মুনাফেকের বৈশিষ্ট্য, মুনাফিক চেনার সহজ উপায় , মুনাফিকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আল কোরআনে মুনাফিকের চরিত্র, মুনাফিক সম্পর্কে কুরআন হাদীস

 


ইংরেজি হিপোক্রেট শব্দটির সহজ সরল অর্থ মুনাফেক। মুনাফেক আরবি শব্দ। মুনাফেক দ্বিমুখী অর্থাৎ এরা দ্বিমুখী নীতিওয়ালা মানুষ। এরা মানুষের কাছে দুই রকম কথা বলে বেড়ায়। আল কোরআনে এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফেকরা হচ্ছে, তারা যখন ইমানদারদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা ইমান এনেছি, আবার যখন শয়তানদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে আমরা অবশ্যই তোমাদের সঙ্গে আছি। আমরা ইমানদারদের সঙ্গে শুধু ঠাট্টা করি মাত্র।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪) রসুল (সা.)-এর যুগে মুনাফেকদের দেখে বোঝা যেত না। 



মুমিন একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে শিরক, ফিসক, নিফাক, মিথ্যা, হিংসা, লোভ, রাগ ইত্যাদির সংমিশ্রণ ঘটে না, বিশেষ করে ঈমানদারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলো নিফাক তথা দ্বিমুখী আচরণ করা। নিফাক মুমিন থেকে ঈমান বের করে দেয়। মুমিনদের মধ্যে এ নিফাক থাকা অনুচিত।

(ads2)



কেননা এ বৈশিষ্ট্যের কারণে তার সব সদ্গুণ বদগুণে পরিবর্তিত হয়ে যায়।

মুনাফিকের সংজ্ঞা : মুনাফিক শব্দটি নফক শব্দ থেকে গঠিত। নফকের অর্থ—গর্ত, ছিদ্র, সুড়ঙ্গ, বের হওয়া, খরচ করা, ব্যয় করা। কারো মতে, ‘নাফেকুল ইয়ারবু’ (পাহাড়ি ইঁদুর) থেকে মুনাফিক শব্দটি গঠিত। পাহাড়ি ইঁদুরকে ‘নাফেকুল ইয়ারবু’ বলা হয়। কারণ পাহাড়ি ইঁদুর অত্যন্ত ধূর্ত হয়, এরা পাহাড়ে অনেক গর্ত খনন করে। এদের মারার জন্য এক গর্তে পানি বা অন্য কিছু দিলে অন্য গর্ত দিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যায়, ফলে এদের সহজে মারা যায় না। মুনাফিকও অনুরূপ ধূর্ত। তাদের সহজে চেনা যায় না। মুনাফিকের সংজ্ঞায় সাইয়্যেদ মুফতি আমিনুল ইহসান বলেছেন, মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরিকে লালন করে।


মুনাফিকের চরিত্র : আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরো ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের আলোচনা করেছেন। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো—


দুমুখো স্বভাবের : তারা দুমুখো আচরণ করে। বাহ্যিকভাবে নিজেদের মুমিন বলে পরিচয় দেয় অথচ তাদের ভেতরে ঈমান নেই। ঈমান তিনটি জিনিসের সমন্বয়ের নাম। ১. অন্তরের বিশ্বাস, ২. মৌখিক স্বীকৃতি এবং ৩. স্বীকৃতি অনুযায়ী আমল করা (ইবনে মাজাহ)। মুনাফিক শুধু মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দান করে, কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস লালন করে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮)


প্রতারক ও ধোঁকাবাজ : তারা খুবই ধূর্ত প্রতারক ও ধোঁকাবাজ। আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করে। তারা মনে করছে, এতে তারা সফলকাম ও বিজয়ী হচ্ছে, অথচ প্রকারান্তরে তারাই প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত হচ্ছে। সত্য পথ থেকে দূরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছে এবং তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ও ঈমানদারদের তারা ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা অন্য কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে না, বরং নিজেদেরই প্রতারিত করছে, অথচ তাদের সে অনুভূতি নেই। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৯)


তাদের অন্তর অসুস্থ : সুস্থতার সীমা থেকে বের হয়ে গেলেই অসুস্থতা বলা হয়। মুনাফিকদের আকিদা-বিশ্বাসে সন্দেহ, অস্বীকৃতি ও মিথ্যা থাকার কারণে তাদের কলবকে অসুস্থ কলব বলা হয়। অসুস্থতা হলো সুস্থতার বিপরীত। দ্বিমুখী আচরণ একটি কঠিন ব্যাধি। আর খাঁটি বিশ্বাস হলো সুস্থতা। ঈমান আনার পর যারা দ্বিমুখী আচরণ করে, তারা মূলত অসুস্থ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের হৃদয়ে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ সে ব্যাধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের মিথ্যাচারের দরুন তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ’ (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ১০)


নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী মনে করে : মুনাফিকরা সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে, অথচ তারা প্রচার-প্রপাগান্ডায় নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে পরিচয় দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যখনই তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি কোরো না, তারা উত্তরে বলে—আমরাই তো সংশোধনকারী ও শান্তিকামী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১)

(ads1)


ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী : ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুনাফিকরা ইসলাম ও সামাজিক শান্তির বিরোধিতা করে অশান্তি সৃষ্টি করে। কিন্তু নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে অনুভব করতে পারছে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সাবধান! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তাদের সে অনুভূতি নেই। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২)


মুমিনদের নির্বোধ মনে করে : মুনাফিকরা নিজেদের বুদ্ধিমান, ধূর্ত, চতুর ও চালাক মনে করে। আর মুমিন, মুত্তাকি ও নেককারদের নির্বোধ ও বোকা বলে মনে করে। অথচ আল্লাহ তাআলার কাছে তারাই বোকা ও নির্বোধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, অন্য লোকদের ন্যায় তোমরাও ঈমান আনো, তখন তারা বলে, আমরা কি সেই নির্বোধ লোকদের মতো ঈমান আনব? আসলে তারাই তো নির্বোধ, কিন্তু তাদের সে জ্ঞান নেই। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩)


উপহাসকারী : মুনাফিকরা মুমিন ও কাফির সবার সঙ্গে মেশে। মুমিনদের সঙ্গে মিশে মুমিনদের পক্ষের লোক বলে দাবি করে। আবার কাফিরদের সঙ্গে মিশে বলে আমরা তোমাদেরই লোক। মূলত কারো সঙ্গে তাদের আন্তরিক ও গভীর ভালোবাসা নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যখন তারা মুমিনদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আবার যখন নিরিবিলি তাদের শয়তানদের (কাফির নেতাদের সঙ্গে) মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমরা তাদের (মুমিনদের) সঙ্গে শুধু ঠাট্টা-তামাশা করছি মাত্র। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪)


অবাধ্যতার বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায় : মুনাফিকদের তাদের ভ্রষ্টতার জন্য তাত্ক্ষণিকভাবে শাস্তি না দেওয়ায় এবং দুর্নীতিপরায়ণ হয়েও পার্থিব জগতে সুখ-শান্তিতে কালাতিপাত করার সুযোগদানের ফলে তাদের ভ্রষ্টতা আরো গভীরে অনুপ্রবেশ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বস্তুত আল্লাহই তাদের সঙ্গে তামাশা করছেন (তাদের তামাশার জবাব দিচ্ছেন) এবং তাদের তাদের অবাধ্যতার বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ানোর অবকাশ দিচ্ছেন। ’ (সুরা বাকারা-১৬) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা কোনো বান্দাকে দেখতে পাও যে সে পাপী হওয়া সত্ত্বেও তার পছন্দনীয় জিনিস তাকে দেওয়া হচ্ছে এবং সে সুখ-শান্তিতে আছে, তবে মনে করবে তা তার জন্য পাকড়াও করার অবকাশ মাত্র। ’ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি শাস্তি না দিয়ে সুযোগ দিই পাপ বৃদ্ধির জন্য। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৮)

(ads2)


ভ্রষ্টতা ক্রয় করে : মুনাফিকরা দুনিয়ার লালসায় হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতাকে গ্রহণ করে। তারা হেদায়েতের ওপর ভ্রষ্টতাকে অগ্রাধিকার দেয়। মানুষ যে জিনিসকে ভালোবাসে ও পছন্দ করে, সে জিনিসই ক্রয় করে। মুনাফিকরা ঈমান বিক্রি করে নিফাককে ক্রয় করে—অর্থাৎ ঈমানের ওপর নিফাককে প্রাধান্য দেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা এমন লোক, যারা হেদায়েতের পরিবর্তে ভ্রষ্টতাকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের এ ব্যবসা লাভজনক হয়নি; আর তারা  হেদায়েতও পায়নি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬)


তারা বোঝে না যে দুনিয়ার ক্ষণিকের লাভের জন্য আখিরাতকে বিসর্জন দেওয়া ঠিক হবে না।


তারা আলোর কাছে আসে না : বিশ্বনবী (সা.) দ্বিনের আলো তথা কোরআন নিয়ে এসেছেন এবং সর্বত্র দ্বিনের আলো প্রজ্বলিত করেছেন। কিন্তু মুনাফিকরা সে আলো থেকে উপকৃত হতে পারেনি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের উদাহরণ হলো ওই ব্যক্তির মতো, যে (অন্ধকারে) আগুন জ্বালিয়েছে; কিন্তু যখন তা তার চারপাশ আলোকিত করল, তখন আল্লাহ তাদের আলো অপসারিত করে তাদের ঘোর অন্ধকারে ফেলে দিয়েছেন, যাতে তারা কিছুই দেখতে পায় না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭)


তারা বধির, মূক ও অন্ধ : মুনাফিকরা হক কথা শোনার ব্যাপারে বধির, তারা হক কথা শোনে না, সত্য কথা বলার ব্যাপারে মূক ও বোবা এবং সত্য কথা বলে না। সত্য ও ন্যায়ের পথে চলার ব্যাপারে অন্ধ। আল্লাহ তাআলা সুবিধাভোগীদের অবস্থা বর্ণনা করেন, ‘তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। তারা (হকের দিকে) আদৌ ফিরে আসবে না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮)


তারা সন্দেহপ্রবণ, দ্বিধাগ্রস্ত ও সুবিধাবাদী : মুনাফিকরা সুবিধা ভোগের জন্য ইসলামে দাখিল হয়; কিন্তু ইসলামের বিধিবিধান পালন ও ইসলামের আনুগত্যের কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘(তাদের উদাহরণ হলো) বর্ষণমুখর ঘন মেঘের মতো, যাতে রয়েছে ঘোর অন্ধকার, বজ্রের গর্জন ও বিদ্যুতের চমক; বজ্রধ্বনিতে মৃত্যুভয়ে তারা তাদের কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেয়; আল্লাহ এসব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী লোকদের সর্বদিক দিয়ে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। অর্থাৎ তারা আল্লাহর আয়ত্তের ভেতরে আছে, তিনি তাদের সম্পর্কে জানেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯)

(ads1)

সুসময়ের সঙ্গী : মুনাফিকরা মুসলমানদের সুখ-শান্তি দেখলে ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে। আর যখন মুসলমানরা দুখ-কষ্ট ও বিপদাপদে পতিত হয়, তখন নীরবে কেটে পড়ে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বিদ্যুৎ চমক যেন তাদের দৃষ্টিশক্তিকে ছিনিয়ে নেয়। যখনই তারা তাদের একটু আলো দেয়, তারা পথ চলে, আর যখনই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়, তখনই থমকে দাঁড়ায়। ’ অর্থাৎ সুসময়ে ইসলামের ছায়াতলে চলে আসে, আর যখন বিপদ দেখতে পায়, তখন সিটকে পড়ে এবং পূর্বের নিফাকিতে অবিচল ও অটল থাকে।


মিথ্যাবাদী : মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) সম্পর্কে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। ’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ১)


আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী : মুনাফিকরা মানুষদের আল্লাহর দিকে আসতে দেয় না। তারা নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করছে, তা খুবই মন্দ। ’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ২)


অহংকারী : মুনাফিকরা অহংকারী ও দাম্ভিক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি তাদের দেখবেন যে তারা অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৬)


প্রতারক : আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করছে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন একান্ত শিথিলভাবে লোকদেখানোর জন্য দাঁড়ায়। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয়, ওদিকেও নয়। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৩-১৪৪)


মুনাফিকদের আরো অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি কোরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব থেকে হেফাজত করুন, আমিন!

তাদের সব আচার-আচরণ ছিল মুসলমানের মতো। তারা মসজিদে যেত, নামাজ পড়ত এবং সব মোমিনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখত। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)  থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, যার মধ্যে চারটি স্বভাব বিদ্যমান সে মুনাফেক। সাহাবিরা জানতে চাইলেন তা কী? তিনি বললেন, যে মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, চুক্তি করে লঙ্ঘন করে, আর যখন ঝগড়া করে তখন অশ্লীল কথা বলে। (বুখারি) মুনাফেকরা মুখে ইসলামের পক্ষে কথা বললেও কখনো সত্যিকার অর্থে ইসলামকে ভালোবাসত না। তাদের অন্তরে ছিল ইসলামবিদ্বেষ। তারা ছিল সব সময় মিথ্যাবাদী। 


কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘মুনাফেকরা যখন তোমার কাছে আসে তখন তারা বলে হে মুহাম্মদ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি অবশ্যই আল্লাহর রসুল। হ্যাঁ আল্লাহও জানেন তুমি নিঃসন্দেহে তাঁর রসুল। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন মুনাফেকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ (সুরা মুনাফেকুন, আয়াত 


১) মুনাফিকের চরিত্রের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো সে মিথ্যাবাদী। সুতরাং মিথ্যা থেকে আমাদের সবাইকে বাঁচতে হবে। আমরা যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করি ও মিথ্যা বলার বদভ্যাস আছে তাদের এটি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, মিথ্যাই সব পাপের মূল। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, সে যা শোনে তা সবার কাছে প্রচার করে বেড়ায়।’ (মুসলিম) মুনাফেকের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য অঙ্গীকার রক্ষা না করা বা ওয়াদা ভঙ্গ করা। আমাদের সমাজে এ ধরনের লোকের অভাব নেই।



 বড় নেতা থেকে শুরু করে সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তর পর্যন্ত তা বিদ্যমান। আর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো আমাদের মধ্যে কেউ যখন কাউকে কোনো টাকাপয়সা ধার দিই বা কোনো লেনদেন করি, আমরা পাওনাদারদের পাওনা অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করতে গড়িমসি করি। তাকে হেনস্তা করি। এগুলো মুনাফেকের লক্ষণ। একজন মোমিন মুসলমান কখনো এ ধরনের কাজ করতে পারে না। তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হলো আমানতের খেয়ানত করা। 


আমি, আপনি প্রতিনিয়ত এ ধরনের কাজের সম্মুুখীন হই। কারও কাছে কোনো সম্পদ, অর্থ, বা সোনা-রুপা অর্থাৎ কোনো মূল্যবান সামগ্রী জমা রাখলে আমানতকারী তা ফিরিয়ে দিতে টালবাহানা করে কিংবা দেয় না। যাকে বলা হয় আমানতের খেয়ানত।

Post a Comment

0 Comments