ইফতারে কি খেতে হয়, রাসুল (সা:) এর সেহরি ও ইফতার,ইফতার ও সেহরিতে যে খাবার খেতেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

 


নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত হচ্ছে সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। সময় মতো শুধু ইফতারই নয়; ইফতারের অনুসঙ্গ কী হবে? কী দিয়ে ইফতার করতে হবে? তাও সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তিনি। তাহলে ইফতারে সুন্নত আমল কী?


ইফতারে খেজুর বা খুরমা সর্বাপেক্ষা উত্তম; যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সাদা পানি দিয়ে ইফতার করা। এরপর যে কোনো মিষ্টিজাতীয় বস্তু দিয়ে ইফতার করাও ভালো। আর যদি এটাও সম্ভব না হয় তাহলে যে কোনো হালাল খাদ্য দিয়ে, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট।


নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা তাতে বরকত (কল্যাণ) রয়েছে। আর যদি খেজুর না পাওয়া যায় তবে সে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে। কেননা তা পবিত্রকারী।' (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমি, মিশকাত)


হজরত আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকতো, তাহলে তিনি  শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না থাকতো, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (তিরমিজি ৬৩২)


তবে হাদিসে পানিমিশ্রিত দুধ দিয়ে ইফতার করার হুকুমও রয়েছে। আবার মাগরিবের নামাজ আদায়ের আগে ইফতার করা মুস্তাহাব বা উত্তম।


ইফতারের সময় শুকরিয়ার দোয়া


খেজুর পানি দ্বারা ইফতার করার পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুকরিয়া আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-


ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ


উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’


অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)


ইফতারের আরও কিছু সুন্নত নিয়ম


১. ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত। ইফতারের শুরুতে এভাবে দোয়া পড়া-


بِسْمِ اللهِ - اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ


উচ্চারণ : 'বিসমিল্লাহি - আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু।’


অর্থ : 'আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।'


২. ইফতারের আগ মুহূর্তে ইস্তেগফার করা


ইফতারের সময় হওয়ার আগে ইফতারি নিয়ে বসে তাওবা-ইসতেগফার, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ও দোয়া-দরূদ পড়া। বিশেষ করে বেশি বেশি এই ইসতেগফার পড়া-


اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم


উচ্চারণ : 'আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।'


৩. ইফতারে দেরি না করা


ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত। এ সময় সাংসারিক কাজ বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। হাদিসে এসেছে-


‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (দেরি না করে) দ্রুত ইফতারকারী কল্যাণ লাভ করতে থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)


৪. সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা


সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মসজিদে আজান দেওয়া হয়। তাই ইফতারে আজানের অনুসরণ করা। তবে আজান শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করা ঠিক নয়। আর আজান শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষার কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রমজানের রোজায় কল্যাণকর বিষয়গুলো সহজ করতে চান। আল্লাহ বলেন-


‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান। কঠোরতা চান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)


৫. ইফতারে বেশি সময় ব্যয় না করা


ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা কিংবা জামাআতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা মারাত্মক নিন্দনীয় কাজ। হাদিসে এসেছে-


হজরত ইবনে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।’


৬. ইফতারের সময় দোয়া করা


দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোর মধ্যে ইফতারের সময়ও একটি। অনেকেই গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে ইফতার করে থাকেন। তাই এ সময় গল্প না করে দোয়া করার মাধ্যমে সুন্নাতের আমল করা। আবার ঘরের নারীরা এ সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উচিত, এ সময় দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-


‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। পিতামাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ (মুসনাদে আহমদ)


৭. ইফতারি অপচয় না করা


অপচয় সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। চাই তা ইফতার হোক কিংবা অন্য খাবার। আর সংযমের মাসে ইফতারের বাড়াবাড়ি ও জৌলুস করাও ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-


‘তোমরা খাও ও পান করো। অপচয় কোরো না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত : ৩১)


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো রীতিতে ইফতার করা। এগুলো হলো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইফতারের নিয়মিত সুন্নত। এসব সুন্নাত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মেনে চলা। হাদিসের ওপর আমল করা। ইফতারের আগে তাওবা-ইসতেগফার করা, ইফতারের সময় দোয়া পড়া এবং ইফতারের পর শুকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়া।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইফতারের সুন্নতগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন।

Post a Comment

0 Comments