সূরা লুকমান ডাউনলোড, নামাজের শেষে সুরা লুকমান পাঠের গুরুত্ব, ৫ ওয়াক্ত সালাতে লুকমান পড়ার গুরুত্ব,৫ ওয়াক্ত নামাজে লুকমান আমল ও ফজিলত, ৫০৫ বার সূরা লুকমান, ৯৯৯ বার সূরা লুকমান

  

সূরা লুকমান বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা লুকমান বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল লুকমান বাংলা তরজমা,সূরা লুকমান বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল লুকমান, সকল আমল সূরা আল লুকমান

৩১ . লুকমান - ( لقمان ) | একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ৩৪


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


الٓـمّٓ ۚ


আলিফ লাম মীম।


মুফতী তাকী উসমানী

আলিফ-লাম-মীম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আলিফ-লাম-মীম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আলিফ-লাম-মীম ;



تِلۡکَ اٰیٰتُ الۡکِتٰبِ الۡحَکِیۡمِ ۙ


তিলকা আ-ইয়া-তুল কিতা-বিল হাকীম।


মুফতী তাকী উসমানী

এগুলো হেকমতপূর্ণ কিতাবের আয়াত


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইগুলি জ্ঞানগর্ভ কিতাবের আয়াত,



ہُدًی وَّرَحۡمَۃً لِّلۡمُحۡسِنِیۡنَ ۙ


হুদাওঁ ওয়া রাহমাতাল লিলমুহছিনীন।


মুফতী তাকী উসমানী

যা সৎকর্মশীলদের জন্য হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হেদায়েত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পথনির্দেশ ও দয়াস্বরূপ সৎকর্মপরায়ণদের জন্যে ;



الَّذِیۡنَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَیُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَہُمۡ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ ؕ


আল্লাযীনা ইউকীমূনাসসালা-তা ওয়া ইউ’তূনাঝঝাকা-তা ওয়া হুম বিলআ-খিরাতি হুম ইঊকিনূন।

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#08b2c4)


মুফতী তাকী উসমানী

(সেই সকল লোকের জন্য,) যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাতের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়, আর তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী ;



اُولٰٓئِکَ عَلٰی ہُدًی مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ


উলাইকা ‘আলা-হুদাম মিররাব্বিহিম ওয়া উলাইকা হুমুল মুফলিহূন।


মুফতী তাকী উসমানী

তারাই তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে সরল পথে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং তারাই সফলকাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এসব লোকই তাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে আগত হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম।



وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّیَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ


ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইয়াশতারী লাহওয়াল হাদীছিলিইউদিল্লা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়া ইয়াত্তাখিযাহা-হুঝুওয়ান উলাইকা লাহুম ‘আযা-বুম মুহীন।


মুফতী তাকী উসমানী

কতক মানুষ এমন, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিচ্যুত করার জন্য খরিদ করে এমন সব কথা, ১ যা আল্লাহ সম্পর্কে উদাসীন করে দেয় ২ এবং তারা আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্ র পথ হতে বিচ্যুত করার জন্যে অসার বাক্য ক্রয় করে নেয় এবং আল্লাহ্-প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদেরই জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।


তাফসীরঃ

১. কুরআন মাজীদের দুর্বার আকর্ষণের কারণে, তখনও যারা ঈমান আনেনি তারা পর্যন্ত লুকিয়ে লুকিয়ে তার তেলাওয়াত শুনত এবং এর ফলশ্রুতিতে অনেকে ইসলামও গ্রহণ করত। কাফেরগণ এ পরিস্থিতিকে নিজেদের পক্ষে বিপজ্জনক মনে করত। তাই তারা কুরআন মাজীদের বিপরীতে এমন কোন আকর্ষণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাচ্ছিল, যাতে মানুষ কুরআন মাজীদ শোনা বন্ধ করে দেয়। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই মক্কা মুকাররমার ব্যবসায়ী নাযর ইবনে হারিছ, যে বাণিজ্য ব্যাপদেশে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করত, ইরান থেকে সেখানকার রাজা-বাদশাহদের কাহিনী সম্বলিত বই-পুস্তক কিনে আনল। কোন কোন বর্ণনায় আছে, সে ইরান থেকে ভালো গাইতে জানে এমন একজন দাসীও কিনে এনেছিল। দেশে ফিরে এসে সে মানুষকে বলল, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে আদ ও ছামুদ জাতির কাহিনী শোনায়। আমি তোমাদেরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় কাহিনী শোনাব এবং শোনাব চমৎকার গান। এতে কিছু সাড়া পাওয়া গেল। লোকজন তার আসরে উপস্থিত হতে শুরু করল। আয়াতের ইশারা এ ঘটনারই দিকে। এতে মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ জায়েয নয়, যা মানুষকে তাদের দীনী দায়িত্ব পালন থেকে গাফেল করে তোলে। খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কাজ কেবল এমনটাই জায়েয, যাতে দেহ-মনের কোন ব্যায়াম হয়, ক্লান্তি দূর হয়, যা দ্বারা কারও কোন ক্ষতি হয় না এবং যার ফলে মানুষ তার দীনী দায়িত্ব পালন থেকে উদাসীন হয়ে পড়ে না।


২. لهو الحديث যামাখশারী বলেন, কল্যাণকর কাজ থেকে উদাসীন করে রাখে এমন কিসসা-কাহিনী, রম্য-রসাত্মক আলাপ-আলোচনা এবং অনর্থক ও অনুচিত কথাবার্তাকে لهو الحديث বলে। হযরত ইবন মাসউদ (রাযি.)-এর মতে এর দ্বারা ‘গান’ বোঝানো হয়েছে। হাসান বসরী (রহ.) বলেন, এ আয়াত নাযিল হয়েছে গান-বাদ্য সম্পর্কে । -অনুবাদক



وَاِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِ اٰیٰتُنَا وَلّٰی مُسۡتَکۡبِرًا کَاَنۡ لَّمۡ یَسۡمَعۡہَا کَاَنَّ فِیۡۤ اُذُنَیۡہِ وَقۡرًا ۚ فَبَشِّرۡہُ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ


ওয়া ইযা-তুতলা-‘আলাইহি আ-য়া-তুনা-ওয়াল্লা-মুছতাকবিরান কাআল্লাম ইয়াছমা‘হাকাআন্না ফী উযু নাইহি ওয়াকরান ফাবাশশিরহু বি‘আযা-বিন আলীম।


মুফতী তাকী উসমানী

এরূপ ব্যক্তির সামনে যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে তা শুনতেই পায়নি, যেন তার কান দু’টিতে বধিরতা আছে। সুতরাং তাকে এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু’কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এর নিকট আমার আয়াত অবৃত্তি করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেন সে এটা শুনতে পায় নাই, যেন এর কর্ণ দুইটি বধির ; অতএব এদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও।



اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَہُمۡ جَنّٰتُ النَّعِیۡمِ ۙ


ইন্নাল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি লাহুম জান্না-তুন না‘ঈম।


মুফতী তাকী উসমানী

কিন্তু যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য আছে নি‘আমতপূর্ণ উদ্যানরাজি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্যে আছে সুখদ কানন ;



خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقًّا ؕ وَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ


খা-লিদীনা ফীহা- ওয়া‘দাল্লা-হি হাক্কাওঁ ওয়া হুওয়াল ‘আঝীঝুল হাকীম।


মুফতী তাকী উসমানী

তাতে তারা সর্বদা থাকবে। এটা আল্লাহর সত্য ওয়াদা। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর ওয়াদা যথার্থ। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি সত্য। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়!


১০


خَلَقَ السَّمٰوٰتِ بِغَیۡرِ عَمَدٍ تَرَوۡنَہَا وَاَلۡقٰی فِی الۡاَرۡضِ رَوَاسِیَ اَنۡ تَمِیۡدَ بِکُمۡ وَبَثَّ فِیۡہَا مِنۡ کُلِّ دَآبَّۃٍ ؕ وَاَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَنۡۢبَتۡنَا فِیۡہَا مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍ کَرِیۡمٍ


খালাকাছছামা-ওয়া-তি বিগাইরি ‘আমাদিন তারাওনাহা-ওয়া আলাকা-ফিল আরদিরাওয়াছিয়া আন তামীদা বিকুম ওয়া বাছছা ফীহা-মিন কুল্লি দাব্বাতিওঁ ওয়া আনঝালনামিনাছছামাই মাআন ফাআমবাতনা-ফীহা-মিন কুল্লি ঝাওজিন কারীম।


মুফতী তাকী উসমানী

তিনি তোমাদের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্তম্ভ ছাড়া আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করেছেন ৩ এবং তিনি পৃথিবীতে পাহাড়ের ভার স্থাপন করেছেন, যাতে তা তোমাদের নিয়ে দোল না খায় ৪ আর তিনি তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব রকম জীবজন্তু। আমি আকাশ থেকে বারিবর্ষণ করেছি তারপর তাতে (অর্থাৎ পৃথিবীতে) সর্বপ্রকার মূল্যবান উদ্ভিদ উদগত করেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু। আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি আকাশমণ্ডলী নির্মাণ করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত-তোমরা এটা দেখছ ; তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা যাতে এটা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জীবজন্তু। এবং আমিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে এতে উদ্গত করি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদ।


তাফসীরঃ

৩. আকাশমণ্ডলীকে এমন কোন স্তম্ভের উপর স্থাপিত করা হয়নি, যা কারও নজরে আসতে পারে বরং আল্লাহ তাআলা তাকে স্থাপিত করেছেন এক অদৃশ্য স্তম্ভের উপর, আর তা হচ্ছে তাঁর কুদরত ও শক্তি, যা দৃষ্টিগ্রাহ্য জিনিস নয়। আয়াতের এরূপ ব্যাখ্যা হযরত মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে। সূরা রাদ (১৩ : ২)-এও এরূপ গত হয়েছে।


৪. ভূমি যাতে পানির উপর দোল না খায় তাই তাতে পাহাড়-পর্বত স্থাপিত করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টিও কুরআন মাজীদের বিভিন্ন সূরায় বর্ণিত হয়েছে। দেখুন সূরা রাদ (১৩ : ৩), সূরা হিজর (১৫ : ১৯), সূরা নাহল (১৬ : ১৫), সূরা আম্বিয়া (২১ : ৩১), সূরা নামল (২৭ : ৬১), সূরা হা-মীম সাজদা (৪১ : ১০), সূরা কাফ (৫০ : ৭) ও সূরা মুরসালাত (৭৭ : ২৭)।


১১


ہٰذَا خَلۡقُ اللّٰہِ فَاَرُوۡنِیۡ مَاذَا خَلَقَ الَّذِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِہٖ ؕ  بَلِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ٪


হা-যা-খালকুল্লা-হি ফাআরূনী মা-যা-খালকাল্লাযীনা মিন দূ নিহী বালিজ্জা-লিমূনা ফী দালা-লিম মুবীন।


মুফতী তাকী উসমানী

এই হল আল্লাহর সৃষ্টি। এবার তিনি ছাড়া অন্যরা কী সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও। প্রকৃতপক্ষে এ জালেমগণ সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত রয়েছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা আল্লাহর সৃষ্টি; অতঃপর তিনি ব্যতীত অন্যেরা যা সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে দেখাও। বরং জালেমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা আল্লাহ্ র সৃষ্টি ! তিনি ব্যতীত অন্যেরা কী সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও। সীমালংঘনকারীরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।


১২


وَلَقَدۡ اٰتَیۡنَا لُقۡمٰنَ الۡحِکۡمَۃَ اَنِ اشۡکُرۡ لِلّٰہِ ؕ وَمَنۡ یَّشۡکُرۡ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِہٖ ۚ وَمَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ


ওয়া লাকাদ আ-তাইনা-লুকমা-নাল হিকমাতা আনিশকুর লিল্লা-হি ওয়া মাইঁ ইয়াশকুর ফাইন্নামা-ইয়াশকুরু লিনাফছিহী ওয়ামান কাফারা ফাইন্নাল্লা-হা গানিইয়ুন হামীদ।


মুফতী তাকী উসমানী

আমি লুকমানকে দান করেছিলাম জ্ঞানবত্তা ৫ (এবং তাকে বলেছিলাম) যে, আল্লাহর শোকর আদায় করতে থাক। ৬ যে-কেউ শোকর আদায় করে, সে তো কেবল নিজ কল্যাণার্থেই শোকর আদায় করে আর কেউ না-শোকরী করলে আল্লাহ তো অতি বেনিয়ায, প্রশংসাযোগ্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#08b2c4)


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো লুকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে, আল্লাহ্ র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তা করে নিজেরই জন্যে এবং কেউ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ্ তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।


তাফসীরঃ

৫. হযরত লুকমান সম্পর্কে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী মত এটাই যে, তিনি নবী ছিলেন না; বরং একজন জ্ঞানী লোক ছিলেন। তিনি কোন কালের কোন দেশের লোক ছিলেন, সে ব্যাপারে বর্ণনা বিভিন্ন রকম, যা দ্বারা চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ মুশকিল। কোন কোন বর্ণনায় আছে তিনি ইয়ামানের অধিবাসী ছিলেন এবং হযরত হুদ আলাইহিস সালামের যে সকল সঙ্গী শাস্তি থেকে রক্ষা পেয়েছিল, তিনিও তাদের একজন। কেউ কেউ বলেন, তিনি ছিলেন হাবশা (আবিসিনিয়া)-এর বাসিন্দা। কুরআন মাজীদ যে উদ্দেশ্যে হযরত লুকমানের বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছে তার জন্য এসব খুঁটিনাটি বিষয় জানা অপরিহার্য নয়। এটা তো পরিষ্কার যে, আরববাসী তাঁকে একজন মহাজ্ঞানী রূপে জানত। তাঁর জ্ঞানগর্ভ বাণী তাদের মুখে মুখে চালু ছিল। প্রাক-ইসলামী যুগের কবি-সাহিত্যিকগণ ব্যাপকভাবে তার কথার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। কাজেই আরববাসীর সামনে তাঁর বাণীসমূহকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করার যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।


৬. আল্লাহ তাআলা অনেক সময় নবী-রাসূল ছাড়াও তাঁর বিশেষ বিশেষ বান্দার প্রতি ইলহাম করে থাকেন। নবীগণের প্রতি যে ওহী নাযিল হয়, ইলহাম তার মত প্রামাণিক মর্যাদা রাখে না বটে, কিন্তু ওহী-ভিত্তিক কোন বিধানের পরিপন্থী না হলে তার মাধ্যমে মানুষকে হেদায়াত ও নসীহত করা যেতে পারে।


১৩


وَاِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِہٖ وَہُوَ یَعِظُہٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰہِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ


ওয়া ইযকা-লা লুকমা-নুলিবনিহী ওয়া হুওয়া ইয়া‘ইজুহূইয়া-বুনাইইয়া লা-তুশরিক বিল্লা-হি ইন্নাশশিরকা লাজুলমুন ‘আজীম।


মুফতী তাকী উসমানী

এবং (সেই সময়কে) স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশচ্ছলে বলেছিল, হে বাছা! আল্লাহর সাথে শিরক করো না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম। ৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিল, ‘হে বৎস! আল্লাহ্ র কোন শরীক কর না। নিশ্চয়ই শিরক চরম জুলুম।’


তাফসীরঃ

৭. ‘জুলুম’ অর্থ একজনের হক কেড়ে নিয়ে অন্যকে দিয়ে দেওয়া। এ হিসেবে শিরক চরম জুলুম বৈকি! কেননা ইবাদত কেবল আল্লাহ তাআলার হক। শিরককারী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার এ হক তাঁকে না দিয়ে তাঁর নিজেরই কোন মাখলুক ও বান্দাকে দিয়ে থাকে।


১৪


وَوَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ ۚ حَمَلَتۡہُ اُمُّہٗ وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّفِصٰلُہٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَلِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ


ওয়া ওয়াসসাইনাল ইনছা-না বিওয়া-লিদাইহি হামালাতহু উম্মুহূওয়াহনান ‘আলাওয়াহনিওঁ ওয়া ফিসা-লুহূফী ‘আ-মাইনি আনিশকুর লী ওয়ালি ওয়া-লিদাইকা ইলাইইয়াল মাসীর।


মুফতী তাকী উসমানী

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি (কেননা) তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’ বছরে তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। ৮ আমারই কাছে (তোমাদেরকে) ফিরে আসতে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ান হয় দুই বৎসরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।


তাফসীরঃ

৮. হযরত লুকমানের উপদেশমালার মাঝখানে এটা একটা অন্তবর্তী বাক্য। এতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বিশেষভাবে পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিরক পরিহারের নির্দেশের সাথে এর সম্পর্ক এই যে, হযরত লুকমান তো নিজ পুত্রকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার ও তাওহীদকে আঁকড়ে ধরার উপদেশ দিচ্ছিলেন, অপর দিকে মক্কা মুকাররমার মুশরিকগণ হযরত লুকমানকে একজন মহাজ্ঞানী লোক হিসেবে স্বীকার করা সত্ত্বেও, যখন তাদের সন্তানগণ তাওহীদী আকীদা অবলম্বন করল, তখন তারা তাদেরকে তা থেকে ফেরানোর এবং পুনরায় শিরকে লিপ্ত করার জন্য জোরদার চেষ্টা করছিল। তাদের মুমিন সন্তানগণ এক্ষেত্রে পিতা-মাতার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবে তা নিয়ে বেজায় পেরেশান ছিল। তাই আল্লাহ তাআলা এ আয়াত দ্বারা তাদেরকে পথনির্দেশ করছেন যে, আমিই মানুষকে আদেশ করেছি, তারা যেন আল্লাহ তাআলার সাথে তাদের পিতা-মাতারও শুকর আদায় করে। কেননা যদিও তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলা কিন্তু বাহ্যিক কারণ হিসেবে তাদের দুনিয়ায় আগমনের পেছনে পিতা-মাতার ভূমিকাই প্রধান। পিতা-মাতার মধ্যেও আবার বিশেষভাবে মায়ের কষ্ট-মেহনতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। মা কতই না কষ্টের সাথে তাকে নিজ গর্ভে ধারণ করে রাখে। তারপর একটানা দু’বছর তাকে দুধ পান করায়। বলাবাহুল্য শিশুর লালন-পালনের সুদীর্ঘ সময়ের ভেতর দুধ পানের সময়টাই মায়ের জন্য বেশি কষ্ট-ক্লেশের হয়ে থাকে। এসব কারণে মা’ই সন্তানের পক্ষ হতে সদ্ব্যবহারের বেশি হকদার হয়ে থাকে। কিন্তু এই সদ্ব্যবহারের অর্থ এ নয় যে, মানুষ তার দীন ও ঈমানের প্রশ্নে আল্লাহ তাআলার হুকুমকে পাশ কাটিয়ে পিতা-মাতার হুকুম মানতে শুরু করে দেবে। এ বিষয়টা স্মরণে রাখার জন্যই আয়াতে পিতা-মাতার শুকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়ার আগে আল্লাহ তাআলার শুকর আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেননা পিতা-মাতা তো এক বাহ্যিক ‘কারণ’ ও মাধ্যম মাত্র। মানুষের প্রতিপালনের ব্যবস্থা হিসেবে এ কারণ আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃত স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহ তাআলাই। কাজেই এই বাহ্যিক কারণ ও মাধ্যমের গুরুত্ব কখনওই প্রকৃত স্রষ্টা ও আসল প্রতিপালকের গুরুত্ব অপেক্ষা বেশি হতে পারে না।


১৫


وَاِنۡ جَاہَدٰکَ عَلٰۤی اَنۡ تُشۡرِکَ بِیۡ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ۙ فَلَا تُطِعۡہُمَا وَصَاحِبۡہُمَا فِی الدُّنۡیَا مَعۡرُوۡفًا ۫ وَّاتَّبِعۡ سَبِیۡلَ مَنۡ اَنَابَ اِلَیَّ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُکُمۡ فَاُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ


ওয়া ইন জা-হাদা-কা ‘আলাআন তুশরিকা বী মা-লাইছা লাকা বিহী ‘ইলমুন ফালাতুতি‘হুমা-ওয়াসা-হিবহুমা-ফিদদুনইয়া-মা‘রূফাওঁ ওয়াত্তাবি‘ ছাবীলা মান আনা-বা ইলাইইয়া ছু ম্মা ইলাইইয়া মারজি‘উকুম ফাউনাব্বিউকুম বিমা-কুনতুম তা‘মালূন।


মুফতী তাকী উসমানী

তারা যদি এমন কাউকে (প্রভুত্বে) আমার সমকক্ষ সাব্যস্ত করার জন্য তোমাকে চাপ দেয়, যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের কথা মানবে না। তবে দুনিয়ায় তাদের সাথে সদ্ভাবে থাকবে। ৯ এমন ব্যক্তির পথ অবলম্বন করো, যে একান্তভাবে আমার অভিমুখী হয়েছে। ১০ অতঃপর তোমাদের সকলকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তোমাদেরকে অবহিত করব তোমরা যা-কিছু করতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাতে যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানিও না, তবে পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে বসবাস করবে সদ্ভাবে এবং যে বিশুদ্ধচিত্তে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অবলম্বন কর, এরপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট এবং তোমরা যা করতে সে বিষয়ে আমি তোমাদেরকে অবহিত করব।


তাফসীরঃ

৯. অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে পিতা-মাতা কোন অন্যায় কথা বললে তা মানা তো জায়েয হবে না, কিন্তু তাদের কথা এমন পন্থায় রদ করা যাবে না, যা তাদের জন্য কষ্টদায়ক হয় বা যাতে তারা নিজেদেরকে অপমানিত বোধ করে। বরং তাদেরকে নম্র ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে, আমি আপনাদের কথা মানতে অপারগ। কেবল এতটুকুই নয়; বরং সাধারণভাবে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রেই তাদের সাথে সদাচরণ করতে হবে। তাদের খেদমত করতে হবে, আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য করতে হবে এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের সেবা-যত্ন করতে হবে ইত্যাদি।


১০. মাতা-পিতা যেহেতু ভ্রান্ত পথে আছে তাই তাদের পথ অবলম্বন করা যাবে না কিছুতেই; বরং পথ অবলম্বন করতে হবে কেবল তাদেরই, যারা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সুদৃঢ় সম্পর্ক রক্ষা করে চলে। অর্থাৎ কেবল তাঁরই ইবাদত ও আনুগত্য করে। এর ভেতর এই ইঙ্গিতও রয়েছে যে, দীনের অনুসরণও কেবল নিজ বুদ্ধি-বিবেচনার ভিত্তিতে করা ঠিক নয়; বরং যারা আল্লাহ তাআলার আশেক ও তাঁর পরিপূর্ণ অনুগত বলে পরিষ্কারভাবে জানা আছে, দেখতে হবে তারা দীনের অনুসরণ করে কিভাবে এবং তাদের আমলের ধরণ কী? তারা যে কাজ যেভাবে করেন ঠিক সেভাবেই তা সম্পাদন করা চাই। সমস্ত আমলে তাদেরই পথ অনুসরণ করা চাই। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে এবং যথার্থই বলা হয়ে থাকে যে, ব্যক্তিগত পড়াশোনার ভিত্তিতে কুরআন ও হাদীসের এমন কোন ব্যাখ্যা করা ও তা থেকে এমন কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কিছুতেই সমীচীন নয়, যা উম্মতের উলামায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দীন থেকে প্রাপ্ত ব্যাখ্যার পরিপন্থী।


১৬


یٰبُنَیَّ اِنَّہَاۤ اِنۡ تَکُ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ فَتَکُنۡ فِیۡ صَخۡرَۃٍ اَوۡ فِی السَّمٰوٰتِ اَوۡ فِی الۡاَرۡضِ یَاۡتِ بِہَا اللّٰہُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَطِیۡفٌ خَبِیۡرٌ


ইয়া-বুনাইয়া ইন্নাহাইন তাকুমিছকা-লা হাব্বাতিম্মিন খারদালিন ফাতাকুন ফী সাখরাতিন আও ফিছছামা-ওয়া-তি আও ফিল আরদিইয়া’তি বিহাল্লা-হু ইন্নাল্লা-হা লাতীফুন খাবীর।


মুফতী তাকী উসমানী

(লুকমান আরও বলেন) হে বাছা! কোন কিছু যদি সরিষার দানা বরাবরও হয় এবং তা থাকে কোন পাথরের ভেতর কিংবা আকাশমণ্ডলীতে বা ভূমিতে, তবুও আল্লাহ তা উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সবকিছুর খবর রাখেন। ১১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘হে বৎস ! ক্ষুদ্র বস্তুটি যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে বা আকাশে কিংবা মৃত্তিকার নিচে, আল্লাহ্ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।


তাফসীরঃ

১১. এর দ্বারা আল্লাহ তাআলার সর্বব্যাপী জ্ঞানের কথা বোঝানো হয়েছে। যারা আখেরাতকে অস্বীকার করত, তারা বলত, মৃত্যুর পর তো মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পচে-গলে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সেই বিক্ষিপ্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিভাবে একত্র করা সম্ভব হবে? হযরত লুকমান তাঁর পুত্রকে লক্ষ করে বলেন, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কোন কণাও যদি আসমান-যমীনের কোন গুপ্ত স্থানে লুকানো থাকে, তবে সে সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলা খবর রাখেন। তিনি তা সেখান থেকে বের করে আনতে সক্ষম। জ্ঞাতব্য যে, বুযুর্গানে দীনের কেউ কেউ বলেছেন, কারও কোন বস্তু হারিয়ে গেলে সে যদি এগার বার ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে, তারপর সূরা লুকমানের এ আয়াতটি তেলাওয়াত করতে থাকে, তবে আশা করা যায়, সে বস্তুটি পেয়ে যাবে। সাধারণত পাওয়া যেয়ে থাকে। এ বিষয়ে বান্দারও বেশ অভিজ্ঞতা আছে।


১৭


یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَاۡمُرۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَانۡہَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَاصۡبِرۡ عَلٰی مَاۤ اَصَابَکَ ؕ  اِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ ۚ


ইয়া-বুনাইইয়া আকিমিসসালা-তা ওয়া’মুর বিলমা‘রূফি ওয়ানহা ‘আনিল মুনকারি ওয়াসবির ‘আলা-মাআসা-বাকা ইন্না যা-লিকা মিন ‘আঝমিল উমূর।


মুফতী তাকী উসমানী

বাছা! নামায কায়েম কর, মানুষকে সৎকাজের আদেশ কর, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর কর। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ। ১২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকর্মের নির্দেশ দিও আর অসৎ কর্মে নিষেধ কর এবং আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ কর। এটাই তো দৃঢ়সংকল্পের কাজ।


তাফসীরঃ

১২. অর্থাৎ সালাত কায়েম তথা সমস্ত নিয়ম রক্ষা করে ওয়াক্ত মত জামাতের সাথে নামায আদায়ে যত্নবান থাকা, যথাযথ নিয়মে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা এবং আপতিত সকল পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ করা খুব বেশি সহজ ব্যাপার নয়। এর জন্য অটুট সংকল্প ও দৃঢ় মনোবল দরকার। সেই সংকল্প ও মনোবল নিয়েই তোমাকে এ নির্দেশ তিনটি পালন করে যেতে হবে। ِنَّ ذٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْاُمُرْرِ এর এক অর্থ হতে পারে, ‘এগুলো বাধ্যতামূলক বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত’। অর্থাৎ এ বিষয় তিনটি তোমাদের প্রতি অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঐচ্ছিক ব্যাপার নয় যে, পালন না করলেও চলবে। বরং নিজের দীন ও মানবিক পূর্ণতাবিধানের জন্য সালাত, অন্যকে দীন ও মানবিকতায় পরিপূর্ণ করে তোলার জন্য সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ এবং সকল পরিস্থিতিতে নীতি-নৈতিকতায় প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য সবর অবলম্বন আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অবশ্য পালনীয় হুকুম। এ হিসেবে عزم মাসদারটি المعزوم অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে اي من الامور المعزومة। -অনুবাদক


১৮


وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ  اِنَّ اللّٰہَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ ۚ


ওয়ালা-তুসা‘‘ইর খাদ্দাকা লিন্না-ছি ওয়ালা-তামশি ফিল আরদিমারাহান ইন্নাল্লা-হা লাইউহিব্বুকুল্লা মুখতা-লিন ফাখূর।


মুফতী তাকী উসমানী

এবং মানুষের সামনে (অহংকারে) নিজ গাল ফুলিও না এবং ভূমিতে দর্পভরে চলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দর্পিত অহংকারীকে পসন্দ করেন না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।


১৯


وَاقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَاغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ  اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ ٪


ওয়াকসিদ ফী মাশইকা ওয়াগদুদমিন সাওতিকা ইন্না আনকারাল আসওয়া-তি লাসাওতুল হামীর।


মুফতী তাকী উসমানী

নিজ পদচারণায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর ১৩ এবং নিজ কণ্ঠস্বর সংযত রাখ। ১৪ নিশ্চয়ই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট স্বর গাধাদেরই স্বর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি পদক্ষেপ কর সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু কর ; নিশ্চয়ই স্বরের মধ্যে গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’


তাফসীরঃ

১৩. অর্থাৎ মানুষের চলার গতি হওয়া উচিত মাঝামাঝি; না এতটা দ্রুত যে, মনে হবে দৌড়াচ্ছে আর না এতটা শ্লথ, যা আলস্যের পর্যায়ে পড়ে। এমনকি যে ব্যক্তি জামাআতে নামায আদায়ে যায়, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকেও দৌড়াতে নিষেধ করে দিয়েছেন। বলেছেন, সে যেন শান্তভাবে মর্যাদাপূর্ণ গতিতে হেঁটে যায়।


১৪. কণ্ঠস্বর সংযত রাখার অর্থ এ নয় যে, মানুষ অতি ক্ষীণ স্বরে কথা বলবে, যা শ্রোতাকে কষ্ট করে শুনতে হবে। বরং এর অর্থ হল, যাকে শোনানো উদ্দেশ্য, সে শুনতে পায় এতটুকু আওয়াজে কথা বলবে। এর বেশি চিৎকার করবে না। সেটা ইসলামী আদবের খেলাফ। এমনকি যে ব্যক্তি পাঠ দান করে বা ওয়াজ করে, তার আওয়াজও প্রয়োজনের বেশি উঁচু করা ঠিক নয়। শ্রোতাদেরকে শোনানোর ও বোঝানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই উঁচু করবে। তার বেশি বড় করাকে বুযুর্গগণ এ আয়াতের আলোকে অপছন্দ করেছেন। যারা অপ্রয়োজনে মাইক ব্যবহার করে মানুষকে কষ্ট দেয়, এ আদেশটির প্রতি তাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত।


২০


اَلَمۡ تَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ سَخَّرَ لَکُمۡ مَّا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ وَاَسۡبَغَ عَلَیۡکُمۡ نِعَمَہٗ ظَاہِرَۃً وَّبَاطِنَۃً ؕ وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّلَا ہُدًی وَّلَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ


আলাম তারাও আন্নাল্লা-হা ছাখখরা লাকুম মা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদিওয়া আছবাগা ‘আলাইকুম নি‘মাহূজা-হিরাতাওঁ ওয়া বা-তিনাতাওঁ ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইউজা-দিলুফিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়ালা-হুদাওঁ ওয়ালা-কিতা-বিম মুনীর।


মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা কি লক্ষ্য করনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে আল্লাহ সেগুলোকে তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন ১৫ এবং তিনি তার প্রকাশ্য ও গুপ্ত নি‘আমতসমূহ তোমাদের প্রতি পরিপূর্ণভাবে বর্ষণ করেছেন? তথাপি মানুষের মধ্যে কতক এমন রয়েছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, অথচ তাদের কাছে না আছে কোন জ্ঞান, না কোন হেদায়াত আর না কোন দীপ্তিমান কিতাব, (যা তাদেরকে বিভ্রান্তির অন্ধকারে কোনরূপ আলো দেখাতে পারে)।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা কি দেখ না, আল্লাহ্ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন? মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, তাদের না আছে পথনির্দেশক আর না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।


২১


وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمُ اتَّبِعُوۡا مَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ قَالُوۡا بَلۡ نَتَّبِعُ مَا وَجَدۡنَا عَلَیۡہِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوۡ کَانَ الشَّیۡطٰنُ یَدۡعُوۡہُمۡ اِلٰی عَذَابِ السَّعِیۡرِ


ওয়া ইযা-কীলা লাহুমুত তাবি‘উ মাআনঝালাল্লা-হু কা-লূবাল নাত্তাবি‘উ মা-ওয়াজাদনা‘আলাইহি আ-বাআনা- আওয়া লাও কা-নাশশাইতা-নুইয়াদ‘উহুম ইলা-‘আযাবিছছা‘ঈর।


মুফতী তাকী উসমানী

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, না, বরং আমরা তো আমাদের বাপ-দাদাদেরকে যে পথে পেয়েছি তারই অনুসরণ করব। যদি শয়তান তাদেরকে (অর্থাৎ তাদের বাপ-দাদাদেরকে) জ্বলন্ত আগুনের দিকে ডাকে তবুও কি (তারা তাদেরই অনুগামী হবে)? ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এদেরকে যখন বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন তা অনুসরণ কর।’ এরা বলে, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তারই অনুসরণ করব।’ শয়তান যদি এদেরকে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তির দিকে আহ্বান করে, তবুও কি ?


তাফসীরঃ

১৫. বোঝা গেল কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক বাপ-দাদাগণ সঠিক পথের অনুসারী হয়ে থাকলে তাদের পথে চলা দূষণীয় নয়। বরং হিদায়াতের উপর চলার জন্য হিদায়াতপ্রাপ্তদের অনুসরণই বেশি নিরাপদ। সুতরাং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা হিদায়াতপ্রাপ্ত জামাতের উল্লেখপূর্বক বলেন, তাদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। কাজেই তুমি তাদের পথের অনুসরণ কর (সূরা আনআম ৬ : ৯০)। -অনুবাদক


২২


وَمَنۡ یُّسۡلِمۡ وَجۡہَہٗۤ اِلَی اللّٰہِ وَہُوَ مُحۡسِنٌ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ؕ وَاِلَی اللّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ


ওয়া মাইঁ ইউছলিম ওয়াজহাহূ ইলাল্লা-হি ওয়া হুওয়া মুহছিনুন ফাকাদিছতামছাকা বিল ‘উরওয়াতিল উছকা- ওয়া ইলাল্লা-হি ‘আ-কিবাতুল উমূর।


মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি আজ্ঞাবহ হয়ে নিজ চেহারাকে আল্লাহর অভিমুখী করে এবং সে হয় সৎকর্মশীল, নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি আঁকড়ে ধরল এক মজবুত হাতল। সকল বিষয়ের শেষ পরিণাম আল্লাহরই উপর ন্যস্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে কেউ আল্লাহ্ র নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং সৎকর্মপরায়ণ হয় সে তো দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এক মযবুত হাতল, যাবতীয় কর্মের পরিণাম আল্লাহ্ র ইখ্তিয়ারে।


২৩


وَمَنۡ کَفَرَ فَلَا یَحۡزُنۡکَ کُفۡرُہٗ ؕ اِلَیۡنَا مَرۡجِعُہُمۡ فَنُنَبِّئُہُمۡ بِمَا عَمِلُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ


ওয়া মান কাফারা ফালা-ইয়াহঝুনকা কুফরুহূ ইলাইনা-মারজি‘উহুম ফানুনাব্বিউহুম বিমা‘আমিলূ ইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুম বিযা-তিসসুদূ র।


মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) কোন ব্যক্তি কুফর অবলম্বন করলে তার কুফর যেন তোমাকে ব্যথিত না করে। শেষ পর্যন্ত তো তাদেরকে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। তখন আমি তাদেরকে অবহিত করব তারা যা করেছে। নিশ্চয়ই অন্তরে যা কিছু (লুকানো) আছে তাও আল্লাহ পুরোপুরি জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফরী যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। আমারই দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তাদের কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করব। অন্তরে যা কিছু রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর কেউ কুফরী করলে তার কুফরী যেন তোমাকে ক্লিষ্ট না করে। আমারই নিকট এদের প্রত্যাবর্তন। এরপর আমি এদেরকে অবহিত করব এরা যা করত। অন্তরে যা রয়েছে সে সম্বন্ধে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত।


২৪


نُمَتِّعُہُمۡ قَلِیۡلًا ثُمَّ نَضۡطَرُّہُمۡ اِلٰی عَذَابٍ غَلِیۡظٍ


নুমাত্তি‘উহুম কালীলান ছুম্মা নাদতাররুহুম ইলা-‘আযা-বিন গালীজ।


মুফতী তাকী উসমানী

আমি তাদেরকে কিছুটা মজা লুটতে দিচ্ছি। অতঃপর আমি তাদেরকে এক কঠিন শাস্তির দিকে টেনে নিয়ে যাব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদেরকে স্বল্পকালের জন্যে ভোগবিলাস করতে দেব, অতঃপর তাদেরকে বাধ্য করব গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদেরকে জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিব স্বল্পকালের জন্যে। এরপর এদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব।


২৫


وَلَئِنۡ سَاَلۡتَہُمۡ مَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰہُ ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ


ওয়া লাইন ছাআলতাহুম মান খালাকাছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা লাইয়াকূলুন্নাল্লা-হু কুল্লি হামদুলিল্লা-হি; বাল আকছারুহুম লা-ইয়া‘লামূন।


মুফতী তাকী উসমানী

তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ! বল, আলহামদুলিল্লাহ! তা সত্ত্বেও তাদের অধিকাংশই জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না। ১৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সকল প্রশংসাই আল্লাহর। বরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি যদি এদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন ?’ এরা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আল্লাহ্’। বল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ্ র ই’, কিন্তু এদের অধিকাংশই জানে না।


তাফসীরঃ

১৬. অর্থাৎ আলহামদুলিল্লাহ! তারা অন্ততপক্ষে এই সত্যটুকু তো স্বীকার করেছে যে, এই বিশ্ব চরাচরের সৃষ্টিকর্তা কেবলই আল্লাহ তাআলা। কিন্তু এই স্বীকারোক্তির সুস্পষ্ট দাবি তো ছিল এই যে, তারা যখন স্বীকার করছে সৃষ্টিকূলের স্রষ্টা কেবলই আল্লাহ, তখন এটাও স্বীকার করে নেবে যে, ইবাদতের উপযুক্তও কেবল তিনিই। কিন্তু এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য তারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগাচ্ছে না; বরং বাপ-দাদাদের অন্ধ অনুকরণে শিরককে গ্রহণ করে নিয়েছে।


২৬


لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡغَنِیُّ الۡحَمِیۡدُ


লিল্লা-হি মা-ফিছছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ইন্নাল্লা-হা হুওয়াল গানিইয়ুল হামীদ।


মুফতী তাকী উসমানী

যা-কিছু আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তা আল্লাহরই। নিশ্চয়ই আল্লাহই এমন সত্তা, যিনি সকল থেকে অনপেক্ষ, সকল প্রশংসার উপযুক্ত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর। আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#08b2c4)


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহ্ র ই ; আল্লাহ্, তিনি তো অভাবমুক্ত, প্রশংসার্হ।


২৭


وَلَوۡ اَنَّمَا فِی الۡاَرۡضِ مِنۡ شَجَرَۃٍ اَقۡلَامٌ وَّالۡبَحۡرُ یَمُدُّہٗ مِنۡۢ بَعۡدِہٖ سَبۡعَۃُ اَبۡحُرٍ مَّا نَفِدَتۡ کَلِمٰتُ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ


ওয়া লাও আন্না মা-ফিল আরদিমিন শাজারাতিন আকলা-মুওঁ ওয়াল বাহরু ইয়ামুদ্দুহূমিম বা‘দিহী ছাব‘আতুআবহুরিম মা-নাফিদাত কালিমা-তুল্লা-হি ইন্নাল্লা-হা ‘আঝীঝুন হাকীম।


মুফতী তাকী উসমানী

ভূমিতে যত বৃক্ষ আছে তা যদি কলম হয়ে যায় এবং এই যে সাগর, এর সাথে যদি এ ছাড়া আরও সাত সাগর মিলে যায় (এবং তা কালি হয়ে আল্লাহর গুণাবলী লিখতে শুরু করে) তবুও আল্লাহর কথামালা নিঃশেষ হবে না। ১৮ বস্তুত আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং এটার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহ্ র বাণী নিঃশেষ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


তাফসীরঃ

১৭. অর্থাৎ সেই কলম ও কালি তো ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু আল্লাহর যে বিস্ময়কর সৃষ্টিমালা তাঁর অপার কুদরত ও মহিমা প্রকাশ করে তা লিখে শেষ করা যাবে না। কেননা আল্লাহর গুণ ও মহিমা অনন্ত-অসীম, কিন্তু মাখলুক সসীম, লেখকও সসীম ও লেখার উপকরণও সসীম। সসীম উপকরণ দ্বারা আল্লাহর অসীম গুণ ও মহিমা লিখে শেষ করা কীভাবে সম্ভব? -অনুবাদক


২৮


مَا خَلۡقُکُمۡ وَلَا بَعۡثُکُمۡ اِلَّا کَنَفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ سَمِیۡعٌۢ بَصِیۡرٌ


মা-খালকুকুম ওয়ালা-বা‘ছুকুম ইল্লা-কানাফছিওঁ ওয়া-হিদাতিন ইন্নাল্লা-হা ছামী‘উম বাসীর।


মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা (আল্লাহর পক্ষে) একজন মানুষ (-কে সৃষ্টি করা ও পুনর্জীবিত করা)-এর মতই। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সবকিছু দেখেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।


২৯


اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یُوۡلِجُ الَّیۡلَ فِی النَّہَارِ وَیُوۡلِجُ النَّہَارَ فِی الَّیۡلِ وَسَخَّرَ الشَّمۡسَ وَالۡقَمَرَ ۫ کُلٌّ یَّجۡرِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّاَنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ


আলাম তারা আন্নাল্লা-হা ইঊলিজুল লাইলা ফিন্নাহা-রি ওয়া ইঊলিজুন্নাহা-রা ফিল্লাইলি ওয়া ছাখখারাশশামছা ওয়ালা কামারা কুলুলইঁইয়াজরীইলাআজালিম মুছাম্মাওঁ ওয়া আন্নাল্লা-হা বিমা-তা‘মালূনা খাবীর।


মুফতী তাকী উসমানী

তুমি দেখনি আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করান এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করে রেখেছেন, প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বিচরণশীল এবং (তুমি কি জান না) আল্লাহ তোমরা যা-কিছু করছ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি দেখ না আল্লাহ্ রাত্রিকে দিবসে এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত করেন ? তিনি চন্দ্র-সূর্যকে করেছেন নিয়মাধীন, প্রত্যেকটি বিচরণ করে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত ; তোমরা যা কর আল্লাহ্ সে সম্পর্কে অবহিত।


৩০


ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡحَقُّ وَاَنَّ مَا یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِہِ الۡبَاطِلُ ۙ  وَاَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡعَلِیُّ الۡکَبِیۡرُ ٪


যা-লিকা বিআন্নাল্লা-হা হুওয়াল হাক্কুওয়া আন্নামা- ইয়াদ‘ঊনা মিন দূ নিহিল বা-তিলু ওয়া আন্নাল্লা-হা হুওয়াল ‘আলিইয়ুল কাবীর।


মুফতী তাকী উসমানী

এসব এজন্য যে, আল্লাহ তিনিই সত্য (মাবুদ) এবং তারা (অর্থাৎ মুশরিকগণ) তাঁর পরিবর্তে যেসব (মাবুদ)কে ডাকে তা ভিত্তিহীন। আর আল্লাহ সমুচ্চ, মহিমাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যা। আল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এইগুলি প্রমাণ যে, আল্লাহ্ই সত্য এবং এরা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা মিথ্যা। আল্লাহ্, তিনি তো সমুচ্চ, মহান।


৩১


اَلَمۡ تَرَ اَنَّ الۡفُلۡکَ تَجۡرِیۡ فِی الۡبَحۡرِ بِنِعۡمَتِ اللّٰہِ لِیُرِیَکُمۡ مِّنۡ اٰیٰتِہٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّکُلِّ صَبَّارٍ شَکُوۡرٍ


আলাম তারা আন্নাল ফুলকা তাজরী ফিল বাহরি বিনি‘মাতিল্লা-হি লিইউরিয়াকুম মিন আ-য়াতিহী ইন্না ফী যা-লিকা লাআ-য়া-তিল লিকুল্লি সাব্বা-রিন শাকূর।


মুফতী তাকী উসমানী

তুমি কি দেখনি জলযানসমূহ আল্লাহর অনুগ্রহে সাগরে বিচরণ করে, তিনি তোমাদেরকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখাবেন বলে? নিশ্চয়ই এর ভেতর আছে সেই ব্যক্তির জন্য বহু নিদর্শন, যে প্রচণ্ড ধৈর্যশীল, পরম কৃতজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর অনুগ্রহে জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করেন? নিশ্চয় এতে প্রত্যেক সহনশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ্ র অনুগ্রহে নৌযানগুলি সমুদ্রে বিচরণ করে, যা দিয়ে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলীর কিছু প্রদর্শন করেন ? এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে।


৩২


وَاِذَا غَشِیَہُمۡ مَّوۡجٌ کَالظُّلَلِ دَعَوُا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۚ فَلَمَّا نَجّٰہُمۡ اِلَی الۡبَرِّ فَمِنۡہُمۡ مُّقۡتَصِدٌ ؕ وَمَا یَجۡحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا کُلُّ خَتَّارٍ کَفُوۡرٍ


ওয়া ইযা-গাশিয়াহুম মাওজুন কাজ্জুলালি দা‘আউল্লা-হা মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ফালাম্মানাজ্জা-হুম ইলাল বাররি ফামিনহুম মুকতাসিদুওঁ ওয়ামা-ইয়াজহাদুবিআ-য়া-তিনা-ইল্লাকুল্লুখাত্তা-রিন কাফূর।


মুফতী তাকী উসমানী

তরঙ্গমালা যখন মেঘচ্ছায়ার মত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে তখন তারা আল্লাহকে ডাকে ভক্তি-বিশ্বাসকে তাঁরই জন্য খালেস করে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে নিয়ে আসেন, তখন তাদের কিছু সংখ্যক সরল পথে থাকে। (অবশিষ্ট সকলে পুনরায় শিরকে লিপ্ত হয়) আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে কেবল প্রত্যেক এমন লোক, যে ঘোর বিশ্বাসঘাতক, চরম অকৃতজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন তরংগ এদেরকে আচ্ছন্ন করে মেঘচ্ছায়ার মত তখন এরা আল্লাহ্কে ডাকে তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে। কিন্তু যখন তিনি এদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছান তখন এদের কেউ কেউ সরল পথে থাকে ; কেবল বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে।


৩৩


یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ وَاخۡشَوۡا یَوۡمًا لَّا یَجۡزِیۡ وَالِدٌ عَنۡ وَّلَدِہٖ ۫ وَلَا مَوۡلُوۡدٌ ہُوَ جَازٍ عَنۡ وَّالِدِہٖ شَیۡئًا ؕ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَلَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰہِ الۡغَرُوۡرُ


ইয়া-আইয়ুহান্না-ছুত্তাকূরাব্বাকুম ওয়াখশাও ইয়াওমাল্লা-ইয়াজঝী ওয়া-লিদুন আওঁ ওয়ালাদিহী ওয়ালা-মাওলূদুন হুওয়া জা-ঝিন ‘আওঁ ওয়া-লিদিহী শাইআন ইন্না ওয়া‘দাল্লা-হি হাক্কুন ফালা-তাগুররান্নাকুমুল হায়া-তুদ্দুনইয়া-ওয়ালা-ইয়াগুররান্নাকুম বিল্লা-হিল গারূর।


মুফতী তাকী উসমানী

হে মানুষ! নিজ প্রতিপালক (এর অসন্তুষ্টি) থেকে বেঁচে থাক এবং সেই দিনকে ভয় কর, যখন কোন পিতা তার সন্তানের উপকারে আসবে না এবং কোন সন্তানেরও সাধ্য হবে না তার পিতার কিছুমাত্র উপকার করার। নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই ধোঁকায় ফেলতে না পারে এবং সর্বাপেক্ষা বড় প্রতারক (শয়তান)-ও যেন আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদেরকে কিছুতেই ধোঁকা দিতে না পারে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

হে মানুষ ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর সেই দিনের, যখন পিতা সন্তানের কোন উপকারে আসবে না, সন্তানও কোন উপকারে আসবে না তার পিতার। আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি সত্য ; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক যেন তোমাদেরকে কিছুতেই আল্লাহ্ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।


৩৪


اِنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ  وَیُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ  وَیَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ  وَمَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَکۡسِبُ غَدًا ؕ  وَمَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ  اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ٪


ইন্নাল্লা-হা ‘ইনদাহূ‘ইলমুছছা-‘আতি ওয়া ইউনাঝঝিলুল গাইছা ওয়া ইয়া‘লামুমাফিল আরহা-মি ওয়ামা-তাদরী নাফছুম মা-যা তাকছিবুগাদাওঁ ওয়ামা-তাদরী নাফছুম বিআইয়ি আরদিন তামূতু ইন্নাল্লা-হা ‘আলীমুন খাবীর।


মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই কিয়ামত (-এর ক্ষণ) সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল আল্লাহরই কাছে আছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কী আছে। ১৯ কোন প্রাণী জানে না সে আগামীকাল কী অর্জন করবে এবং কোন প্রাণী এটাও জানে না যে, কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত, সবকিছু সম্পর্কে পরিপূর্ণ খবর রাখেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্ র নিকট রয়েছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে তার মৃত্যু ঘটবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।


তাফসীরঃ

১৮. অর্থাৎ গর্ভস্থ সন্তানটি ছেলে, না মেয়ে, ভাগ্যবান (দীনদার) হবে, না হতভাগা (বদদীন), তার আয়ু কী হবে এবং জীবিকা কী? প্রভৃতি বিষয়ে তার সম্পর্কে সামগ্রিক জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া কারও নেই। মানুষ পরীক্ষা-নিরক্ষীর মাধ্যমে কিছু কিছু বিষয়ে হয়তো জানতে পারে, কিন্তু তার সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে জানা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। -অনুবাদক

Post a Comment

0 Comments