কোরআন ও হাদিসের আলোতে সূরা ইব্রাহীম সকল তথ্য আল,ইব্রাহীম আলমল ও ফজিলত, সূরা ইব্রাহীম কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা ইব্রাহীম নাযিলের কারন গুলো কি কি ,

 
 ইব্রাহীম - ( إبراهيم ) | নবী ইব্রাহীম (আঃ)
মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৫২
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
الر ۚ كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَىٰ صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আলিফ, লাম, রা (হে নবী!) এটি এক কিতাব, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে বের করে আলোর ভেতর নিয়ে আসতে পার। অর্থাৎ, সেই সত্তার পথে, যার ক্ষমতা সকলের উপর প্রবল এবং যিনি সমস্ত প্রশংসার উপযুক্ত। ১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাযিল করেছি-যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার নির্দেশে তাঁরই পথের দিকে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আলিফ-লাম্-রা, এই কিতাব, এটা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোকে, তাঁর পথে যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসার্হ,
তাফসীরঃ
১. অর্থাৎ দুনিয়ার সমস্ত মানুষই গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। কারণ তারা আল্লাহকে চেনে না, তাঁর খুশি-অখুশি জানে না। শয়তানের ধোঁকা ও প্রবৃত্তির প্ররোচনায় যে পথে চলছে তা আল্লাহর গযবের পথ। সে পথে চললে মানুষের মনুষ্যত্ব লোপ পায় ও পাশববৃত্তি বলিয়ান হয়। সুতরাং মানুষের পক্ষে এটা অন্ধকারের পথ। মানুষকে এই ঘোর অন্ধকার থেকে উদ্ধার করে যিনি নিখিল বিশ্বের সমস্ত জ্যোতির আধার সেই পরাক্রান্ত ও প্রশংসার্হ আল্লাহর আলোকিত পথে আনার জন্যই তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি। এটাই দোজাহানের মহামুক্তির আলোকস্তম্ভ। এর নির্দেশনায় যারা চলবে, কেবল তারাই সুপথগামী হয়ে আলোকিত মানুষে পরিণত হবে। আর যারা এর নির্দেশনা অগ্রাহ্য করবে তারা বিপথগামিতার অন্ধকারেই নিমজ্জিত থাকবে। -অনুবাদক

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল


اللَّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَوَيْلٌ لِّلْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই আল্লাহ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ভেতর যা-কিছু আছে সবই যার মালিকানায়। বড়ই দুর্গতি কাফেরদের জন্য অর্থাৎ শাস্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনি আল্লাহ; যিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সবকিছুর মালিক। কাফেরদের জন্যে বিপদ রয়েছে, কঠোর আযাব;
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহ্-আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। কঠিন শাস্তির দুর্ভোগ কাফিরদের জন্যে,
الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا ۚ أُولَـٰئِكَ فِي ضَلَالٍ بَعِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা আখেরাতের বিপরীতে দুনিয়ার জীবনকেই পছন্দ করে, অন্যদেরকে আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয় এবং সে পথে বক্রতা সন্ধান করে, ২ তারা চরম বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে; আল্লাহর পথে বাধা দান করে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে, তারা পথ ভুলে দূরে পড়ে আছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের চেয়ে ভালবাসে, মানুষকে নিবৃত্ত করে আল্লাহ্ র পথ হতে এবং আল্লাহ্ র পথ বক্র করতে চায় ; এরাই তো ঘোর বিভ্রান্তিতে রয়েছে।
তাফসীরঃ
২. এর এক অর্থ এই যে, তারা ইসলামের কোথায় কি দোষ পাওয়া যায় তা খুঁজে বেড়ায়, যাতে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার সুযোগ হয়। দ্বিতীয় অর্থ হল, তারা সর্বদা এই ধান্ধায় লেগে থাকে, যাতে কুরআন ও সুন্নাহর ভেতর তাদের মর্জি ও খেয়াল-খুশীমত কোন কথা পেয়ে যায়। কেননা সে রকম কিছু পেলে তাকে তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের সপক্ষে দলীল হিসেবে পেশ করতে পারবে।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি যখনই কোন রাসূল পাঠিয়েছি, তাকে তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের সামনে সত্যকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে। ৩ তারপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন, যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। ৪ তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি সব পয়গম্বরকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে। অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, পথঃভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। তিনি পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে, আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
তাফসীরঃ
৩. অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সত্য-সন্ধানের অভিপ্রায়ে এ কিতাব পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তাকে হিদায়াত দিয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি জেদ ও বিদ্বেষ নিয়ে পড়ে, তাকে বিভ্রান্তির মধ্যেই ফেলে রাখেন। আরও দ্র. পূর্বের সূরা (১৩ : ৩৩)-এর টীকা।
৪. মক্কার কাফেরদের একটা প্রশ্ন ছিল যে, কুরআন আরবী ভাষায় কেন নাযিল করা হয়েছে? যদি এমন কোন ভাষায় নাযিল হত, যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানা নেই, তবে এর মুজিযা ও অলৌকিকত্ব হওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যেত। আল্লাহ তাআলা এর জবাবে বলছেন, আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার নিজ সম্প্রদায়ের ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি এবং তা করেছি এ কারণে, যাতে রাসূল তার সম্প্রদায়কে তাদের নিজেদের ভাষায় আল্লাহ তাআলার বিধানাবলী বুঝিয়ে দিতে পারেন। কুরআন যদি অন্য কোনও ভাষায় নাযিল হত, তখন তো তোমরা এই বলে আপত্তি তুলতে যে, আমরা এটা বুঝব কি করে? এই একই কথা সূরা হা-মীম-সাজদায় (৪১ : ৪৪)ও ইরশাদ হয়েছে। (এর দ্বারা শিক্ষালাভ হয় যে, যে কোন জাতির কাছে নিজের দাওয়াত পেশ করার জন্য সে জাতির ভাষাকেই অবলম্বন করা উচিত এবং সে ভাষায় দাওয়াতদাতার এমন দক্ষতা অর্জন করা উচিত, যাতে তার ভাষার ফোকাসে সত্যের সৌন্দর্য ও তার অবস্থানগত বলিষ্ঠতা যথার্থরূপে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। -অনুবাদক)
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমি মূসাকে আমার নিদর্শনাবলী দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। বলেছিলাম যে, নিজ সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ (বিভিন্ন মানুষকে ভালো অবস্থা ও মন্দ অবস্থার) যে দিনসমূহ দেখিয়েছেন, ৫ তার কথা বলে তাদেরকে উপদেশ দাও। বস্তুত যে-কেউ সবর ও শোকরে অভ্যস্ত, তার জন্য এসব ঘটনার ভেতর বহু নিদর্শন আছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমি মূসাকে নিদর্শনাবলী সহ প্রেরণ করেছিলাম যে, স্বজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনয়ন এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসাকে আমি তো আমার নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন কর, এবং এদেরকে আল্লাহ্ র দিবসগুলির দিয়ে উপদেশ দাও।’ এতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক পরম ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে।
তাফসীরঃ

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

৫. কুরআন মাজীদের اَ يَّمُ اللهِ-এর শাব্দিক অর্থ ‘আল্লাহর দিনসমূহ’। কিন্তু পরিভাষায় এর দ্বারা সেই সমস্ত দিন বোঝানো হয়ে থাকে, যাতে আল্লাহ তাআলা বিশেষ-বিশেষ ঘটনা ঘটিয়েছেন, যেমন অবাধ্য জাতিসমূহের উপর আযাব নাযিল করা, অনুগত বান্দাদেরকে শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করা ইত্যাদি। সুতরাং আয়াতের মর্ম হল, সেই সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা বলে, নিজ সম্প্রদায়কে উপদেশ দিন, যাতে তারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য স্বীকার করে।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ أَنجَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যেসব অনুগ্রহ করেছেন তা স্মরণ কর যখন তিনি ফির‘আউনের লোকদের কবল থেকে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্টতম শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে যবাহ করত ও তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এসব ঘটনার ভেতর তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষা ছিল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন মূসা স্বজাতিকে বললেনঃ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দেন। তারা তোমাদেরকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দিত, তোমাদের ছেলেদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের মেয়েদেরকে জীবিত রাখত। এবং এতে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা হয়েছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্মরণ কর, মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ’ স্মরণ কর যখন তিনি তোমাদেরকে রক্ষা করেছিলেন ফির‘আওনী সম্প্রদায়ের কবল হতে, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রগণকে যবেহ্ করত ও তোমাদের নারীগণকে জীবিত রাখিত; এবং এতে ছিল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক মহাপরীক্ষা।’
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সেই সময়টাও স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেছিলেন, তোমরা সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আমি তোমাদেরকে আরও বেশি দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞতা কর, তবে জেনে রেখ আমার শাস্তি অতি কঠিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্মরণ কর, তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, ‘তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।’
وَقَالَ مُوسَىٰ إِن تَكْفُرُوا أَنتُمْ وَمَن فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ حَمِيدٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং মূসা বলেছিল, তোমরা এবং পৃথিবীতে বসবাসকারী সকলেই যদি অকৃতজ্ঞতা কর, তবে (আল্লাহর কোনও ক্ষতি নেই। কেননা) আল্লাহ অতি বেনিয়ায, তিনি আপনিই প্রশংসার উপযুক্ত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং মূসা বললেনঃ তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি কুফরী কর, তথাপি আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, যাবতীয় গুনের আধার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
মূসা বলেছিল, ‘তোমরা এবং পৃথিবীর সকলেই যদি অকৃতজ্ঞ হও তথাপি আল্লাহ্ অভাবমুক্ত এবং প্রশংসার্হ।
أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ ۛ وَالَّذِينَ مِن بَعْدِهِمْ ۛ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلَّا اللَّهُ ۚ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَرَدُّوا أَيْدِيَهُمْ فِي أَفْوَاهِهِمْ وَقَالُوا إِنَّا كَفَرْنَا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ وَإِنَّا لَفِي شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُونَنَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
(হে মক্কার কাফেরগণ!) তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদের সংবাদ পৌঁছেনি নূহের সম্প্রদায়ের এবং আদ, ছামুদ ও তাদের পরবর্তী সম্প্রদায়সমূহের, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না? ৬ তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারা তাদের মুখে হাত রেখে দিয়েছিল ৭ এবং বলেছিল, যে বার্তা দিয়ে তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি আর তোমরা যে বিষয়ের দাওয়াত দিচ্ছ, সে সম্পর্কে আমাদের গভীর সন্দেহ আছে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমাদের কাছে কি তোমাদের পূর্ববর্তী কওমে নূহ, আদ ও সামুদের এবং তাদের পরবর্তীদের খবর পৌছেনি? তাদের বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তাদের কাছে তাদের পয়গম্বর প্রমানাদি নিয়ে আগমন করেন। অতঃপর তারা নিজেদের হাত নিজেদের মুখে রেখে দিয়েছে এবং বলেছে, যা কিছু সহ তোমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে, আমরা তা মানি না এবং যে পথের দিকে তোমরা আমাদেরকে দাওয়াত দাও, সে সম্পর্কে আমাদের মনে সন্দেহ আছে, যা আমাদেরকে উৎকন্ঠায় ফেলে রেখেছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসে নাই তোমাদের পূর্ববর্তীদের, নূহের সম্প্রদায়ের, ‘আদের ও সামূদের এবং তাদের পরবর্তীদের? এদের বিষয় আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।’ এদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ এদের রাসূল এসেছিল, এরা এদের হাত এদের মুখে স্থাপন করত এবং বলত, ‘যাসহ তোমরা প্রেরিত হয়েছ তা আমরা অবশ্যই অস্বীকার করি এবং আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছি সে বিষয়ে, যার প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহ্বান করছো।’
তাফসীরঃ
৬. এটা একটা প্রবচন। এর অর্থ হল, তারা জোরপূর্বক তাদেরকে বাকরুদ্ধ করে দিল এবং তাদের প্রচারকার্যে বাধা সৃষ্টি করল। (অথবা এর অর্থ তারা বিদ্রূপাত্মক হাসিতে নিজেদের মুখে হাতচাপা দিত)।
৭. এর দ্বারা যে সকল জাতির ইতিহাস সংরক্ষিত নয়, তাদের কথাও বোঝানো হতে পারে অথবা তাদের কথা, যাদের অবস্থা মোটামুটিভাবে জানা আছে বটে, কিন্তু তাদের সংখ্যা ও বিস্তারিত হাল-হাকীকত কেউ জানে না।
১০
۞ قَالَتْ رُسُلُهُمْ أَفِي اللَّهِ شَكٌّ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ وَيُؤَخِّرَكُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ قَالُوا إِنْ أَنتُمْ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا تُرِيدُونَ أَن تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ সম্বন্ধেই কি তোমাদের সন্দেহ, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন তোমাদের খাতিরে তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করার এবং স্থিরীকৃত এক মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দেওয়ার জন্য। ৮ তারা বলেছিল, তোমরা তো আমাদেরই মত মানুষ মাত্র। তোমরা চাচ্ছ আমাদের বাপ-দাদাগণ যাদের ইবাদত করত, তাদের থেকে আমাদেরকে বিরত রাখতে। তাহলে তোমরা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোন মুজিযা উপস্থিত কর। ৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের পয়গম্বরগণ বলেছিলেনঃ আল্লাহ সম্পর্কে কি সন্দেহ আছে, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের স্রষ্টা? তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন যাতে তোমাদের কিছু গুনাহ ক্ষমা করেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তোমাদের সময় দেন। তারা বলতঃ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ! তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার এবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত। অতএব তোমরা কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ আনয়ন কর।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের রাসূলগণ বলেছিল, ‘আল্লাহ্ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ? তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্যে এবং নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দিবার জন্যে।’ এরা বলত, ‘তোমরা তো আমাদেরই মত মানুষ। আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ‘ইবাদত করত তোমরা তাদের ‘ইবাদত হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। অতএব তোমরা আমাদের নিকট কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত কর।’
তাফসীরঃ
৮. আল্লাহ তাআলা প্রায় সকল নবীকেই কোনও না কোনও মুজিযা দান করেছিলেন। কিন্তু কাফেরদের কথা ছিল, আমরা তোমাদের কাছে যখন যে মুজিযা চাই, আমাদেরকে সেটাই দেখাতে হবে। তা না হলে ঈমান আনব না।
৯. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা চান, তোমরা যেন তাঁর শাস্তি হতে বেঁচে যাও এবং তোমাদের পাপরাশি মার্জনা হয়ে যাওয়ার পর যত দিন আয়ু আছে, ততদিন জীবন উপভোগের সুযোগ পাও।
১১
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِن نَّحْنُ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَمَا كَانَ لَنَا أَن نَّأْتِيَكُم بِسُلْطَانٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের নবীগণ তাদেরকে বলেছিল, বাস্তবিকই আমরা তোমাদের মত মানুষ। কিন্তু আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা বিশেষ অনুগ্রহ করেন। আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া তোমাদেরকে কোন মুজিযা দেখানোর এখতিয়ার আমাদের নেই। মুমিনদের তো কেবল আল্লাহর উপর নির্ভর করা উচিত। ১০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমারাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়; ঈমানদারদের আল্লাহর উপর ভরসা করা চাই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের রাসূলগণ এদেরকে বলত, ‘সত্য বটে, আমরা তোমাদের মত মানুষই কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহ্ র অনুমতি ব্যতীত তোমাদের নিকট প্রমাণ উপস্থিত করা আমাদের কাজ নয়। আল্লাহ্ র ওপরই মু’মিনগণের নির্ভর করা উচিত।
তাফসীরঃ
১০. তোমরা যদি একথা বিশ্বাস না কর, উল্টো যারা বিশ্বাস করে তাদের কষ্ট দিতে তৎপর থাক, তবে তার কোনও পরওয়া মুমিনগণ করে না। এরূপ হীনপ্রাণ দুর্বৃত্তদের তারা ভয় পায় না। কেননা আল্লাহ তাআলার উপর তাদের ভরসা রয়েছে।
১২
وَمَا لَنَا أَلَّا نَتَوَكَّلَ عَلَى اللَّهِ وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا ۚ وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَىٰ مَا آذَيْتُمُونَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
কেনইবা আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না, যখন তিনি আমাদের সেই পথ প্রদর্শন করেছেন, যে পথে আমাদের চলা উচিত? তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছ আমরা তাতে অবশ্যই সবর করব। যারা নির্ভর করতে চায়, তারা যেন আল্লাহরই উপর নির্ভর করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা না করার কি কারণ থাকতে পারে, অথচ তিনি আমাদেরকে আমাদের পথ বলে দিয়েছেন। তোমরা আমাদেরকে যে পীড়ন করেছ, তজ্জন্যে আমরা সবর করব। ভরসাকারিগণের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমাদের কি হয়েছে যে, ‘আমরা আল্লাহ্ র ওপর নির্ভর করব না ? তিনিই তো আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। তোমরা আমাদেরকে যে ক্লেশ দিতেছ, আমরা তাতে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহ্ র ই ওপর নির্ভরকারিগণ নির্ভর করুক।’
১৩
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُم مِّنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا ۖ فَأَوْحَىٰ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা কুফর অবলম্বন করেছিল, তারা তাদের নবীগণকে বলেছিল, আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে ছাড়ব। অথবা তোমাদেরকে আমাদের দীনে ফিরে আসতে হবে। ১১ অতঃপর তাদের প্রতিপালক তাদের প্রতি ওহী পাঠালেন, আমি অবশ্যই এ জালেমদেরকে ধ্বংস করব।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
কাফেররা পয়গম্বরগণকে বলেছিলঃ আমরা তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। তখন তাদের কাছে তাদের পালনকর্তা ওহী প্রেরণ করলেন যে, আমি জালিমদেরকে অবশ্যই ধ্বংস করে দেব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কাফিররা এদের রাসূলগণকে বলেছিল, ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে অবশ্যই বহিষ্কার করব বা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতেই হবে।’ এরপর রাসূলগণকে তাদের প্রতিপালক ওহী প্রেরণ করলেন, জালিমদেরকে আমি অবশ্যই বিনাশ করব;
তাফসীরঃ
১১. এটাই সব যুগের বেদীন সর্দারদের চরিত্র। যখন দলীল-প্রমাণ ও যুক্তি-তর্কে হেরে যায় তখন পেশিশক্তি প্রদর্শন করে এবং সত্যের অনুসারীদেরকে তাদের মিথ্যার কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য করতে চায় নয়ত হত্যা করা বা দেশ থেকে উৎখাত করার ভয় দেখায় কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয় না। শেষ পর্যন্ত তাদের উপর আল্লাহর গযব নেমে আসে এবং তাদের স্থানে বিশ্বাসীদেরকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়। -অনুবাদক
১৪
وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِن بَعْدِهِمْ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِي وَخَافَ وَعِيدِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং তাদের পর যমীনে তোমাদেরকেই প্রতিষ্ঠিত করব। ১২ এটা প্রত্যেক ওই ব্যক্তির পুরস্কার, যে আমার সামনে দাঁড়ানোর ভয় রাখে এবং ভয় রাখে আমার সতর্কবাণীর।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের পর তোমাদেরকে দেশে আবাদ করব। এটা ঐ ব্যক্তি পায়, যে আমার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার আযাবের ওয়াদাকে ভয় করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘এদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করবই; এটা তাদের জন্যে যারা ভয় রাখে আমার সামনে উপস্থিত হওয়ার এবং ভয় রাখে আমার শাস্তির।’
তাফসীরঃ
১২. শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছিল। মক্কার কাফের নেতৃবর্গ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণকে মক্কা মুকাররমা থেকে চিরতরে উৎখাত করতে চেয়েছিল, হিজরতের পর খুব বেশি দিন যেতে হয়নি বদরের যুদ্ধে তাদের অধিকাংশকেই নিপাত হতে হয়েছিল। পরিশেষে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটেছিল এবং সেই পুণ্যভূমি থেকে কুফরের নাম নিশানা মুছে গিয়েছিল। আর সেই মক্কা মুকাররমা ও তার আশপাশসহ সমগ্র আরবভূমি মুসলিমদের করতলগত হয়েছিল। -অনুবাদক
১৫
وَاسْتَفْتَحُوا وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং কাফেরগণ নিজেরাই মীমাংসা প্রার্থনা করেছিল, ১৩ (আর তার পরিণাম হয়েছিল এই যে,) প্রত্যেক উদ্ধ্যত হঠকারী অকৃতকার্য হয়ে গেল।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
পয়গম্বরগণ ফয়সালা চাইতে লাগলেন এবং প্রত্যেক অবাধ্য, হঠকারী ব্যর্থ কাম হল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা বিজয় কামনা করল এবং প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থমনোরথ হল।
তাফসীরঃ
১৩. অর্থাৎ, তারা নবীগণের কাছে দাবী করেছিল, তোমরা সত্যবাদী হলে আল্লাহ তাআলাকে বল, তিনি যেন আমাদের উপর এমন এক শাস্তি অবতীর্ণ করেন, যা দ্বারা সত্য-মিথ্যার মীমাংসা হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে একথা বলে তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে নবীদের সঙ্গে তামাশা করছিল।
১৬
مِّن وَرَائِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَىٰ مِن مَّاءٍ صَدِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তার সামনে রয়েছে জাহান্নাম এবং (সেখানে) তাকে পান করানো হবে গলিত পুঁজ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তার পেছনে দোযখ রয়েছে। তাতে পূঁজ মিশানো পানি পান করানো হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের প্রত্যেকের জন্যে পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে এবং পান করানো হবে গলিত পুঁজ;
১৭
يَتَجَرَّعُهُ وَلَا يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ ۖ وَمِن وَرَائِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সে তা ঢোক গিলে গিলে পান করবে, মনে হবে যেন সে তা গলা থেকে নামাতে পারছে না। ১৪ মৃত্যু তার দিকে চারদিক থেকে এসে পড়বে, কিন্তু সে মরবে না ১৫ এবং তার সামনে (সর্বদা) থাকবে এক কঠিন শাস্তি। ১৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
ঢোক গিলে তা পান করবে। এবং গলার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতি দিক থেকে তার কাছে মৃত্যু আগমন করবে এবং সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গলাধঃকরণ করবে এবং তা গলাধঃকরণ করা প্রায় সহজ হবে না। সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যুযন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং এটার পর কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে।
তাফসীরঃ
১৪. এ তরজমা করা হয়েছে ইমাম রাযী (রহ.) বর্ণিত এক তাফসীরের ভিত্তিতে। তার মর্ম এই যে, তাদের অনুভব হবে তারা সে পানি গলা দিয়ে নিচে নামাতে পারছে না। তা সত্ত্বেও তারা অতি কষ্টে ঢোক গিলে দীর্ঘ সময় নিয়ে নিচে নামাবে।
১৫. চারদিক থেকে মৃত্যু আসার মানে, তার সামনে বিভিন্ন রকমের যে শাস্তি উপস্থিত হবে, দুনিয়ায় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে সে কারণে তার মৃত্যু হবে না।
১৬. অর্থাৎ, প্রত্যেক শাস্তির পর আসবে আরেক কঠিন শাস্তি, যাতে মানুষ একই রকম শাস্তি ভোগ করতে করতে তাতে অভ্যস্ত না হয়ে যায় (আল্লাহ তাআলা তা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন)।
১৮
مَّثَلُ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ ۖ لَّا يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُوا عَلَىٰ شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الضَّلَالُ الْبَعِيدُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে কুফরী কর্মপন্থা অবলম্বন করেছে তাদের অবস্থা এই যে, তাদের কর্ম সেই ছাইয়ের মত, প্রচণ্ড ঝড়ের দিনে তীব্র বাতাস যা উড়িয়ে নিয়ে যায়। ১৭ তারা যা কিছু উপার্জন করে, তার কিছুই তাদের হস্তগত হবে না। এটাই তো চরম বিভ্রান্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যারা স্বীয় পালনকর্তার সত্তার অবিশ্বাসী তাদের অবস্থা এই যে, তাদের কর্মসমূহ ছাইভস্মের মত যার উপর দিয়ে প্রবল বাতাস বয়ে যায় ধূলিঝড়ের দিন। তাদের উপার্জনের কোন অংশই তাদের করতলগত হবে না। এটাই দুরবর্তী পথভ্রষ্টতা।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের উপমা-তাদের কর্মসমূহ ভস্মসদৃশ যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করে তার কিছুই তারা তাদের কাজে লাগাতে পারে না। এটা তো ঘোর বিভ্রান্তি।
তাফসীরঃ
১৭. কাফেরগণ দুনিয়ায় কিছু ভালো কাজও করে থাকে, যেমন আর্ত ও পীড়িতদের সাহায্য ইত্যাদি। আল্লাহ তাআলার রীতি হল, তিনি এরূপ কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই তাদেরকে দিয়ে দেন। আখেরাতে তার কোন পুরস্কার তারা পাবে না। কেননা সেখানে পুরস্কার লাভের জন্য ঈমান শর্ত। সুতরাং এসব কাজ আখেরাতে তাদের কোন কাজে আসবে না। এর দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে যে, ঝড়ো হাওয়া যেমন ছাই উড়িয়ে নিয়ে যায়, তারপর তার কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না, ঠিক সে রকমই কাফেরদের কুফর তাদের সৎকর্মসমূহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ফলে তার কোন উপকার তারা আখেরাতে লাভ করবে না।
১৯
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এটা কি তোমার দৃষ্টিগোচর হয় না যে, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন? তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকে ধ্বংস করে দিতে পারেন এবং এক নতুন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন। ১৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন? যদি তিনি ইচ্ছা করেন, তবে তোমাদেরকে বিলুপ্তিতে নিয়ে যাবেন এবং নতুন সৃষ্টি আনয়ন করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী যথাবিধি সৃষ্টি করেছেন ? তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অস্তিত্ব বিলোপ করতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি অস্তিত্বে আনতে পারেন,
তাফসীরঃ
১৮. এ আয়াতে যেমন আখেরাতের অবশ্যম্ভাবিতা বর্ণনা করা হয়েছে, তেমনি এ সম্বন্ধে কাফেরদের মনে যে সংশয়-সন্দেহ দানা বাঁধে তারও জবাব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত বলা হয়েছে, এ বিশ্বজগত যথাযথ এক উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলার অনুগত বান্দাদেরকে পুরস্কার দান করা এবং তাঁর অবাধ্যদেরকে শাস্তি দেওয়া। আখেরাত না থাকলে ভালো-মন্দ এবং অনুগত ও অবাধ্য সব সমান হয়ে যায়। সুতরাং এটা ইনসাফের দাবী যে, ইহজগতের পর আরেকটি জগত থাকবে, যেখানে প্রত্যেককে তার কর্ম অনুযায়ী প্রতিফল দেওয়া হবে। বাকি থাকল কাফেরদের এই খট্কা যে, মৃত্যুর পর মানুষ তো মাটিতে মিশে যায়। এ অবস্থায় সে পুনরায় জীবিত হবে কিভাবে? পরবর্তী বাক্যে এর উত্তর দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার শক্তি অসীম। তিনি ইচ্ছা করলে তো এটাও করতে পারেন যে, তোমাদের সকলকে ধ্বংস করে এক নতুন মাখলুক সৃষ্টি করবেন। বলাবাহুল্য, সম্পূর্ণ নতুনরূপে কোন মাখলুককে নাস্তি থেকে অস্তিতে আনা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সেই তুলনায় যে মাখলুক একবার অস্তিত্ব লাভ করেছে তার মৃত্যু ঘটিয়ে তাকে পুনরায় জীবন দান করা অনেক সহজ। তো আল্লাহ তাআলা যখন অধিকতর কঠিন কাজটিই অনায়াসে করার ক্ষমতা রাখেন, তখন তুলনামূলক যেটি সহজ, সেটি কেন তার পক্ষে কঠিন হবে? নিঃসন্দেহে সেটি করতেও তিনি সমানভাবে সক্ষম।
২০
وَمَا ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর এটা আল্লাহর পক্ষে কিছু কঠিন নয়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আর এটা আল্লাহ্ র জন্যে আদৌ কঠিন নয়।
২১
وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِن شَيْءٍ ۚ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ ۖ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সমস্ত মানুষ আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। যারা (দুনিয়ায়) দুর্বল ছিল, তারা বড়ত্ব প্রদর্শনকারীদেরকে বলবে, আমরা তো তোমাদেরই অনুগামী ছিলাম। এখন কি তোমরা আমাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে একটু বাঁচাবে? তারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদেরকে হিদায়াত দান করে থাকতেন, তবে আমরাও তোমাদেরকে হিদায়াত দিতাম। এখন আমরা চিৎকার করি বা সবর করি উভয় অবস্থাই আমাদের জন্য সমান। আমাদের নিষ্কৃতি লাভের কোন উপায় নেই।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএব, তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের কে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে সমান আমাদের রেহাই নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সকলে আল্লাহ্ র নিকট উপস্থিত হবে। যারা অহংকার করত তখন দুর্বলেরা তাদেরকে বলবে, ‘আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম; এখন তোমরা আল্লাহ্ র শাস্তি হতে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে ?’ এরা বলবে, ‘আল্লাহ্ আমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করলে আমরাও তোমাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করতাম। এখন আমরা ধৈর্যচ্যুত হই বা ধৈর্যশীল হই একই কথা; আমাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।’
২২
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ إِلَّا أَن دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي ۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنفُسَكُم ۖ مَّا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنتُم بِمُصْرِخِيَّ ۖ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِ مِن قَبْلُ ۗ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে, তখন শয়তান (তার অনুসারীদেরকে) বলবে, বস্তুত আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদের সাথে তা রক্ষা করিনি। তোমাদের উপর আমার এর বেশি কিছু ক্ষমতা ছিল না যে, আমি তোমাদেরকে (আল্লাহর অবাধ্যতা করার) দাওয়াত দিয়েছিলাম আর তোমরা আমার কথা শুনেছিলে। সুতরাং এখন আমাকে দোষারোপ করো না, বরং নিজেদেরই দোষারোপ কর। না তোমাদের বিপদ মুক্তিতে আমি তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারি আর না আমার বিপদ মুক্তিতে তোমরা আমার কোন সাহায্য করতে পার। এর আগে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছিলে (আজ) আমি তা প্রত্যাখ্যান করলাম। ১৯ যারা এ সীমালংঘন করেছিল আজ তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর তো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, ‘আল্লাহ্ তো তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের ওপর কোন আধিপত্য ছিল না, আমি কেবল তোমাদেরকে আহ্বান করেছিলাম এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে। সুতরাং তোমরা আমার প্রতি দোষারোপ কর না, তোমরা নিজেদেরই প্রতি দোষারোপ কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্য করতে সক্ষম নও। তোমরা যে পূর্বে আমাকে আল্লাহ্ র শরীক করেছিলে আমি তা অস্বীকার করছি, জালিমদের জন্যে তো মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।
তাফসীরঃ
১৯. শয়তানকে আল্লাহ তাআলার শরীক সাব্যস্ত করার অর্থ তার এমন আনুগত্য করা, যেমন আনুগত্য কেবল আল্লাহ তাআলারই হতে পারে। শয়তান সে দিন বলবে, আজ আমি তোমাদের সেই কর্মপন্থার যথার্থতা অস্বীকার করছি।
২৩
وَأُدْخِلَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ ۖ تَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর যারা ঈমান এনেছিল ও সৎকর্ম করেছিল, তাদেরকে এমন উদ্যানরাজিতে দাখিল করা হবে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে। নিজ প্রতিপালকের হুকুমে তারা সর্বদা তাতে (উদ্যানরাজিতে) থাকবে। তাতে তাদের পারস্পরিক অভিবাদন হবে সালাম। ২০
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং যারা বিশ্বাস স্থাপণ করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদেরকে এমন উদ্যানে প্রবেশ করানো হবে, যার পাদদেশ দিয়ে নির্ঝরিনী সমূহ প্রবাহিত হবে তারা তাতে পালনকর্তার নির্দেশে অনন্তকাল থাকবে। যেখানে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে দাখিল করা হবে জান্নাতে যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।
তাফসীরঃ
২০. উপরে জাহান্নামীদের পারস্পরিক কথপোকথন উল্লেখ করা হয়েছিল, তারা একে অন্যকে দোষারোপও করবে এবং এ কথার ঘোষণা দেবে যে, এখন তাদের জন্য ধ্বংস ছাড়া কিছু নেই। এর বিপরীতে জান্নাতবাসীদের অবস্থা বলা হয়েছে, তারা প্রতিটি সাক্ষাতে একে অন্যকে ধ্বংসের বিপরীতে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা শোনাবে।
২৪
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি দেখনি আল্লাহ কালেমা তায়্যিবার কেমন দৃষ্টান্ত দিয়েছেন? তা এক পবিত্র বৃক্ষের মত, যার মূল (ভূমিতে) সুদৃঢ়ভাবে স্থিত আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত। ২১
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি কি লক্ষ্য কর না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেনঃ পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি লক্ষ্য কর না আল্লাহ্ কিভাবে উপমা দিয়ে থাকেন ? সৎবাক্যের তুলনা উৎকৃষ্ট বৃক্ষ যার মূল সুদৃঢ় ও যার শাখা-প্রশাখা ঊর্ধ্বে বিস্তৃত,
তাফসীরঃ
২১. কালিমা তায়্যিবা দ্বারা কালিমা তাওহীদ অর্থাৎ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বোঝানো হয়েছে। অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেন, ‘পবিত্র বৃক্ষ’ হল খেজুর গাছ। খেজুর গাছের শিকড় মাটির নিচে অত্যন্ত শক্তভাবে গাড়া থাকে। তীব্র বাতাস বা ঝড়ো হাওয়া তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। এভাবেই তাওহীদের কালিমা যখন মানুষের মন-মস্তিষ্কে বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন ঈমানের কারণে তার সামনে যতই কষ্ট-ক্লেশ ও বিপদাপদ দেখা দিক না কেন, তাতে তার ঈমানে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা সৃষ্টি হয় না। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে কত রকমের কষ্টই না দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাদের অন্তরে তাওহীদের যে কালিমা বাসা বেঁধেছিল, বিপদাপদের ঝড়ো-ঝঞ্ঝায় তাতে এতটুকু কাঁপন ধরেনি। আয়াতে খেজুর গাছের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য বলা হয়েছে তার শাখা-প্রশাখা আকাশের দিকে বিস্তৃত থাকে এবং ভূমির মলিনতা থেকে দূরে থাকে। এভাবেই মুমিনের অন্তরে যখন তাওহীদের কালিমা বদ্ধমূল হয়ে যায়, তখন তার সমস্ত শাখা-প্রশাখা অর্থাৎ সৎকর্মসমূহ দুনিয়াদারির মলিনতা হতে মুক্ত থেকে আসমানের দিকে চলে যায় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে পৌঁছে তাঁর সন্তুষ্টি হাসিল করে নেয়।
২৫
تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তা নিজ প্রতিপালকের নির্দেশে প্রতি মুহূর্তে ফল দেয়। ২২ আল্লাহ (এ জাতীয়) দৃষ্টান্ত দেন, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণণা করেন-যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যা প্রত্যেক মওসুমে এর ফলদান করে এর প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। এবং আল্লাহ্ মানুষের জন্যে উপমা দিয়ে থাকেন, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
তাফসীরঃ
২২. অর্থাৎ, এ গাছ সদা সজীব। কখনও পাতা ঝরে ন্যাড়া হয় না। সর্বাবস্থায় ফল দেয়। এর দ্বারা খেজুর গাছ বোঝানো হয়ে থাকলে এর অর্থ হবে, এর ফল সারা বছরই খাওয়া হয়। তাছাড়া যে মওসুমে গাছে ফল থাকে না, তখনও তা দ্বারা বহুমাত্রিক উপকার লাভ হয়। কখনও তার রস আহরণ করা হয়। কখনও তার শাঁস বের করে খাওয়া হয়। তার পাতা দ্বারা বিভিন্ন রকমের জিনিস তৈরি করা হয়। এমনিভাবে যখন কেউ কালিমা তায়্যিবার প্রতি ঈমান এনে ফেলে, তখন সে সচ্ছল থাকুক বা অসচ্ছল, আরামে থাকুক বা কষ্টে, সর্বাবস্থায় ঈমানের বদৌলতে তার আমলনামায় উত্তরোত্তর পূণ্য বাড়তে থাকে। ফলে তার পুরস্কারেও মাত্রা যোগ হতে থাকে, যা প্রকৃতপক্ষে তাওহীদী কালিমারই ফল।
২৬
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর অপবিত্র কালিমার দৃষ্টান্ত এক মন্দ বৃক্ষ, যা ভূমির উপরিভাগ থেকেই উপড়ে ফেলা যায়। তার একটুও স্থায়িত্ব নেই। ২৩
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
কুবাক্যের তুলনা এক মন্দ বৃক্ষ যার মূল ভূপৃষ্ঠ হতে বিচ্ছিন্ন, যার কোন স্থায়িত্ব নেই।
তাফসীরঃ
২৩. অপবিত্র কালিমা দ্বারা কুফরী কথা বোঝানো হয়েছে। এর দৃষ্টান্ত হল এমন নিকৃষ্ট গাছ, যার কোন মজবুত শিকড় নেই। তা ঝোপ-ঝাড়ের মত আপনা-আপনিই জন্ম নেয়। তার একটুও স্থিতাবস্থা থাকে না। তাই যে-কেউ ইচ্ছা করলে তা অনায়াসেই উপড়ে ফেলতে পারে। এমনিভাবে কুফরী আকীদা-বিশ্বাসের যুক্তি-প্রমাণগত কোনও ভিত্তি থাকে না। অতি সহজেই তা রদ করা যায়। খুব সম্ভব এর দ্বারা মুসলিমদেরকে সান্তনা দেওয়া হয়েছে যে, কুফর ও শিরকের যে আকীদাসমূহ বর্তমানে মুসলিমদের পক্ষে ভূমি সংকীর্ণ করে রেখেছে, সে দিন দূরে নয়, যখন এগুলো ঝোপ-ঝাড়ের মত উপড়ে ফেলা হবে।
২৭
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদেরকে এ সুদৃঢ় কথার উপর স্থিতি দান করেন দুনিয়ার জীবনেও এবং আখেরাতেও। ২৪ আর আল্লাহ জালেমদেরকে করেন বিভ্রান্ত। আল্লাহ (নিজ হিকমত অনুযায়ী) যা চান, তাই করেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যারা শাশ্বত বাণীতে বিশ্বাসী তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে আল্লাহ্ সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন এবং যারা জালিম আল্লাহ্ এদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আল্লাহ্ যা ইচ্ছা তা করেন।
তাফসীরঃ
২৪. দুনিয়ায় স্থিতি দান করার অর্থ, তাদের উপর যত জুলুম-নিপীড়নই চালানো হোক, তারা এ কালিমা ত্যাগ করতে কিছুতেই সম্মত হবে না। আর আখেরাতে স্থিতি সৃষ্টির অর্থ হল, কবরে যখন সওয়াল-জওয়াবের সম্মুখীন হবে, তখন তারা এ কালিমায় বিশ্বাসের কথা প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। ফলে আখেরাতে তাদের স্থায়ী নি‘আমত লাভ হবে।
২৮
۞ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা আল্লাহর নি‘আমতকে কুফর দ্বারা পরিবর্তন করে ফেলেছে এবং নিজ সম্প্রদায়কে ধ্বংস-নিবাসে পৌঁছে দিয়েছে-
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কি এদেরকে লক্ষ্য কর না, যারা আল্লাহ্ র অনুগ্রহের বদলে অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং এরা এদের সম্প্রদায়কে নামাইয়া আনে ধ্বংসের ক্ষেত্রে-
২৯
جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا ۖ وَبِئْسَ الْقَرَارُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
জাহান্নামে? ২৫ তারা তাতে দগ্ধ হবে আর তা অতি মন্দ ঠিকানা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
দোযখের? তারা তাতে প্রবেশ করবে সেটা কতই না মন্দ আবাস।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
জাহান্নামে, যার মধ্যে এরা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট এই আবাসস্থল!
তাফসীরঃ
২৫. এর দ্বারা মক্কা মুকাররমার কাফের সর্দারদের দিকে ইশারা করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নানা প্রকার নি‘আমত ও বিত্ত-বৈভব দান করেছিলেন। কিন্তু তারা সেসব নি‘আমতের চরম না-শোকরী করে। পরিণামে তারা নিজেদেরকে তো ধ্বংস করলই, সঙ্গে নিজ সম্প্রদায়কেও ধ্বংসের পথে নিয়ে গেল।
৩০
وَجَعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا لِّيُضِلُّوا عَن سَبِيلِهِ ۗ قُلْ تَمَتَّعُوا فَإِنَّ مَصِيرَكُمْ إِلَى النَّارِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আর তারা আল্লাহর সাথে (তাঁর প্রভুত্বে) কতিপয় শরীক সাব্যস্ত করেছে, যাতে মানুষকে তার পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে। তাদেরকে বল, (অল্প কিছু) ভোগ করে নাও। শেষ পর্যন্ত তোমাদেরকে জাহান্নামেই যেতে হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তারা আল্লাহর জন্যে সমকক্ষ স্থির করেছে, যাতে তারা তার পথ থেকে বিচ্যুত করে দেয়। বলুনঃ মজা উপভোগ করে নাও। অতঃপর তোমাদেরকে অগ্নির দিকেই ফিরে যেতে হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং এরা আল্লাহ্ র সমকক্ষ নির্ধারণ করে তাঁর পথ হতে বিভ্রান্ত করার জন্যে। বল, ‘ভোগ করে লও, পরিণামে দোযখই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল।’
৩১
قُل لِّعِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا يُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خِلَالٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আমার যে বান্দাগণ ঈমান এনেছে তাদেরকে বল, যেন নামায কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (সৎকাজে) ব্যয় করে (এবং এ কাজ) সেই দিন আসার আগে-আগেই (করে), যে দিন কোন বেচাকেনা থাকবে না এবং কোন বন্ধুত্বও কাজে আসবে না। ২৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
আমার বান্দাদেরকে বলে দিন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তারা নামায কায়েম রাখুক এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক ঐদিন আসার আগে, যেদিন কোন বেচা কেনা নেই এবং বন্ধুত্বও নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মু’মিন তাদেরকে তুমি বল, সালাত কায়েম করতে এবং আমি তাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে-সেই দিনের পূর্বে যেদিন ক্রয়-বিক্রয় ও বন্ধুত্ব থাকবে না।’
তাফসীরঃ
২৬. এর দ্বারা হিসাব-নিকাশের দিন বোঝানো হয়েছে। সে দিন কেউ না পারবে টাকা-পয়সার বিনিময়ে জান্নাত কিনতে আর না পারবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দ্বারা নিজেকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে।
৩২
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْأَنْهَارَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
আল্লাহ তিনি, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল উৎপাদন করেছেন এবং জলযানসমূহকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তা তাঁর নির্দেশে সাগরে চলাচল করে আর নদ-নদীকেও তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে অতঃপর তা দ্বারা তোমাদের জন্যে ফলের রিযিক উৎপন্ন করেছেন এবং নৌকাকে তোমাদের আজ্ঞাবহ করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলা ফেরা করে এবং নদ-নদীকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনিই আল্লাহ্ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তা দিয়ে তোমাদের জীবিকার জন্যে ফলমূল উৎপাদন করেন, যিনি নৌযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর বিধানে তা সমুদ্রে বিচরণ করে এবং যিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন নদীসমূহকে।
৩৩
وَسَخَّرَ لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَائِبَيْنِ ۖ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন, যা অবিরাম পরিভ্রমণরত রয়েছে। আর তোমাদের জন্য রাত ও দিনকেও কাজে লাগিয়ে রেখেছেন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এবং তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে এবং চন্দ্রকে সর্বদা এক নিয়মে এবং রাত্রি ও দিবাকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তিনি তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন সূর্য ও চন্দ্রকে, যারা অবিরাম একই নিয়মের অনুবর্তী এবং তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি ও দিবসকে।
৩৪
وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ ۚ وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ الْإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তোমরা যা-কিছু চেয়েছ, তিনি তার মধ্য হতে (যা তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক তা) তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা আল্লাহর নি‘আমতসমূহ গুণতে শুরু করলে, তা গুণতে সক্ষম হবে না। বস্তুত মানুষ অতি অন্যায়াচারী, ঘোর অকৃতজ্ঞ।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, তবে গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর নিকট যা কিছু চেয়েছ তা হতে। তোমরা আল্লাহ্ র অনুগ্রহ গণনা করলে এর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতিমাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।
৩৫
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـٰذَا الْبَلَدَ آمِنًا وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعْبُدَ الْأَصْنَامَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম (আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করছিল আর তাতে) বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন ২৭ এবং আমাকে ও আমার পুত্রকে মূর্তিপূজা করা হতে রক্ষা করুন। ২৮
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে শান্তিময় করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
স্মরণ কর, ইব্রাহীম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীকে নিরাপদ কর এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হতে দূরে রেখ।
তাফসীরঃ
২৭. মক্কা মুকাররমার মুশরিকগণ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে নিজেদের শ্রেষ্ঠতম মান্যবর হিসেবে গণ্য করত। তাই আল্লাহ তাআলা এ আয়াতসমূহে তাঁর দু‘আর বরাত দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করছেন যে, তিনি তো মূর্তিপূজাকে চরম ঘৃণা করতেন, যে কারণে নিজ সন্তানদেরকে পর্যন্ত তা থেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করেছিলেন। তা তার অনুসরণের দাবীদার হয়ে তোমরা কিসের ভিত্তিতে মূর্তিপূজা শুরু করলে?
২৮. এর দ্বারা পবিত্র মক্কা নগরকে বোঝানো হয়েছে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার নির্দেশে নিজ পত্নী হযরত হাজেরা (আ.) ও পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে এখানে রেখে গিয়েছিলেন। তখন এখানে কোন লোকালয় ছিল না। এমনকি জীবন রক্ষার কোনও উপাদানও এখানে পাওয়া যেত না। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম এখানে যমযম কুয়াটি জারি করে দেন। সে কুয়ার পানি দেখে জুরহুম গোত্রের লোক হযরত হাজেরা (আ.)-এর অনুমতিক্রমে সেখানে বসবাস শুরু করে দেয়। কালক্রমে এটি এক নগরে পরিণত হয়।
৩৬
رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ ۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُ مِنِّي ۖ وَمَنْ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমার প্রতিপালক! ওইসব প্রতিমা বিপুল সংখ্যক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে। সুতরাং যে-কেউ আমার অনুসরণ করবে, সে আমার দলভুক্ত আর কেউ আমাকে অমান্য করলে (তার বিষয়টা আমি আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি), আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ২৯
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে পালনকর্তা, এরা অনেক মানুষকে বিপথগামী করেছে। অতএব যে আমার অনুসরণ করে, সে আমার এবং কেউ আমার অবাধ্যতা করলে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমার প্রতিপালক! এই সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে-ই আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
তাফসীরঃ
২৯. অর্থাৎ, আমি আমার সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য লোকদেরকে মূর্তিপূজা হতে বেঁচে থাকার আদেশ করতে থাকব। যারা আমার আদেশমত কাজ করবে তারা আমার অনুসারী বলে দাবী করার অধিকার রাখবে। কিন্তু যারা আমার কথা মানবে না, তারা আমার দলের থাকবে না। তবে আমি তাদের জন্য বদদু‘আ করি না। তাদের বিষয়টা আমি আপনার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি। আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুতরাং আপনি তাদেরকে হিদায়াত দিয়ে মাগফিরাতের ব্যবস্থাও করতে পারেন।
৩৭
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার কতিপয় ৩০ সন্তানকে আপনার সম্মানিত ঘরের আশেপাশে এমন এক উপত্যকায় এনে বসবাস করিয়েছি, যেখানে কোন ক্ষেত-খামার নেই। হে আমাদের প্রতিপালক! (এটা আমি এজন্য করেছি) যাতে তারা নামায কায়েম করে। সুতরাং মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি করে দিন এবং তাদেরকে ফলমূলের জীবিকা দান করুন, ৩১ যাতে তারা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমাদের পালনকর্তা, আমি নিজের এক সন্তানকে তোমার পবিত্র গৃহের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় আবাদ করেছি; হে আমাদের পালনকর্তা, যাতে তারা নামায কায়েম রাখে। অতঃপর আপনি কিছু লোকের অন্তরকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদেরকে ফলাদি দ্বারা রুযী দান করুন, সম্ভবতঃ তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র গৃহের নিকট, হে আমাদের প্রতিপালক! এইজন্যে যে, এরা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব তুমি কিছু লোকের অন্তর এদের প্রতি অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দিয়ে এদের রিযিকের ব্যবস্থা কর, যাতে এরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
তাফসীরঃ
৩০. আল্লাহ তাআলার কাছে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দু‘আ পরিপূর্ণরূপে কবুল হয়েছে, যে কারণে মক্কা মুকাররমার প্রতি সারা বিশ্বের সকল মুসলিমের হৃদয় থাকে অনুরাগ-উদ্বেলিত। হজ্জের মওসুমে তার নিদর্শন কার না চোখে পড়ে? কত দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কত কষ্ট করে এই জল-বৃক্ষহীন ভূমিতে ছুটে আসে। হজ্জের মওসুম ছাড়া অন্য সময়েও অসংখ্য মানুষ উমরা ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য এখানে ভিড় করে। একবার যে এখানে আসে তার বারবার আসার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। আর এখানে ফলমূল যে পরিমাণ পাওয়া যায় তা আরেক বিস্ময়। দুনিয়ার সব রকম ফলের সাংবাৎসরিক সমাহার পবিত্র মক্কার মত আর কোথায় আছে? অথচ এখানকার ভূমিতে নিজস্ব কোন ফল কখনও উৎপন্ন হয় না।
৩১. অর্থাৎ হযরত ইসমাঈল ও তার ভবিষ্যত বংশধরদেরকে। তাঁর অপর পুত্র হযরত ইসহাক ও তাঁর বংশধরগণ শামে বসবাস করতেন। -অনুবাদক
৩৮
رَبَّنَا إِنَّكَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِي وَمَا نُعْلِنُ ۗ وَمَا يَخْفَىٰ عَلَى اللَّهِ مِن شَيْءٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যে কাজ লুকিয়ে করি তাও আপনি জানেন এবং যে কাজ প্রকাশ্যে করি তাও। পৃথিবীতে যা আছে তার কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন থাকে না এবং আকাশে যা কিছু আছে তাও না।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি তো জানেন আমরা যা কিছু গোপনে করি এবং যা কিছু প্রকাশ্য করি। আল্লাহর কাছে পৃথিবীতে ও আকাশে কোন কিছুই গোপন নয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তো জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহ্ র নিকট গোপন থাকে না।
৩৯
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে ইসমাঈল ও ইসহাক (-এর মত পুত্র) দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অত্যধিক দু‘আ শ্রবণকারী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে এই বার্ধক্যে ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন নিশ্চয় আমার পালনকর্তা দোয়া শ্রবণ করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ র ই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইস্মাঈল ও ইস্হাককে দান করেছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন।
৪০
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমার প্রতিপালক! আমাকেও নামায কায়েমকারী বানিয়ে দিন এবং আমার আওলাদের মধ্য হতেও (এমন লোক সৃষ্টি করুন, যারা নামায কায়েম করবে)। হে আমার প্রতিপালক! এবং আমার দু‘আ কবুল করে নিন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী কর এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের প্রতিপালক! আমার প্রার্থনা কবূল কর।
৪১
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
হে আমার প্রতিপালক! যে দিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সে দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ৩২ ও সকল ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
‘হে আমাদের প্রতিপালক! যেই দিন হিসেব অনুষ্ঠিত হবে সেই দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মু’মিনগণকে ক্ষমা কর।’
তাফসীরঃ
৩২. এখানে কারও খটকা লাগতে পারে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পিতা আযর তো ছিল কাফের। তা সত্ত্বেও তিনি তার মাগফিরাতের জন্য দু‘আ করলেন কিভাবে? এর উত্তর এই যে, হতে পারে তিনি যখন এ দু‘আ করেছিলেন, তখন কুফর অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটা সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন না। সুতরাং তাঁর দু‘আর অর্থ ছিল, আপনি তাকে ঈমানের তাওফীক দিন, যাতে তা তার মাগফিরাত লাভের কারণ হয়ে যায়। আবার এ ব্যাখ্যাও হতে পারে যে, তখনও পর্যন্ত তাঁকে তার মুশরিক পিতার জন্য দু‘আ করতে নিষেধ করা হয়নি।
৪২
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ ۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الْأَبْصَارُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তুমি কিছুতেই মনে করো না জালিমগণ যা-কিছু করছে আল্লাহ সে সম্পর্কে বেখবর। ৩৩ তিনি তো তাদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দিচ্ছেন, যে দিন চক্ষুসমূহ থাকবে বিস্ফারিত।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহকে কখনও বেখবর মনে করো না তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কখনও মনে কর না যে, জালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ্ গাফিল, তবে তিনি এদেরকে সেই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চোখ হবে স্থির।
তাফসীরঃ
৩৩. পূর্বে বলা হয়েছিল, জালেমগণ আল্লাহ তাআলার নি‘আমতের অকৃতজ্ঞতা করে নিজ সম্প্রদায়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। কারও মনে খটকা জাগতে পারত, দুনিয়ায় তো তাদেরকে ক্রমশ উন্নতি লাভ করতেই দেখা যাচ্ছে। এ আয়াতসমূহে তার সমাধান দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ঢিল দিয়ে রেখেছেন। পরিশেষে বিভীষিকাময় এক শাস্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। তখন তাদের ভীতি-বিহ্বলতার যে অবস্থা হবে তা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভাষায়, সালংকার বাকশৈলীতে ব্যক্ত করা হয়েছে, যার আবেদন তরজমার মাধ্যমে অন্য কোন ভাষায় প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। যদিও এটাকে সরাসরি মক্কার কাফেরদের পরিণাম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু এর ভাষা যেহেতু সাধারণ, তাই যে-কোনও জালেম সম্প্রদায়ের খুব বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা চোখে পড়বে, তাদের সম্পর্কেই এ আয়াত প্রযোজ্য হবে।
৪৩
مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ ۖ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা মাথা উপর দিকে তুলে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দৃষ্টি পলক ফেলার জন্য ফিরে আসবে না। ৩৪ আর (ভীতি বিহ্বলতার কারণে) তাদের প্রাণ উড়ে যাওয়ার উপক্রম করবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহবল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ভীত-বিহŸল চিত্তে আকাশের দিকে চাহিয়া এরা ছুটাছুটি করবে, নিজেদের প্রতি এদের দৃষ্টি ফিরিবে না এবং এদের অন্তর হবে উদাস।
তাফসীরঃ
৩৪. অর্থাৎ, তাদের সামনে যে ভয়াল পরিণাম দেখা দেবে, সে কারণে তারা একই দিকে অপলক তাকিয়ে থাকবে। দুনিয়ায় চোখে পলক দেওয়ার যে শক্তি ছিল, সে দিন সে শক্তি তাদের ফিরে আসবে না।
৪৪
وَأَنذِرِ النَّاسَ يَوْمَ يَأْتِيهِمُ الْعَذَابُ فَيَقُولُ الَّذِينَ ظَلَمُوا رَبَّنَا أَخِّرْنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ نُّجِبْ دَعْوَتَكَ وَنَتَّبِعِ الرُّسُلَ ۗ أَوَلَمْ تَكُونُوا أَقْسَمْتُم مِّن قَبْلُ مَا لَكُم مِّن زَوَالٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং (হে নবী!) তুমি মানুষকে সেই দিন সম্পর্কে সতর্ক কর, যেদিন তাদের উপর আযাব আপতিত হবে আর তখন জালেমগণ বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পকালের জন্য সুযোগ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব। ৩৫ (তখন তাদেরকে বলা হবে) আরে, তোমরা কি কসম করে বলনি তোমাদের কোন লয় নেই?
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
মানুষকে ঐ দিনের ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন তাদের কাছে আযাব আসবে। তখন জালেমরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে সামান্য মেয়াদ পর্যন্ত সময় দিন, যাতে আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিতে এবং পয়গম্বরগণের অনুসরণ করতে পারি। তোমরা কি ইতোপূর্বে কসম খেতে না যে, তোমাদেরকে দুনিয়া থেকে যেতে হবে না?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেই দিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর, তখন জালিমরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছু কালের জন্যে অবকাশ দাও, আমরা তোমার আহ্বানে সাড়া দিব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব।’ তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলিতে না যে, তোমাদের পতন নেই ?
তাফসীরঃ

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

৩৫. তাদের একথা মৃত্যুকালেও হতে পারে কিংবা কিয়ামতেও হতে পারে, মৃত্যুকালে হলে এর অর্থ হল, মৃত্যুর অসহনীয় যন্ত্রণা দেখে তারা বলবে, আমাদেরকে আরও কিছুদিন দুনিয়ায় থাকার সুযোগ দিন। আমরা ওয়াদা করছি, আমরা দীন ও ঈমান কবুল করে নিজেদেরকে শুধরে নেব, যেমন সূরা মুমিনুনে আছে, যখন তাদের কারও মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ কর, যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি’। (সূরা মুমিনুন ২৩ : ৯৯-১০০) এবং সূরা মুনাফিকূনে আছে, ‘মৃত্যু আসলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে আরও কিছুকালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সদাকা দিতাম এবং সৎর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকূন ৬৩ : ১১) আর এটা যদি তাদের কিয়ামত দিবসের কথা হয় তবে এর অর্থ হবে, আমাদের কিছুদিনের জন্য ফের দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন আমরা ওয়াদা করছি আপনার অনুগত হয়ে চলব, যেমন সূরা সাজদায় আছে, ‘তুমি যদি দেখতে, যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের সামনে অধোবদন হয়ে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শুনলাম। এখন তুমি আমাদের ফের পাঠাও আমরা সৎকাজ করব।’ (সূরা সাজদা ৩২ : ১২) -অনুবাদক
৪৫
وَسَكَنتُمْ فِي مَسَاكِنِ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ وَتَبَيَّنَ لَكُمْ كَيْفَ فَعَلْنَا بِهِمْ وَضَرَبْنَا لَكُمُ الْأَمْثَالَ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল, তাদের বাসভূমিতে তোমরা থেকেছিলে এবং তাদের সঙ্গে আমি কি আচরণ করেছি তাও তোমাদের কাছে প্রকাশ পেয়েছিল আর তোমাদের সামনে দৃষ্টান্তও পেশ করেছিলাম।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তোমরা তাদের বাসভূমিতেই বসবাস করতে, যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছে এবং তোমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল যে, আমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছি এবং আমি তোমাদেরকে ওদের সব কাহিনীই বর্ণনা করেছি।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
অথচ তোমরা বাস করতে তাদের বাসভূমিতে, যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কি করেছিলাম তাও তোমাদের নিকট সুবিদিত ছিল এবং তোমাদের নিকট আমি এদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম।
৪৬
وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তারা তাদের সব রকম চাল চেলেছিল, কিন্তু আল্লাহর কাছে তাদের সমস্ত চাল ব্যর্থ করারও ব্যবস্থা ছিল, হোক না তাদের চালসমূহ এমন (শক্তিশালী), যাতে পাহাড়ও টলে যায়।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের কুটকৌশল পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মত হবে না।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এরা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু এদের চক্রান্ত আল্লাহ্ রহিত করেছেন, যদিও এদের চক্রান্ত এমন ছিল, যাতে পর্বত টলে যেত।
৪৭
فَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সুতরাং আল্লাহ সম্পর্কে কখনও এমন ধারণা মনে আসতে দেবে না যে, তিনি নিজ রাসূলদেরকে দেওয়া ওয়াদার বিপরীত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, (এবং) শাস্তিদাতা।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
অতএব আল্লাহর প্রতি ধারণা করো না যে, তিনি রসূলগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
তুমি কখনও মনে কর না যে, আল্লাহ্ তাঁর রাসূলগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, দণ্ড-বিধায়ক।
৪৮
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ ۖ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
সেই দিন, যে দিন এ পৃথিবীকে অন্য এক পৃথিবী দ্বারা বদলে দেওয়া হবে এবং আকাশমণ্ডলীকেও (বদলে দেওয়া হবে) এবং সকলেই এক পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আকাশ সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এবং আল্লাহর সামনে পেশ হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহ্ র সামনে-যিনি এক পরাক্রমশালী।
৪৯
وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এবং সে দিন তুমি অপরাধীদেরকে শিকলে কষে বাঁধা অবস্থায় দেখবে।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তুমি ঐদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলা বদ্ধ দেখবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
সেই দিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃংখলিত অবস্থায়,
৫০
سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٍ وَتَغْشَىٰ وُجُوهَهُمُ النَّارُ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন করবে-
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
তাদের জামা হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডলকে আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে এদের মুখমণ্ডল;
৫১
لِيَجْزِيَ اللَّهُ كُلَّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ ۚ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এইজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল দেবেন। আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
যাতে আল্লাহ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেন। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা এইজন্যে যে, আল্লাহ্ প্রত্যেকের কৃতকর্মের প্রতিফল দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দ্রুত হিসেব গ্রহণ করেন।
৫২
هَـٰذَا بَلَاغٌ لِّلنَّاسِ وَلِيُنذَرُوا بِهِ وَلِيَعْلَمُوا أَنَّمَا هُوَ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ وَلِيَذَّكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ
অর্থঃ
মুফতী তাকী উসমানী
এটা সমস্ত মানুষের জন্য এক বার্তা এবং এটা এই জন্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে এর মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং যাতে তারা জানতে পারে সত্য মাবুদ কেবল একজনই এবং যাতে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ উপদেশ গ্রহণ করে। ৩৬
মাওলানা মুহিউদ্দিন খান
এটা মানুষের একটি সংবাদনামা এবং যাতে এতদ্বারা ভীত হয় এবং যাতে জেনে নেয় যে, উপাস্য তিনিই-একক; এবং যাতে বুদ্ধিমানরা চিন্তা-ভাবনা করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
এটা মানুষের জন্যে এক বার্তা, যাতে এটা দিয়ে এরা সতর্ক হয় এবং জানতে পারে যে, তিনি একমাত্র ইলাহ্ এবং যাতে বোধশক্তি-সম্পন্নেরা উপদেশ গ্রহণ করে।
তাফসীরঃ
৩৬. এ আয়াতে কুরআন মাজীদের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে (ক) এটা এমন এক বার্তা, যা মানুষের উপদেশ বাণী হিসেবে যথেষ্ট। কেউ যদি একনিষ্ঠ মনে এ কিতাব পাঠ করে, তবে তার অন্তরে এর তাছীর হবেই। (খ) এটি এমন এক সতর্কবাণী, যা দ্বারা মানুষকে দোজাহানের ক্ষতি থেকে সতর্কীকরণের পূর্ণতাবিধান হয়ে গেছে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীগণের মাধ্যমে যে সতর্কীকরণের সিলসিলা চালু করা হয়েছিল তা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে এ গ্রন্থের মাধ্যমে। এরপর আর নতুন কোন সতর্কবাণীর প্রয়োজন নেই। (গ) এর দ্বারা চিন্তা-চেতনার পূর্ণতা বিধান করা হয়েছে। মানুষ একাগ্র মনে এ কিতাব পাঠ করলে তার চিন্তা-চেতনা তাওহীদের দিকে ধাবিত হবে এবং চূড়ান্ত পর্বে সে স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, মাবুদ কেবল একজনই এবং নিজেকে তার দাসত্বে লীন করে দেওয়ার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। (ঘ) নিজেকে মুত্তাকী-পরহেযগার বানানো তথা মননে-কর্মে নিজেকে উৎকর্ষমণ্ডিত করে তোলার সর্বোত্তম পথ নির্দেশ। আয়াতের শেষবাক্যে সেদিকেই ইঙ্গিত। -অনুবাদক

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

আরবী উচ্চারন ও বাংলা অর্থ সহ ৩০ পাড়া কুরআন শরীফ

১. সূরা আল-ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

২. সূরা আল-বাকারা বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৩. সূরা আল-ইমরান বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৪. সূরা আল-নিসা বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৫. সূরা আল-মায়িদাহ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৬. সূরা আল-আনআম বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৭. সূরা আল-আরাফ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৮. সূরা আল-আনফাল বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৯. সূরা আল-তাওবাহ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

১০. সূরা আল-ইউনুস বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

১১. সূরা আল-হুদ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

১২. সূরা আল-ইউসুফ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

১৩. সূরা আল-আর রাদ বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

১৪. সূরা আল-ইব্রাহীম বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

৪৯. সূরা আল-হুজরাত বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ লিংক

(ads2)

Post a Comment

0 Comments