সূরা হিজ্‌র কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত,সকল রোগের ঔষধ সূরা হিজ্‌র,সূরা আল-হিজ্‌র বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত অডিও সূরা আল হিজ্‌র,

 

সূরা হিজ্‌র বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল হিজ্‌র বাংলা তরজমা,সূরা হিজ্‌র বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল হিজ্‌র, সকল আমল সূরা আল হিজ্‌র

১৫ . আল হিজ্‌র - ( الحجر ) | পাথুরে পাহাড়

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৯৯


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আলিফ-লাম-রা। এগুলো (আল্লাহর) কিতাব ও সুস্পষ্ট কুরআনের আয়াত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আলিফ-লা-ম-রা; এগুলো পরিপূর্ণ গ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কোরআনের আয়াত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আলিফ-লাম-রা, এইগুলি আয়াত মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের।



رُّبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ كَانُوا مُسْلِمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

একটা সময় আসবে, যখন কাফেরগণ আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবে, তারা যদি মুসলিম হয়ে যেত!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কোন সময় কাফেররা আকাঙ্ক্ষা করবে যে, কি চমৎকার হত, যদি তারা মুসলমান হত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কখনও কখনও কাফিররা আকাক্সক্ষা করবে যে, তারা যদি মুসলিম হত!



ذَرْهُمْ يَأْكُلُوا وَيَتَمَتَّعُوا وَيُلْهِهِمُ الْأَمَلُ ۖ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তাদেরকে তাদের হালে ছেড়ে দাও- তারা খেয়ে নিক, ফুর্তি ওড়াক এবং অসার আশা তাদেরকে উদাসীন করে রাখুক। ১ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে (প্রকৃত সত্য কী ছিল)।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি ছেড়ে দিন তাদেরকে, খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্বর তারা জেনে নেবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে ছাড়, এরা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা এদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক; অচিরেই এরা জানতে পারবে।


তাফসীরঃ

১. এ আয়াত জানাচ্ছে, কেবল পানাহার করা ও দুনিয়ার মজা লুটাকে জীবনের মূল উদ্দেশ্য বানিয়ে নেওয়া এবং তারই জন্য এমন লম্বা-চওড়া আশা করা, যেন দুনিয়াই আসল জীবন, এটা কাফেরদের কাজ। মুসলিম ব্যক্তি দুনিয়ায় জীবন যাপন করবে, আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমত ভোগ করবে, কিন্তু দুনিয়াকে জীবনের লক্ষ্যবস্তু বানাবে না। বরং পার্থিব সবকিছুকে আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের জন্য ব্যবহার করবে। আখেরাতের কল্যাণ লাভ করার সর্বোত্তম উপায় হল শরয়ী বিধানাবলীর অনুসরণ।



وَمَا أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلَّا وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُومٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যে জনপদকেই ধ্বংস করেছি, তার জন্য একটা নির্দিষ্ট কাল লেখা ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কোন জনপদ ধবংস করিনি; কিন্ত তার নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যে কোন জনপদকে ধ্বংস করেছি তার জন্যে ছিল একটি নির্দিষ্ট লিপিবদ্ধ কাল।



مَّا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট কালের আগে ধ্বংস হয় না এবং সে কালকে অতিক্রমও করতে পারে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের অগ্রে যায় না এবং পশ্চাতে থাকে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কোন জাতি তার নির্দিষ্ট কালকে ত্বরান্বিত করতে পারে না, বিলম্বিতও করতে পারে না।



وَقَالُوا يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলে, হে ওই ব্যক্তি, যার প্রতি এই উপদেশবাণী (অর্থাৎ কুরআন) অবতীর্ণ করা হয়েছে, তুমি নিশ্চিতরূপেই উন্মাদ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ হে ঐ ব্যক্তি, যার প্রতি কোরআন নাযিল হয়েছে, আপনি তো একজন উম্মাদ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলে, ‘ওহে, যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ।



لَّوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَائِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বাস্তবিকই যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে আমাদের কাছে ফিরিশতা নিয়ে আস না কেন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি আপনি সত্যবাদী হন, তবে আমাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে আনেন না কেন?

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের নিকট ফিরিশতাগণকে উপস্থিত করছো না কেন ?’



مَا نُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ إِلَّا بِالْحَقِّ وَمَا كَانُوا إِذًا مُّنظَرِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তো ফিরিশতা অবতীর্ণ করি কেবল যথার্থ মীমাংসা দিয়ে আর তখন তাদেরকে কোন সুযোগ দেওয়া হয় না। ২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি ফেরেশতাদেরকে একমাত্র ফায়সালার জন্যেই নাযিল করি। তখন তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি ফেরেশতাগণকে প্রেরণ করি না যথার্থ কারণ ব্যতীত; ফেরেশতাগণ উপস্থিত হলে এরা অবকাশ পাবে না।


তাফসীরঃ

২. তারা আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে ফিরিশতা পাঠানোর যে ফরমায়েশ করত এটা তার উত্তর। উত্তরের সারমর্ম হল, যে সম্প্রদায়ের কাছে আমি কোন নবী পাঠিয়েছি তাদের কাছে সহসা ফিরিশতা অবতীর্ণ করি না। তা করি কেবল সেই সময় যখন সে সম্প্রদায়ের নাফরমানী সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে তাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করার ফায়সালা হয়ে যায়। সে ফায়সালার অধীনে ফিরিশতা পাঠিয়ে দেওয়া হলে তখন আর তারা ঈমান আনার ফুরসত পায় না। এ দুনিয়া তো এক পরীক্ষার জায়গা। এখানে যে ঈমান গ্রহণযোগ্য, সেটা হল ঈমান বিল গায়েব বা না দেখে বিশ্বাস। অর্থাৎ, মানুষ নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আল্লাহ তাআলার সত্তা ও তাঁর একত্ববাদকে শিরোধার্য করে নেবে। যদি গায়েবের সবকিছু চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া হয়, তবে পরীক্ষা হল কিসের?



إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত এ উপদেশ বাণী (কুরআন) আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই এর রক্ষাকর্তা। ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই এর সংরক্ষক।


তাফসীরঃ

৩. এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যদিও কুরআন মাজীদের আগেও বহু আসমানী কিতাব নাযিল করা হয়েছিল, কিন্তু তা ছিল বিশেষ-বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। তাই আল্লাহ তাআলা সেগুলোকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করার গ্যারাণ্টি দেননি। সেগুলোকে হেফাজত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, যেমন সূরা মায়েদায় (৫ : ৪৪) বলা হয়েছে। কিন্তু কুরআন মাজীদ সর্বশেষ আসমানী কিতাব। কিয়ামতকাল পর্যন্ত এর কার্যকারিতা বলবৎ থাকবে। তাই আল্লাহ তাআলা এর সংরক্ষণের দায়িত্ব নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত এর ভেতর কোন রদবদলের সম্ভাবনা নেই। আল্লাহ তাআলা এমনভাবে এ গ্রন্থ সংরক্ষণ করেছেন যে, ছোট-ছোট শিশুরা পর্যন্ত পূর্ণ কিতাব মুখস্থ করে নিজেদের বক্ষদেশে সুরক্ষিত করে রাখে। কথার কথা যদি শত্রুগণ কুরআন মাজীদের সমস্ত কপি খতম করে ফেলে (নাউযুবিল্লাহ) তবুও ছোট-ছোট শিশুরাও এ কুরআন পুনরায় লিপিবদ্ধ করাতে পারবে এবং তাতে এক হরফেরও হেরফের হবে না। এটা কুরআন মাজীদের এক জীবন্ত মুজিযা।


১০


وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الْأَوَّلِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার পূর্বেও আমি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে আমার রাসূল পাঠিয়েছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনার পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল প্রেরণ করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পূর্বে আমি আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠিয়েছিলাম।


১১


وَمَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের কাছে এমন কোনও রাসূল আসেনি, যাকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ওদের কাছে এমন কোন রসূল আসেননি, যাদের সাথে ওরা ঠাট্টাবিদ্রূপ করতে থাকেনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদের নিকট আসে নাই এমন কোন রাসূল যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত না।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

১২


كَذَٰلِكَ نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি অপরাধীদের অন্তরে এ বিষয়টা এভাবেই ঢুকিয়ে দেই- ৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমনিভাবে আমি এ ধরনের আচরণ পাপীদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি,


তাফসীরঃ

৪. ‘এ বিষয়’ দ্বারা কুরআন মাজীদকেও বোঝানো হতে পারে। অর্থাৎ, কুরআন মাজীদ তাদের অন্তরে প্রবেশ করে বটে, কিন্তু তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এর প্রতি ঈমান আনার তাওফীক তাদেরকে দেওয়া হয় না। অথবা এর দ্বারা তাদের ঠাট্টা-বিদ্রূপের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের চরম অপরাধ প্রবণতার কারণে তাদের অন্তরে মোহর করে দেওয়া হয়েছে এবং তাতে কুফর, অবাধ্যতা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিণামে তারা ঈমান আনতে পারবে না।


১৩


لَا يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الْأَوَّلِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে, তারা এর প্রতি ঈমান আনবে না। পূর্ববর্তী লোকদের রীতিও এ রকমই চলে এসেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ওরা এর প্রতি বিশ্বাস করবে না। পূর্ববর্তীদের এমন রীতি চলে আসছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনবে না এবং অতীতে পূর্ববর্তীদেরও এই আচরণ ছিল।


১৪


وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি যদি (কথার কথা) তাদের জন্য আসমানের কোন দরজা খুলে দেই এবং তারা দিনের আলোতে তাতে চড়তে শুরু করে-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যদি এদের জন্যে আকাশের দুয়ার খুলে দেই এবং এরা সারাদিন এতে আরোহণ করতে থাকে,


১৫


لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবুও তারা একথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে, বরং আমরা এক যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়। ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তবুও ওরা একথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তবুও এরা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।’


তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ, তারা যা-কিছু দাবী ও ফরমায়েশ করে তা কেবলই জেদপ্রসূত। কাজেই ফিরিশতা পাঠানো হলে তো দূরের কথা খোদ তাদেরকেই যদি আকাশে নিয়ে যাওয়া হয়, তবুও তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান আনবে না, বরং তাকে অস্বীকার করার জন্য কোনও না কোনও ছুতা বানিয়ে নেবে। বলবে, আমাদেরকে যাদু করা হয়েছে।


১৬


وَلَقَدْ جَعَلْنَا فِي السَّمَاءِ بُرُوجًا وَزَيَّنَّاهَا لِلنَّاظِرِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি আসমানে বহু ‘বুরূজ’ ৬ তৈরি করেছি এবং দর্শকদের জন্য তাতে শোভা দান করেছি। ৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আমি আকাশে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছি এবং তাকে দর্শকদের জন্যে সুশোভিত করে দিয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং একে সুশোভিত করেছি দর্শকদের জন্যে;


তাফসীরঃ

৬. ‘বুরূজ’-এর প্রকৃত অর্থ দুর্গ। কিন্তু অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এখানে বুরূজ (بروج) দ্বারা গ্রহ-নক্ষত্র বোঝানো হয়েছে।


৭. অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্র দ্বারা সাজানো দেখা যায়। প্রকাশ থাকে যে, কুরআন মাজীদে السماء (আকাশ) শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথাও এর দ্বারা সেই সাত আকাশের কোনও একটি বোঝানো হয়েছে, যে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে বলেছেন যে, তিনি সেগুলোকে উপর-নিচে বিন্যস্ত করেছেন। কোথাও এর দ্বারা ‘উপর দিক’ বোঝানো উদ্দেশ্য। সুতরাং সামনে ২২ নং আয়াতে যে বলা হয়েছে ‘আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি’, তাতে السماء দ্বারা উপর দিকই বোঝানো হয়েছে। দৃশ্যত এখানেও তাই বোঝানেও উদ্দেশ্য।


১৭


وَحَفِظْنَاهَا مِن كُلِّ شَيْطَانٍ رَّجِيمٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তাকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে সংরক্ষিত করে রেখেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আকাশকে প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ করে দিয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমি একে রক্ষা করে থাকি;


১৮


إِلَّا مَنِ اسْتَرَقَ السَّمْعَ فَأَتْبَعَهُ شِهَابٌ مُّبِينٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কেউ চুরি করে কিছু শোনার চেষ্টা করলে এক উজ্জ্বল শিখা তাকে ধাওয়া করে। ৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাদ্ধাবন করে উজ্জ্বল উল্কাপিন্ড।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কিন্তু কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে এর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা।


তাফসীরঃ

৮. কুরআন মাজীদে কয়েক জায়গায় বলা হয়েছে, শয়তান আকাশে গিয়ে ঊর্ধ্বজগতের খবরাখবর সংগ্রহ করতে চায়। উদ্দেশ্য সেসব খবর অতীন্দ্রিয়বাদী ও জ্যোতিষীদেরকে সরবরাহ করা, যাতে তারা তার মাধ্যমে মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয় যে, তারা গায়েবী খবর জানতে পারে। কিন্তু আকাশে প্রবেশের দুয়ার তাদের জন্য পূর্ব থেকেই বন্ধ রয়েছে। তবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের আগে শয়তানেরা আকাশের কাছাকাছি পৌঁছতে পারত এবং সেখান থেকে চুরি করে ফেরেশতাদের কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করত। ঘটনাক্রমে কোনও একটু কথা কানে পড়ে গেলে তার সাথে অসংখ্য মিথ্যা মিলিয়ে অতীন্দ্রিয়বাদীদের কাছে পৌঁছাত। এভাবে অতীন্দ্রিয়বাদীদের দু’-একটি কথা ফলেও যেত। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমনের পর তাদের আকাশের কাছে যাওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হল। এখন তারা সে রকম চেষ্টা করলে জ্বলন্ত উল্কা ছুঁড়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আকাশে আমরা যে নক্ষত্র পতনের দৃশ্য দেখতে পাই, অনেক সময় তা এই শয়তান বিতাড়নেরই ব্যাপার হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ইনশাআল্লাহ তাআলা সূরা জীনে আসবে।


১৯


وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْزُونٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং (তাকে স্থিত রাখার জন্য) তাতে পাহাড় স্থাপিত করেছি। ৯ আর তাতে সর্বপ্রকার বস্তু পরিমিতভাবে উদগত করেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি ভু-পৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি এবং তার উপর পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর পৃথিবী, একে আমি বিস্তৃত করেছি, এতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; এবং আমি এতে প্রত্যেক বস্তু উদ্গত করেছি সুপরিমিতভাবে,


তাফসীরঃ

৯. কুরআন মাজীদের কয়েক জায়গায় বলা হয়েছে, শুরুতে ভূমিকে যখন সাগরে বিছিয়ে দেওয়া হয়, তখন তা দুলছিল। তাই আল্লাহ তাআলা তাকে স্থির রাখার জন্য পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি করেন (দেখুন, সূরা নাহল ১৬ : ১৫)।


২০


وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ وَمَن لَّسْتُمْ لَهُ بِرَازِقِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর তাতে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য এবং তাদের (অর্থাৎ সেই সকল মাখলুকের) জন্যও যাদের রিযক তোমরা দাও না। ১০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তোমাদের জন্যে তাতে জীবিকার উপকরন সৃষ্টি করছি এবং তাদের জন্যেও যাদের অন্নদাতা তোমরা নও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্যে, আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্যেও।


তাফসীরঃ

১০. প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআলাই সকল সৃষ্টির রিযিকদাতা। কোন কোন গৃহপালিত পশু-পাখি এমন আছে, বাহ্যিকভাবে মানুষ তাদের দানা-পানির যোগান দেয়, কিন্তু অধিকাংশ সৃষ্টিই এমন, যাদের জীবিকা সরবরাহে মানুষের কোন ভূমিকা নেই। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি মানুষের জন্যও জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছি এবং মানুষ বাহ্যিকভাবেও যাদের খাদ্যের বন্দোবস্ত করে না, তাদের জন্যও। আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী এ আয়াতের অন্য রকম তরজমারও অবকাশ আছে, যেমন ‘আমি তোমাদের কল্যাণার্থে এতে (ভূমিতে) জীবিকার উপকরণও সৃষ্টি করেছি এবং সেই সব মাখলুকও সৃষ্টি করেছি, তোমরা যাদের জীবিকার ব্যবস্থা কর না’। অর্থাৎ, মানুষ বাহ্যিকভাবেও যাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে না, অথচ তাদের দ্বারা উপকৃত হয়, যেমন শিকারের জন্তু, সেগুলোও আল্লাহ তাআলা মানুষের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করেছেন।


২১


وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ مَّعْلُومٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং এমন কোন (প্রয়োজনীয়) বস্তু নেই, যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই, কিন্তু আমি তা অবতীর্ণ করি সুনির্দিষ্ট পরিমাণেই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমার কাছে প্রত্যেক বস্তুর ভান্ডার রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট পরিমানেই তা অবতরণ করি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমারই নিকট আছে প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার এবং আমি তা পরিজ্ঞাত পরিমাণেই সরবরাহ করে থাকি।


২২


وَأَرْسَلْنَا الرِّيَاحَ لَوَاقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَسْقَيْنَاكُمُوهُ وَمَا أَنتُمْ لَهُ بِخَازِنِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং পাঠিয়েছি সেই বায়ু, যা মেঘমালাকে করে পানিপূর্ণ, তারপর আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, তারপর আমি তা দ্বারা তোমাদের তৃষ্ণা নিবারণ করি। তোমাদের সাধ্য নেই যে, তা সঞ্চয় করে রাখবে। ১১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভান্ডার নেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি বৃষ্টি-গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, এরপর আকাশ হতে বারি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদেরকে পান করতে দেই; আর তোমরা এর ভাণ্ডার রক্ষক নও।


তাফসীরঃ

১১. অর্থাৎ শূন্যলোকে মেঘমালায় এবং নিচে নদ-নদী ও ভূ-গর্ভে পানি সঞ্চয়ে তোমাদের কোন হাত নেই। তোমরা মেঘ তৈরি করতে বা তার থেকে ইচ্ছামত বৃষ্টি নামাতে কিংবা বৃষ্টিপাত বন্ধ করতে পার না। এমনিভাবে ভূ-গর্ভের পানি যদি শুকিয়ে বা নিচে নেমে যায় তখনও তোমাদের কিছু করার থাকে না। বস্তুত তিনিই নিজ অনুগ্রহে তোমাদের জন্য উপরে ও নিচে অফুরন্ত পানি সঞ্চিত রেখেছেন এবং তা দ্বারা তোমাদের সহজে উপকৃত হওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। -অনুবাদক


২৩


وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْيِي وَنُمِيتُ وَنَحْنُ الْوَارِثُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমিই জীবন দেই এবং আমিই মৃত্যু ঘটাই আর আমিই সকলের ওয়ারিশ। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমিই জীবনদান করি, মৃত্যুদান করি এবং আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।


তাফসীরঃ

১২. অর্থাৎ সকলের জীবন-মরণ আমারই হাতে। এক সময় সকলেরই মৃত্যু ঘটবে, কেবল আমিই জীবিত থাকব। তখন বাস্তবিক ও প্রকাশ্য সর্বতোভাবেই সমগ্রজগত আমার মালিকানায় এসে যাবে এবং সকলকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। -অনুবাদক


২৪


وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَأْخِرِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা তোমাদের আগে চলে গেছে, আমি তাদেরকেও জানি এবং যারা পেছনে রয়ে গেছে তাদেরকেও জানি। ১৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি জেনে রেখেছি তোমাদের অগ্রগামীদেরকে এবং আমি জেনে রেখেছি পশ্চাদগামীদেরকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের মধ্য হতে পূর্বে যারা গত হয়েছে আমি তাদেরকে জানি এবং পরে যারা আসবে তাদেরকেও জানি।


তাফসীরঃ

১৩. এর দুই অর্থ হতে পারে (এক) তোমাদের আগে যে সব জাতি গত হয়েছে, আমি তাদের সম্পর্কেও অবগত এবং যে সকল জাতি ভবিষ্যতে আসবে তাদের অবস্থাদি সম্পর্কেও অবগত। (দুই) তোমাদের মধ্যে যেসব লোক সৎকাজে অগ্রগামী হয়ে অন্যদেরকে ছাড়িয়ে যায়, আমি তাদেরকেও জানি আর যারা পেছনে পড়ে থাকে তাদের সম্পর্কেও আমি খবর রাখি।


২৫


وَإِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْ ۚ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে হাশরে একত্র করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তাই তাদেরকে একত্রিত করে আনবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালকই এদেরকে সমবেত করবেন; তিনি তো প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।


২৬


وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পচা কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটি হতে ১৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হতে,


তাফসীরঃ

১৪. এর দ্বারা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার কথা বোঝানো হয়েছে। পূর্ণ ঘটনা সূরা বাকারায় (২ : ৩, ৩৪) গত হয়েছে। ফেরেশতাদের সিজদা সম্পর্কিত জরুরী বিষয়াবলীও সেখানে বর্ণিত হয়েছে।


২৭


وَالْجَانَّ خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তার আগে জিনদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম লু’র আগুন দ্বারা। ১৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং জিনকে এর আগে লু এর আগুনের দ্বারা সৃজিত করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এটার পূর্বে সৃষ্টি করেছি জিন অত্যুষ্ণ অগ্নি হতে।


তাফসীরঃ

১৫. মানুষের আদি পিতা যেমন হযরত আদম আলাইহিস সালাম, তেমনি জিনদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার নাম ‘জান্ন’। তাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল।


২৮


وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি শুকনো কাদার ঠনঠনে মাটি দ্বারা এক মানব সৃষ্টি করতে চাই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাগণকে বললেন, ‘আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠন্ঠনা মৃত্তিকা হতে মানুষ সৃষ্টি করছি;


২৯


فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাকে যখন পরিপূর্ণ রূপ দান করব এবং তাতে রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা সকলে তার সামনে সিজদায় পড়ে যেও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন তাকে ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফঁুক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘যখন আমি একে সুঠাম করব এবং এতে আমার পক্ষ হতে রূহ্ সঞ্চার করব তখন তোমরা এর প্রতি সিজ্দাবনত হয়ো’,


৩০


فَسَجَدَ الْمَلَائِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং সমস্ত ফেরেশতা সিজদা করল-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন ফেরেশতাগণ সকলেই একত্রে সিজ্দা করল,


৩১


إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ أَن يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবলিস ব্যতীত। সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইবলীস ব্যতীত, সে সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।


৩২


قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস! তোমার কি হল যে, সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেনঃ হে ইবলিস, তোমার কি হলো যে তুমি সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হলে না?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ বললেন, ‘হে ইবলিস! তোমার কি হল যে, তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না ?’


৩৩


قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, আমি এমন (তুচ্ছ) নই যে, একজন মানুষকে সিজদা করব, যাকে আপনি পচা কাদার শুকনো ঠনঠনে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘আপনি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা হতে যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন আমি তাকে সিজ্দা করার নই।’


৩৪


قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, তবে তুই এখান থেকে বের হয়ে যা। কেননা তুই মরদূদ হয়ে গেছিস।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেনঃ তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তুমি বিতাড়িত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি বললেন, ‘তবে তুমি এখান হতে বের হয়ে যাও, কারণ তুমি তো অভিশপ্ত;


৩৫


وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিয়ামতকাল পর্যন্ত তোমার উপর অভিশাপ পড়তে থাকবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিসম্পাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এবং কর্মফল দিবস পর্যন্ত অবশ্যই তোমার প্রতি রইল লা‘নত।’


৩৬


قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! তাহলে আমাকে সেই দিন পর্যন্ত (জীবিত থাকার) সুযোগ দিন, যখন মানুষকে পুনরুত্থিত করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।’


৩৭


قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, আচ্ছা যা, তোকে অবকাশ দেওয়া হল-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি বললেন, ‘যাদেরকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হলে,


৩৮


إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এমন এক কাল পর্যন্ত, যা আমার জানা আছে। ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।’


তাফসীরঃ

১৬. শয়তান হাশরের দিন পর্যন্ত অবকাশ চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছেন। অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে, তা হল শিঙ্গায় প্রথমবার ফুঁ দেওয়ার কাল। যখন সমস্ত সৃষ্টির মৃত্যু ঘটবে। সুতরাং এ সময় শয়তানও মারা যাবে।


৩৯


قَالَ رَبِّ بِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, তাই আমি কসম করছি যে, আমি মানুষের জন্য দুনিয়ার ভেতর আকর্ষণ সৃষ্টি করব ১৭ এবং তাদের সকলকে বিপথগামী করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে আমাকে বিপথগামী করলেন তার জন্যে আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি এদের সকলকেই বিপথগামী করব,


তাফসীরঃ

১৭. অর্থাৎ, এমন মনোমুগ্ধতা সৃষ্টি করব, যা তাদেরকে নাফরমানী করতে উৎসাহ যোগাবে।


৪০


إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে আপনার সেই বান্দাদেরকে নয়, যাদেরকে আপনি নিজের জন্য বিশুদ্ধচিত্ত বানিয়ে নিয়েছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তবে এদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত।’


৪১


قَالَ هَـٰذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, এটাই সেই সরল পথ, যা আমার পর্যন্ত পৌঁছে। ১৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বললেনঃ এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ বললেন, ‘এটাই আমার নিকট পৌঁছিবার সরল পথ,


তাফসীরঃ

১৮. আল্লাহ তাআলা তখনই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইখলাসের সাথে আল্লাহর আনুগত্যের পথই হল একমাত্র সরল পথ। যারা এ পথ অবলম্বন করবে, তারা সোজা আমার কাছে পৌঁছে যাবে। শয়তানের ছল-চাতুরী তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। অথবা এর অর্থ, এটাই আমার সরল পথ ও সুস্পষ্ট নীতি যে, যারা আমার অনুগত বান্দা হবে তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা ও চালাকি চলবে না। আমি তাদেরকে তোমার ছলনা থেকে রক্ষা করব।


৪২


إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلَّا مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

জেনে রাখিস, যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোর কোনও ক্ষমতা চলবে না। ১৯ তবে যারা তোর অনুগামী হবে সেই বিভ্রান্তদের কথা ভিন্ন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘বিভ্রান্তদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে তারা ব্যতীত আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনই ক্ষমতা থাকবে না;


তাফসীরঃ

১৯. ‘আমার বান্দা’ বলতে সেই সকল লোককে বোঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ তাআলার পথে চলতে স্থির সংকল্প এবং সে পথে চলার জন্য তাঁরই কাছে সাহায্য চায়। এরূপ লোকদের উপর শয়তানের ক্ষমতা না চলার অর্থ, যদিও শয়তান তাদেরকেও বিপথগামী করার চেষ্টা করবে, কিন্তু তারা তাদের ইখলাসের বদৌলতে আল্লাহ তাআলার দয়া ও সাহায্য লাভ করবে। ফলে তারা শয়তানের ফাঁদে পড়বে না।


৪৩


وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এরূপ সকলেরই নির্ধারিত ঠিকানা হল জাহান্নাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান,


৪৪


لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তার সাতটি দরজা। প্রত্যেক দরজার জন্য তাদের (অর্থাৎ জাহান্নামীদের) একেকটি দলকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এর সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্যে পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে।’


৪৫


إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(অন্য দিকে) মুত্তাকীগণ থাকবে উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণের মাঝে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় খোদাভীরুরা বাগান ও নির্ঝরিনীসহূহে থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও প্রস্রবণসমূহের মধ্যে।


৪৬


ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ آمِنِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তাদেরকে বলা হবে-) তোমরা এতে (অর্থাৎ উদ্যানসমূহে) প্রবেশ কর নিরাপদে ও নির্ভয়ে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলা হবেঃ এগুলোতে নিরাপত্তা ও শান্তি সহকরে প্রবেশ কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে এতে প্রবেশ কর।’


৪৭


وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ إِخْوَانًا عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَابِلِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের অন্তরে যে দুঃখ-বেদনা থাকবে তা দূর করে দেব। ২০ তারা ভাই-ভাই রূপে মুখোমুখি হয়ে উঁচু আসনে আসীন হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তাদের অন্তর হতে বিদ্বেষ দূর করব; তারা ভ্রাতৃভাবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসনে অবস্থান করবে,


তাফসীরঃ

২০. অর্থাৎ, দুনিয়ায় তাদের মধ্যে পারস্পরিক কোন দুঃখ-বেদনা থেকে থাকলে জান্নাতে পৌঁছার পর তাদের অন্তর থেকে আল্লাহ তাআলা তা দূর করে দেবেন।


৪৮


لَا يَمَسُّهُمْ فِيهَا نَصَبٌ وَمَا هُم مِّنْهَا بِمُخْرَجِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেখানে তাদেরকে কোন ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তাদেরকে সেখান থেকে বের করেও দেওয়া হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেখানে তাদের মোটেই কষ্ট হবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিস্কৃত হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেখানে তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেই স্থান হতে বহিষ্কৃতও হবে না।


৪৯


۞ نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও, নিশ্চয় আমিই অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমার বান্দাদেরকে বলে দাও যে, আমি তো পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু,


৫০


وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং এটাও জানিয়ে দাও যে, আমার শাস্তিই মর্মন্তুদ শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং ইহাও যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমার শাস্তি-তা অতি মর্মন্তুদ শাস্তি!


৫১


وَنَبِّئْهُمْ عَن ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তাদেরকে ইবরাহীমের অতিথিদের কথা শুনিয়ে দাও। ২১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি তাদেরকে ইব্রাহীমের মেহমানদের অবস্থা শুনিয়ে দিন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর এদেরকে বল, ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা,


তাফসীরঃ

২১. অতিথি দ্বারা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে প্রেরিত ফিরিশতাদেরকে বোঝানো হয়েছে। উপরে বলা হয়েছিল, আল্লাহ তাআলার রহমত যেমন সর্বব্যাপী, তেমনি তাঁর শাস্তিও অতি কঠোর। সুতরাং কারও আল্লাহ তাআলার রহমত থেকেও নিরাশ হওয়া উচিত নয় এবং তার শাস্তি থেকেও নিশ্চিন্ত হওয়া ঠিক নয়। সেই পটভূমিতেই হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে আগত অতিথিদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যেমন আল্লাহ তাআলার রহমতের তেমনি তাঁর কঠিন শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। রহমতের বিষয় হল, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে তার পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালামের জন্মের সুসংবাদ দান। ফিরিশতাগণ যখন তাঁর কাছে এ সুসংবাদ নিয়ে আসেন, তখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন। সুতরাং এ সুসংবাদ এক বিরাট রহমত বৈ কি! আর শাস্তির ব্যাপার হল এই যে, আগত এই ফিরিশতাদের মাধ্যমে হযরত লূত আলাইহিস সালামের কওমের উপর আযাব নাযিল করা হয়েছিল। ঘটনাটি সূরা হুদে (১১ : ৬৯-৮৩) কিছুটা বিস্তারিতভাবে গত হয়েছে। সেখানে ঐ সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক পরিষ্কার করা হয়েছে।


৫২


إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ إِنَّا مِنكُمْ وَجِلُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই সময়ের কথা, যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল ও সালাম করল। ইবরাহীম বলল, আমরা তো তোমাদের আগমনে ভীত। ২২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তারা তাঁর গৃহে আগমন করল এবং বললঃ সালাম। তিনি বললেনঃ আমরা তোমাদের ব্যাপারে ভীত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এরা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন সে বলেছিল, ‘আমরা তো তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।’


তাফসীরঃ

২২. সূরা হুদে বলা হয়েছে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদেরকে মানুষ মনে করেছিলেন। তাই তাদের আতিথেয়তার লক্ষ্যে বাছুরের ভুনা গোশত পেশ করেছিলেন, কিন্তু তারা খাওয়া হতে বিরত থাকলেন। তখনকার আঞ্চলিক রেওয়াজ অনুযায়ী এটা শত্রুতার আলামত ছিল। এরূপ দেখা গেলে মনে করা হত, তারা কোন দূরভিসন্ধি নিয়ে এসেছে। এ কারণেই তাঁর ভয় লেগেছিল।


৫৩


قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, ভয় পাবেন না, আমরা আপনাকে এক জ্ঞানী পুত্র (-এর জন্মগ্রহণ) এর সুসংবাদ দিচ্ছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ ভয় করবেন না। আমরা আপনাকে একজন জ্ঞানবান ছেলে-সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘ভয় কর না, আমরা তো তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের শুভ সংবাদ দিচ্ছি।’


৫৪


قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَىٰ أَن مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবরাহীম বলল, তোমরা আমাকে এই সুসংবাদ দিচ্ছ, যখন বার্ধক্য আমাকে আচ্ছন্ন করেছে? তোমরা কিসের ভিত্তিতে আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ তোমরা কি আমাকে এমতাবস্থায় সুসংবাদ দিচ্ছ, যখন আমি বার্ধক্যে পৌছে গেছি ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘তোমরা কি আমাকে শুভ সংবাদ দিতেছ আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ? তোমরা কী বিষয়ে শুভ সংবাদ দিতেছ ?’


৫৫


قَالُوا بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُن مِّنَ الْقَانِطِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমরা আপনাকে সত্য সুসংবাদ দিয়েছি। সুতরাং যারা নিরাশ হয়, আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ আমরা আপনাকে সত্য সু-সংবাদ দিচ্ছি! অতএব আপনি নিরাশ হবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমরা তোমাকে সত্য সংবাদ দিচ্ছি; সুতরাং তুমি হতাশ হয়ো না।’


৫৬


قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلَّا الضَّالُّونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ইবরাহীম বলল, পথভ্রষ্টগণ ছাড়া আর কে নিজ প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হয়?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয় ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হতে হতাশ হয় ?’


৫৭


قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তারপর) তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতাগণ! আপনাদের পরবর্তী বিশেষ কাজ কী?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ অতঃপর তোমাদের প্রধান উদ্দেশ্য কি হে আল্লাহর প্রেরিতগণ ?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘হে ফেরেশতাগণ! তোমাদের আর বিশেষ কি কাজ আছে ?’


৫৮


قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُّجْرِمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পাঠানো হয়েছে (তাদের প্রতি আযাব নাযিল করার জন্য)-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ আমরা একটি অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে-


৫৯


إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে লুতের পরিবারবর্গ ছাড়া। তাদের সকলকে আমরা রক্ষা করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কিন্তু লূতের পরিবার-পরিজন। আমরা অবশ্যই তাদের সবাইকে বাঁচিয়ে নেব।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই এদের সকলকে রক্ষা করব,


৬০


إِلَّا امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا ۙ إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়। আমরা স্থির করেছি, (শাস্তির লক্ষ্যবস্তু হওয়ার জন্য) যারা পেছনে থেকে যাবে সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তবে তার স্ত্রী। আমরা স্থির করেছি যে, সে থেকে যাওয়াদের দলভূক্ত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়; আমরা স্থির করেছি যে, সে অবশ্যই পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’


৬১


فَلَمَّا جَاءَ آلَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং ফিরিশতাগণ যখন লুতের পরিবারবর্গের কাছে আসল-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন প্রেরিতরা লূতের গৃহে পৌছল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ফেরেশতাগণ যখন লূত-পরিবারের নিকট এলো,


৬২


قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তখন লূত বলল, আপনাদেরকে অপরিচিত মনে হচ্ছে! ২৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ তোমরা তো অপরিচিত লোক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তখন লূত বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক।’


তাফসীরঃ

২৩. হযরত লূত আলাইহিস সালাম নিজ সম্প্রদায়ের কু-স্বভাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তারা বহিরাগতদেরকে নিজেদের লালসার শিকার বানাতে চাইত। সঙ্গত কারণেই তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করলেন। হযরত লূত আলাইহিস সালামের এই দুশ্চরিত্র সম্প্রদায়ের ঘটনা সংক্ষেপে সূরা আরাফ (৭ : ৮০)-এর টীকায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে দ্রষ্টব্য।


৬৩


قَالُوا بَلْ جِئْنَاكَ بِمَا كَانُوا فِيهِ يَمْتَرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, না; বরং তারা যে (আযাব) সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করত, আমরা আপনার কাছে সেটাই নিয়ে এসেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বললঃ না বরং আমরা আপনার কাছে ঐ বস্তু নিয়ে এসেছি, যে সম্পর্কে তারা বিবাদ করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা বলল, ‘না, এরা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তাই নিয়ে এসেছি;


৬৪


وَأَتَيْنَاكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমরা আপনার কাছে অনড় ফায়সালা নিয়ে এসেছি এবং নিশ্চিত থাকুন, আমরা সত্যবাদী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আমরা আপনার কাছে সত্য বিষয় নিয়ে এসেছি এবং আমরা সত্যবাদী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী;


৬৫


فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ وَامْضُوا حَيْثُ تُؤْمَرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং আপনি রাতের কোনও এক অংশে নিজ পরিবারবর্গকে নিয়ে বের হয়ে পড়ুন এবং নিজে তাদের পিছনে পিছনে চলুন। ২৪ আপনাদের মধ্যে কেউ যেন পিছনে ফিরে না দেখে এবং আপনাদেরকে যেখানে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হয়েছে, সেখানকার উদ্দেশ্যে চলতে থাকুন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব আপনি শেষরাত্রে পরিবারের সকলকে নিয়ে চলে যান এবং আপনি তাদের পশ্চাদনুসরণ করবেন না এবং আপনাদের মধ্যে কেউ যেন পিছন ফিরে না দেখে। আপনারা যেখানে আদেশ প্রাপ্ত হচ্ছেন সেখানে যান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তুমি তাদের পশ্চাদনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পিছন দিকে না তাকায়; তোমাদেরকে যেখানে যেতে বলা হচ্ছে তোমরা সেখানে চলে যাও।’


তাফসীরঃ

২৪. পেছনে থেকে যাতে সকল সঙ্গীর তত্ত্বাবধান করতে পারেন, সেজন্যই হযরত লূত আলাইহিস সালামকে সকলের পেছনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর বিশেষত সকলের প্রতি যেহেতু নির্দেশ ছিল, যেন কেউ পিছনে ফিরে না দেখে, তাই হযরত লূত আলাইহিস সালামের পিছনে থাকাই দরকার ছিল, যাতে কারও এ হুকুম অমান্য করার সাহস না হয়।


৬৬


وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَٰلِكَ الْأَمْرَ أَنَّ دَابِرَ هَـٰؤُلَاءِ مَقْطُوعٌ مُّصْبِحِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (এভাবে) আমি লূতের কাছে আমার এই ফায়সালা পৌঁছিয়ে দিলাম যে, ভোর হওয়া মাত্র তাদেরকে নির্মূল করে ফেলা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি লূতকে এ বিষয় পরিজ্ঞাত করে দেই যে, সকাল হলেই তাদেরকে সমুলে বিনাশ করে দেয়া হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তাকে এই বিষয়ে ফায়সালা জানিয়ে দিলাম যে, প্রত্যূষে এদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।


৬৭


وَجَاءَ أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নগরবাসীগণ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে (লূতের কাছে) চলে আসল। ২৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

শহরবাসীরা আনন্দ-উল্লাস করতে করতে পৌছল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নগরবাসিগণ উল্লসিত হয়ে উপস্থিত হল।


তাফসীরঃ

২৫. ফিরিশতাগণ অত্যন্ত সুদর্শন যুবকের বেশে এসেছিলেন। তা শুনে নগরের লোক নিজেদের কু-বাসনা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে সোল্লাসে ছুটে আসল, যেমনটা হযরত লূত আলাইহিস সালামের আশঙ্কা ছিল।


৬৮


قَالَ إِنَّ هَـٰؤُلَاءِ ضَيْفِي فَلَا تَفْضَحُونِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

লূত (তাদেরকে) বলল, এরা আমার অতিথি। সুতরাং আমাকে বেইজ্জত করো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

লূত বললেনঃ তারা আমার মেহমান। অতএব আমাকে লাঞ্ছিত করো না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলল, ‘এরা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইজ্জত কর না।


৬৯


وَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আল্লাহকে ভয় কর আর আমাকে হেয় করো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার ইযযত নষ্ট করো না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর ও আমাকে হেয় কর না।’


৭০


قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলল, আমরা কি আপনাকে আগেই দুনিয়াশুদ্ধ লোককে মেহমান বানাতে নিষেধ করে দেইনি?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তার বললঃ আমরা কি আপনাকে জগৎদ্বাসীর সমর্থন করতে নিষেধ করিনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলল, ‘আমরা কি দুনিয়াসুদ্ধ লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করি নাই ?’


৭১


قَالَ هَـٰؤُلَاءِ بَنَاتِي إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

লূত বলল, তোমরা যদি আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর, তবে এই যে আমার কন্যাগণ (তোমাদের বিবাহাধীন) রয়েছে। ২৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ যদি তোমরা একান্ত কিছু করতেই চাও, তবে আমার কন্যারা উপস্থিত আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

লূত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তবে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে।’


তাফসীরঃ

২৬. উম্মতের নারীগণ সংশ্লিষ্ট নবীর রূহানী কন্যা হয়ে থাকে। হযরত লূত আলাইহিস সালাম সেই দুর্বৃত্তদেরকে নম্রতার সাথে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, তোমাদের ঘরে তো তোমাদের স্ত্রীরা রয়েছে, যারা আমার রূহানী কন্যা। তোমরা তোমাদের কামেচ্ছা তাদের দ্বারাই পূরণ করতে পার আর সেটাই এ কাজের স্বভাবসিদ্ধ ও পবিত্র পন্থা।


৭২


لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তোমার জীবনের শপথ! প্রকৃতপক্ষে ওই সব লোক নিজেদের মত্ততায় বুঁদ হয়ে গিয়েছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার প্রাণের কসম, তারা আপন নেশায় প্রমত্ত ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার জীবনের শপথ, এরা তো মত্ততায় বিমূঢ় হয়েছে।


৭৩


فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং সূর্যোদয় হওয়া মাত্রই মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর সুর্যোদয়ের সময় তাদেরকে প্রচন্ড একটি শব্দ এসে পাকড়াও করল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর সূর্যোদয়ের সময়ে মহানাদ এদেরকে আঘাত করল;


৭৪


فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অনন্তর আমি সে ভূখণ্ডটিকে উল্টিয়ে উপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পাকা মাটির পাথর-ধারা বর্ষণ করলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম এবং তাদের উপর কঙ্করের প্রস্থর বর্ষণ করলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর আমি জনপদকে উল্টিয়ে ওপর নীচ করে দিলাম এবং এদের ওপর প্রস্তর-কংকর বর্ষণ করলাম।


৭৫


إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত এসব ঘটনার ভেতর বহু নিদর্শন আছে তাদের জন্য, যারা শেখার দৃষ্টি দিয়ে দেখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় এতে চিন্তাশীলদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে।


৭৬


وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُّقِيمٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এ জনপদটি এমন এক পথের উপর অবস্থিত, যাতে সর্বদা লোক চলাচল রয়েছে। ২৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

জনপদটি সোজা পথে অবস্থিত রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা তো লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান।


তাফসীরঃ

২৭. হযরত লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় জর্ডানের মৃত সাগরের আশেপাশে বাস করত। আরবের লোক যখন শামের সফর করত, তখন তাদের যাতায়াত পথে সে সম্প্রদায়ের ধ্বংসাবশেষ পড়ত।


৭৭


إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّلْمُؤْمِنِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই এর মধ্যে মুমিনদের জন্য নিদর্শন আছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় এতে ঈমানদারদের জন্যে নিদর্শণ আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অবশ্যই এতে মু’মিনদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।


৭৮


وَإِن كَانَ أَصْحَابُ الْأَيْكَةِ لَظَالِمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আয়কার বাসিন্দাগণ (-ও) বড় জালেম ছিল। ২৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় গহীন বনের অধিবাসীরা পাপী ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর ‘আয়কা’বাসীরাও তো ছিল সীমালংঘনকারী,


তাফসীরঃ

২৮. ‘আয়কা’ অর্থ নিবিড় বনভূমি। হযরত শুআইব আলাইহিস সালামকে যে সম্প্রদায়ের কাছে পাঠানো হয়েছিল তাদের বসতি এ রকমই একটি বন-সংলগ্ন ছিল। কোন কোন মুফাসসির বলেন, জনপদটির নাম ছিল ‘মাদয়ান’। কেউ বলেন, মাদয়ান ও আয়কা দু’টি পৃথক জনপদ। হযরত শুআইব আলাইহিস সালাম উভয় এলাকারই নবী ছিলেন। আয়কাবাসীদের ঘটনা সূরা আরাফে (৭ : ৮৫-৯৩) গত হয়েছে। (বিস্তারিত জানার জন্য সেখানকার টীকাসমূহ দ্রষ্টব্য)।


৭৯


فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ وَإِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُّبِينٍ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ফলে আমি তাদের থেকেও প্রতিশোধ নিয়েছি। উভয় সম্প্রদায়ের বাসভূমি প্রকাশ্য রাজপথের পাশে অবস্থিত। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি। উভয় বস্তি প্রকাশ্য রাস্তার উপর অবস্থিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং আমি এদেরকে শাস্তি দিয়েছি, অবশ্য উভয়টিই প্রকাশ্য পথিপার্শ্বে অবস্থিত।


তাফসীরঃ

২৯. উভয় বলতে হযরত লূত আলাইহিস সালাম ও হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের বসতি দু’টিকে বোঝানো হয়েছে। যেমন উপরে বলা হয়েছে, হযরত লূত আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় বাস করত মৃত সাগরের আশেপাশে আর হযরত শুআইব আলাইহিস সালামের বাসভূমি ‘মাদয়ান’-ও জর্দানেই অবস্থিত ছিল। শামের যাতায়াত পথে আরববাসী এ জনপদ দু’টির উপর দিয়েই আসা-যাওয়া করত।


৮০


وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الْحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হিজরবাসীগণও রাসূলগণকে অস্বীকার করেছিল। ৩০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় হিজরের বাসিন্দারা পয়গম্বরগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হিজ্রবাসিগণও রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল;


তাফসীরঃ

৩০. ‘হিজর’ হল ছামুদ জাতির বাসভূমি, মদীনা ও শামের মাঝখানে অবস্থিত। এখনও তার ধ্বংসাবশেষ পথিকদের দৃষ্টিগোচর হয়। এখানে হযরত সালেহ আলাইহিস সালামকে নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এ জাতির ঘটনাও সূরা আরাফে (৭ : ৭৩-৭৯) চলে গেছে। তাদের অবস্থা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহ ও তার টীকা দেখুন।


৮১


وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদেরকে নিজের নিদর্শনাবলী দিয়েছি। অতঃপর তারা এগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদেরকে আমার নিদর্শন দিয়েছিলাম, কিন্তু এরা তা উপেক্ষা করেছিল।


৮২


وَكَانُوا يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত নিরাপদ বাসের জন্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা পাহাড়ে নিশ্চিন্তে ঘর খোদাই করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত নিরাপদ বাসের জন্যে।


৮৩


فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিশেষে ভোরবেলা এক মহানাদ তাদেরকে আঘাত করল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর এক প্রত্যুষে তাদের উপর একটা শব্দ এসে আঘাত করল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর প্রভাতকালে মহানাদ এদেরকে আঘাত করল।


৮৪


فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَكْسِبُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পরিণাম হল এই, তারা যে শিল্পকর্ম দ্বারা রোজগার করত, তা তাদের কোনও কাজে আসল না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তখন কোন উপকারে আসল না যা তারা উপার্জন করেছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং এরা যা অর্জন করত তা এদের কোন কাজে আসে নাই।


৮৫


وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَإِنَّ السَّاعَةَ لَآتِيَةٌ ۖ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এর মাঝখানে যা-কিছু আছে, তা যথাযথ উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করিনি ৩১ এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং (হে নবী! তাদের আচার-আচরণকে) উপেক্ষা কর সৌন্দর্যমণ্ডিত ৩২ উপেক্ষায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা তাৎপর্যহীন সৃষ্টি করিনি। কেয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব পরম ঔদাসীন্যের সাথে ওদের ক্রিয়াকর্ম উপক্ষো করুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এদের অন্তর্বর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করি নাই এবং কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সঙ্গে এদেরকে ক্ষমা কর।


তাফসীরঃ

৩১. উপেক্ষা করার অর্থ এ নয় যে, তাদের মধ্যে দাওয়াতী কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। বরং বোঝানো উদ্দেশ্য, তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব আপনার নয়। মক্কী জীবনে তাদের সাথে যুদ্ধ করার তো নয়ই, এমনকি তারা যে জুলুম-নির্যাতন চালাত তার প্রতিশোধ গ্রহণেরও অনুমতি ছিল না। বরং হুকুম ছিল ক্ষমা প্রদর্শনের, অর্থাৎ, এখন তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাক। এভাবে কষ্ট-ক্লেশের চুল্লিতে ঝালাই করে মুসলিমদের আখলাক-চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করা হচ্ছিল।


৩২. বিশ্বজগত সৃষ্টির উদ্দেশ্য হল আখেরাতে পুণ্যবানদেরকে পুরস্কৃত করা এবং পাপীদেরকে শাস্তি দেওয়া। সেই দৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামকে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে, কাফেরদের কর্মকাণ্ডের কোন দায় আপনার উপর নেই। আল্লাহ তাআলা নিজেই তাদের ফায়সালা করবেন।


৮৬


إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই সকলের স্রষ্টা, সব কিছুর জ্ঞাতা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই স্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী।


৮৭


وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়েছি, যা বারবার পড়া হয় ৩৩ এবং দিয়েছি মর্যাদাপূর্ণ কুরআন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো তোমাকে দিয়েছি সাত আয়াত যা পুনঃ পুনঃ আবৃত্ত হয় এবং দিয়েছি মহান কুরআন।


তাফসীরঃ

৩৩. এর দ্বারা সূরা ফাতিহার সাত আয়াত বোঝানো হয়েছে। প্রতি নামাযে তা বারবার পড়া হয়। এস্থলে বিশেষভাবে সূরা ফাতিহার কথা বলার কারণ খুব সম্ভব এই যে, এ সূরার আয়াত إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই’এর মাধ্যমে বান্দাকে শেখানো হয়েছে, সে যেন প্রতিটি জিনিস আল্লাহ তাআলার কাছেই চায়। তো এ সূরার বরাত দিয়ে যেন নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, যখন কোন মুসিবত বা দুঃখ-কষ্ট দেখা দেয়, তখন আল্লাহ তাআলার দিকে রুজু হয়ে তাঁরই কাছে সাহায্য চাবে এবং ‘সীরাতে মুস্তাকীম’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য তাঁরই কাছে দু‘আ করবে।


৮৮


لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদের (অর্থাৎ কাফেরদের) বিভিন্ন লোককে মজা লোটার যে উপকরণ দিয়েছি, তুমি তার দিকে চোখ তুলে তাকিও না এবং তাদের প্রতি মনোক্ষুন্ন হয়ো না। আর যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য তোমার (বাৎসল্যের) ডানা নামিয়ে দাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি চক্ষু তুলে ঐ বস্তুর প্রতি দেখবেন না, যা আমি তাদের মধ্যে কয়েক প্রকার লোককে ভোগ করার জন্যে দিয়েছি, তাদের জন্যে চিন্তিত হবেন না আর ঈমানদারদের জন্যে স্বীয় বাহু নত করুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চোখদ্বয় প্রসারিত কর না। তাদের জন্যে তুমি দুঃখ কর না; তুমি মু’মিনদের জন্যে তোমার পক্ষপুট অবনমিত কর,


৮৯


وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং (যারা কুফরে লিপ্ত তাদেরকে) বলে দাও, আমি তো কেবল এক স্পষ্টভাষী সতর্ককারী।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর বলুনঃ আমি প্রকাশ্য ভয় প্রদর্শক।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং বল, ‘আমি তো কেবল এক প্রকাশ্য সতর্ককারী।’


৯০


كَمَا أَنزَلْنَا عَلَى الْمُقْتَسِمِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(কুরআন মাজীদের মাধ্যমে এ সতর্কবাণী আমি নাযিল করেছি সেভাবেই,) যেমন নাযিল করেছিলাম সেই বিভক্তকারীদের প্রতি-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেমন আমি নাযিল করেছি যারা বিভিন্ন মতে বিভক্ত তাদের উপর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেভাবে আমি অবতীর্ণ করেছিলাম বিভক্তকারীদের ওপর;


৯১


الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা (তাদের) পাঠ্য কিতাবকে খন্ড-বিখণ্ড করেছিল। ৩৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা কোরআনকে খন্ড খন্ড করেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে।


তাফসীরঃ

৩৪. এর দ্বারা ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝানো হয়েছে। তারা তাদের কিতাবকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলেছিল। অর্থাৎ, কিতাবের যে বিধান তাদের ইচ্ছামত হত তা মানত এবং যে বিধান ইচ্ছামত হত না, তা অমান্য করত।


৯২


فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তোমার প্রতিপালকের কসম! আমি এক-এক করে তাদের সকলকে প্রশ্ন করব-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব আপনার পালনকর্তার কসম, আমি অবশ্যই ওদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি এদের সকলকে প্রশ্ন করবই,


৯৩


عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা যা-কিছু করত সে সম্পর্কে,


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ওদের কাজকর্ম সম্পর্কে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেই বিষয়ে, যা এরা করে।


৯৪


فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং তোমাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হচ্ছে, তা প্রকাশ্যে মানুষকে শুনিয়ে দাও। ৩৫ (তথাপি) যারা শিরক করবে তাদের পরওয়া করো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা কর।


তাফসীরঃ

৩৫. এটাই সেই আয়াত, যার মাধ্যমে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রকাশ্যে দাওয়াত ও প্রচার কার্যের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে তাঁর দাওয়াতী কার্যক্রম চলছিল গোপনে।


৯৫


إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয় আমিই তোমার পক্ষ হতে বিদ্রূপকারীদের সাথে নিষ্পত্তির জন্য যথেষ্ট-


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমি আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমিই যথেষ্ট তোমার জন্যে বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে,


৯৬


الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদ প্রতিষ্ঠা করেছে। সুতরাং শীঘ্রই তারা জানতে পারবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য সাব্যস্ত করে। অতএব অতিসত্তর তারা জেনে নেবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্ র সঙ্গে অপর ইলাহ নির্ধারণ করেছে। সুতরাং শীঘ্রই এরা জানতে পারবে।


৯৭


وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আমি জানি তারা যে সব কথা বলে তাতে তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি জানি যে আপনি তাদের কথাবর্তায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো জানি, এরা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়;


৯৮


فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(তার প্রতিকার এই যে,) তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসার সাথে তার তাসবীহ পাঠ করতে থাক এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাক। ৩৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতএব আপনি পালনকর্তার সৌন্দর্য স্মরণ করুন এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং তুমি সিজ্দাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও;


তাফসীরঃ

৩৬. অর্থাৎ তাদের হঠকারিতায় মন খারাপ লাগলে আল্লাহ তাআলার যিকর ও তাসবীহ এবং নামাযে রত হও। কেননা যিকর ও ইবাদত দ্বারা অন্তরে প্রশান্তি আসে, মনের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হয়। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের অভ্যাস ছিল, যে কোন সংকট ও দুর্যোগ দেখা দিলে তিনি নামাযে লেগে যেতেন। -অনুবাদক


৯৯


وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করতে থাক যাবত না যার আগমন সুনিশ্চিত তোমার কাছে তা এসে যায়। ৩৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং পালনকর্তার এবাদত করুন, যে পর্যন্ত আপনার কাছে নিশ্চিত কথা না আসে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ‘ইবাদত কর।


তাফসীরঃ

৩৭. এর দ্বারা ‘মৃত্যু’ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, সারা জীবন আল্লাহর ইবাদতে লেগে থাক, যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা ওফাতের মাধ্যমে নিজের কাছে ডেকে নেন।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)

Post a Comment

0 Comments