কোরআন সূরা আল হাদীদ,বৈশিষ্ট্য গুলো সূরা আল হাদীদ,সূরা হাদীদ আরবি লেখা,সূরা হাদীদ ব্যাখ্যা,সুরা হাদীদ প্রত্যেক রোগের ওষুধ বিশেষ, সূরা হাদীদ বাংলা তাফসীর,

আজকের বিষয়: সূরা হাদীদ সকল তথ্য আল কোরআন ও হাদিসের আলোতে,পৃথিবীর জানা অজানা কিছু তথ্য আল হাদীদ আলমল ও ফজিলত, সূরা হাদীদ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা হাদীদ নাযিলের কারন গুলো কি কি ,কুরআন ৫৭ সূরা আল - হাদীদ ,

নামকরণ

সূরার ২৫ আয়াতের () বাক্যাংশ থেকে নাম গৃহীত হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

সর্ব সম্মাত মতে এটি মদীনায় অবতীর্ণ সূরা। এ সূরার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে মনে হয় সম্ভবত উহুদ যুদ্ধ ও হুদায়বিয়ার সন্ধির মধ্যবর্তী কোন এক সময় এ সূরা নাযিল হয়েছে। এটা সে সময়ের কথা যখন কাফেররা চারদিক থেকে ক্ষুদ্র এ ইসলামী রাষ্ট্রটিকে তাদের আক্রমণের লক্ষস্থল বানিয়েছিল এবং ঈমানদারদের ক্ষুদ্র একটি দল অত্যন্ত সহায় সম্বলহীন অবস্থায় সমগ্র আরবের শক্তির মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন। এ পরিস্থিতিতে ইসলাম তার অনুসারীদের কাছে শুধু জীবনের কুরবানীই চাচ্ছিলো না বরং সম্পদের কুরবানীর প্রয়োজনীয়তাও একান্তভাবে উপলব্ধি করেছিলো। এ ধরনের কুরবানী পেশ করার জন্য এ সূরায় অত্যন্ত জোরালো আবেদন জানানো হয়েছে। সূরার ১০ আয়াত এ অনুমানকে আরো জোরালো করছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যারা বিজয়ের পরে নিজেদের অর্থ সম্পদ খরচ করবে এবং আল্লাহর পথে লড়াই করবে তারা কখনো ঐ সব লোকদের সমমর্যাদা সম্পন্ন হতে পারবে না যারা বিজয় লাভেরপূর্বের জান ও মালের কুরবানী পেশ করবে। ইবনে মারদুইয়া কর্তৃক উদ্ধৃত হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীস একথাই সমর্থন করে। তিনি ————- আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেনঃ কুরআন নাযিলের শুরু থেকে ১৭বছর পর ঈমানদারের আলোড়নকারী এ আয়াতটি নাযিল হয়। এ হিসেব অনুসারে এর নাযিল হওয়ার সময় ৪র্থ ও পঞ্চম হিজরী সনের মধ্যবর্তী সময়ই এ সূরার নাযিল হওয়র সময়-কাল বলে নির্ধারিত হয়।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

এ সূরার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করার উপদেশ দান। যখন আরব জাহেলিয়াতের সাথে ইসলামের সিদ্ধান্তের সংগ্রাম চলছিলো, ইসলামের ইতিহাসের সে সংকটকালে মুসলমানদেরকে বিশেষভাবে আর্থিক কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করা এবং ঈমান যে শুধু মৌখিক স্বীকৃতি ও বাহ্যিক কিছু কাজকর্মের নাম নয় বরং আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য একনিষ্ঠ হওয়াই তার মূল চেতনা ও প্রেরণা, একথা তাদের মনে বদ্ধমূল করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই এ সূরা নাযিল করা হয়েছিল। যে ব্যক্তির মধ্যে এ চেতনা ও প্রেরণা অনুপস্থিত এবং আল্লাহ ও তার দীনের মোকাবিলায় নিজের প্রাণ, সম্পদ ও স্বার্থকে অধিকতর ভালবাসে তার ঈমানের দাবী অন্তসর শুন্য। আল্লাহর কাছে এ ধরনের ঈমানের কোন মূল্য ও মর্যাদা নেই।

এ উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম আল্লাহ তা’আলার গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে যাতে শ্রোতারা ভালভাবে উপলবদ্ধি করতে পারে যে, কোন মহান সত্তার পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বোধন করা হচ্ছে। তারপর নিম্নের বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাব পেশ করা হয়েছে।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


ঈমানের অনিবার্য দাবী হচ্ছে, ব্যক্তি যেন আল্লাহর পথে অর্থ -সম্পদ ব্যয় করতে গড়িমসি ও টালবাহানা না করে। এ ধরনের কাজ শুধু ঈমানের পরিপন্থীই নয়, বাস্তবতার বিচারেও ভুল। কেননা, এসব অর্থ -সম্পদ মূলত আল্লাহ তা’আলারই অর্থ -সম্পদ। তোমাদেরকে খলিফা হিসেবে তা ব্যবহার করার ইখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এ অর্থ-সম্পদই কাল অন্যদের হাতে ছিল, আজ তোমাদের হাতে আছে এবং ভবিষ্যতে অন্য কারো হাতে চলে যাবে। শেষমেশ তা বিশ্ব-জাহানের প্রতিটি জিনিসের মালিক আল্লাহর কাছেই থেকে যাবে। এ সম্পদের কোন অংশ তোমাদের কাজে লাগলে কেবল সেই অংশই লাগতে পারে যা তোমাদের অধিকারে থাকা কালে তোমরা আল্লাহর কাজে ব্যয় করবে।

আল্লাহর পথে জান ও মালের কুরবানী পেশ করা যদিও সর্বাবস্থায়ই সম্মানজনক কাজ। কিন্তু এসব ত্যাগ ও কুরবানীর মূল্য ও মর্যাদা অবস্থার নাজুকতা দিয়ে নিরূপিত হয়। এমন সময় আসে যখন যে, কুফরী শক্তি অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে এবং সর্বক্ষণ এমন একটা আশংকা বিদ্যমান থাকে যে, কুফরীর সাথে সংঘাতে ইসলাম হয়তো পরাভূত হয়ে পড়বে। আবার এমন একটা সময়ও আসে যখন কুফর ও ইসলামের দ্বন্দে শক্তির ভারসাম্য ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং ন্যায় ও সত্যের দুশমনের মোকিবেলায় ঈমানের অনুসারীরা বিজয়লাভ করতে থাকে। গুরুত্বের দিক দিয়ে এ দুটি পরিস্থিতি সমান নয়। তাই এ ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে যে ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করা হয় মূল্যের দিক দিয়ে তাও সমান নয়। ইসলাম যখন দুর্বল তখন তাকে সমুন্নত ও বিজয়ী করার জন্য যারা প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা ও অর্থ সম্পদ অকাতরে ব্যয় করবে তারা তাদের সমসর্যাদা লাভ করতে পারবে না।

ন্যায় ও সত্যের পথে যতটা সম্পদ ব্যয় করা হবে আল্লাহর কাছে তা ঋণ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহ ঐ সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে ফেরত দেবেন শুধু তাই নয় নিজের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুরস্কারও দান করবেন।

আখেরাত সেসব ঈমানদার কেবল নূর লাভ করবে যারা আল্লাহর পথে তাদের অর্থ-সম্পদ ব্যয় করেছে। মুনাফিকরা যারা দুনিয়াতে নিজেদের স্বার্থই কেবল রক্ষা করেছে এবং ন্যায় ও সত্য বিজয়ী হচ্ছে, না বাতিল বিজয়ী হচ্ছে তার কোন পরোয়াই করেনি। দুনিয়ার এ জীবনে তারা ঈমানদারদের ঈমানদারদের সাথেই মিলে মিশে থাকলেও আখেরাতে তাদেরকে ঈমানদারদের থেকে আলাদা করে দেয়া হবে। তারা ‘নূর’ থেকে বঞ্চিত হবে এবং কাফেরদের সাথে তাদের হাশর হবে।

যেসব আহলে কিতাবের গোটা জীবন দুনিয়া পূজায় অতিবাহিত হয়েছে এবং যাদের মন দীর্ঘদিনের গাফলতি ও অমনোযোগিতার কারণে, পাথরের ন্যায় কঠোর হয়ে গিয়েছে মুসলমানদের তাদের মত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। সে কেমন ঈমানদার আল্লাহর কথা শুনে যার হৃদয়ের বিগলিত হয় না এবং তাঁর নাযিলকৃত সত্য বিধানের সামনে মাথা নত করে না।

কেবল সেই সব ঈমানদারই আল্লাহর নিকট ‘সিদ্দিক’ ও শহীদ বলে গণ্য যারা কোন রকম প্রদর্শনীর মনোভাব ছাড়াই একান্ত আন্তরিকতা ও সততার সাথে নিজেদের অর্থ-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে।

দুনিয়ার জীবন মাত্র কয়েক দিনের চাকচিক্য এবং ধোয়ার উপকরণ। এখানকার খেল তামাসা, এখানকার আনন্দ ও আকর্ষণ এখানকার সৌন্দর্য ও সাজ-সজ্জা, এখাকার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গর্ব ও অহংকার এবং এখাকার ধন সম্পদ ও ঐশ্বর্যের ব্যপারে একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা সাধনা সব কিছুই অস্থায়ী। এর উপমা দেয়া যায় সেই শস্য ক্ষেত্রের সাথে যা প্রথম পর্যায়ে সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। তারপর বিবর্ণ হয়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করে এবংসর্বশেষ ভূষিতে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের জীবন হচ্ছে স্থায়ী জীবন যেখানে সব কাজের বড় বড় ফলাফল পাওয়া যাবে। তোমাদের যদি প্রতিযোগিতামূলকভাবে কিছু করতে হয় তাহলে জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য চেষ্টা করো। পৃথিবীতে আরাম -আয়েশ ও বিপদ আপদ যাই আসে তা আল্লাহ তা’আলার পর্ব লিখিত সিদ্ধান্ত অনুসারেই আসে। একজন ঈমানদারের ভূমিকা হওয়া উচিত বিপদ আপদ আসলে সাহস না হারানো এবং আরাম আয়েশ ও সুখ-শান্তি আসলে গর্ব প্রকাশ না করা । একজন মুনাফিক বা কাফেরের আচরণ হচ্ছে আল্লাহ যদি তাকে নিয়ামত দান করেন তাহলে সে গর্বে মেতে উঠে, অহংকার প্রকাশ করতে থাকে এবং নিয়ামত দাতা আল্লাহর কাজে ব্যায় করতে নিজেও সংকীর্ণতার পরিচয় দেয় এবং অন্যদেরকেও কার্পণ্য করতে পরামর্শ দেয়।

আল্লাহ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ, কিতাব এবং ন্যায় বিচারের ভারসাম্যপূর্ণ মানদণ্ড সহকারে তাঁর রসূল পাঠিয়েছেন, যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে আর তার সাথে লোহাও নাযিল করছেন যাতে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা এবং বাতিলের মাথা অবনত করার জন্য শক্তি ব্যবহার করা যায়। এভাবে এভাবে আল্লাহ দেখতে চান মানুষের মধ্যে এমন লোক কারা যারা তাঁর দীনের সহায়তা ও সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হয় এবং সেজন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে। তোমাদের নিজেদের উন্নতি ও মর্যাদার জন্য আল্লাহ এই সুযোগসমূহ সৃষ্টি করেছেন। অন্যথায় আল্লাহ তাঁর কাজের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নন।

আল্লাহর পক্ষ থেকে ইতিপূর্বেও একের পর এক নবী রসূলগণ এসেছেন। তাদের আহবানে কিছু লোক সঠিক পথে ফিরে এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ লোকই পাপাচারী রয়ে গিয়েছে। তারপর ঈসা আলাইহিস সালাম এসেছেন। তাঁর শিক্ষায় মানুষের মধ্যে বহু নৈতিক গুণাবলী সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাঁর ‘উম্মাত’ বৈরাগ্যবাদের বিদআত অবলম্বন করে।

এখন আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে পাঠিয়েছেন। যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহকে ভয় করে জীবন যাপন করবে আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতের দ্বিগুণ অংশ দেবেন এবং তাদেরকে এমন ‘নূর’ দান করবেন যার সাহায্যে তারা দুনিয়ার জীবনে পদে পদে বাঁকা পথসমূহের মধ্যে সোজা পথটি ষ্পষ্ট দেখে চলতে পারবে। আহলে কিতাব নিজেদেরকেও যদিও আল্লাহর রহমতের ঠিকাদার মনে করে থাকে। কিন্তু আল্লাহর রহমত তাঁর নিজেরই হাত আছে। যাকে ইচ্ছা তাকে এই রহমত ও অনুগ্রহ দান করার ইখতিয়ার তার আছে। এ হচ্ছে এ সূরায় সুবিন্যস্ত ও ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত বিষয়বস্তুর সার সংক্ষেপ।


আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  


৫৭ . আল হাদীদ - ( الحـديد ) | লোহা
মাদানী, মোট আয়াতঃ ২৯

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ

سَبَّحَ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

ছাব্বাহা লিল্লা-হি মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়া হুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে, তা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে। ১ তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবাই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি শক্তিধর; প্রজ্ঞাময়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ্ র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

তাফসীরঃ
১. দেখুন সূরা বনী ইসরাঈল (১৭ : ৪৪)।

لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

লাহূমুলকুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ইউহঈ ওয়া ইউমীতু ওয়া হুওয়া ‘আলাকুল্লি শাইয়িন কাদীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তারই। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি প্রতিটি বিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই ; তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান ; তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

হুওয়াল আওওয়ালুওয়াল আ-খিরু ওয়াজ্জা-হিরুওয়াল বা-তিনু ওয়া হুওয়া বিকুল্লি শাইয়িন ‘আলীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আদি, তিনিই অন্ত এবং তিনিই ব্যক্ত ও তিনিই গুপ্ত। ২ তিনি সবকিছু পরিপূর্ণভাবে জানেন।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই আদি, তিনিই অন্ত; তিনিই ব্যক্ত ও তিনিই গুপ্ত এবং তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।

তাফসীরঃ
২. আল্লাহ তাআলা আদি। অর্থাৎ তার আগে কোন কিছুই ছিল না। তাঁর নিজের কোন শুরু নেই। তিনি সর্বদাই ছিলেন। আর তিনি ‘অন্ত’ এই অর্থে যে, যখন বিশ্ব-জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন বাকি থাকবে কেবল তাঁরই সত্তা। তাঁর নিজের কোন শেষ নেই। তিনি সর্বদাই থাকবেন। তিনি ‘ব্যক্ত’। অর্থাৎ তাঁর অস্তিত্ব, তাঁর শক্তি ও তাঁর হেকমতের নিদর্শন বিশ্ব-জগতের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। জগতের প্রতিটি জিনিস সাক্ষ্য দেয়, তিনি আছেন। আর তিনি ‘গুপ্ত’ এই অর্থে যে, তিনি অস্তিমান হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার এ চোখ দিয়ে তাকে দেখা যায় না। এভাবে তিনি ব্যক্তও এবং গুপ্তও।

هُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۚ يَعْلَمُ مَا يَلِجُ فِي الْأَرْضِ وَمَا يَخْرُجُ مِنْهَا وَمَا يَنزِلُ مِنَ السَّمَاءِ وَمَا يَعْرُجُ فِيهَا ۖ وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

হুওয়াল্লাযীখালাকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদাফী ছিত্তাতি আইয়া-মিন ছু ম্মাছতাওয়া‘আলাল ‘আরশি ইয়া‘লামুমা-ইয়ালিজূফিল আরদিওয়ামা-ইয়াখরুজূমিনহা-ওয়ামাইয়ানঝিলুমিনাছ ছামাই ওয়ামা-ওয়া‘রুজূফীহা- ওয়া হুওয়া মা‘আকুম আইনামাকুনতুম ওয়াল্লা-হু বিমা-তা‘মালূনা বাসীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশে ইসতিওয়া ৩ গ্রহণ করেছেন। তিনি এমন প্রতিটি জিনিস জানেন, যা ভূমিতে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে বের হয় এবং জানেন এমন প্রতিটি জিনিস, যা আকাশ থেকে নেমে আসে এবং যা তাতে উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তোমরা যা-কিছুই কর, তা তিনি দেখেন।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই ছয় দিবসে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ; এরপর র্আশে সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা কিছু ভ‚মিতে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা হতে বের হয় এবং আকাশ হতে যা কিছু নামে ও আকাশে যা কিছু উত্থিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক না কেন-তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ্ তা দেখেন।

তাফসীরঃ
৩. এর ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আরাফ (৭ : ৫৪), সূরা ইউনুস (১০ : ৩) ও সূরা রাদ (১৩ : ২)। কুরআন মাজীদ এ বিষয়টা সূরা তোয়াহা (২০ : ৫), সূরা ফুরকান (২৫ : ৫৯), সূরা তানযীল আস-সাজদা (৩২ : ৪) ও সূরা হা-মীম আস-সাজদায় (৪১ : ১১)-ও বর্ণনা করেছে।

لَّهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ

লাহূমুলকুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়া ইলাল্লা-হি তুর জা‘উল উমূর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব তাঁরই এবং সমস্ত বিষয় আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব তাঁরই। সবকিছু তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব তাঁরই এবং আল্লাহ্ র ই দিকে সমস্ত বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে।

يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ ۚ وَهُوَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

ইঊলিজূল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া ইঊলিজূন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়া হুওয়া ‘আলীমুম বিযাতিসসুদূ র।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তিনি রাতকে দিনের ভেতর প্রবেশ করান এবং দিনকে প্রবেশ করান রাতের ভেতর ৪ এবং মনের মধ্যকার সবকিছু সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে প্রবিষ্ট করেন রাত্রিতে। তিনি অন্তরের বিষয়াদি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই রাত্রিকে প্রবেশ করান দিবসে এবং দিবসকে প্রবেশ করান রাত্রিতে, এবং তিনি অন্তর্যামী।

তাফসীরঃ
৪. সূরা আলে ইমরানে এর ব্যাখ্যা চলে গেছে (৩ : ২৭)। আরও দেখুন সূরা হজ্জ (২২ : ৬১), সূরা লুকমান (৩১ : ২৯) ও সূরা ফাতির (৩৫ : ১৩)।

آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ ۖ فَالَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَأَنفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيرٌ

আ-মিনূবিল্লা-হি ওয়া রাছূলিহী ওয়া আনফিকূমিম্মা-জা‘আলাকুম মুছতাখলাফীনা ফীহি ফাল্লাযীনা আ-মানূমিনকুম ওয়া আনফাকূলাহুম আজরুন কাবীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান রাখ এবং আল্লাহ যে সম্পদে তোমাদেরকে প্রতিনিধি ৫ করেছেন, তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং (আল্লাহর পথে) ব্যয় করেছে, তাদের জন্য আছে মহা প্রতিদান।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা হতে ব্যয় কর। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে আছে মহাপুরস্কার।

তাফসীরঃ
৫. ধন-দৌলতে মানুষকে প্রতিনিধি বানানোর কথা বলে দু’টি মহা সত্যের দিকে ইশারা করা হয়েছে। (এক) ধন-দৌলত যা-ই হোক না কেন, তার প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলাই। তিনিই তা সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে তা দান করেছেন তাদের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য। তাই মানুষ এর মালিকানায় আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি। মানুষ যখন এক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধি তখন তার কর্তব্য আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা ও হুকুম মোতাবেক তা ব্যয় করা। (দুই) মানুষ যে সম্পদই অর্জন করে, তা তার আগে অন্য কারও মালিকানায় থাকে। সেখান থেকে ক্রয়, উপহার বা উত্তরাধিকার সূত্রে তা তার কাছে এসেছে। এ হিসেবে সে তাতে তার প্রাক্তন মালিকের স্থলাভিষিক্ত। এর দ্বারা বোঝানো হচ্ছে, এ সম্পদ যেমন তোমার পূর্ববর্তী মালিকের কাছে স্থায়ী হয়ে থাকেনি, বরং তার কাছ থেকে তোমার কাছে চলে এসেছে, তেমনি তোমার কাছেও তা চিরদিন থাকবে না; বরং অন্য কারও হাতে চলে যাবে। যখন এ সম্পদ চিরকাল তোমার কাছে থাকার নয়, অন্য কারও না কারও কাছে অবশ্যই চলে যাবে, তখন তোমার উচিত এমন কারও কাছেই তা হস্তান্তর করা, যাকে তা দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা হুকুম করেছেন।

وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۙ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوا بِرَبِّكُمْ وَقَدْ أَخَذَ مِيثَاقَكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

ওয়ামা-লাকুম লা-তু’মিনূনা বিল্লা-হি ওয়াররাছূলুইয়াদ‘ঊকুম লিতু’মিনূবিরাব্বিকুম ওয়া কাদ আখাযা মীছা-কাকুম ইন কুনতুম মু’মিনীন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমাদের এমন কী কারণ আছে, যদ্দরুন আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে না, ৬ অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান রাখার জন্য আহ্বান করছে এবং তোমাদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে ৭ যদি বাস্তবিকই তোমরা মুমিন হও। ৮

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছ না, অথচ রসূল তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার দাওয়াত দিচ্ছেন? আল্লাহ তো পূর্বেই তোমাদের অঙ্গীকার নিয়েছেন-যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহ্তে ঈমান আন না ? অথচ রাসূল তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনতে আহ্বান করতেছে এবং আল্লাহ্ তোমাদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

তাফসীরঃ
৬. কোন কোন মুফাসসির বলেন, এটা বলা হচ্ছে কাফেরদেরকে লক্ষ করে। কিন্তু অনেকের মতে মুমিনদেরকেই লক্ষ করে বলা হচ্ছে। অর্থাৎ এমন মুমিনদেরকে, যাদের ঈমানে কোন রকমের দুর্বলতা লক্ষ করা যাচ্ছিল, যদ্দরুন তারা আল্লাহ তাআলার পথে অর্থ ব্যয় করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। আয়াতের পূর্বাপর লক্ষ করলে দ্বিতীয় মতই বেশি সঠিক মনে হয়।

৭. এ প্রতিশ্রুতি গ্রহণের কর্তা যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হন, তবে বিভিন্ন সময়ে তিনি আনুগত্য প্রদর্শন, আল্লাহ তাআলার পথে অর্থ ব্যয় এবং অন্যান্য ঈমানী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম থেকে যে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলেন তার প্রতি ইশারা করা হয়েছে। আর যদি এর কর্তা আল্লাহ তাআলা হন, তবে তিনি মানব প্রকৃতির ভেতর ঈমানের যে বীজ নিহিত রেখেছেন এবং বিশ্ব জগতে আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও কুদরতের যে নিদর্শনাবলী উম্মুক্ত করে রেখেছেন, যার প্রতি মুক্তমনে চিন্তা করলে ঈমানের অনুপেক্ষণীয় আহ্বান উপলব্ধি করা যায়, তাকেই ‘প্রতিশ্রুতি গ্রহণ’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া রূহানী জগতে আল্লাহ তাআলা মানবাÍাদের থেকে যে তাঁর ‘রাবূবিয়াত’ সম্বন্ধে স্বীকৃতি আদায় করেছিলেন, যার কিছু না কিছু আছর সকল মানুষের অন্তরেই বিদ্যমান আছে, তার প্রতিও ইশারা হতে পারে (-অনুবাদক, রূহুল মাআনী ও তাফসীরে উসমানী অবলম্বনে)।

৮. অর্থাৎ তোমরা যদি ঈমান আনতে ইচ্ছুক হও বা যারা ঈমান এনেছো তারা তাতে অবিচলিত থাকার গরজ বোধ কর, তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আহ্বান এবং আল্লাহ তাআলা বা তদীয় রাসূল গৃহীত প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সে পথে কোন জিনিস তোমাদের জন্য বাধা হতে পারে এবং তাতে আলস্য ও গড়িমসি করার কী কারণ থাকতে পারে? (-অনুবাদক, প্রাগুক্ত)

هُوَ الَّذِي يُنَزِّلُ عَلَىٰ عَبْدِهِ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ لِّيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۚ وَإِنَّ اللَّهَ بِكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ

হুওয়াল্লাযী ইউনাঝঝিলু‘আলা-‘আবদিহীআ-য়া-তিম বাইয়িনা-তিল লিইউখরিজাকুম মিনাজ্জুলুমা-তি ইলান নূরি ওয়া ইন্নাল্লা-হা বিকুম লারাঊফুর রাহীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহই তো নিজ বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেন, তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকে বের করে আনার জন্য। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই তাঁর দাসের প্রতি প্রকাশ্য আয়াত অবতীর্ণ করেন, যাতে তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোকে আনয়ন করেন। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াত অবতীর্ণ করেন, তোমাদেরকে অন্ধকার হতে আলোকে আনবার জন্যে। আল্লাহ্ তো তোমাদের প্রতি করুণাময়, পরম দয়ালু।

১০

وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

ওয়ামা-লাকুম আল্লা-তুনফিকূফী ছাবীলিল্লা-হি ওয়া লিল্লা-হি মীরা-ছু ছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি লা-ইয়াছতাবী মিনকুম মান আনফাকা মিন কাবলিল ফাতহিওয়া কাতালা উলাইকা আ‘জামুদারাজাতাম মিনাল্লাযীনা আনফাকূমিম বা‘দুওয়া কা-তালূ ওয়া কুল্লাওঁ ওয়া‘আদাল্লা-হুল হুছনা- ওয়াল্লা-হু বিমা-তা‘মালূনা খাবীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কী কারণে তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে না, অথচ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত মীরাছ আল্লাহরই জন্য। তোমাদের মধ্যে যারা (মক্কা) বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে তারা (পরবর্তীদের) সমান নয়। মর্যাদায় তারা সেই সকল লোক অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, যারা (মক্কা বিজয়ের) পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। ৯ তবে আল্লাহ কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সকলকেই, তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কিসে বাধা দেয়, যখন আল্লাহই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উত্তরাধিকারী? তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে, সে সমান নয়। এরূপ লোকদের মর্যদা বড় তাদের অপেক্ষা, যার পরে ব্যয় করেছে ও জেহাদ করেছে। তবে আল্লাহ উভয়কে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা আল্লাহ্ র পথে কেন ব্যয় করবে না ? আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহ্ র ই। তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে, তারা এবং পরবর্তীরা সমান নয়। তারা মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ এদের অপেক্ষা, যারা পরবর্তী কালে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ্ উভয়ের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তোমরা যা কর আল্লাহ্ তা সবিশেষ অবহিত।

তাফসীরঃ
৯. মক্কা বিজয় (০৮ হিজরী)-এর আগে মুমিনদের লোক সংখ্যা ও যুদ্ধসামগ্রী কম ছিল এবং শত্রুদের জনবল ও অস্ত্রবল ছিল অনেক বেশি। যে কারণে তখন যারা জিহাদ করেছেন ও আল্লাহ তাআলার পথে অর্থ ব্যয় করেছেন, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষাও বেশি ছিল। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সওয়াব ও সম্মানও বেশি দিয়েছেন। মক্কা বিজয়ের পর অবস্থা ছিল এর বিপরীত। তখন মুসলিমদের লোক সংখ্যা ও যুদ্ধসামগ্রী বৃদ্ধি পায় এবং শত্রু দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজেই মক্কা বিজয়ের পর যারা জিহাদ ও দান-সদকা করেছেন, তাদের এত বড় ত্যাগ-তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়নি। কাজেই তারা সেই স্তরের মর্যাদা লাভ করতে পারেননি। তবে পরের বাক্যেই আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, কল্যাণ তথা জান্নাতের নি‘আমত লাভ করবে উভয় দলই।

১১

مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ

মান যাল্লাযী ইউকরিদু ল্লা-হা কারদান হাছানান ফাইউদা-‘ইফাহূলাহূওয়া লাহূ আজরুন কারীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কে আছে, যে আল্লাহকে ঋণ দেবে, উত্তম ঋণ? ১০ তাহলে তিনি দাতার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহা প্রতিদান।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কে সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে উত্তম ধার দিবে, এরপর তিনি তার জন্যে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কে আছে যে আল্লাহ্কে দিবে উত্তম ঋণ ? তা হলে তিনি বহু গুণে এটাকে বৃদ্ধি করবেন তার জন্যে এবং তার জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।

তাফসীরঃ
১০. আল্লাহ তাআলার কোন অর্থ-সম্পদের দরকার নেই। কাজেই কারও থেকে তার ঋণ নেওয়ার কোনও প্রশ্ন আসে না। তিনি সকল প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে। কিন্তু মানুষ যা-কিছু দান- খয়রাত করে কিংবা জিহাদ ও দীনী কাজে অর্থ ব্যয় করে, আল্লাহ তাআলা নিজ কৃপায় তাকে ঋণ নামে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা যেই গুরুত্বের সাথে ঋণ পরিশোধ করে আল্লাহ তাআলাও সেই রকম গুরুত্বের সাথে দাতাকে দুনিয়া ও আখেরাতে উত্তম বদলা দান করেন। উত্তম ঋণ দ্বারা সেই অর্থ ব্যয়কে বোঝানো হয়েছে, যা পরিপূর্ণ ইখলাসের সাথে কেবল আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য সম্পাদন করা হয়, মানুষকে দেখানোর জন্য করা হয় না। সূরা বাকারা (২ : ২৪৫) ও সূরা মায়েদায় (৫ : ১২)-ও এভাবে উত্তম ঋণের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।

১২

يَوْمَ تَرَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ يَسْعَىٰ نُورُهُم بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِم بُشْرَاكُمُ الْيَوْمَ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

ইয়াওমা তারাল মু’মিনীনা ওয়াল মুমিনা-তি ইয়াছ‘আ-নূরুহুম বাইনা আইদীহিম ওয়া বিআইমানিহিম বুশরা-কুমুল ইয়াওমা জান্না-তুন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খা-লিদীনা ফীহা- যা-লিকা হুওয়াল ফাওঝুল ‘আজীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন তুমি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে দেখবে, তাদের নূর তাদের সামনে ও তাদের ডান দিকে ধাবিত হচ্ছে ১১ (এবং তাদেরকে বলা হবে,) তোমাদের জন্য আজ এমন সব উদ্যানের সুসংবাদ, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে, যাতে তোমরা সর্বদা থাকবে। এটাই মহা সাফল্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন তুমি দেখবে মু’মিন নর-নারীগণকে তাদের সম্মুখভাগে ও দক্ষিণ পার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটিতে থাকবে। বলা হবে, ‘আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে, এটাই মহাসাফল্য।’

তাফসীরঃ
১১. খুব সম্ভব এটা সেই সময়ের কথা যখন মানুষ পুলসিরাত পার হতে শুরু করবে। তখন প্রত্যেকের ঈমান তার সামনে আলো হয়ে পথ দেখাবে।

১৩

يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ لِلَّذِينَ آمَنُوا انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ قِيلَ ارْجِعُوا وَرَاءَكُمْ فَالْتَمِسُوا نُورًا فَضُرِبَ بَيْنَهُم بِسُورٍ لَّهُ بَابٌ بَاطِنُهُ فِيهِ الرَّحْمَةُ وَظَاهِرُهُ مِن قِبَلِهِ الْعَذَابُ

ইয়াওমা ইয়াকূলুল মুনা-ফিকূনা ওয়াল মুনা-ফিকা-তুলিল্লাযীনা আ-মানুনজুরূনানাকতাবিছ মিন নূরিকুম কীলারজি‘ঊ ওয়া রাআকুম ফালতামিছূনূরান ফাদুরিবা বাইনাহুম বিছূরিল লাহূবা-ব বা-তিনুহূফীহির রাহমাতুওয়া জা-হিরুহূমিন কিবালিহিল ‘আযা-ব।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে দিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীগণ মুমিনদেরকে বলবে, আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে তোমাদের নূর থেকে আমরাও কিছুটা আলো গ্রহণ করতে পারি। ১২ তাদেরকে বলা হবে, তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও, তারপর নূর তালাশ কর। ১৩ তারপর তাদের মাঝখানে স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর। তার মধ্যে থাকবে একটি দরজা, যার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে শাস্তি।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেদিন মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা মু’মিনদেরকে বলবে, ‘তোমরা আমাদের জন্যে একটু থাম, যাতে আমরা তোমাদের জ্যোতির কিছু গ্রহণ করতে পারি। বলা হবে, ‘তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও ও আলোর সন্ধান কর।’ এরপর উভয়ের মাঝামাঝি স্থাপিত হবে একটি প্রাচীর যাতে একটি দরজা থাকবে, এর অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বহির্ভাগে থাকবে শাস্তি।

তাফসীরঃ
১২. অর্থাৎ কে আলো পাবে আর কে পাবে না, সে ফায়সালা পিছনে হয়ে গেছে। কাজেই পিছনে গিয়ে আলো পাওয়ার জন্য আবেদন কর।

১৩. মুনাফিকরা দুনিয়ায় যেহেতু নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করত, তাই আখেরাতেও তারা প্রথম দিকে মুসলিমদের সঙ্গ নেবে, কিন্তু প্রকৃত মুসলিমগণ যখন দ্রুতবেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, তখন তাদের সঙ্গে তাদের নূরও সামনে চলে যাবে। ফলে মুনাফেকরা পিছনে অন্ধকারে পড়ে যাবে। তখন তারা নিজেদের বাহ্যিক ইসলামের দোহাই দিয়ে অগ্রগামী মুসলিমদেরকে ডাক দিয়ে বলবে, আমাদের জন্য একটু অপেক্ষা কর, যাতে তোমাদের নূর দ্বারা আমরাও উপকার লাভ করতে পারি।

১৪

يُنَادُونَهُمْ أَلَمْ نَكُن مَّعَكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ وَلَـٰكِنَّكُمْ فَتَنتُمْ أَنفُسَكُمْ وَتَرَبَّصْتُمْ وَارْتَبْتُمْ وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ حَتَّىٰ جَاءَ أَمْرُ اللَّهِ وَغَرَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ

ইউনা-দূ নাহুম আলাম নাকুম মা‘আকুম কা-লূবালা-ওয়ালা-কিন্নাকুম ফাতানতুম আনফুছাকুম ওয়া তারাব্বাসতুম ওয়ারতাবতুম ওয়া গাররাতকুমুল আমা-নিইয়ুহাত্তা-জাআ আমরুল্লা-হি ওয়া গাররাকুম বিল্লা-হিল গারূর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না? মুমিনগণ বলবে, হা, ছিলে বটে, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদে ফেলেছ। তোমরা অপেক্ষা করছিলে, ১৪ সন্দেহে নিপতিত ছিলে এবং মিথ্যা আশা তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছিল ১৫ যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম আসল। আর সেই মহা প্রতারক (অর্থাৎ শয়তান) তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করে যাচ্ছিল।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#b50404)

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হঁ্যা কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মুনাফিকরা মু’মিনদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করবে, ‘আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না ?’ তারা বলবে, ‘হাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। তোমরা প্রতীক্ষা করেছিলে, সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং অলীক আকাক্সক্ষা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছিল, অবশেষে আল্লাহ্ র হুকুম এলো। আর মহাপ্রতারক তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল আল্লাহ্ সম্পর্কে।’

তাফসীরঃ
১৪. অর্থাৎ মুনাফেকদের আন্তরিক আশা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল মুসলিমগণ যেন শত্রুদের হাতে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত হয় আর এভাবে ইসলাম চিরতরে নির্মূল হয়ে যায় (নাউযুবিল্লাহ)।

১৫. অর্থাৎ অপেক্ষায় ছিলে কখন মুসলিমদের উপর কোন মুসিবত আসবে আর সেই অবকাশে তোমরা তোমাদের কুফর প্রকাশ করবে।

১৫

فَالْيَوْمَ لَا يُؤْخَذُ مِنكُمْ فِدْيَةٌ وَلَا مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ مَأْوَاكُمُ النَّارُ ۖ هِيَ مَوْلَاكُمْ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

ফাল ইয়াওমা লা-ইউ’খাযুমিনকুম ফিদ ইয়াতুওঁ ওয়ালা-মিনাল্লাযীনা কাফারূ মা’ওয়াকুমুন্না-রু হিয়া মাওলা-কুম ওয়াবি’ছাল মাসীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আজ তোমাদের থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না এবং তাদের থেকেও না, যারা (প্রকাশ্যে) কুফর অবলম্বন করেছিল। তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তা-ই তোমাদের আশ্রয়স্থল এবং তা অতি মন্দ পরিণাম।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপন গ্রহণ করা হবে না। এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয়। তোমাদের সবার আবাস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তন স্থল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘আজ তোমাদের নিকট হতে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না এবং যারা কুফরী করেছিল তাদের নিকট হতেও নয়। জাহান্নামই তোমাদের আবাসস্থল, এটাই তোমাদের যোগ্য; কত নিকৃষ্ট এই পরিণাম!’

১৬

۞ أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ آمَنُوا أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلُ فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

আলাম ইয়া’নি লিল্লাযীনা আ-মানূআন তাখশা‘আ কুলূবুহুম লিযিকরিল্লা-হি ওয়ামানাঝালা মিনাল হাক্কি ওয়ালা-ইয়াকূনূকাল্লাযীনা ঊতুল কিতা-বা মিন কাবলুফাতালা ‘আলাইহিমুল আমাদুফাকাছাত কুলূবুহুম ওয়া কাছীরুম মিনহুম ফা-ছিকূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা ঈমান এনেছে, তাদের জন্য কি এখনও সেই সময় আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হবে? এবং তারা তাদের মত হবে না, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল অতঃপর যখন তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, তখন তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেল এবং (আজ) তাদের অধিকাংশই অবাধ্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নাই, আল্লাহ্ র স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে ? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত যেন এরা না হয়-বহু কাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তকরণ কঠিন হয়ে পড়েছিল। এদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।

১৭

اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

ই‘লামূআন্নাল্লা-হা ইউহয়িল আরদা বা‘দা মাওতিহা- কাদ বাইয়ান্না-লাকুমুল আ-য়াতি লা‘আল্লাকুম তা‘কিলূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
জেনে রেখ, আল্লাহই ভূমিকে তার মৃত্যুর পর জীবন দান করেন। ১৬ আমি তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা বুদ্ধিকে কাজে লাগাও।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্যে আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি, যাতে তোমরা বোঝ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জেনে রাখ, আল্লাহ্ই ধরিত্রীকে এর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। আমি নিদর্শনগুলি তোমাদের জন্যে বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।

তাফসীরঃ
১৬. অর্থাৎ যে সকল মুসলিমের দ্বারা কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে গেছে এবং তারা ঈমানের সব দাবি পূরণ করতে পারেনি, তাদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। আল্লাহ তাআলা যেভাবে মৃত ভূমিকে পুনর্জীবিত করেন, তেমনিভাবে তিনি তাওবাকারীদেরকেও তাদের তাওবা কবুল করে নতুন জীবন দান করেন।

১৮

إِنَّ الْمُصَّدِّقِينَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيمٌ

ইন্নাল মুসসাদ্দিকীনা ওয়াল মুসসাদ্দিকা-তি ওয়া আকরাদুল্লা-হা কারদান হাছানাইঁ ইউদা-‘আফুলাহুম ওয়া লাহুম আজরুন কারীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
নিশ্চয়ই যারা দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে ঋণ দিয়েছে, উত্তম ঋণ, তাদের জন্য তা (অর্থাৎ সেই দান) বহু গুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং তাদের জন্য আছে সম্মানজনক প্রতিদান।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
নিশ্চয় দানশীল ব্যক্তি ও দানশীলা নারী, যারা আল্লাহকে উত্তমরূপে ধার দেয়, তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
দানশীল পুরুষগণ ও দানশীল নারীগণ এবং যারা আল্লাহ্কে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেওয়া হবে বহু গুণ বেশি এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।

১৯

وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ أُولَـٰئِكَ هُمُ الصِّدِّيقُونَ ۖ وَالشُّهَدَاءُ عِندَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ

ওয়াল্লাযীনা আ-মানূবিল্লা-হি ওয়া রুছুলিহীউলাইকা হুমুসসিদ্দীকূনা ওয়াশশুহাদাউ ‘ইনদা রাব্বিহিম লাহুম আজরুহুম ওয়া নূরুহুম ওয়াল্লাযীনা কাফারূ ওয়াকাযযাবূবিআ-য়া-তিনাউলাইকা আসহা-বুল জাহীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে, তারাই তাদের প্রতিপালকের কাছে সিদ্দীক ও শহীদ। ১৭ তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিদান ও তাদের নূর। আর যারা কুফর অবলম্বন করেছে এবং আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে, তারাই জাহান্নামবাসী।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তারাই তাদের পালনকর্তার কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে বিবেচিত। তাদের জন্যে রয়েছে পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কাফের ও আমার নিদর্শন অস্বীকারকারী তারাই জাহান্নামের অধিবাসী হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলে ঈমান আনে, তারাই তাদের প্রতিপালকের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ। তাদের জন্যে রয়েছে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার ও জ্যোতি এবং যারা কুফরী করেছে ও আমার নিদর্শন অস্বীকার করেছে, এরাই জাহান্নামের অধিবাসী।

তাফসীরঃ
১৭. ‘সিদ্দীক’ বলে এমন ব্যক্তিকে, যে কথা ও কর্মে সাচ্চা। নবী-রাসূলগণের পর এটা তাকওয়া-পরহেজগারীর সর্বোচ্চ স্তর। যেমন সূরা নিসায় (৪ : ৭০) গত হয়েছে। ‘শহীদ’-এর আভিধানিক অর্থ সাক্ষী। কিয়ামতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের পরহেজগার ব্যক্তিবর্গ পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে, যেমন সূরা বাকারায় (২ : ১৪৩) বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদ রত অবস্থায় যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে, তাদেরকেও শহীদ বলে। এস্থলে মুনাফেকদের বিপরীতে বলা হচ্ছে যে, কেবল মৌখিক দাবির মাধ্যমে কেউ সিদ্দীক ও শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে না। বরং সে মর্যাদা অর্জিত হয় কেবল তাদেরই, যারা অন্তর থেকে পরিপক্ব ঈমান আনে, ফলে তাদের ঈমানের আছর ও আলামত তাদের যাপিত জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায়।

২০

اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

ই‘লামূআন্নামাল হায়া-তুদ্দুনইয়া-লা‘ইবুওঁ ওয়ালাহউওঁ ওয়া ঝীনাতুওঁ ওয়া তাফা-খুরুম বাইনাকুম ওয়া তাকা-ছু রুন ফিল আমওয়া-লি ওয়ালআওলা-দা কামাছালি গাইছিন আ‘জাবাল কুফফা-রা নাবাতুহূছু ম্মা ইয়াহীজুফাতারা-হু মুসফাররান ছুম্মা ইয়াকূনুহুতামাও ওয়া ফিল আ-খিরাতি ‘আযা-বুন শাদীদুওঁ ওয়া মাগফিরাতুম মিনাল্লা-হি ওয়া রিদওয়ানুওঁ ওয়ামাল হায়া-তুদ্দুনইয়াইল্লা মাতা-‘উল গুরূর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
জেনে রেখ, পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা, বাহ্যিক সাজসজ্জা, তোমাদের পারস্পরিক অহংকার প্রদর্শন এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে একে অন্যের উপরে থাকার প্রতিযোগিতারই নাম। ১৮ তার উপমা হল বৃষ্টি, যা দ্বারা উদগত ফসল কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে দেয়, তারপর তা তেজস্বী হয়ে ওঠে। তারপর তুমি দেখতে পাও তা হলুদ বর্ণ হয়ে গেছে। অবশেষে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। আর আখেরাতে (এক তো) আছে কঠিন শাস্তি এবং (আরেক আছে) আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছুই নয়।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক শাঘা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা বৃষ্টি, যা দিয়ে উৎপন্ন শস্য-সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকাইয়া যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহ্ র ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ব্যতীত কিছুই নয়।

তাফসীরঃ
১৮. এখানে আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক জিনিসের উল্লেখ করেছেন। মানুষ তার জীবনের একেক পর্যায়ে একেকটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, যেমন শৈশবে তার আকর্ষণ থাকে খেলাধুলার দিকে, যৌবনকালে সাজসজ্জা, বেশভূষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং সেই সাজসজ্জা ও পার্থিব অন্যান্য সাজ-সরঞ্জামে একে অন্যের উপর চলে যাওয়ার ও তা নিয়ে অহমিকা দেখানোর আগ্রহ দেখা দেয়। তারপর আসে বার্ধক্য। তখন মানুষের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা আবর্তিত হয় সম্পদ ও সন্তানকে কেন্দ্র করে। তখনকার চেষ্টা একটাই কিভাবে সম্পদে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবে এবং সন্তানের দিক থেকেও অন্যের উপরে থাকবে। প্রতিটি স্তরে মানুষ যে জিনিসকে তার আকর্ষণ ও চাহিদার সর্বোচ্চ শিখর মনে করে, পরবর্তী স্তরে সেটাই তার কাছে বিলকুল মূল্যহীন হয়ে যায়। বরং অনেক সময় মানুষ এই ভেবে মনে মনে হাসে যে, আমি কোন জিনিসকে জীবনের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিলাম! অবশেষে যখন আখেরাত আসবে, তখন মানুষ উপলব্ধি করবে, আসলে দুনিয়ার আকর্ষণীয় সবকিছুই ছিল মূল্যহীন। প্রকৃত অর্জনীয় জিনিস তো ছিল এই আখেরাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যই।



২১

سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

ছা-বিকূইলা-মাগফিরাতিম মির রাব্বিকুম ওয়া জান্নাতিন ‘আরদুহা-কা‘আরদিছ ছামাই ওয়াল আরদি উ‘ইদ্দাত লিল্লাযীনা আ-মানূবিল্লা-হি ওয়া রুছুলিহী যা-লিকা ফাদলুল্লা-হি ইউ’তীহি মাইঁ ইয়াশাউ ওয়াল্লা-হু যুল ফাদলিল ‘আজীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা একে অন্যের অগ্রণী হওয়ার চেষ্টা কর তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের জন্য, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর প্রশস্ততা তুল্য। তা প্রস্তুত করা হয়েছে এমন সব লোকের জন্য, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে চান দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা অগ্রে ধাবিত হও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে, যা আকাশ ও পৃথিবীর মত প্রশস্ত। এটা প্রস্তুত করা হয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণের প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারীদের জন্যে। এটা আল্লাহর কৃপা, তিনি যাকে ইচ্ছা, এটা দান করেন। আল্লাহ মহান কৃপার অধিকারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের প্রয়াসে যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মত, যা প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্যে যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণে ঈমান আনে। এটা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি এটা দান করেন; আল্লাহ্ মহাঅনুগ্রহশীল।

২২

مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

মাআসা-বা মিমমুসীবাতিন ফিল আরদিওয়ালা-ফীআনফুছিকুম ইল্লা-ফী কিতা-বিম মিন কাবলি আন্নাবরাআহা- ইন্না যা-লিকা ‘আলাল্লা-হি ইয়াছীর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
পৃথিবীতে অথবা তোমাদের প্রাণের উপর যে মুসিবত দেখা দেয়, ১৯ তার মধ্যে এমন কোনওটিই নেই, যা সেই সময় থেকে এক কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই, যখন আমি সেই প্রাণসমূহ সৃষ্টিও করিনি। ২০ নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষে এটা অতি সহজ।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
পৃথিবীতে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে; আল্লাহ্ র পক্ষে এটা খুবই সহজ।

তাফসীরঃ
১৯. ‘কিতাব’ দ্বারা লাওহে মাহফুজ বোঝানো উদ্দেশ্য। কিয়ামত পর্যন্ত যা-কিছু ঘটবে সবই তাতে পূর্ব থেকেই লিপিবদ্ধ আছে।

২০. ‘পৃথিবীতে যে মুসিবত দেখা দেয়’ বলে দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি বোঝানো হয়েছে, আর প্রাণের উপর আপতিত মুসিবত হল রোগ-ব্যাধি, অভাব-অনটন, প্রিয়জনের মৃত্যু ইত্যাদি। -অনুবাদক

২৩

لِّكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ

লিকাইলা-তা’ছাও ‘আলা-মা-ফা-তাকুম ওয়ালা-তাফরাহূবিমাআ-তা-কুম ওয়াল্লা-হু লা-ইউহিব্বুকুল্লা মুখতা-লিন ফাখূর।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা এই জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ, তার জন্য যাতে দুঃখিত না হও এবং যা আল্লাহ তোমাদেরকে দান করেছেন তার জন্য উল্লসিত না হও। ২১ আল্লাহ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে দর্প দেখায় ও বড়ত্ব প্রকাশ করে।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না,

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা এইজন্যে যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও, এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্যে হর্ষোৎফুল না হও। আল্লাহ্ পছন্দ করেন না উদ্ধত ও অহংকারীদেরকে-

তাফসীরঃ
২১. প্রত্যেক মুমিনের জন্যই এ বিশ্বাস জরুরি যে, দুনিয়ায় যা-কিছু ঘটে, লাওহে মাহফুজে লিখিত সেই তাকদীর অনুযায়ীই তা ঘটে। এ বিশ্বাস যে পোষণ করে সে কোনও রকমের অপ্রীতিকর ঘটনায় এতটা দুঃখিত হয় না যে, সেই দুঃখ তার স্থায়ী অশান্তি ও পেরেশানীর কারণ হয়ে যাবে। বরং সে এই ভেবে সান্তনা লাভ করে যে, তাকদীরে যা লেখা ছিল তাই হয়েছে। আর এটা তো কেবল দুনিয়ারই কষ্ট। আখেরাতের নি‘আমতের সামনে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কোন গ্রাহ্য করার বিষয় নয়। এমনিভাবে যদি তার কোন খুশির ঘটনা ঘটে, তবে সে উল্লসিত হয় না ও বড়ত্ব দেখায় না। কেননা সে জানে এ ঘটনা আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত তাকদীর অনুযায়ী ও তার সৃজনেই ঘটেছে। এর জন্য অহমিকা না দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার শোকর আদায় করাই কর্তব্য।

২৪

الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ ۗ وَمَن يَتَوَلَّ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ

আল্লাযীনা ইয়াবখালূনা ওয়া ইয়া’মুরূনান্না-ছা বিলবুখলি ওয়া মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লা ফাইন্নাল্লাহা হুওয়াল গানিইয়ূল হামীদ।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা এমন লোক, যারা কৃপণতা করে এবং অন্যকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়। ২২ কেউ মুখ ফিরিয়ে নিলে (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ সকলের থেকে অনপেক্ষ, তিনি আপনিই প্রশংসার উপযুক্ত।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা কৃপণতা করে এবং মানুষকে কৃপণতার প্রতি উৎসাহ দেয়, যে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জানা উচিত যে, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা কার্পণ্য করে ও মানুষকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয় এবং যে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে জেনে রাখুক আল্লাহ্ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।

তাফসীরঃ
২২. এ সূরায় যেহেতু মানুষকে আল্লাহ তাআলার পথে অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে, তাই এখানে বলা হচ্ছে, যারা তাকদীরে ঈমান রাখে না, তারা তাদের সম্পদকে কেবল নিজেদের চেষ্টার ফসল মনে করে আর সে কারণে অর্থ বলের দর্প দেখায় এবং সৎকাজে ব্যয় করতে কার্পণ্য করে।

২৫

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ

লাকাদ আরছালনা-রুছুলানা-বিলবাইয়িনা-তি ওয়া আনঝালনা-মা‘আহুমুল কিতা-বা ওয়াল মীঝা-না লিইয়াকূমান্না-ছুবিলকিছতি ওয়া আনঝালনাল হাদীদা ফীহি বা’ছুন শাদীদুওঁ ওয়া মানা-ফি‘উ লিন্না-ছি ওয়া লিইয়া‘লামাল্লা-হু মাইঁ ইয়ানসুরুহূওয়া রুছুলাহূবিলগাইবি ইন্নাল্লা-হা কাবিইয়ুন ‘আঝীঝ।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
বস্তুত আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে নাযিল করেছি কিতাব ও তুলাদণ্ড, ২৩ যাতে মানুষ ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং আমি অবতীর্ণ করেছি লোহা, যার ভেতর রয়েছে রণশক্তি এবং মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। ২৪ এটা এই জন্য যে, আল্লাহ জানতে চান, কে তাকে না দেখে তাঁর (দীনের) ও তাঁর রাসূলগণের সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিমান ও সর্বময় ক্ষমতার মালিক। ২৫

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি লৌহও দিয়েছি যাতে রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্যে বহুবিধ কল্যাণ। এটা এইজন্যে যে, আল্লাহ্ প্রকাশ করে দেন কে প্রত্যক্ষ না করেও তাঁকে ও তাঁর রাসূলগণকে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।

তাফসীরঃ
২৩. ‘তুলাদণ্ড’ বলে এমন বস্তুকে, যা দ্বারা কোন জিনিসকে মাপা হয়। তা অবতীর্ণ করার অর্থ, আল্লাহ তাআলা তা সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তা দ্বারা ন্যায়ানুগ পরিমাপ ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার হুকুম দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীগণ ও তাঁর কিতাবের সাথে তুলাদণ্ডের উল্লেখ দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের উচিত তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও পরিমিতি রক্ষা করা। সেই ভারসাম্য ও পরিমিতির শিক্ষাই নবী-রাসূলগণের কাছে ও আসমানী কিতাবসমূহে পাওয়া যায়।

২৪. লোহা এমনই এক ধাতু, সব শিল্পেই যার দরকার পড়ে। কাজেই এর সৃষ্টি আল্লাহ তাআলার একটি বড় নি‘আমত। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, আসমানী কিতাব ও তুলাদণ্ডের পর লোহার উল্লেখ দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, মানব সমাজের সংস্কার- সংশোধনের প্রকৃত উপায় আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জীবনাদর্শ ও তাদের আনীত কিতাব। এর যথাযথ অনুসরণ দ্বারাই দুনিয়ায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হতে পারে। কিন্তু জগতে অপশক্তিও কম নেই, যা এসব শিক্ষা দ্বারা সমাজ সংস্কারের পথে বাধা সৃষ্টি করে, সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকে ব্যাহত করে এবং সর্বত্র অন্যায়-অনাচার ও দুষ্কর্মের বিস্তার ঘটিয়ে সমাজ দেহকে কলুষিত করে। সেই সব অপশক্তির শিরোেদের জন্য আল্লাহ তাআলা লোহা সৃষ্টি করেছেন। তা দ্বারা বিভিন্ন রকমের সমরাস্ত্র তৈরি হয় এবং পরিশেষে তা জিহাদে ব্যবহার করা যায়।

২৫. অর্থাৎ আল্লাহর তাআলার শক্তি ও ক্ষমতা অপরিসীম। কোন অপশক্তিকে দমন করার জন্য কোন মানুষের সাহায্য গ্রহণের প্রয়োজন তার নেই। তা সত্ত্বেও তিনি যে মানুষকে জিহাদের হুকুম দিয়েছেন, তার উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা। আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দেখাতে চান কে তাঁর দীনের সাহায্য করার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকে আর কে তাঁর হুকুম অমান্য করার ধৃষ্ঠতা প্রদর্শন করে।

২৬

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا وَإِبْرَاهِيمَ وَجَعَلْنَا فِي ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَابَ ۖ فَمِنْهُم مُّهْتَدٍ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

ওয়া লাকাদ আরছালনা-নূহাও ওয়া ইবরা-হীমা ওয়া জা‘আলনা-ফী যুররিইইয়াতিহিমান নুবুওয়াতা ওয়াল কিতা-বা ফামিনহুম মুহতাদিও ওয়া কাছীরুম মিনহুম ফা-ছিকূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি নূহ ও ইবরাহীমকে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম এবং তাদের বংশধরদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাবের ধারা চালু করেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক তো হেদায়াতপ্রাপ্ত হল আর বিপুল সংখ্যকই অবাধ্য হয়ে থাকল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি নূহ ও ইব্রাহীমকে রসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং তাদের বংশধরের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব অব্যাহত রেখেছি। অতঃপর তাদের কতক সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে এবং অধিকাংশই হয়েছে পাপাচারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি নূহ্ এবং ইব্রাহীমকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এবং আমি তাদের বংশধরগণের জন্যে স্থির করেছিলাম নবুওয়াত ও কিতাব, কিন্তু এদের অল্পই সৎপথ অবলম্বন করেছিল এবং অধিকাংশই ছিল সত্যত্যাগী।

২৭

ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا ۖ فَآتَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا مِنْهُمْ أَجْرَهُمْ ۖ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

ছু ম্মা কাফফাইনা-‘আলাআ-ছা-রিহিম বিরুছুলিনা-ওয়া কাফফাইনা-বি‘ঈছাবনি মারইয়ামা ওয়া আ-তাইনা-হুল ইনজীলা ওয়া জা‘আলনা-ফী কুলূবিল্লাযীনাত্তাবা‘ঊহু রা’ফাতাওঁ ওয়া রাহমাতাও ওয়া রাহবা-নিইয়াতানিব তাদা‘ঊহা-মা-কাতাবনা-হা‘আলাইহিম ইল্লাবতিগাআ রিদওয়া-নিল্লা-হি ফামা-রা‘আওহা-হাক্কা রি‘আ-ইয়াতিহা- ফাআ-তাইনাল্লাযীনা আ-মানূমিনহুম আজরাহুম ওয়া কাছীরুম মিনহুম ফাছিকূন।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
অতঃপর আমি তাদেরই পদাঙ্কনুসারী করে পাঠাই আমার রাসূলগণকে এবং তাদের পেছনে পাঠালাম ঈসা ইবনে মারয়ামকে। আর তাকে দান করলাম ইনজিল। যারা তার অনুসরণ করল, আমি তাদের অন্তরে দিলাম মমতা ও দয়া। ২৬ আর রাহবানিয়্যাতের যে বিষয়টা, তা তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছিল। আমি তাদের উপর তা বাধ্যতামূলক করিনি। ২৭ বস্তুত তারা (এর মাধ্যমে) আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানই করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তা যথাযথভাবে পালন করেনি। ২৮ তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, তাদেরকে আমি তাদের প্রতিদান দিয়েছিলাম। আর তাদের বহু সংখ্যক হয়ে থাকল অবাধ্য।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করেছি আমার রসূলগণকে এবং তাদের অনুগামী করেছি মরিয়ম তনয় ঈসাকে ও তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল। আমি তার অনুসারীদের অন্তরে স্থাপন করেছি নম্রতা ও দয়া। আর বৈরাগ্য, সে তো তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি; কিন্তু তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে এটা অবলম্বন করেছে। অতঃপর তারা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ছিল, আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার দিয়েছি। আর তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরপর আমি তাদের পশ্চাতে অনুগামী করেছিলাম আমার রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারইয়াম-তনয় ঈসাকে, আর তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জীল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া। আর সন্ন্যাসবাদ-এটা তো এরা নিজেরাই আল্লাহ্ র সন্তুষ্টি লাভের জন্যে প্রবর্তন করেছিল। আমি এদেরকে এটার বিধান দেই নাই ; অথচ এটাও এরা যথাযথভাবে পালন করে নাই। এদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল, এদেরকে আমি দিয়েছিলাম পুরস্কার এবং এদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।

তাফসীরঃ
২৬. এমনিতে তো মমতা ও করুণার বিষয়টা সমস্ত নবীর শিক্ষায়ই ছিল, কিন্তু হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শিক্ষায় এর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া তার শরীয়তে যেহেতু যুদ্ধ-বিগ্রহের বিধান ছিল না, তাই তাঁর অনুসারীদের মধ্যে দয়া-মায়ার দিকটি বেশি প্রতীয়মান ছিল।

২৭. ‘রাহবানিয়্যাত’ অর্থ বৈরাগ্য তথা দুনিয়ার সব আনন্দ ও বিষয়ভোগ পরিহার করা। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়ার বহুকাল পরে খ্রিস্টান সম্প্রদায় এমন এক আশ্রমিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিল, যাতে কোন ব্যক্তি আশ্রমে ঢুকে পড়ার পর সংসার জীবন সম্পূর্ণরূপে বর্জন করত। বিয়ে-শাদী করত না এবং পার্থিব কোনও রকমের স্বাদ ও আনন্দে অংশগ্রহণ করত না। তাদের এই আশ্রমিক ব্যবস্থাকেই ‘রাহবানিয়্যাত’ বলে। এ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল এভাবে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের উপর বিভিন্ন রাজা-বাদশাহ জুলুম-নির্যাতন চালাতে থাকলে তারা নিজেদের দীন রক্ষার তাগিদে শহরের বাইরে গিয়ে বসবাস শুরু করল, যেখানে জীবন-যাপনের সাধারণ সুবিধাসমূহ পাওয়া যেত না। কালক্রমে তাদের কাছে জীবন-যাপনের এই কঠিন ব্যবস্থাই এক স্বতন্ত্র ইবাদতের রূপ পরিগ্রহ করে। পরবর্তীকালের লোকেরা জীবন-যাপনের উপকরণাদি হস্তগত হওয়া সত্ত্বেও এই মনগড়া ইবাদতের জন্য তা পরিহার করতে থাকল। আল্লাহ তাআলা বলছেন, আমি তাদেরকে এরূপ কঠিন জীবনযাত্রার নির্দেশ দেইনি। তারা নিজেরাই এর প্রবর্তন করেছে।

২৮. অর্থাৎ বৈরাগ্যবাদের এ প্রথা প্রথম দিকে তো তারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিধানের জন্যই অবলম্বন করেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে তারা এটা পুরোপুরিভাবে রক্ষা করতে পারেনি। রক্ষা করতে না পারার দুটো দিক আছে। (এক) আল্লাহ তাআলার নির্দেশের অনুবর্তী না থাকা। আর এভাবে আল্লাহ তাআলা যে জিনিসকে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেননি, তারা সেটাকে নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করে নিল। মনে করল, এরূপ না করলে তাদের একটা মহা ইবাদত ছুটে যাবে। অথচ দীনের মাঝে নিজেদের পক্ষ থেকে কোন জিনিসকে এ রকম জরুরি মনে করা যে, তা না করলে অপরাধ হবে, সম্পূর্ণ নাজায়েয। (দুই) প্রবর্তিত বিষয়কে যথাযথরূপে পালন না করা। তারা রাহবানিয়াতের যে ব্যবস্থা চালু করেছিল, পরবর্তীকালে কার্যত তার যথাযথ অনুসরণ করতে পারেনি। যেহেতু ব্যবস্থাটাই ছিল স্বভাবের পরিপন্থী, তাই স্বাভাবিকভাবেই মানব-প্রকৃতির সাথে তার সংঘাত দেখা দিল এবং ধীরে ধীরে মানব প্রকৃতির কাছে তা হেরে গেল। নানা বাহানায় প্রকাশ্যে বা গোপনে বিষয়-ভোগ শুরু হয়ে গেল। বিবাহেও নিষেধাজ্ঞা ছিল, যে কারণে যৌন সম্ভোগের জন্য তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হতে লাগল এবং এক সময় তাদের আশ্রমগুলিতে তা মহামারি আকার ধারণ করল। সুতরাং যে উদ্দেশ্যে তারা রাহবানিয়াতের প্রবর্তন করেছিল তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেল।

২৮

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুত্তাকুল্লা-হা ওয়া আ-মিনূবিরাছুলিহী ইউ’তিকুম কিফলাইনি মির রাহমাতিহী ওয়া ইয়াজ‘আল্লাকুম নূরান তামশূনা বিহী ওয়া ইয়াগফির লাকুম ওয়াল্লা-হু গাফূরুর রাহীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তাহলে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমতের দু’টি অংশ দান করবেন। ২৯ তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন এমন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে ৩০ এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজে অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদেরকে দিবেন, তোমাদেরকে দিবেন জ্যোতি, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
হে মু’মিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দিবেন দ্বিগুণ পুরস্কার এবং তিনি তোমাদেরকে দিবেন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন ; আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

তাফসীরঃ
২৯. অর্থাৎ তোমরা যেখানেই যাবে, সে আলো তোমাদের সঙ্গে থাকবে। অথবা এর অর্থ, সে আলো পুলসিরাতকে তোমাদের জন্য আলোকিত করে তুলবে, যার উপর দিয়ে তোমরা সহজে চলতে পারবে।

৩০. এটা বলা হচ্ছে সেই সকল কিতাবীকে, যারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিল। সূরা কাসাস (২৮ : ৫৪)-এও তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তাদেরকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে। কেননা প্রথমে তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম অথবা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ঈমান এনেছিল, পরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরও ঈমান এনেছে।

২৯

لِّئَلَّا يَعْلَمَ أَهْلُ الْكِتَابِ أَلَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّن فَضْلِ اللَّهِ ۙ وَأَنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

লিয়াল্লা-ইয়া‘লামা আহলুল কিতা-বি আল্লা-ইয়াকদিরূনা ‘আলা-শাইয়িম মিন ফাদলিল্লা-হি ওয়া আন্নাল ফাদলা বিয়াদিল্লা-হি ইউ’তীহি মাইঁ ইয়াশাউ ওয়াল্লা-হু যুল ফাদলিল ‘আজীম।

অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা এজন্য যে, যাতে কিতাবীগণ জানতে পারে, ৩১ আল্লাহর অনুগ্রহের মধ্যে তাদের কিছুমাত্র এখতিয়ার নেই ৩২ এবং সমস্ত অনুগ্রহ আল্লাহর হাতে, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে কিতাবধারীরা জানে যে, আল্লাহর সামান্য অনুগ্রহের উপর ও তাদের কোন ক্ষমতা নেই, দয়া আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা, তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা এইজন্যে যে, কিতাবীগণ যেন জানতে পারে, আল্লাহ্ র সামান্যতম অনুগ্রহের ওপরও এদের কোন অধিকার নেই। অনুগ্রহ আল্লাহ্ র ই ইখ্তিয়ারে, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি তা দান করেন। আল্লাহ্ মহাঅনুগ্রহশীল।

তাফসীরঃ
৩১. কিতাবীদের সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে এ বাক্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। (এক) যে সকল ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর ঈমান আনেনি, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশের ঈমান না আনার কারণ ছিল কেবলই ঈর্ষাকাতরতা। তাদের কথা ছিল শেষ নবী বনী ইসরাঈলদের মধ্যে না এসে হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশে কেন আসবেন? তাদেরকে বলা হচ্ছে, নবুওয়াত আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ। এ অনুগ্রহ তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। এটা তোমাদের এখতিয়ারাধীন বিষয় নয় যে, তোমরা যাকে ইচ্ছা কর তাকেই দিতে হবে। (দুই) খ্রিস্টানদের মধ্যে এক সময় রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল যে, তাদের পাদ্রী অর্থের বিনিময়ে পাপ থেকে মানুষের মুক্তিপত্র লিখে দিত। মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির সঙ্গে তা কবরে দাফন করে দেওয়া হত। মনে করা হত, পাদ্রীর দেওয়া মুক্তিপত্রের কারণে সেই ব্যক্তির পাপ মোচন হয়ে গেছে। কাজেই আল্লাহ তাআলার কাছে সে ক্ষমা পাবে। এ আয়াত বলছে, আল্লাহ তাআলার করুণা কেবলই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এতে কোন বান্দার কিছুমাত্র এখতিয়ার নেই। আল্লাহ তাআলা কাকে ক্ষমা করবেন, কে তাঁর রহমত-øাত হবে আর কে তার ক্ষমা ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে একচ্ছত্রভাবে সে ফায়সালা তিনিই করবেন।

৩২. لِئَلَّا -এর لَا হরফটি অতিরিক্ত, যা বাক্যের শ্রীবৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে, কিন্তু কোনো অর্থ দেয় না। সুতরাং لئلا يعلم এর অর্থ হবে ‘যাতে জানতে পারে’। -অনুবাদক

প্রশ্ন ও মতামত জানাতে পারেন আমাদের কে ইমেল : info@banglanewsexpress.com

আমরা আছি নিচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ও

আল কোরআনের সূরা সমূহ বাংলা অনুবাদ, ফজিলত, আয়ত, রুকু আরবি ও বাংলা উচ্চারণ  

আমাদের নতুন ইসলামিক নিউজ ও জিজ্ঞাসা ভিত্তিক সাইড

Islamic Info Hub ( www.islamicinfohub.com ) আজই ভিজিড করুন !! 

Post a Comment

0 Comments