সূরা নাম্‌ল বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা নাম্‌ল বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল নাম্‌ল বাংলা তরজমা,সূরা নাম্‌ল বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল নাম্‌ল, সকল আমল সূরা আল নাম্‌ল

 

সূরা নাম্‌ল বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা নাম্‌ল বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল নাম্‌ল বাংলা তরজমা,সূরা নাম্‌ল বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল নাম্‌ল, সকল আমল সূরা আল নাম্‌ল

২৭ . আন নাম্‌ল - ( النمل ) | পিপীলিকা

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৯৩


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


طٰسٓ ۟  تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡقُرۡاٰنِ وَکِتَابٍ مُّبِیۡنٍ ۙ


তা-ছীন তিলকা আ-য়া-তুল কুরআ-নি ওয়া কিতা-বিম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোয়া-সীন-। এগুলো কুরআন ও এমন এক কিতাবের আয়াত, যা সত্যকে সুস্পষ্ট করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ত্বা-সীন; এগুলো আল-কোরআনের আয়াত এবং আয়াত সুস্পষ্ট কিতাবের।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা-সীন ; এইগুলি আয়াত আল-কুরআনের এবং সুস্পষ্ট কিতাবের;



ہُدًی وَّبُشۡرٰی لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ


হুদাওঁ ওয়া বুশরা-লিলমু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা হেদায়াত ও সুসংবাদরূপে এসেছে মুমিনদের জন্য


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মুমিনদের জন্যে পথ নির্দেশ ও সুসংবাদ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পথনির্দেশ ও সুসংবাদ মু’মিনদের জন্যে।



الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَیُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ


আল্লাযীনা ইউকীমূনাসসালা-তা ওয়া ইউ’তূনাঝঝাকা-তা ওয়া হুম বিল আ-খিরাতি হুম ইউকিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং পরকালে নিশ্চিত বিশ্বাস করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় আর তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী।



اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ زَیَّنَّا لَہُمۡ اَعۡمَالَہُمۡ فَہُمۡ یَعۡمَہُوۡنَ ؕ


ইন্নাল্লাযীনা লা-ইউ’মিনূনা বিলআ-খিরাতি ঝাইইয়ান্না-লাহুম আ‘মা-লাহুম ফাহুম ইয়া‘মাহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না, আমি তাদের কার্যকলাপকে তাদের দৃষ্টিতে মনোরম বানিয়ে দিয়েছি। ১ ফলে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকান্ডকে সুশোভিত করে দিয়েছি। অতএব, তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের দৃষ্টিতে তাদের কর্মকে আমি শোভন করেছি, ফলে এরা বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়;


তাফসীরঃ

১. অর্থাৎ, অবিশ্বাসীরা যেহেতু এই জিদ ধরে বসে আছে যে, তারা কোন অবস্থাতেই ঈমান আনবে না ও কুফর ত্যাগ করবে না, তাই আমি তাদেরকে তাদের অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে তারা তাদের যাবতীয় কাজকর্ম, তা বাস্তবে যতই নিকৃষ্ট হোক না কেন, উত্তম মনে করে। আর এ কারণেই তারা হেদায়াতের পথে আসছে না।



اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَہُمۡ سُوۡٓءُ الۡعَذَابِ وَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ ہُمُ الۡاَخۡسَرُوۡنَ


উলাইকাল্লাযীনা লাহুম ছূউল ‘আযা-বি ওয়াহুম ফিল আ-খিরাতি হুমুল আখছারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারাই এমন লোক, যাদের জন্য আছে নিকৃষ্ট শাস্তি এবং তারাই আখেরাতে সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের জন্যেই রয়েছে মন্দ শাস্তি এবং তারাই পরকালে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরই জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং এরাই আখিরাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।



وَاِنَّکَ لَتُلَقَّی الۡقُرۡاٰنَ مِنۡ لَّدُنۡ حَکِیۡمٍ عَلِیۡمٍ


ওয়া ইন্নাকা লাতুলাক্কাল কুরআ-না মিল্লাদুন হাকীমিন ‘আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (হে নবী!) নিশ্চয়ই এ কুরআন তোমাকে দেওয়া হয়েছে সেই সত্তার পক্ষ হতে যিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ ২।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আপনাকে কোরআন প্রদত্ত হচ্ছে প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানময় আল্লাহর কাছ থেকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই তোমাকে আল-কুরআন দেওয়া হচ্ছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের নিকট হতে।


তাফসীরঃ

২. অর্থাৎ কাফেরদের অভিযোগ-আপত্তিতে কর্ণপাত করো না। তাদেরকে তাদের গোমরাহির মধ্যে পড়ে থাকতে দাও। যে যাই বলুক, এ কুরআন সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় আল্লাহর তরফ থেকেই অবতীর্ণ, যিনি হেকমত ও প্রজ্ঞার সাথে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও পরিচালনা করছেন এবং তিনি ভালোভাবেই জানেন কিসে মানুষের কল্যাণ ও সফলতা। আর তারই ভিত্তিতে তিনি কল্যাণের নির্দেশনা সম্বলিত এ মহাগ্রন্থ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। এ আয়াতটি সূরার পরবর্তী আলোচনার ভূমিকাস্বরূপ। এরপর অতীতের বিভিন্ন নবী ও জাতিসমূহের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যা একদিকে আল্লাহ তাআলার অপার হিকমত ও জ্ঞানের পরিচয় বহন করে এবং অন্যদিকে তাঁর ভেতর মুমিনদের জন্য রয়েছে ঈমানী শক্তি সঞ্চয়ের রসদ ও অবিশ্বাসীদের জন্য অশুভ পরিণতির সতর্কবাণী। -অনুবাদক



اِذۡ قَالَ مُوۡسٰی لِاَہۡلِہٖۤ اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا ؕ سَاٰتِیۡکُمۡ مِّنۡہَا بِخَبَرٍ اَوۡ اٰتِیۡکُمۡ بِشِہَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّکُمۡ تَصۡطَلُوۡنَ


ইযকা-লা মূছা-লিআহলিহী ইন্নীআ-নাছতুনা-রান ছাআ-তীকুম মিনহাবিখাবারিন আও আ-তীকুম বিশিহা-বিন কাবাছিল লা‘আল্লাকুম তাসতালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, আমি এক আগুন দেখতে পেয়েছি। আমি শীঘ্রই সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসছি কিংবা তোমাদের কাছে জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসব, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললেনঃ আমি অগ্নি দেখেছি, এখন আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্যে কোন খবর আনতে পারব অথবা তোমাদের জন্যে জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসতে পারব যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন মূসা তার পরিবারবর্গকে বলেছিল, ‘আমি আগুন দেখেছি, সত্বর আমি সেখান হতে তোমাদের জন্যে কোন খবর আনব বা তোমাদের জন্যে আনব জ্বলন্ত অঙ্গার, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।


তাফসীরঃ

৩. ঘটনাটি এখানে কেবল ইশারা হিসেবে এসেছে। বিস্তারিত এর পরবর্তী সূরা অর্থাৎ সূরা কাসাসে আসছে।



فَلَمَّا جَآءَہَا نُوۡدِیَ اَنۡۢ بُوۡرِکَ مَنۡ فِی النَّارِ وَمَنۡ حَوۡلَہَا ؕ وَسُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ


ফালাম্মা-জাআহা-নূদিইয়া আম বূরিকা মান ফিন্না-রি ওয়া মান হাওলাহা- ওয়া ছুবহা-নাল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং যখন সে সেই আগুনের কাছে পৌঁছল, তাকে ডাক দিয়ে বলা হল, বরকত হোক যে আগুনের ভেতর আছে তার প্রতি এবং যে তার আশপাশে আছে তার প্রতিও। ৪ আল্লাহ পবিত্র, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর সে যখন এর নিকট এলো, তখন ঘোষিত হল ‘ধন্য, যারা আছে এই আলোর মধ্যে এবং যারা আছে এটার চতুষ্পার্শ্বে, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ পবিত্র ও মহিমান্বিত।


তাফসীরঃ

৪. প্রকৃতপক্ষে এটা আগুন ছিল না; বরং নূর ছিল এবং তার ভেতর ছিল ফিরিশতা। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বরকতের শুভেচ্ছা জানানো হল সেই ফিরিশতাকেও এবং হযরত মূসা আলাইহিস সালামকেও, যিনি তার আশপাশেই ছিলেন।



یٰمُوۡسٰۤی اِنَّہٗۤ اَنَا اللّٰہُ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ۙ


ইয়া-মূছাইন্নাহূআনাল্লা-হুল ‘আঝীঝুল হাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মূসা! কথা হচ্ছে, আমিই আল্লাহ, অতি পরাক্রমশালী, অতি হেকমতওয়ালা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘হে মূসা! আমি তো আল্লাহ্, পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়,


১০


وَاَلۡقِ عَصَاکَ ؕ  فَلَمَّا رَاٰہَا تَہۡتَزُّ کَاَنَّہَا جَآنٌّ وَّلّٰی مُدۡبِرًا وَّلَمۡ یُعَقِّبۡ ؕ  یٰمُوۡسٰی لَا تَخَفۡ ۟  اِنِّیۡ لَا یَخَافُ لَدَیَّ الۡمُرۡسَلُوۡنَ ٭ۖ


ওয়া আলকি‘আসা-কা ফালাম্মা-রাআ-হা-তাহতাঝঝুকাআন্নাহা-জাননুওঁ ওয়াল্লামুদবিরাওঁ ওয়ালাম ইউ‘আক্কিব ইয়া-মূছা-লা-তাখাফ ইন্নী লা-ইয়াখা-ফূ লাদাইয়াল মুরছালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার লাঠি নিচে ফেলে দাও। অনন্তর সে যখন দেখল সেটি এমনভাবে নড়াচড়া করছে, যেন সেটি একটি সাপ, অমনি সে পেছন দিকে পালাতে লাগল, আর ফিরে তাকাল না। (বলা হল) হে মূসা ভয় পেও না। যাকে নবী বানানো হয়, আমার নিকটে তার কোন ভয় থাকে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি নিক্ষেপ করুন আপনার লাঠি। অতঃপর যখন তিনি তাকে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখলেন, তখন তিনি বিপরীত দিকে ছুটতে লাগলেন এবং পেছন ফিরেও দেখলেন না। হে মূসা, ভয় করবেন না। আমি যে রয়েছি, আমার কাছে পয়গম্বরগণ ভয় করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ কর।’ এরপর যখন সে একে সর্পের ন্যায় ছুটাছুটি করতে দেখল তখন সে পিছনের দিকে ছুটিতে লাগল এবং ফিরেও তাকাল না। বলা হল, ‘হে মূসা! ভীত হয়ো না, নিশ্চয়ই আমি এমন, আমার সান্নিধ্যে রাসূলগণ ভয় পায় না;


১১


اِلَّا مَنۡ ظَلَمَ ثُمَّ بَدَّلَ حُسۡنًۢا بَعۡدَ سُوۡٓءٍ فَاِنِّیۡ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ


ইল্লা-মান জালামা ছুম্মা বাদ্দালা হুছনাম বা‘দা ছূইন ফাইন্নী গাফূরুর রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কেউ কোন সীমালঙ্ঘন করলে, ৫ তারপর মন্দ কাজের পর তার বদলে ভালো কাজ করলে, আমি তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তবে যে বাড়াবাড়ি করে এরপর মন্দ কর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে। নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তবে যারা জুলুম করার পর মন্দ কর্মের পরিবর্তে সৎকর্ম করে, তাদের প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সমীপে কোন নবীর কোন রকম ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কা থাকে না। অবশ্য কারও দ্বারা যদি কোন ত্রুটি ঘটে যায়, তবে তার জন্য ভয় রয়েছে হয়ত আল্লাহ তাআলা নারাজ হয়ে যাবেন। কিন্তু সেই ব্যক্তিও যদি অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে, ক্ষমা চায় ও নিজের ইসলাহ করে নেয়, তবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।


১২


وَاَدۡخِلۡ یَدَکَ فِیۡ جَیۡبِکَ تَخۡرُجۡ بَیۡضَآءَ مِنۡ غَیۡرِ سُوۡٓءٍ ۟ فِیۡ تِسۡعِ اٰیٰتٍ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَقَوۡمِہٖ ؕ اِنَّہُمۡ کَانُوۡا قَوۡمًا فٰسِقِیۡنَ


ওয়া আদখিল ইয়াদাকা ফী জাইবিকা তাখরুজ বাইদাআ মিন গাইরি ছূইন ফী তিছ‘ই আয়া-তিন ইলা-ফির‘আওনা ওয়া কাওমিহী ইন্নাহুম কা-নূকাওমান ফা-ছিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তোমার হাত নিজ জায়ব (জামার সামনের ফোকর)-এর ভেতর ঢোকাও, তা শুভ্র হয়ে বের হবে কোন রোগ ছাড়া। এ দু’টি সেই নব-নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত, যা (তোমার মাধ্যমে) ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হচ্ছে। ৬ বস্তুত তারা অবাধ্য সম্প্রদায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার হাত আপনার বগলে ঢুকিয়ে দিন, সুশুভ্র হয়ে বের হবে নির্দোষ অবস্থায়। এগুলো ফেরাউন ও তার সম্প্রদায়ের কাছে আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্যতম। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এবং তোমার হাত তোমার বগলে রাখ, এটা বের হয়ে আসবে শুভ্র নির্মল অবস্থায়। এটা ফির‘আওন ও তার সম্প্রদায়ের নিকট আনীত নয়টি নিদর্শনের অন্তর্গত। এরা তো সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।’


তাফসীরঃ

৬. ‘নব-নিদর্শন’ দ্বারা যে সকল নিদর্শনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, সূরা আরাফে (৭ : ১৩০-১৩৩) তার বিবরণ চলে গেছে।


১৩


فَلَمَّا جَآءَتۡہُمۡ اٰیٰتُنَا مُبۡصِرَۃً قَالُوۡا ہٰذَا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ ۚ


ফালাম্মা- জাআতহুম আ-য়া-তুনা-মুবসিরাতান কা-লূহা-যা-ছিহরুম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর যখন তাদের নিকট আমার নিদর্শনসমূহ পৌঁছল, যা ছিল দৃষ্টি উন্মোচনকারী, তখন তারা বলল, এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। ৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন তাদের কাছে আমার উজ্জল নিদর্শনাবলী আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা তো সুস্পষ্ট জাদু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর যখন এদের নিকট আমার স্পষ্ট নিদর্শন এলো, এরা বলল, ‘এটা সুস্পষ্ট জাদু।’


তাফসীরঃ

৭. অর্থাৎ এসব নিদর্শন তো এমন, যা দ্বারা তাদের দৃষ্টি খুলে যাওয়ার কথা ছিল, ফলে তারা হিদায়াতের পথ চিনতে পারত ও মিথ্যা হতে সত্যের পার্থক্য চাক্ষুষ দেখতে পেত। কিন্তু তারা এমনই অহংকারী ও হঠকারী সম্প্রদায় যে, সে নিদর্শন দ্বারা শিক্ষাগ্রহণ তো করলই না, উল্টো তাকে যাদু ঠাওরিয়ে প্রত্যাখ্যান করল। -অনুবাদক


১৪


وَجَحَدُوۡا بِہَا وَاسۡتَیۡقَنَتۡہَاۤ اَنۡفُسُہُمۡ ظُلۡمًا وَّعُلُوًّا ؕ  فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُفۡسِدِیۡنَ ٪


ওয়া জাহাদূবিহা-ওয়াছতাইকানাতহা আনফুছুহুম জুলমাওঁ ওয়া ‘উলুওওয়ান ফানজু র কাইফা কা-না ‘আ-কিবাতুল মুফছিদীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা সীমালঙ্ঘন ও অহমিকাবশত তা সব অস্বীকার করল, যদিও তাদের অন্তর সেগুলো (সত্য বলে) বিশ্বাস করে নিয়েছিল। সুতরাং দেখে নাও ফাসাদকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল! ৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা অন্যায় ও অহংকার করে নিদর্শনাবলীকে প্রত্যাখ্যান করল, যদিও তাদের অন্তর এগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতএব দেখুন, অনর্থকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা অন্যায় ও উদ্ধতভাবে নিদর্শনগুলি প্রত্যাখ্যান করল, যদিও এদের অন্তর এগুলিকে সত্য বলে গ্রহণ করেছিল। দেখ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল!


তাফসীরঃ

৮. তাদের সে পরিণামের বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা ইউনুস (১০ : ৯০-৯২) ও সূরা শুআরা (২৬ : ৬০-৬৬)।


১৫


وَلَقَدۡ اٰتَیۡنَا دَاوٗدَ وَسُلَیۡمٰنَ عِلۡمًا ۚ وَقَالَا الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ الَّذِیۡ فَضَّلَنَا عَلٰی کَثِیۡرٍ مِّنۡ عِبَادِہِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ


ওয়া লাকাদ আ-তাইনা-দা-ঊদা ওয়া ছুলাইমা-না ‘ইলমান ওয়া কা-লাল হামদুলিল্লাহিল্লাযী ফাদ্দালানা-‘আলা-কাছীরিম মিন ‘ইবা-দিহিল মু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে তার বহু মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি অবশ্যই দাউদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম। তাঁরা বলে ছিলেন, আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আমাদেরকে তাঁর অনেক মুমিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি অবশ্যই দাঊদ ও সুলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এবং তারা উভয়ে বলেছিল, সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র যিনি আমাদেরকে তার বহু মু’মিন বান্দাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।’


১৬


وَوَرِثَ سُلَیۡمٰنُ دَاوٗدَ وَقَالَ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ عُلِّمۡنَا مَنۡطِقَ الطَّیۡرِ وَاُوۡتِیۡنَا مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ ؕ اِنَّ ہٰذَا لَہُوَ الۡفَضۡلُ الۡمُبِیۡنُ


ওয়া ওয়ারিছা ছুলাইমা-নুদা-ঊদা ওয়া কা-লা ইয়াআইয়ুহান্না-ছু‘উলিলমনামানতিকাততাইরি ওয়াঊতীনা-মিন কুল্লি শাইয়িন ইন্না হা-যা-লাহুওয়াল ফাদলুল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুলাইমান দাঊদের উত্তরাধিকার লাভ করল ৯ এবং সে বলল, হে মানুষ! আমাদেরকে পাখিদের বুলি শেখানো হয়েছে ১০ এবং আমাদেরকে সমস্ত (প্রয়োজনীয়) জিনিস দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটা (আল্লাহ তাআলার) সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মান দাউদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘হে লোক সকল, আমাকে উড়ন্ত পক্ষীকূলের ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছে এবং আমাকে সব কিছু দেয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব। ’


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান হয়েছিল দাঊদের উত্তরাধিকারী এবং সে বলেছিল, ‘হে মানুষ! আমাকে বিহংগকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে সকল কিছু দেওয়া হয়েছে, এটা অবশ্যই সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।’


তাফসীরঃ

৯. প্রকাশ থাকে যে, নবী-রাসূলগণের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন হয় না। একটি সহীহ হাদীসে সুস্পষ্টভাবেই তা বলা আছে। কাজেই এ আয়াতে যে উত্তরাধিকার প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে, তার মানে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নয়; বরং এর অর্থ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নবুওয়াত ও রাজত্বে তাঁর মহান পিতা হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের স্থলাভিষিক্ত হন।


১০. আল্লাহ তাআলা হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে পাখির ভাষা শিক্ষা দিয়েছিলেন। ফলে কোন পাখি কী বলছে তা বুঝে ফেলতেন; বরং সামনে পিঁপড়েদের যে ঘটনা আসছে তা দ্বারা বোঝা যায় তিনি অন্যান্য জীব-জন্তুর ভাষাও বুঝতেন। নবীগণের মধ্যে এটা তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। বলাবাহুল্য, তাঁর পাখির ভাষা বুঝতে পারাটা প্রতীকী অর্থে নয়; বরং প্রকৃত অর্থেই বলা হয়েছে। আর আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতা দৃষ্টে এটা অসম্ভব ব্যাপার নয়। আধুনিক কোন কোন মুফাসসিরের কী জানি কেন এ বিষয়টা মেনে নিতে বড় কষ্ট হয়েছে, যে কারণে তারা এর দূর-দূরান্তের ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন আর এভাবে তারা কুরআনী আয়াতের অবান্তর ব্যাখ্যাদানের দুয়ার খুলেছেন। অথচ এটা স্পষ্ট বিষয় যে, পশু-পাখিরও একটা বুলি আছে, যা দ্বারা তারা পরস্পরে ভাব বিনিময় করে থাকে। আমাদের পক্ষে যতই অবোধগম্য হোক না কেন, যেই মহান স্রষ্টা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মুখে বুলিও দিয়েছেন, তিনি তো তাদের বুলি জানেন ও বোঝেন! সুতরাং তিনি যদি সে বুলি তাঁর কোন নবীকেও শিখিয়ে দেন, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?


১৭


وَحُشِرَ لِسُلَیۡمٰنَ جُنُوۡدُہٗ مِنَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ وَالطَّیۡرِ فَہُمۡ یُوۡزَعُوۡنَ


ওয়া হুশিরা লিছুলাইমা-না জুনূদুহূমিনাল জিন্নি ওয়াল ইনছি ওয়াততাইরি ফাহুম ইউঝা‘উন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুলাইমানের জন্য তার সমস্ত সৈন্য সমবেত করা হয়েছিল যা ছিল জিন্ন, মানুষ ও পাখি-সম্বলিত। তাদেরকে রাখা হত নিয়ন্ত্রণে। ১১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মানের সামনে তার সেনাবাহিনীকে সমবেত করা হল। জ্বিন-মানুষ ও পক্ষীকুলকে, অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যূহে বিভক্ত করা হল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মানের সামনে সমবেত করা হল তার বাহিনীকে-জিন, মানুষ ও বিহংগকুলকে এবং এদেরকে বিন্যস্ত করা হল বিভিন্ন ব্যূহে।

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

তাফসীরঃ

১১. বোঝানো উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা সুলাইমান আলাইহিস সালামকে যে রাজত্ব দিয়েছিলেন, তা কেবল মানুষের মধ্যেই সীমিত ছিল না; বরং জিন ও পশু-পাখির উপরও তা ব্যাপ্ত ছিল। তিনি যখন কোন দিকে বের হতেন, তখন তার সেনাদলে যেমন থাকত মানুষ, তেমনি থাকত জিন ও পাখির দল। এভাবে তার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা এত বিপুল হয়ে যেত যে, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হত। তাই বলে যে তাদের মধ্যে কখনও বিশৃঙ্খলা দেখা দিত এমন নয়; বরং তাদের মধ্যে সর্বদা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকত।


১৮


حَتّٰۤی اِذَاۤ اَتَوۡا عَلٰی وَادِ النَّمۡلِ ۙ قَالَتۡ نَمۡلَۃٌ یّٰۤاَیُّہَا النَّمۡلُ ادۡخُلُوۡا مَسٰکِنَکُمۡ ۚ لَا یَحۡطِمَنَّکُمۡ سُلَیۡمٰنُ وَجُنُوۡدُہٗ ۙ وَہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ


হাত্তাইযাআতাও ‘আলা-ওয়া-দিন্নামলি কা-লাত নামলাতুইঁ ইয়াআইয়ুহান্নামলুদ খুলূমাছা-কিনাকুম লা-ইয়াহতিমান্নাকুম ছুলাইমা-নুওয়া জুনূদুহূ ওয়াহুম লা-ইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

একদিন যখন তারা পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছল, তখন এক পিঁপড়ে বলল, ওহে পিঁপড়েরা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষে ফেলে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তারা পিপীলিকা অধ্যূষিত উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিপীলিকা বলল, হে পিপীলিকার দল, তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এরা পিপীলিকা-অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছিল তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকা-বাহিনী! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর, যেন সুলায়মান এবং তার বাহিনী তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে পদতলে পিষিয়া না ফেলে।’


১৯


فَتَبَسَّمَ ضَاحِکًا مِّنۡ قَوۡلِہَا وَقَالَ رَبِّ اَوۡزِعۡنِیۡۤ اَنۡ اَشۡکُرَ نِعۡمَتَکَ الَّتِیۡۤ اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ وَعَلٰی وَالِدَیَّ وَاَنۡ اَعۡمَلَ صَالِحًا تَرۡضٰىہُ وَاَدۡخِلۡنِیۡ بِرَحۡمَتِکَ فِیۡ عِبَادِکَ الصّٰلِحِیۡنَ


ফাতাবাছছামা দা-হিকাম মিন কাওলিহা-ওয়া কা-লা রাব্বি আওঝি‘নীআন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতীআন‘আমতা ‘আলাইইয়া ওয়া ‘আলা-ওয়া-লিদাইইয়া ওয়াআন আ‘মালা সালিহান তারদা-হু ওয়া আদখিলনী বিরাহমাতিকা ফী ‘ইবাদিকাসসা-লিহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার কথায় সুলাইমান স্মিথ হেসে দিল এবং বলে উঠল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাওফীক দাও, যেন শুকর আদায় করতে পারি সেই সকল নি‘আমতের, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং করতে পারি এমন সৎকাজ, যা তুমি পছন্দ কর আর নিজ রহমতে তুমি আমাকে নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যাতে আমি তোমার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান এর উক্তিতে মৃদু হাস্য করল এবং বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও যাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমার প্রতি ও আমার পিতামাতার প্রতি তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্যে এবং যাতে আমি সৎকার্য করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর এবং তোমার অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের শামিল কর।’


২০


وَتَفَقَّدَ الطَّیۡرَ فَقَالَ مَا لِیَ لَاۤ اَرَی الۡہُدۡہُدَ ۫ۖ اَمۡ کَانَ مِنَ الۡغَآئِبِیۡنَ


ওয়া তাফাককাদাততাইরা ফাকা-লা মা-লিইয়া লাআরাল হুদহুদা আম কা-না মিনাল গাইবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সে (একবার) পাখিদের সন্ধান নিল। বলল, কী ব্যাপার! হুদহুদকে দেখছি না যে? সে কি অনুপস্থিত না কি?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মান পক্ষীদের খোঁজ খবর নিলেন, অতঃপর বললেন, কি হল, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান বিহংগদলের সন্ধান নিল এবং বলল, ‘ব্যাপার কি, হুদ্হুদ্কে দেখছি না যে! সে অনুপস্থিত না কি ?


২১


لَاُعَذِّبَنَّہٗ عَذَابًا شَدِیۡدًا اَوۡ لَاَاذۡبَحَنَّہٗۤ اَوۡ لَیَاۡتِیَنِّیۡ بِسُلۡطٰنٍ مُّبِیۡنٍ


লাউ‘আযযি বান্নাহূ ‘আযা-বান শাদীদান আও লাআযবাহান্নাহূআওলাইয়া’তিইয়ান্নী বিছুলতা-নিম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাকে কঠিন শাস্তি দিব অথবা তাকে যবাহ করে ফেলব যদি না সে আমার কাছে স্পষ্ট কোন কারণ দর্শায়। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘সে উপযুক্ত কারণ না দর্শাইলে আমি অবশ্যই একে কঠিন শাস্তি দিব বা যবেহ করব।’


তাফসীরঃ

১২. হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পাখিদের দ্বারা বিভিন্ন কাজ নিতেন, যেমন আকাশপথে সফরকালে উপরে এক ঝাঁক পাখি ডানা বিস্তার করে ছায়া দিত। কোন পাখি দ্বারা পানির সন্ধান নেওয়া হত এবং কোনওটি দ্বারা চিঠি পাঠানো হত। হুদহুদ পাখি সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, কোথাও মাটির নিচে পানি থাকলে সে তা বুঝতে পারে। এক-আধা হাত নিচে কেঁচো থাকলে সে তা টের পায় এবং মাটি খুঁড়ে তা বের করে ফেলে। আল্লাহ তাআলা সর্বশক্তিমান। তিনি বিশেষ-বিশেষ সৃষ্টিকে বিশেষ-বিশেষ ক্ষমতা ও অনুভব-শক্তি দান করতেই পারেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই (-অনুবাদক, তাফসীরে উসমানী অবলম্বনে)।


২২


فَمَکَثَ غَیۡرَ بَعِیۡدٍ فَقَالَ اَحَطۡتُّ بِمَا لَمۡ تُحِطۡ بِہٖ وَجِئۡتُکَ مِنۡ سَبَاٍۭ بِنَبَاٍ یَّقِیۡنٍ


ফামাকাছা গাইরা বা‘ঈদিন ফাকা-লা আহাততুবিমা-লামতুহিত বিহী ওয়াজি’তুকা মিন ছাবাইম বিনাবাইঁ ইয়াকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর হুদহুদ বেশি দেরি করল না এবং (এসে) বলল, আমি এমন বিষয় জেনেছি, যা আপনার জানা নেই। আমি আপনার কাছে সাবা দেশ থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি। ১৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিছুক্ষণ পড়েই হুদ এসে বলল, আপনি যা অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার কাছে সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অনতিবিলম্বে হুদ্হুদ্ এসে পড়ল এবং বলল, ‘আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি এবং ‘সাবা’ হতে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি।


তাফসীরঃ

১৩. সাবা একটি জাতির নাম। ইয়ামানের একটি অঞ্চলে তারা বসবাস করত। সেই জাতির নাম অনুসারে অঞ্চলটিকেও সাবা বলা হত। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের রাজত্বকালে এক রাণী সে দেশ শাসন করত। ঐতিহাসিক বর্ণনাসমূহে তার নাম বলা হয়েছে, ‘বিলকীস’।


২৩


اِنِّیۡ وَجَدۡتُّ امۡرَاَۃً تَمۡلِکُہُمۡ وَاُوۡتِیَتۡ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ وَّلَہَا عَرۡشٌ عَظِیۡمٌ


ইন্নী ওয়াজাততুম রাআতান তামলিকুহুম ওয়া ঊতিইয়াত মিন কুল্লি শাইয়িওঁ ওয়া লাহা-‘আরশুন ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি সেখানে এক নারীকে সেখানকার লোকদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি। ১৪ তাকে সর্বপ্রকার আসবাব- উপকরণ দেওয়া হয়েছে। আর তার একটি বিরাট সিংহাসনও আছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি এক নারীকে সাবাবাসীদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমি তো এক নারীকে দেখলাম এদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে দেওয়া হয়েছে সকল কিছু হতেই এবং তার আছে এক বিরাট সিংহাসন।


তাফসীরঃ

১৪. হুদহুদের কাছে অবাক লেগেছে এ কারণে যে, একজন নারী গোটা একটা সম্প্রদায়কে শাসন করে এরূপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন সে আর কখনও হয়নি। তার কাছে এটা যেন স্বভাব-প্রকৃতিরও বিপরীত মনে হচ্ছিল। হাদীসেও আছে ‘সেই জাতি কখনও সফল হতে পারে না, যে তার শাসনভার কোন নারীর হাতে ন্যস্ত করে’। -অনুবাদক


২৪


وَجَدۡتُّہَا وَقَوۡمَہَا یَسۡجُدُوۡنَ لِلشَّمۡسِ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَزَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَہُمۡ فَصَدَّہُمۡ عَنِ السَّبِیۡلِ فَہُمۡ لَا یَہۡتَدُوۡنَ ۙ


ওয়া জাততুহা-ওয়া কাওমাহা-ইয়াছজুদূনা লিশশামছি মিন দূনিল্লা-হি ওয়া ঝাইইয়ানা লাহুমুশ শাইতা-নুআ‘মা-লাহুম ফাসাদ্দাহুম ‘আনিছছাবীলি ফাহুম লা-ইয়াহতাদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি সেই নারী ও তার সম্প্রদায়কে দেখেছি আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সিজদা করছে। শয়তান তাদের কাছে, তাদের কার্যকলাপকে শোভনীয় করে দেখিয়েছে। এভাবে সে তাদেরকে সঠিক পথ থেকে নিবৃত্ত রেখেছে, ফলে তারা হেদায়াত পাচ্ছে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহ্ র পরিবর্তে সূর্যকে সিজ্দা করতেছে। শয়তান এদের কার্যাবলী এদের নিকট শোভন করেছে এবং এদেরকে সৎপথ হতে নিবৃত্ত করেছে, ফলে এরা সৎপথ পায় না;


২৫


اَلَّا یَسۡجُدُوۡا لِلّٰہِ الَّذِیۡ یُخۡرِجُ الۡخَبۡءَ فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ وَیَعۡلَمُ مَا تُخۡفُوۡنَ وَمَا تُعۡلِنُوۡنَ


আল্লা-ইয়াছজুদূলিল্লা-হিল্লাযী ইউখরিজুলখাবআফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ালআরদি ওয়া ইয়া‘লামুমা-তুখফূনা ওয়ামা-তু‘লিনূন(ছিজদাহ-৮)।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(সে তাদেরকে নিবৃত্ত রেখেছে), যাতে তারা সিজদা না করে আল্লাহকে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর গুপ্ত বিষয়াবলী প্রকাশ করেন এবং তোমরা যা গোপন কর ও যা প্রকাশ কর সবই জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহকে সেজদা করে না কেন, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের গোপন বস্তু প্রকাশ করেন এবং জানেন যা তোমরা গোপন কর ও যা প্রকাশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘নিবৃত্ত করেছে এইজন্যে যে, এরা যেন সিজ্দা না করে আল্লাহ্কে যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর লুক্কায়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর।


২৬


اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ ٛ


আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা-হুওয়া রাব্বুল ‘আরশিল ‘আজীম ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়, তিনি মহা আরশের অধিপতি।*


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তিনি মহাআরশের অধিপতি।’


২৭


قَالَ سَنَنۡظُرُ اَصَدَقۡتَ اَمۡ کُنۡتَ مِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ


কা-লা ছানানজুরু আসাদাকতা আম কুনতা মিনাল কা-যিবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুলাইমান বলল, আমি এখনই দেখছি তুমি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদীদের একজন হয়ে গেছ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মান বললেন, এখন আমি দেখব তুমি সত্য বলছ, না তুমি মিথ্যবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান বলল, ‘আমি দেখিব তুমি কি সত্য বলেছ, না তুমি মিথ্যাবাদী ?


২৮


اِذۡہَبۡ بِّکِتٰبِیۡ ہٰذَا فَاَلۡقِہۡ اِلَیۡہِمۡ ثُمَّ تَوَلَّ عَنۡہُمۡ فَانۡظُرۡ مَاذَا یَرۡجِعُوۡنَ


ইযহাব বিকিতা-বী হা-যা-ফাআলকিহ ইলাইহিম ছু ম্মা তাওয়াল্লা ‘আনহুম ফানজুরমাযা-ইয়ারজি‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার এ চিঠি নিয়ে যাও। এটি তাদের সামনে ফেলে দেবে তারপর তাদের থেকে সরে যাবে এবং লক্ষ্য করবে তারা এর জবাবে কী করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও এবং এটা তাদের কাছে অর্পন কর। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় এবং দেখ, তারা কি জওয়াব দেয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি যাও আমার এই পত্র নিয়ে এবং এটা তাদের নিকট অর্পণ কর ; এরপর তাদের নিকট হতে সরে থেক এবং লক্ষ্য কর তাদের প্রতিক্রিয়া কী ?’


২৯


قَالَتۡ یٰۤاَیُّہَا الۡمَلَؤُا اِنِّیۡۤ اُلۡقِیَ اِلَیَّ کِتٰبٌ کَرِیۡمٌ


কা-লাত ইয়াআইয়ুহাল মালাউ ইন্নীউলকিয়া ইলাইইয়া কিতা-বুন কারীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(সুতরাং হুদহুদ তাই করল। তারপর) রাণী (তার দরবারের লোকদেরকে) বলল, হে জাতির নেতৃবর্গ! আমার সামনে একটি মর্যাদাসম্পন্ন চিঠি ফেলা হয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই নারী বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেওয়া হয়েছে ;


৩০


اِنَّہٗ مِنۡ سُلَیۡمٰنَ وَاِنَّہٗ بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ


ইন্নাহূমিন ছুলাইমা-না ওয়া ইন্নাহূবিছমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা এসেছে সুলাইমানের পক্ষ থেকে। তা শুরু করা হয়েছে আল্লাহর নামে, যিনি রহমান ও রাহীম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেই পত্র সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা এইঃ সসীম দাতা, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে শুরু;


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এটা সুলায়মানের নিকট হতে এবং এটা এই : দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহ্ র নামে,


৩১


اَلَّا تَعۡلُوۡا عَلَیَّ وَاۡتُوۡنِیۡ مُسۡلِمِیۡنَ ٪


আল্লা-তা‘লূ‘আলাইইয়া ওয়া’তূনী মুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তাতে সে লিখেছে) আমার উপর অহমিকা দেখিও না। বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে চলে এসো। ১৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমার মোকাবেলায় শক্তি প্রদর্শন করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অহমিকাবশে আমাকে অমান্য কর না, এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও।’


তাফসীরঃ

১৫. অনুমান করা যায়, ইয়ামানের এ অঞ্চলটিও হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের সাম্রাজ্যভুক্ত ছিল। কিন্তু কোনও এক সময়ে এ নারী সেখানে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য গোপন চেষ্টা চালান এবং তাতে সফলতাও লাভ করেন। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম হুদহুদের মাধ্যমে এ খবর জানতে পেরে, যেমনটা কুরআন মাজীদ বলছে, এই সংক্ষিপ্ত অথচ দ্ব্যর্থহীন ও দৃঢ়ভাষ পত্রখানি লেখেন। বিস্তারিত কোন বক্তব্য নয়; বরং এতে তিনি বিলকীস ও তাঁর সম্প্রদায়কে অবাধ্যতা পরিহার করে আনুগত্য স্বীকার করার হুকুম দিয়েছেন। [এমন সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণাঙ্গ ও তেজস্বী পত্র কদাচ কেউ লিখে থাকবে তাফসীরে উছমানী]


৩২


قَالَتۡ یٰۤاَیُّہَا الۡمَلَؤُا اَفۡتُوۡنِیۡ فِیۡۤ اَمۡرِیۡ ۚ مَا کُنۡتُ قَاطِعَۃً اَمۡرًا حَتّٰی تَشۡہَدُوۡنِ


কা-লাত ইয়াআইয়ুহাল মালাউ আফতূনী ফীআমরী মা-কুনতুকা-তি‘আতান আমরান হাত্তা-তাশহাদূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

রাণী বলল, ওহে জাতির নেতৃবৃন্দ! যে সমস্যাটি আমার সামনে দেখা দিয়েছে, এ বিষয়ে তোমরা আমাকে সিদ্ধান্তমূলক পরামর্শ দাও। আমি কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, যতক্ষণ না তোমরা আমার কাছে উপস্থিত থাক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বিলকীস বলল, হে পরিষদবর্গ, আমাকে আমার কাজে পরামর্শ দাও। তোমাদের উপস্থিতি ব্যতিরেকে আমি কোন কাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই নারী বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! আমার এই সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও। আমি কোন ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না তোমাদের উপস্থিতি ব্যতীত।


৩৩


قَالُوۡا نَحۡنُ اُولُوۡا قُوَّۃٍ وَّاُولُوۡا بَاۡسٍ شَدِیۡدٍ ۬ۙ وَّالۡاَمۡرُ اِلَیۡکِ فَانۡظُرِیۡ مَاذَا تَاۡمُرِیۡنَ


কা-লূনাহনুঊলূকুওওয়াতিওঁ ওয়া উলূবা’ছিন শাদীদিওঁ ওয়াল আমরু ইলাইকি ফানজু রী মা-যা-তা’মুরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমরা শক্তিশালী লোক এবং প্রচণ্ড লড়াকু। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার আপনার। সুতরাং ভেবে দেখুন কি হুকুম দেবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলল, আমরা শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। অতএব আপনি ভেবে দেখুন, আমাদেরকে কি আদেশ করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমরা তো শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই, কী আদেশ করবেন তা আপনি ভেবে দেখুন।’


৩৪


قَالَتۡ اِنَّ الۡمُلُوۡکَ اِذَا دَخَلُوۡا قَرۡیَۃً اَفۡسَدُوۡہَا وَجَعَلُوۡۤا اَعِزَّۃَ اَہۡلِہَاۤ اَذِلَّۃً ۚ وَکَذٰلِکَ یَفۡعَلُوۡنَ


কা-লাত ইন্নাল মুলূকা ইযা-দাখালূকারইয়াতান আফছাদূ হা-ওয়া জা‘আলূ আ‘ইঝঝাতা আহলিহাআযিল্লাতাওঁ ওয়া কাযা-লিকা ইয়াফ‘আলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

রাণী বলল, প্রকৃত ব্যাপার হল, রাজা-বাদশাগণ যখন কোন জনপদে ঢুকে পড়ে, তখন তাকে যেরবার করে ফেলে এবং তার মর্যাদাবান বাসিন্দাদেরকে লাঞ্ছিত করে ছাড়ে। এরাও তো তাই করবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বলল, রাজা বাদশারা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপই করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘রাজা-বাদশাহ্রা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন একে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে, এরাও এইরূপই করবে;


৩৫


وَاِنِّیۡ مُرۡسِلَۃٌ اِلَیۡہِمۡ بِہَدِیَّۃٍ فَنٰظِرَۃٌۢ بِمَ یَرۡجِعُ الۡمُرۡسَلُوۡنَ


ওয়া ইন্নী মুরছিলাতুন ইলাইহিম বিহাদিইইয়াতিন ফানা-জিরাতুম বিমা ইয়ারজি‘উল মুরছালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বরং আমি তাদের কাছে উপঢৌকন পাঠাব। তারপর দেখব দূতেরা কী উত্তর নিয়ে ফেরে। ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাঁর কাছে কিছু উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি প্রেরিত লোকেরা কি জওয়াব আনে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, দেখি, দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে।’


তাফসীরঃ

১৬. সম্ভবত নবুওয়াতী পত্রের অসামান্য শক্তি বিলকীসের অন্তরে এক অনির্বচনীয় প্রভাব বিস্তার করেছিল। পত্রের এতটা শৌর্য যে কেবল রাজকীয় বলবত্তা থেকে উৎসারিত নয়; বরং এর উৎস অন্য কোথাও, সে রকম কিছু হয়তো তিনি আঁচ করতে পেরেছিলেন। সেই বোধ থেকেই তিনি উপহার-সামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। ইচ্ছা পরীক্ষা করে দেখা হযরত সুলাইমান (আ.) তা কবুল করেন কিনা। কবুল করলে বোঝা যাবে তিনি কেবলই একজন রাজা এবং রাজাদের মতোই অর্থ ও ক্ষমতার মোহ দ্বারা তিনি চালিত। সে মতে তার সাথে বোঝা পড়া করার সুযোগ থাকবে। পক্ষান্তরে তিনি যদি তা প্রত্যাখ্যান করেন, তবে বুঝতে হবে তিনি পার্থিব লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে এবং কোন ঐশ্বরিক যোগাযোগ তার মধ্যে ক্রিয়াশীল। সে ক্ষেত্রে বোঝা পড়ার চিন্তা ত্যাগ করে নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশই হবে সুবুদ্ধির পরিচায়ক। -অনুবাদক


৩৬


فَلَمَّا جَآءَ سُلَیۡمٰنَ قَالَ اَتُمِدُّوۡنَنِ بِمَالٍ ۫ فَمَاۤ اٰتٰىنِۦَ اللّٰہُ خَیۡرٌ مِّمَّاۤ اٰتٰىکُمۡ ۚ بَلۡ اَنۡتُمۡ بِہَدِیَّتِکُمۡ تَفۡرَحُوۡنَ


ফালাম্মা-জাআ ছুলাইমা-না কা-লা আতুমিদ্দূনানি বিমা-লিন ফামাআ-তা-নিইয়াল্লাহু খাইরুম মিম্মাআ-তা-কুম বাল আনতুম বিহাদিইইয়াতিকুম তাফ রাহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর দূত যখন সুলাইমানের কাছে উপস্থিত হল, সে বলল, তোমরা কি অর্থ দ্বারা আমার সাহায্য করতে চাও? বস্তুত আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট, অথচ তোমরা তোমাদের উপহার-সামগ্রী নিয়ে উৎফুল্ল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন দূত সুলায়মানের কাছে আগমন করল, তখন সুলায়মান বললেন, তোমরা কি ধনসম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে সুখে থাক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

দূত সুলায়মানের নিকট আসলে সুলায়মান বলল, ‘তোমরা কি আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করছো ? আল্লাহ্ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে উৎফুল্ল বোধ করছো।


৩৭


اِرۡجِعۡ اِلَیۡہِمۡ فَلَنَاۡتِیَنَّہُمۡ بِجُنُوۡدٍ لَّا قِبَلَ لَہُمۡ بِہَا وَلَنُخۡرِجَنَّہُمۡ مِّنۡہَاۤ اَذِلَّۃً وَّہُمۡ صٰغِرُوۡنَ


ইরজি‘ ইলাইহিম ফালানা’তিইয়ান্নাহুম বিজুনূদিল লা-কিবালা লাহুম বিহা-ওয়ালানুখরিজান্নাহুম মিনহাআযিল্লাতাওঁ ওয়াহুম সা-গিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফিরে যাও তাদের কাছে। আমি তাদের কাছে এমন এক সেনাদল নিয়ে আসব, যার মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই এবং আমি তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিতভাবে বের করে দেব আর তারা হয়ে যাবে অবনমিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফিরে যাও তাদের কাছে। এখন অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মোকাবেলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে অপদস্থ করে সেখান থেকে বহিষ্কৃত করব এবং তারা হবে লাঞ্ছিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এদের নিকট ফিরে যাও, আমি অবশ্যই এদের বিরুদ্ধে নিয়ে আসিব এক সৈন্যবাহিনী যার মুকাবিলা করার শক্তি এদের নেই। আমি অবশ্যই এদেরকে সেখান হতে বহিষ্কার করব লাঞ্ছিতভাবে এবং এরা হবে অবনমিত।’


৩৮


قَالَ یٰۤاَیُّہَا الۡمَلَؤُا اَیُّکُمۡ یَاۡتِیۡنِیۡ بِعَرۡشِہَا قَبۡلَ اَنۡ یَّاۡتُوۡنِیۡ مُسۡلِمِیۡنَ


কা-লা ইয়াআইয়ুহাল মালাউ আইয়ুকুম ইয়া’তীনী বি‘আরশিহা-কাবলা আইঁ ইয়া’তূনী মুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুলাইমান বলল, ওহে দরবারীগণ! কে আছে তোমাদের মধ্যে, যে তারা বশ্যতা স্বীকার করে আসার আগেই আমার কাছে তার সিংহাসন নিয়ে আসবে? ১৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্নসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে বিলকীসের সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান আরো বলল, ‘হে আমার পারিষদবর্গ! তারা আত্মসমর্পণ করে আমার নিকট আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে ?’


তাফসীরঃ

১৭. হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম রাণীর সামনে একটা মুজিযা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলেন। এজন্য তিনি রাণীর সিংহাসনটিকেই বেছে নেন। রাণী এসে পৌঁছার আগেই যদি তাঁর বিশাল ভারী সিংহাসনটি হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবারে হাজির হয়ে যায়, তবে এক অলৌকিক কাণ্ড হিসেবে তা রাণীকে অবশ্যই প্রভাবিত করবে এবং তাঁর নবুওয়াতের শক্তি ও সত্যতা তাঁর সামনে পরিস্ফুট হয়ে ওঠবে।


৩৯


قَالَ عِفۡرِیۡتٌ مِّنَ الۡجِنِّ اَنَا اٰتِیۡکَ بِہٖ قَبۡلَ اَنۡ تَقُوۡمَ مِنۡ مَّقَامِکَ ۚ وَاِنِّیۡ عَلَیۡہِ لَقَوِیٌّ اَمِیۡنٌ


কা-লা ‘ইফরীতুম মিনাল জিন্নি আনা আ-তীকা বিহী কাবলা আন তাকূমা মিম মাকা-মিকা ওয়া ইন্নী ‘আলাইহি লাকাওওয়িয়ুন আমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এক বলিষ্ঠদেহী জীন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি সেটি আপনার কাছে নিয়ে আসব। নিশ্চয়ই আমি এ কাজে সক্ষম, (এবং আমি) বিশ্বস্তও বটে। ১৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং আমি একাজে শক্তিবান, বিশ্বস্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান হতে উঠবার পূর্বেই আমি তা এনে দিব এবং এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান, বিশ্বস্ত।’


তাফসীরঃ

১৮. যে ব্যক্তি বলেছিল হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের দরবার শেষ হওয়ার আগেই সিংহাসনটি তাঁর কাছে এনে দেবে, সে ছিল জিন। সে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামকে এই বলে আশ্বস্ত করেছিল যে, সিংহাসনটি এনে দেওয়ার মত ক্ষমতা তো তার আছেই। সেই সঙ্গে সে আমানতদারও বটে। কাজেই তাতে যে সোনা-রুপা, হীরা-জহরত আছে তার কোনরূপ এদিক-সেদিক হবে না।


৪০


قَالَ الَّذِیۡ عِنۡدَہٗ عِلۡمٌ مِّنَ الۡکِتٰبِ اَنَا اٰتِیۡکَ بِہٖ قَبۡلَ اَنۡ یَّرۡتَدَّ اِلَیۡکَ طَرۡفُکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰہُ مُسۡتَقِرًّا عِنۡدَہٗ قَالَ ہٰذَا مِنۡ فَضۡلِ رَبِّیۡ ۟ۖ لِیَبۡلُوَنِیۡۤ ءَاَشۡکُرُ اَمۡ اَکۡفُرُ ؕ وَمَنۡ شَکَرَ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِہٖ ۚ وَمَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ رَبِّیۡ غَنِیٌّ کَرِیۡمٌ


কা-লাল্লাযী ‘ইনদাহূ‘ইলমুম মিনাল কিতা-বি আনা আ-তীকা বিহী কাবলা আইঁ ইয়ারতাদ্দা ইলাইকা তারফুকা ফালাম্মা-রাআ-হু মুছতাকিররান ইনদাহূকা-লা হা-যা-মিন ফাদলি রাববী লিইয়াবলুওয়ানী আআশকুরু আম আকফুরু ওয়া মান শাকারা ফাইন্নামা-ইয়াশকুরু লিনাফছিহী ওয়ামান কাফারা ফাইন্না রাববী গানিইয়ুন কারীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যার কাছে ছিল কিতাবের ইলম, সে বলল, আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই তা আপনার সামনে এনে দেব। ১৯ অনন্তর সুলাইমান যখন সিংহাসনটি নিজের সামনে রাখা অবস্থায় দেখল, তখন বলে উঠল, এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে চান যে, আমি কৃতজ্ঞতা আদায় করি, না অকৃতজ্ঞতা করি? যে-কেউ কৃতজ্ঞতা আদায় করে, সে তো কৃতজ্ঞতা আদায় করে নিজেরই উপকারার্থে। আর কেউ অকৃতজ্ঞতা করলে আমার প্রতিপালক তো ঐশ্বর্যশালী, মহানুভব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব। অতঃপর সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, না অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং যে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে জানুক যে, আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত কৃপাশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দিব।’ সুলায়মান যখন তা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন সে বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন-আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেরই কল্যাণের জন্যে এবং যে অকৃতজ্ঞ, সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।’


তাফসীরঃ

১৯. ‘যার কাছে ছিল কিতাবের ইলম’, কে ছিল এই ব্যক্তি? কুরআন মাজীদ এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেনি। এটাই বেশি প্রকাশ যে, কিতাবের ইলম দ্বারা তাওরাতের ইলম বোঝানো হয়েছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, ইনি ছিলেন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের মন্ত্রী আসাফ ইবনে বারখিয়া। তাঁর ‘ইসমে আযম’ জানা ছিল আর সেই শক্তিতেই দাবি করেছিলেন, চোখের পলকের ভেতর তিনি সিংহাসনটি এনে দিতে পারবেন। অপর দিকে ইমাম রাযী (রহ.)-সহ অনেকে এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন যে, ইনি ছিলেন খোদ হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম। কেননা কিতাবের ইলম তাঁর যেমনটা ছিল সে পরিমাণ তখন আর কারওই ছিল না। প্রথমে তিনি দরবারী লোকজন বিশেষত জিন্নদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, এমন কে আছে, যে বিলকীস এসে পৌঁছার আগেই তাঁর সিংহাসনটি আমার কাছে এনে দিতে পারবে? বস্তুত এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জিন্নদের দর্প চূর্ণ করা। সুতরাং যখন একজন জিন্ন দর্পভরে বলে উঠল, আমি আপনার দরবার শেষ হওয়ার আগেই সেটি এনে দেব, তখন তার কথার পিঠে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজেই বললেন, তুমি তো দরবার শেষ হওয়ার কথা বলছ। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় আমি মুজিযাস্বরূপ সেটি তোমার চোখের পলকের ভেতর এখানে নিয়ে আসব। খুব সম্ভব এই বলে তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করলেন এবং আল্লাহ তাআলা সেই মুহূর্তে বিলকীসের সিংহাসনটি সেখানে আনিয়ে দিলেন।


৪১


قَالَ نَکِّرُوۡا لَہَا عَرۡشَہَا نَنۡظُرۡ اَتَہۡتَدِیۡۤ اَمۡ تَکُوۡنُ مِنَ الَّذِیۡنَ لَا یَہۡتَدُوۡنَ


কা-লা নাক্কিরূলাহা- ‘আরশাহা- নানজু র আতাহতাদীআম তাকূনুমিনাল্লাযীনা লা ইয়াহতাদূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুলাইমান (তাঁর অনুচরদেরকে) বলল, তোমরা রাণীর সিংহাসনটিকে তার পক্ষে অচেনা বানিয়ে দাও, ২০ দেখি সে এর দিশা পায়, না কি সে যারা সত্যে উপনীত হতে পারে না তাদের অন্তর্ভুক্ত?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুলায়মান বললেন, বিলকীসের সামনে তার সিংহাসনের আকার-আকৃতি বদলিয়ে দাও, দেখব সে সঠিক বুঝতে পারে, না সে তাদের অন্তর্ভুক্ত, যাদের দিশা নেই ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুলায়মান বলল, ‘তার সিংহাসনের আকৃতি অপরিচিত করে বদলিয়ে দাও; দেখি সে সঠিক দিশা পায়, না সে বিভ্রান্তদের শামিল হয়;


তাফসীরঃ

২০. ‘এটিকে অচেনা বানিয়ে দাও’, অর্থাৎ, এর আকৃতিতে এমন কোন পরিবর্তন আন, যাতে এটি চিনতে তার কষ্ট হয় এবং এর দ্বারা তার বুদ্ধিমত্তা যাচাই করা যায়।


৪২


فَلَمَّا جَآءَتۡ قِیۡلَ اَہٰکَذَا عَرۡشُکِ ؕ قَالَتۡ کَاَنَّہٗ ہُوَ ۚ وَاُوۡتِیۡنَا الۡعِلۡمَ مِنۡ قَبۡلِہَا وَکُنَّا مُسۡلِمِیۡنَ


ফালাম্মা-জাআত কীলা আহা-কাযা-‘আরশুকি কা-লাত কাআন্নাহূহুওয়া ওয়া ঊতীনাল ‘ইলমা মিন কাবলিহা-ওয়া কুন্না-মুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিশেষে সে যখন আসল, জিজ্ঞেস করা হল, তোমার সিংহাসনটি কি এ রকম? সে বলল, যেন এটি সেটিই। ২১ আমাদেরকে তো এর আগেই (আপনার সত্যতা সম্পর্কে) জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল এবং আপনার আনুগত্যও স্বীকার করেছিলাম। ২২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন বিলকীস এসে গেল, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলল, মনে হয় এটা সেটাই। আমরা পূর্বেই সমস্ত অবগত হয়েছি এবং আমরা আজ্ঞাবহও হয়ে গেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই নারী যখন এলো, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তোমার সিংহাসন কি এইরূপই ?’ সে বলল, ‘এটা তো যেন ওটাই।’ আমাদেরকে ইতিপূর্বেই প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণও করেছি।’


তাফসীরঃ

২১. বিলকীস বুঝে ফেললেন সিংহাসনটির আকৃতিতে কিছুটা রদবদল করা হয়েছে। তাই এক দিকে তো তিনি নিশ্চিত করে বলেননি যে, ‘এটি সেটিই’; বরং ‘যেন’ শব্দ ব্যবহার করে এক মাত্রার সন্দেহ রেখে দিয়েছেন। অপর দিকে বাকভঙ্গি অবলম্বন করেছেন এমন, যা দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি সিংহাসনটি ঠিকই চিনতে পেরেছেন।


২২. অর্থাৎ, আপনি যে সত্য নবী তা বুঝাবার জন্য এ মুজিযা দেখার কোন প্রয়োজন আমার ছিল না; বরং আপনার দূতদের মারফত আপনার যে খবরাখবর পেয়েছিলাম, তা দ্বারাই আমি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম আপনি একজন সত্য নবী এবং তখনই আমি ইচ্ছা করেছিলাম আপনার আনুগত্য স্বীকার করব।


৪৩


وَصَدَّہَا مَا کَانَتۡ تَّعۡبُدُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ ؕ اِنَّہَا کَانَتۡ مِنۡ قَوۡمٍ کٰفِرِیۡنَ


ওয়াসাদ্দাহা-মা-কা-নাত তা‘বুদুমিন দূ নিল্লা-হি ইন্নাহা-কা-নাত মিন কাওমিন কাফিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে আল্লাহর পরিবর্তে যার পূজা করত তাই তাকে (ঈমান আনা হতে) নিবৃত্ত রেখেছিল এবং সে ছিল এক কাফের সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ত। ২৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর পরিবর্তে সে যার এবাদত করত, সেই তাকে ঈমান থেকে নিবৃত্ত করেছিল। নিশ্চয় সে কাফের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র পরিবর্তে সে যার পূজা করত তাই তাকে সত্য হতে নিবৃত্ত করেছে, সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।


তাফসীরঃ

২৩. বিলকীস যে বলেছিলেন, ‘আমাদেরকে তো এর আগেই আপনার সত্যতা সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল’, এটা ছিল তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও সত্যনিষ্ঠার পরিচায়ক। তাই আল্লাহ তাআলাও তাঁর প্রশংসা করছেন যে, বস্তুত সে এক বুদ্ধিমতি নারীই ছিল। তা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত ঈমান আনেনি, সেটা ছিল পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রভাব। তার সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ ছিল কাফের। এ রকম পরিবেশে থাকলে মানুষ কোন রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সকলের দেখাদেখি কাজ করে। সকলে সূর্যের পূজা করত, ব্যস সেও তাই করত। কিন্তু বুঝ-সমঝ যেহেতু ভালো ছিল, তাই যখন সত্যের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল, তখন আর দেরি করল না। পত্রপাঠ সত্য মেনে নিল।


৪৪


قِیۡلَ لَہَا ادۡخُلِی الصَّرۡحَ ۚ  فَلَمَّا رَاَتۡہُ حَسِبَتۡہُ لُجَّۃً وَّکَشَفَتۡ عَنۡ سَاقَیۡہَا ؕ  قَالَ اِنَّہٗ صَرۡحٌ مُّمَرَّدٌ مِّنۡ قَوَارِیۡرَ ۬ؕ  قَالَتۡ رَبِّ اِنِّیۡ ظَلَمۡتُ نَفۡسِیۡ وَاَسۡلَمۡتُ مَعَ سُلَیۡمٰنَ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ٪


কীলা লাহাদ খুলিসসারহা ফালাম্মা-রাআতহু হাছিবাতহু লুজ্জাতাওঁ ওয়া কাশাফাত ‘আন ছা-কাইহা- কা-লা ইন্নাহূছারহুম মুমার রাদুম মিন কাওয়ারীরা কা-লাত রাব্বি ইন্নী জালামতুনাফছী ওয়া আছলামতুমা‘আ ছুলাইমা-না লিল্লা-হি রাব্বিল ‘আ-লামীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাকে বলা হল, এই মহলে প্রবেশ কর। ২৪ যখন সে তা দেখল, তাকে জলাশয় মনে করল। তাই সে (কাপড় উঁচিয়ে) নিজ গোছা খুলে ফেলল। সুলাইমান বলল, এটা তো স্বচ্ছ শিশার ঢালাইকৃত মহল। রাণী বলল, হে আমার প্রতিপালক! বস্তুত (এ পর্যন্ত) আমি আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি। এক্ষণে আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য স্বীকার করে নিলাম। ২৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাকে বলা হল, এই প্রাসাদে প্রবেশ কর। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান বলল, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ। বিলকীস বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সাথে বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্নসমর্পন করলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাকে বলা হল, ‘এই প্রাসাদে প্রবেশ কর।’ যখন সে তা দেখল তখন সে একে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার পদদ্বয় অনাবৃত করল। সুলায়মান বলল, ‘এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক মণ্ডিত প্রাসাদ।’ সেই নারী বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছিলাম, আমি সুলায়মানের সঙ্গে জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ র নিকট আত্মসমর্পণ করছি।’


তাফসীরঃ

২৪. হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম দুনিয়া-প্রেমী লোকদের উপর প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে এক জমকালো শিশমহল নির্মাণ করেছিলেন। তার সামনের চত্বরে ছিল একটি জলাশয়। যার উপরে স্বচ্ছ শিশার ছাদ ঢালাই করে দিয়েছিলেন। গভীরভাবে লক্ষ্য না করলে শিশার ছাদটি চোখে পড়ত না। সরাসরি পানির উপরই নজর পড়ত এবং মনে হত সেটি একটি উন্মুক্ত জলাশয়। মহলে প্রবেশ করতে হত সেই জলাশয়ের উপর দিয়েই। সুতরাং বিলকীস যখন তাতে প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে চললেন, সামনে সেই জলাশয়টি পড়ল। সেটি যেহেতু গভীর ছিল না, তাই তিনি এগিয়ে যেতেই থাকলেন আর যাতে পরিধানের কাপড় ভিজে না যায়, তাই তা একটু উঁচিয়ে ধরলেন। তাতে তার পায়ের নলা ক্ষাণিকটা খুলে গেল। তখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তাঁকে বললেন, কাপড় উঁচানোর দরকার নেই। জলাশয়ের উপরে শিশাঢালা ছাদ রয়েছে। উপর দিয়ে গেলে ভেজার কোন আশঙ্কা নেই।


২৫. রাণী বিলকীস তো আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম সত্য নবী। তারপর যখন এই জমকালো শিশমহল দেখলেন তখন এই ভেবে অভিভূত হয়ে গেলেন যে, আল্লাহ তাআলা নবুওয়াতের সাথে সাথে দুনিয়ার দিক থেকেও তাঁকে কতটা শান-শওকত দান করেছেন। এতে তাঁর অন্তরে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। কাজেই কালক্ষেপণ না করে তাঁর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করলেন। আল্লাহ তাআলা এ ঘটনা উল্লেখ করে বান্দাকে বোঝাতে চাচ্ছেন, তাঁর প্রকৃত বান্দাগণ দুনিয়ার অর্থ-সম্পদ এবং রাজত্ব ও ক্ষমতা লাভ করার পর অকৃতজ্ঞ হয়ে যায় না; বরং তারা অধিকতর কৃতজ্ঞ ও অনুগত হয়ে ওঠে। দুনিয়ার ভোজবাজি তাদেরকে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী থেকে গাফেল করে দেয় না; বরং তারা যত পায় তত বেশি ইবাদতমগ্ন হয়ে ওঠে। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত।


৪৫


وَلَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰی ثَمُوۡدَ اَخَاہُمۡ صٰلِحًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ فَاِذَا ہُمۡ فَرِیۡقٰنِ یَخۡتَصِمُوۡنَ


ওয়া লাকাদ আরছালনাইলা-ছামূদা আখা-হুম সা-লিহান আনি‘বুদুল্লা-হা-ফাইযা-হুম ফারীকা-নি ইয়াখতাসিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি ছামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে বার্তা দিয়ে পাঠালাম যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। ২৬ অমনি তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরে বিতর্কে লিপ্ত হল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই সালেহকে এই মর্মে প্রেরণ করেছি যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। অতঃপর তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে প্রবৃত্ত হল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি অবশ্যই সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদের ভাই সালিহ্কে পাঠিয়েছিলাম এই আদেশসহ : ‘তোমরা আল্লাহ্ র ‘ইবাদত কর’, কিন্তু এরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হল।


তাফসীরঃ

২৬. ছামুদ জাতি ও হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের বৃত্তান্ত পূর্বে সূরা আরাফ (৭ : ৭২) ও সূরা হুদ (১১ : ৬১-৬৮)-এ চলে গেছে।


৪৬


قَالَ یٰقَوۡمِ لِمَ تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ بِالسَّیِّئَۃِ قَبۡلَ الۡحَسَنَۃِ ۚ لَوۡلَا تَسۡتَغۡفِرُوۡنَ اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ


কা-লা ইয়া-কাওমি লিমা তাছতা‘জিলূনা বিছছাইয়িআতি কাবলাল হাছানাতি লাওলাতাছতাগফিরূনাল্লা-হা লা‘আল্লাকুম তুরহামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সালেহ বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভালোর আগে মন্দকে কেন তাড়াতাড়ি চাচ্ছ? ২৭ তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সালেহ বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কল্যাণের পূর্বে দ্রুত অকল্যাণ কামনা করছ কেন? তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ না কেন? সম্ভবতঃ তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কেন কল্যাণের পূর্বে অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চাইছো ? কেন তোমরা আল্লাহ্ র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছো না, যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার ?’


তাফসীরঃ

২৭. ‘ভালো’ দ্বারা ঈমান ও ‘মন্দ’ দ্বারা আযাব বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, উচিত তো ছিল প্রথমে ঈমান এনে কল্যাণ হাসিল করা। কিন্তু তোমরা ঈমান আনার পরিবর্তে তোমাদেরকে শীঘ্র শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছ।


৪৭


قَالُوا اطَّیَّرۡنَا بِکَ وَبِمَنۡ مَّعَکَ ؕ قَالَ طٰٓئِرُکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ تُفۡتَنُوۡنَ


কা-লুততাইয়ারনা-বিকা ওয়া বিমাম মা‘আকা কা-লা তাইরুকুম ‘ইনদাল্লা-হি বাল আনতুম কাওমুন তুফতানূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমরা তো তোমাকে এবং তোমার সঙ্গীরদেরকে অশুভ মনে করি। ২৮ সালেহ বলল, তোমাদের অশুভতা আল্লাহর হাতে। বস্তুত তোমরা এমনই এক সম্প্রদায়, যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলল, তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা আছে, তাদেরকে আমরা অকল্যাণের প্রতীক মনে করি। সালেহ বললেন, তোমাদের মঙ্গলামঙ্গল আল্লাহর কাছে; বরং তোমরা এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘তোমাকে ও তোমার সঙ্গে যারা আছে তাদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি।’ সালিহ্ বলল, ‘তোমাদের শুভাশুভ আল্লাহ্ র ইখ্তিয়ারে, বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’


তাফসীরঃ

২৮. অর্থাৎ, তুমি নবুওয়াতের দাবি যখন করনি তখন আমরা সংঘবদ্ধ ছিলাম, আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি ছিল। কিন্তু তোমার নবুওয়াত দাবির পর আমাদের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। আমাদের জাতি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি এটা তোমার অশুভত্ব। কোন কোন বর্ণনায় প্রকাশ, তারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল এবং এটাকেও তারা হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের অপয়ত্ব সাব্যস্ত করেছিল।


২৯. অর্থাৎ, এটা তোমাদের কর্মেরই অশুভ পরিণতি, যা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এসেছে। এসেছে এজন্য যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান, বিপদ-আপদে তোমরা আল্লাহর শরণাপন্ন হও, নাকি নিজেদের দুষ্কর্মে অবিচলিত থাক।


৪৮


وَکَانَ فِی الۡمَدِیۡنَۃِ تِسۡعَۃُ رَہۡطٍ یُّفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ وَلَا یُصۡلِحُوۡنَ


ওয়া কা-না ফিল মাদীনাতি তিছ‘আতুরাহতিইঁ ইউফছিদূনা ফিল আরদিওয়ালা-ইউসলিহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং নগরে নয়জন লোক ছিল এমন, যারা যমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেড়াত, ইসলাহের কাজ করত না। ৩০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর সেই শহরে ছিল এমন একজন ব্যক্তি, যারা দেশময় অনর্থ সৃষ্টি করে বেড়াত এবং সংশোধন করত না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সৎকর্ম করত না।


তাফসীরঃ

৩০. এ নয়জন ছিল হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের জাতির নেতা। এদের প্রত্যেকের ছিল স্বতন্ত্র একেকটি দল। মুজিযা হিসেবে পাহাড় থেকে যে উটনী জন্ম নিয়েছিল, সেটিকে হত্যা করেছিল তারাই। এ হত্যার পরিণামে যখন তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার ফায়সালা হল এবং হযরত সালেহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলেন, তখন তারা ফন্দী আঁটল খোদ হযরত সালেহ আলাইহিস সালামকেই হত্যা করে ফেলবে; সঙ্গে তার পরিবারবর্গকেও। তারা শপথ করল রাতের বেলা একযোগে তাদের উপর হামলা চালাবে।


৪৯


قَالُوۡا تَقَاسَمُوۡا بِاللّٰہِ لَنُبَیِّتَنَّہٗ وَاَہۡلَہٗ ثُمَّ لَنَقُوۡلَنَّ لِوَلِیِّہٖ مَا شَہِدۡنَا مَہۡلِکَ اَہۡلِہٖ وَاِنَّا لَصٰدِقُوۡنَ


কা-লূতাকা-ছামূবিল্লা-হি লানুবাইয়িতান্নাহূওয়া আহলাহূছু ম্মা লানাকূলান্না লিওয়ালিয়্যিহী মা-শাহিদনা-মাহলিকা আহলিহী ওয়া ইন্না-লাসা-দিকূ ন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (একত্র হয়ে একে অন্যকে) বলল, সকলে শপথ কর, আমরা রাতের বেলা সালেহ ও তার পরিবারবর্গের উপর হামলা চালাব, তারপর তার ওয়ারিশকে বলব, আমরা তার পরিবারবর্গের হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিতই ছিলাম না। বিশ্বাস কর আমরা সম্পূর্ণ সত্যবাদী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলল, তোমরা পরস্পরে আল্লাহর নামে শপথ গ্রহণ কর যে, আমরা রাত্রিকালে তাকে ও তার পরিবারবর্গকে হত্যা করব। অতঃপর তার দাবীদারকে বলে দেব যে, তার পরিবারবর্গের হত্যাকান্ড আমরা প্রত্যক্ষ করিনি। আমরা নিশ্চয়ই সত্যবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘তোমরা আল্লাহ্ র নামে শপথ গ্রহণ কর, ‘আমরা রাত্রিকালে তাকে ও তার পরিবার-পরিজনকে অবশ্যই আক্রমণ করব ; এরপর তার অভিভাবককে নিশ্চয় বলিব, ‘তার পরিবার-পরিজনের হত্যা আমরা প্রত্যক্ষ করি নাই; আমরা অবশ্যই সত্যবাদী।’


৫০


وَمَکَرُوۡا مَکۡرًا وَّمَکَرۡنَا مَکۡرًا وَّہُمۡ لَا یَشۡعُرُوۡنَ


ওয়া মাকারূমাকরাওঁ ওয়া মাকারনা-মাকরাওঁ ওয়া হুম লা-ইয়াশ‘উরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তো এই চাল চালল আর আমিও এক চাল চাললাম কিন্তু তারা টেরও পেল না। ৩১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক চক্রান্ত করেছিলাম। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, কিন্তু এরা বুঝতে পারে নাই।


তাফসীরঃ

৩১. অর্থাৎ তাদের চক্রান্ত এমনভাবে নস্যাৎ করা হল যে, তারা কিছু বুঝে উঠতে পারল না। তা কিভাবে তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ করা হয়েছিল? কুরআন মাজীদ সে বিবরণ পেশ করেনি। কোন কোন বর্ণনায় প্রকাশ, তারা যখন চক্রান্ত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেল, পথিমধ্যে পাথরের এক বিশালাকার চাঁই তাদের উপর গড়িয়ে পড়ল এবং তার নিচে চাপা পড়ে সকলেই ধ্বংস হয়ে গেল। তারপর সম্প্রদায়ের সকলের উপর আযাব আসল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে যখন হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের বাড়িতে পৌঁছল, তখন ফেরেশতাগণ তাদেরকে ঘিরে ফেলল। এ অবস্থায় ফেরেশতাদের হাতেই তারা বিনাশ হয়। আবার কোন কোন মুফাসসির বলেন, তারা তাদের চক্রান্তমত কাজ করার সুযোগই পায়নি। তার আগেই গোটা সম্প্রদায়ের উপর শাস্তি এসে যায় এবং অন্যদের সাথে তারাও ধ্বংস হয়ে যায়।


৫১


فَانۡظُرۡ کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ مَکۡرِہِمۡ ۙ اَنَّا دَمَّرۡنٰہُمۡ وَقَوۡمَہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ


ফানজু র কাইফা কা-না ‘আ-কিবাতুমাকরিহিম আন্না-দাম্মারনা-হুম ওয়া কাওমাহুম আজমা‘ঈন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং লক্ষ্য কর তাদের চালাকির পরিণাম কেমন হল। আমি তাদেরকে ও তাদের গোটা জাতিকে ধ্বংস করে ফেললাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, দেখ তাদের চক্রান্তের পরিনাম, আমি অবশ্রই তাদেরকে এবং তাদের সম্প্রদায়কে নাস্তনাবুদ করে দিয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অতএব দেখ, এদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে-আমি অবশ্যই এদেরকে ও এদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি।


৫২


فَتِلۡکَ بُیُوۡتُہُمۡ خَاوِیَۃًۢ بِمَا ظَلَمُوۡا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ


ফাতিলকা বুয়ূতুহুম খা-বিয়াতাম বিমা-জালামূ ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়াতাল লিকাওমিইঁ ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ওই তো তাদের ঘর-বাড়ি, যা তাদের জুলুমের কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ৩২ নিশ্চয়ই যারা তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায়, তাদের জন্য এতে আছে শিক্ষা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই তো তাদের বাড়ীঘর-তাদের অবিশ্বাসের কারণে জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। নিশ্চয় এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই তো এদের ঘরবাড়ি-সীমালংঘনহেতু যা জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে; এতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।


তাফসীরঃ

৩২. হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের বসতি আরব এলাকার অন্তর্ভুক্ত এবং মদীনা মুনাওয়ারা হতে কিছুটা দূরে অবস্থিত। আরববাসী শামের সফরকালে এ বসতির উপর দিয়েই যাতায়াত করত। তাই কুরআন মাজীদ সেদিকে এমনভাবে ইশারা করেছে, যেন তা চোখের সামনে। তাদের সেই বিরাণ জনপদ ও তার ধ্বংসাবশেষ এখনও ‘মাদাইন সালেহ’ নামে প্রসিদ্ধ এবং এখনও তা জ্ঞানীজনের জন্য উপদেশের রসদ জোগায়।


৫৩


وَاَنۡجَیۡنَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَکَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ


ওয়া আনজাইনাল্লাযীনা আ-মানূওয়া কা-নূইয়াত্তাকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যারা ঈমান এনেছিল ও তাকওয়া অবলম্বন করেছিল, তাদেরকে আমি রক্ষা করেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং পরহেযগার ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা মু’মিন ও মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি।


৫৪


وَلُوۡطًا اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِہٖۤ اَتَاۡتُوۡنَ الۡفَاحِشَۃَ وَاَنۡتُمۡ تُبۡصِرُوۡنَ


ওয়া লূতান ইযকা-লা লিকাওমিহী আতা’তূনাল ফা-হিশাতা ওয়া আনতুম তুবসিরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি লূতকে (নবী বানিয়ে পাঠালাম)। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা কি চাক্ষুষ দেখেও অশ্লীল কাজ করছ?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ!


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর লূতের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা জেনে-শুনে কেন অশ্লীল কাজ করছো,


৫৫


اَئِنَّکُمۡ لَتَاۡتُوۡنَ الرِّجَالَ شَہۡوَۃً مِّنۡ دُوۡنِ النِّسَآءِ ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ تَجۡہَلُوۡنَ


আইন্নাকুম লাতা’তূনার রিজা-লা শাহওয়াতাম মিন দূ নিন নিছা-ই বাল আনতুম কাওমুন তাজহালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, তোমরা কামচাহিদা পূরণের জন্য নারীদের ছেড়ে পুরুষদের কাছে যাও? বস্তুত তোমরা অতি মূর্খতাসুলভ কাজ করছ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্যে নারীকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে ? তোমরা তো এক অজ্ঞ সম্প্রদায়।’


৫৬


فَمَا کَانَ جَوَابَ قَوۡمِہٖۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡۤا اَخۡرِجُوۡۤا اٰلَ لُوۡطٍ مِّنۡ قَرۡیَتِکُمۡ ۚ اِنَّہُمۡ اُنَاسٌ یَّتَطَہَّرُوۡنَ


ফামা-কা-না জাওয়া-বা কাওমিহীইল্লা-আন কা-লূআখরিজু আ-লা লূতিম মিন কারইয়াতিকুম ইন্নাহুম উনা-ছুইঁ ইয়াতাতাহহারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার সম্প্রদায়ের উত্তর ছিল কেবল এই যে, তারা বলল, লূতের পরিবারবর্গকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। তারা এমন লোক, যারা বড় পবিত্রতা জাহির করছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘লূত-পরিবারকে তোমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার কর, এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র সাজিতে চায়।


৫৭


فَاَنۡجَیۡنٰہُ وَاَہۡلَہٗۤ اِلَّا امۡرَاَتَہٗ ۫ قَدَّرۡنٰہَا مِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ


ফাআনজাইনা-হু ওয়া আহলাহূইল্লাম রাআতাহূ কাদ্দারনা-হা-মিনাল গা-বিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর এই ঘটল যে, আমি লুত ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম, তবে তার স্ত্রীকে নয়, যার সম্পর্কে আমি স্থির করেছিলাম, সে যারা পিছনে থেকে যাবে তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি তাকে ও তার পরিজনবর্গকে উদ্ধার করলাম, তার স্ত্রী ব্যতীত, তাকে করেছিলাম ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।


৫৮


وَاَمۡطَرۡنَا عَلَیۡہِمۡ مَّطَرًا ۚ  فَسَآءَ مَطَرُ الۡمُنۡذَرِیۡنَ ٪


ওয়া আমতারনা-‘আলাইহিম মাতারান ফাছাআ মাতারুল মুনযারীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আমি তাদের উপর বর্ষণ করলাম এক মারাত্মক বৃষ্টি। যাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল তাদের প্রতি বর্ষিত সে বৃষ্টি ছিল কতই না মন্দ! ৩৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সতর্ককৃতদের উপর কতই না মারাত্নক ছিল সে বৃষ্টি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের ওপর ভয়ংকর বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম, ভীতি প্রদর্শিতদের জন্যে এই বর্ষণ ছিল কত নিকৃষ্ট!


তাফসীরঃ

৩৩. হযরত লুত আলাইহিস সালামের ঘটনা পূর্বে বিস্তারিতভাবে সূরা হুদ (১১ : ৭৭-৮৩) ও সূরা হিজর (১৫ : ৫৮-৭৬)-এ গত হয়েছে। কিছুটা সূরা শুআরায়ও (২৬ : ১৬০-১৭৫) বর্ণিত হয়েছে। আমরা সূরা আরাফে (৭ : ৮০) তাদের পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি।


৫৯


قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ وَسَلٰمٌ عَلٰی عِبَادِہِ الَّذِیۡنَ اصۡطَفٰی ؕ  آٰللّٰہُ خَیۡرٌ اَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ؕ


কুল্লিহামদুলিল্লা-হি ওয়া ছালা-মুন ‘আলা-‘ইবাদিহিল্লাযী নাসতাফা- আল্লা-হু খাইরুন আম্মা-ইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই এবং সালাম তাঁর সেই বান্দাদের প্রতি যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন। ৩৪ বল তো, আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, নাকি যাদেরকে তারা (আল্লাহর প্রভুত্বে) অংশীদার বানিয়েছে তারা?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা-তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র ই এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি!’ শ্রেষ্ঠ কি আল্লাহ্, না এরা যাদেরকে শরীক করে তারা ?


তাফসীরঃ

৩৪. বিভিন্ন নবী-রাসূলের ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা এবার তাঁর তাওহীদের দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করছেন। এটা এমনই এক আকীদা, সমস্ত নবী-রাসূল যা প্রচার করে গেছেন। এটা সকল দীনের এক সাধারণ বিষয় এবং আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধানতম ধারা। বিশ্বজগতে আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের যে নিদর্শনাবলী সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, সে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হচ্ছে, যেই মহিমময় সত্তা এই মহাজগত সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে বিস্ময়কর নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীন করে দিয়েছেন, তাঁর কি নিজ প্রভুত্বে কোন অংশীদারের প্রয়োজন থাকতে পারে? জগত পরিচালনায় তাঁর কি কোন সাহায্যকারীর দরকার আছে? তাওহীদ সম্পর্কে এটা অত্যধিক বলিষ্ঠ ও তাৎপর্যপূর্ণ এক ভাষণ। তরজমার মাধ্যমে এর ওজস্বিতা অন্য কোন ভাষায় প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। তথাপি এর মর্মবাণী যাতে তরজমার ভেতর এসে যায় সে চেষ্টা করা হয়েছে। যেহেতু এ ভাষণটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই মানুষের কাছে পৌঁছেছে, তাই এর শুরুতে তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তিনি এর সূচনা করেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর মনোনীত বান্দাদের প্রতি সালাম পাঠের মাধ্যমে। এভাবে মানুষকে বক্তৃতা করার এই আদব শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, কেউ বক্তৃতা করলে তা শুরু করবে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও নবী-রাসূলগণের প্রতি সালাম পাঠ দ্বারা।


৬০


اَمَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ وَاَنۡزَلَ لَکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ  فَاَنۡۢبَتۡنَا بِہٖ حَدَآئِقَ ذَاتَ بَہۡجَۃٍ ۚ  مَا کَانَ لَکُمۡ اَنۡ تُنۡۢبِتُوۡا شَجَرَہَا ؕ  ءَاِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ  بَلۡ ہُمۡ قَوۡمٌ یَّعۡدِلُوۡنَ ؕ


আম্মান খালাকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা ওয়া আনঝালা লাকুম মিনাছছামাই মাআন ফাআমবাতনা-বিহী হাদাইকা যা-তা বাহজাতিম মা-কা-না লাকুম আন তুমবিতূ শাজারাহা-; আ ইলা-হুম মা‘আল্লা-হি ; বাল হুম কাওমুইঁ ইয়া‘দিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কে তিনি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন? তারপর আমি সে পানি দ্বারা উদগত করেছি মনোরম উদ্যানরাজি। তার বৃক্ষরাজি উদগত করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। (তবুও কি তোমরা বলছ,) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন প্রভু আছে? ৩৫ না; বরং তারা (সত্যপথ থেকে) মুখ ফিরিয়ে রাখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বরং তিনি, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং আকাশ হতে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেন বৃষ্টি ; এরপর আমি তা দিয়ে মনোরম উদ্যান সৃষ্টি করি, এর বৃক্ষাদি উদ্গত করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি ? তবুও এরা এমন এক সম্প্রদায় যারা সত্যবিচ্যুত হয়।


তাফসীরঃ

৩৫. প্রকাশ থাকে যে, মক্কার কাফেরগণ আল্লাহ তাআলাকেই বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা বলে বিশ্বাস করত। কিন্তু সেই সঙ্গে তারা একথাও বলত যে, তিনি জগতের একেকটি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব একেক দেবতার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাই দেবতাদেরও পূজা-অর্চনা করা জরুরি।


৬১


اَمَّنۡ جَعَلَ الۡاَرۡضَ قَرَارًا وَّجَعَلَ خِلٰلَہَاۤ اَنۡہٰرًا وَّجَعَلَ لَہَا رَوَاسِیَ وَجَعَلَ بَیۡنَ الۡبَحۡرَیۡنِ حَاجِزًا ؕ  ءَاِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ  بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ


আম্মান জা‘আলাল আরদা কারা-রাওঁ ওয়া জা‘আলা খিলা-লাহাআনহা-রাওঁ ওয়া জা‘আলা লাহা রাওয়া-ছিয়া ওয়া জা‘আলা বাইনাল বাহরাইনি হা-জিঝান আ ইলা-হুম মা‘আল্লাহি বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কে তিনি, যিনি পৃথিবীকে বানিয়েছেন অবস্থানের জায়গা, তার মাঝে-মাঝে সৃষ্টি করেছেন নদ-নদী, তার (স্থিতির) জন্য (পর্বতমালার) কীলক গেড়ে দিয়েছেন এবং তিনি দুই সাগরের মাঝখানে স্থাপন করেছেন এক অন্তরায়? ৩৬ (তবুও কি তোমরা বলছ) আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন প্রভু আছে? না, বরং তাদের অধিকাংশেই (প্রকৃত সত্য) জানে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বরং তিনি, যিনি পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী এবং এর মাঝে মাঝে প্রবাহিত করেছেন নদীনালা এবং এতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বত ও দুই দরিয়ার মধ্যে সৃষ্টি করেছেন অন্তরায় ; আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি ? তবুও এদের অনেকেই জানে না।


তাফসীরঃ

৩৬. দুটি নদী বা দুটি সাগরের সঙ্গমস্থলে আল্লাহ তাআলার কুদরতের এক অপূর্ব মহিমা লক্ষ্য করা যায়। উভয়ের জলধারা পাশাপাশি বয়ে যায়, কিন্তু একটির সাথে আরেকটি মিশ্রিত হয় না। কী এক অলক্ষ্য অন্তরায় উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান যে, দূর-দূরান্ত পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে, অথচ এক ধারার পানি অন্য ধারায় ঢুকতে পারে না!


৬২


اَمَّنۡ یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاہُ وَیَکۡشِفُ السُّوۡٓءَ وَیَجۡعَلُکُمۡ خُلَفَآءَ الۡاَرۡضِ ؕ  ءَاِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ  قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ ؕ


আম্মাইঁ ইউজীবুল মু দতাররা ইযা-দা‘আ-হু ওয়া ইয়াকশিফুছছূআ ওয়া ইয়াজ‘আলুকুম খুলাফাআল আরদি আ ইলা-হুম মা‘আল্লা-হি কালীলাম মা-তাযাক্কারূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কে তিনি, যিনি কোন আর্ত যখন তাকে ডাকে, তার ডাকে সাড়া দেন ও তার কষ্ট দূর করে দেন এবং যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীর খলীফা বানান? (তবুও কি তোমরা বলছ) আল্লাহর সঙ্গে অন্য প্রভু আছেন? তোমরা অতি অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বরং তিনি, যিনি আর্তের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভ‚ত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেন। আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি ? তোমরা উপদেশ অতি সামান্যই গ্রহণ করে থাক।


৬৩


اَمَّنۡ یَّہۡدِیۡکُمۡ فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَالۡبَحۡرِ وَمَنۡ یُّرۡسِلُ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ؕ  ءَاِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ  تَعٰلَی اللّٰہُ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ؕ


আম্মাইঁ ইয়াহদীকুম ফী জুলুমা-তিল বাররি ওয়াল বাহরি ওয়া মাইঁ ইউরছিলুর রিয়া-হা বুশরাম বাইনা ইয়াদাই রাহমাতিহী আ ইলা-হুম মা‘আল্লা-হি তা‘আ-লাল্লা-হু ‘আম্মা-ইউশরিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কে তিনি, যিনি স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমাদেরকে পথ দেখান এবং যিনি নিজ রহমতের (বৃষ্টির) আগে (বৃষ্টির) সুসংবাদবাহীরূপে বাতাস পাঠান? (তবুও কি তোমরা বলছ) আল্লাহর সঙ্গে অন্য প্রভু আছে? (না, বরং) তারা যাকে শরীক করে আল্লাহ তা থেকে বহু ঊর্ধ্বে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলের ও পানির অন্ধকারে পথ প্রদর্শন করেন এবং যিনি স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন। আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি ? এরা যাকে শরীক করে আল্লাহ্ তা হতে বহু ঊর্ধ্বে।


৬৪


اَمَّنۡ یَّبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیۡدُہٗ وَمَنۡ یَّرۡزُقُکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ ؕ ءَاِلٰہٌ مَّعَ اللّٰہِ ؕ قُلۡ ہَاتُوۡا بُرۡہَانَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ


আম্মাইঁ ইয়াবদাউল খালকা ছুম্মা ইউ‘ঈদুহূওয়ামাইঁ ইয়ারঝুকুকুম মিনাছ ছামাই ওয়াল আরদি আ ইলা-হুম মা‘আল্লা-হি কুল হা-তূবুরহা-নাকুম ইন কুনতুম সা-দিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কে তিনি, যিনি সমস্ত মাখলুককে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, তারপর তাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং যিনি আসমান ও যমীন থেকে তোমাদের রিযক সরবরাহ করেন? (তবুও কি তোমরা বলছ,) আল্লাহর সাথে অন্য কোন প্রভু আছেন? বল, তোমরা তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর যদি সত্যবাদী হও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বল তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বরং তিনি, যিনি আদিতে সৃষ্টি করেন, এরপর এর পুনরাবৃত্তি করবেন এবং যিনি তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ দান করেন। আল্লাহ্ র সঙ্গে অন্য কোন ইলাহ্ আছে কি ? বল, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ পেশ কর।’


৬৫


قُلۡ لَّا یَعۡلَمُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ الۡغَیۡبَ اِلَّا اللّٰہُ ؕ وَمَا یَشۡعُرُوۡنَ اَیَّانَ یُبۡعَثُوۡنَ


কুল লা-ইয়া‘লামুমান ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদিল গাইবা ইল্লাল্লা-হু ওয়ামাইয়াশ‘উরূনা আইয়া-না ইউব‘আছূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। ৩৭ এবং মানুষ জানে না তাদেরকে কখন পুনর্জীবিত করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং এরা জানে না এরা কখন উত্থিত হবে।’


তাফসীরঃ

৩৭. আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নবীদেরকে বিভিন্ন গায়েবী বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতেন। গায়েবী খবরাখবর সর্বাপেক্ষা বেশি জানানো হয়েছিল আমাদের মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গায়েবের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত ছিলেন না। পরিপূর্ণ গায়েবী জ্ঞান কেবল আল্লাহ তাআলারই আছে। সুতরাং তাকে ছাড়া অন্য কাউকে ‘আলেমুল গায়েব’ বলা যায় না।


৬৬


بَلِ ادّٰرَکَ عِلۡمُہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ ۟  بَلۡ ہُمۡ فِیۡ شَکٍّ مِّنۡہَا ۫۟  بَلۡ ہُمۡ مِّنۡہَا عَمُوۡنَ ٪


বালিদ দা-রাকা ‘ইলমুহুম ফিল আ-খিরাতি বাল হুম ফী শাক্কিম মিনহা-, বাল হুম মিনহা‘আমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বরং আখেরাত সম্পর্কে তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) জ্ঞান সম্পূর্ণ অপারগ হয়ে গেছে; বরং তারা সে সম্বন্ধে সন্দেহে নিপতিত; বরং তারা সে সম্পর্কে অন্ধ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বরং পরকাল সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে গেছে; বরং তারা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষন করছে বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আখিরাত সম্পর্কে এদের জ্ঞান তো নিঃশেষ হয়েছে ; এরা তো এ বিষয়ে সন্দিগ্ধ, বরং এ বিষয়ে এরা অন্ধ।


৬৭


وَقَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا ءَاِذَا کُنَّا تُرٰبًا وَّاٰبَآؤُنَاۤ اَئِنَّا لَمُخۡرَجُوۡنَ


ওয়া কা-লাল্লাযীনা কাফারূ আইযা-কুন্না-তুরা-বাওঁ ওয়াআ-বাউনা আইন্নালামুখরাজুন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে তারা বলে, আমরা ও আমাদের বাপ-দাদাগণ যখন মাটি হয়ে যাব, তখনও কি আমাদেরকে সত্যি সত্যিই (কবর থেকে) বের করা হবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা বলে, যখন আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকা হয়ে যাব, তখনও কি আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কাফিররা বলে, ‘আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষেরা মৃত্তিকায় পর্যবসিত হয়ে গেলেও কি আমাদেরকে উত্থিত করা হবে ?


৬৮


لَقَدۡ وُعِدۡنَا ہٰذَا نَحۡنُ وَاٰبَآؤُنَا مِنۡ قَبۡلُ ۙ اِنۡ ہٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ


লাকাদ উ‘ইদনা-হা-যা-নাহনুওয়া আ-বাউনা-মিন কাবলু ইন হাযাইল্লাআছা-তীরুল আওওয়ালীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমাদেরকে ও আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এ রকমের প্রতিশ্রুতি আগেও শোনানো হয়েছিল, (কিন্তু) প্রকৃতপক্ষে এসব পূর্ববর্তীদের কিস্সা-কাহিনী ছাড়া কিছুই নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছি আমরা এবং পূর্ব থেকেই আমাদের বাপ-দাদারা। এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা বৈ কিছু নয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এই বিষয়ে তো আমাদেরকে এবং পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষগণকেও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল। এটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ব্যতীত আর কিছু নয়।’


৬৯


قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُجۡرِمِیۡنَ


কুল ছীরূফিল আরদিফানজুরূকাইফা কা-না ‘আ-কিবাতুল মুজরিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, পৃথিবীতে ভ্রমণ করে দেখ অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, পৃথিবী পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণাম কিরূপ হয়েছে।’


৭০


وَلَا تَحۡزَنۡ عَلَیۡہِمۡ وَلَا تَکُنۡ فِیۡ ضَیۡقٍ مِّمَّا یَمۡکُرُوۡنَ


ওয়ালা-তাহঝান ‘আলাইহিম ওয়ালা-তাকুন ফী দাইকিম মিম্মা-ইয়ামকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তুমি তাদের প্রতি দুঃখ করো না। আর তারা যে চক্রান্ত করছে, তার জন্য কুণ্ঠাবোধ করো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের কারণে আপনি দুঃখিত হবেন না এবং তারা যে চক্রান্ত করেছে এতে মনঃক্ষুন্ন হবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের সম্পর্কে তুমি দুঃখ কর না এবং এদের ষড়যন্ত্রে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।


(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

৭১


وَیَقُوۡلُوۡنَ مَتٰی ہٰذَا الۡوَعۡدُ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ


ওয়া ইয়াকূলূনা মাতা-হা-যাল ওয়া‘দুইন কুনতুম সা-দিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা (তোমাকে) বলে, তোমরা সত্যবাদী হলে (বল,) এ ওয়াদা পূরণ হবে কখন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলে, ‘তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, কখন এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে ?’


৭২


قُلۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنَ رَدِفَ لَکُمۡ بَعۡضُ الَّذِیۡ تَسۡتَعۡجِلُوۡنَ


কুল ‘আছাআইঁ ইয়াকূনা রাদিফা লাকুম বা‘দুল্লাযী তাছতা‘জিলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, অসম্ভব নয় তোমরা যে আযাব তাড়াতাড়ি চাচ্ছ, তার কতক তোমাদের একদম কাছেই। ৩৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুন, অসম্ভব কি, তোমরা যত দ্রুত কামনা করছ তাদের কিয়দংশ তোমাদের পিঠের উপর এসে গেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা যে বিষয় ত্বরান্বিত করতে চাইছো সম্ভবত তার কিছু তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছে।’


তাফসীরঃ

৩৮. অর্থাৎ, কুফরের আসল শাস্তি তো আখেরাতেই হবে, তবে তার অংশবিশেষ তোমাদেরকে ইহকালেও ভোগ করতে হতে পারে। তা করতে হয়েছিল বৈকি! বদরের যুদ্ধে কুরাইশের বড়-বড় সর্দার মারা পড়েছিল আর বাকিদেরকে বরণ করতে হয়েছিল গ্লানিকর পরাজয়।


৭৩


وَاِنَّ رَبَّکَ لَذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی النَّاسِ وَلٰکِنَّ اَکۡثَرَہُمۡ لَا یَشۡکُرُوۡنَ


ওয়া ইন্না রাব্বাকা লাযূফাদলিন ‘আলান্না -ছি ওয়ালা-কিন্না আকছারাহুম লা-ইয়াশকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অতি অনুগ্রহশীল কিন্তু তাদের অধিকাংশেই শুকর আদায় করে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল; কিন্তু এদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।


৭৪


وَاِنَّ رَبَّکَ لَیَعۡلَمُ مَا تُکِنُّ صُدُوۡرُہُمۡ وَمَا یُعۡلِنُوۡنَ


ওয়া ইন্না রাব্বাকা লাইয়া‘লামুমা-তুকিন্নুসুদূরুহুম ওয়ামা-ইউ‘লিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাদের অন্তর যা-কিছু গোপন রাখে তাও জানেন এবং তারা যা-কিছু প্রকাশ করে তাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে আপনার পালনকর্তা অবশ্যই তা জানেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদের অন্তর যা গোপন করে এবং এরা যা প্রকাশ করে তা তোমার প্রতিপালক অবশ্যই জানেন।


৭৫


وَمَا مِنۡ غَآئِبَۃٍ فِی السَّمَآءِ وَالۡاَرۡضِ اِلَّا فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ


ওয়ামা মিন গাইবাতিন ফিছছামাই ওয়াল আরদিইল্লা-ফী কিতা-বিম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আসমান ও যমীনে এমন কোন গুপ্ত বিষয় নেই, যা এক সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নয়। ৩৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন ভেদ নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে না আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন রহস্য নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।


তাফসীরঃ

৩৯. ‘সুস্পষ্ট কিতাব’ দ্বারা ‘লাওহে মাহফুজ’ বোঝানো হয়েছে।


৭৬


اِنَّ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنَ یَقُصُّ عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اَکۡثَرَ الَّذِیۡ ہُمۡ فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ


ইন্না হা-যাল কুরআ-না ইয়াকু সসু‘আলা-বানীইছরাঈলা আকছারাল্লাযীহুমফীহি ইয়াখতালিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত এ কুরআন বনী ইসরাঈলের সামনে (যথার্থরূপে) বিবৃত করে দেয় তারা যেসব বিষয়ে মতভেদ করে তার অধিকাংশ। ৪০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই কোরআন বণী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে বর্ণনা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বনী ইসরাঈল যেই সমস্ত বিষয়ে মতভেদ করে, এই কুরআন তার অধিকাংশ তাদের নিকট বিবৃত করে।


তাফসীরঃ

৪০. কুরআন মাজীদ যে আল্লাহ তাআলার সত্য কিতাব, তার অন্যতম এক প্রমাণ হল বিতর্কিত বিষয়ের মীমাংসা দান, বিশেষত বনী ইসরাঈলের বিতর্কিত বিষয়। তাদের বড়-বড় পণ্ডিতগণ যুগ-যুগ ধরে যেসব বিষয়ে বিতর্ক করে আসছে এবং কোন মীমাংসায় পৌঁছাতে পারছিল না, কুরআন মাজীদ সেসব বিষয়ের স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়েছে। স্পষ্ট করে দিয়েছে কোনটা সত্য, কোনটা ভ্রান্ত। [যেমন হযরত মাসীহ (আ.) সম্পর্কে তাদের মধ্যে নানা মত। কেউ তাকে ঈশ্বর বা তার অবতার সাব্যস্ত করছে আবার কেউ তাকে মিথ্যুক বলছে। কুরআন মাজীদ মীমাংসা করে দিয়েছে যে, তাদের উভয় ধারণাই গলদ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে তিনি একজন মানুষ ছিলেন এবং ছিলেন আল্লাহ তাআলার মনোনীত বান্দা ও বনী ইসরাঈলের প্রতি প্রেরিত তাঁর রাসূল। -অনুবাদক]


৭৭


وَاِنَّہٗ لَہُدًی وَّرَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ


ওয়া ইন্নাহূলাহুদাওঁ ওয়া রাহমাতুল লিলমু’মিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই এটা ঈমানদারদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং নিশ্চিতই এটা মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং নিশ্চয়ই এটা মু’মিনদের জন্যে হিদায়াত ও রহমত।


৭৮


اِنَّ رَبَّکَ یَقۡضِیۡ بَیۡنَہُمۡ بِحُکۡمِہٖ ۚ  وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡعَلِیۡمُ ۙۚ


ইন্না রাব্বাকা ইয়াকদী বাইনাহুম বিহুকমিহী ওয়া হুওয়াল ‘আঝীঝুল ‘আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাদের মধ্যে নিজ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফায়সালা করবেন। তিনি অতি ক্ষমতাবান, সর্বজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা নিজ শাসনক্ষমতা অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। তিনি পরাক্রমশালী, সুবিজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক তো তাঁর বিধান অনুযায়ী এদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন। তিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ।


৭৯


فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰہِ ؕ اِنَّکَ عَلَی الۡحَقِّ الۡمُبِیۡنِ


ফাতাওয়াক্কাল ‘আলাল্লা-হি ইন্নাকা ‘আলাল হাক্কিল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। নিশ্চয়ই তুমি সুস্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আপনি সত্য ও স্পষ্ট পথে আছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অতএব আল্লাহ্ র ওপর নির্ভর কর; তুমি তো স্পষ্ট সত্যে প্রতিষ্ঠিত।


৮০


اِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی وَلَا تُسۡمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوۡا مُدۡبِرِیۡنَ


ইন্নাকা লা-তুছমি‘উল মাওতা-ওয়ালা-তুছমি‘উসসু ম্মাদ দু‘আ-আ ইযা-ওয়াল্লাও মুদবিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

স্মরণ রেখ, তুমি মৃতদেরকে (তোমার কথা) শোনাতে পারবে না এবং বধিরকেও পারবে না ডাক শোনাতে, যখন তারা পেছন ফিরে চলে যায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মৃতকে তো তুমি কথা শোনাতে পারবে না, বধিরকেও পারবে না আহ্বান শোনাইতে, যখন এরা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়।


৮১


وَمَاۤ اَنۡتَ بِہٰدِی الۡعُمۡیِ عَنۡ ضَلٰلَتِہِمۡ ؕ اِنۡ تُسۡمِعُ اِلَّا مَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا فَہُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ


ওয়ামাআনতা বিহা-দিল ‘উময়ি ‘আন দালা-লাতিহিম ইন তুছমি‘উ ইল্লা-মাইঁ ইউ‘মিনু বিআ-য়া-তিনা-ফাহুম মুছলিমূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর তুমি অন্ধদেরকেও তাদের পথভ্রষ্টতা হতে মুক্ত করে সঠিক পথে আনতে পারবে না। তুমি তো কথা শোনাতে পারবে কেবল তাদেরকেই যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনে অতঃপর তারাই হবে আনুগত্য স্বীকারকারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি অন্ধদেরকে এদের পথভ্রষ্টতা হতে পথে আনতে পারবে না। তুমি শোনাতে পারবে কেবল তাদেরকে, যারা আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে। আর তারাই আত্মসমর্পণকারী।


৮২


وَاِذَا وَقَعَ الۡقَوۡلُ عَلَیۡہِمۡ اَخۡرَجۡنَا لَہُمۡ دَآبَّۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ تُکَلِّمُہُمۡ ۙ  اَنَّ النَّاسَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا لَا یُوۡقِنُوۡنَ ٪


ওয়া ইযা-ওয়াকা‘আল কাওলু‘আলাইহিম আখরাজনা-লাহুম দাব্বাতাম মিনাল আরদি তুকালিলমুহুম আন্নান্না-ছা কা-নূবিআ-য়া-তিনা-লা-ইঊকিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন তাদের সামনে আমার কথা পূর্ণ হওয়ার সময় এসে পড়বে, ৪১ তখন তাদের জন্য ভূমি থেকে এক জন্তু বের করব, যা তাদের সাথে কথা বলবে, যেহেতু মানুষ আমার আয়াতসমূহে ঈমান আনছিল না। ৪২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন ঘোষিত শাস্তি এদের নিকট আসবে তখন আমি মৃত্তিকাগর্ভ হতে বের করব এক জীব, যা এদের সঙ্গে কথা বলবে, এইজন্যে যে, মানুষ আমার নিদর্শনে অবিশ্বাসী।


তাফসীরঃ

৪১. এটা কিয়ামতের বিলকুল শেষ দিকের একটি আলামত। কিয়ামত যখন একেবারে কাছে এসে যাবে, তখন আল্লাহ তাআলা ভূমি থেকে অদ্ভুত রকমের একটি জীব সৃষ্টি করবেন। সেটি মানুষের সাথে কথা বলবে। কোন কোন রেওয়ায়েত দ্বারা জানা যায় সে জীবটির আবির্ভাবের পর তাওবার দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে এবং অবিলম্বেই কিয়ামত হয়ে যাবে।


৪২. অর্থাৎ, যখন কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় কাছে এসে যাবে। কিয়ামতকে القول বা ‘বাণী’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে রূপকার্থে, যেহেতু কিয়ামত, তার আলামতসমূহ ও তার বিভীষিকা সম্পর্কে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন বাণীতে বা ব্যক্ত হয়েছে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে সেসব বাণীর সত্যতা প্রমাণ হবে। -অনুবাদক


৮৩


وَیَوۡمَ نَحۡشُرُ مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍ فَوۡجًا مِّمَّنۡ یُّکَذِّبُ بِاٰیٰتِنَا فَہُمۡ یُوۡزَعُوۡنَ


ওয়া ইয়াওমা নাহশুরু মিন কুল্লি উম্মাতিন ফাওজাম মিম্মাইঁ ইউকাযযিবুবিআ-য়া-তিনা-ফাহুম ইউঝা‘ঊন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই দিনকে ভুলো না, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একেকটি দলকে সমবেত করব, যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করত। তারপর তাদেরকে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন আমি একত্রিত করব একেকটি দলকে সেসব সম্প্রদায় থেকে, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলত; অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর সেই দিনের কথা, যেই দিন আমি সমবেত করব প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক-একটি দলকে, যারা আমার নিদর্শনাবলী প্রত্যাখ্যান করত আর এদেরকে সারিবদ্ধ করা হবে।


৮৪


حَتّٰۤی اِذَا جَآءُوۡ قَالَ اَکَذَّبۡتُمۡ بِاٰیٰتِیۡ وَلَمۡ تُحِیۡطُوۡا بِہَا عِلۡمًا اَمَّاذَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ


হাত্তাইযা- জাঊকা-লা আকাযযাবতুমবিআ-য়া-তী ওয়া লাম তুহীতূবিহা‘ইলমান আম্মা-যা-কুনতুম তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিশেষে যখন সকলেই এসে পৌঁছবে, তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি ভালোভাবে না জেনেই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিলে কিংবা তোমরা আসলে কী করছিলে? ৪৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তারা উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিলে? অথচ এগুলো সম্পর্কে তোমাদের পুর্ণ জ্ঞান ছিল না। না তোমরা অন্য কিছু করছিলে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এরা সমাগত হবে তখন আল্লাহ্ এদেরকে বলবেন, ‘তোমরা কি আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিলে, অথচ তা তোমরা জ্ঞানায়ত্ত করতে পার নাই ? বরং তোমরা আরও কিছু করছিলে ?’


তাফসীরঃ

৪৩. আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবেই জানেন তারা কি করেছিল, তা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন তিরস্কারস্বরূপ। প্রথমে তিরস্কার করবেন কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা না করে ও ভালোভাবে না বুঝে কেন তারা সত্যের বাণী প্রত্যাখ্যান করল সেজন্য। অর্থাৎ তারা যদি একটু মাথা খাটাত তবে তো তার সত্যতা বুঝতে পারত এবং ঈমান আনার পক্ষে তা সহায়ক হত আর তা হলে আখিরাতে এই দূরবস্থার সম্মুখীন হতে হত না। তারপর তিরস্কার করবেন তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে যে, চিন্তা-ভাবনা না করে আমার বাণী প্রত্যাখ্যান তো করেছই, তা ছাড়াও তো আরও কত অন্যায়-অপরাধ তোমরা করেছ। তা বল তো তোমরা আর কি কি করেছ? পরের আয়াতে জানানো হয়েছে, আখিরাতের বিভীষিকা দেখে তাদের পক্ষে এর কোন জবাব দেওয়া সম্ভব হবে না। -অনুবাদক


৮৫


وَوَقَعَ الۡقَوۡلُ عَلَیۡہِمۡ بِمَا ظَلَمُوۡا فَہُمۡ لَا یَنۡطِقُوۡنَ


ওয়া-ওয়াকা‘আল কাওলু‘আলাইহিম বিমা-জালামূফাহুম লা-ইয়ানতিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা জুলুম করেছিল, সে কারণে তাদের প্রতি শাস্তিবাণী কার্যকর হয়ে যাবে। ফলে তারা কিছুই বলতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

জুলুমের কারণে তাদের কাছে আযাবের ওয়াদা এসে গেছে। এখন তারা কোন কিছু বলতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সীমালংঘন হেতু এদের ওপর ঘোষিত শাস্তি এসে পড়বে; ফলে এরা কিছুই বলিতে পারবে না।


৮৬


اَلَمۡ یَرَوۡا اَنَّا جَعَلۡنَا الَّیۡلَ لِیَسۡکُنُوۡا فِیۡہِ وَالنَّہَارَ مُبۡصِرًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ


আলাম ইয়ারাও আন্না-জা‘আলনাল্লাইলা লিইয়াছকুনূফীহি ওয়ান্নাহা-রা মুবসিরান ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিকাওমিইঁ ইউ’মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা কি দেখেনি আমি রাত সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা তখন বিশ্রাম নিতে পারে আর দিন সৃষ্টি করেছি এমনভাবে, যাতে তখন সবকিছু দৃষ্টিগোচর হয়। নিশ্চয়ই যে সকল লোক ঈমান আনে তাদের জন্য এর ভেতর বহু নিদর্শন আছে। ৪৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি দেখে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিনকে করেছি আলোকময়। নিশ্চয় এতে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কি অনুধাবন করে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি এদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিবসকে করেছি আলোকপ্রদ ? এতে মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।


তাফসীরঃ

৪৪. অর্থাৎ রাত-দিনের পরিবর্তনের মধ্যে চিন্তা করলে তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে শিক্ষালাভ হয়। কেননা একই নিয়মের অধীনে যেভাবে রাত-দিনের নিরবচ্ছিন্ন পালাবদল হচ্ছে তা এক লা-শারীক সর্বশক্তিমান সত্তার ইচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়। এরূপ একাধিক সত্তা থাকলে এ শৃঙ্খলায় ভাঙ্গন অনিবার্য হয়ে যেত। এটা তাওহীদের প্রমাণ রিসালাতের শিক্ষালাভ হয় এভাবে যে, যেই আল্লাহ অন্ধকার রাতের পর দিনের আলো দিয়ে মানুষের দৈহিক ও বাহ্যিক প্রতিপালনের ব্যবস্থা করেছেন, তিনি তাদের আত্মিক ও অভ্যন্তরীণ পালন-পরিচর্যার জন্য হিদায়াতের আলো দান করবেন না এটা কি করে সম্ভব। বস্তুত সেই আলো বিতরণের জন্যই নবী-রাসূল প্রেরণের ধারা চালু করেছেন যার সর্বশেষ জ্যোতিষ্ক হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর আখিরাতের শিক্ষালাভ এভাবে হয় যে, রাতের বেলা মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম মৃত্যুসদৃশ একটা অবস্থা। দিনের আলো ফুটলে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ঘুমের সাময়িক মৃত্যু থেকে জীবিত করে তোলেন। ঠিক এভাবেই তিনি আয়ু শেষের আসল মৃত্যু থেকেও মানুষকে একদিন পুনর্জীবিত করবেন। সেটাই আখিরাত। মোটকথা চিন্তাভাবনা করলে বিশ্ববাসীগণ এর থেকে দীন ও ঈমানের বহু শিক্ষা লাভ করতে পারে (-অনুবাদক, তাফসীরে উছমানী অবলম্বনে)।


৮৭


وَیَوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ فَفَزِعَ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا مَنۡ شَآءَ اللّٰہُ ؕ وَکُلٌّ اَتَوۡہُ دٰخِرِیۡنَ


ওয়া ইয়াওমা ইউনফাখুফিসসূরি ফাফাঝি‘আ মান ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়া মান ফিল আরদি ইল্লা-মান শাআল্লা-হু ওয়া কুললন আতাওহু দা-খিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে, সে দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই ঘাবড়ে যাবে, আল্লাহ যাদের ব্যাপারে ইচ্ছা করবেন তারা ছাড়া ৪৫ এবং সকলেই আনত হয়ে তার সামনে উপস্থিত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন, তারা ব্যতীত নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তাঁর কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, সেই দিন আকাশমণ্ডলীর ও পৃথিবীর সকলেই ভীত-বিহবল হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ্ যাদেরকে চাইবেন তারা ব্যতীত এবং সকলেই তাঁর নিকট আসবে বিনীত অবস্থায়।


তাফসীরঃ

৪৫. ‘আল্লাহ যাদের ব্যাপারে ইচ্ছা করবেন তারা ছাড়া’এর ব্যাখ্যা সামনে ৮৯ নং আয়াতে আসছে। অর্থাৎ এরা সেইসব লোক, যারা আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে সৎকর্ম নিয়ে। কোন কোন বর্ণনায় প্রকাশ, এরা হল আল্লাহর পথে যারা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, সেই শহীদগণ।


৮৮


وَتَرَی الۡجِبَالَ تَحۡسَبُہَا جَامِدَۃً وَّہِیَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ؕ صُنۡعَ اللّٰہِ الَّذِیۡۤ اَتۡقَنَ کُلَّ شَیۡءٍ ؕ اِنَّہٗ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَفۡعَلُوۡنَ


ওয়া তারাল জিবা-লা তাহছাবুহা-জা-মিদাতাওঁ ওয়াহিয়া তামুররু মাররাছছাহা-বি সুন‘আল্লা-হিল্লাযী আতকানা কুল্লা শাইয়িন ইন্নাহূখাবীরুম বিমা-তাফ‘আলূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা (আজ) পাহাড়কে দেখে মনে কর তা আপন স্থানে অচল, অথচ (সে দিন) তা সঞ্চরণ করবে, যেমন সঞ্চরণ করে মেঘমালা। এসবই আল্লাহর কর্ম-কুশলতা, যিনি সকল বস্তু সুদৃঢ়ভাবে সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তোমরা যা-কিছু কর তিনি তা সম্যক অবহিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর, অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি পর্বতমালা দেখছো, মনে করছো তা অচল, অথচ এরা হবে মেঘপুঞ্জের ন্যায় সঞ্চরমাণ। এটা আল্লাহ্ র ই সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সমস্ত কিছুকে করেছেন সুষম। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তিনি সম্যক অবগত।


৮৯


مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَہٗ خَیۡرٌ مِّنۡہَا ۚ وَہُمۡ مِّنۡ فَزَعٍ یَّوۡمَئِذٍ اٰمِنُوۡنَ


মান জাআ বিলহাছানাতি ফালাহূখাইরুম মিনহা- ওয়া হুম মিন ফাঝাইয়ঁইয়াওমাইযিন আ-মিনূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে-কেউ সৎকর্মসহ আসবে, সে তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট প্রতিফল পাবে। ৪৬ তারা সে দিন সর্বপ্রকার ভয়-ভীতি হতে নিরাপদ থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে উৎকৃষ্টতর প্রতিদান পাবে এবং সেদিন তারা গুরুতর অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তা হতে উৎকৃষ্ট প্রতিফল পাবে এবং সেই দিন এরা শংকা হতে নিরাপদ থাকবে।


তাফসীরঃ

৪৬. আল্লাহ তাআলার ওয়াদা হল তিনি প্রতিটি সৎকর্মের সওয়াব দিবেন তার দশগুণ।


৯০


وَمَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَکُبَّتۡ وُجُوۡہُہُمۡ فِی النَّارِ ؕ ہَلۡ تُجۡزَوۡنَ اِلَّا مَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ


ওয়া মান জাআ বিছছাইয়িআতি ফাকুব্বাত উজূহুহুম ফিন্না-রি হাল তুজঝাওনা ইল্লা-মাকনতুম তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যে-কেউ মন্দকর্ম নিয়ে আসবে, তাদেরকে উল্টো-মুখো করে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। তোমাদেরকে তো কেবল তোমরা যা করতে তারই শাস্তি দেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যে মন্দ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অগ্নিতে অধঃমূখে নিক্ষেপ করা হবে। তোমরা যা করছিলে, তারই প্রতিফল তোমরা পাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে কেউ অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে দোযখে এবং এদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।’


৯১


اِنَّمَاۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ رَبَّ ہٰذِہِ الۡبَلۡدَۃِ الَّذِیۡ حَرَّمَہَا وَلَہٗ کُلُّ شَیۡءٍ ۫  وَّاُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ۙ


ইন্নামা উমিরতুআন আ‘বুদা রাব্বা হা-যিহিল বালদাতিল্লাযী হাররামাহা-ওয়ালাহূকুল্লু শাইয়িওঁ ওয়া উমিরতুআন আকূনা মিনাল মুছলিমীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল! তাদেরকে বলে দাও) আমাকে তো কেবল এ হুকুমই দেওয়া হয়েছে যে, আমি যেন এই নগরের প্রতিপালকের ইবাদত করি, যিনি এ নগরকে মর্যাদা দান করেছেন। তিনিই সবকিছুর মালিক এবং আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যেন আমি আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তো কেবল এই নগরীর প্রভুর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেন। এবং সব কিছু তাঁরই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আজ্ঞাবহদের একজন হই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো আদিষ্ট হয়েছি এই নগরীর প্রভুর ‘ইবাদত করতে, যিনি এটাকে করেছেন সম্মানিত। সমস্ত কিছু তাঁরই। আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি, যেন আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হই।


৯২


وَاَنۡ اَتۡلُوَا الۡقُرۡاٰنَ ۚ فَمَنِ اہۡتَدٰی فَاِنَّمَا یَہۡتَدِیۡ لِنَفۡسِہٖ ۚ وَمَنۡ ضَلَّ فَقُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُنۡذِرِیۡنَ


ওয়া আন আতলুওয়াল কুরআ-না ফামানিহ তাদা-ফাইন্নামা-ইয়াহতাদী লিনাফছিহী ওয়া মান দাল্লা ফাকুল ইন্নামা আনা মিনাল মুনযিরীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি যেন কুরআন তিলাওয়াত করি। যে ব্যক্তি হেদায়াতের পথে আসবে, সে হেদায়াতের পথে আসবে নিজেরই কল্যাণার্থে। আর কেউ পথভ্রষ্টতা অবলম্বন করলে বলে দাও, আমি তো সতর্ককারীদেরই একজন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যেন আমি কোরআন পাঠ করে শোনাই। পর যে ব্যক্তি সৎপথে চলে, সে নিজের কল্যাণার্থেই সৎপথে চলে এবং কেউ পথভ্রষ্ট হলে আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি আরও আদিষ্ট হয়েছি, কুরআন তিলাওয়াত করতে; অতএব যে ব্যক্তি সৎপথ অনুসরণ করে, সে সৎপথ অনুসরণ করে নিজেরই কল্যাণের জন্যে। আর কেউ ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করলে তুমি বল, ‘আমি তো কেবল সতর্ককারীদের মধ্যে একজন।’


৯৩


وَقُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ سَیُرِیۡکُمۡ اٰیٰتِہٖ فَتَعۡرِفُوۡنَہَا ؕ  وَمَا رَبُّکَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ٪


ওয়া কুল্লি হামদুলিল্লা-হি ছাইউরীকুম আ-য়া-তিহী ফাতা‘রিফূনাহা- ওয়ামা-রাব্বুকা বিগা-ফিলিন ‘আম্মা-তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং বলে দাও, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। তিনি তোমাদেরকে নিজ নিদর্শনসমূহ দেখাবেন। অতঃপর তোমরা তা চিনতেও পারবে। ৪৭ তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অনবহিত নন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। এবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র ই, তিনি তোমাদেরকে সত্বর দেখাবেন তাঁর নিদর্শন; তখন তোমরা তা বুঝতে পারবে।’ তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালক গাফিল নন।


তাফসীরঃ

৪৭. আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যতা ও আপন কুদরতের বহু নিদর্শন মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন এবং মানুষ তা প্রত্যক্ষও করেছে, যেমন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওহীর ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা মানুষ বাস্তবায়িত হতে দেখেছে। সামনে সূরা ‘রূম’-এর শুরুতে এর একটা উদাহরণ আসছে। আয়াতে নিদর্শনাবলী বলতে এ জাতীয় নিদর্শনও বোঝানো হতে পারে আবার এটাও সম্ভব যে, এর দ্বারা কিয়ামত বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, কিয়ামত তো একদিন সংঘটিত হবেই আর যখন তা সংঘটিত হবে, তখন অবিশ্বাসীরাও চিনতে ও বুঝতে পারবে যে, তা কিয়ামত। কিন্তু তখন বুঝে তো কোন লাভ হবে না, যেহেতু ঈমান আনার সময় পার হয়ে গেছে।

Post a Comment

0 Comments