সূরা বনী ইসরাঈল কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত,সকল রোগের ঔষধ সূরা বনী ইসরাঈল,সূরা আল-বনী ইসরাঈল বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ এবং বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত অডিও সূরা আল বনী ইসরাঈল,

 

সূরা বনী ইসরাঈল বাংলা উচ্চারণ সহ অনুবাদ,সূরা তাওবা বাংলা উচ্চারণ, সূরা আল বনী ইসরাঈল বাংলা তরজমা,সূরা বনী ইসরাঈল বাংলা তাফসীর, আমল সূরা আল বনী ইসরাঈল, সকল আমল সূরা আল বনী ইসরাঈল,

১৭ . বনী ইসরাঈল - ( الإسراء ) | ইহুদী জাতি

মাক্কী, মোট আয়াতঃ ১১১


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

পবিত্র সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দাকে রাতারাতি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি, তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখানোর জন্য। ১ নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর শ্রোতা এবং সব কিছুর জ্ঞাতা।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম হতে আল-মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখাবার জন্যে; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।


তাফসীরঃ

১. মিরাজের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত। সীরাত ও হাদীসের কিতাবসমূহে ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। তার সারমর্ম এইরূপ হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রাতের বেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং তাঁকে একটি জন্তুর পিঠে সওয়ার করালেন। জন্তুটির নাম ছিল বুরাক। সেটি বিদ্যুৎগতিতে তাঁকে মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে গেল। এই হল মিরাজ ভ্রমণের প্রথম অংশ। একে ইসরা বলা হয়। তারপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে সাত আসমানে নিয়ে গেলেন। প্রত্যেক আসমানে অতীতের কোনও না কোনও নবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হল। তারপর জান্নাতের সিদরাতুল মুনতাহা নামক একটি বৃক্ষের কাছে পৌঁছলেন এবং তিনি আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করলেন। এ সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেন। তারপর রাতের মধ্যেই তিনি মক্কা মুকাররমায় ফিরে আসেন। এ আয়াতে সফরের কেবল প্রথম অংশটুকুই বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা সামনে যে আলোচনা আসছে তার সম্পর্ক এই অংশের সাথেই বেশি। তবে সফরের দ্বিতীয় অংশের বর্ণনাও কুরআন মাজীদে আছে, যা শেষ দিকে সূরা নাজমে আসছে (৫৩ : ১৩-১৮)। সহীহ রিওয়ায়াত অনুযায়ী মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ অলৌকিক সফর জাগ্রত অবস্থাতেই হয়েছিল। এভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে নিজ কুদরতের এক মহা নিদর্শন দেখিয়ে দেন। এটা সম্পূর্ণ গলত কথা যে, এ ঘটনা স্বপ্নযোগে হয়েছিল, জাগ্রত অবস্থায় নয়। গলত হওয়ার কারণ, একথা বহু সহীহ হাদীসের পরিপন্থী তো বটেই, খোদ কুরআন মাজীদেরও খেলাফ। কুরআন মাজীদের বর্ণনাশৈলী দ্বারা সুস্পষ্টভাবে জানা যায় এটা ছিল এক অস্বাভাবিক ঘটনা, যাকে আল্লাহ তাআলা নিজের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছেন। এটা যদি একটা স্বপ্নমাত্র হত, তবে তাতে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কেননা স্বপ্নে তো মানুষ কত কিছুই দেখে থাকে। কাজেই এ ঘটনা স্বপ্নযোগে ঘটে থাকলে কুরআন মাজীদে একে আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সাব্যস্ত করার কোন অর্থ থাকে না।



وَآتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ أَلَّا تَتَّخِذُوا مِن دُونِي وَكِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তাকে বনী ইসরাঈলের জন্য হিদায়াতের মাধ্যম বানিয়েছিলাম। আদেশ করেছিলাম, তোমরা আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ করো না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি এবং সেটিকে বনী-ইসরাঈলের জন্যে হেদায়েতে পরিণত করেছি যে, তোমরা আমাকে ছাড়া কাউকে কার্যনিবাহী স্থির করো না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম ও একে করেছিলাম বনী ইস্রাঈলের জন্যে পথনির্দেশক। আমি আদেশ করেছিলাম ‘তোমরা আমাকে ব্যতীত অপর কাউকেও কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ কর না;



ذُرِّيَّةَ مَنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَبْدًا شَكُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

হে ওই সকল লোকের বংশধরগণ! যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। ২ সে ছিল খুবই শোকর গোজার বান্দা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা তাদের সন্তান, যাদেরকে আমি নূহের সাথে সওয়ার করিয়েছিলাম। নিশ্চয় সে ছিল কৃতজ্ঞ বান্দা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘হে তাদের বংশধর! যাদেরকে আমি নূহের সঙ্গে আরোহণ করিয়েছিলাম ; সে তো ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা।’


তাফসীরঃ

২. হযরত নূহ আলাইহিস সালামের নৌকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এ কারণে যে, যারা সেই নৌকায় সওয়ার হয়েছিল, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। ফলে তারা বন্যায় ডোবেনি। এটা যেহেতু আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ অনুগ্রহ ছিল, তাই তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, সে অনুগ্রহের শোকর এটাই যে, তাদের বংশধরগণ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বানাবে না।



وَقَضَيْنَا إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ فِي الْكِتَابِ لَتُفْسِدُنَّ فِي الْأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি কিতাবে মীমাংসা দান করে বনী ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দু’বার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দিয়ে বনী ইস্রাঈলকে জানিয়েছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকার স্ফীত হবে।’



فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ أُولَاهُمَا بَعَثْنَا عَلَيْكُمْ عِبَادًا لَّنَا أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ فَجَاسُوا خِلَالَ الدِّيَارِ ۚ وَكَانَ وَعْدًا مَّفْعُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সুতরাং যখন সেই ঘটনা দু’টির প্রথমটি সমুপস্থিত হল, তখন আমি তোমাদের উপর আমার এমন বান্দাদেরকে আধিপত্য দান করলাম, যারা ছিল প্রচণ্ড লড়াকু। তারা তোমাদের নগরে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ল। ৩ এটা ছিল এমন এক প্রতিশ্রুতি, যা কার্যকর হওয়ারই ছিল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর এই দুইয়ের প্রথমটির নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হল তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম আমার বান্দাদেরকে, যুদ্ধে অতিশয় শক্তিশালী; এরা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সমস্ত ধ্বংস করেছিল। আর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে।


তাফসীরঃ

৩. বনী ইসরাঈরের নাফরমানী যখন সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন তাদের উপর শাস্তি নাযিল করা হল। বাবেলের রাজা বুখত নাস্সার তাদের উপর আক্রমণ চালাল এবং তাদেরকে পাইকাড়িভাবে হত্যা করল। যারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছিল তাদেরকে বন্দী করে ফিলিস্তিন থেকে বাবেলে নিয়ে গেল। সেখানে তারা দীর্ঘদিন তার দাস হিসেবে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে থাকে। এ আয়াতে সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।



ثُمَّ رَدَدْنَا لَكُمُ الْكَرَّةَ عَلَيْهِمْ وَأَمْدَدْنَاكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَجَعَلْنَاكُمْ أَكْثَرَ نَفِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর আমি তোমাদেরকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তাদের উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিলাম এবং তোমাদের ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততিতে বৃদ্ধি সাধন করলাম। আর তোমাদের লোকসংখ্যা আগের তুলনায় বৃদ্ধি করলাম। ৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর আমি তোমাদেরকে পুনরায় এদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করলাম, তোমাদেরকে ধন ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করলাম ও সংখ্যায় গরিষ্ঠ করলাম।


তাফসীরঃ

৪. বনী ইসরাঈল প্রায় সত্তর বছর পর্যন্ত বুখতে নাসসারের দাসত্ব করে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি দয়া করলেন। ইরানের রাজা সাইরাস বাবেলে আক্রমণ চালালেন এবং সেদেশ দখল করে নিলেন। সেখানে ইয়াহুদীদের দুর্দশা দেখে তার বড় দয়া হল। তিনি তাদেরকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় ফিলিস্তিনে বসবাসের সুযোগ দিলেন। এভাবে তাদের সুদিন আবার ফিরে আসল। তারা ধনে-জনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠল এবং একটা বড়-সড় জনগোষ্ঠী হিসেবে তারা সেখানে বসবাস করতে থাকল। কিন্তু সুদিন ফিরে পাওয়ার পর তারা ফের তাদের পুরোনো চরিত্রে ফিরে গেল। আবার আগের মত পাপাচারে লিপ্ত হল। ফলে দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল, যা সামনের আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে।



إِنْ أَحْسَنتُمْ أَحْسَنتُمْ لِأَنفُسِكُمْ ۖ وَإِنْ أَسَأْتُمْ فَلَهَا ۚ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ الْآخِرَةِ لِيَسُوءُوا وُجُوهَكُمْ وَلِيَدْخُلُوا الْمَسْجِدَ كَمَا دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَلِيُتَبِّرُوا مَا عَلَوْا تَتْبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমরা সৎকর্ম করলে তা নিজেদেরই কল্যাণার্থে করবে আর যদি মন্দ কাজ কর, তাতেও নিজেদেরই অকল্যাণ হবে। অতঃপর যখন দ্বিতীয় ঘটনার নির্ধারিত কাল আসল, (তখন আমি তোমাদের উপর অপর শত্রু চাপিয়ে দিলাম,) যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং যাতে আগের বার তারা যেভাবে প্রবেশ করেছিল, এবারও সেভাবে মসজিদে প্রবেশ করে এবং যা-কিছুর উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় তা মিসমার করে দেয়। ৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল, তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম, যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়, সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা সৎকর্ম করলে সৎকর্ম নিজেদের জন্যে করবে এবং মন্দ কর্ম করলে তাও করবে নিজেদের জন্যে। এরপর পরবর্তী নির্ধারিত কাল উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্যে, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করেছিল পুনরায় সেইভাবেই এতে প্রবেশ করার জন্যে এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্যে।


তাফসীরঃ

৫. কেউ কেউ বলেন, এই দ্বিতীয় শত্রু হল ‘এন্টিউকাস এপিফানিউস’। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাবের কিছুকাল আগে সে বায়তুল মাকদিসে হামলা করে ইয়াহুদীদের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল। কারও মতে এর দ্বারা রোম সম্রাট তীতূসের আক্রমণকে বোঝানো হয়েছিল। সে আক্রমণ চালিয়েছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আসমানে তুলে নেওয়ার পর। যদিও বনী ইসরাঈল বিভিন্নকালে বিভিন্ন শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এ দুই শত্রু দ্বারাই তারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে কারণেই আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে এই দুই শত্রুর উল্লেখ করেছেন। তারা প্রথম শত্রু অর্থাৎ বুখত নাস্সারের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল সেই সময়, যখন তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের শরীয়ত অমান্য করে ব্যাপক পাপাচারে লিপ্ত হয়। আর দ্বিতীয় শত্রুর কবলে পড়েছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধাচরণ করে। সামনে বলা হচ্ছে, তোমরা যদি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরোধিতায় লিপ্ত থাক, তবে তোমাদের সাথে পুনরায় একই আচরণ করা হবে।



عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يَرْحَمَكُمْ ۚ وَإِنْ عُدتُّمْ عُدْنَا ۘ وَجَعَلْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ حَصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন, কিন্তু তোমরা যদি একই কাজের পুনরাবৃত্তি কর, তবে আমিও পুনরাবৃত্তি করব। ৬ আর আমি তো জাহান্নামকে কাফেরদের জন্য কারাগার বানিয়েই রেখেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর, আমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের জন্যে কয়েদখানা করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি দয়া করবেন কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের পূর্ব-আচরণের পুনরাবৃত্তি কর তবে আমিও পুনরাবৃত্তি করব। জাহান্নামকে আমি করেছি কাফিরদের জন্যে কারাগার।


তাফসীরঃ

৬. অর্থাৎ তোমরা যদি ফের অন্যায়-অনাচার কর, আমিও পুনরায় তোমাদের শাস্তি দান করব। বস্তুত ইয়াহুদীদের চরিত্রই হল উপদ্রব করা, ফাসাদ করে বেড়ানো। তা থেকে তারা নিবৃত্ত হওয়ার নয়। তাই তো তারা আবারও ফাসাদ সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়। কাফের ও মুশরিকদের সাথে যোগ-সাজস করে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত আঁটে, ফলে তাদের উপর আযাব নেমে আসে। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে আরব-উপদ্বীপ থেকে উৎখাত করা হয়। পুনরায় তারা ফিৎনায় লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলার সাক্ষাৎ আযাবরূপে তাদের বিরুদ্ধে হিটলালের আবির্ভাব হয়। আবারও তারা ইসরাঈল-রাষ্ট্রের মাধ্যমে ফাসাদে নেমেছে এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে উপর্যুপরি উৎপাত চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস কোনও না কোনও পন্থায় তাদের উপর আবারও আল্লাহ তাআলার গযব নেমে আসবে এবং সবশেষে হযরত মাহদী ও ঈসা আলাইহিস সালামের হাতে তাদের সর্বপ্রধান উপদ্রবকারী দাজ্জালসহ তাদের গোটা জাতিকে খতম করে দেওয়া হবে। -অনুবাদক

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)



إِنَّ هَـٰذَا الْقُرْآنَ يَهْدِي لِلَّتِي هِيَ أَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত এ কুরআন সেই পথ দেখায়, যা সর্বাপেক্ষা সরল আর যারা (এর প্রতি) ঈমান এনে সৎকর্ম করে, তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে মহা প্রতিদান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে যা সুদৃঢ় এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার।


১০


وَأَنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর (সতর্ক করে দেয় যে,) যারা আখেরাতে বিশ্বাস রাখে না তাদের জন্য আমি যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যারা আখিরাতে ঈমান আনে না তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি মর্মন্তুদ শাস্তি।


১১


وَيَدْعُ الْإِنسَانُ بِالشَّرِّ دُعَاءَهُ بِالْخَيْرِ ۖ وَكَانَ الْإِنسَانُ عَجُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মানুষ সেইভাবেই অমঙ্গল প্রার্থনা করে, যেভাবে তার মঙ্গল প্রার্থনা করা উচিত। ৭ বস্তুত মানুষ বড় ব্যস্তমতি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মানুষ যেভাবে কল্যাণ কামনা করে, সেভাবেই অকল্যাণ কামনা করে। মানুষ তো খুবই দ্রুততা প্রিয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর মানুষ অকল্যাণ কামনা করে; যেইভাবে কল্যাণ কামনা করে ; মানুষ তো অতি মাত্রায় ত্বরাপ্রিয়।


তাফসীরঃ

৭. কাফেরগণ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলত কুফরের কারণে যদি আমাদের উপর শাস্তি অবধারিত হয় তবে এখনই নগদ নগদ কেন দেওয়া হচ্ছে না? এ আয়াতে তাদের সেই কথার দিকেই ইশারা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, তারা আযাবের মত মন্দ জিনিসকে এমনব্যস্ত-সমস্ত হয়ে চাচ্ছে, যেন তা কোন ভালো জিনিস।


১২


وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ ۖ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِّتَبْتَغُوا فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি রাত ও দিনকে দু’টি নিদর্শনরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর রাতের নিদর্শনকে অন্ধকার করেছি আর দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকিত, যাতে তোমরা নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার ৮ এবং যাতে তোমরা বছর-সংখ্যা ও (মাসের) হিসাব জানতে পার। আমি সবকিছু পৃথক-পৃথকভাবে স্পষ্ট করে দিয়েছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি রাত্রি ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। অতঃপর নিস্প্রভ করে দিয়েছি রাতের নিদর্শন এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী করেছি, যাতে তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে পার বছরসমূহের গণনা ও হিসাব এবং আমি সব বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি রাত্রি ও দিবসকে করেছি দুইটি নিদর্শন, রাত্রির নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিবসের নিদর্শনকে আলোকপ্রদ করেছি যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা ও হিসেব জানতে পার; এবং আমি সব কিছু বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।


তাফসীরঃ

৮. অর্থাৎ, পালাক্রমে রাত ও দিনের শৃঙ্খলিত আগমন আল্লাহ তাআলার কুদরত, রহমত ও হিকমতেরই নিদর্শন। রাতের বেলা অন্ধকার ছেয়ে যায়, যাতে মানুষ তখন বিশ্রাম নিতে পারে। আবার দিনের বেলা আলো ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মানুষ রুজি-রোজগারের সন্ধানে চলাফেরা করতে পারে। কুরআন মাজীদ রুজি-রোজগারকে ‘আল্লাহ তাআলার করুণা’ শব্দে ব্যক্ত করেছে (বিস্তারিত দ্র. সূরা নাহল, আয়াত ১৬ : ১৪-এর টীকা)। রাত ও দিনের পরিবর্তনের কারণেই তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।


১৩


وَكُلَّ إِنسَانٍ أَلْزَمْنَاهُ طَائِرَهُ فِي عُنُقِهِ ۖ وَنُخْرِجُ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتَابًا يَلْقَاهُ مَنشُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি প্রত্যেক মানুষের (কাজের) পরিণাম তার গলদেশে সেঁটে দিয়েছি ৯ এবং কিয়ামতের দিন আমি (তার আমলনামা) লিপিবদ্ধরূপে তার সামনে বের করে দেব, যা সে উন্মুক্ত পাবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি প্রত্যেক মানুষের কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন করে রেখেছি। কেয়ামতের দিন বের করে দেখাব তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

প্রত্যেক মানুষের কর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্যে বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত।


তাফসীরঃ

৯. ‘পরিণাম গলদেশে সেঁটে দেওয়া’-এর অর্থ এই যে, প্রত্যেকের সমস্ত কর্ম প্রতি মুহূর্তে লেখা হচ্ছে, যা তার ভালো-মন্দ পরিণামের নিশানাদিহি করে। কিয়ামতের দিন তার এ আমলনামা তার সামনে খুলে দেওয়া হবে। যা সে নিজেই পড়তে পারবে। হযরত কাতাদা (রহ.) বলেন, দুনিয়ায় যে ব্যক্তি নিরক্ষর ছিল কিয়ামতের দিন তাকেও আমলনামা পড়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে।


১৪


اقْرَأْ كِتَابَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(বলা হবে) তুমি নিজ আমলনামা পড়। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাব নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পাঠ কর তুমি তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমিই যথেষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব-নিকাশের জন্যে যথেষ্ট।’


১৫


مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে ব্যক্তি সরল পথে চলে, সে তো সরল পথে চলে নিজ মঙ্গলের জন্যই আর যে ব্যক্তি ভ্রান্ত পথ অবলম্বন করে, সে নিজের ক্ষতির জন্যই তা অবলম্বন করে। কোনও ভার বহনকারী অন্য কারও ভার বহন করবে না। ১০ আমি কখনও কাউকে শাস্তি দেই না, যতক্ষণ না (তার কাছে) কোন রাসূল পাঠাই।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা সৎপথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্যে সৎপথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্যে এবং কেউ অন্য কারও ভার বহন করবে না। আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।


তাফসীরঃ

১০. অর্থাৎ একজনের গুনাহের বোঝা অন্যজন বহন করবে না যে, সে তার শাস্তি নিজের মাথায় নিয়ে তার নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করে দেবে। বরং পাপ যে করবে, তার জন্য দায়ীও সে নিজেই হবে এবং তার শাস্তিও তার নিজেকেই ভোগ করতে হবে। -অনুবাদক


১৬


وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُوا فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তাদের বিত্তবান লোকদেরকে (ঈমান ও আনুগত্যের) হুকুম দেই, কিন্তু তারা তাতে নাফরমানী করে, ফলে তাদের সম্পর্কে কথা চূড়ান্ত হয়ে যায় ১১ এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই তখন এর সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিদেরকে সৎকর্ম করতে আদেশ করি, কিন্তু এরা সেখানে অসৎকর্ম করে ; এরপর এর প্রতি দণ্ডাজ্ঞা ন্যায়সংগত হয়ে যায় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত করি।


তাফসীরঃ

১১. পাপাচারের কারণে তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হয়ে যায়। -অনুবাদক


১৭


وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِنَ الْقُرُونِ مِن بَعْدِ نُوحٍ ۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ بِذُنُوبِ عِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি নূহের পর কত মানবগোষ্ঠীকেই ধ্বংস করেছি! তোমার প্রতিপালক নিজ বান্দাদের পাপরাশি সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত, তিনি সবকিছু দেখছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নূহের পর আমি অনেক উম্মতকে ধ্বংস করেছি। আপনার পালনকর্তাই বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ জানা ও দেখার জন্যে যথেষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নূহের পর আমি কত মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছি! তোমার প্রতিপালকই তাঁর বান্দাদের পাপাচরণের সংবাদ রাখা ও পর্যবেক্ষণের জন্যে যথেষ্ট।


১৮


مَّن كَانَ يُرِيدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَهُ فِيهَا مَا نَشَاءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَهُ جَهَنَّمَ يَصْلَاهَا مَذْمُومًا مَّدْحُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কেউ দুনিয়ার নগদ লাভ কামনা করলে আমি যাকে ইচ্ছা, যতটুকু ইচ্ছা, এখানেই তাকে তা নগদ দিয়ে দেই। ১২ তারপর আমি তার জন্য জাহান্নাম রেখে দিয়েছি, যাতে সে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িতরূপে প্রবেশ করবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে কেউ ইহকাল কামনা করে, আমি সেসব লোককে যা ইচ্ছা সত্ত্বর দিয়ে দেই। অতঃপর তাদের জন্যে জাহান্নাম নির্ধারণ করি। ওরা তাতে নিন্দিত-বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কেউ আশু সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এইখানেই সত্বর দিয়ে থাকি ; পরে এর জন্যে জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।


তাফসীরঃ

১২. এর দ্বারা সেই ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, যে দুনিয়ার উন্নতিকেই নিজ জীবনের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে নিয়েছে, আখেরাতকে সে হয় বিশ্বাসই করে না অথবা সে নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই। এমন সব ব্যক্তিও এর অন্তর্ভুক্ত, যারা সৎকাজ করে অর্থ-সম্পদ বা সুনাম-সুখ্যাতি লাভের জন্য, আল্লাহ তাআলাকে রাজি করার জন্য নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা যে দুনিয়ায় এসব পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই এবং এরও কোনও নিশ্চয়তা নেই যে, তারা যা-যা কামনা করে সবই পাবে। হাঁ, তাদের মধ্যে আমি যাকে দেওয়া সমীচীন মনে করি এবং যে পরিমাণ দেওয়া সমীচীন মনে করি, দুনিয়ায় দিয়ে দেই। কিন্তু আখেরাতে তাদের ঠিকানা অবশ্যই জাহান্নাম।


১৯


وَمَنْ أَرَادَ الْآخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعْيَهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَـٰئِكَ كَانَ سَعْيُهُم مَّشْكُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যে ব্যক্তি আখেরাত (-এর লাভ) চায় এবং সেজন্য যথোচিতভাবে চেষ্টা করে, সে যদি মুমিন হয়, তবে এরূপ লোকের চেষ্টার পরিপূর্ণ মর্যাদা দেওয়া হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর যারা পরকাল কামনা করে এবং মুমিন অবস্থায় তার জন্য যথাযথ চেষ্টা-সাধনা করে, এমন লোকদের চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা মু’মিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং এর জন্যে যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য।


২০


كُلًّا نُّمِدُّ هَـٰؤُلَاءِ وَهَـٰؤُلَاءِ مِنْ عَطَاءِ رَبِّكَ ۚ وَمَا كَانَ عَطَاءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! দুনিয়ায়) তোমার প্রতিপালকের দানের যে ব্যাপারটা, আমি তা দ্বারা এদেরকেও ধন্য করি এবং ওদেরকেও। ১৩ (দুনিয়ায়) তোমার প্রতিপালকের দান কারও জন্যই রুদ্ধ নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এদেরকে এবং ওদেরকে প্রত্যেককে আমি আপনার পালনকর্তার দান পৌছে দেই এবং আপনার পালকর্তার দান অবধারিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক তাঁর দান দিয়ে এদেরকে ও এদেরকে সাহায্য করেন এবং তোমার প্রতিপালকের দান অবারিত।


তাফসীরঃ

১৩. এস্থলে عطاء (দান) দ্বারা রিযক বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় মুমিন-কাফির, মুত্তাকী-ফাসেক নির্বিশেষে সকলকেই রিযক দিয়ে থাকেন। রিযকের দুয়ার কারও জন্যই বন্ধ নয়।


২১


انظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ وَلَلْآخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَاتٍ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

লক্ষ্য কর, আমি কিভাবে তাদের কতককে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ১৪ নিশ্চিত জেন, আখেরাত মর্যাদার দিক থেকেও মহত্তর এবং মাহাত্ম্যের দিক থেকেও শ্রেষ্ঠতর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

দেখুন, আমি তাদের একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম। পরকাল তো নিশ্চয়ই মর্তবায় শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতে শ্রেষ্ঠতম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

লক্ষ্য কর, আমি কীভাবে এদের এক দলকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আখিরাত তো নিশ্চয়ই মর্যাদায় মহত্তর ও গুণে শ্রেষ্ঠতর।


তাফসীরঃ

১৪. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা নিজ হিকমত অনুযায়ী কাউকে বেশি রিযক দেন এবং কাউকে কম। এটা একান্ত তাঁর ইচ্ছা। কাজেই এর ফিকিরে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। বরং বান্দার পূর্ণ চেষ্টা যার পেছনে ব্যয় করা উচিত তা হচ্ছে আখেরাতের সাফল্য অর্জন। কেননা দুনিয়াবী স্বার্থের তুলনায় তা বহুগুণে শ্রেষ্ঠ; বরং উভয়ের মধ্যে কোন তুলনাই চলে না।


২২


لَّا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُومًا مَّخْذُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে মাবুদ বানিও না। অন্যথায় তুমি নিন্দাযোগ্য (ও) নিঃসহায় হয়ে পড়বে। ১৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

স্থির করো না আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য। তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ র সঙ্গে অপর কোন ইলাহ্ সাব্যস্ত কর না ; করলে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।


তাফসীরঃ

১৫. ১৯ নং আয়াতে বলা হয়েছিল, আখেরাতের কল্যাণ লাভের জন্য বান্দার কর্তব্য যথোচিত চেষ্টা করা। তার দ্বারা ইশারা ছিল আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার প্রতি। এবার এখান থেকে তাঁর কিছু বিধি-নিষেধের বিবরণ দেওয়া হচ্ছে। তা শুরু করা হয়েছে তাওহীদের হুকুম দ্বারা। কেননা তাওহীদের বিশ্বাস ছাড়া কোন আমল কবুল হয় না। তারপর ‘হুকুকুল ইবাদ’ সংক্রান্ত কিছু বিধান পেশ করা হয়েছে।


২৩


۞ وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, পিতা-মাতার কোনও একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না ১৬ এবং তাদেরকে ধমক দিও না; বরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত না করতে ও পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন বা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ্’ বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না ; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বল।


তাফসীরঃ

১৬. ‘উফ্’ পর্যন্ত বলো না’এর অর্থ, তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করো না এবং তাদরকে বিরক্তিসূচক কোন কথা বলো না, যেমন তারা যদি কোন কথা বারবার বলে বা অপ্রয়োজনীয় কোন কথা বলে, যেমনটা বৃদ্ধ ও শিশুরা করে থাকে, তখন বিরক্তির সাথে তার জবাব দিও না। -অনুবাদক


২৪


وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো এবং দু‘আ করো, হে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছে, তেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’


২৫


رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ ۚ إِن تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে কি আছে তা ভালো জানেন। তোমরা যদি নেককার হয়ে যাও, তবে যারা বেশি বেশি তার দিকে রুজু হয় তিনি তাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করেন। ১৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভালই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্যে ক্ষমাশীল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভাল জানেন ; যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও তবেই তো তিনি আল্লাহ্-অভিমুখীদের প্রতি অতিশয় ক্ষমাশীল।


তাফসীরঃ

১৭. অর্থাৎ, তোমরা যদি ঈমানদার হও এবং সামগ্রিকভাবে সৎকর্মে রত থাকার চেষ্টা কর, তবে এ অবস্থায় মানবীয় দুর্বলতা হেতু তোমাদের দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে এবং সেজন্য তোমরা আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে তাওবা করলে আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।


২৬


وَآتِ ذَا الْقُرْبَىٰ حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক আদায় করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও (তাদের হক প্রদান করো)। আর নিজেদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে উড়াবে না। ১৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আত্নীয়-স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আত্মীয়-স্বজনকে দিবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কর না।


তাফসীরঃ

১৮. কুরআন মাজীদ এস্থলে تَبْذِيْرْ শব্দ ব্যবহার করেছে। সাধারণত تَبْذِيْرْ ও اِسْرَافْ উভয়ের অর্থ করা হয় ‘অপব্যয়’। কিন্তু উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। যদি বৈধ কাজে ব্যয় করা হয়, কিন্তু প্রয়োজনের বেশি বা মাত্রাতিরিক্ত করা হয়, তাকে ‘ইসরাফ’ বলে আর অবৈধ কাজে অর্থ ব্যয়কে বলে ‘তাবযীর’। এ কারণেই এখানে তরজমা করা হয়েছে ‘অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ-সম্পদ উড়ানো’।


২৭


إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

জেনে রেখ, যারা অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ উড়ায়, তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা অপব্যয় করে তারা তো শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।


২৮


وَإِمَّا تُعْرِضَنَّ عَنْهُمُ ابْتِغَاءَ رَحْمَةٍ مِّن رَّبِّكَ تَرْجُوهَا فَقُل لَّهُمْ قَوْلًا مَّيْسُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যদি কখনও তাদের (অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের) থেকে এ কারণে তোমার মুখ ফেরানোর দরকার হয় যে, তুমি তোমার প্রতিপালকের রহমতের প্রত্যাশায় রয়েছ, ১৯ তবে সে ক্ষেত্রেও তাদের সাথে নম্রতার সাথে কথা বলো।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তোমার পালনকর্তার করুণার প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং যদি এদের হতে তোমার মুখ ফিরাতেই হয়, তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে অনুগ্রহ লাভের প্রত্যাশায়, তা হলে এদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বল;


তাফসীরঃ

১৯. অর্থাৎ, নিজের কাছে টাকা-পয়সা না থাকা অবস্থায় যদি কোন অভাবগ্রস্ত আসে আর তখন তাকে কিছু দেওয়া সম্ভব না হয় কিন্তু এই আশায় থাক যে, আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিলে তখন তাদেরকে সাহায্য করবে, সেক্ষেত্রে তাদের কাছে নম্র ভাষায় অপারগতা প্রকাশ করবে।


২৯


وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَىٰ عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَّحْسُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখ না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখ না, যদ্দরুণ তোমাকে নিন্দাযোগে ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুমি একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃতি, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি তোমার হস্ত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখ না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কর না, তা হলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।


৩০


إِنَّ رَبَّكَ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা করেন জীবিকা প্রশস্ত করে দেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) সংকুচিত করে দেন। জেনে রেখ, তিনি নিজ বান্দাদের অবস্থাদি সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং তাদেরকে তিনি ভালোভাবে দেখছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় তোমার পালকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন এবং তিনিই তা সংকুচিতও করে দেন। তিনিই তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত,-সব কিছু দেখছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যার জন্যে ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্যে ইচ্ছা তা সীমিত করেন। তিনি তো তাঁর বান্দাদের সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা।


৩১


وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

দারিদ্র্যের ভয়ে নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করো না। ২০ আমি তাদেরকেও রিযক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা গুরুতর অপরাধ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মারাত্নক অপরাধ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্য-ভয়ে হত্যা কর না। এদেরকেও আমিই রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই এদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।


তাফসীরঃ

২০. আরব মুশরিকগণ অনেক সময় কন্যা সন্তানকে এ কারণে হত্যা করত যে, নিজ গৃহে কন্যা সন্তান থাকাকে তারা সামাজিকভাবে লজ্জাষ্কর মনে করত। আবার অনেক সময় ভয় করত খাওয়া-পরানোর খরচ যোগাতে গিয়ে গরীব হয়ে যাবে। আর এ কারণেও তারা সন্তান হত্যা করত।


৩২


وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর যিনার নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।


৩৩


وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِف فِّي الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنصُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ যেই প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন তাকে হত্যা করো না, তবে (শরীয়ত অনুযায়ী) তোমরা তার অধিকার লাভ করলে ভিন্ন কথা। ২১ যাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়,আমি তার অলিকে (কিসাস গ্রহণের) অধিকার দিয়েছি। সুতরাং সে যেন হত্যাকার্যে সীমালংঘন না করে। ২২ নিশ্চয়ই সে এর উপযুক্ত যে, তার সাহায্য করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে প্রাণকে হত্যা করো না, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় সে সাহায্যপ্রাপ্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা কর না। কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তা প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি ; কিন্তু হত্যার ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে ; সে তো সাহায্যপ্রাপ্ত হয়েছেই।


তাফসীরঃ

২১. কাউকে হত্যা করার অধিকার লাভ হয় মাত্র কয়েকটি অবস্থায়। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থার কথা পরবর্তী বাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হল, কাউকে যদি অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, তবে তার অলি অর্থাৎ ওয়ারিশগণ আদালতী অনুষ্ঠানাদির পর হত্যাকারীকে হত্যা করা বা করানোর অধিকার সংরক্ষণ করে। পরিভাষায় একে ‘কিসাস’ বলা হয়।


২২. নিহতের ওয়ারিশগণ কিসাসস্বরূপ ঘাতককে হত্যা করার অধিকার সংরক্ষণ করে বটে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সীমালংঘন জায়েয নয়। অর্থাৎ, হত্যার সাথে তার হাত-পা কেটে দেওয়া বা বাড়তি কষ্ট দেওয়ার জন্য অধিকতর কঠিন পন্থায় হত্যা করার অনুমতি নেই। এরূপ করলে কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে তা সীমালংঘনরূপে গণ্য হবে।


৩৪


وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ ۚ وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ ۖ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং ইয়াতীম যতক্ষণ না পরিপক্কতায় উপনীত হয়, তার সম্পদের কাছেও যেও না, তবে এমন পন্থায় যা (তার পক্ষে) উত্তম। ২৩ আর অঙ্গীকার পূরণ করো। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর, এতিমের মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার কল্যাণ আকাংখা ছাড়া; সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যৌবনে পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার পূর্ন কর। নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইয়াতীম বয়োপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুপায়ে ছাড়া তোমরা তার সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না এবং প্রতিশ্রুতি পালন কর; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।


তাফসীরঃ

২৩. ইয়াতীমদের আত্মীয়-স্বজন, বিশেষত তার অভিভাবকদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে, ইয়াতীম যদি তার মৃত পিতার রেখে যাওয়া সম্পদের কোন অংশ পায়, তবে তাকে আমানত মনে করবে। সে সম্পদে ইয়াতীমের পক্ষে যা লাভজনক কেবল সে রকম কাজ-কারবারই জায়েয হবে। এমন কোনও কাজ তাতে করা যাবে না, যাতে তার ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। যেমন তা থেকে কাউকে ঋণ দেওয়া বা তার পক্ষ হতে কাউকে কিছু উপহার দেওয়া ইত্যাদি। অবশ্য সে যখন পরিপক্কতায় উপনীত হবে, অর্থাৎ সাবালকত্ব লাভ করবে এবং নিজের লাভ-ক্ষতি উপলব্ধি করার মত বুঝ-সমঝ তার ভেতর এসে যাবে, তখন তার সম্পদ তার হাতে বুঝিয়ে দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। সূরা নিসায় (৪ : ২) এ মাসআলা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।


৩৫


وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন পরিমাপ পাত্র দ্বারা কাউকে কোন জিনিস মেপে দাও, তখন পরিপূর্ণ মাপে দিও আর ওজন করার জন্য সঠিক দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করো। এ পন্থাই সঠিক এবং এরই পরিণাম উৎকৃষ্ট।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মেপে দেয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপালায় ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম শুভ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মাপিয়া দিবার সময় পূর্ণ মাপে দিবে এবং ওজন করবে সঠিক দাঁড়িপাল¬ায়, এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্ট।


৩৬


وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَـٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত জ্ঞান নেই (তাকে সত্য মনে করে) তার পিছনে পড়ো না। ২৪ জেনে রেখ, কান, চোখ ও অন্তর এর প্রতিটি সম্পর্কে (তোমাদেরকে) জিজ্ঞেস করা হবে। ২৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই এর অনুসরণ কর না; কর্ণ, চোখ, হৃদয়- এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কেই কৈফিয়ত তলব করা হবে।


তাফসীরঃ

২৪. অর্থাৎ, কারও সম্পর্কে যদি অভিযোগ ওঠে সে কোনও অপরাধ বা কোনও গুনাহের কাজ করেছে, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত শরয়ী সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা তার সত্যতা প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেমন কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জায়েয নয়, তেমনি সত্যিই সে ওই অপরাধ বা গুনাহের কাজটি করেছে, অন্তরে এরূপ বিশ্বাস পোষণও আদৌ জায়েয নয়। আয়াতের অর্থ এরূপও হতে পারে যে, যে বিষয় নিশ্চিতভাবে জানা নেই এবং তা জানার উপর দুনিয়া ও আখেরাতের কোনও কাজও নির্ভরশীল নয়, অহেতুক এরূপ বিষয়ের খোঁজ-খবর ও তত্ত্ব তালাশে লেগে পড়া জায়েয নয়।


২৫. কেউ যদি শরয়ী সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কারও সম্পর্কে এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, সে অমুক অপরাধে লিপ্ত হয়েছে, তবে এটা অন্তরের গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং এ কারণে আখেরাতে তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হবে।


৩৭


وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলো না। তুমি তো ভূমিকে ফাটিয়ে ফেলতে পারবে না এবং উচ্চতায় পাহাড় পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। ২৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ কর না ; তুমি তো কখনই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না।


তাফসীরঃ

২৬. দম্ভভরে চলার ধরন দু’টি। (ক) কেউ তো মাটির উপর জোরে-জোরে পা ফেলে এবং (খ) কেউ কেউ বুকটান করে চলার চেষ্টা করে। প্রথম অবস্থার জন্য বলা হয়েছে, তোমরা পা যতই জোরে ফেল না কেন, মাটি ফাটিয়ে তো ফেলতে পারবে না! আর দ্বিতীয় অবস্থার জন্য বলা হয়েছে, বুকটান করে নিজেকে লম্বা করার চেষ্টা করছ না কি? তা যতই চেষ্টা কর না কেন পাহাড় সমান তো আর উঁচু হতে পারবে না! লম্বা ও উঁচু হওয়াটাই যদি মর্যাদার মাপকাঠি হয়, তবে তোমাদের তুলনায় তো পাহাড়েরই মর্যাদা বেশি হওয়ার কথা ছিল।


৩৮


كُلُّ ذَٰلِكَ كَانَ سَيِّئُهُ عِندَ رَبِّكَ مَكْرُوهًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এ সবই এমন মন্দ কাজ, ২৭ যা তোমার প্রতিপালকের কাছে ঘৃণ্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ সবের মধ্যে যেগুলো মন্দকাজ, সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এই সমস্তের মধ্যে যেগুলি মন্দ সেইগুলি তোমার প্রতিপালকের নিকট ঘৃণ্য।


তাফসীরঃ

২৭. অর্থাৎ যেসব করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেগুলো করা মন্দ ও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্য আর যা করতে আদেশ করা হয়েছে, তা না করা মন্দ ও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্য। অর্থাৎ যথাক্রমে করা ও না করার দৃষ্টিকোণ থেকে সবগুলোই মন্দ। -অনুবাদক


৩৯


ذَٰلِكَ مِمَّا أَوْحَىٰ إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ ۗ وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللَّهِ إِلَـٰهًا آخَرَ فَتُلْقَىٰ فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا مَّدْحُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) এগুলো এমন হিকমতের কথা, যা তোমার প্রতিপালক ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পৌঁছিয়েছেন এবং (হে মানুষ!) আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে মাবুদ বানিও না, অন্যথায় তুমি নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটা ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা আপনাকে ওহী মারফত দান করেছেন। আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমার প্রতিপালক ওহীর দিয়ে তোমাকে যে হিক্মত দান করেছেন এইগুলি তার অন্তর্ভুক্ত। তুমি আল্লাহ্ র সঙ্গে অপর ইলাহ্ স্থির কর না, করলে তুমি নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।


৪০


أَفَأَصْفَاكُمْ رَبُّكُم بِالْبَنِينَ وَاتَّخَذَ مِنَ الْمَلَائِكَةِ إِنَاثًا ۚ إِنَّكُمْ لَتَقُولُونَ قَوْلًا عَظِيمًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের প্রতিপালক পুত্র সন্তান দেওয়ার জন্য তোমাদেরকে বেছে নিয়েছেন আর নিজের জন্য বুঝি ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? ২৮ প্রকৃতপক্ষে তোমরা বড় গুরুতর কথা বলছ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের পালনকর্তা কি তোমাদের জন্যে পুত্র সন্তান নির্ধারিত করেছেন এবং নিজের জন্যে ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয় তোমরা গুরুতর গর্হিত কথাবার্তা বলছ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদেরকে পুত্র সন্তানের জন্যে নির্বাচিত করেছেন এবং তিনি কি নিজে ফেরেশতাগণকে কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন ? তোমরা তো নিশ্চয়ই ভয়ানক কথা বলে থাক !


তাফসীরঃ

২৮. পিছনে কয়েক জায়গায় গেছে, আরব মুশরিকগণ ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তাআলার কন্যা বলত, অথচ তারা নিজেদের জন্য মেয়ে-সন্তানের জন্ম পছন্দ করত না; বরং অত্যন্ত গ্লানিকর মনে করত। সর্বদা আশা করত যেন তাদের পুত্র সন্তান জন্মায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, এটা বড় আজব ব্যাপার যে, তোমাদের ধারণা মতে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তো পুত্র দেওয়ার জন্য বাছাই করেছেন আবার নিজের জন্য রেখেছেন মেয়ে, যা কিনা তোমাদের দৃষ্টিতে বাবার পক্ষে গ্লানিকর।


৪১


وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِي هَـٰذَا الْقُرْآنِ لِيَذَّكَّرُوا وَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا نُفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি এ কুরআনে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাদান করেছি, যাতে মানুষ সচেতন হয়, কিন্তু এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছি, যাতে তারা চিন্তা করে। অথচ এতে তাদের কেবল বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর অবশ্যই আমি এই কুরআনে বহু বিষয় বারবার বিবৃত করেছি যাতে এরা উপদেশ গ্রহণ করে। কিন্তু এতে এদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।


৪২


قُل لَّوْ كَانَ مَعَهُ آلِهَةٌ كَمَا يَقُولُونَ إِذًا لَّابْتَغَوْا إِلَىٰ ذِي الْعَرْشِ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, আল্লাহর সঙ্গে যদি আরও ইলাহ থাকত, যেমন তোমরা বলছ তবে তারা আরশ-অধিপতি (প্রকৃত ইলাহের)-এর উপর প্রভাব বিস্তারের কোন পথ খুঁজত। ২৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ তাদের কথামত যদি তাঁর সাথে অন্যান্য উপাস্য থাকত; তবে তারা আরশের মালিক পর্যন্ত পৌছার পথ অন্বেষন করত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘যদি তাঁর সঙ্গে আরও ইলাহ্ থাকত যেমন এরা বলে, তবে তারা আরশ-অধিপতির প্রতিদ্বন্দি¡তা করার উপায় অনে¦ষণ করত।’


তাফসীরঃ

২৯. এটা তাওহীদের পক্ষে ও শিরকের বিরুদ্ধে এমন এক দলীল, যা যে-কারও পক্ষেই বোঝা সহজ। দলীলটির সারমর্ম হল, ইলাহ এমন কোনও সত্তাকেই বলা যায়, যিনি হবেন সর্বশক্তিমান, যে- কোনও রকমের কাজ করার ক্ষমতা যার আছে এবং যিনি কারও অধীন হবেন না। বিশ্বজগতে আল্লাহ তাআলা ছাড়া আরও ইলাহ থাকলে, প্রত্যেকেই এ গুণের অধিকারী হত। ফলে প্রত্যেকেই অন্যের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন হত এবং প্রত্যেকেরই ক্ষমতা হত পরিপূর্ণ। আর সেক্ষেত্রে সব ইলাহ মিলে আরশ অধিপতি ইলাহের উপর প্রভাবও বিস্তার করতে সক্ষম হত। যদি বলা হয়, আল্লাহর উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা তাদের নেই, বরং তারা আল্লাহ তাআলার কর্তৃত্বাধীন, তবে তারা কেমন ইলাহ হল? এর দ্বারা প্রমাণ হয়ে যায় প্রকৃত ইলাহ একজনই। তিনি ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নয়।


৪৩


سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يَقُولُونَ عُلُوًّا كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত তারা যেসব কথা বলে, তাঁর সত্তা তা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র ও সমুচ্চ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি নেহায়েত পবিত্র ও মহিমান্বিত এবং তারা যা বলে থাকে তা থেকে বহু উর্ধ্বে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি পবিত্র, মহিমান্বিত এবং এরা যা বলে তা হতে তিনি বহু ঊর্ধ্বে।


৪৪


تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ ۚ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَـٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সাত আসমান ও যমীন এবং এদের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত সৃষ্টি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে, এমন কোন জিনিস নেই, যা তাঁর সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে না। কিন্তু তোমরা তাদের তাসবীহ বুঝতে পার না। ৩০ বস্তুত তিনি পরম সহিষ্ণু, অতি ক্ষমাশীল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং এদের অন্তর্বর্তী সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না ; কিন্তু এদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না; নিশ্চয়ই তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।


তাফসীরঃ

৩০. এর দুই ব্যাখ্যা হতে পারে (ক) যাবতীয় বস্তু তাদের নিজ-নিজ অবস্থা দ্বারা আল্লাহ তাআলার তাসবীহ (পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা) করে। কেননা প্রতিটি বস্তুই এমন যে, তার সৃজন ও সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ শক্তি ও তাঁর একত্বের প্রমাণ মেলে এবং উপলব্ধি করা যায় প্রতিটি বস্তু একান্তভাবে তাঁরই আজ্ঞাধীন। (খ) এটাও অসম্ভব নয় যে, প্রতিটি বস্তু প্রকৃত অর্থেই তাসবীহ পাঠ করে, কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারি না। কেননা আল্লাহ তাআলা জগতের প্রতিটি জিনিস, এমনকি পাথরের ভেতরও এক রকমের অনুভূতি-শক্তি দান করেছেন। যে শক্তি দ্বারা সবকিছুর পক্ষেই তাসবীহ পাঠ সম্ভব। কুরআন মাজীদের বেশ ক’টি আয়াতের আলোকে এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাই বেশি সঠিক মনে হয়। আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে নিয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও এক ধরনের অনুভব শক্তি আছে।


৪৫


وَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তুমি যখন কুরআন পড়, তখন আমি তোমার এবং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য পর্দা রেখে দেই। ৩১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন, তখন আমি আপনার মধ্যে ও পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন পর্দা ফেলে দেই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি যখন কুরআন পাঠ কর তখন তোমার ও যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না তাদের মধ্যে এক প্রচ্ছন্ন পর্দা রেখে দেই।


তাফসীরঃ

৩১. যারা নিজ সংশোধন ও আখেরাতের চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ উদাসীন, কেবল দুনিয়ার ধান্ধা নিয়ে ব্যস্ত, যাদের অন্তরে সত্য জানার কোন আগ্রহ নেই; বরং সত্যের বিপরীতে জেদ ও হঠকারিতা প্রদর্শনকেই নীতি বানিয়ে নিয়েছে, তারা সত্য সম্পর্কে চিন্তা করার ও সত্য বোঝার তাওফীক থেকে বঞ্চিত থাকে। এটাই সেই অদৃশ্য পর্দা, যা তাদের ও নবীর মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়, এটাই সেই আচ্ছাদন, যা দ্বারা তাদের অন্তর ঢেকে দেওয়া হয় এবং এটাই সেই বধিরতা যদ্দরুণ তারা সত্য কথা শোনার যোগ্যতা হতে বঞ্চিত থাকে।


৪৬


وَجَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۚ وَإِذَا ذَكَرْتَ رَبَّكَ فِي الْقُرْآنِ وَحْدَهُ وَلَّوْا عَلَىٰ أَدْبَارِهِمْ نُفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর আমি তাদের অন্তরের উপর আচ্ছাদন রেখে দিয়েছি, যাতে তারা তা বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা সৃষ্টি করে দেই। আর তুমি যখন কুরআনে তোমার একমাত্র প্রতিপালকের উল্লেখ কর, তখন তারা বিতৃষ্ণাভরে পিছন ফিরিয়ে চলে যায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ রেখে দেই, যাতে তারা একে উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কর্ণকুহরে বোঝা চাপিয়ে দেই। যখন আপনি কোরআনে পালনকর্তার একত্ব আবৃত্তি করেন, তখন ও অনীহাবশতঃ ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে চলে যায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি এদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন এরা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং এদেরকে বধির করেছি ; ‘তোমার প্রতিপালক এক’, এটা যখন তুমি কুরআন হতে আবৃত্তি কর তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে এরা সরিয়া পড়ে।


৪৭


نَّحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَسْتَمِعُونَ بِهِ إِذْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ وَإِذْ هُمْ نَجْوَىٰ إِذْ يَقُولُ الظَّالِمُونَ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا رَجُلًا مَّسْحُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা যখন তোমার কথা কান পেতে শোনে, তখন কেন শোনে তা আমি ভালো করে জানি এবং যখন তারা পরস্পরে কানাকানি করে, যখন জালেমগণ (তাদের স্বগোত্রীয় মুসলিমদেরকে) বলে, তোমরা তো কেবল একজন যাদুগ্রস্ত লোকের অনুসরণ করছ (তখন তাদের সে কথাও আমি ভালোভাবে জানি)।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন তারা কান পেতে আপনার কথা শোনে, তখন তারা কেন কান পেতে তা শোনে, তা আমি ভাল জানি এবং এও জানি গোপনে আলোচনাকালে যখন জালেমরা বলে, তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ ব্যক্তির অনুসরণ করছ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এরা কান পেতে তোমার কথা শুনে তখন এরা কেন কান পেতে শুনে তা আমি ভাল জানি, এবং এটাও জানি, গোপনে আলোচনাকালে জালিমরা বলে, ‘তোমরা তো এক জাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছো।’

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


৪৮


انظُرْ كَيْفَ ضَرَبُوا لَكَ الْأَمْثَالَ فَضَلُّوا فَلَا يَسْتَطِيعُونَ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

লক্ষ্য কর, তারা তোমার প্রতি কেমন (পরিহাসমূলক) দৃষ্টান্ত আরোপ করছে। তারা পথ হারিয়েছে সুতরাং তারা আর পথে আসতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

দেখুন, ওরা আপনার জন্যে কেমন উপমা দেয়। ওরা পথভ্রষ্ট হয়েছে। অতএব, ওরা পথ পেতে পারে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

দেখ, এরা তোমার কী উপমা দেয়! এরা পথভ্রষ্ট হয়েছে, ফলে এরা পথ পাবে না।


৪৯


وَقَالُوا أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলে, আমরা যখন অস্থিতে পরিণত হব এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাব, তারপরও কি আমরা নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা বলেঃ যখন আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাব, তখনও কি নতুন করে সৃজিত হয়ে উত্থিত হব?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা বলে, ‘আমরা অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নূতন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হব ?’


৫০


۞ قُلْ كُونُوا حِجَارَةً أَوْ حَدِيدًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, তোমরা পাথর বা লোহা হয়ে যাও!


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহা।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা হয়ে যাও পাথর বা লৌহ।


৫১


أَوْ خَلْقًا مِّمَّا يَكْبُرُ فِي صُدُورِكُمْ ۚ فَسَيَقُولُونَ مَن يُعِيدُنَا ۖ قُلِ الَّذِي فَطَرَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ فَسَيُنْغِضُونَ إِلَيْكَ رُءُوسَهُمْ وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هُوَ ۖ قُلْ عَسَىٰ أَن يَكُونَ قَرِيبًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা এমন কোন সৃষ্টি হয়ে যাও, যে সম্পর্কে তোমাদের মনের ভাবনা হল যে, তা (জীবিত করা) আরও কঠিন। (তবুও তোমাদেরকে ঠিকই জীবিত করা হবে)। অতঃপর তারা বলবে, কে আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করবে? বলে দিও, তিনিই জীবিত করবেন, যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন। ৩২ তারপর তারা তোমাদের সামনে মাথা নেড়ে-নেড়ে বলবে, এরূপ কখন হবে? ৩৩ বলে দিও, সম্ভবত সে সময়টি কাছেই এসে গেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা এমন কোন বস্তু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন; তথাপি তারা বলবেঃ আমাদের কে পুর্নবার কে সৃষ্টি করবে। বলুনঃ যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃজন করেছেন। অতঃপর তারা আপনার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবেঃ এটা কবে হবে? বলুনঃ হবে, সম্ভবতঃ শ্রীঘ্রই।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অথবা এমন কিছু যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন’; তারা বলবে, ‘কে আমাদেরকে পুনরুত্থিত করবে ?’ বল, ‘তিনিই, যিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন।’ এরপর এরা তোমার সামনে মাথা নাড়িবে ও বলবে, ‘তা কবে ?’ বল, ‘হবে সম্ভবত শীঘ্রই,


তাফসীরঃ

৩২. ইশারা করা হচ্ছে, কোন জিনিসকে প্রথমবার নাস্তি থেকে অস্তিতে আনাই বেশি কঠিন হয়ে থাকে। একবার সৃষ্টি করার পর পুনরায় সৃষ্টি অতটা কঠিন হয় না। যেই আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টির মত কঠিনতর কাজটিও নিজ কুদরতে অনায়াসে সম্পন্ন করতে পেরেছেন, তিনি যে আবারও সৃষ্টি করতে পারবেন এটা মানতে সমস্যা কোথায়?


৩৩. অর্থাৎ তারা বিস্ময়ে ও বিদ্রূপে মাথা দোলাবে আর বিষয়টা যে সম্পূর্ণ অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য তা বোঝানোর জন্য প্রশ্ন করবে, বল দেখি তা কবে হবে? -অনুবাদক


৫২


يَوْمَ يَدْعُوكُمْ فَتَسْتَجِيبُونَ بِحَمْدِهِ وَتَظُنُّونَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যে দিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন, তোমরা তাঁর প্রশংসারত হয়ে তাঁর হুকুম পালন করবে এবং তোমাদের মনে হবে (দুনিয়ায়) তোমরা অল্প কিছুকালই অবস্থান করেছিলে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহবান করবেন, অতঃপর তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে চলে আসবে। এবং তোমরা অনুমান করবে যে, সামান্য সময়ই অবস্থান করেছিলে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন, এবং তোমরা তাঁর প্রশংসার সঙ্গে তাঁর আহ্বানে সাড়া দিবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে।’


৫৩


وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমার (মুমিন) বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। ৩৪ নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। ৩৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমার বান্দাদেরকে যা উত্তম তা বলতে বল। নিশ্চয়ই শয়তান এদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয় ; শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।


তাফসীরঃ

৩৪. মুশরিকদের তাচ্ছিল্যভাব ও ব্যঙ্গাত্মক কথা শুনে মুমিনগণ হয়ত কঠোর-কঠিন কথা বলে ফেলত। তাই আদেশ করা হচ্ছে নিজেদের পারস্পরিক কথাবার্তায় তো বটেই, এমন কি বেদীনদের সাথে কথা বলার সময়ও কোমলতা অবলম্বন কর। রূঢ় ও অশালীন ভাষা হতে বেঁচে থেক এবং সর্বাবস্থায় উত্তম ও হৃদয়গ্রাহী কথা বলো। কেননা মনে আঘাত দিয়ে কথা বললে তাদের দ্বারা সত্যগ্রহণ করা দুরূহ হয়ে যাবে। উদ্দেশ্য তো দূরে সরানো নয়; বরং কাছে টানা যাতে তারা সত্যগ্রহণে প্রস্তুত হয়ে যায় আর সেজন্য উত্তম কথাই ফলপ্রসূ। -অনুবাদক


৩৫. অর্থাৎ রাগের অবস্থায় যে রূঢ় কথা বলা হয়, তাতে উপকারের বদলে ক্ষতিই হয়ে থাকে। কেননা শয়তান সেটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। সে এর মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ফলে বন্ধুত্বের মধ্যে ফাটল ধরে এবং প্রতিপক্ষ আরও দূরে সরে যায় ও তার শত্রুতায় মাত্রা যোগ হয়। পরিস্থিতি যাতে এ পর্যন্ত গড়ায় তাই শয়তানই মানুষকে দিয়ে এরূপ কথা বলায়। -অনুবাদক


৫৪


رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِكُمْ ۖ إِن يَشَأْ يَرْحَمْكُمْ أَوْ إِن يَشَأْ يُعَذِّبْكُمْ ۚ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ وَكِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে ভালোভাবেই জানেন। তিনি চাইলে তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং চাইলে তোমাদেরকে শাস্তি দেন। (হে নবী!) আমি তোমাকে তাদের কাজকর্মের যিম্মাদার বানিয়ে পাঠাইনি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন। তিনি যদি চান, তোমাদের প্রতি রহমত করবেন কিংবা যদি চান, তোমাদের আযাব দিবেন। আমি আপনাকে ওদের সবার তত্ত্বাবধায়ক রূপে প্রেরণ করিনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে ভালভাবে জানেন। ইচ্ছা করলে তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে শাস্তি দেন ; আমি তোমাকে এদের অভিভাবক করে পাঠাই নাই।


৫৫


وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِمَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَىٰ بَعْضٍ ۖ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে, তোমার প্রতিপালক তাদেরকে ভালোভাবে জানেন। আমি কতক নবীকে কতক নবীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আর আমি দাঊদকে যাবূর দিয়েছিলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পালনকর্তা তাদের সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞাত আছেন, যারা আকাশসমূহে ও ভুপৃষ্ঠে রয়েছে। আমি তো কতক পয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি এবং দাউদকে যবুর দান করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আছে তাদেরকে তোমার প্রতিপালক ভালভাবে জানেন। আমি তো নবীগণের কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়েছি ; দাঊদকে আমি যাবূর দিয়েছি।


৫৬


قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ মানে, তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে মাবুদ মনে করেছ, তাদেরকে ডাক দিয়ে দেখ। তারা তোমাদের কোন কষ্ট দূর করতে পারবে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহবান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দুর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত যাদেরকে ইলাহ্ মনে কর তাদেরকে আহ্বান কর, করলে দেখবে তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূর করার বা পরিবর্তন করার শক্তি এদের নেই।’


৫৭


أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো এই লক্ষে তাদের প্রতিপালক পর্যন্ত পৌঁছার অছিলা সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হতে পারে এবং তারা তাঁর রহমতের আশা করে ও তাঁর আযাবকে ভয় করে। ৩৬ নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের আযাব এমন, যাকে ভয় করাই উচিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাদেরকে তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা যাদেরকে আহ্বান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে ও তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ।


তাফসীরঃ

৩৬. এর দ্বারা প্রতিমা নয়, বরং সেই সকল ফিরিশতা ও জিনকে বোঝানো হয়েছে, আরব মুশরিকগণ যাদেরকে প্রভুত্বের আসনে বসিয়েছিল। আয়াতের সারমর্ম হল, তারা খোদা হবে কি, তারা নিজেরাই তো আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি এবং তারা সর্বদা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উপায় খোঁজে।


৫৮


وَإِن مِّن قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এমন কোন জনপদ নেই, যাকে আমি কিয়ামতের আগে ধ্বংস করব না অথবা তাকে অন্য কোন কঠিন শাস্তি দেব না। একথা (তাকদীরের) কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। ৩৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এমন কোন জনপদ নেই, যাকে আমি কেয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেব না। এটা তো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এমন কোন জনপদ নেই যা আমি কিয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস করব না বা যাকে কঠোর শাস্তি দিব না ; এটা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।


তাফসীরঃ

৩৭. অর্থাৎ, কাফেরদের উপর এই মুহূর্তে শাস্তি অবতীর্ণ হচ্ছে না বলে তারা যেন মনে না করে চিরদিনের জন্য নিষ্কৃতি পেয়ে গেছে। নিষ্কৃতি তারা পাবে না। হতে পারে এই দুনিয়াতেই তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। আর তা যদি নাও হয়, তবে কিয়ামত যে হবে তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই। তখন সকলেই ধ্বংস হবে। তারপর আখেরাতে তাদেরকে অনন্তকাল শাস্তিভোগ করতে হবে।


৫৯


وَمَا مَنَعَنَا أَن نُّرْسِلَ بِالْآيَاتِ إِلَّا أَن كَذَّبَ بِهَا الْأَوَّلُونَ ۚ وَآتَيْنَا ثَمُودَ النَّاقَةَ مُبْصِرَةً فَظَلَمُوا بِهَا ۚ وَمَا نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلَّا تَخْوِيفًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(কাফেরদের ফরমায়েশী নিদর্শন) পাঠানো হতে আমাকে কেবল এ বিষয়টাই বিরত রেখেছে যে, পূর্ববর্তীগণ এরূপ নিদর্শন (দেখার পরও তা) অস্বীকার করেছিল। ৩৮ আমি ছামুদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম, যা চোখ খোলার জন্য যথেষ্ট ছিল, কিন্তু তারা তার প্রতি জুলুম করেছিল। আমি নিদর্শন পাঠাই ভয় দেখানোরই জন্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করার ফলেই আমাকে নিদর্শনাবলী প্রেরণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। আমি তাদেরকে বোঝাবার জন্যে সামুদকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর তারা তার প্রতি জুলুম করেছিল। আমি ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশেই নিদর্শন প্রেরণ করি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

পূর্ববর্তীগণ কর্তৃক নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন প্রেরণ করা হতে বিরত রাখে। আমি শিক্ষাপ্রদ নিদর্শনস্বরূপ সামূদ জাতিকে উষ্ট্রী দিয়েছিলাম, এরপর তারা এর প্রতি জুলুম করেছিল। আমি কেবল ভীতি প্রদর্শনের জন্যেই নিদর্শন প্রেরণ করি।


তাফসীরঃ

৩৮. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সুস্পষ্ট মুজিযা দেখা সত্ত্বেও মুশরিকগণ তাঁর কাছে নিত্য নতুন মুজিযা দাবী করত। এটা তাদের সেই দাবীর জবাব। বলা হচ্ছে, ফরমায়েশী মুজিযা দেখানোর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার একটা নীতি আছে। নীতিটি হল, এরূপ মুজিযা দেখানোর পরও যদি কাফেরগণ ঈমান না আনে, তবে তাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়। তার একটা দৃষ্টান্ত হল ছামুদ জাতি। তাদের দাবী অনুযায়ী পাহাড় থেকে একটি উটনী বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ঈমান আনেনি। ফলে তারা শাস্তিতে নিপতিত হয়। আল্লাহ তাআলার জানা আছে, ফরমায়েশী মুজিযা দেখানো হলেও মুশরিকগণ ঈমান আনবে না। পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মত তারাও নবীকে বরাবর অস্বীকার করতে থাকবে। ফলে তাদেরকে ধ্বংস করা অনিবার্য হয়ে যাবে। কিন্তু এখনই যেহেতু তাদেরকে ধ্বংস করা আল্লাহ তাআলার হিকমতের অনুকূল নয়, তাই তাদেরকে ফরমায়েশী মুজিযা দেখানো হচ্ছে না।


৬০


وَإِذْ قُلْنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِالنَّاسِ ۚ وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِّلنَّاسِ وَالشَّجَرَةَ الْمَلْعُونَةَ فِي الْقُرْآنِ ۚ وَنُخَوِّفُهُمْ فَمَا يَزِيدُهُمْ إِلَّا طُغْيَانًا كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি বলেছিলাম, তোমার প্রতিপালক (নিজ জ্ঞান দ্বারা) সমস্ত মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। ৩৯ আর আমি তোমাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি, তাকে কাফেরদের জন্য কেবল পরীক্ষার বিষয়ই বানিয়েছি ৪০ এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিকেও। আমি তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছি, কিন্তু তাতে তাদের ঘোর অবাধ্যতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং স্মরণ করুন, আমি আপনাকে বলে দিয়েছিলাম যে, আপনার পালনকর্তা মানুষকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং যে দৃশ্য আমি আপনাকে দেখিয়েছি তাও কোরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমি তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি। কিন্তু এতে তাদের অবাধ্যতাই আরও বৃদ্ধি পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, আমি তোমাকে বলেছিলাম যে, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন। আমি যে দৃশ্য তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে উল্লিখিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিও কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমি এদেরকে ভীতি প্রদর্শন করি, কিন্তু এটা এদের ঘোর অবাধ্যতাই বৃদ্ধি করে।


তাফসীরঃ

৩৯. অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি ভালোভাবেই জানেন এসব হঠকারী লোক কোন অবস্থাতেই ঈমান আনবে না। অতঃপর তাদের হঠকারিতার দু’টি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। (এক) আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিরাজের সফরে যেসব দৃশ্য দেখিয়েছিলেন, তা ছিল তাঁর নবুওয়াতের খোলা দলীল। কাফেরগণ বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে বহু প্রশ্ন তাঁকে করেছিল। তিনি সবগুলোর ঠিক-ঠিক উত্তরও দিয়েছিলেন, যা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তিনি সত্যিই রাতের ভেতর এ সফর করে এসেছেন। কিন্তু এ রকম সাক্ষাত প্রমাণ লাভের পরও তারা ঈমান আনেনি; বরং নিজেদের জিদকেই ধরে রাখে। (দুই) কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, জাহান্নামীদের খাবার হবে ‘যাক্কূম’ গাছ। আরও বলা হয়েছে, এ গাছ জাহান্নামেই জন্মায়। একথা শুনে কাফেরগণ ঈমান আনবে কি উল্টো ঠাট্টা করতে লাগল যে, শোন কথা, আগুনের ভেতর নাকি গাছ জন্মাবে! এটাও কী সম্ভব? তারা চিন্তা করল না যেই সত্তা আগুন সৃষ্টি করেছেন, তিনি যদি সেই আগুনের ভেতর অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের কোন গাছ সৃষ্টি করে দেন, আগুনের তাপ যার জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপযোগী, তাতে আশ্চর্যের কী আছে?


৪০. অর্থাৎ, তারা তা দ্বারা হিদায়াত লাভ করল না; বরং আরও গোমরাহীতে লিপ্ত হল। উপরের টীকায় এটা বিস্তারিত বলা হয়েছে।


৬১


وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ قَالَ أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা কর। তখন তারা সিজদা করল, কিন্তু ইবলীস করল না। সে বলল, আমি কি তাকে সিজদা করব, যাকে আপনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদায় পড়ে গেল। কিন্তু সে বললঃ আমি কি এমন ব্যক্তিকে সেজদা করব, যাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে বলেছিল, ‘আমি কি তাকে সিজ্দা করব যাকে আপনি কর্দম হতে সৃষ্টি করেছেন ?’


৬২


قَالَ أَرَأَيْتَكَ هَـٰذَا الَّذِي كَرَّمْتَ عَلَيَّ لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَهُ إِلَّا قَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সে বলতে লাগল, বলুন তো, এই কি সেই সৃষ্টি, যাকে আপনি আমার উপর মর্যাদা দান করেছেন! আপনি যদি কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দেন, তবে আমি তার বংশধরদের মধ্যে অল্পসংখ্যক ছাড়া বাকি সকলের চোয়ালে লাগাম পরিয়ে দেব। ৪১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সে বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে আপনি আমার চাইতেও উচ্চ মার্যাদা দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত সময় দেন, তবে আমি সামান্য সংখ্যক ছাড়া তার বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে দেব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সে বলেছিল, “আপনি কি বিবেচনা করেছেন, আপনি আমার ওপর এই ব্যক্তিকে মর্যাদা দান করলেন, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তা হলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরকে অবশ্যই কর্তৃত্বাধীন করে ফেলব।”


তাফসীরঃ

৪১. অর্থাৎ, চোয়ালে লাগাম পরিয়ে যেমন ঘোড়া ও অন্যান্য পশুকে নিজ আয়ত্তে রাখা হয়, তেমনি তাদেরকে আমার কর্তৃত্বাধীন করে নেব।


৬৩


قَالَ اذْهَبْ فَمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ فَإِنَّ جَهَنَّمَ جَزَاؤُكُمْ جَزَاءً مَّوْفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ বললেন, যাও, তাদের মধ্যে যে-কেউ তোমার অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তোমাদের সকলের শাস্তিপরিপূর্ণ শাস্তি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ বলেনঃ চলে যা, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপুর শাস্তি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ বললেন, ‘যাও, তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, তবে জাহান্নামই তোমাদের সকলের শাস্তি, পূর্ণ শাস্তি।


৬৪


وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُم بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِم بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ وَعِدْهُمْ ۚ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাদের মধ্যে যার উপর তোমার ক্ষমতা চলে নিজ ডাক দ্বারা বিভ্রান্ত কর, ৪২ তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা তাদের উপর চড়াও হও, ৪৩ তাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হয়ে যাও ৪৪ এবং তাদেরকে যত পার প্রতিশ্রুতি দাও। বস্তুত শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়ায দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোন প্রতিশ্রুতি দেয় না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘তোমার আহ্বানে এদের মধ্যে যাকে পার পদস্খলিত কর, তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দিয়ে এদেরকে আক্রমণ কর এবং এদের ধনে ও সন্তান-সন্ততিতে শরীক হয়ে যাও ও এদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও। শয়তান এদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনা মাত্র।


তাফসীরঃ

৪২. ‘ডাক দ্বারা বিভ্রান্ত করা’-এর অর্থ অন্তরে পাপকর্মের প্ররোচনা দেওয়া হয়, যেমন কোন কোন মুফাসসিরের মত। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা গান-বাদ্যের শব্দ বোঝানো হয়েছে, যার আছরে মানুষ পাপকর্মে লিপ্ত হয়।


৪৩. শয়তানকে শত্রুর সেনাবাহিনীর সাথে তুলনা করা হয়েছে। কেননা সেনাবাহিনীতে যেমন আরোহী, পদাতিক বিভিন্ন বিভাগ থাকে, তেমনি শয়তানের সেনাদলেও বিভিন্ন বিভাগ আছে। কোনও ভাগে দুষ্ট জিন কর্মরত এবং কোনও ভাগে দুষ্টু মানুষ। তারা সম্মিলিতভাবে মানব জাতিকে বিপথগামী করার কাজে শয়তানের সহযোগিতা করে।


৪৪. ইশারা করা হয়েছে, কেউ যদি অবৈধ পন্থায় অর্থ-সম্পদের মালিক হয় বা নাজায়েজ পথে সন্তান-সন্ততি লাভ করে কিংবা শরীয়ত বিরোধী কাজে এসব ব্যবহার করে তবে সেটা নিজ সন্তান ও সম্পদের ভেতর শয়তানকে অংশীদার বানানোর নামান্তর হয়।


৬৫


إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ ۚ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ وَكِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আমার যারা বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা চলবে না। ৪৫ (তাদের) রক্ষকরূপে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমার বান্দাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই আপনার পালনকর্তা যথেষ্ট কার্যনির্বাহী।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই ‘আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই।’ কর্মবিধায়ক হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।


তাফসীরঃ

৪৫. ‘আমার বান্দা’ বলে সেই সকল মুখলিস ও নিষ্ঠাবান বান্দাদের বোঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করতে সচেষ্ট থাকে।


৬৬


رَّبُّكُمُ الَّذِي يُزْجِي لَكُمُ الْفُلْكَ فِي الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই তোমাদের প্রতিপালক, যিনি সাগরে তোমাদের জন্য নৌযান চালান, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ সন্ধান কর। তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমাদের পালনকর্তা তিনিই, যিনি তোমাদের জন্যে সমুদ্রে জলযান চালনা করেন, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষন করতে পারো। নিঃ সন্দেহে তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালূ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি তোমাদের জন্যে সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। তিনি তো তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।


৬৭


وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلَّا إِيَّاهُ ۖ فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ ۚ وَكَانَ الْإِنسَانُ كَفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সাগরে যখন তোমাদের কোন বিপদ দেখা দেয়, তখন তোমরা যাদেরকে (অর্থাৎ যেই দেবতাদেরকে) ডাক তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়, সঙ্গে থাকেন কেবল আল্লাহ। তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে পৌঁছিয়ে দেন, অমনি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ ঘোর অকৃতজ্ঞ।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যখন সমুদ্রে তোমাদের উপর বিপদ আসে, তখন শুধু আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা আহবান করে থাক তাদেরকে তোমরা বিস্মৃত হয়ে যাও। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে স্থলে ভিড়িয়ে উদ্ধার করে নেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে তোমরা আহ্বান করে থাক তারা অন্তর্হিত হয়ে যায় ; এরপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ।


৬৮


أَفَأَمِنتُمْ أَن يَخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ أَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوا لَكُمْ وَكِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তবে কি তোমরা এর থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আল্লাহ স্থলেরই কোথাও তোমাদেরকে ধসিয়ে দিতে পারেন অথবা তোমাদের প্রতি পাথরবর্ষী ঝড় পাঠাতে পারেন, তখন আর তোমরা নিজেদের কোন রক্ষাকর্তা পাবে না? ৪৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে কোথাও ভূগর্ভস্থ করবেন না। অথবা তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী ঘুর্ণিঝড় প্রেরণ করবেন না, তখন তোমরা নিজেদের জন্যে কোন কর্মবিধায়ক পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা কি নির্ভয় হয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোন অঞ্চল ধসিয়ে দিবেন না বা তোমাদের ওপর শিলা বর্ষণকারী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না ? তখন তোমরা তোমাদের কোন কর্মবিধায়ক পাবে না।


তাফসীরঃ

৪৬. অর্থাৎ হে মানুষ! আল্লাহ তাআলার দয়ায় সাগরের গ্রাস থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার পর ভাবছ নাকি চিরতরে নিরাপদ হয়ে গেলে, যদ্দরুন আবার নাশোকর ও নাফরমানিতে লিপ্ত হচ্ছ? এমন কি হতে পারে না যে, তিনি স্থলেই তোমাদেরকে ধসিয়ে দেবেন, ফলে ভূগর্ভে চিরতরে হারিয়ে যাবে? তোমরা সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার মুঠোর মধ্যে রয়েছ, চাইলে তিনি ভূমিকম্প, ভূমিধস, অগ্নিবর্ষণ, পাথরবর্ষণ ইত্যাদি যে কোন শাস্তি দিয়ে তোমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলতে পারেন, যা থেকে তোমাদেরকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। -অনুবাদক


৬৯


أَمْ أَمِنتُمْ أَن يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَىٰ فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيحِ فَيُغْرِقَكُم بِمَا كَفَرْتُمْ ۙ ثُمَّ لَا تَجِدُوا لَكُمْ عَلَيْنَا بِهِ تَبِيعًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

না কি তোমরা এর থেকেও নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, তিনি তোমাদেরকে আবার তাতেই (অর্থাৎ সাগরে) নিয়ে যেতে পারেন, তারপর তোমাদের প্রতি প্রবল ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠিয়ে অকৃতজ্ঞতার শাস্তি-স্বরূপ তোমাদেরকে ডুবিয়ে দেবেন, যখন তোমরা এমন কাউকে পাবে না, যে এ ব্যাপারে আমার পিছনে লাগতে পারে। ৪৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে, তিনি তোমাদেরকে আরেকবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না, অতঃপর তোমাদের জন্যে মহা ঝটিকা প্রেরণ করবেন না, অতঃপর অকৃতজ্ঞতার শাস্তিস্বরূপ তোমাদেরকে নিমজ্জত করবেন না, তখন তোমরা আমার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে সাহায্যকারী কাউকে পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অথবা তোমরা কি নির্ভয় হয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে আর একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ঝটিকা পাঠাইবেন না এবং তোমাদের কুফরী করার জন্যে তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না ? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী পাবে না।


তাফসীরঃ

৪৭. অর্থাৎ, আমি তাদেরকে কেন ধ্বংস করেছি এ বিষয়ে যেমন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা কারও নেই, তেমনি আমার ফায়সালা টলানোর জন্যও আমার পিছনে লাগার সাধ্য কেউ রাখে না।


৭০


۞ وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বাস্তবিকপক্ষে আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং স্থলে ও জলে তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করেছি, তাদেরকে উত্তম রিযক দান করেছি এবং আমার বহু মাখলুকের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। ৪৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তো আদমসন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে এদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; এদেরকে উত্তম রিযিক দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর এদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।


তাফসীরঃ

৪৮. পূর্বে মানুষ সম্পর্কে শয়তানের তাচ্ছিল্যবাক্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘একেই আপনি আমার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’? তারপর মানুষের অকৃতজ্ঞতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এবার জানানা হচ্ছে যে, বাস্তবিকই মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টির উপর বহুমুখী শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। এর দাবি হল, সে আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতায় লিপ্ত থাকবে। কেননা, তাকে শ্রেষ্ঠত্ব তো এমনিই দেওয়া হয় নি। এর দ্বারা পরীক্ষা নেওয়া উদ্দেশ্য যে, সে আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে তাঁর অনুগত হয়ে চলে, না অকৃতজ্ঞতা করে তার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। যে কর্মপন্থাই অবলম্বন করুন না কেন, তার পুরোপুরি হিসাব তার থেকে নেওয়া হবে, যেমন পরের আয়াতে জানানো হয়েছে। -অনুবাদক


৭১


يَوْمَ نَدْعُو كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِمْ ۖ فَمَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَأُولَـٰئِكَ يَقْرَءُونَ كِتَابَهُمْ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

সেই দিনকে স্মরণ কর, যখন আমি সমস্ত মানুষকে তাদের আমলনামাসহ ডাকব। তারপর যাদেরকে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে ডান হাতে, তারা তাদের আমলনামা পড়বে এবং তাদের প্রতি সুতা পরিমাণও জুলুম করা হবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

স্মরণ কর, যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব, অতঃপর যাদেরকে তাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম হবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

স্মরণ কর, সেই দিনকে যখন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে এদের নেতাসহ আহবান করব। যাদের দক্ষিণ হস্তে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের ওপর সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না।


৭২


وَمَن كَانَ فِي هَـٰذِهِ أَعْمَىٰ فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখেরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে। ৪৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রান্ত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর যে ব্যক্তি এইখানে অন্ধ সে আখিরাতেও অন্ধ এবং অধিকতর পথভ্রষ্ট।


তাফসীরঃ

৪৯. এখানে অন্ধ হয়ে থাকার অর্থ দুনিয়ায় সত্য না দেখা ও সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে রাখা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে আখেরাতেও সে মুক্তির পথ দেখতে পাবে না।


৭৩


وَإِن كَادُوا لَيَفْتِنُونَكَ عَنِ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهُ ۖ وَإِذًا لَّاتَّخَذُوكَ خَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি, কাফেরগণ তোমাকে তা থেকে বিচ্যুত করার উপক্রম করছিল, যাতে তুমি এর পরিবর্তে অন্য কোন কথা রচনা করে আমার নামে পেশ কর। সেক্ষেত্রে তারা তোমাকে অবশ্যই নিজেদের পরম বন্ধু বানিয়ে নিত। ৫০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা তো আপনাকে হটিয়ে দিতে চাচ্ছিল যে বিষয় আমি আপনার প্রতি ওহীর মাধ্যমে যা প্রেরণ করেছি তা থেকে আপনার পদঙ্খলন ঘটানোর জন্যে তারা চুড়ান্ত চেষ্টা করেছে, যাতে আপনি আমার প্রতি কিছু মিথ্যা সম্বন্ধযুক্ত করেন। এতে সফল হলে তারা আপনাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে নিত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে এরা পদস্খলন ঘটাইবার চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে এর বিপরীত মিথ্যা উদ্ভাবন কর; তবেই এরা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।


তাফসীরঃ

৫০. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর দাওয়াত থেকে ফেরানোর জন্য মুশরিকরা বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, যেমন তাঁর কাছে তাদের একটা প্রস্তাব ছিল, আপনি যদি আমাদের দেব-দেবীদের নিন্দা করা ছেড়ে দেন তবে আমরা আপনার মাবুদের ইবাদত করব, আরেক প্রস্তাব ছিল আপনি কুরআন থেকে প্রতিমাদের নিন্দামূলক অংশটুকু বদলে দিন, আরও বলেছিল, আপনি গরীব মুসলিমদের বাদ দিয়ে আমাদের জন্য যদি খাস মজলিস করেন, তবে আমরা তাতে যোগ দেব, এমনি আরও বিভিন্ন প্রস্তাব। আল্লাহ তাআলা বলছেন, হে নবী! আপনি আমার হেফাজত ও তত্ত্বাবধানে আছেন, নয়ত আপনি তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে আমার প্রেরিত ওহী থেকে সরেই যেতেন। এভাবে এ আয়াতে সত্যের উপর অবিচলিত রাখার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ মেহেরবানীর কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। এভাবে মানুষকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, কুরআন ও দীনের হিফাজতের কাজে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিন্দুমাত্র শিথিলতা প্রদর্শন করেননি এবং ওহী ও সত্য থেকে একচুল বিচ্যুত হননি। আর আল্লাহ তাআলার হিফাজতের কারণে তাঁর দ্বারা তা হওয়া সম্ভবও ছিল না। ليفتنونك (অর্থ তারা আপনাকে ফিতনায় ফেলত)-এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য, ছলনা দিয়ে ওহীর হুকুম থেকে বিচ্যুত করা। -অনুবাদক


৭৪


وَلَوْلَا أَن ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি যদি তোমাকে অবিচলিত না রাখতাম, তবে তুমিও তাদের দিকে খানিকটা ঝুঁকে পড়ার উপক্রম করতে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনাকে দৃঢ়পদ না রাখলে আপনি তাদের প্রতি কিছুটা ঝুঁকেই পড়তেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমাকে অবিচলিত না রাখলে তুমি এদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পড়তে;


৭৫


إِذًا لَّأَذَقْنَاكَ ضِعْفَ الْحَيَاةِ وَضِعْفَ الْمَمَاتِ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ عَلَيْنَا نَصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আর তা হলে আমি দুনিয়ায়ও তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তি দিতাম এবং মৃত্যুর পরও দ্বিগুণ। অতঃপর আমার বিরুদ্ধে তুমি কোন সাহায্যকারী পেতে না। ৫১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তখন আমি অবশ্যই আপনাকে ইহজীবনে ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তির আস্বাদন করাতাম। এ সময় আপনি আমার মোকাবিলায় কোন সাহায্যকারী পেতেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তা হলে অবশ্যই তোমাকে ইহজীবনে দ্বিগুণ ও পরজীবনে দ্বিগুণ শাস্তি আস্বাদন করাতাম; তখন আমার বিরুদ্ধে তোমার জন্যে কোন সাহায্যকারী পেতে না।


তাফসীরঃ

৫১. আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে মাছুম বানিয়েছিলেন। আর সে কারণে তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্থির ও অবিচল থাকেন। তিনি কাফেরদের কোন কথা শুনবেন বা সেইমত কাজ করবেন এর তো দূর-দূরান্তেরও কোন সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও নাফরমানী করলে আল্লাহ তাআলা তাঁকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবেন বলে শাসিয়ে দিয়েছেন। আসলে তাঁর ক্ষেত্রে এটা কেবলই ধরে নেওয়ার পর্যায়ভুক্ত। মূল উদ্দেশ্য উম্মতকে সতর্ক করা। বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের একমাত্র ভিত্তি সৎকর্ম। এটা সকলের জন্যই সাধারণ নিয়ম। সুতরাং কোন ব্যক্তি সে আল্লাহ তাআলার যতই নৈকট্যপ্রাপ্ত হোক, যদি নাফরমানী করে বসে, তবে সে শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাবে, বরং নৈকট্যপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার শাস্তি হবে দ্বিগুণ।


৭৬


وَإِن كَادُوا لَيَسْتَفِزُّونَكَ مِنَ الْأَرْضِ لِيُخْرِجُوكَ مِنْهَا ۖ وَإِذًا لَّا يَلْبَثُونَ خِلَافَكَ إِلَّا قَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তাছাড়া তারা এই ভূমি (মক্কা) থেকে তোমাদেরকে উচ্ছেদ করার ফিকিরে আছে, যাতে তোমাদেরকে এখান থেকে বের করে দিতে পারে। আর সে রকম হলে তোমার পর তারাও এখানে বেশি দিন থাকতে পারবে না। ৫২


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা তো আপনাকে এ ভুখন্ড থেকে উৎখাত করে দিতে চুড়ান্ত চেষ্টা করেছিল যাতে আপনাকে এখান থেকে বহিস্কার করে দেয়া যায়। তখন তারাও আপনার পর সেখানে অল্প কালই মাত্র টিকে থাকত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল তোমাকে সেথা হতে বহিষ্কার করার জন্যে; তা হলে তোমার পর এরাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকত।


তাফসীরঃ

৫২. অর্থাৎ, মক্কা মুকাররমা থেকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে চলে যাওয়ার পর কাফেরগণও এখানে বেশি কাল থাকতে পারবে না। সুতরাং বাস্তবে তাই হয়েছিল। হিজরতের আট বছর পর মক্কা মুকাররমায় ইসলামের বিজয় অর্জিত হয় এবং নবম বছর সমস্ত কাফেরকে এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার হুকুম দেওয়া হয়। সূরা তাওবার শুরুতে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।


৭৭


سُنَّةَ مَن قَدْ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِن رُّسُلِنَا ۖ وَلَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحْوِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটা আমার নিয়ম, যা আমি তোমার পূর্বে আমার যে রাসূলগণকে পাঠিয়েছিলাম, তাদের ক্ষেত্রে অবলম্বন করেছিলাম। তুমি আমার নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনার পূর্বে আমি যত রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি আমার নিয়মের কোন ব্যতিক্রম পাবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমার রাসূলগণের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন পাবে না।


৭৮


أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম কর ৫৩ এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠে যত্নবান থাক। স্মরণ রেখ, ফজরের তিলাওয়াতে ঘটে থাকে সমাবেশ। ৫৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠও। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

সূর্য হেলে পড়বার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে এবং কায়েম করবে ফজরের সালাত। নিশ্চয়ই ফজরের সালাত উপস্থিতির সময়।


তাফসীরঃ

৫৩. সূর্য হেলার পর থেকে রাতের অন্ধকার হওয়া পর্যন্ত নামায কায়েম দ্বারা জোহর, আসর মাগরিব ও ইশা-এই চার নামাযের প্রতি ইশারা করা হয়েছে। ফজরের নামাযকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ, ফজরের নামায আদায়ের জন্য মানুষকে ঘুম থেকে জাগতে হয়। ফলে অন্য নামায অপেক্ষা এ নামাযে কষ্ট বেশি হয়। তাই আলাদাভাবে উল্লেখ করে এ নামাযের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


৫৪. মুফাসসিরগণ এর দু’ রকম ব্যাখ্যা করেছেন। (এক) অধিকাংশ মুফাসসির বলেন, ফজরের নামাযে যে তিলাওয়াত করা হয়, তাতে ফিরিশতাদের দল উপস্থিত থাকে। বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায়, মানুষের তত্ত্বাবধানের কাজে যে সকল ফিরিশতা নিয়োজিত আছে, তারা নিজেদের দায়িত্ব পালাক্রমে আঞ্জাম দিয়ে থাকে। একদল আসে ফজরের সময়। তারা দিনের বেলা দায়িত্ব পালন করে। আরেক দল আসে আসরের সময়। তারা রাতের বেলা দায়িত্ব পালন করে। প্রথম দল ফজরের নামাযে এসে শরীক হয় এবং কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত শোনে। আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে। (দুই) একদল মুফাসসির বলেন, এর দ্বারা মুসল্লীদের উপস্থিতি বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, ফজরের নামাযে মানুষ যেহেতু ঘুম থেকে উঠে শরীক হয়, তাই তারা যাতে ঠিকভাবে নামায ধরতে পারে, সে লক্ষ্যে নামাযে তিলাওয়াত দীর্ঘ করা বাঞ্ছনীয়।


৭৯


وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। ৫৫ আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদ’-এ পৌঁছাবেন। ৫৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, এটা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে।


তাফসীরঃ

৫৫. ‘অতিরিক্ত ইবাদত’ দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে দু’টি মত আছে। (ক) কতক মুফাসসির বলেন, এ নামায অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য একটি অতিরিক্ত ফরয ছিল। সাধারণ মুসলিমদের প্রতি এটা ফরয করা হয়নি। (খ) কারও মতে অতিরিক্ত হওয়ার অর্থ নফল হওয়া। অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ একটি নফল ইবাদত, যেমন আম মুসলিমদের জন্য, তেমনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যও।


৫৬. ‘মাকামে মাহমুদ’-এর শাব্দিক অর্থ ‘প্রশংসনীয় স্থান’। হাদীস দ্বারা জানা যায়, ‘মাকামে মাহমুদ’ হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বিশেষ পদমর্যাদা। এ মর্যাদার কারণে তাকে শাফায়াত করার অধিকার দেওয়া হবে।


৮০


وَقُل رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং দু‘আ কর ‘হে প্রতিপালক! আমাকে যেখানে প্রবেশ করাবে, কল্যাণের সাথে প্রবেশ করিও এবং যেখান থেকে বের করবে কল্যাণের সাথে বের করো এবং আমাকে তোমার নিকট থেকে বিশেষভাবে এমন ক্ষমতা দান করো, যার সাথে (তোমার) সাহায্য থাকবে। ৫৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ হে পালনকর্তা! আমাকে দাখিল করুন সত্যরূপে এবং আমাকে বের করুন সত্যরূপে এবং দান করুন আমাকে নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় সাহায্য।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করাও কল্যাণের সঙ্গে এবং আমাকে নিষ্ক্রান্ত করাও কল্যাণের সঙ্গে এবং তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর সাহায্যকারী শক্তি।’


তাফসীরঃ

৫৭. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় নিজ ঠিকানা বানানোর হুকুম দেওয়া হয়, সেই পটভূমিতেই এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। তখনই তাকে এরূপ দু‘আ করতে বলা হয়েছিল। এতে প্রবেশ করানো বলতে মদীনা মুনাওয়ারায় প্রবেশ করানো এবং বের করা বলতে মক্কা মুকাররমা থেকে বের করা বোঝানো হয়েছে। তবে শব্দমালা সাধারণ। কাজেই যখন কেউ কোন নতুন জায়গায় যাওয়ার বা নতুন কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, তখনও সে এ দু‘আ পড়তে পারে।


৮১


وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং বল, সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয়ই মিথ্যা এমন জিনিস, যা বিলুপ্ত হওয়ারই। ৫৮


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং বল, ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে;’ মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই।


তাফসীরঃ

৫৮. এ আয়াতে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, সত্য তথা ইসলাম ও মুসলিমদের বিজয় অর্জিত হবে। সুতরাং যখন মক্কা বিজয় হয় এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কাবায় ঢুকে তাতে স্থাপিত মূর্তিসমূহ অপসারণ করেন, তখন তাঁর পবিত্র মুখে এ আয়াতই উচ্চারিত হচ্ছিল।


৮২


وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি নাযিল করছি এমন কুরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শেফা ও রহমত। তবে জালেমদের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি হয় না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা মু’মিনদের জন্যে আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু তা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।


৮৩


وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَىٰ بِجَانِبِهِ ۖ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَئُوسًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মানুষকে যখন কোন নি‘আমত দেই, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোন অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তবে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি মানুষকে নেয়ামত দান করলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দুরে সরে যায়; যখন তাকে কোন অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি যখন মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও দূরে সরে যায় এবং তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করলে সে একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে।


৮৪


قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَىٰ شَاكِلَتِهِ فَرَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ أَهْدَىٰ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, প্রত্যেকে নিজ-নিজ পন্থায় কাজ করছে, কে বেশি সঠিক পথে তা তোমার প্রতিপালকই ভালো জানেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ প্রত্যেকেই নিজ রীতি অনুযায়ী কাজ করে। অতঃপর আপনার পালনকর্তা বিশেষ রূপে জানেন, কে সর্বাপেক্ষা নির্ভূল পথে আছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে এবং তোমার প্রতিপালক সম্যক অবগত আছেন চলার পথে কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল।’


৮৫


وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ ۖ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي وَمَا أُوتِيتُم مِّنَ الْعِلْمِ إِلَّا قَلِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী!) তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, রূহ আমার প্রতিপালকের হুকুমঘটিত। তোমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে সামান্যমাত্র। ৫৯


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমাকে এরা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘রূহ্ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে সামান্যই।’


তাফসীরঃ

৫৯. সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, কতিপয় ইয়াহুদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরীক্ষা করার অভিপ্রায়ে প্রশ্নে করেছিল, রূহ কি জিনিস? তারই উত্তরে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। উত্তরে কেবল ততটুকু কথাই বলা হয়েছে, যতটুকু মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব। অর্থাৎ, কেবল এতটুকু কথা যে, ‘রূহ সরাসরি আল্লাহ তাআলার আদেশ দ্বারা সৃষ্ট। মানুষের দেহ ও অন্যান্য মাখলুকের ক্ষেত্রে তো লক্ষ্য করা যায়, তাদের সৃষ্টিতে বাহ্যিক আসবাব-উপকরণের কিছু ভূমিকা আছে। যেমন নর-নারীর মিলনে বাচ্চা জন্ম নেয়। কিন্তু রূহের বিষয়টা এ রকম নয়। তার সৃষ্টিতে এ রকম কোন কিছুর ভূমিকা মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। এটা সরাসরি আল্লাহ তাআলার হুকুমে অস্তিত্ব লাভ করে। রূহ সম্পর্কে এর বেশি বোঝা মানব বুদ্ধির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বলা হয়েছে, তোমাদেরকে অতি সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেক কিছুই তোমাদের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। অনেক জিনিসই তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির অতীত।


৮৬


وَلَئِن شِئْنَا لَنَذْهَبَنَّ بِالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ ثُمَّ لَا تَجِدُ لَكَ بِهِ عَلَيْنَا وَكِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি ইচ্ছা করলে তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি, তা সবই প্রত্যাহার করতে পারতাম, তারপর তুমি তা ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারীও পেতে না।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি ইচ্ছা করলে আপনার কাছে ওহীর মাধমে যা প্রেরণ করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম। অতঃপর আপনি নিজের জন্যে তা আনয়নের ব্যাপারে আমার মোকাবিলায় কোন দায়িত্ব বহনকারী পাবেন না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইচ্ছা করলে আমি তোমার প্রতি যা ওহী করেছি তা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে পারতাম; তা হলে এই বিষয়ে তুমি আমার বিরুদ্ধে কোন কর্মবিধায়ক পেতে না।


৮৭


إِلَّا رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّ فَضْلَهُ كَانَ عَلَيْكَ كَبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

কিন্তু তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে এটা এক রহমত (যে, ওহীর ধারা চালু আছে)। বস্তুত তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সুবিপুল।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এ প্রত্যাহার না করা আপনার পালনকর্তার মেহেরবানী। নিশ্চয় আপনার প্রতি তাঁর করুণা বিরাট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা প্রত্যাহার না করা তোমার প্রতিপালকের দয়া; তোমার প্রতি আছে তাঁর মহাঅনুগ্রহ।


৮৮


قُل لَّئِنِ اجْتَمَعَتِ الْإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَىٰ أَن يَأْتُوا بِمِثْلِ هَـٰذَا الْقُرْآنِ لَا يَأْتُونَ بِمِثْلِهِ وَلَوْ كَانَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ ظَهِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, এই কুরআনের মত বাণী তৈরি করে আনার জন্য যদি সমস্ত মানুষ ও জিন একত্র হয়ে যায়, তবুও তারা এ রকম কিছু আনতে পারবে না, তাতে তারা একে অন্যের যতই সাহায্য করুক।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ যদি মানব ও জ্বিন এই কোরআনের অনুরূপ রচনা করে আনয়নের জন্যে জড়ো হয়, এবং তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা কখনও এর অনুরূপ রচনা করে আনতে পারবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্যে মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এটার অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না।


৮৯


وَلَقَدْ صَرَّفْنَا لِلنَّاسِ فِي هَـٰذَا الْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ فَأَبَىٰ أَكْثَرُ النَّاسِ إِلَّا كُفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মানুষের কল্যাণার্থে এ কুরআনে সর্বপ্রকার শিক্ষণীয় বিষয় নানাভাবে বর্ণনা করেছি, তা সত্ত্বেও অধিকাংশ লোক অস্বীকৃতি ছাড়া অন্য কিছুতে রাজি নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি এই কোরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপকার দ্বারা সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু অধিকাংশ লোক অস্বীকার না করে থাকেনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘আর অবশ্যই আমি মানুষের জন্যে এই কুরআনে বিভিন্ন উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফ্রী করা ব্যতীত ক্ষান্ত হল না।’


৯০


وَقَالُوا لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الْأَرْضِ يَنبُوعًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা বলে, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি ভূমি থেকে আমাদের জন্য এক প্রস্রবণ বের করে দেবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং তারা বলেঃ আমরা কখনও আপনাকে বিশ্বাস করব না, যে পর্যন্ত না আপনি ভূপৃষ্ঠ থেকে আমাদের জন্যে একটি ঝরণা প্রবাহিত করে দিন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং এরা বলে, ‘আমরা কখনই তোমাতে ঈমান আনব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্যে ভ‚মি হতে এক প্রস্রবণ উৎসারিত করবে,


৯১


أَوْ تَكُونَ لَكَ جَنَّةٌ مِّن نَّخِيلٍ وَعِنَبٍ فَتُفَجِّرَ الْأَنْهَارَ خِلَالَهَا تَفْجِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তোমার জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের একটি বাগান হয়ে যাবে এবং তুমি তার ফাঁকে-ফাঁকে মাটি ফেড়ে নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা আপনার জন্যে খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান হবে, অতঃপর আপনি তার মধ্যে নির্ঝরিনীসমূহ প্রবাহিত করে দেবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অথবা তোমার খেজুরের ও আংগুরের এক বাগান হবে যার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করে দিবে নদী-নালা।


৯২


أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِيَ بِاللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ قَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তুমি যেমন দাবী করে থাক, আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের উপর ফেলে দেবে কিংবা আল্লাহ ও ফিরিশতাগণকে আমাদের সামনা-সামনি নিয়ে আসবে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা আপনি যেমন বলে থাকেন, তেমনিভাবে আমাদের উপর আসমানকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে দেবেন অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অথবা তুমি যেমন বলে থাক, তদনুযায়ী আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের ওপর ফেলিবে, বা আল্লাহ্ ও ফেরেশতাগণকে আমাদের সামনে উপস্থিত করবে,


৯৩


أَوْ يَكُونَ لَكَ بَيْتٌ مِّن زُخْرُفٍ أَوْ تَرْقَىٰ فِي السَّمَاءِ وَلَن نُّؤْمِنَ لِرُقِيِّكَ حَتَّىٰ تُنَزِّلَ عَلَيْنَا كِتَابًا نَّقْرَؤُهُ ۗ قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إِلَّا بَشَرًا رَّسُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

অথবা তোমার জন্য একটি সোনার ঘর হয়ে যাবে অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু আমরা তোমার আকাশে আরোহণকেও ততক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি এমন এক কিতাব অবতীর্ণ করবে, যা আমরা পড়তে পারব। (হে নবী!) বলে দাও, আমার প্রতিপালক পবিত্র। আমি তো একজন মানুষ মাত্র, যাকে রাসূল করে পাঠানো হয়েছে। ৬০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অথবা আপনার কোন সোনার তৈরী গৃহ হবে অথবা আপনি আকাশে আরোহণ করবেন এবং আমরা আপনার আকাশে আরোহণকে কখনও বিশ্বাস করবনা, যে পর্যন্ত না আপনি অবতীর্ণ করেন আমাদের প্রতি এক গ্রন্থ, যা আমরা পাঠ করব। বলুনঃ পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, একজন মানব, একজন রসূল বৈ আমি কে?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘অথবা তোমার একটি স্বর্ণ নির্মিত গৃহ হবে, বা তুমি আকাশে আরোহণ করবে, কিন্তু তোমার আকাশ আরোহণে আমরা কখনও ঈমান আনব না যতক্ষণ তুমি আমাদের প্রতি এক কিতাব অবতীর্ণ না করবে যা আমরা পাঠ করব।’ বল, ‘পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো হচ্ছি কেবল একজন মানুষ, একজন রাসূল।’


তাফসীরঃ

৬০. ৮৯ থেকে ৯২ পর্যন্ত আয়াতসমূহে মক্কার মুশরিকদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া বর্ণিত হয়েছে। তাদের এসব দাবী ছিল কেবলই জেদপ্রসূত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন মুজিযা তাদের সামনে প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাঁর কাছে নিত্য-নতুন মুজিযার ফরমায়েশ করত। আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাদের সমস্ত ফরমায়েশের জবাবে সংক্ষেপে জানিয়ে দিতে বলেছেন যে, আমি খোদা নই যে, এসব কাজে আমার এখতিয়ার থাকবে। আমি তো কেবলই একজন মানুষ। তবে আল্লাহ তাআলা আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন এবং সে কারণে তিনি নিজ হিকমত অনুযায়ী আমাকে কিছু মুজিযা দান করেছেন। আমি নিজ ক্ষমতাবলে সেসব মুজিযার বাইরে কোন মুজিযা দেখাতে পারি না।


৯৪


وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُؤْمِنُوا إِذْ جَاءَهُمُ الْهُدَىٰ إِلَّا أَن قَالُوا أَبَعَثَ اللَّهُ بَشَرًا رَّسُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

যখন তাদের কাছে হিদায়াতের বার্তা আসল তখন তাদেরকে কেবল এ বিষয়টাই ঈমান আনতে বাধা দিয়েছিল যে, তারা বলত, আল্লাহ কি একজন মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট আসে হেদায়েত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন এদের নিকট আসে পথনির্দেশ তখন লোকদেরকে ঈমান আনা হতে বিরত রাখে এদের এই উক্তি, ‘আল্লাহ্ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন ?’


৯৫


قُل لَّوْ كَانَ فِي الْأَرْضِ مَلَائِكَةٌ يَمْشُونَ مُطْمَئِنِّينَ لَنَزَّلْنَا عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاءِ مَلَكًا رَّسُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, পৃথিবীতে যদি ফিরিশতাগণ নিশ্চিন্তে বিচরণ করত, তবে আমি নিশ্চয়ই কোন ফিরিশতাকে তাদের কাছে রাসূল করে পাঠাতাম। ৬১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকেই তাদের নিকট পয়গাম্বর করে প্রেরণ করতাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘ফেরেশতাগণ যদি নিশ্চিন্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করত তবে আমি আকাশ হতে এদের নিকট অবশ্যই ফেরেশতা রাসূল করে পাঠাতাম।’


তাফসীরঃ

৬১. অর্থাৎ, নবীর জন্য এটা জরুরী যে, যাদের কাছে তাকে পাঠানো হবে তিনি তাদের সমজাতীয় হবেন, যাতে তিনি তাদের স্বভাবগত চাহিদা বুঝতে পারেন, তাদের মনস্তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী তাদের পথ প্রদর্শন করতে পারেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তো নবী করে পাঠানো হয়েছে মানব জাতির কাছে। তাই তাঁর মানুষ হওয়াটা আপত্তির বিষয় হতে পারে না; বরং এটাই সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত। হাঁ, দুনিয়ায় যদি ফিরিশতা বসবাস করত, তবে নিঃসন্দেহে তাদের কাছে একজন ফিরিশতাকেই রাসূল করে পাঠানো হত।


৯৬


قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ بِعِبَادِهِ خَبِيرًا بَصِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বল, আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হওয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নিশ্চয়ই তিনি নিজ বান্দাদের সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে অবগত, তিনি সবকিছু দেখছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আমার ও তোমাদের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তো স্বীয় বান্দাদের বিষয়ে খবর রাখেন ও দেখেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট; তিনি তো তাঁর বান্দাদেরকে সবিশেষ জানেন ও দেখেন।’


৯৭


وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَلَن تَجِدَ لَهُمْ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِهِ ۖ وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَىٰ وُجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا ۖ مَّأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ যাকে হিদায়াত দান করেন সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। আর যাকে তিনি বিপথগামী করেন, তার জন্য তুমি কিছুতেই তাকে ছাড়া অন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না। কিয়ামতের দিন তাদেরকে অন্ধ, বোবা ও বধিররূপে মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় সমবেত করব। তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যখনই তার আগুন স্তিমিত হতে শুরু করবে অমনি আমি তা আরও বেশি উত্তপ্ত করে দেব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত এবং যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাদের জন্যে আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী পাবেন না। আমি কেয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মুক অবস্থায় এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্যে অগ্নি আরও বৃদ্ধি করে দিব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ যাদেরকে পথনির্দেশ করেন তারা তো পথপ্রাপ্ত এবং যাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কাউকেও এদের অভিভাবক পাবে না। কিয়ামতের দিন আমি এদেরকে সমবেত করব এদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মূক ও বধির করে। এদের আবাসস্থল জাহান্নাম; যখনই তা স্তিমিত হবে আমি তখনই এদের জন্যে অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দিব।


৯৮


ذَٰلِكَ جَزَاؤُهُم بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا وَقَالُوا أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ خَلْقًا جَدِيدًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এটাই তাদের শাস্তি। কেননা তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, আমরা যখন (মরে) অস্থিতে পরিণত হব ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাব, তারপরও আমাদেরকে নতুনভাবে জীবিত করে ওঠানো হবে?


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটাই তাদের শাস্তি। কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে এবং বলেছেঃ আমরা যখন অস্থিতে পরিণত ও চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাব, তখনও কি আমরা নতুনভাবে সৃজিত হয়ে উত্থিত হব?


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাই এদের প্রতিফল, কারণ এরা আমার নিদর্শন অস্বীকার করেছিল ও বলেছিল, ‘অস্থিতে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও আমরা কি নূতন সৃষ্টিরূপে পুনরুত্থিত হব ?’


৯৯


۞ أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللَّهَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ قَادِرٌ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ مِثْلَهُمْ وَجَعَلَ لَهُمْ أَجَلًا لَّا رَيْبَ فِيهِ فَأَبَى الظَّالِمُونَ إِلَّا كُفُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারা কি বুঝতে পারল না যে, যেই আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের মত মানুষ পুনরায় সৃষ্টি করতেও সক্ষম? তিনি তাদের জন্য স্থির করে রেখেছেন এমন এক কাল, যার (আসার) মধ্যে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তথাপি জালেমগণ অস্বীকৃতি ছাড়া অন্য কিছুতে সম্মত নয়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা কি দেখেনি যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃজিত করেছেন, তিনি তাদের মত মানুষও পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম? তিনি তাদের জন্যে স্থির করেছেন একটি নির্দিষ্ট কাল, এতে কোন সন্দেহ নেই; অতঃপর জালেমরা অস্বীকার ছাড়া কিছু করেনি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরা কি লক্ষ্য করে না যে, আল্লাহ্, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি এদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে ক্ষমতাবান ? তিনি এদের জন্যে স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই। তথাপি সীমালংঘনকারীরা কুফরী করা ব্যতীত ক্ষান্ত হল না।


১০০


قُل لَّوْ أَنتُمْ تَمْلِكُونَ خَزَائِنَ رَحْمَةِ رَبِّي إِذًا لَّأَمْسَكْتُمْ خَشْيَةَ الْإِنفَاقِ ۚ وَكَانَ الْإِنسَانُ قَتُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(হে নবী! কাফেরদেরকে) বলে দাও, আমার প্রতিপালকের রহমতের ভাণ্ডার যদি তোমাদের এখতিয়ারাধীন থাকত, তবে খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তোমরা অবশ্যই হাত বন্ধ করে রাখতে। ৬২ মানুষ বড়ই সংকীর্ণমনা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভান্ডার তোমাদের হাতে থাকত, তবে ব্যয়িত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অবশ্যই তা ধরে রাখতে। মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘যদি তোমরা আমার প্রতিপালকের দয়ার ভাণ্ডারের অধিকারী হতে, তবুও ‘ব্যয় হয়ে যাবে’ এই আশংকায় তোমরা তা ধরে রাখতে; মানুষ তো অতিশয় কৃপণ।’


তাফসীরঃ

৬২. এখানে রহমতের ভাণ্ডার দ্বারা নবুওয়াত দানের এখতিয়ার বোঝানো হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতকে অস্বীকার করে মক্কার কাফেরগণ বলত, এটা মক্কা ও তায়েফের বড় কোন ব্যক্তিকে কেন দেওয়া হল না। যেন তারা বলতে চাচ্ছিল, কাউকে নবুওয়াত দিলে সেটা আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী দেওয়া উচিত ছিল। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলছেন, নবুওয়াত দেওয়ার ক্ষমতা যদি তোমাদের হাতে ছাড়া হত, তবে তোমরা অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে যেমন কার্পণ্য কর, এক্ষেত্রেও তেমনি কার্পণ্য করতে। ফলে খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তা কাউকে দিতে না।


১০১


وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَىٰ تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ ۖ فَاسْأَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ إِذْ جَاءَهُمْ فَقَالَ لَهُ فِرْعَوْنُ إِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا مُوسَىٰ مَسْحُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। ৬৩ বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, সে যখন তাদের কাছে আসল, তখন ফির‘আউন তাকে বলেছিল, হে মূসা! তোমার সম্পর্কে তো আমার ধারণা কেউ তোমাকে যাদু করেছে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আপনি বণী-ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুন, আমি মূসাকে নয়টি প্রকাশ্য নিদর্শন দান করেছি। যখন তিনি তাদের কাছে আগমন করেন, ফেরাউন তাকে বললঃ হে মূসা, আমার ধারনায় তুমি তো জাদুগ্রস্থ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তুমি বনী ইস্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করে দেখ আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম; যখন সে তাদের নিকট এসেছিল, ফির‘আওন তাকে বলেছিল, ‘হে মূসা! আমি মনে করি তুমি তো জাদুগ্রস্ত।’


তাফসীরঃ

৬৩. নিদর্শনগুলো কী ছিল? একটি সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এগুলো ছিল নয়টি বিধান, যথা ১. শিরক করবে না। ২. চুরি করবে না, ৩. ব্যভিচার করবে না, ৪. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে না, ৫. মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কাউকে হত্যা বা অন্য কোন শাস্তির সম্মুখীন করবে না, ৬. যাদু করবে না, ৭. সুদ খাবে না, ৮. চরিত্রবতী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করবে না এবং ৯. যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবে না (আবু দাঊদ, নাসাঈ, ইবন মাজা) [ইমাম ইবন কাছীর (রহ) সহ আরও অনেকের মতে ‘নয়টি নিদর্শন’ দ্বারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতের সত্যতা প্রমাণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নয়টি নিদর্শনকে বোঝানো হয়েছে। তা হল, শুভ্রৌজ্জ্বল হাত, লাঠি, দুর্ভিক্ষ, ফসলহানি, প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। -অনুবাদক]


১০২


قَالَ لَقَدْ عَلِمْتَ مَا أَنزَلَ هَـٰؤُلَاءِ إِلَّا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ بَصَائِرَ وَإِنِّي لَأَظُنُّكَ يَا فِرْعَوْنُ مَثْبُورًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

মূসা বলল, তুমি ভালো করেই জান, এসব নিদর্শন অন্য কেউ নয়; বরং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই সুস্পষ্ট উপলব্ধি সৃষ্টির জন্য অবতীর্ণ করেছেন। আর হে ফির‘আউন! তোমার সম্পর্কে তো আমার ধারণা তোমার ধ্বংস আসন্ন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি বললেনঃ তুমি জান যে, আসমান ও যমীনের পালনকর্তাই এসব নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ নাযিল করেছেন। হে ফেরাউন, আমার ধারণায় তুমি ধ্বংস হতে চলেছো।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মূসা বলেছিল, ‘তুমি অবশ্যই অবগত আছ যে, এই সমস্ত স্পষ্ট নিদর্শন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালকই অবতীর্ণ করেছেন-প্রত্যক্ষ প্রমাণস্বরূপ। হে ফির‘আওন! আমি তো দেখছি তোমার ধ্বংস আসন্ন!’


১০৩


فَأَرَادَ أَن يَسْتَفِزَّهُم مِّنَ الْأَرْضِ فَأَغْرَقْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ جَمِيعًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর ফির‘আউন সংকল্প করেছিল, তাদেরকে (অর্থাৎ বনী ইসরাঈলকে) সে দেশ থেকে উচ্ছেদ করবে, কিন্তু আমি তাকে এবং সঙ্গীগণকে সকলকে নিমজ্জিত করলাম।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অতঃপর সে বনী ইসরাঈলকে দেশ থেকে উৎখাত করতে চাইল, তখন আমি তাকে ও তার সঙ্গীদের সবাইকে নিমজ্জত করে দিলাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরপর ফির‘আওন তাদেরকে দেশ হতে উচ্ছেদ করার সংকল্প করল; তখন আমি ফির‘আওন ও তার সঙ্গীদের সকলকে নিমজ্জিত করলাম।


১০৪


وَقُلْنَا مِن بَعْدِهِ لِبَنِي إِسْرَائِيلَ اسْكُنُوا الْأَرْضَ فَإِذَا جَاءَ وَعْدُ الْآخِرَةِ جِئْنَا بِكُمْ لَفِيفًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

তারপর বনী ইসরাঈলকে বললাম, তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে বসবাস কর, তারপর যখন আখেরাতের ওয়াদা পূরণের সময় এসে যাবে, তখন আমি তোমাদের সকলকে একত্র করে উপস্থিত করব।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারপর আমি বনী ইসলাঈলকে বললামঃ এ দেশে তোমরা বসবাস কর। অতঃপর যখন পরকালের ওয়াদা বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের কে জড়ো করে নিয়ে উপস্থিত হব।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটার পর আমি বনী ইস্রাঈলকে বললাম, ‘তোমরা ভ‚পৃষ্ঠে বসবাস কর এবং যখন কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সকলকে আমি একত্র করে উপস্থিত করব।


১০৫


وَبِالْحَقِّ أَنزَلْنَاهُ وَبِالْحَقِّ نَزَلَ ۗ وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا مُبَشِّرًا وَنَذِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি এ কুরআনকে সত্যসহই নাযল করেছি এবং সত্যসহই এটা অবতীর্ণ হয়েছে। (হে নবী!) আমি তোমাকে কেবল একজন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি সত্যসহ এ কোরআন নাযিল করেছি এবং সত্য সহ এটা নাযিল হয়েছে। আমি তো আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা ও ভয়প্রদর্শক করেই প্রেরণ করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি সত্যসহই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং তা সত্যসহই অবতীর্ণ হয়েছে। আমি তো তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।


১০৬


وَقُرْآنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَأَهُ عَلَى النَّاسِ عَلَىٰ مُكْثٍ وَنَزَّلْنَاهُ تَنزِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

আমি কুরআনকে আলাদা আলাদা অংশ করে দিয়েছি, যাতে তুমি তা মানুষের সামনে থেমে থেমে পড়তে পার আর আমি এটা নাযিল করেছি অল্প-অল্প করে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি কোরআনকে যতিচিহ্ন সহ পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ ভাবে অবতীর্ণ করেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি খণ্ড খণ্ডভাবে যাতে তুমি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে পার ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা ক্রমশ অবতীর্ণ করেছি।


১০৭


قُلْ آمِنُوا بِهِ أَوْ لَا تُؤْمِنُوا ۚ إِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مِن قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ سُجَّدًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

(কাফেরদেরকে) বলে দাও, তোমরা এতে ঈমান আন বা নাই আন, যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল, তাদের সামনে যখন (কুরআন) পড়া হয় তখন তারা থুতনি ফেলে সিজদায় পড়ে যায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ তোমরা কোরআনকে মান্য কর অথবা অমান্য কর; যারা এর পূর্ব থেকে এলেম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের কাছে এর তেলাওয়াত করা হয়, তখন তারা নতমস্তকে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, যাদেরকে এটার পূর্বে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের নিকট যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজ্দায় লুটিয়ে পড়ে।’


১০৮


وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَا إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, নিশ্চয়ই আমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা বাস্তবায়িত হয়েই থাকে। ৬৪


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং বলেঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে।


তাফসীরঃ

৬৪. এর দ্বারা যাদেরকে তাওরাত ও ইনজীলের জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এসব কিতাবে শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ছিল। তাই এর অকৃত্রিম অনুসারীরা কুরআন মাজীদ শুনে বলত, আল্লাহ তাআলা আখেরী যামানায় যে কিতাব নাযিলের এবং যেই নবী পাঠানোর ওয়াদা করেছিলেন, তা পূর্ণ হয়ে গেছে।


১০৯


وَيَخِرُّونَ لِلْأَذْقَانِ يَبْكُونَ وَيَزِيدُهُمْ خُشُوعًا ۩


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে থুতনির উপর লুটিয়ে পড়ে এবং এটা (অর্থাৎ কুরআন) তাদের অন্তরের বিনয় আরও বৃদ্ধি করে। ৬৫


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারা ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের বিনয়ভাব আরো বৃদ্ধি পায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

‘এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে ভ‚মিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা এদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’


তাফসীরঃ

৬৫. এটা সিজদার আয়াত। আরবীতে এ আয়াত যখনই তিলাওয়াত করা হবে সিজদা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। অবশ্য কেবল তরজমা পড়ার দ্বারা সিজদা ওয়াজিব হয় না। মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়লেও সিজদা ওয়াজিব হয় না।


১১০


قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَـٰنَ ۖ أَيًّا مَّا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বলে দাও, তোমরা আল্লাহকে ডাক বা রহমানকে ডাক, যে নামেই তোমরা (আল্লাহকে) ডাক, (একই কথা। কেননা) সমস্ত সুন্দর নাম তো তাঁরই। ৬৬ তুমি নিজের নামায বেশি উঁচু স্বরে পড়বে না এবং অতি নিচু স্বরেও নয়; বরং উভয়ের মাঝামাঝি পন্থা অবলম্বন করবে। ৬৭


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘তোমরা ‘আল্লাহ্’ নামে আহ্বান কর বা ‘রাহ্মান’ নামে আহ্বান কর, তোমরা যে নামেই আহ্বান কর সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। তোমরা সালাতে স্বর উচ্চ কর না এবং অতিশয় ক্ষীণও কর না; এই দুইয়ের মধ্যপথ অবলম্বন কর।’


তাফসীরঃ

৬৬. এ আয়াতের পটভূমি নিম্নরূপ, মুশরিকরা জানত না আল্লাহ তাআলার একটি নাম রহমান। ফলে মুসলিমগণ যখন ‘ইয়া আল্লাহ’, ‘ইয়া রহমান’ বলে ডাকত, মুশরিকরা তা নিয়ে ঠাট্টা করত। তারা বলত, একদিকে তো তোমরা বলছ ‘আল্লাহ এক’। অন্যদিকে দুই খোদাকে ডাকছ। আল্লাহকে এবং তাঁর সাথে রহমানকে। এ আয়াতের তাদের সেই অবান্তর কথার উত্তর দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ’ ও ‘রহমান’ উভয়ই আল্লাহ তাআলারই নাম। বরং তাঁর এ ছাড়াও আরও অনেক ভালো ভালো নাম আছে। সেগুলোকে ‘আল-আসমাউল হুসনা’ বলে। তাঁকে তার যে-কোনও নামেই ডাকা যায়। তাতে তাওহীদের আকীদা দূষিত হয় না।


৬৭. নামাযে যখন উঁচু আওয়াজে তিলাওয়াত করা হত, তখন মুশরিকরা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত এবং তিলাওয়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করত, তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বেশি উঁচু আওয়াজে পড়ো না। কেননা তার তো কোন প্রয়োজন নেই। তাছাড়া মধ্যম আওয়াজই বেশি পছন্দনীয়।


১১১


وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ ۖ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا


অর্থঃ

মুফতী তাকী উসমানী

বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর রাজত্বে কোন অংশীদার নেই এবং অক্ষমতা হতে রক্ষার জন্য তাঁর কোন অভিভাবকের প্রয়োজন নেই। ৬৮ তাঁর মহিমা বর্ণনা কর, ঠিক যেভাবে তাঁর মহিমা বর্ণনা করা উচিত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ন বর্ণনা করতে থাকুন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বল, ‘প্রশংসা আল্লাহ্ র ই যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেন নাই, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশী নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সসম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা কর।’


তাফসীরঃ

৬৮. বহু মুশরিকের ধারণা ছিল, যেই সত্তার পুত্র সন্তান নেই এবং যার রাজত্বেও কোন অংশীদার নেই সে তো বড়ই দুর্বল হবে। এ আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সন্তান বা সাহায্যকারীর দরকার তো তারই হয়, যে নিজে দুর্বল। আল্লাহ তাআলার সত্তা অসীম শক্তিমান। কাজেই দুর্বলতা দূর করার জন্য তার না সন্তানের দরকার আছে, না সাহায্যকারীর।

আরো পড়ুন :-

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধির দোয়া,মেধা বৃদ্ধির দোয়া,স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর দোয়া!নামাজের পর ২১ বাড় পড়ুন

গর্ভের সন্তান কখন নষ্ট করা যাবে?,কতদিনের বাচ্চা নষ্ট করলে গুনাহ হবে না?, বাচ্চা নষ্ট করা জায়েজ আছে?, 

দোয়াটি পড়লে সাথে সাথে রাগ কমে যায়, রাগ কমানোর দোয়া,শিশুদের রাগ কমানোর আমল

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(demo) #size=(2)


Post a Comment

0 Comments