সূরা হাজ্জ্ব কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত,সকল রোগের ঔষধ সূরা হাজ্জ্ব,সূরা আল-হাজ্জ্ব বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত অডিও সূরা আল হাজ্জ্ব,

 

২২ . আল হাজ্জ্ব - ( الحج ) | হজ্জ

মাদানী, মোট আয়াতঃ ৭৮


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ ۚ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ


ইয়াআইয়ুহান্না-ছুত্তাকূরাব্বাকুম ইন্না ঝালঝালাতাছছা-‘আতি শাইউন ‘আজীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মানুষ! নিজ প্রতিপালকের (ক্রোধকে) ভয় কর। জেনে রেখ, কিয়ামতের প্রকম্পন এক সাংঘাতিক জিনিস।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হে মানুষ! ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার!



يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَىٰ وَمَا هُم بِسُكَارَىٰ وَلَـٰكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ


ইয়াওমা তারাওনাহা-তাযহালুকুলল মুরদি‘আতিন ‘আম্মাআরদা‘আত ওয়া তাদা’উ কুলুল যা-তি হামলিন হামলাহা-ওয়া তারান্না-ছা ছুকা-রা-ওয়ামা-হুম বিছুকা-রা-ওয়ালা-কিন্না ‘আযা-বাল্লা-হি শাদীদ।

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে দিন তোমরা তা দেখতে পাবে, সে দিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী সেই শিশুকে (পর্যন্ত) ভুলে যাবে, যাকে সে দুধ পান করিয়েছে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলবে আর মানুষকে তুমি এমন দেখবে, যেন তারা নেশাগ্রস্ত, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বরং (সে দিন) আল্লাহর শাস্তি হবে অতি কঠোর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেই দিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী বিস্মৃত হবে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলিবে ; মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্তসদৃশ, যদিও এরা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুত আল্লাহ্ র শাস্তি কঠিন।



وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيدٍ


ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইউজা-দিলুফিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়া ইয়াত্তাবি’উ কুল্লা শাইতা নিম মারীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষের মধ্যে কতক এমন আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে-না বুঝে ঝগড়া করে এবং অনুগমন করে সেই অবাধ্য শয়তানের


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞানতাবশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের,



كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُ يُضِلُّهُ وَيَهْدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ السَّعِيرِ


কুতিবা ‘আলাইহি আন্নাহূমান তাওয়াল্লা-হু ফাআন্নাহূইউদিল্লুহূওয়া ইয়াহদীহি ইলা-‘আযাবিছ ছা‘ঈর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যার নিয়তিতে লিখে দেওয়া হয়েছে, যে-কেউ তাকে বন্ধু বানাবে, তাকে সে বিপথগামী করে ছাড়বে এবং তাকে নিয়ে যাবে প্রজ্জ্বলিত জাহান্নামের শাস্তির দিকে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে পরিচালিত করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তার সম্বন্ধে এই নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে পরিচালিত করবে প্রজ্বলিত অগ্নির শাস্তির দিকে।



يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ ۚ وَنُقِرُّ فِي الْأَرْحَامِ مَا نَشَاءُ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ۖ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰ أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِن بَعْدِ عِلْمٍ شَيْئًا ۚ وَتَرَى الْأَرْضَ هَامِدَةً فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاءَ اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ


ইয়াআইয়ুহান্না-ছুইন কুনতুম ফীরাইবিম মিনাল বা‘ছি ফাইন্না-খালাকনা-কুম মিন তুরা-বিন ছু ম্মা মিন নুতফাতিন ছুম্মা মিন ‘আলাকাতিন ছুম্মা মিম মু দগাতিম মুখালিলকাতিওঁ ওয়া গাইরি মুখাল্লাকাতিল লিনুবাইয়িনা লাকুম ওয়া নুকিররু ফিল আরহা-মি মা-নাশাউ ইলাআজালিম মুছাম্মান ছুম্মা নুখরিজুকুম তিফলান ছুম্মা লিতাবলুগূআশুদ্দাকুম ওয়া মিনকুম মাইঁ ইউতাওয়াফফা-ওয়া মিনকুম মাইঁ ইউরাদ্দুইলাআরযালিল ‘উমুরি লিকাইলাইয়া‘লামা মিম বা‘দি ‘ইলমিন শাইআওঁ ওয়া তারাল আরদা হা-মিদাতান ফাইযা আনঝালনা-‘আলাইহাল মাআহতাঝঝাত ওয়া রাবাত ওয়া আমবাতাত মিন কুল্লি ঝাওজিম বাহীজ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মানুষ! পুনরায় জীবিত হওয়া সম্পর্কে তোমাদের যদি কোন সন্দেহ থাকে, তবে (একটু চিন্তা কর) আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, ১ তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর জমাট রক্ত থেকে, তারপর এক মাংসপি- থেকে, যা (কখনও) পূর্ণাকৃতি হয় এবং (কখনও) পূর্ণাকৃতি হয় না, ২ তোমাদের কাছে (তোমাদের) প্রকৃত অবস্থা সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করার জন্য। আর আমি (তোমাদেরকে) যত কাল ইচ্ছা মাতৃগর্ভে রাখি এক নির্দিষ্ট কালের জন্য। তারপর তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি। তারপর (তোমাদেরকে প্রতিপালন করি) যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের কতককে (আগেই) দুনিয়া থেকে তুলে নেওয়া হয় এবং তোমাদের কতককে ফিরিয়ে দেওয়া হয় হীনতম বয়সে (অর্থাৎ চরম বার্ধক্যে), এমনকি তখন সে সব কিছু জানার পরও কিছুই জানে না। ৩ তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, তারপর যখন আমি তাতে বারি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও বাড়-বাড়ন্ত হয়ে ওঠে এবং তা উৎপন্ন করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ। ৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হে মানুষ ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিগ্ধ হও তবে অবধান কর-আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকা হতে, তার পর শুক্র হতে, তার পর ‘আলাকা’ হতে, তার পর পূর্ণাকৃতি বা অপূর্ণাকৃতি গোশ্তপিণ্ড হতে-তোমাদের নিকট ব্যক্ত করার জন্যে, আমি যা ইচ্ছা করি তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তার পর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারও কারও মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকেও কাউকেও প্রত্যাবৃত্ত করা হয় হীনতম বয়সে, যার ফলে এরা যা কিছু জানত সে সম্বন্ধে এরা সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে দেখ শুষ্ক, এরপর এতে আমি বারি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদ্গত করে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ;


তাফসীরঃ

১. যারা মৃত্যুর পর পুনর্জীবন অসম্ভব বা কঠিন মনে করে, তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা নিজেদের সৃজন প্রক্রিয়া সম্পর্কেই চিন্তা কর না! আল্লাহ তাআলা কী বিস্ময়কর পন্থায় কতগুলো ধাপ পার করে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। আল্লাহ তাআলাই তোমাদেরকে অস্তিত্ব দান করেছেন। তোমাদের প্রাণ ছিল না। আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে প্রাণ দিয়েছেন। যেই সত্তা তোমাদেরকে সম্পূর্ণ নাস্তি থেকে এরূপ বিস্ময়কর পন্থায় সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তোমাদেরকে তোমাদের মৃত লাশে পরিণত হওয়ার পর পুনরায় জীবন দান করতে পারবে না? এটা তোমাদের কেমন ভাবনা?


২. অর্থাৎ, অনেক সময় মায়ের পেটে সেই গোশতের টুকরা পূর্ণাঙ্গ মানব শিশুতে পরিণত হয় আবার অনেক সময় তা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিপূর্ণতা লাভ করে না। কখনও সেই অপূর্ণ অবস্থায়ই মায়ের গর্ভপাত ঘটে যায় এবং কখনও অপূর্ণ শিশুই জন্মগ্রহণ করে।


৩. অর্থাৎ, অতিরিক্ত বৃদ্ধ অবস্থায় মানুষ শৈশবকালের মতই বোধ-বুদ্ধিহীনতার দিকে ফিরে যায়। যৌবনকালে সে যা-কিছু জ্ঞান-বিদ্যা অর্জন করে বৃদ্ধকালে তা সব অথবা বেশির ভাগই ভুলে যায়।


৪. এটা পুনর্জীবন দানের দ্বিতীয় দলীল। ভূমি শুকিয়ে গেলে তা নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। জীবনের সব আলামত তা থেকে মুছে যায়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে তার ভেতর নব জীবন সঞ্চার করেন। ফলে সেই নিষ্প্রাণ ভূমি নানা রকম বৃক্ষ-লতায় ভরে উঠে, যা দেখে দর্শকের চোখ জুড়িয়ে যায়। যে আল্লাহ এটা করতে সক্ষম তিনি কি তোমাদেরকে পুনর্বার জীবন দান করতে পারবেন না?



ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّهُ يُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَأَنَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ


যা-লিকা বিআন্নাল্লা-হা হুওয়াল হাক্কু ওয়া আন্নাহূইউহয়িল মাওতা-ওয়া আন্নাহূ‘আলাকুল্লি শাইয়িন কাদীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এসব এজন্য যে, আল্লাহর অস্তিত্বই সত্য ৫ এবং তিনিই প্রাণহীনের ভেতর প্রাণ সঞ্চার করেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এগুলো এ কারণে যে, আল্লাহ সত্য এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা এইজন্যে যে, আল্লাহ্ সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে শক্তিমান;


তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ, তোমাদের সৃজনকার্য হোক বা মৃত ভূমিতে উদ্ভিদ উৎপন্ন করার ব্যাপার হোক, সব কিছুরই মূল কারণ কেবল এই যে, আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বই সত্যিকারের অস্তিত্ব। তাঁর অস্তিত্ব অন্য কারও মুখাপেক্ষী নয়। অন্য সকলের অস্তিত্ব তাঁর কুদরত থেকেই প্রাপ্ত। তিনিই সকলকে নাস্তি থেকে অস্তিতে আনয়ন করেছেন। এই যে সর্বশক্তিমান সত্তা, তিনি মৃতদেরকে পুনরায় জীবিত করারও ক্ষমতা রাখেন।



وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَن فِي الْقُبُورِ


ওয়া আন্নাছছা-‘আতা আ-তিয়াতুল লা-রাইবা ফীহা- ওয়া আন্নাল্লা-হা ইয়াব‘আছুমান ফিল কুবূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং এজন্য যে, কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। তাতে কোন সন্দেহ নেই এবং এজন্য যে, যারা কবরে আছে আল্লাহ তাদের সকলকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। ৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং এ কারণে যে, কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে সন্দেহ নেই এবং এ কারণে যে, কবরে যারা আছে, আল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে তাদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্থিত করবেন।


তাফসীরঃ

৬. মানবসৃষ্টির যে প্রক্রিয়ার কথা উপরে বলা হল, একদিকে তো তা আল্লাহ তাআলার অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য বহন করে, যা দ্বারা প্রমাণ হয় আল্লাহ তাআলা মানুষকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম, অন্যদিকে এর দ্বারা পুনর্জীবনের প্রয়োজনীয়তাও প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ দুনিয়ায় মানুষকে যে সৃষ্টি করা হয়েছে অতঃপর তার জীবন যাপনের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তার ভেতরই এই দাবী নিহিত রয়েছে যে, তাকে যেন নতুন আরেক জীবন দান করা হয়। কেননা দুনিয়ায় মানুষ দুই ধারায় জীবন নির্বাহ করে। কেউ ভালো কাজ করে, কেউ করে মন্দ কাজ। কেউ হয় জালেম, কেউ মজলুম। এখন মৃত্যুর পর যদি আরেকটি জীবন না থাকে, তবে দুনিয়ায় যারা পুণ্যবান হিসেবে জীবন যাপন করেছে তারা ও পাপাচারীগণ এবং জালেম ও মজলুমগণ একই রকম হয়ে যায়। বলাবাহুল্য আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে এজন্য সৃষ্টি করেননি যে, এখানে অন্যায়-অবিচারের সয়লাব বয়ে যাবে, যার ইচ্ছা সে অন্যের উপর জুলুম করবে কিংবা পাপাচারের স্তুপে সারা দুনিয়া ভরে ফেলবে আর সেই দুর্বৃত্তপনার কারণে তার কোন শাস্তিও ভোগ করতে হবে না। আবার এমনিভাবে যে ব্যক্তি নির্মল জীবন যাপন করেছে, অন্যায়-অনাচারে লিপ্ত হয়নি, তাকেও কোন পুরস্কার দেওয়া হবে না। না, কোন যুক্তি-বুদ্ধি এটা গ্রাহ্য করে না। আর এর দ্বারা আপনা-আপনিই এই সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসে যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে যখন একবার এ দুনিয়ায় সৃষ্টি করেছেন, তখন আখেরাতে তাদেরকে আরেকটি জীবন দিয়ে তাদের পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থাও অবশ্যই করবেন।



وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُّنِيرٍ


ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইউজা-দিলুফিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়ালা-হুদাওঁ ওয়ালা-কিতা-বিম মুনীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষের মধ্যে কেউ আছে, যে আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে, অথচ তার না আছে জ্ঞান, না হিদায়াত, আর না আছে কোন দীপ্তিদায়ক কিতাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কতক মানুষ জ্ঞান; প্রমাণ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথনির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।



ثَانِيَ عِطْفِهِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۖ لَهُ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ ۖ وَنُذِيقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَذَابَ الْحَرِيقِ


ছা-নিয়া-‘ইতফিহী লিইউদিল্লা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি লাহূফিদ দুনইয়া-খিঝইয়ুওঁ ওয়া নুযীকুহূইয়াওমাল কিয়া-মাতি ‘আযা-বাল হারীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে (অহংকারে) নিজ পার্শ্বদেশ বাঁকিয়ে রাখে, যাতে অন্যদেরকেও আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। এরূপ ব্যক্তির জন্যই দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে জ্বলন্ত আগুনের স্বাদ গ্রহণ করাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে বিতর্ক করে, যাতে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দেয়। তার জন্যে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা আছে এবং কেয়ামতের দিন আমি তাকে দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন করাব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকিয়ে লোকদেরকে আল্লাহ্ র পথ হতে ভ্রষ্ট করার জন্যে। তার জন্যে লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাকে আস্বাদ করাব দহন-যন্ত্রণা।


১০


ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ


যা-লিকা বিমা-কাদ্দামাত ইয়াদা-কা ওয়া আন্নাল্লা-হা লাইছা বিজাল্লা-মিল লিল‘আবীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(বলা হবে,) এটা তোমার সেই কৃতকর্মের ফল, যা তুমি নিজ হাতে সামনে পাঠিয়েছিলে। আর এটা স্থিরীকৃত বিষয় যে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা তোমার দুই হাতের কর্মের কারণে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেদিন তাকে বলা হবে, ‘এটা তোমার কৃতকর্মেরই ফল, কারণ আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।’


১১


وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَىٰ حَرْفٍ ۖ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ ۖ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ


ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইয়া‘বুদুল্লা-হা ‘আলা-হারফিন ফাইন আসা-বাহূখাইরুনিতমাআন্না বিহী ওয়া ইন আসা-বাতহু ফিতনাতুনিনকালাবা ‘আলা-ওয়াজহিহী খাছিরাদ দুনইয়া-ওয়াল আ-খিরাতা যা-লিকা হুওয়াল খুছরা-নুল মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে, যে আল্লাহর ইবাদত করে এক প্রান্তে থেকে। যদি (দুনিয়ায়) তার কোন কল্যাণ লাভ হয়, তবে তাতে সে আশ্বস্ত হয়ে যায় আর যদি সে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তবে সে মুখ ফিরিয়ে (কুফুরের দিকে) চলে যায়। ৭ এরূপ ব্যক্তি দুনিয়াও হারায় এবং আখেরাতও। এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ র ‘ইবাদত করে দ্বিধার সঙ্গে; তার মঙ্গল হলে তাতে তার চিত্ত প্রশান্ত হয় এবং কোন বিপর্যয় ঘটলে সে তার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুনিয়াতে ও আখিরাতে ; এটাই তো সুস্পষ্ট ক্ষতি।


তাফসীরঃ

৭. মদীনা মুনাওয়ারায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের পর ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে একদল স্বার্থান্বেষী মহলকেও এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তাদের ইসলাম গ্রহণ কোন সদুদ্দেশ্যে ছিল না; বরং আশা করেছিল ইসলাম গ্রহণ করলে পার্থিব অনেক সুযোগ-সুবিধা লাভ হবে। কিন্তু যখন তাদের সে আশা পূরণ হল না; বরং কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হল, তখন পুনরায় কুফরের দিকে ফিরে গেল। এ আয়াতের ইশারা তাদেরই দিকে। বলা হচ্ছে, তারা সত্যকে সত্য বলে গ্রহণ করছে তা নয়; বরং তারা সত্য গ্রহণ করছে পার্থিব কোন স্বার্থে। তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে কোন রণক্ষেত্রের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে এবং লক্ষ্য করে কোন পক্ষের জয়লাভের সম্ভাবনা বেশি। পূর্ব থেকে সে মনস্থির করতে পারে না কোন দলে থাকবে। বরং যখন কোনও এক দলের পাল্লা ভারী দেখে, তখন সেই দলে ভিড়ে যায় এবং আশা করে বিজয়ী দলের সুযোগ-সুবিধায় তারও একটা অংশ থাকবে। এ আয়াতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, পার্থিব কোন স্বার্থ উদ্ধার হবে এই আশায় ইসলামের অনুসরণ করো না। বরং ইসলামের অনুসরণ করবে এ কারণে যে, ইসলাম সত্য দীন। এটাই আল্লাহ তাআলার দাসত্বের দাবী। পার্থিব সুযোগ-সুবিধার যে মামলা, সেটা মূলত আল্লাহ তাআলার এখতিয়ারাধীন। তিনি নিজ হিকমত অনুসারে যাকে চান তা দিয়ে থাকেন। এমনও হতে পারে যে, ইসলাম গ্রহণের পর পার্থিব কোনও লাভও হাসিল হয়ে যাবে, যদ্দরুণ আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করতে হবে। আবার কোন পরীক্ষাও এসে যেতে পারে, যখন সবর ও ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করতে হবে, যেন তিনি সকল বিপদ দূর করে দেন ও পরীক্ষা থেকে মুক্তি দান করেন।


১২


يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُ وَمَا لَا يَنفَعُهُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيدُ


ইয়াদ‘ঊ মিন দূ নিল্লা-হি মা-লা-ইয়াদুররুহূওয়ামা- লা- ইয়ানফা‘উহূ যা-লিকা হুওয়াদ দালা-লুল বা‘ঈদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুকে ডাকে, যা তার কোন ক্ষতি করতে পারে না এবং তার কোন উপকারও করতে পারে না। এটাই তো চরম পথভ্রষ্টতা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যে তার অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম পথভ্রষ্টতা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে আল্লাহ্ র পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা এর কোন অপকার করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না; এটাই চরম বিভ্রান্তি।


১৩


يَدْعُو لَمَن ضَرُّهُ أَقْرَبُ مِن نَّفْعِهِ ۚ لَبِئْسَ الْمَوْلَىٰ وَلَبِئْسَ الْعَشِيرُ


ইয়াদ‘ঊ লামান দাররুহূআকরাবুমিন নাফ‘ইহী লাবি’ছাল মাওলা-ওয়ালা-বি’ছাল ‘আশীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে ডাকে এমন কাউকে (অলীক প্রভুকে) যার ক্ষতি তার উপকার অপেক্ষা বেশি নিকটবর্তী। ৮ কত মন্দ এই অভিভাবক এবং কত মন্দ এ সহচর! ৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে এমন কিছুকে ডাকে, যার অপকার উপকারের আগে পৌছে। কত মন্দ এই বন্ধু এবং কত মন্দ এই সঙ্গী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে ডাকে এমন কিছুকে যার ক্ষতিই এর উপকার অপেক্ষা নিকটতর। কত নিকৃষ্ট এই অভিভাবক এবং কত নিকৃষ্ট এই সহচর !


তাফসীরঃ

৮. বস্তুত তাদের অলীক উপাস্যদের না কোন উপকার করার শক্তি আছে, না কোন অপকার করার। অবশ্য তারা অপকারের কারণ বনতে পারে। আর তা এভাবে যে, কোন ব্যক্তি তাদেরকে আল্লাহ তাআলার প্রভুত্বে অংশীদার সাব্যস্ত করলে সে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে শাস্তির উপযুক্ত হবে।


৯. যার উপকার অপেক্ষা ক্ষতি বেশি, সে যেমন অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না, তেমনি সঙ্গী-সাথী হওয়ারও না। কাজেই এহেন মূর্তিদের কাছে কোন কিছুর আশাবাদী হওয়া চরম নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক।


১৪


إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ


ইন্নাল্লা-হা ইউদখিলুল্লাযীনা আ-মানূওয়া আমিলুসসা-লিহা-তি জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আহা-রু ইন্নাল্লা-হা ইয়াফ‘আলুমা-ইউরীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করবেন এমন উদ্যানরাজিতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ করেন যা চান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত ; আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তাই করেন।


১৫


مَن كَانَ يَظُنُّ أَن لَّن يَنصُرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ


মান কা-না ইয়াজু ন্নুআল্লাইঁ ইয়ানসুরাহুল্লা-হুফিদদুনইয়া-ওয়াল আ-খিরাতি ফালইয়ামদুদ বিছাবাবিন ইলাছ ছামাইছু ম্মাল ইয়াকতা‘ ফালইয়ানজু র হাল ইউযহিবান্না কাইদুহূমাইয়াগীজ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি মনে করত আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে (অর্থাৎ নবীকে) সাহায্য করবেন না, সে আকাশ পর্যন্ত একটি রশি টানিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করুক তারপর দেখুক তার প্রচেষ্টা তার আক্রোশ দূর করে কি না! ১০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে ধারণা করে যে, আল্লাহ কখনই ইহকালে ও পরকালে রাসূলকে সাহায্য করবেন না, সে একটি রশি আকাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে নিক; এরপর কেটে দিক; অতঃপর দেখুক তার এই কৌশল তার আক্রোশ দূর করে কিনা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে কেউ মনে করে, আল্লাহ্ তাকে কখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করবেন না, সে আকাশের দিকে একটি রজ্জু বিলম্বিত করুক, পরে তা বিচ্ছিন্ন করুক; এরপর দেখুক তার প্রচেষ্টা তার আক্রোশের হেতু দূর করে কি না।


তাফসীরঃ

১০. ‘রশি টানিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করা’ এর দু’ রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। (এক) আরবী বাগ্ধারা অনুযায়ী এর অর্থ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করা। এ স্থলে যদি এ অর্থ গ্রহণ করা হয়, যেমন হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তবে আয়াতের ব্যাখ্যা হবে, যার ধারণা ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ কোন সফলতা অর্জন করতে পারবেন না, তার সে ধারণা তো সম্পূর্ণই ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে, ভবিষ্যতেও তা সত্য হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এখন সেই গ্লানিতে যদি তার মনে আক্রোশ দেখা দেয়, তবে তা প্রশমিত করার জন্য সে আকাশের দিকে অর্থাৎ, উপর দিকে ছাদ বা অন্য কিছুর সাথে একটা রশি টানিয়ে নিজের গলায় নিজে ফাঁসি দিক আর এভাবে আত্মহত্যা করে ঝাল মেটাক। (দুই) ‘আকাশে রশি টানিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করা’-এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে হযরত জাবের ইবনে যায়েদ রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যত সাফল্য ও কৃতকার্যতা লাভ করছেন তার উৎস হল ওহী, যা আসমান থেকে তার প্রতি নাযিল হয়। অতএব তাঁর সাফল্য দেখে যদি কারও গাত্রদাহ হয় এবং তাঁর সে সাফল্যের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে চায়, তবে তার একটাই উপায় হতে পারে। সে একটা রশি টানিয়ে কোনও মতে আকাশে উঠে যাক এবং সেই যোগসূত্র ছিন্ন করে দিক, যার মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহী আসছে আর একের পর এক সফলতা অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু পারবে কি সে এ কাজ করতে? কখনও নয়। কারও পক্ষেই এটা কখনও সম্ভব নয়। অতএব, আয়াতের সারাৎসার হল, এরূপ বিদ্বেষপ্রবণ লোকের অর্জন হতাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। (রূহুল মাআনী)


১৬


وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ وَأَنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يُرِيدُ


ওয়া কাযা-লিকা আনঝালনা-হু আ-য়া-তিম বাইয়িনা-তিওঁ ওয়া আন্নাল্লা-হা ইয়াহদী মাইঁ ইউরীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি এভাবেই একে (অর্থাৎ কুরআনকে) সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে অবতীর্ণ করেছি। আর আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত দান করেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইভাবেই আমি সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে তা অবতীর্ণ করেছি; আর আল্লাহ্ তো যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন।


১৭


إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالصَّابِئِينَ وَالنَّصَارَىٰ وَالْمَجُوسَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا إِنَّ اللَّهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ


ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়াল্লাযীনা হা-দূওয়াসসা-বিঈনা ওয়ান্নাসা-রা-ওয়াল মাজুছা ওয়াল্লাযীনা আশরাকূ ইন্নাল্লা-হা ইয়াফসিলুবাইনাহুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ইন্নাল্লা-হা ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন শাহীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই যারা মুমিন, যারা ইয়াহুদী, সাবী, খ্রিস্টান ও মাজুসী এবং যারা শিরক অবলম্বন করেছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সকলের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন। ১১ নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ের সাক্ষী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, সাবেয়ী, খ্রীষ্টান, অগ্নিপুজক এবং যারা মুশরেক, কেয়ামতের দিন আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। সবকিছুই আল্লাহর দৃষ্টির সামনে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহূদী হয়েছে, যারা সাবিয়ী, খ্রিস্টান ও অগ্নিপূজক এবং যারা মুশরিক হয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিবেন। আল্লাহ্ তো সমস্ত কিছুর সম্যক প্রত্যক্ষকারী।


তাফসীরঃ

১১. অর্থাৎ প্রত্যেকেই তো নিজেকে হকপন্থী ও অন্যদেরকে বাতিলপন্থী বলে দাবি করে এবং সে হিসেবে নিজেদেরকে জান্নাতবাসী ও অন্যদেরকে জাহান্নামী মনে করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কে হকপন্থী ও সে হিসেবে জান্নাতের অধিকারী তা আল্লাহ তাআলাই জানেন আর তার মাপকাঠি হিসেবে আসমানী কিতাব নাযিল করেন। প্রত্যেক যুগে যারা সমকালীন কিতাবের অনুসরণ করে তারাই হকপন্থী আর যারা তা অস্বীকার করে তারা বাতিলপন্থী। আখেরী যমানার সে মানদণ্ড হল কুরআন মাজীদ। যারা এর অনুসরণ করে তারাই অর্থাৎ মুমিন ও মুসলিমগণই এ যমানার হকপন্থী আর যারা কুরআন মানে না তারা বাতিলপন্থী। এতদসত্ত্বেও যারা হঠকারিতা করে তাদের জন্য চূড়ান্ত ও প্রত্যক্ষ মীমাংসা হবে কিয়ামতের দিন। সেদিন আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে জান্নাতে ও অন্যদেরকে জাহান্নামে দাখিল করে দেখিয়ে দেবেন দুনিয়ায় প্রকৃত হকপন্থী কারা ছিল। -অনুবাদক


১৮


أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يَسْجُدُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ وَالنُّجُومُ وَالْجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ وَكَثِيرٌ مِّنَ النَّاسِ ۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ الْعَذَابُ ۗ وَمَن يُهِنِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّكْرِمٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ ۩


আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ইয়াছজুদুলাহূ মান ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়া মান ফিল আরদি ওয়াশশামছুওয়ালকামারু ওয়ান নুজূমুওয়াল জিবা-লুওয়াশশাজারু ওয়াদ্দাওয়া ব্বুওয়া কাছীরুম মিনান্না-ছি ওয়া কাছীরুন হাক্কা ‘আলাইহিল ‘আযা-বু ওয়া মাইঁ ইউহিনিল্লা-হু ফামা-লাহূ মিম মুকরিমিন ইন্নাল্লা-হা ইয়াফ‘আলুমা-ইয়াশাউ(ছিজদাহ-৬)।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি দেখনি আল্লাহর সম্মুখে সিজদা করে যা-কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, যা-কিছু আছে পৃথিবীতে ১২ এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, বৃক্ষ, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? আবার এমনও অনেক আছে, যাদের প্রতি শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তার কোন সম্মানদাতা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ করেন যা তিনি চান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ্কে সিজ্দা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজ্দা করে মানুষের মধ্যে অনেকে ? আবার অনেকের প্রতি অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ্ যাকে হেয় করেন তার সম্মানদাতা কেউই নেই ; আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা করেন।


তাফসীরঃ

১২. এসব বস্তুর সিজদা করার অর্থ এরা আল্লাহ তাআলার আজ্ঞাধীন। সব কিছুই তাঁর হুকুম শিরোধার্য করে আছে, সকলেই তাঁর আদেশের সামনে নতশির। তবে এর দ্বারা ইবাদতের সিজদাও বোঝানো হতে পারে। কেননা বিশ্ব জগতের প্রতিটি বস্তুর এতটুকু উপলব্ধি আছে যে, তাকে আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং তার কর্তব্য তাঁরই ইবাদত করা। অবশ্য সকল বস্তুর সিজদা একই রকম নয়। প্রত্যেকে সিজদা করে তার নিজের অবস্থা অনুযায়ী। সমগ্র সৃষ্টি জগতে একমাত্র মানুষই এমন মাখলুক, যার সদস্যবর্গের সকলে ইবাদতের এ সিজদা করে না। তাদের মধ্যে অনেকে এ সিজদা করে এবং অনেকে করে না। এ কারণেই মানুষের কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘বহু মানুষও’। অর্থাৎ সকলেই নয়। প্রকাশ থাকে যে, এটি সিজদার আয়াত। যে ব্যক্তি মূল আরবীতে এ আয়াত পড়বে বা শুনবে তার উপর সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।


১৯


۞ هَـٰذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ ۖ فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِّن نَّارٍ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ الْحَمِيمُ


হা-যা-নি খাছমা-নিখ তাছামূফী রাব্বিহিম ফাল্লাযীনা কাফারূকুত্তি‘আত লাহুম ছিয়া-বুম মিন্না-রিইঁ ইউসাব্বুমিন ফাওকিরুঊছিহিমুল হামীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরা (মুমিন ও কাফের) দু’টি পক্ষ, যারা নিজ প্রতিপালক সম্পর্কে বিবাদ করছে। সুতরাং (এর মীমাংসা হবে এভাবে যে,) যারা কুফর অবলম্বন করেছে তাদের জন্য তৈরি করা হবে আগুনের পোশাক। তাদের মাথার উপর ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই দুই বাদী বিবাদী, তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব যারা কাফের, তাদের জন্যে আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা দুইটি বিবদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করে ; যারা কুফরী করে তাদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোশাক, তাদের মাথার ওপর ঢালিয়া দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি,


২০


يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ


ইউসহারু বিহী মা-ফী বুতূনিহিম ওয়াল জুলূদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যা দ্বারা তাদের উদরস্থ সবকিছু এবং চামড়া গলিয়ে দেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যা দিয়ে এদের উদরে যা আছে তা এবং এদের চর্ম বিগলিত করা হবে।


২১


وَلَهُم مَّقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ


ওয়া লাহুম মাকা-মি‘উ মিন হাদীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের জন্যে আছে লোহার হাতুড়ি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এদের জন্যে থাকবে লৌহমুদগর।


২২


كُلَّمَا أَرَادُوا أَن يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ


কুল্লামাআরা-দূ আইঁ ইয়াখরুজুমিনহা-মিন গাম্বিন উ‘ঈদূফীহা- ওয়া যূকূ‘আযাবাল হারীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখনই তারা যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে তা থেকে বের হতে চাবে, তখনই তাদেরকে তার ভেতর ফিরিয়ে দেওয়া হবে। (বলা হবে), জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি আস্বাদন কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা যখনই যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবেঃ দহন শাস্তি আস্বাদন কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখনই এরা যন্ত্রণাকাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এতে; এদেরকে বলা হবে, ‘আস্বাদন কর দহন-যন্ত্রণা।’


২৩


إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍ وَلُؤْلُؤًا ۖ وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌ


ইন্নাল্লা-হা ইউদখিলুল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু ইউহাল্লাওনা ফীহা-মিন আছা-বিরা মিন যাহাবিওঁ ওয়া লু’লুওআওঁ ওয়া লিবা-ছুহুম ফীহা-হারীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অপর দিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তাদেরকে সজ্জিত করা হবে সোনার কাঁকন ও মণি-মুক্তা দ্বারা। আর সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন উদ্যান সমূহে, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তাদেরকে তথায় স্বর্ণ-কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক হবে রেশমী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে অলঙ্কৃত করা হবে স্বর্ণ-কঙ্কন ও মুক্তা দিয়ে এবং সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।


২৪


وَهُدُوا إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ وَهُدُوا إِلَىٰ صِرَاطِ الْحَمِيدِ


ওয়া হুদূ ইলাততাইয়িবি মিনাল কাওলি ওয়া হুদূ ইলা-সিরা-তিল হামীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (তার কারণ এই যে,) তাদেরকে পবিত্র কালিমায় (অর্থাৎ কালিমায়ে তাওহীদে) উপনীত করা হয়েছিল এবং তাদেরকে পৌঁছানো হয়েছিল আল্লাহর পথে, যিনি সমস্ত প্রশংসার উপযুক্ত। ১৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা পথপ্রদর্শিত হয়েছিল সৎবাক্যের দিকে এবং পরিচালিত হয়েছিল প্রশংসিত আল্লাহর পথপানে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদেরকে পবিত্র বাক্যের অনুগামী করা হয়েছিল এবং তারা পরিচালিত হয়েছিল পরম প্রশংসাভাজন আল্লাহ্ র পথে।


তাফসীরঃ

১৩. অথবা এর দ্বারা জান্নাতেরই বৈশিষ্ট্য বোঝানো হয়েছে যে, তাদেরকে এমন স্থানে পৌঁছানো হবে, যেখানে কোন অসার-অহেতুক কথাবার্তা হবে না, প্রত্যেকেই ভালো ও পবিত্র কথা বলবে এবং তাদেরকে পৌঁছানো হবে প্রশংসার্হ আল্লাহর পথ তথা মুত্তাকীদের নিবাস জান্নাতে। -অনুবাদক


২৫


إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِي جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَاءً الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ ۚ وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ


ইন্নাল্লাযীনা কাফারূওয়া ইয়াসুদ্দূনা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি ওয়াল মাছজিদিল হারা-মিল্লাযী জা‘আলনা-হু লিন্না-ছি ছাওয়া-আনিল ‘আ-কিফুফীহি ওয়াল বা-দি ওয়া মাইঁ ইউরিদ ফীহি বিইলহা-দিম বিজু লমিন নুযিকহু মিন ‘আযা-বিন আলীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই (সেই সব লোক শাস্তির উপযুক্ত) যারা কুফর অবলম্বন করেছে এবং অন্যদেরকে বাধা দিচ্ছে আল্লাহর পথ ও মসজিদুল হারাম থেকে, যাকে আমি সমস্ত মানুষের জন্য সমান করেছি তার স্থানীয় বাসিন্দা হোক বা বহিরাগত। ১৪ আর যে-কেউ এখানে জুলুমে রত হয়ে বাঁকা পথের ইচ্ছা করবে ১৫ আমি তাকে মর্মন্তুদ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা কুফর করে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেই মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়, যাকে আমি প্রস্তুত করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকল মানুষের জন্যে সমভাবে এবং যে মসজিদে হারামে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচছা করে, আমি তাদেরকে যন্ত্রানাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করে এবং মানুষকে নিবৃত্ত করে আল্লাহ্ র পথ হতে ও মসজিদুল হারাম হতে, যা আমি করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্যে সমান, আর যে ইচ্ছা করে সীমালংঘন করে এতে পাপ কার্যের, তাকে আমি আস্বাদন করাইব মর্মন্তুদ শাস্তির।


তাফসীরঃ

১৪. মসজিদুল হারাম ও তার আশপাশের স্থানসমূহ, যাতে হজ্জের কার্যাবলী অনুষ্ঠিত হয়, যেমন সাফা ও মারওয়ার মাঝখানে সায়ী করার স্থান, মিনা, আরাফা ও মুযদালিফা কারও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নয়। বরং এসব স্থান বিশ্বের সমস্ত মানুষের জন্য সাধারণভাবে ওয়াকফ। যে-কেউ এখানে অবাধে ইবাদত-বন্দেগী করতে পারে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ও বহিরাগতের কোন প্রভেদ নেই।


১৫. ‘বাঁকা পথের ইচ্ছা করা’ এর অর্থ কুফুর ও শিরকে লিপ্ত হওয়া, হারাম শরীফের বিধানাবলী অমান্য করা, বরং যে-কোনও রকমের গুনাহে লিপ্ত হওয়া। হারাম শরীফে যেমন যে-কোন সৎকর্মের সওয়াব বহু গুণ বৃদ্ধি পায়, তেমনি এখানে কোন গুনাহ করলে তাও অধিকতর কঠিনরূপে গণ্য হয়, যেমন কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত আছে।


২৬


وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيمَ مَكَانَ الْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِي شَيْئًا وَطَهِّرْ بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْقَائِمِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ


ওয়া ইয বাওওয়া’না- লিইবরা-হীমা মাকা-নাল বাইতি আল্লা-তুশরিক বী শাইআও ওয়াতাহহির বাইতিয়া লিততাইফীনা ওয়াল কাইমীনা ওয়াররুক্কা‘ইছছুজুদ ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সেই ঘর (অর্থাৎ কাবাগৃহ)-এর স্থান জানিয়ে দিয়েছিলাম। ১৬ (এবং তাকে হুকুম দিয়েছিলাম) আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার ঘরকে সেই সকল লোকের জন্য পবিত্র রেখ, যারা (এখানে) তাওয়াফ করে, ইবাদতের জন্য দাঁড়ায় এবং রুকূ-সিজদা আদায় করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং স্মরণ কর, যখন আমি ইব্রাহীমের জন্যে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই গৃহের স্থান, তখন বলেছিলাম, ‘আমার সঙ্গে কোন শরীক স্থির কর না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখ তাদের জন্যে যারা তাওয়াফ করে এবং যারা সালাতে দাঁড়ায়, রুক‚‘ করে ও সিজ্দা করে।


তাফসীরঃ

১৬. পূর্বে সূরা বাকারায় (২ : ১২৭) গত হয়েছে যে, বাইতুল্লাহ শরীফ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আগেই নির্মিত হয়েছিল এবং কালক্রমে বিধ্বস্ত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তাআলার পুনঃর্নিমাণের জন্য তাঁকে তার স্থান জানিয়ে দেন।


২৭


وَأَذِّن فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ


ওয়া আযযিনফিন্না-ছি বিলহাজ্জি ইয়া’তূকা রিজা-লাওঁ ওয়া ‘আলা-কুল্লি দামিরিইঁ ইয়া’তীনা মিন কুল্লি ফাজজিন ‘আমীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পদযোগে এবং দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রমকারী উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যেগুলো (দীর্ঘ সফরের কারণে) রোগা হয়ে গেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং মানুষের নিকট হজ্জ-এর ঘোষণা করে দাও, এরা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রের পিঠে, এরা আসবে দূর-দূরান্তর পথ অতিক্রম করে,


২৮


لِّيَشْهَدُوا مَنَافِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ ۖ فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْبَائِسَ الْفَقِيرَ


লিইয়াশহাদূমানা-ফি‘আ লাহুম ওয়া ইয়াযকুরুছমাল্লা-হি ফীআইইয়া-মিম মা‘লূমা-তিন ‘আলা-মা-রাঝাকাহুম মিম বাহীমাতিল আন‘আ-মি ফাকুলূমিনহা-ওয়াআত‘ইমুল বাইছাল ফাকীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাতে তারা তাদের জন্য স্থাপিত কল্যাণসমূহ প্রত্যক্ষ করে এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে সেই সকল পশুতে যা তিনি তাদেরকে দিয়েছেন। ১৭ সুতরাং (হে মুসলিমগণ!) সেই পশুগুলি থেকে তোমরা নিজেরাও খাও এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলিতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিযিক হিসেবে দান করেছেন এর ওপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহ্ র নাম উচ্চারণ করতে পারে। এরপর তোমরা তা হতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।


তাফসীরঃ

১৭. হজ্জের অনুষ্ঠানাদির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পশু কুরবানী করা অর্থাৎ, হারাম শরীফের এলাকায় আল্লাহ তাআলার নামে পশু যবাহ করা। এ আয়াতে সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।


২৯


ثُمَّ لْيَقْضُوا تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ


ছু ম্মাল ইয়াকদূ তাফাছাহুম ওয়ালইউফূনুযূরাহুম ওয়াল ইয়াততাওওয়াফূবিলবাইতিল ‘আতীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অতঃপর (যারা হজ্জ করে) তারা যেন তাদের মলিনতা দূর করে ও নিজেদের মানত পূরণ করে এবং আতীক গৃহের তাওয়াফ করে। ১৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের।


তাফসীরঃ

১৮. হজ্জের সময় হাজীগণ ইহরাম অবস্থায় থাকে। তখন তার জন্য চুল ও নখ কাটা জায়েয নয়। হজ্জের কুরবানী না করা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকে। কুরবানী করার পর এসব বৈধ হয়ে যায়। এ আয়াতে যে মলিনতা দূর করতে বলা হয়েছে, তার অর্থ কুরবানী করার পর হাজীগণ তাদের নখণ্ডচুল কাটতে পারবে। মানত পূরণের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার অর্থ বহু লোক ওয়াজিব কুরবানী ছাড়া এ রকম মানতও করে থাকে যে, হজ্জের সময় নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কুরবানী করব। তাদের জন্য সে মানত পূরণ করা অবশ্যকর্তব্য। কুরবানী করার পর বাইতুল্লাহ শরীফের যে তাওয়াফ করার কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা ‘তাওয়াফে যিয়ারত’ বুঝানো হয়েছে। সাধারণত এ তাওয়াফ করা হয় কুরবানী ও মাথা মুণ্ডন করার পর। এটা হজ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোকন। এস্থলে বাইতুল্লাহ শরীফকে ‘আল-বাইতুল আতীক’ বলা হয়েছে। ‘আতীক’-এর এক অর্থ প্রাচীন। বাইতুল্লাহ শরীফ এ হিসেবে সর্বপ্রাচীন গৃহ যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদতের জন্য সর্বপ্রথম নির্মিত ঘর এটিই। ‘আতীক’-এর আরেক অর্থ মুক্ত। বাইতুল্লাহ শরীফকে আতীক বা ‘মুক্ত গৃহ’ বলার কারণ এক হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা এ গৃহকে জালেম ও আগ্রাসীদের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত এর মর্যাদা সমুন্নত রাখুন।


৩০


ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ عِندَ رَبِّهِ ۗ وَأُحِلَّتْ لَكُمُ الْأَنْعَامُ إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ۖ فَاجْتَنِبُوا الرِّجْسَ مِنَ الْأَوْثَانِ وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ


যা-লিকা ওয়া মাইঁ ইউ‘আজজিম হুরুমা-তিল্লা-হি ফাহুওয়া খাইরুল্লাহূ‘ইনদা রাব্বিহী ওয়া-উহিল্লাত লাকুমুল আন‘আ-মুইল্লা-মা-ইউতলা-‘আলাইকুম ফাজতানিবুর রিজছা মিনাল আওছা-নি ওয়াজতানিবূকাওলাঝঝূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এসব কথা স্মরণ রেখ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ যেসব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করবে, তার পক্ষে তার প্রতিপালকের কাছে এ কাজ অতি উত্তম। সব চতুষ্পদ জন্তু তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, সেই পশুগুলো ছাড়া যা বিস্তারিতভাবে তোমাদের পড়ে শোনানো হয়েছে। ১৯ সুতরাং তোমরা প্রতিমাদের কলুষ পরিহার কর এবং মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাক,


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম। উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক;


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাই বিধান এবং কেউ আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলির সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্যে এটাই উত্তম। তোমাদের জন্যে হালাল করা হয়েছে গবাদিপশু জন্তু-এগুলি ব্যতীত যা তোমাদেরকে শোনান হয়েছে। সুতরাং তোমরা বর্জন কর মূর্তিপূজার অপবিত্রতা এবং দূরে থাক মিথ্যা কথন হতে,


তাফসীরঃ

১৯. পশু কুরবানীর আলোচনা প্রসঙ্গে আরব মুশরিকদের সেই অজ্ঞতাপ্রসূত রসমকেও রদ করা হয়েছে, যার ভিত্তিতে তারা প্রতিমাদের নামে বহু পশু হারাম সাব্যস্ত করেছিল (বিস্তারিত দেখুন সূরা আনআম ৬ : ১৩৭-১৪৪)। বলা হয়েছে, এসব পশু তোমাদের পক্ষে হালাল। ব্যতিক্রম কেবল সেগুলো যেগুলোকে কুরআন মাজীদে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে (দেখুন সূরা মায়েদা ৫ : ৩)। মুশরিকরা প্রতিমাদেরকে আল্লাহ তাআলার শরীক বলে বিশ্বাস করত এবং তাদের নামে জীবজন্তু ছেড়ে দিত। এই শিরকী কার্যক্রমের ভিত্তিতেই তারা সেসব পশুকে হারাম সাব্যস্ত করত। এ আয়াতে তাদের সেই হারামকরণের ভিত্তিকেই উৎপাটন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা প্রতিমাদের কলুষ ও অলীক-অবাস্তব কথা থেকে বেঁচে থাক।


৩১


حُنَفَاءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ


হুনাফাআ লিল্লা-হি গাইরা মুশরিকীনা বিহী ওয়া মাইঁ ইউশরিক বিল্লা-হি ফাকাআন্নামাখাররা মিনাছছামাই ফাতাখতাফুহুততাইরু আও তাহওয়ী বিহির রীহুফী মাকা-নিন ছাহীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর অভিমুখী হয়ে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে। যে-কেউ আল্লাহ সাথে কাউকে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পতিত হল, তারপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। ২০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহর দিকে একনিষ্ট হয়ে, তাঁর সাথে শরীক না করে; এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাঁর কোন শরীক না করে ; এবং যে কেউ আল্লাহ্ র শরীক করে সে যেন আকাশ হতে পড়ল, এরপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।


তাফসীরঃ

২০. এ উপমার ব্যাখ্যা এই যে, ঈমান আকাশতুল্য। যে ব্যক্তি শিরকে লিপ্ত হয়, সে এই আকাশ তথা ঈমানের সমুচ্চ স্থান থেকে নিচে পড়ে যায়। তারপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়, অর্থাৎ, তার কুপ্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশী তাকে সরল পথ থেকে বিচ্যুত করে এদিক-সেদিক নিয়ে যায়। তারপর বাতাস তাকে দূর-দূরান্তে নিয়ে ছুঁড়ে মারে, অর্থাৎ শয়তান তাকে আরও বেশি গোমরাহীতে লিপ্ত করে এবং সে বিপথগামিতায় বহু দূরে নিক্ষিপ্ত হয়। মোদ্দাকথা এরূপ ব্যক্তি ঈমানের উচ্চতর স্থান থেকে অধঃপতিত হয়ে কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের দাস হয়ে যায় ও তারা তাকে প্ররোচনা দিয়ে গোমরাহীর চরম সীমায় পৌঁছিয়ে দেয়।


৩২


ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ


যা-লিকা ওয়া মাইঁ ইউ‘আজজিম শা‘আইরাল্লা-হি ফাইন্নাহা-মিন তাকওয়াল কুলূব।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এসব বিষয় স্মরণ রেখ। আর কেউ আল্লাহর ‘শাআইর’-কে সম্মান করলে এটা তো অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়। ২১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাই আল্লাহ্ র বিধান এবং কেউ আল্লাহ্ র নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের তাক্ওয়া-সঞ্জাত।


তাফসীরঃ

২১. ‘শাআইর’-এর অর্থ এমন সব আলামত ও নিদর্শন, যা দেখলে অন্য কোন জিনিস স্মরণ হয়। আল্লাহ তাআলা যেসব ইবাদত ফরয করেছেন, বিশেষত যে সকল স্থান ও বস্তুর সাথে হজ্জের কার্যাবলী সম্পৃক্ত, যেমন বায়তুল্লাহ, হরম, কুরবানীর পশু ইত্যাদি সবই আল্লাহ তাআলার শাআইর। কেননা তা দ্বারা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর ইবাদতের কথা স্মরণ হয়। এসবকে সম্মান করা ঈমান ও তাকওয়ার দাবী।


৩৩


لَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ مَحِلُّهَا إِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيقِ


লাকুম ফীহা-মানা-ফি‘উ ইলাআজালিম মুছাম্মান ছুম্মা মাহিল্লুহাইলাল বাইতিল ‘আতীক।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এতে রয়েছে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের নানারকম উপকার। ২২ অতঃপর তাদের হালাল হওয়ার স্থান সেই প্রাচীন গৃহ (কাবা গৃহ)-এর আশেপাশে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

চতুস্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে তোমাদের জন্যে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। অতঃপর এগুলোকে পৌছাতে হবে মুক্ত গৃহ পর্যন্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই সমস্ত আন‘আমে তোমাদের জন্যে নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে; এরপর এদের কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট।


তাফসীরঃ

২২. অর্থাৎ, তোমরা কোন পশুকে যতক্ষণ পর্যন্ত হজ্জের কুরবানী হিসেবে নির্দিষ্ট না কর ততক্ষণ সে পশুকে যে-কোন কাজে ব্যবহার করতে পার। তাতে সওয়ার হওয়া, তার দুধ পান করা, তার দেহ থেকে পশম সংগ্রহ করা সবই জায়েয। কিন্তু তাকে যখন হজ্জের কুরবানী হিসেবে নির্দিষ্ট করে ফেলা হবে, তখন সে পশুকে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন এ সবের কোনওটিই করা জায়েয হয় না। বরং হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়ার পর তাকে বাইতুল্লাহ শরীফের আশেপাশে অর্থাৎ, হারাম শরীফের সীমানার মধ্যে যবাহ করে হালাল করা ওয়াজিব হয়ে যায়। হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট করার বিভিন্ন আলামত আছে, যা ফিকহী গ্রন্থাবলীতে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।


৩৪


وَلِكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لِّيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّن بَهِيمَةِ الْأَنْعَامِ ۗ فَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا ۗ وَبَشِّرِ الْمُخْبِتِينَ


ওয়া লিকুল্লি উম্মাতিন জা‘আলনা-মানছাকাল লিইয়াযকুরুছমাল্লা-হি ‘আলা-মা-রাঝাকাহুম মিম বাহীমাতিল আন‘আ-ম ফাইলা-হুকুম ইলা-হুওঁ ওয়া-হিদুন ফালাহূআছলিমূ ওয়া বাশশিরিল মুখবিতীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আল্লাহ তাদেরকে যে চতুষ্পদ জন্তুসমূহ দিয়েছেন তাতে তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ। সুতরাং তোমরা তাঁরই আনুগত্য করবে। আর সুসংবাদ দাও বিনীতদেরকে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও;


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণস্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলির ওপর যেন তারা আল্লাহ্ র নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের ইলাহ্ এক ইলাহ্, সুতরাং তারই নিকট আত্মসমর্পণ কর এবং সুসংবাদ দাও বিনীতগণকে-


৩৫


الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَالصَّابِرِينَ عَلَىٰ مَا أَصَابَهُمْ وَالْمُقِيمِي الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ


আল্লাযীনা ইযা-যুকিরাল্লা-হু ওয়াজিলাত কুলূবুহুম ওয়াসসাবিরীনা ‘আলা-মাআসাবাহুম ওয়াল মুকীমিসসালা-তি ওয়া মিম্মা-রাঝাকনা-হুম ইউনফিকূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাদের সামনে আল্লাহকে স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভীত-কম্পিত হয়, যে-কোন বিপদ-আপদে আক্রান্ত হলে ধৈর্যশীল থাকে এবং যারা সালাত কায়েম করে ও আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহ্ র নাম স্মরণ করা হলে, যারা তাদের বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় করে।


৩৬


وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُم مِّن شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌ ۖ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا صَوَافَّ ۖ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرْنَاهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ


ওয়ালবুদনা জা‘আলনা-হা-লাকুম মিন শা‘আইরিল্লা-হি লাকুম ফীহা-খাইরুন ফাযকরুছ মাল্লা-হি ‘আলাইহা-সাওয়াফফা ফাইযা-ওয়াজাবাত জুনূবুহা-ফাকুলূ মিনহা-ওয়া আত‘ইমুল কা-নি‘আ ওয়াল মু‘তাররা কাযা-লিকা ছাখখারনা-হা-লাকুম লা‘আল্লাকুম তাশকুরূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কুরবানীর উট (ও গরু)কে তোমাদের জন্য আল্লাহর ‘শাআইর’-এর অন্তর্ভুক্ত করেছি। তোমাদের পক্ষে তাতে আছে কল্যাণ। সুতরাং যখন তা সারিবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়ানো থাকে, তোমরা তার উপর আল্লাহর নাম নেবে। তারপর যখন (যবেহ হয়ে যাওয়ার পর) তা কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন তার গোশত থেকে নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। ২৩ এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং উষ্ট্রকে করেছি আল্লাহ্ র নিদর্শনগুলির অন্যতম; তোমাদের জন্যে এতে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় এদের ওপর তোমরা আল্লাহ্ র নাম উচ্চারণ কর। যখন এরা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তোমরা তা হতে আহার কর এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকে ও যাচ্ঞাকারী অভাবগ্রস্তকে ; এইভাবে আমি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।


তাফসীরঃ

২৩. কুরবানীর গোশত কাকে কাকে দেওয়া হবে, তা বোঝানোর জন্য কুরআন মাজীদ এখানে দুটি শব্দ ব্যবহার করেছে القانع والمعتر প্রথম শব্দ ‘কানি’ দ্বারা এমন লোককে বোঝানো হয়, যে অভাবগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজ অভাবের কথা কারও কাছে প্রকাশ করে না। বরং সবরের সাথে দিন গুজরান করে। আর দ্বিতীয় শব্দ ‘মু‘র্তার’ দ্বারা বোঝানো হয় এমন ব্যক্তিকে, যে নিজ অভাব-অভিযোগের কথা কথায় বা কাজে অন্যের কাছে প্রকাশ করে।


৩৭


لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَـٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ ۗ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ


লাইঁ ইয়ানা-লাল্লা-হা লুহূমুহা-ওয়ালা-দিমাউহা-ওয়ালা-কিইঁ ইয়ানা-লুহুততাকওয়ামিনকুম কাযা-লিকা ছাখখারাহা-লাকুম লিতুকাববিরুল্লা-হা ‘আলা-মা-হাদা-কুম ওয়া বাশশিরিল মুহছিনীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর কাছে তাদের গোশত পৌঁছে না আর তাদের রক্তও না, বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াই পৌঁছে। এভাবেই তিনি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা কর, তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন বলে। যারা সুচারুরূপে সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কখনই আল্লাহ্ র নিকট পৌঁঁছায় না এদের গোশ্ত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া। এইভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহ্ র শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এইজন্যে যে, তিনি তোমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন; সুতরাং তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মপরায়ণদেরকে।


৩৮


۞ إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍ كَفُورٍ


ইন্নাল্লা-হা ইউদা-ফি‘উ ‘আনিল্লাযীনা আ-মানূ ইন্নাল্লা-হা লা-ইউহিব্বুকুল্লা খাওওয়ানিন কাফূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের প্রতিরক্ষা করেন, যারা ঈমান এনেছে। ২৪ জেনে রেখ, আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অবশ্যই আল্লাহ্ রক্ষা করেন মু’মিনদেরকে, তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।


তাফসীরঃ

২৪. মক্কা মুকাররমায় কাফেরদের পক্ষ হতে মুসলিমদের প্রতি যে জুলুম-নির্যাতন চালানো হত, শুরুতে কুরআন মাজীদ সেক্ষেত্রে তাদেরকে বারবার সবর অবলম্বনের হুকুম দিয়েছে। অতঃপর এ আয়াতে তাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সবরের যে পরীক্ষা এ যাবৎকাল তারা দিয়ে এসেছে তার পালা এখন শেষ হতে যাচ্ছে। জালেমদেরকে তাদের জুলুমের জবাব দেওয়ার সময় এসে গেছে। সুতরাং পরবর্তী আয়াতে মুসলিমদেরকে জিহাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার আগে সুসংবাদ শোনানো হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা নিজেই মুসলিমদের প্রতিরক্ষা করবেন, তাদের পক্ষ থেকে শত্রুদের প্রতিরোধ ও দমন করবেন। কাজেই তারা নির্ভয়ে নিঃসঙ্কচিত্তে যুদ্ধ করুক। কেননা যাদের সঙ্গে তাদের লড়াই হবে, তারা হচ্ছে শঠ ও প্রতারক এবং ঘোর অকৃতজ্ঞ। এরূপ লোককে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকেই সাহায্য করবেন।


৩৯


أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ


উযিনা লিল্লাযীনা ইউকা-তালূনা বিআন্নাহুম জুলিমূ ওয়া ইন্নাল্লা-হা ‘আলা-নাসরিহিম লা-কাদীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে (তারা নিজেদের প্রতিরক্ষার্থে যুদ্ধ করতে পারে)। যেহেতু তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। ২৫ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জয়যুক্ত করতে পরিপূর্ণ সক্ষম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হল তাদেরকে যারা আক্রান্ত হয়েছে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করতে সম্যক সক্ষম;


তাফসীরঃ

২৫. মক্কা মুকাররমায় সুদীর্ঘ তের বছর পর্যন্ত মুমিনদেরকে সবর ও সংযম অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তারাও সর্বোচ্চ ত্যাগের সাথে তা পালনে ব্রতী থেকেছেন। যত কঠিন নির্যাতনই করা হোক অস্ত্র দ্বারা তার মোকাবেলা করার অনুমতি ছিল না। ফলে মুসলিমগণ জুলুমের জবাব সবর দ্বারাই দিতেন। অবশেষে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় এবং সর্বপ্রথম এ আয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে তরবারি ওঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়।


৪০


الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ


আল্লাযীনা উখরিজুমিন দিয়া-রিহিম বিগাইরি হাক্কিন ইল্লাআইঁ ইয়াকূলূরাব্বুনাল্লা-হু ওয়া লাওলা-দাফ‘উল্লা-হিন্না-ছা বা‘দাহুম ব্বিা‘দিল লাহুদ্দিমাত ছাওয়া-মি‘উ ওয়া বিয়া‘উওঁ ওয়া সালাওয়া-তুওঁ ওয়া মাছা-জিদুইউযকারু ফীহাছমুল্লা-হি কাছীরাও ওয়ালাইয়ানসুরান্নাল্লা-হু মাইঁ ইয়ানসুরুহূ ইন্নাল্লা-হা লাকাবিইয়ুউন ‘আঝীঝ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে অন্যায়ভাবে কেবল এ কারণে বের করা হয়েছে যে, তারা বলেছিল, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দল (-এর অনিষ্ট)কে অন্য দলের মাধ্যমে প্রতিহত না করতেন, তবে ধ্বংস করে দেওয়া হত খানকাহ, গির্জা, ইবাদতখানা ও মসজিদসমূহ ২৬ যাতে আল্লাহর যিকির করা বেশি। আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাহায্য করবেন, যারা তার (দীনের) সাহায্য করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু এ কারণে যে, তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দিয়ে প্রতিহত না করতেন, তা হলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিস্টান সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থান, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ-যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহ্ র নাম। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।


তাফসীরঃ

২৬. এ আয়াতে জিহাদের তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ায় যত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম এসেছেন সকলেই আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী শিক্ষা দিয়েছেন এবং সে উদ্দেশ্যে ইবাদতখানা তৈরি করেছেন। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শরীয়তে এ কাজের জন্য খানকা ও গির্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরবীতে খানকাকে বলে সাওমা‘আ صَوْمَعَهْ বহুবচনে صَوْامِعْ আর গির্জাকে বলে বী‘আ بِيْعَهْ বহুবচনে بِيَعْ। হযরত মূসা আলাইহিস সালামের অনুসারীগণ যে ইবাদতখানা তৈরি করত তাকে বলে ‘সালাওয়াত’ আর মুসলিমদের ইবাদতখানা হল মসজিদ। সব যুগেই আসমানী দীনের বিরোধীগণ এসব ইবাদতখানা ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। যদি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের অনুমতি না থাকত, তবে তারা দুনিয়া থেকে সকল ইবাদতখানা নিশ্চিহ্ন করে ফেলত।


৪১


الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ


আল্লাযীনা ইম মাকান্না-হুম ফিল আরদিআকা-মুসসালা-তা ওয়া আ-তাউঝঝাকা-তা ওয়া আমারূ বিল মা‘রূফি ওয়া নাহাও ‘আনিল মুনকারি ওয়া লিল্লা-হি ‘আ-কিবাতুল উমূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা এমন যে, আমি যদি দুনিয়ায় তাদেরকে ক্ষমতা দান করি, তবে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। ২৭ সব কাজে পরিণতি আল্লাহরই হাতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি- সামর্থবান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎকর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎকর্ম নিষেধ করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহ্ র ইখ্তিয়ারে।


তাফসীরঃ

২৭. মদীনা মুনাওয়ারায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনায় মুমিনদেরকে যে সাহায্যের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, প্রশ্ন দাঁড়ায় যে, এ কাজে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন কী কারণে? এ আয়াতে তারই উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, এ সকল লোক পৃথিবীতে ক্ষমতা লাভ করতে সক্ষম হলে নিজেদের জান-মাল ব্যয় করে ইবাদত-বন্দেগীর আবহ তৈরি করবে। তারা নিজেরাও ইবাদত করবে, অন্যদেরকেও তা করার জন্য প্রস্তুত করবে। তারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধের দায়িত্ব পালন করবে। এভাবে এ আয়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের মৌল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বলে দেওয়া হয়েছে।


৪২


وَإِن يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍ وَعَادٌ وَثَمُودُ


ওয়া ইয়ঁইউকাযযিবূকা ফাকাদ কাযযাবাত কাবলাহুম কাওমুনূহিওঁ ওয়া ‘আদুওঁ ওয়া ছামূদ ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তারা যদি তোমাকে অস্বীকার করে, তবে তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় এবং আদ ও ছামুদের সম্প্রদায়ও তো (নিজ-নিজ নবীকে) অস্বীকার করেছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে কওমে নূহ, আদ, সামুদ,


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং লোকেরা যদি তোমাকে অস্বীকার করে তবে এদের পূর্বে অস্বীকার করেছিল তো নূহ্, ‘আদ ও সামূদের সম্প্রদায়,


৪৩


وَقَوْمُ إِبْرَاهِيمَ وَقَوْمُ لُوطٍ


ওয়া কাওমুইবরা-হীমা ওয়া কাওমুলূত।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং ইবরাহীমের সম্প্রদায় ও লুতের সম্প্রদায়


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়ও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়,


৪৪


وَأَصْحَابُ مَدْيَنَ ۖ وَكُذِّبَ مُوسَىٰ فَأَمْلَيْتُ لِلْكَافِرِينَ ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ


ওয়া আসহা-বুমাদইয়ানা ওয়া কুযযি বা মূছা-ফাআমলাইতুলিলকা-ফিরীনা ছুম্মা আখাযতুহুম ফাকাইফা কা-না নাকীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং মাদয়ানবাসীরাও। তাছাড়া মূসাকেও অস্বীকার করা হয়েছিল। সুতরাং আমি সে কাফেরদেরকে কিছুটা অবকাশ দিয়েছিলাম। তারপর তাদেরকে পাকড়াও করি। এবার দেখ আমার ধরা কেমন ছিল!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং মাদইয়ানের অধিবাসীরা এবং মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল মূসাকেও। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম অতএব কি ভীষণ ছিল আমাকে অস্বীকৃতির পরিণাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং মাদ্ইয়ানবাসীরা আর অস্বীকার করা হয়েছিল মূসাকেও। আমি কাফিরদেরকে অবকাশ দিয়েছিলাম, এরপর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলাম। অতএব কেমন ছিল শাস্তি!


৪৫


فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَّشِيدٍ


ফাকাআইয়িম মিন কারইয়াতিন আহলাকনা-হা-ওয়াহিয়া জা-লিমাতুন ফাহিয়া খাওয়িয়াতুন ‘আলা-‘উরূশিহা-ওয়া বি’রিম মু‘আততালাতিওঁ ওয়া কাসরিম মাশীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মোদ্দাকথা আমি কত জনপদকেই ধ্বংস করেছি, যখন তারা জুলুমে রত ছিল! ফলে তা ছাদের উপর ধসে পড়েছে, ২৮ কত কুয়া হয়েছে পরিত্যক্ত এবং কত পাকা মহল (ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে)!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কত জনপদ ধ্বংস করেছি এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল গোনাহগার। এই সব জনপদ এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি ধ্বংস করেছি কত জনপদ যেইগুলির বাসিন্দা ছিল জালিম। এইসব জনপদ তাদের ঘরের ছাদসহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল এবং কত ক‚প পরিত্যক্ত হয়েছিল ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদও।


তাফসীরঃ

২৮. অর্থাৎ, তার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে প্রথমে ছাদ ধসে পড়ে, তারপর সেই পতিত ছাদের উপর দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। -অনুবাদক


৪৬


أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَا أَوْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَـٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ


আফালাম ইয়াছীরূফিল আরদিফাতাকূনা লাহুম কুলূবুইঁ ইয়া‘কিলূনা বিহাআও আ-যানুইঁ ইয়াছমা‘ঊনা বিহা- ফাইন্নাহা-লা-তা‘মাল আবসা-রু ওয়ালা-কিন তা‘মাল কুলূবুল্লাতী ফিসসুদূ র।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি তারা ভূমিতে চলাফেরা করেনি, যা দ্বারা তাদের এমন অন্তকরণ লাভ হত, যা দ্বারা তারা (সত্য) উপলব্ধি করত কিংবা এমন কান লাভ হত, যা দ্বারা তা শুনতে পেত। প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় সেই হৃদয়, যা বক্ষদেশে বিরাজ করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা কি দেশ ভ্রমণ করে নাই ? তা হলে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারত। বস্তুত চোখ তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বক্ষস্থিত হৃদয়।


৪৭


وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَلَن يُخْلِفَ اللَّهُ وَعْدَهُ ۚ وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّونَ


ওয়া ইয়াছতা‘জিলূনাকা বিল‘আযা-বি ওয়ালাইঁ ইউখলিফাল্লা-হু ওয়া‘দাহূ ওয়া ইন্না ইয়াওমান ‘ইনদা রাব্বিকা কাআলফি ছানাতিম মিম্মা-তা‘উদ্দূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তোমাকে তাড়াতাড়ি শাস্তি এনে দিতে বলে, অথচ আল্লাহ কখনই নিজ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। নিশ্চিত জেনে রেখ, তোমার প্রতিপালকের কাছে এক দিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তার প্রতিশ্রুতি কখনও ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার সহস্র বৎসরের সমান;


তাফসীরঃ

২৯. আল্লাহ তাআলার কাছে এক দিন আমাদের হিসাবের এক হাজার বছরের সমান এ কথার অর্থ কি? এর যথাযথ মর্ম তো আল্লাহ তাআলাই জানেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু একে মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তবে আয়াতটির অর্থ বোঝার জন্য এতটুকু ব্যাখ্যাই যথেষ্ট যে, কাফেরদেরকে যখন বলা হত কুফরের পরিণামে তাদেরকে দুনিয়া বা আখেরাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে, তখন তারা একথা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এবং বলত, কই এত দিন পার হয়ে গেল, কোন শাস্তি তো আসল না! যদি সত্যিই শাস্তি আসার হয় তবে এখনই কেন আসছে না? এর উত্তরে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা যে ওয়াদা করেছেন, তা অবশ্যই পূরণ হবে। বাকি কখন তা পূরণ হবে সেটা নির্ভর করে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর। তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী তা স্থির করবেন। তোমরা যে মনে করছ তা আসতে অনেক বিলম্ব হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তা তোমাদের হিসাবের ব্যাপার। আল্লাহর হিসাব অন্য রকম। তোমাদের হিসাব অনুযায়ী যা এক হাজার বছর আল্লাহর হিসাবের তা একদিন মাত্র। এ আয়াতে আরও ব্যাখ্যা সামনে সূরা মা‘আরিজ (৭০ : ৩)-এ আসবে ইনশাআল্লাহু তাআলা।


৪৮


وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ ثُمَّ أَخَذْتُهَا وَإِلَيَّ الْمَصِيرُ


ওয়া কাআইয়িম মিন কারইয়াতিন আমলাইতুলাহা-ওয়াহিয়া জা-লিমাতুন ছুম্মা আখাযতুহা- ওয়া ইলাইইয়াল মাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি কত জনপদকেই তো অবকাশ দিয়েছিলাম, যা ছিল জুলুমরত। অবশেষে আমি তাদেরকে পাকড়াও করি। আর শেষ পর্যন্ত সকলকে আমারই কাছে ফিরতে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আমি কত জনপদকে অবকাশ দিয়েছি এমতাবস্থায় যে, তারা গোনাহগার ছিল। এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছি এবং আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি অবকাশ দিয়েছি কত জনপদকে যখন এরা ছিল জালিম; এরপর এদেরকে শাস্তি দিয়েছি এবং প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)


৪৯


قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا أَنَا لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ


কুল ইয়াআইয়ুহান্না-ছুইন্নামাআনা লাকুম নাযীরুম মুবীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) বলে দাও, আমি তো তোমাদের জন্য এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ হে লোক সকল! আমি তো তোমাদের জন্যে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ককারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘হে মানুষ! আমি তো তোমাদের জন্যে এক স্পষ্ট সতর্ককারী;


৫০


فَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ


ফাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি লাহুম মাগফিরাতুওঁ ওয়া রিঝকুন কারীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিযক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা;


৫১


وَالَّذِينَ سَعَوْا فِي آيَاتِنَا مُعَاجِزِينَ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ


ওয়াল্লাযীনা ছা‘আও ফীআ-য়া-তিনা-মু‘আ-জিঝীনা উলাইকা আসহা-বুল জাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যারা আমার নিদর্শনসমূহকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করে, তারা হবে জাহান্নামবাসী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার জন্যে চেষ্টা করে, তারাই দোযখের অধিবাসী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী।


৫২


وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ وَلَا نَبِيٍّ إِلَّا إِذَا تَمَنَّىٰ أَلْقَى الشَّيْطَانُ فِي أُمْنِيَّتِهِ فَيَنسَخُ اللَّهُ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللَّهُ آيَاتِهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ


ওয়ামাআরছালনা-মিন কাবলিকা মির রাছূলিওঁ ওয়ালা-নাবিইয়িন ইল্লাইযা-তামান্না আলকাশ শাইতা-নুফীউমনিইইয়াতিহী ফাইয়ানছাখুল্লা-হু মা-ইউলকিশশাইতা-নু ছু ম্মা ইউহকিমুল্লা-হু আ-য়া-তিহী ওয়াল্লা-হু ‘আলীমুন হাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার পূর্বে যখনই আমি কোন রাসূল বা নবী পাঠিয়েছি, তার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ ঘটনা ঘটেছে যে, যখন সে (আল্লাহর বাণী) পড়েছে শয়তান তার পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে (কাফেরদের অন্তরে) কোন প্রতিবন্ধ ফেলে দিয়েছে। অতঃপর শয়তান যে প্রতিবন্ধ ফেলে আল্লাহ তা অপসারণ করেন তারপর নিজ আয়াতসমূহ সুদৃঢ় করে দেন। ৩০ বস্তুত আল্লাহ প্রভূত জ্ঞান ও প্রভূত হিকমতের মালিক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি তাদের কেউ যখনই কিছু আকাক্সক্ষা করেছে, তখনই শয়তান তার আকাক্সক্ষায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে, কিন্তু শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ্ তা বিদূরিত করেন। এরপর আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় ;


তাফসীরঃ

৩০. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, আপনার বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে যেসব সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে তা নতুন কোন বিষয় নয়। পূর্ব যুগের নবীদের ক্ষেত্রেও এরূপই ঘটেছে। তারা যখন মানুষকে আল্লাহ তাআলার কালাম পড়ে শোনাতেন, তখন শয়তান কাফেরদের অন্তরে নানা রকম সংশয় সন্দেহ সৃষ্টি করত, যে কারণে তারা ঈমান আনত না। কিন্তু তাদের সৃষ্ট সংশয়-সন্দেহ যেহেতু ভিত্তিহীন হত, তাই আল্লাহ তাআলা খাঁটি মুমিনদের অন্তরে তার কোন আছর বাকি থাকতে দিতেন না; বরং তা সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতেন। এ আয়াতের আরেক তরজমাও করা সম্ভব। তা এ রকম, ‘আমি তোমার আগে যে-সকল রাসূল বা নবী পাঠিয়েছি তাদের ক্ষেত্রেও এ রকমই ঘটেছে যে, তাদের কেউ যখন কোন আকাঙ্ক্ষা করেছে, তখন শয়তান তার আকাঙ্ক্ষায় বিপত্তি সৃষ্টি করত, কিন্তু আল্লাহ তাআলা শয়তানের সৃষ্ট বিপত্তি অপসারণ করে নিজ আয়াতসমূহকে আরও দৃঢ় করতেন। এ তরজমা অনুযায়ী ব্যাখ্যা হবে এ রকম, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম নিজ সম্প্রদায়ের ইসলামের জন্য কোন বিষয়ের আকাঙ্ক্ষা করলে প্রথম দিকে শয়তান তাদের সে আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথে বাধা সৃষ্টি করত, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার সে বাধা দূর করে নিজ আয়াতসমূহ অধিকতর মজবুত করে দিতেন এবং নবীগণকে সাহায্য করার সুসংবাদ শোনাতেন। তবে শয়তানের সৃষ্ট বাধা কাফেরদের পক্ষে, যাদের অন্তরে সংশয়-সন্দেহের ব্যাধি ছিল, ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়াত। তারা তাকে নবীগণের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে পেশ করত।


৫৩


لِّيَجْعَلَ مَا يُلْقِي الشَّيْطَانُ فِتْنَةً لِّلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ ۗ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَفِي شِقَاقٍ بَعِيدٍ


লিইয়াজ‘আলা মা-ইউলকিশশাইতা-নুফিতনাতাল লিল্লাযীনা ফী কুলূবিহিম মারাদুওঁ ওয়াল কা-ছিয়াতি কুলূবুহুম ওয়া ইন্নাজ্জা-লিমীনা লাফী শিকা-কিম বা‘ঈদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা এজন্য যে, শয়তান যে প্রতিবন্ধ ফেলে, আল্লাহ তাকে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে এবং যাদের অন্তর শক্ত, তাদের জন্য ফিতনায় পরিণত করেন। ৩১ নিশ্চয়ই জালেমগণ বিরোধিতায় বহু দূর পৌঁছে গেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা এজন্যে যে, শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে তিনি একে পরীক্ষাস্বরূপ করেন তাদের জন্যে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে ও যারা পাষাণ হৃদয়। নিশ্চয়ই জালিমরা দুস্তর মতভেদে রয়েছে।


তাফসীরঃ

৩১. আল্লাহ তাআলা শয়তানকে এরূপ প্রতিবন্ধকতা ও সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করার সুযোগ কেন দেন, ৫৩ ও ৫৪ আয়াতে তার জবাব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, এর দ্বারাও উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা। এ পরীক্ষায় মুনাফিক ও কাফিরগণ অকৃতকার্য ও মুমিনগণ কৃতকার্য হয়। ‘যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে’ বলে মুনাফিকদের আর ‘যাদের অন্তর শক্ত’ বলে ঘোর কাফিরদের বোঝানো হয়েছে। এ পরীক্ষায় তারা মনের ব্যাধি ও কঠিনত্বের কারণে আরও বেশি সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দিকে এগিয়ে যায় আর যারা প্রকৃত জ্ঞানী ও মুমিন, সত্যের প্রতি আরও বেশি আস্থাবান হয় তারা নিজেদের ঈমানকে বলিয়ান করে তোলে। -অনুবাদক


৫৪


وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَيُؤْمِنُوا بِهِ فَتُخْبِتَ لَهُ قُلُوبُهُمْ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَهَادِ الَّذِينَ آمَنُوا إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ


ওয়া লিইয়া‘লামাল্লাযীনা ঊতুল ‘ইলমা আন্নাহুল হাক্কুমির রাব্বিকা ফাইউ‘মিনূবিহী ফাতুখবিতা লাহূকুলূবুহুম ওয়া ইন্নাল্লা-হা লাহা-দিল্লাযীনা আ-মানূইলা-সিরাতিম মুছতাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তারা যেন জেনে নেয় এটাই (অর্থাৎ এ কালামই) সত্য, যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে অতঃপর তারা যেন তাতে ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জন্য সরল পথের হিদায়াতদাতা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং এ কারণেও যে, যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে; তারা যেন জানে যে এটা আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য; অতঃপর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্তাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি বিজয়ী হয়। আল্লাহই বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সরল পথ প্রদর্শন করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এজন্যেও যে, যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তারা যেন জানতে পারে যে, এটা তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে প্রেরিত সত্য ; এরপর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি অনুগত হয়। যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ্ সরল পথে পরিচালিত করেন।


৫৫


وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتَّىٰ تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيمٍ


ওয়ালা- ইয়াঝা-লুল্লাযীনা কাফারূফী মিরইয়াতিম মিনহু হাত্তা- তা’তিয়াহুমুছছা-‘আতু বাগতাতান আও ইয়া’তিয়াহুম ‘আযা-বুইয়াওমিন ‘আকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তারা এ সম্পর্কে (অর্থাৎ কুরআন সম্পর্কে) অব্যাহতভাবে সন্দেহে পতিত থাকবে, যাবৎ না তাদের উপর অকস্মাৎ কিয়ামত উপস্থিত হয় অথবা তাদের উপর এমন এক দিবসের শাস্তি এসে পড়ে যা (তাদের জন্য) কোনও রকমের ৩২ কল্যাণপ্রসূ নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কাফেররা সর্বদাই সন্দেহ পোষন করবে যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আকস্মিকভাবে কেয়ামত এসে পড়ে অথবা এসে পড়ে তাদের কাছে এমন দিবসের শাস্তি যা থেকে রক্ষার উপায় নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুফরী করেছে তারা এতে সন্দেহ পোষণ হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না এদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে, বা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি।


তাফসীরঃ

৩২. কিয়ামত দিবসকে عقيم (বন্ধ্যা) বলা হয়েছে এ কারণে যে, কাফেরদের জন্য সেদিন হবে সম্পূর্ণ নিষ্ফল। তা থেকে তারা ভালো কিছু লাভ করবে না। অর্থাৎ তাদের কল্যাণ সাধনের পক্ষে তা যেন বন্ধ্যা। অথবা বন্ধ্যা বলার কারণ, এর পর আর কোনও দিন নেই। প্রতিটি দিন যেন পরের দিনকে জন্ম দেয়। কিয়ামতই যেহেতু দুনিয়ার সর্বশেষ দিন, তাই তা আর কোন দিনকে জন্ম দেবে না। সে হিসেবে তা বন্ধ্যাতুল্য। -অনুবাদক


৫৬


الْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ ۚ فَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ


আল মুলকুইয়াওমাইযিল লিল্লা-হি ইয়াহকুমুবাইনাহুম ফাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি ফী জান্না-তিন না‘ঈম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে দিন রাজত্ব হবে কেবল আল্লাহর। তিনি তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারা থাকবে নি‘আমত-আকীর্ণ জান্নাতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

রাজত্ব সেদিন আল্লাহরই; তিনিই তাদের বিচার করবেন। অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তারা নেয়ামত পূর্ণ কাননে থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই দিন আল্লাহ্ র ই আধিপত্য; তিনিই তাদের বিচার করবেন। সুতরাং যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা অবস্থান করবে সুখদ কাননে।


৫৭


وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَأُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ


ওয়াল্লাযীনা কাফারূওয়া কাযযাবূবিআ-য়া-তিনা-ফাউলাইকা লাহুম ‘আযা-বুম মুহীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যারা কুফর অবলম্বন করেছে ও আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে, তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা কুফরি করে এবং আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে তাদের জন্যে লাঞ্ছনাকর শাস্তি রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর যারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদেরই জন্যে রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।


৫৮


وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ


ওয়াল্লাযীনা হা-জারূফী ছাবীলিল্লা-হি ছুম্মা কুতিলূআও মা-তূলাইয়ারঝুকান্নাহুমুল্লা-হু রিঝকান হাছানাওঁ ওয়া ইন্নাল্লা-হা লাহুওয়া খাইরুর রা-ঝিকীন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, তারপর তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে বা তাদের ইন্তিকাল হয়েছে, আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে উত্তম রিযক দান করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা হিজরত করেছে আল্লাহ্ র পথে, এরপর নিহত হয়েছে বা মারা গেছে তাদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন; আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্, তিনি তো সর্বোৎকৃষ্ট রিযিকদাতা।


৫৯


لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلًا يَرْضَوْنَهُ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌ


লাইউদখিলান্নাহুম মু দ খালাইঁ ইয়ারদাওনাহূ ওয়া ইন্নাল্লা-হা লা‘আলীমুন হালীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে পৌঁছাবেন, যা পেয়ে তারা খুশী হয়ে যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞাত, পরম সহনশীল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি তাদেরকে অবশ্যই এমন স্থানে দাখিল করবেন যা তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ্ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।


৬০


۞ ذَٰلِكَ وَمَنْ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِ ثُمَّ بُغِيَ عَلَيْهِ لَيَنصُرَنَّهُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ


যা-লিকা ওয়ামান ‘আ-কাবা বিমিছলি মা-‘উকিবা বিহী ছুম্মা বুগিয়া ‘আলাইহি লাইয়ানসুরান্নাহুল্লা-হু ইন্নাল্লা-হা লা‘আফুওউন গাফূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এসব স্থিরীকৃত বিষয় এবং (আরও জেনে রেখ) কোনও ব্যক্তি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যদি ঠিক ততটুকু কষ্ট দেয়, যতটুকু কষ্ট তাকে দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর ফের তার প্রতি অত্যাচার করা হয়, তবে আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। ৩৩ নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি মার্জনাকারী, পরম ক্ষমাশীল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ তো শুনলে, যে ব্যক্তি নিপীড়িত হয়ে নিপীড়ন পরিমাণে প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং পুনরায় সে নিপীড়িত হয়, আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী ক্ষমাশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাই হয়ে থাকে, কোন ব্যক্তি নিপীড়িত হয়ে তুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করলে ও পুনরায় সে অত্যাচারিত হলে আল্লাহ্ তাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন ; আল্লাহ্ নিশ্চয়ই পাপ মোচনকারী, ক্ষমাশীল।


তাফসীরঃ

৩৩. পূর্বে ৩৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে সেই সকল কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছিলেন যারা তাদের উপর জুলুম-অত্যাচার করেছিল, যদিও এর আগে উপর্যুপরি তাদেরকে সবর ও ক্ষমা প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। এবার এ স্থলে কেবল যুদ্ধের ক্ষেত্রেই নয়, বরং যে-কোন রকমের অত্যাচার-উৎপীড়নের ক্ষেত্রে প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে শর্ত হল যে পরিমাণ জুলুম করা হয়েছে, প্রতিশোধ ঠিক সেই পরিমাণই হতে হবে। তার বেশি নয়। সেই সঙ্গে বলা হচ্ছে, ক্ষমা প্রদর্শনের নীতি যদিও সর্বোত্তম, কিন্তু ইনসাফ রক্ষা সাপেক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণও জায়েয এবং সে ক্ষেত্রেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সাহায্যের ওয়াদা আছে। বরং এখানে আরও অগ্রসর হয়ে বলা হয়েছে, ইনসাফ রক্ষা করে প্রতিশোধ গ্রহণের পর ফের যদি তাদের উপর জুলুম করা হয়, হবে আল্লাহ তাআলা তখনও তাদেরকে সাহায্য করবেন।


৬১


ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ


যা-লিকা বিআন্নাল্লা-হা ইউলিজুল্লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া ইউলিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়া আন্নাল্লা-হা ছামী‘উম বাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা এজন্য যে, আল্লাহ (তাআলার শক্তি বিপুল। তিনি) রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করান ৩৪ এবং এজন্য যে, আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা এইজন্যে যে, আল্লাহ্ রাত্রিকে প্রবিষ্ট করান দিবসের মধ্যে এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করান রাত্রির মধ্যে এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা ;


তাফসীরঃ

৩৪. অর্থাৎ এক মওসুমে যেটা থাকে দিনের অংশ অন্য মওসুমে আল্লাহ তাআলা তাকে রাত বানিয়ে দেন। আবার এক মওসুমে যেটা থাকে রাতের অংশ অন্য মওসুমে তাকে দিন বানিয়ে দেন। চাঁদ-সুরুজের পরিক্রমণকে আল্লাহ তাআলা তাঁর অপার প্রজ্ঞায় এক অলংঘনীয় নিয়ম-নিগড়ে বেঁধে দিয়েছেন। কখনও তাতে এক মুহূর্তের হেরফের হয় না। এমনিতে তো আল্লাহ তাআলার কুদরতের নিদর্শন অগণ্য। কিন্তু এখানে বিশেষভাবে দিবা-রাত্রের এই পালা বদলের বিষয়টাকে উল্লেখ করা হয়েছে সম্ভবত এ কারণে যে, এখানে আলোচনা চলছে মজলুমের সাহায্য করা সম্পর্কে। সে প্রসঙ্গেই এ দৃষ্টান্ত দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে, রাত-দিনের সময় যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি জালেম-মজলুমের মধ্যেও সময়ের পালাবদল হয়। এক সময় যে ছিল মজলুম, আল্লাহ তাআলা জালেমের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করেন। ফলে সে শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও জালেমের উপর ক্ষমতা বিস্তার করে। আর যে জালেম এতদিন প্রবল-পরাক্রান্ত ছিল সে এ যাবৎকাল যার উপর জুলুম করেছিল, তার সামনে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়।


৬২


ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ


যা-লিকা বিআন্নাল্লা-হা হুওয়াল হাক্কুওয়াআন্না মা-ইয়াদ‘উনা মিন দূনিহী হুওয়াল বা-তিলু ওয়া আন্নাল্লা-হা হুয়াল ‘আলিইয়ুল কাবীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তা এজন্য যে, আল্লাহই সত্য। আর তারা তাঁকে ছেড়ে যেসব জিনিসের ইবাদত করে তা সবই মিথ্যা। আর আল্লাহই সেই সত্তা, যার মহিমা, সমুচ্চ, মর্যাদা বিপুল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইজন্যেও যে, আল্লাহ্, তিনিই সত্য এবং এরা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে তা তো অসত্য, এবং আল্লাহ্, তিনিই তো সমুচ্চ, মহান।


৬৩


أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَتُصْبِحُ الْأَرْضُ مُخْضَرَّةً ۗ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ


আলাম তারা আন্নাল্লা-হা আনঝালা মিনাছছামাই মাআন ফাতুসবিহুল আরদু মুখদাররাতান ইন্নাল্লা-হা লাতীফুন খাবীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন, যা দ্বারা ভূমি সবুজ-সজীব হয়ে ওঠে? বস্তুত আল্লাহ অশেষ দয়াবান, সর্ব বিষয়ে অবহিত। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর ভূপৃষ্ট সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষদর্শী, সর্ববিষয়ে খবরদার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ বারি বর্ষণ করেন আকাশ হতে যাতে সবুজ শ্যামল হয়ে উঠে পৃথিবী ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সম্যক সূক্ষ্মদর্শী, পরিজ্ঞাত।


তাফসীরঃ

৩৫. অর্থাৎ বান্দাদের রিযক দানে দয়াবান আর তাদের অন্তরে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে জ্ঞাত। এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য পুনরুত্থান সম্পর্কে প্রমাণ পেশ করা। অর্থাৎ যেই সত্তা এভাবে মৃত ভূমিকে সঞ্জীবিত করেন তিনি মৃত মানব গোষ্ঠীকেও পুনরায় জীবিত করে তুলতে সক্ষম। -অনুবাদক


৬৪


لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ


লাহূমা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি ওয়া ইন্নাল্লা-হা লাহুওয়াল গানিইয়ুল হামীদ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যা-কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে এবং যা-কিছু আছে পৃথিবীতে সব তাঁরই। নিশ্চিত জেন, আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সকলের থেকে অনপেক্ষ, প্রশংসার্হ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সব তাঁরই এবং আল্লাহই অভাবমুক্ত প্রশংসার অধিকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই, এবং আল্লাহ্, তিনিই তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।


৬৫


أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ وَالْفُلْكَ تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَيُمْسِكُ السَّمَاءَ أَن تَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِالنَّاسِ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ


আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ছাখখারা লাকুম মা-ফিল আরদিওয়াল ফুলকা তাজরী ফিল বাহরি বিআমরিহী ওয়া ইউমছিকুছছামাআন তাকা‘আ ‘আলাল আরদিইল্লা-বিইযনিহী ইন্নাল্লা-হা বিন্না-ছি লারাঊফুররাহীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি দেখনি আল্লাহ ভূমিস্থ সব কিছুকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং জলযানসমূহকেও, যা তার আদেশে সাগরে চলাচল করে? এবং তিনি আকাশকে এভাবে ধারণ করে রেখেছেন যে, তা তার অনুমতি ছাড়া পৃথিবীর উপর পতিত হবে না। বস্তুত আল্লাহ মানুষের প্রতি মমতাময় পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন পৃথিবীতে যা কিছু আছে তৎসমুদয়কে এবং তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণশীল নৌযানসমূহকে ? আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পতিত না হয় পৃথিবীর ওপর তাঁর অনুমতি ব্যতীত। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মানুষের প্রতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।


৬৬


وَهُوَ الَّذِي أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ۗ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ


ওয়া হুওয়াল্লাযীআহইয়া-কুম, ছু ম্মা ইউমীতুকুমছু ম্মা ইউহঈকুম ; ইন্নাল ইনছা-না লাকাফূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, তারপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করবেন। সত্যিই মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ। ৩৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে মৃত্যুদান করবেন ও পুনরায় জীবিত করবেন। নিশ্চয় মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন ; এরপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। মানুষ তো অতি মাত্রায় অকৃতজ্ঞ।


তাফসীরঃ

৩৬. কেননা যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তারপর অসংখ্য অগণ্য নি‘আমতের মধ্যে তাকে ডুবিয়ে রেখেছেন, সেই মহাদাতা দয়াময়ের ইবাদত-আনুগত্য থেকে বিমুখ হয়ে অন্যদের সামনে মাথা নোয়াচ্ছে। -অনুবাদক


৬৭


لِّكُلِّ أُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ ۖ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِي الْأَمْرِ ۚ وَادْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ إِنَّكَ لَعَلَىٰ هُدًى مُّسْتَقِيمٍ


লিকুল্লি উম্মাতিন জা‘আলনা-মানছাকান হুম না-ছিকূহু ফালা-ইউনা-ঝি‘উন্নাকা ফিলআমরি ওয়াদ‘উ ইলা-রাব্বিকা ইন্নাকা লা‘আলা-হুদাম মুছতাকীম।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য ইবাদতের এক পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেছি, যে অনুসারে তারা ইবাদত করে। ৩৭ সুতরাং (হে নবী!) এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে যেন তারা বিতর্কে লিপ্ত না হয়। তুমি নিজ প্রতিপালকের দিকে দাওয়াত দিতে থাক। নিশ্চয়ই তুমি সরল পথে আছ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে নির্ধারিত করে দিয়েছি ‘ইবাদত পদ্ধতি-যা এরা অনুসরণ করে। সুতরাং এরা যেন তোমার সঙ্গে বিতর্ক না করে এই ব্যাপারে। তুমি এদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর, তুমি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।


তাফসীরঃ

৩৭. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল বিধি-বিধান পেশ করেছেন, তার মধ্যে কিছু এমনও আছে, যা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের দেওয়া বিধান থেকে আলাদা। এ কারণে কোন কোন কাফেরের আপত্তি ছিল। এ আয়াতে তার উত্তর দেওয়া হয়েছে। এতে আল্লাহ তাআলা জানাচ্ছেন একেক নবীর শরীয়তে ইবাদতের একেক রকম নিয়ম বাতলানো হয়েছে এবং প্রত্যেক যুগের পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে বিধানাবলীর মধ্যেও কিছু প্রভেদ রাখা হয়েছিল। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তে যে সব বিধান দেওয়া হয়েছে, তার কোনওটিকে পূর্বেকার শরীয়তসমূহ থেকে পৃথক মনে হলে তাতে আপত্তির কিছু নেই এবং তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়ারও কোন অবকাশ নেই।


৬৮


وَإِن جَادَلُوكَ فَقُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ


ওয়া ইন জা-দালূকা ফাকুল্লিলা-হু আ‘লামুবিমা-তা‘মালূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা তোমার সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত হলে বলে দাও, তোমরা যা-কিছু করছ আল্লাহ তা ভালোভাবে জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা যদি আপনার সাথে বিতর্ক করে, তবে বলে দিন, তোমরা যা কর, সে সর্ম্পকে আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা যদি তোমার সঙ্গে বিতণ্ডা করে তবে বল, ‘তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সম্যক অবহিত।


৬৯


اللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ


আল্লা-হু ইয়াহকুমুবাইনাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফীমা-কুনতুম ফীহি তাখতালিফূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে সব বিষয়ে তোমরা বিতর্ক করছ, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে সে বিষয়ে মীমাংসা করে দিবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছ, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেই বিষয়ে তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছো আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তোমাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করে দিবেন।’


৭০


أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِي كِتَابٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ


আলাম তা‘লাম আন্নাল্লা-হা ইয়া‘লামুমা-ফিছছামাই ওয়াল আরদি ইন্না যা-লিকা ফী কিতা-বিন ইন্না যা-লিকা ‘আলাল্লা-হি ইয়াছীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি জান না আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জানেন? এসব বিষয় একটি কিতাবে সংরক্ষিত আছে। নিশ্চয়ই তা আল্লাহ তাআলার পক্ষে অতি সহজ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি জান না যে, আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে আল্লাহ্ তা জানেন ? এই সকলই আছে এক কিতাবে ; নিশ্চয়ই এটা আল্লাহ্ র নিকট সহজ।


৭১


وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَمَا لَيْسَ لَهُم بِهِ عِلْمٌ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِن نَّصِيرٍ


ওয়া ইয়া‘বুদূ না মিন দূ নিল্লা-হি মা-লাম ইউনাঝঝিল বিহী ছুলতা-নাওঁ ওয়ামা-লাইছা লাহুম বিহী ‘ইলমুওঁ ওয়ামা লিজ্জা-লিমীনা মিন নাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহকে ছেড়ে এমন জিনিসের ইবাদত করে যার (মাবুদ হওয়া) সম্পর্কে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং এমন জিনিসের (ইবাদত করে) যে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। ৩৮ (আখেরাতে) এ রকম জালেমদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর পূজা করে, যার কোন সনদ নাযিল করা হয়নি এবং সে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। বস্তুতঃ জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এরা ‘ইবাদত করে আল্লাহ্ র পরিবর্তে এমন কিছুর যার সম্পর্কে তিনি কোন দলীল প্রেরণ করেন নাই এবং যার সম্বন্ধে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর জালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।


তাফসীরঃ

৩৮. অর্থাৎ, তাদের প্রতিমাগুলো যে বাস্তবিকই প্রভুত্বের মর্যাদা রাখে এ জ্ঞান অর্জন হতে পারে এমন কোন দলীল তাদের কাছে নেই।


৭২


وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِي وُجُوهِ الَّذِينَ كَفَرُوا الْمُنكَرَ ۖ يَكَادُونَ يَسْطُونَ بِالَّذِينَ يَتْلُونَ عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا ۗ قُلْ أَفَأُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَٰلِكُمُ ۗ النَّارُ وَعَدَهَا اللَّهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ


ওয়া ইযা-তুতলা-‘আলাইহিম আ-য়া-তুনা-বাইয়িনা-তিন তা‘রিফুফী উজূহিল্লাযীনা কাফারুল মুনকারা ইয়াকা-দূ না ইয়াছতূনা বিল্লাযীনা ইয়াতলূনা ‘আলাইহিম আ-য়াতিনা- কুল আফাউনাববিউকুম বিশাররিম মিন যা-লিকুম আন্নারু ওয়া ‘আদাহাল্লা-হু ল্লাযীনা কাফারূ ওয়াবি’ছাল মাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পড়ে শোনানো হয়, তখন তুমি কাফেরদের চেহারায় বিতৃষ্ণা ভাব দেখতে পাও। যেন তাদেরকে যারা আমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনায় তাদের উপর আক্রমণ চালাবে। বল, হে মানুষ! আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে বেশি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত করব? ৩৯ তা হল আগুন। আল্লাহ কাফেরদেরকে তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তা অতি মন্দ ঠিকানা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে উঠে। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? তা আগুন; আল্লাহ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হলে তুমি কাফিরদের মুখমণ্ডলে অসন্তোষ লক্ষ্য করবে। যারা এদের নিকট আমার আয়াত তিলাওয়াত করে তাদেরকে এরা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। বল, ‘তবে কি আমি তোমাদেরকে এটা অপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দিব ?-এটা আগুন। এই বিষয়ে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কাফিরদেরকে এবং এটা কত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।’


তাফসীরঃ

৩৯. অর্থাৎ, এখন তো তোমরা কেবল কুরআনের আয়াতসমূহকেই অপছন্দ করছ। আখেরাতে যখন জাহান্নামের আগুন সামনে এসে যাবে তখন টের পাবে প্রকৃত অপছন্দের জিনিস কাকে বলে?


৭৩


يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ الطَّالِبُ وَالْمَطْلُوبُ


ইয়াআইয়ুহান্না-ছুদুরিবা মাছালুন ফাছতামি‘ঊ লাহূ ইন্নাল্লায ীনা তাদ‘উনা মিন দূ নিল্লাহি লাইঁ ইয়াখলুকূযুবা-বাওঁ ওয়া লাবিজতামা‘ঊ লাহূ ওয়াইয়ঁইয়াসলুবহুমুয যুবা-বু শাইআল লাইয়াছতানকিযূহু মিনহু দা‘উফাততা-লিবুওয়াল মাতলূব।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মানুষ! একটি উপমা দেওয়া হচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে শোন। তোমরা দু‘আর জন্য আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে ডাক, তারা একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না, যদিও এ কাজের জন্য তারা সকলে একত্র হয়ে যায়। এমনকি মাছি যদি তাদের থেকে কোন জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায়, তাও তারা তার থেকে উদ্ধার করতে পারে না। এরূপ দু‘আকারীও বড় দুর্বল এবং যার কাছে দু‘আ করা হয় সেও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হে মানুষ ! একটি উপমা দেওয়া হচ্ছে, মনোযোগ সহকারে তা শোনে কর : তোমরা আল্লাহ্ র পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, এই উদ্দেশ্যে তারা সকলে একত্র হলেও। এবং মাছি যদি কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের নিকট হতে, এটাও তারা এর নিকট হতে উদ্ধার করতে পারবে না। অনে¦ষক ও অনে¦ষিত কতই দুর্বল ;


৭৪


مَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ


মা-কাদারুল্লা-হা হাক্কা কাদরিহী ইন্নাল্লা-হা লাকাবিইইউন ‘আঝীঝ।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা আল্লাহর যথাযথ মর্যাদা উপলব্ধি করেনি। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রান্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা আল্লাহ্ র যথোচিত মর্যাদা উপলব্ধি করে না, আল্লাহ্ নিশ্চয়ই ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।


৭৫


اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ


আল্লা-হু ইয়াসতাফী মিনাল মালাইকাতি রুছূলাওঁ ওয়া মিনান্না-ছি ইন্নাল্লা-হা ছামী‘উম বাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ ফেরেশতাদের মধ্য হতে তাঁর বার্তাবাহক মনোনীত করেন এবং মানুষের মধ্য হতেও। ৪০ নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা!


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ ফেরেশতাদের মধ্য হতে মনোনীত করেন বাণীবাহক এবং মানুষের মধ্য হতেও ; আল্লাহ্ তো সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।


তাফসীরঃ

৪০. কোন কোন ফিরিশতা নবীগণের কাছে ওহীর বার্তা নিয়ে আসবে এবং মানুষের মধ্যে কাকে কাকে নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হবে তা নির্ধারণ আল্লাহ তাআলাই করেন।


৭৬


يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۗ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ


ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়া ইলাল্লা-হি তুরজা‘উল উমূর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তাদের সামনের ও পিছনের যাবতীয় বিষয় জানেন। বস্তুত আল্লাহরই কাছে যাবতীয় বিষয় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে এবং যা পশ্চাতে আছে এবং সবকিছু আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের সামনে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তিনি তা জানেন এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহ্ র নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।


৭৭


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩


ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুরকা‘উওয়াছজুদূওয়া‘বুদূরাব্বাকুম ওয়াফ‘আলুলখাইরা লা‘আল্লাকুম তুফলিহূন।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে মুমিনগণ! রুকু কর, সিজদা কর, তোমাদের প্রতিপালকের ইবাদত কর এবং সৎকর্ম কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার।*


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হে মু’মিনগণ ! তোমরা রুক‚‘ কর, সিজ্দা কর এবং তোমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর ও সৎকর্ম কর, যাতে সফলকাম হতে পার।


৭৮


وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَـٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ ۖ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ


ওয়া জা-হিদূফিল্লা-হি হাক্কা জিহা-দিহী হুওয়াজতাবা-কুম ওয়ামা-জা‘আলা ‘আলাইকুম ফিদদীনি মিন হারাজিন মিল্লাতা আবীকুম ইবরা-হীমা হুওয়া ছাম্মাকুমুল মুছলিমীনা মিন কাবলুওয়া ফী হা-যা-লিয়াকূনার রাছূলুশাহীদান ‘আলাইকুম ওয়া তাকূনূশুহাদাআ ‘আলান্না-ছি ফাআকীমুসসালা-তা ওয়া আ-তুঝঝাকা-তা ওয়া‘ তাসিমূবিল্লা-হি হুওয়া মাওলা-কুম ফানি‘মাল মাওলা-ওয়া নি‘মান নাসীর।


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আল্লাহর পথে জিহাদ কর, যেভাবে জিহাদ করা উচিত। ৪১ তিনি তোমাদেরকে (তাঁর দীনের জন্য) মনোনীত করেছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোন সংকীর্ণতা আরোপ করেননি। নিজেদের পিতা ইবরাহীমের দীনকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর। তিনিই পূর্বেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন মুসলিম এবং এ কিতাবেও ৪২ (অর্থাৎ কুরআনেও), যাতে এই রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে আর তোমরা সাক্ষী হতে পার অন্যান্য মানুষের জন্য। ৪৩ সুতরাং নামায কায়েম কর, যাকাত আদায় কর এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে আকড়ে ধর। তিনি তোমাদের অভিভাবক। দেখ কত উত্তম অভিভাবক তিনি এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং জিহাদ কর আল্লাহ্ র পথে যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেন নাই। এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের মিল¬াত। তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ এবং এই কিতাবেও ; যাতে রাসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষীস্বরূপ হয় এবং তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হও মানব জাতির জন্যে। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহ্কে অবলম্বন কর ; তিনিই তোমাদের অভিভাবক, কত উত্তম অভিভাবক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি !


তাফসীরঃ

৪১. ‘জিহাদ’-এর আভিধানিক অর্থ প্রচেষ্টা চালানো ও মেহনত করা। দীনের পথে যে-কোন মেহনতকেই জিহাদ বলা হয়ে থাকে। সশস্ত্র প্রচেষ্টা তথা আল্লাহ তাআলার পথে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া শান্তিপূর্ণ মেহনত ও আত্মশুদ্ধিমূলক সাধনাও জিহাদই বটে।


৪২. অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন মুসলিম এবং কুরআন মাজীদেও। এর অর্থ আনুগত্যকারী। অথবা এ নাম হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামেরই রাখা, যেমন তিনি দুআ করেছিলেন, ‘আমার বংশধরদের মধ্যে বানাও এক মুসলিম উম্মত’ (বাকারা ২ : ১২৮)। এমনিতে যদিও সমস্ত নবীর অনুসারীগণই মুসলিম ছিল, কিন্তু এখন এটি কেবল মুহাম্মাদী উম্মতেরই উপাধি হয়ে গেছে। কাজেই তাদের উচিত এ উপাধির মর্যাদা রক্ষা করা (-অনুবাদক, তাফসীরে উসমানী থেকে)।


৪৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন যে, তারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল আর তাঁর উম্মত অন্যান্য উম্মতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে যে, তাদের কাছে তাদের নবীগণ আল্লাহ তাআলার বাণী যথাযথভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়টা পূর্বে সূরা বাকারায়ও (২ : ১৪৭) গত হয়েছে। সেখানে এ সম্পর্কে যে টীকা লেখা হয়েছে তা দেখে নিতে পারেন।


আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)


Post a Comment

0 Comments