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন। কারা হেদায়াত কবুল করবে তা তিনিই ভালো জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেন তাকে সৎপথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহ্ই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎপথ অনুসারীদেরকে।


৫৭


وَقَالُوۡۤا اِنۡ نَّتَّبِعِ الۡہُدٰی مَعَکَ نُتَخَطَّفۡ مِنۡ اَرۡضِنَا ؕ اَوَلَمۡ نُمَکِّنۡ لَّہُمۡ حَرَمًا اٰمِنًا یُّجۡبٰۤی اِلَیۡہِ ثَمَرٰتُ کُلِّ شَیۡءٍ رِّزۡقًا مِّنۡ لَّدُنَّا وَلٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ


ওয়া কা-লূইন নাত্তাবি‘ইল হুদা-মা‘আকা নুতাখাততাফ মিন আরদিনা- আওয়ালাম নুমাক্কিল লাহুম হারামান আ-মিনাইঁ ইউজবাইলাইহি ছামারা-তুকুল্লি শাইইররিঝকাম মিল্লাদুন্না-ওয়ালা-কিন্না আকছারাহুম লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলে, আমরা যদি তোমার সাথে হেদায়াতের অনুসরণ করি, তবে আমাদেরকে নিজ ভূমি থেকে উৎখাত করা হবে। ৩৯ আমি কি তাদেরকে এমন এক নিরাপদ হরমে প্রতিষ্ঠিত করিনি, যেখানে আমার পক্ষ হতে প্রদত্ত রিযকস্বরূপ সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী করা হয়? কিন্তু তাদের অধিকাংশেই জানে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলে, যদি আমরা আপনার সাথে সুপথে আসি, তবে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হব। আমি কি তাদের জন্যে একটি নিরাপদ হরম প্রতিষ্ঠিত করিনি? এখানে সর্বপ্রকার ফল-মূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলে, ‘আমরা যদি তোমার সঙ্গে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ হতে উৎখাত করা হবে।’ আমি কি এদেরকে এক নিরাপদ হারামে প্রতিষ্ঠিত করি নাই, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমার দেওয়া রিযিক স্বরূপ ? কিন্তু এদের অধিকাংশই এটা জানে না।


তাফসীরঃ

৩৯. কোন কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ না করার পক্ষে এই অজুহাত দেখাত যে, ইসলাম গ্রহণ করলে সারা আরববাসী আমাদের বিরোধী হয়ে যাবে। তারা এ যাবৎকাল আমাদেরকে যে ইজ্জত-সম্মান করে আসছে, তা তো ছেড়ে দেবেই, উল্টো তারা লুটতরাজ চালিয়ে আমাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে আমাদের বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করেও ছাড়বে। কুরআন মাজীদ তাদের এ কথার তিনটি উত্তর দিয়েছে। প্রথম উত্তর তো এ আয়াতেই দেওয়া হয়েছে যে, তারা কাফের হওয়া সত্ত্বেও আমি তাদেরকে পবিত্র হরমের ভেতর নিরাপদ রেখেছি। সারা আরবের সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতি চলছে, সব জায়গায় মারামারি-হানাহানি, কিন্তু হরমের ভেতর যারা বাস করছে তাদেরকে কেউ কিছু বলে না। পরন্তু চারদিক থেকে তাদের কাছে সব রকমের ফলমূল অবাধে আমদানী হচ্ছে এবং তারা তা নির্বিঘ্নে খাচ্ছে-দাচ্ছে। হরমের দিকে যারা মালামাল নিয়ে আসে, তারাও কোন রকম লুণ্ঠনের শিকার হয় না। কুফর সত্ত্বেও যখন আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এতটা নিরাপত্তা দান করেছেন, তখন ঈমান আনার পর বুঝি তোমাদের এ নিরাপত্তা তিনি তুলে নিবেন এবং তখন তিনি তোমাদের হেফাজত করবেন না? ৫৮নং আয়াতে দ্বিতীয় উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, ধ্বংস ও বিপর্যয় তো আসে আল্লাহ তাআলার নাফরমানী করার ফলে। তোমাদের পূর্বে যে সকল জাতি নাফরমানী করেছে শেষ পর্যন্ত তারা ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা ঈমান এনেছিল তাদের কিছুই হয়নি। দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই তারা সফলতা লাভ করেছে। সবশেষে ৬০নং আয়াতে তৃতীয় উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম গ্রহণের কারণে ইহকালে যদি তোমাদের কিছুটা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়ও, তাতে এত ভয় কেন? আখেরাতের দুর্ভোগের তুলনায় এ কষ্ট কোন হিসেবেই আসে না।


৫৮


وَکَمۡ اَہۡلَکۡنَا مِنۡ قَرۡیَۃٍۭ بَطِرَتۡ مَعِیۡشَتَہَا ۚ فَتِلۡکَ مَسٰکِنُہُمۡ لَمۡ تُسۡکَنۡ مِّنۡۢ بَعۡدِہِمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا ؕ وَکُنَّا نَحۡنُ الۡوٰرِثِیۡنَ


ওয়া কাম আহ লাকনা-মিন কারইয়াতিম বাতিরাত মা‘ঈশাতাহা- ফাতিলকা মাছাকিনুহুম লাম তুছকাম মিম বা‘দিহিম ইল্লা-কালীলাওঁ ওয়া কুন্না-নাহনুল ওয়া-রিছীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি এমন কত জনপদ ধ্বংস করেছি, যার বাসিন্দাগণ তাদের অর্থ-সম্পদের বড়াই করত। ওই তো তাদের বাস্তুভিটা (যা তোমাদের সামনে রয়েছে), তাদের পর সামান্য কিছুকাল ছাড়া তা আর আবাদ হতে পারেনি। ৪০ আমিই হয়েছি তার উত্তরাধিকারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি অনেক জনপদ ধবংস করেছি, যার অধিবাসীরা তাদের জীবন যাপনে মদমত্ত ছিল। এগুলোই এখন তাদের ঘর-বাড়ী। তাদের পর এগুলোতে মানুষ সামান্যই বসবাস করেছে। অবশেষে আমিই মালিক রয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কত জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি যার বাসিন্দারা নিজেদের ভোগ-সম্পদের দম্ভ করত! এগুলিই তো এদের ঘরবাড়ি ; এদের পর এইগুলিতে লোকজন সামান্যই বসবাস করেছে। আর আমি তো চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী !


তাফসীরঃ

৪০. অর্থাৎ ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার পর সেসব জনপদে স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠেনি, যারা কুদরতের নিদর্শন ও নাফরমানির দৃষ্টান্তমূলক পরিণাম দেখার জন্য সেখানে যায় কিংবা যাতায়াত পথে যে ভ্রমণকারীরা যাত্রাবিরতি দেয় কেবল তারাই দু-এক দিন বা আরও অল্প সময়ের জন্য সেখানে অবস্থান করে। -অনুবাদক


৫৯


وَمَا کَانَ رَبُّکَ مُہۡلِکَ الۡقُرٰی حَتّٰی یَبۡعَثَ فِیۡۤ اُمِّہَا رَسُوۡلًا یَّتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِنَا ۚ وَمَا کُنَّا مُہۡلِکِی الۡقُرٰۤی اِلَّا وَاَہۡلُہَا ظٰلِمُوۡنَ


ওয়ামা-কা-না রাব্বুকা মুহলিকাল কুরা-হাত্তা-ইয়াব‘আছা ফীউম্মিহা-রাছূলাইঁ ইয়াতলূ ‘আলাইহিম আ-য়া-তিনা- ওয়ামা-কুন্না-মুহলিকিল কুরাইল্লা-ওয়া আহলুহা-জালিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক এমন নন যে, তিনি জনপদসমূহকে ধ্বংস করে দিবেন তার কেন্দ্রভূমিতে আমার আয়াতসমূহ তাদেরকে পড়ে শোনানোর জন্য কোন রাসূল প্রেরণ না করেই। আমি জনপদসমূহ কেবল তখনই ধ্বংস করি যখন তার বাসিন্দাগণ জালেম হয়ে যায়। ৪১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না এর কেন্দ্রে তাঁর আয়াত আবৃত্তি করার জন্যে রাসূল প্রেরণ না করে এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি যখন এটার বাসিন্দারা জুলুম করে।


তাফসীরঃ

৪১. ইসলাম গ্রহণ না করার পক্ষে কাফেরদের প্রদর্শিত অজুহাতের যে তিনটি উত্তর দেওয়া হয়েছে, তার মাঝখানে এ আয়াতে তাদের একটি প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা বলত, আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের ধর্ম ও কর্মপন্থা অপছন্দ করে থাকেন তবে যেসব জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মত আমাদেরকেও কেন ধ্বংস করছেন না? এর জবাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করছেন, বিষয়টা এমন নয় যে, মানুষকে ধ্বংস করে আল্লাহ তাআলা খুব মজা পান (নাউযুবিল্লাহ)। তিনি মানুষকে ধ্বংস করেন কেবল তখনই, যখন তারা জুলুমের শেষ সীমায় পৌঁছে যায়। তার আগে তিনি তাদেরকে শুধরে যাওয়ার সব রকম ব্যবস্থা করেন। সর্বপ্রথম তিনি তাদের কেন্দ্রস্থলে কোন রাসূল পাঠান। রাসূল তাদেরকে সরল-সঠিক পথের দাওয়াত দেন। তিনি বারবার তাদেরকে ডাকতে ও সমঝাতে থাকেন, যাতে তারা কোনও ক্রমে সরল পথে এসে যায় এবং তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার কোন প্রয়োজন না থাকে। যদি তারা রাসূলের ডাকে সাড়া দেয় ও গোমরাহী কার্যকলাপ থেকে নিবৃত্ত হয়, তবে তাদেরকে ধ্বংস করা হয় না। পক্ষান্তরে তারা যদি জিদ ধরে বসে থাকে এবং রাসূলের ডাকে সাড়া না দিয়ে নিজেদের স্বৈরাচারী কার্যকলাপ অব্যাহত রাখে, তবে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার এ নীতিই কার্যকর ছিল এবং তোমাদের ক্ষেত্রেও তাই বলবৎ আছে। আমার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সত্যের পথে ডেকে যাচ্ছেন এবং তোমাদেরকে তাতে সাড়া দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে। এখন সেই সুযোগকে কাজে না লাগিয়ে তোমরা যদি উল্টো বুঝ বোঝ এবং মনে কর তিনি তোমাদের উপর খুশী এবং তিনি কখনওই তোমাদেরকে শাস্তি দিবেন না, তবে সেটা হবে তোমাদের চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।


৬০


وَمَاۤ اُوۡتِیۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَمَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَزِیۡنَتُہَا ۚ  وَمَا عِنۡدَ اللّٰہِ خَیۡرٌ وَّاَبۡقٰی ؕ  اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ٪


ওয়ামাঊতীতুম মিন শাইয়িন ফামাতা-‘উল হায়া-তিদদুনইয়া-ওয়াঝীনাতুহা- ওয়ামা‘ইনদাল্লা-হি খাইরুওঁ ওয়া আব কা- আফালা-তা‘কিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদেরকে যা-কিছুই দেওয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের পুঁজি ও তার শোভা। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা উত্তম ও স্থায়ী। তথাপি কি তোমরা বুদ্ধিকে কাজে লাগাবে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা বৈ নয়। আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বোঝ না ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা এবং যা আল্লাহ্ র নিকট আছে তা উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবে না ?


৬১


اَفَمَنۡ وَّعَدۡنٰہُ وَعۡدًا حَسَنًا فَہُوَ لَاقِیۡہِ کَمَنۡ مَّتَّعۡنٰہُ مَتَاعَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ثُمَّ ہُوَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ مِنَ الۡمُحۡضَرِیۡنَ


আফামাওঁ ওয়া ‘আদানা-হুওয়া‘দানহাছানান ফাহুওয়া লা-কীহি কামাম মাত্তা‘না-হুমাতা‘আল হায়া-তিদদুনইয়া-ছুম্মা হুওয়া ইয়াওমাল কিয়া-মাতি মিনাল মুহদারীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আচ্ছা বল তো আমি যাকে উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, অতঃপর সে তা অবশ্যই লাভ করবে, সে কি সেই ব্যক্তির সমান হতে পারে, যাকে আমি পার্থিব জীবনের কিছুটা ভোগ-উপকরণ দিয়েছি, অতঃপর কিয়ামতের দিন সে হবে সেই সব লোকের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে ধৃত করে আনা হবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, অতঃপর তাকে কেয়ামতের দিন অপরাধীরূপে হাযির করা হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাকে আমি উত্তম পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, যাকে পরে কিয়ামতের দিন হাযির করা হবে ?


৬২


وَیَوۡمَ یُنَادِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُ اَیۡنَ شُرَکَآءِیَ الَّذِیۡنَ کُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

ওয়া ইয়াওমা ইউনা-দীহিম ফাইয়াকূলুআইনা শুরাকাই ইয়াল্লাযীনা কুনতুম তাঝ‘উমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিন (-কে কখনও ভুলো না), যখন আল্লাহ তাদেরকে ডাক দিয়ে বলবেন, কোথায় আমার (প্রভুত্বের) অংশীদারগণ, যাদের (অংশীদার হওয়ার) দাবি তোমরা করতে? ৪২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে আওয়াজ দিয়ে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক দাবী করতে, তারা কোথায়?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং সেই দিন তিনি এদেরকে আহ্বান করে বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক গণ্য করতে, তারা কোথায় ?’


তাফসীরঃ

৪২. এর দ্বারা সেই সকল শয়তানকে বোঝানো হয়েছে, যাদেরকে কাফেরগণ নিজেদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছিল।


৬৩


قَالَ الَّذِیۡنَ حَقَّ عَلَیۡہِمُ الۡقَوۡلُ رَبَّنَا ہٰۤؤُلَآءِ الَّذِیۡنَ اَغۡوَیۡنَا ۚ اَغۡوَیۡنٰہُمۡ کَمَا غَوَیۡنَا ۚ تَبَرَّاۡنَاۤ اِلَیۡکَ ۫ مَا کَانُوۡۤا اِیَّانَا یَعۡبُدُوۡنَ


কা-লাল্লাযীনা হাক্কা ‘আলাইহিমুল কাওলুরাব্বানা-হাউলাইল্লাযীনা আগওয়াইনা- আগওয়াইনা-হুম কামা-গাওয়াইনা- তাবাররা’নাইলাইকা মা-কা-নূইয়্যানা-ইয়া‘বুদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাদের বিরুদ্ধে (আল্লাহর) বাণী চূড়ান্ত হয়ে গেছে, ৪৩ তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই তারা যাদেরকে আমরা বিপথগামী করেছিলাম, তাদেরকে বিপথগামী করেছিলাম সেভাবেই, যেমন আমরা নিজেরা বিপথগামী হয়েছিলাম। ৪৪ আমরা আপনার সামনে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘোষণা করছি। বস্তুত তারা আমাদের ইবাদত করত না। ৪৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা। এদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলাম। আমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, যেমন আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম। আমরা আপনার সামনে দায়মুক্ত হচ্ছি। তারা কেবল আমাদেরই এবাদত করত না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাদের জন্যে শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক ! এদেরকেই আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম ; এদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম ; আপনার সমীপে আমরা দায়িত্ব হতে অব্যাহতি চাইতেছি। এরা তো আমাদের ‘ইবাদত করত না।’


তাফসীরঃ

৪৩. এর দ্বারাও কাফেরদের সেই সকল শয়তান উপাস্যদের বোঝানো হয়েছে, যাদেরকে তারা উপকার ও অপকার করার এখতিয়ারসম্পন্ন মনে করত, ‘আল্লাহর বাণী চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া’-এর অর্থ তাঁর এই ইরশাদ যে, যে সকল শয়তান অন্যদেরকে বিপথগামী করবে তাদেরকে পরিণামে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলার সেই ফরমান মোতাবেক যখন শয়তানদের জাহান্নামে যাওয়ার সময় এসে যাবে তখন তারা একথা বলবে, যা পরবর্তী বাক্যে বিবৃত হয়েছে।


৪৪. অর্থাৎ, আমরা যেমন নিজ ইচ্ছাক্রমে বিপথগামিতা অবলম্বন করেছিলাম, তেমনি তারাও বিপথগামিতা বেছে নিয়েছিল নিজেদের ইচ্ছাতেই। নচেৎ তাদের উপর আমাদের এমন কোন কর্তৃত্ব ছিল না যে, তারা আমাদের কথা মানতে বাধ্য থাকবে।


৪৫. অর্থাৎ, প্রকৃতপক্ষে তারা আমাদের ইবাদত করত না; বরং তারা নিজ খেয়াল-খুশীরই দাসত্ব করত।


৬৪


وَقِیۡلَ ادۡعُوۡا شُرَکَآءَکُمۡ فَدَعَوۡہُمۡ فَلَمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَہُمۡ وَرَاَوُا الۡعَذَابَ ۚ لَوۡ اَنَّہُمۡ کَانُوۡا یَہۡتَدُوۡنَ


ওয়া কীলাদ‘ঊ শুরাকাআকুম ফাদা‘আওহুম ফালাম ইয়াছতাজীবূলাহুম ওয়ারাআউল ‘আযা-বা লাও আন্নাহুম কা-নূইয়াহতাদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তাদেরকে (অর্থাৎ কাফেরদেরকে) বলা হবে, তোমরা যাদেরকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছিলে তাদেরকে ডাক। সুতরাং তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। তারা তখন শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। আহা! যদি তারা হেদায়াত কবুল করত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলা হবে, তোমরা তোমাদের শরীকদের আহবান কর। তখন তারা ডাকবে,। অতঃপর তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা আযাব দেখবে। হায়! তারা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে বলা হবে, ‘তোমাদের দেবতাগুলিকে আহ্বান কর।’ তখন এরা এদেরকে ডাকবে। কিন্তু এরা এদের ডাকে সাড়া দিবে না। এরা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। হায়! এরা যদি সৎপথ অনুসরণ করত।


৬৫


وَیَوۡمَ یُنَادِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُ مَاذَاۤ اَجَبۡتُمُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ


ওয়া ইয়াওমা ইউনা-দীহিম ফাইয়াকূলুমা-যাআজাবতুমুল মুরছালীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিন (-কে কিছুতেই ভুলো না) যখন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা নবীগণকে কী উত্তর দিয়েছিলে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে দিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রসূলগণকে কি জওয়াব দিয়েছিলে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর সেই দিন আল্লাহ্ এদেরকে ডাকিয়া বলবেন, ‘তোমরা রাসূলগণকে কী জবাব দিয়েছিলে ?’


৬৬


فَعَمِیَتۡ عَلَیۡہِمُ الۡاَنۡۢبَآءُ یَوۡمَئِذٍ فَہُمۡ لَا یَتَسَآءَلُوۡنَ


ফা‘আমিয়াত ‘আলাইহিমুল আমবাউ ইয়াওমায়িযিন ফাহুম লা-ইয়াতাছাআলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে দিন যাবতীয় সংবাদ (যা তারা নিজেদের পক্ষ হতে তৈরি করত) বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ৪৬ ফলে তারা একে অন্যকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তাদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাবে এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন সকল তথ্য তাদের নিকট হতে বিলুপ্ত হবে এবং এরা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারবে না।


তাফসীরঃ

৪৬. অর্থাৎ তারা অন্তসারশূন্য যে-সব দলীল-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্ক খাড়া করত, তার কিছুই তাদের মনে পড়বে না। সব বিষয়ে তারা গভীর অন্ধকারে পড়ে যাবে। কী বলবে তা বুঝতে পারবে না। ভয়-বিহ্বলতায় নিজেদের মধ্যেও একে অন্যকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারবে না। -অনুবাদক


৬৭


فَاَمَّا مَنۡ تَابَ وَاٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَعَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنَ مِنَ الۡمُفۡلِحِیۡنَ


ফাআম্মা-মান তা-বা ওয়া আ-মানা ওয়া‘আমিলা সা-লিহান ফা‘আছাআইঁ ইয়াকূনা মিনাল মুফলিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, পূর্ণ আশা রাখা যায় তারা সফলকামদের অন্তর্ভুক্ত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তবে যে ব্যক্তি তওবা করেছিল এবং ঈমান এনেছিল ও সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।


৬৮


وَرَبُّکَ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ وَیَخۡتَارُ ؕ مَا کَانَ لَہُمُ الۡخِیَرَۃُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ وَتَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ


ওয়া রাব্বুকা ইয়াখলুকুমা-ইয়াশাউ ওয়া ইয়াখতা-রু মা-কানা লাহুমুল খিয়ারাতু ছুবহা-নাল্লা-হি ওয়া তা‘আ-লা-‘আম্মা-ইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক যা চান সৃষ্টি করেন এবং (যা চান) বেছে নেন। তাদের কোন এখতিয়ার নেই। ৪৭ আল্লাহ তাদের শিরক হতে পবিত্র ও সমুচ্চ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেন। তাদের কোন ক্ষমতা নেই। আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন, এতে এদের কোন হাত নেই। আল্লাহ্ পবিত্র, মহান এবং এরা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে!


তাফসীরঃ

৪৭. কাফেরদের প্রশ্ন ছিল, আমাদের মধ্যে যারা নেতৃস্থানীয় ও বিত্তবান, তাদের মধ্য হতে কাউকে কেন নবী বানানো হল না? এ আয়াতে তারই উত্তর দেওয়া হয়েছে। উত্তরের সারমর্ম এই যে, এ বিশ্বজগত আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে বাছাইকরণের এখতিয়ারও তাঁরই। কাকে তিনি নবী-রাসূল বানাবেন তা তিনিই ভালো জানেন। এ বিষয়ে ওই সকল প্রশ্নকর্তার কোন এখতিয়ার নেই।


৬৯


وَرَبُّکَ یَعۡلَمُ مَا تُکِنُّ صُدُوۡرُہُمۡ وَمَا یُعۡلِنُوۡنَ


ওয়া রাব্বুকা ইয়া‘লামুমা-তুকিন্নুসুদূরুহুম ওয়ামা-ইউ‘লিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক তাদের অন্তর যে সব কথা গোপন করে তাও জানেন এবং তারা যা প্রকাশ করে তাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, আপনার পালনকর্তা তা জানেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর তোমার প্রতিপালক জানেন এদের অন্তর যা গোপন করে এবং এরা যা ব্যক্ত করে।


৭০


وَہُوَ اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ؕ لَہُ الۡحَمۡدُ فِی الۡاُوۡلٰی وَالۡاٰخِرَۃِ ۫ وَلَہُ الۡحُکۡمُ وَاِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ


ওয়া হুওয়াল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া লাহুল হামদুফিল ঊলা-ওয়াল আ-খিরাতি ওয়া লাহুল হুকমুওয়া ইলাইহি তুরজা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই আল্লাহ। তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়। প্রশংসা তাঁরই, দুনিয়ায়ও এবং আখেরাতেও। বিধান কেবল তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমাদের সকলকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই ; বিধান তাঁরই ; তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।


৭১


قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ جَعَلَ اللّٰہُ عَلَیۡکُمُ الَّیۡلَ سَرۡمَدًا اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ مَنۡ اِلٰہٌ غَیۡرُ اللّٰہِ یَاۡتِیۡکُمۡ بِضِیَآءٍ ؕ اَفَلَا تَسۡمَعُوۡنَ


কুল আরাআইতুম ইন জা‘আলা-ল্লাহু ‘আলাইকুমুল লাইলা ছার মাদান ইলা-ইয়াওমিল কিয়ামাতি মান ইলা-হুন গাইরুল্লা-হি ইয়া’তীকুম বিদিয়াইন আফালা-তাছমা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল! তাদেরকে) বল, আচ্ছা তোমরা কী মনে কর? আল্লাহ যদি তোমাদের উপর রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া এমন কোন মাবুদ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবে কি তোমরা শুনতে পাও না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণপাত করবে না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্ যদি রাত্রিকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন্ ইলাহ্ আছে, যে তোমাদেরকে আলোক আনিয়া দিতে পারে ? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না ?’


৭২


قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ جَعَلَ اللّٰہُ عَلَیۡکُمُ النَّہَارَ سَرۡمَدًا اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ مَنۡ اِلٰہٌ غَیۡرُ اللّٰہِ یَاۡتِیۡکُمۡ بِلَیۡلٍ تَسۡکُنُوۡنَ فِیۡہِ ؕ اَفَلَا تُبۡصِرُوۡنَ


কুল আরাআইতুম ইন জা‘আলাল্লা-হু ‘আলাইকুমুন নাহা-রা ছার মাদান ইলা-ইয়াওমিল কিয়ামাতি মান ইলা-হুন গাইরুল্লা-হি ইয়া’তীকুম বিলাইলিন তাছকুনূনা ফীহি আফালাতুবসিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বল, তোমরা কী মনে কর? আল্লাহ যদি তোমাদের উপর দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া এমন কোন মাবুদ আছে কি, যে তোমাদেরকে এমন রাত এনে দেবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার? তবে কি তোমরা কিছুই বোঝ না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্ যদি দিবসকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্ ব্যতীত এমন কোন্ ইলাহ্ আছে, যে তোমাদের জন্যে রাত্রির আবির্ভাব ঘটাবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার ? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না ?’


৭৩


وَمِنۡ رَّحۡمَتِہٖ جَعَلَ لَکُمُ الَّیۡلَ وَالنَّہَارَ لِتَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَلِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِہٖ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ


ওয়া মির রাহমাতিহী জা‘আলা লাকুমুল লাইলা ওয়ান নাহা-রা লিতাছকুনূফীহি ওয়ালিতাবতাগূ মিন ফাদলিহী ওয়া লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই নিজ রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন বানিয়েছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম নিতে পার ও আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার ৪৮ এবং যাতে তোমরা শুকর আদায় কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্যে করেছেন রজনী ও দিবস, যেন এতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


তাফসীরঃ

৪৮. এখানে আল্লাহ তাআলার এক মহা নি‘আমতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তিনি রাত্রিকালকে আরাম ও বিশ্রাম গ্রহণের সময় বানিয়ে দিয়েছেন। এ সময় তিনি বিস্তৃত অন্ধকারে আদিগন্ত আচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। ফলে শয্যাগ্রহণ সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। তা না হলে বিশ্রামের জন্য সকলের ঐকমত্যে কোন একটা সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হত না। ফলে এ নিয়ে মহা জটিলতা দেখা দিত। একজন বিশ্রাম নিতে চাইলে অন্য একজন তখন কোন কাজ করতে চাইত আর সে কাজে লিপ্ত হলে প্রথম ব্যক্তির বিশ্রামে ব্যাঘাত সৃষ্টি হত। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা দিনকে তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান অর্থাৎ কামাই-রোজগারের সময় বানিয়েছেন, যাতে তখন সকলে কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকে। যদি সবটা সময় দিন থাকত, তবে বিশ্রাম গ্রহণ কঠিন হয়ে যেত আবার সবটা সময় রাত হলে কাজ-কর্ম করা অসম্ভব হয়ে পড়ত এবং মানুষ মহা সঙ্কটের সম্মুখীন হত।


৭৪


وَیَوۡمَ یُنَادِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُ اَیۡنَ شُرَکَآءِیَ الَّذِیۡنَ کُنۡتُمۡ تَزۡعُمُوۡنَ


ওয়া ইয়াওমা ইউনা-দীহিম ফাইয়াকূলুআইনা শুরাকাইয়াল্লাযীনা কুনতুম তাঝ‘উমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিন (-কে ভুলো না) যখন তিনি তাদেরকে (অর্থাৎ মুশরিকদেরকে) ডেকে বলবেন, কোথায় আমার (প্রভুত্বের) শরীকগণ, যাদের (শরীক হওয়ার) দাবি তোমরা করতে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায়?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন তিনি এদেরকে আহ্বান করে বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক গণ্য করতে তারা কোথায় ?’


৭৫


وَنَزَعۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍ شَہِیۡدًا فَقُلۡنَا ہَاتُوۡا بُرۡہَانَکُمۡ فَعَلِمُوۡۤا اَنَّ الۡحَقَّ لِلّٰہِ وَضَلَّ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ ٪


ওয়ানাঝা‘না-মিন কুল্লি উম্মাতিন শাহীদান ফাকুলনা-হা-তূবুরহা-নাকুম ফা‘আলিমূআন্নাল হাক্কা লিল্লা-হি ওয়া দাল্লা ‘আনহুম মা-কা-নূইয়াফতারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনব তারপর বলব, তোমরা তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর। তখন তারা উপলব্ধি করতে পারবে যে, সত্য কথা ছিল আল্লাহরই। আর তারা মিথ্যা যা-কিছু উদ্ভাবন করেছিল, তাদের থেকে তা অন্তর্হিত হয়ে যাবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব; অতঃপর বলব, তোমাদের প্রমাণ আন। তখন তারা জানতে পারবে যে, সত্য আল্লাহর এবং তারা যা গড়ত, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে আমি একজন সাক্ষী বের করে আনব এবং বলিব, ‘তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।’ তখন এরা জানতে পারবে, ইলাহ্ হওয়ার অধিকার আল্লাহ্ র ই এবং এরা যা উদ্ভাবন করত তা এদের নিকট হতে অন্তর্হিত হবে।


৭৬


اِنَّ قَارُوۡنَ کَانَ مِنۡ قَوۡمِ مُوۡسٰی فَبَغٰی عَلَیۡہِمۡ ۪ وَاٰتَیۡنٰہُ مِنَ الۡکُنُوۡزِ مَاۤ اِنَّ مَفَاتِحَہٗ لَتَنُوۡٓاُ بِالۡعُصۡبَۃِ اُولِی الۡقُوَّۃِ ٭ اِذۡ قَالَ لَہٗ قَوۡمُہٗ لَا تَفۡرَحۡ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ الۡفَرِحِیۡنَ


ইন্না কা-রূনা কা-না মিন কাওমি মূছা-ফাবাগা-‘আলাইহিম ওয়া আ-তাইনা-হু মিনাল কুনূঝি মাইন্না মাফা-তিহাহূলাতানূউ বিল‘উসবাতি উলিল কুওওয়াতি ইযকা-লা লাহূকাওমুহূলা-তাফরাহইন্নাল্লা-হা লা-ইউহিব্বুল ফারিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। ৪৯ কিন্তু সে তাদেরই প্রতি জুলুম করল। ৫০ আমি তাকে এমন ধনভাণ্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলি বহন করা একদল শক্তিমান লোকের পক্ষেও কষ্টকর ছিল। যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, বড়াই করো না। যারা বড়াই করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কারুন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর সে তাদের প্রতি দুষ্টামি করতে আরম্ভ করল। আমি তাকে এত ধন-ভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবি বহন করা কয়েকজন শক্তিশালী লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিল। যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে ভালবাসেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আমি তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, ‘দম্ভ কর না, নিশ্চয় আল্লাহ্ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না।


তাফসীরঃ

৪৯. এতটুকু বিষয় তো খোদ কুরআন মাজীদই জানিয়ে দিয়েছে যে, কারূন হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় অর্থাৎ বনী ইসরাঈলের লোক ছিল। কোন কোন বর্ণনায় প্রকাশ, সে ছিল হযরত মূসা আলাইহিস সালামের চাচাত ভাই এবং হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াত লাভের আগে ফির‘আউন তাকে বনী ইসরাঈলের নেতা বানিয়ে দিয়েছিল। অতঃপর যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম নবুওয়াত লাভ করলেন আর হযরত হারূন আলাইহিস সালামকে তাঁর নায়েব বানানো হল, তখন কারূনের মনে ঈর্ষা দেখা দিল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে দাবি জানিয়েছিল, তাকে যেন কোন পদ দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে কোন পদ দেওয়া হোক এটা আল্লাহ তাআলার পছন্দ ছিল না। তাই হযরত মূসা আলাইহিস সালাম অপারগতা প্রকাশ করলেন, এতে তার হিংসার আগুন আরও তীব্র হয়ে উঠল এবং তা চরিতার্থ করার জন্য মুনাফেকীর পন্থা অবলম্বন করল।


৫০. কুরআন মাজীদ এখানে যে শব্দ ব্যবহার করেছে তার দুই অর্থ হতে পারে। (ক) জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করা এবং (খ) দম্ভ ও বড়াই করা। বর্ণিত আছে যে, ফির‘আউনের পক্ষ থেকে তার উপর যখন বনী ইসরাঈলের নেতৃত্ব-ভার অর্পণ করা হয়, তখন সে তাদের উপর জুলুম করেছিল।


৭৭


وَابۡتَغِ فِیۡمَاۤ اٰتٰىکَ اللّٰہُ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ وَلَا تَنۡسَ نَصِیۡبَکَ مِنَ الدُّنۡیَا وَاَحۡسِنۡ کَمَاۤ اَحۡسَنَ اللّٰہُ اِلَیۡکَ وَلَا تَبۡغِ الۡفَسَادَ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ الۡمُفۡسِدِیۡنَ


ওয়াবতাগি ফিমাআ-তা-কাল্লা-হুদ্দা-রাল আ-খিরাতা ওয়ালা-তানছা নাসীবাকা মিনাদদুনইয়া-ওয়া আহছিন কামাআহছানাল্লা-হু ইলাইকা ওয়ালা তাবগিল ফাছা-দা ফিল আরদি ইন্নাল্লা-হা লা-ইউহিব্বুল মুফছিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তোমাকে যা-কিছু দিয়েছেন তার মাধ্যমে আখেরাতের নিবাস লাভের চেষ্টা কর ৫১ এবং দুনিয়া হতেও নিজ হিস্যা অগ্রাহ্য করো না। ৫২ আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তেমনি তুমিও (অন্যদের প্রতি) অনুগ্রহ কর। ৫৩ আর পৃথিবীতে ফাসাদ বিস্তারের চেষ্টা করো না। জেনে রেখ, আল্লাহ ফাসাদ বিস্তারকারীদের পছন্দ করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তদ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আল্লাহ্ যা তোমাকে দিয়েছেন তা দিয়ে আখিরাতের আবাস অনুসন্ধান কর এবং দুনিয়া হতে তোমার অংশ ভুলিও না; তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ্ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চাহিও না। আল্লাহ্ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না।’


তাফসীরঃ

৫১. অর্থাৎ, অর্থ-সম্পদকে আল্লাহ তাআলার বিধান মোতাবেক ব্যবহার কর। পরিণামে তুমি আখেরাতে পরম শান্তির জান্নাতী নিবাসে পৌঁছুতে পারবে।


৫২. অর্থাৎ, আখেরাতের নিবাস সন্ধানের মানে এ নয় যে, দুনিয়ার প্রয়োজনসমূহ বিলকুল অগ্রাহ্য করা হবে। দুনিয়ার প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ ও তা রাখাতে দোষের কিছু নেই। হাঁ দুনিয়ার কামাই-রোজগারে এভাবে নিমজ্জিত হয়ো না, যদ্দরুণ আখেরাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


৫৩. ইশারা করা হয়েছে যে, দুনিয়ায় তুমি যে অর্থ-সম্পদ লাভ করেছ, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাই তার মালিক। তিনি অনুগ্রহ করে তোমাকে তা দান করেছেন। তিনি যখন এভাবে তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তখন তুমিও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর এবং তাঁর প্রদত্ত অর্থ-সম্পদে তাদেরকে শরীক কর।


৭৮


قَالَ اِنَّمَاۤ اُوۡتِیۡتُہٗ عَلٰی عِلۡمٍ عِنۡدِیۡ ؕ اَوَلَمۡ یَعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰہَ قَدۡ اَہۡلَکَ مِنۡ قَبۡلِہٖ مِنَ الۡقُرُوۡنِ مَنۡ ہُوَ اَشَدُّ مِنۡہُ قُوَّۃً وَّاَکۡثَرُ جَمۡعًا ؕ وَلَا یُسۡـَٔلُ عَنۡ ذُنُوۡبِہِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ


কা-লা ইন্নামাঊতীতুহূ‘আলা-‘ইলমিন ‘ইনদী আওয়ালাম ইয়া‘লাম আন্নাল্লা-হা কাদ আহলাকা মিন কাবলিহী মিনাল কুরূনি মান হুওয়া আশাদ্দুমিনহু কুওওয়াতাওঁ ওয়া আক ছারু জাম‘আওঁ ওয়ালা-ইউছআলু‘আন যুনূবিহিমুল মুজরিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, এসব তো আমি আমার জ্ঞানবলে লাভ করেছি। সে কি এতটুকুও জানত না যে, আল্লাহ তার আগে এমন বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছিলেন, যারা শক্তিতে তার অপেক্ষা প্রবল ছিল ৫৪ এবং জনসংখ্যায়ও বেশি ছিল? অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেসও করা হয় না। ৫৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বলল, আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছি। সে কি জানে না যে, আল্লাহ তার পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন, যারা শক্তিতে ছিল তার চাইতে প্রবল এবং ধন-সম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল? পাপীদেরকে তাদের পাপকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘এই সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি।’ সে কি জানত না আল্লাহ্ তার পূর্বে ধ্বংস করেছেন বহু মানবগোষ্ঠীকে যারা তা অপেক্ষা শক্তিতে ছিল প্রবল, জনসংখ্যায় ছিল অধিক ? অপরাধীদেরকে এদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না।


তাফসীরঃ

৫৪. একদিকে তো কারূন দাবি করছিল, আমি এ ধন-সম্পদের মালিক হয়েছি নিজ বিদ্যা-বুদ্ধির বলে, অন্য দিকে আল্লাহ তাআলা বলছেন, তার উচ্চস্তরের জ্ঞান তো দূরের কথা, এই মামুলি জ্ঞানটুকুও ছিল না যে, সে যদি নিজের জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারাই অর্থোপার্জন করে থাকে, তবে সেই জ্ঞান-বুদ্ধি সে কোথায় পেল? কে তাকে তা দান করেছিল? সেই সঙ্গে সে এ বিষয়টাও অনুধাবন করছে না যে, তার আগেও তো তার মত, বরং তার চেয়েও ধন-জনে শক্তিমান কত লোক ছিল, আজ তারা কোথায়? তারাও তার মত দর্প দেখাত এবং তার মত দাবি করে বেড়াত। পরিণামে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন।


৫৫. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা অপরাধীদের অবস্থা ভালো করেই জানেন। কাজেই তাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য তাদেরকে তাঁর জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন নেই। হাঁ, আখেরাতে যে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, সেটা তাদের সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে নয়; বরং তাদের অপরাধ তাদের দৃষ্টিতে সপ্রমাণ করার উদ্দেশ্যেই করা হবে।


৭৯


فَخَرَجَ عَلٰی قَوۡمِہٖ فِیۡ زِیۡنَتِہٖ ؕ قَالَ الَّذِیۡنَ یُرِیۡدُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا یٰلَیۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِیَ قَارُوۡنُ ۙ اِنَّہٗ لَذُوۡ حَظٍّ عَظِیۡمٍ


ফাখারাজা ‘আলা-কাওমিহী ফী ঝীনাতিহী কা-লাল্লাযীনা ইউরীদূ নাল হায়া-তাদ দুনইয়া-ইয়া-লাইতা লানা-মিছলা মাঊতিয়া কা-রূনু ইন্নাহূলাযূহাজ্জিন ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর (একদিন) সে তার সম্প্রদায়ের সামনে নিজ জাঁকজমকের সাথে বের হয়ে আসল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা (তা দেখে) বলতে লাগল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে, অনুরূপ যদি আমাদেরও থাকত! বস্তুত সে মহা ভাগ্যবান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর কারুন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলল, হায়, কারুন যা প্রাপ্ত হয়েছে, আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত! নিশ্চয় সে বড় ভাগ্যবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কারূন তার সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থিত হয়েছিল জাঁকজমকসহকারে। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, ‘আহা, কারূনকে যেইরূপ দেওয়া হয়েছে আমাদেরকেও যদি তা দেওয়া হত। প্রকৃতই সে মহাভাগ্যবান।’


৮০


وَقَالَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ وَیۡلَکُمۡ ثَوَابُ اللّٰہِ خَیۡرٌ لِّمَنۡ اٰمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ۚ وَلَا یُلَقّٰہَاۤ اِلَّا الصّٰبِرُوۡنَ


ওয়া কা-লাল্লাযীনা ঊতুল ‘ইল মা ওয়াইলাকুম ছাওয়া-বুল্লা-হি খাইরুল লিমান আ-মানা ওয়া ‘আমিলা সা-লিহাওঁ ওয়ালা-ইউলাক্কা-হাইল্লাসসা-বিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যারা (আল্লাহর পক্ষ হতে) জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছিল, তারা বলল, ধিক তোমাদেরকে! (তোমরা এরূপ কথা বলছ, অথচ) যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সওয়াব কতই না শ্রেয়! আর তা লাভ করে কেবল ধৈর্যশীলগণই। ৫৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মী, তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্ট। এটা তারাই পায়, যারা সবরকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ‘ধিক তোমাদেরকে! যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আল্লাহ্ র পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ এবং ধৈর্যশীল ব্যতীত এটা কেউ পাবে না।’


তাফসীরঃ

৫৬. ‘সবর’ শব্দটি কুরআন মাজীদের একটি পরিভাষা। নিজের ইন্দ্রিয় চাহিদাকে সংযত ও নিয়ন্ত্রিত রেখে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যে অবিচলিত থাকাকে সবর বলা হয়।


৮১


فَخَسَفۡنَا بِہٖ وَبِدَارِہِ الۡاَرۡضَ ۟ فَمَا کَانَ لَہٗ مِنۡ فِئَۃٍ یَّنۡصُرُوۡنَہٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ٭ وَمَا کَانَ مِنَ الۡمُنۡتَصِرِیۡنَ


ফাখাছাফনা-বিহী ওয়া বিদা-রিহিল আরদা ফামা-কা-না লাহূমিন ফিয়াতিইঁ ইয়ানসুরূনাহূমিন দূ নিল্লা-হি ওয়ামা-কা-না মিনাল মুনতাসিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিণামে আমি তাকে ও তার বাড়িটি ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। অতঃপর সে এমন একটি দলও পেল না, যারা আল্লাহর বিপরীতে তার কোন সাহায্য করতে পারে এবং নিজেও পারল না আত্মরক্ষা করতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলাম। তার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহ্ র শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।


৮২


وَاَصۡبَحَ الَّذِیۡنَ تَمَنَّوۡا مَکَانَہٗ بِالۡاَمۡسِ یَقُوۡلُوۡنَ وَیۡکَاَنَّ اللّٰہَ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ وَیَقۡدِرُ ۚ  لَوۡلَاۤ اَنۡ مَّنَّ اللّٰہُ عَلَیۡنَا لَخَسَفَ بِنَا ؕ  وَیۡکَاَنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الۡکٰفِرُوۡنَ ٪


ওয়া আসবাহাল্লাযীনা তামান্নাও মাকা-নাহূবিলআমছি ইয়াকূলূনা ওয়াইকাআন্নাল্লা-হা ইয়াবছুতুররিঝকা লিমাইঁ ইয়াশাঊ মিন ‘ইবা-দিহী ওয়া ইয়াকদিরু লাওলাআম মান্নাল্লা-হু ‘আলাইনা-লাখাছাফা বিনা- ওয়াইকাআন্নাহূলা-ইউফলিহুল কা-ফিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর গতকালই যারা তার মত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করছিল, তারা বলতে লাগল, দেখলে তো! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযক প্রশস্ত করে দেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) সংকীর্ণ করে দেন। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করলে তিনি আমাদের ভূগর্ভে ধসিয়ে দিতেন। দেখলে তো কাফেরগণ সফলতা লাভ করে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

গতকল্য যারা তার মত হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিল, তারা প্রত্যুষে বলতে লাগল, হায়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন ও হ্রাস করেন। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করলে আমাদেরকেও ভূগর্ভে বিলীন করে দিতেন। হায়, কাফেররা সফলকাম হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পূর্বদিন যারা তার মত হওয়ার কামনা করেছিল, তারা বলিতে লাগল, ‘দেখলে তো, আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্যে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্যে ইচ্ছা হ্রাস করেন। যদি আল্লাহ্ আমাদের প্রতি সদয় না হতেন তবে আমাদেরকেও তিনি ভ‚গর্ভে প্রোথিত করতেন। দেখলে তো! কাফিররা সফলকাম হয় না।’


৮৩


تِلۡکَ الدَّارُ الۡاٰخِرَۃُ نَجۡعَلُہَا لِلَّذِیۡنَ لَا یُرِیۡدُوۡنَ عُلُوًّا فِی الۡاَرۡضِ وَلَا فَسَادًا ؕ وَالۡعَاقِبَۃُ لِلۡمُتَّقِیۡنَ


তিলকাদ্দা-রুল আ-খিরাতুনাজ‘আলুহা-লিল্লাযীনা লা-ইউরীদূ না ‘উলুওওয়ান ফিল আরদি ওয়ালা-ফাছা-দাওঁ ওয়াল ‘আ-কিবাতুলিলমুত্তাকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ওই পরকালীন নিবাস তো আমি সেই সকল লোকের জন্যই নির্ধারণ করব, যারা পৃথিবীতে বড়ত্ব দেখাতে ও ফাসাদ সৃষ্টি করতে চায় না। শেষ পরিণাম তো মুত্তাকীদেরই অনুকূলে থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় না। খোদাভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা আখিরাতের সেই আবাস যা আমি নির্ধারিত করি তাদের জন্যে যারা এই পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্যে।


৮৪


مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَہٗ خَیۡرٌ مِّنۡہَا ۚ وَمَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَلَا یُجۡزَی الَّذِیۡنَ عَمِلُوا السَّیِّاٰتِ اِلَّا مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ


মান জাআ বিল হাছানাতি ফালাহূখাইরুম মিনহা- ওয়া মান জাআ বিছছাইয়িআতি ফালা-ইউজঝাল্লাযীনা ‘আমিলুছ ছাইয়িআ-তি ইল্লা-মা-কা-নূইয়া‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি কোন পুণ্য নিয়ে আসবে সে তদপেক্ষা উত্তম জিনিস পাবে আর কেউ কোন মন্দকর্ম নিয়ে আসলে, যারা মন্দ কাজ করে তাদেরকে কেবল তাদের কৃতকর্ম অনুপাতেই শাস্তি দেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে উপস্থিত হয় তার জন্যে রয়েছে তা অপেক্ষা উত্তম ফল, আর যে মন্দ কর্ম নিয়ে উপস্থিত হয়, তবে যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে তারা যা করেছে এরই শাস্তি দেওয়া হবে।


৮৫


اِنَّ الَّذِیۡ فَرَضَ عَلَیۡکَ الۡقُرۡاٰنَ لَرَآدُّکَ اِلٰی مَعَادٍ ؕ قُلۡ رَّبِّیۡۤ اَعۡلَمُ مَنۡ جَآءَ بِالۡہُدٰی وَمَنۡ ہُوَ فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ


ইন্নাল্লাযী ফারাদা ‘আলাইকাল কুরআ-না লারাদ্দুকা ইলা-মা‘আ-দিন কুররাববীআ‘লামুমান জাআ বিলহুদা-ওয়া মান হুওয়া ফী দালা-


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) যেই সত্তা তোমার প্রতি এই কুরআনের দায়িত্বভার অর্পণ করেছেন, তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন (তোমার) প্রিয়ভূমিতে। ৫৭ বল, আমার প্রতিপালক ভালো জানেন কে হেদায়াত নিয়ে এসেছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন। বলুন আমার পালনকর্তা ভাল জানেন কে হেদায়েত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যিনি তোমার জন্যে কুরআনকে করেছেন বিধান তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে আনবেন জন্মভ‚মিতে। বল, ‘আমার প্রতিপালক ভাল জানেন কে সৎপথের নির্দেশ এনেছে এবং কে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।’


তাফসীরঃ

৫৭. কুরআন মাজীদে এ স্থলে শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে مَعَادْ যা কোন কোন মুফাসসিরের মতে عَادَةٌ থেকে নির্গত। عَادَةٌ অর্থ অভ্যাস। সে হিসেবে مَعَادْ এর অর্থ হবে এমন ভূমি, মানুষ যেখানে বসবাস করে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ফলে তা তার প্রিয়ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আবার অনেকের মতে এর অর্থ প্রত্যাবর্তনস্থল। উভয় অবস্থায়ই এর দ্বারা মক্কা-মুকাররমাকে বোঝানো উদ্দেশ্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান এবং জুহফার কাছাকাছি যেখান থেকে মক্কা মুকাররমার পথ আলাদা হয়ে গেছে সেই মোড়ে গিয়ে পৌঁছান, তখন দেশ ছেড়ে যাওয়ার বেদনা তাঁর অনুভূতিতে বড় বাজছিল। তাই আল্লাহ তাআলা তাঁকে সান্তনা দানের জন্য এ আয়াত নাযিল করেন এবং এতে ওয়াদা করেন যে, এ ভূমিতে আপনাকে একদিন বিজয়ী হিসেবে ফিরিয়ে আনা হবে। পরিশেষে আট বছরের মাথায় এ ওয়াদা পূরণ করা হয়েছিল। ঠিকই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে বিজেতারূপে ফিরে আসেন। কোন কোন মুফাসসির مَعَادْ (প্রিয়ভূমি বা প্রত্যাবর্তনস্থল)-এর ব্যাখ্যা করেছেন জান্নাত। অর্থাৎ, এ দুনিয়ায় যদিও আপনাকে নানা রকম দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, কিন্তু আপনার শেষ ঠিকানা তো জান্নাত। এক সময় ক্ষণস্থায়ী এ কষ্টের অবসান হবে এবং চির সুখের সেই ঠিকানায় আপনি পৌঁছে যাবেন।


৮৬


وَمَا کُنۡتَ تَرۡجُوۡۤا اَنۡ یُّلۡقٰۤی اِلَیۡکَ الۡکِتٰبُ اِلَّا رَحۡمَۃً مِّنۡ رَّبِّکَ فَلَا تَکُوۡنَنَّ ظَہِیۡرًا لِّلۡکٰفِرِیۡنَ ۫


ওয়ামা- কুনতা তারাজূআইঁ ইউলকাইলাইকাল কিতা-বুইল্লা-রাহমাতাম মির রাব্বিকা ফালা-তাকূনান্না জাহীরাল লিলকা-ফিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) পূর্ব থেকে তোমার এ আশা ছিল না যে, তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করা হবে। কিন্তু এটা তোমার প্রতিপালকের রহমত। ৫৮ সুতরাং তুমি কখনও কাফেরদের সাহায্যকারী হয়ো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি আশা করতেন না যে, আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীর্ণ হবে। এটা কেবল আপনার পালনকর্তার রহমত। অতএব আপনি কাফেরদের সাহায্যকারী হবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি আশা কর নাই যে, তোমার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ হবে। এটা তো কেবল তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং তুমি কখনও কাফিরদের সহায় হয়ো না।


তাফসীরঃ

৫৮. অর্থাৎ তোমাকে নবুওয়াত দান করা হবে ও তুমি নবী হবে এই আশা তোমার ছিল না এবং এ লক্ষে তুমি কোনও রকম সাধনাও করনি। তোমার অপ্রত্যাশিতভাবেই আমি তোমাকে নবী বানিয়েছি। কাজেই তোমার কাজ হল এ মহা নি‘আমতের কদর বুঝে মানুষকে শিরক ও কুফরের ক্ষতি বোঝানো ও তাদেরকে দীন ও ঈমানের দিকে ডাকা। তারা যে অধর্মের উপর আছে তাতে তাদের কোনও রকম সহযোগিতা করা বা এ ব্যাপারে তাদের সাথে কোনওরকম আপস করার বিন্দুমাত্র অবকাশ তোমার নেই। এ আয়াত প্রমাণ করে নবুওয়াত কোন সাধনালব্ধ বিষয় নয় বরং এটা আল্লাহর তাআলারই দান। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে এ মহামর্যাদায় অভিষিক্ত করে থাকেন। সেই সঙ্গে এ আয়াতের শিক্ষা হল, নবুয়তী ইলমের উত্তরাধিকার যারা লাভ করেছে, কোনও রকম বেদীনী কর্মকাণ্ডের সাথে আপস করা তাদের শান নয়। -অনুবাদক


৮৭


وَلَا یَصُدُّنَّکَ عَنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ بَعۡدَ اِذۡ اُنۡزِلَتۡ اِلَیۡکَ وَادۡعُ اِلٰی رَبِّکَ وَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ۚ


ওয়ালা-ইয়াসুদ্দুন্নাকা ‘আন আ-য়া-তিল্লা-হি বা‘দা ইয উনঝিলাত ইলাইকা ওয়াদ‘উ ইলা রাব্বিকা ওয়ালা-তাকূনান্না মিনাল মুশরিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার পর তারা যেন কিছুতেই তোমাকে এর (অনুসরণ) থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে। তুমি নিজ প্রতিপালকের দিকে মানুষকে ডাকতে থাক এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা যেন আপনাকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিমুখ না করে সেগুলো আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতি আল্লাহ্ র আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর এরা যেন তোমাকে কিছুতেই সেগুলি হতে বিমুখ না করে। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।


৮৮


وَلَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ ۘ  لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۟  کُلُّ شَیۡءٍ ہَالِکٌ اِلَّا وَجۡہَہٗ ؕ  لَہُ الۡحُکۡمُ وَاِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ ٪


ওয়ালা-তাদ‘উ মা‘আল্লা-হি ইলা-হান আ-খারা । লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া কুল্লু শাইইন হা-লিকুন ইল্লা-ওয়াজহাহূ লাহুল হুকমুওয়া ইলাইহি তুরজা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মাবুদকে ডেক না। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। সবকিছুই ধ্বংসশীল, কেবল আল্লাহর সত্তাই ব্যতিক্রম। শাসন কেবল তাঁরই এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য ইলাহ্কে ডাকিও না, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আল্লাহ্ র সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

Post a Comment

0 Comments