কোরআন ও হাদিসের আলোতে সূরা ফাত্‌হ সকল তথ্য আল,ফাত্‌হ আলমল ও ফজিলত, সূরা ফাত্‌হ কতো বার পাঠ করলে কোন আলম ও ফজিলত, সূরা ফাত্‌হ নাযিলের কারন গুলো কি কি

  

৪৮ . আল ফাত্‌হ - ( الفتح ) | বিজয়, মক্কা বিজয়

মাদানী, মোট আয়াতঃ ২৯


بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ


اِنَّا فَتَحۡنَا لَکَ فَتۡحًا مُّبِیۡنًا ۙ


ইন্না-ফাতাহনা-লাকা ফাতহাম মুবীনা-।


Mufti Taqi Usmani

Surely, We have granted you an open victory,


মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) নিশ্চয়ই আমি তোমাকে প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি, ১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়,


মাওলানা জহুরুল হক

আমরা নিশ্চয় তোমাকে বিজয় দিয়েছি একটি উজ্জ্বল বিজয়, --


তাফসীরঃ

১. সহীহ বর্ণনা অনুযায়ী এ আয়াত হুদায়বিয়ার সন্ধির পর নাযিল হয়েছে। সূরার পরিচিতিতে ঘটনাটি সংক্ষেপে গত হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে সন্ধির শর্তসমূহ এমন ছিল না, যাকে প্রকাশ্য বিজয় বলা যেতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যেই পরিস্থিতিতে এ সন্ধি সম্পাদিত হয়েছিল, তার প্রতি লক্ষ্য করলে নিঃসন্দেহে এটি এক সুস্পষ্ট ও মহা বিজয়ের পটভূমি এবং শেষ পর্যন্ত এরই ফলশ্রুতিতে মক্কা মুকাররমা বিজিত হবে।



لِّیَغۡفِرَ لَکَ اللّٰہُ مَا تَقَدَّمَ مِنۡ ذَنۡۢبِکَ وَمَا تَاَخَّرَ وَیُتِمَّ نِعۡمَتَہٗ عَلَیۡکَ وَیَہۡدِیَکَ صِرَاطًا مُّسۡتَقِیۡمًا ۙ


লিয়াগফিরা লাকাল্লা-হুমা- তাকাদ্দামা মিন যামবিকা ওয়ামা- তাআখখারা ওয়াইউতিম্মা নি‘মাতাহূ‘আলাইকা ওয়া ইয়াহদিয়াকা সিরা-তামমুছতাকীমা-।


Mufti Taqi Usmani

so that Allah may forgive you of your previous and subsequent faults, and may complete His favour upon you, and may guide you to a straight path,


মুফতী তাকী উসমানী

যাতে আল্লাহ তোমার অতীত ও ভবিষ্যতের সমস্ত ত্রুটি ক্ষমা করেন, ২ তোমার প্রতি তাঁর নি‘আমত পূর্ণ করেন এবং তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। ৩


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেন আল্লাহ্ তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন,


মাওলানা জহুরুল হক

এ জন্য যে আল্লাহ্ যেন তোমাকে মুক্তি দিতে পারেন তোমার সেই সব অপরাধ থেকে যা গত হয়ে গেছে ও যা রয়ে গেছে, আর যেন তোমার উপরে তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করতে পারেন, আর যেন তোমাকে পরিচালিত করতে পারেন সহজ-সঠিক পথ দিয়ে, --


তাফসীরঃ

২. পূর্বে সূরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ১৯ নং আয়াতের টীকায় বলা হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ ছিলেন। তাঁর দ্বারা কোনও রকম গুনাহ সংঘটিত হতে পারত না। তা সত্ত্বেও মামুলি কিসিমের ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলেও তিনি তাকে নিজের অপরাধ গণ্য করতেন এবং সেজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এখানে সে রকম ভুল-ত্রুটিই বোঝানো উদ্দেশ্য।


৩. অর্থাৎ দীনের প্রচারকার্য ও তার পরিপূর্ণ অনুসরণের পথে এ পর্যন্ত কাফেরদের পক্ষ থেকে নানা রকম বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছিল। এবার এ বিজয়ের পর সে বাধা দূর হয়ে যাবে এবং সরল পথ উন্মুক্ত হয়ে যাবে।



وَّیَنۡصُرَکَ اللّٰہُ نَصۡرًا عَزِیۡزًا


ওয়া ইয়ানসুরাকাল্লা-হু নাসরান ‘আঝীঝা-।


Mufti Taqi Usmani

and so that Allah may support you with a mighty support.


মুফতী তাকী উসমানী

এবং (যাতে আল্লাহ) তোমাকে সাহায্য করেন, বলিষ্ঠ সাহায্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং আপনাকে দান করেন বলিষ্ঠ সাহায্য।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আল্লাহ্ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।


মাওলানা জহুরুল হক

আর যেন আল্লাহ্ তোমাকে সাহায্য করতে পারেন এক বলিষ্ঠ সাহায্যে।



ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ لِیَزۡدَادُوۡۤا اِیۡمَانًا مَّعَ اِیۡمَانِہِمۡ ؕ  وَلِلّٰہِ جُنُوۡدُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ  وَکَانَ اللّٰہُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ۙ


হুওয়াল্লাযীআনঝালাছ ছাকীনাতা ফী কুলূবিল মু’মিনীনা লিইয়াঝদা-দূ ঈমা-নাম মা‘আ ঈমা-নিহিম ওয়া লিল্লা-হি জনূদুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ওয়াকা-নাল্লা-হু ‘আলীমান হাকীমা-।


Mufti Taqi Usmani

He (Allah) is such that He sent down tranquility into the hearts of the believers, so that they grow more in faith in addition to their (existing) faith- And to Allah belong the forces of the heavens and the earth, and Allah is All-Knowing, All-Wise-


মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি অবতীর্ণ করেছেন, ৪ যাতে তাদের ঈমানে অধিকতর ঈমান যুক্ত হয়। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই মু’মিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করেন যেন তারা তাদের ঈমানের সঙ্গে ঈমান দৃঢ় করে নেয়, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহ্ র ই এবং আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা জহুরুল হক

তিনিই সেইজন যিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি বর্ষণ করেছেন যেন তিনি তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারেন। আর মহাকাশমন্ডলীর ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই, আর আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী, --


তাফসীরঃ

৪. সূরার পরিচিতিতে বলা হয়েছে, হুদায়বিয়ার সন্ধিকালে কাফেরদের আচরণে মুমিনগণ যারপরনাই ক্ষুব্ধ ছিলেন, যে কারণে তারা জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন এবং সন্ধির শর্তাবলী কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, কিন্তু সন্ধি স্থাপিত করাই যেহেতু তখন আল্লাহ তাআলার অভিপ্রায় ছিল, তাই তিনি তাঁদের অন্তরে সাকীনাহ ও প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে তারা সর্বান্তকরণে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা মেনে নিলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শকে শিরোধার্য করে নিলেন।


(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#f50707)

لِّیُدۡخِلَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَالۡمُؤۡمِنٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا وَیُکَفِّرَ عَنۡہُمۡ سَیِّاٰتِہِمۡ ؕ  وَکَانَ ذٰلِکَ عِنۡدَ اللّٰہِ فَوۡزًا عَظِیۡمًا ۙ


লিইউদখিলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনা-তি জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু খালিদীনা ফীহা-ওয়া ইউকাফফিরা ‘আনহুম ছাইয়িআ-তিহিম ওয়া কা-না যা-লিকা ‘ইনদাল্লা-হি ফাওঝান ‘আজীমা-।


Mufti Taqi Usmani

so that He admits believing men and believing women to the gardens beneath which rivers flow, to live therein for ever, and so that He may write off their evil deeds, which is a great achievement in Allah’s sight,


মুফতী তাকী উসমানী

যাতে তিনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে দাখিল করেন এমন উদ্যানে, যার তলদেশে প্রবহমান রয়েছে নহর, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং যাতে তাদের থেকে মিটিয়ে দেন তাদের মন্দসমূহ। আল্লাহর কাছে এটাই মহাসাফল্য।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

ঈমান এজন্যে বেড়ে যায়, যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে এবং যাতে তিনি তাদের পাপ মোচন করেন। এটাই আল্লাহর কাছে মহাসাফল্য।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটা এজন্যে যে, তিনি মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং তিনি তাদের পাপ মোচন করবেন ; এটাই আল্লাহ্ র দৃষ্টিতে মহাসাফল্য।


মাওলানা জহুরুল হক

যেন তিনি মুমিন পুরুষদের ও মুমিন নারীদের প্রবেশ করাতে পারেন জান্নাতে যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি, তারা সে- সবে অবস্থান করবে, আর তিনি তাদের থকে তাদের দোষত্রুটি মোচন করবেন। আর এটি আল্লাহ্‌র কাছে এক মহাসাফল্য, --



وَّیُعَذِّبَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَالۡمُنٰفِقٰتِ وَالۡمُشۡرِکِیۡنَ وَالۡمُشۡرِکٰتِ الظَّآنِّیۡنَ بِاللّٰہِ ظَنَّ السَّوۡءِ ؕ عَلَیۡہِمۡ دَآئِرَۃُ السَّوۡءِ ۚ وَغَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ وَلَعَنَہُمۡ وَاَعَدَّ لَہُمۡ جَہَنَّمَ ؕ وَسَآءَتۡ مَصِیۡرًا


ওয়া ইউ‘আযযিবাল মুনা-ফিকীনা ওয়াল মুনা-ফিকা-তি ওয়াল মুশরিকীনা ওয়াল মুশরিকা-তিজ্জান্নীনা বিল্লা-হি জান্নাছছাওই ‘আলাইহিম দাইরাতুছ ছাওই ওয়া গাদিবাল্লা-হু ‘আলাইহিম ওয়া লা‘আনাহুম ওয়া আ‘আদ্দালাহুম জাহান্নামা ওয়া ছাআত মাসীরা-।


Mufti Taqi Usmani

and so that He may punish the hypocrites, men and women, and the mushriks (polytheists), men and women, who think evil thoughts about Allah. Bound for them there is a vicious circle, and Allah has become angry with them, and He has prepared Jahannam (Hell) for them, and it is an evil destination.


মুফতী তাকী উসমানী

আর যাতে সেই মুনাফেক পুরুষ ও মুনাফেক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দান করেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে কু-ধারণা পোষণ করে। মন্দের ফের তাদেরই উপর নিপতিত ৫ এবং আল্লাহ তাদের প্রতি রুষ্ট, তিনি তাদেরকে নিজ রহমত থেকে বিতাড়িত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রেখেছেন আর তা অতি মন্দ ঠিকানা।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং যাতে তিনি কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারী এবং অংশীবাদী পুরুষ ও অংশীবাদিনী নারীদেরকে শাস্তি দেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষন করে। তাদের জন্য মন্দ পরিনাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন। এবং তাহাদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত মন্দ।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আর তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী যারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন। অমঙ্গল চক্র এদের জন্যে, আল্লাহ্ এদের প্রতি রুষ্ট হয়েছেন এবং এদেরকে লা‘নত করেছেন এবং এদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন, তা কত নিকৃষ্ট আবাস!


মাওলানা জহুরুল হক

আর যেন তিনি শাস্তি দিতে পারেন মুনাফিক পুরুষদের ও মুনাফিক নারীদের এবং মুশরিক পুরুষদের ও মুশরিক নারীদের -- যারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা ধারণ করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে দুস্কর্ম ঘুরে আসবে, আর আল্লাহ্ তাদের উপরে রাগ করেছেন এবং তাদের ধিক্কার দিয়েছেন, আর তাদের জন্য তিনি জাহান্নাম তৈরি করেছেন। আর কত নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থল?


তাফসীরঃ

৫. অর্থাৎ তারা তাদের ধারণা অনুযায়ী মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা রকম নিকৃষ্ট পরিকল্পনা করছে, কিন্তু জানে না যে, সে সব নিকৃষ্ট পরিকল্পনার ফেরে তারা নিজেরাই পড়ে রয়েছে। কেননা এক দিকে তাদের সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যাবে, অন্যদিকে এর পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে শাস্তি ভোগ করতে হবে।



وَلِلّٰہِ جُنُوۡدُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا


ওয়া লিল্লা-হি জুনূদুছ ছা-মা-ওয়াতি ওয়াল আর দি ওয়া কা-নাল্লা-হু ‘আঝীঝান হাকীমা-।


Mufti Taqi Usmani

To Allah belong the forces of the heavens and the earth, and Allah is All-Mighty, All-Wise.


মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহ্ র ই এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা জহুরুল হক

আর মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহর। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।



اِنَّاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ شَاہِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِیۡرًا ۙ


ইন্নাআরছালনা-কা শা-হিদাওঁ ওয়া মুবাশশিরাওঁ ওয়া নাযীরা-।


Mufti Taqi Usmani

Indeed, We have sent you (O prophet,) as a witness and as a bearer of good news and as a warner,


মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদাদাতা ও সতর্ককারীরূপে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আমি তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে,


মাওলানা জহুরুল হক

আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে পাঠিয়েছি একজন সাক্ষীরূপে, আর সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, --



لِّتُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَتُعَزِّرُوۡہُ وَتُوَقِّرُوۡہُ ؕ وَتُسَبِّحُوۡہُ بُکۡرَۃً وَّاَصِیۡلًا


লিতু’মিনূবিল্লা-হি ওয়া রাছূলিহী ওয়া তু‘আঝাঝিরূহু ওয়া তুওয়াক্কিরূহু ওয়া তুছাববিহূহু বুকরাতাওঁ ওয়া আসীলা-।


Mufti Taqi Usmani

so that you (O people,) believe in Allah and His Messenger, and support him and revere him, and pronounce His (Allah’s) purity morning and evening.


মুফতী তাকী উসমানী

যাতে (হে মানুষ!) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং তাঁকে সাহায্য কর ও তাঁকে সম্মান কর এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ কর।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যাতে তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন এবং রাসূলকে শক্তি যোগাও ও তাকে সম্মান কর ; সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্ র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।


মাওলানা জহুরুল হক

যেন তোমরা আল্লাহ্‌র প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনতে পার, এবং তাঁকে সাহায্য করতে ও সম্মান করতে পার, আর যেন তোমরা তাঁর নামজপ করতে পার ভোরে ও সন্ধ্যায়।


১০


اِنَّ الَّذِیۡنَ یُبَایِعُوۡنَکَ اِنَّمَا یُبَایِعُوۡنَ اللّٰہَ ؕ  یَدُ اللّٰہِ فَوۡقَ اَیۡدِیۡہِمۡ ۚ  فَمَنۡ نَّکَثَ فَاِنَّمَا یَنۡکُثُ عَلٰی نَفۡسِہٖ ۚ  وَمَنۡ اَوۡفٰی بِمَا عٰہَدَ عَلَیۡہُ اللّٰہَ فَسَیُؤۡتِیۡہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ٪


ইন্নাল্লাযীনা ইউবা-ই‘ঊনাকা ইন্নামা-ইউবা-ই‘ঊনাল্লা-হা ইয়াদুল্লা-হি ফাওকা আইদীহিম ফামান্নাকাছা ফাইন্নামা-ইয়ানকুছু ‘আলা-নাফছিহী ওয়া মান আওফাবিমা-‘আ-হাদা ‘আলাইহুল্লা-হা ফাছাইউ’তীহি আজরান ‘আজীমা-।


Mufti Taqi Usmani

Those who pledge allegiance with you (by placing their hands in your hand)- they, in fact, pledge allegiance with Allah. Allah’s hand is over their hands. Then, whoever breaks his pledge breaks it to his own detriment, and whoever fulfils the covenant he has made with Allah, He will give him a great reward.


মুফতী তাকী উসমানী

(হে রাসূল!) যারা তোমার কাছে বায়আত গ্রহণ করছে প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছে বায়আত গ্রহণ করছে। ৬ আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। এরপর যে-কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তার অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হবে। আর যে-কেউ পূরণ করবে, সেই অঙ্গীকার যা সে আল্লাহর সঙ্গে করছে, আল্লাহ তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।

(ads2)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#f50707)

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা তোমার হাতে বায়‘আত করে তারা তো আল্লাহ্ র ই হাতে বায়‘আত করে। আল্লাহ্ র হাত তাদের হাতের ওপর। এরপর যে তা ভঙ্গ করে, তা ভঙ্গ করার পরিণাম তারই এবং যে আল্লাহ্ র সঙ্গে অঙ্গীকার পূর্ণ করে তিনি অবশ্যই তাকে মহাপুরস্কার দিবেন।


মাওলানা জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যারা তোমার কাছে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে তারা নিশ্চয় আনুগত্যের শপথ নিচ্ছে আল্লাহ্‌র কাছে, -- আল্লাহ্‌র হাত ছিল তাদের হাতের উপরে। সুতরাং যে কেউ ভঙ্গ করে সে তো তবে ভঙ্গ করছে তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর যে কেউ পূরণ করে যে ওয়াদা সে আল্লাহ্‌র সঙ্গে করেছে তা, তাকে তবে তিনি প্রদান করবেন এক বিরাট প্রতিদান।


তাফসীরঃ

৬. ইশারা বায়আতে রিযওয়ানের প্রতি, যা হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের গুজব ছড়িয়ে পড়লে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়েছিলেন। সূরার পরিচিতিতে সে ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে।


১১


سَیَقُوۡلُ لَکَ الۡمُخَلَّفُوۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ شَغَلَتۡنَاۤ اَمۡوَالُنَا وَاَہۡلُوۡنَا فَاسۡتَغۡفِرۡ لَنَا ۚ یَقُوۡلُوۡنَ بِاَلۡسِنَتِہِمۡ مَّا لَیۡسَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ ؕ قُلۡ فَمَنۡ یَّمۡلِکُ لَکُمۡ مِّنَ اللّٰہِ شَیۡئًا اِنۡ اَرَادَ بِکُمۡ ضَرًّا اَوۡ اَرَادَ بِکُمۡ نَفۡعًا ؕ بَلۡ کَانَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا


ছাইয়াকূলুলাকাল মুখাল্লাফূনা মিনাল আ‘রা-বি শাগালাতনাআমওয়া-লুনা-ওয়া আহ লূনাফাছতাগফিরলানা- ইয়াকূলূনা বিআলছিনাতিহিম মা-লাইছা ফী কুলূবিহিম কুল ফামাইঁ ইয়ামলিকুলাকুম মিনাল্লা-হি শাইয়ান ইন আরা-দাবিকুম দাররান আও আরা-দাবিকুম নাফ‘আন বাল কা-নাল্লা-হু বিমা-তা‘মালূনা খাবীরা-।


Mufti Taqi Usmani

Those of the Bedouins who remained behind will say to you, “Our possessions and our families kept us busy, (hence we could not accompany you in your journey to Hudaibiyah). So, pray to Allah for our forgiveness.” They say with their tongues what is not in their hearts.Say, “Then, who has power to help you in any thing against Allah, if He intends to do you harm, or intends to do you good? Rather, Allah is fully aware of what you do.


মুফতী তাকী উসমানী

যেসব দেহাতী (হুদায়বিয়ার সফরে) পেছনে থেকে গিয়েছিল, ৭ তারা শীঘ্রই তোমাকে বলবে, আমাদের অর্থ-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছিল। তাই আমাদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করুন। তারা তাদের মুখে এমন কথা বলে, যা তাদের অন্তরে নেই। (তাদেরকে) বল, আল্লাহ যদি তোমাদের কোন ক্ষতি করতে চান বা তোমাদের কোন উপকার করতে চান, তবে কে তোমাদের বিষয়ে আল্লাহর সামনে কিছু করার ক্ষমতা রাখে? ৮ বরং তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মরুবাসীদের মধ্যে যারা গৃহে বসে রয়েছে, তারা আপনাকে বলবেঃ আমরা আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। অতএব, আমাদের পাপ মার্জনা করান। তারা মুখে এমন কথা বলবে, যা তাদের অন্তরে নেই। বলুনঃ আল্লাহ তোমাদের ক্ষতি অথবা উপকার সাধনের ইচ্ছা করলে কে তাকে বিরত রাখতে পারে? বরং তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয় পরিপূর্ণ জ্ঞাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যে সকল মরুবাসী পশ্চাতে রয়ে গেছে তারা তোমাকে বলবে, ‘আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছে, অতএব আমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ এরা মুখে তা বলে যা এদের অন্তরে নেই। এদেরকে বল, ‘আল্লাহ্ তোমাদের কারও কোন ক্ষতি কিংবা মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করলে কে তাঁকে নিবৃত্ত করতে পারে ? বস্তুত তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ্ সম্যক অবহিত।


মাওলানা জহুরুল হক

বেদুইনদের মধ্যের যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তারা শীঘ্রই তোমাকে বলবে -- "আমাদের ধনসম্পত্তি ও আমাদের পরিবার- পরিজন আমাদের মশগুল করে রেখেছিল, সেজন্য আমাদের জন্য আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন।" তারা তাদের জিব দিয়ে এমন সব বলে যা তাদের অন্তরে নেই। তুমি বল -- "কে তবে আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য কিছু করবার ক্ষমতা রাখে যদি তিনি তোমাদের অপকার করতে চান অথবা তোমাদের উপকার করতে চান? বস্তুত তোমরা যা কর সে-সন্বন্ধে আল্লাহ্ পূর্ণ ওয়াকিফহাল।


তাফসীরঃ

৭. হুদায়বিয়ার সফরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে নিষ্ঠাবান সকল সাহাবী স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাতে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আশঙ্কা ছিল কুরাইশী কাফেরগণ পথে বাধা সৃষ্টি করবে, ফলে যুদ্ধও লেগে যেতে পারে। তাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বড়-সড় দল সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মদীনা মুনাওয়ারার আশপাশের দেহাতগুলোতেও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, তারাও যেন এতে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে যারা অকৃত্রিম মুমিন ছিলেন, তারা তো তাঁর সঙ্গে এসে যোগদান করলেন, কিন্তু দেহাতীদের মধ্যে অনেক মুনাফেকও ছিল। তারা চিন্তা করল, যুদ্ধ লেগে গেলে তো আমাদেরও তাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই তারা নানা অজুহাতে পাশ কাটাল। ‘যেসব দেহাতী পেছনে থেকে গিয়েছিল’ বলে এই মুনাফেকদের প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনা মুনাওয়ারায় ফিরে আসবেন, তখন তারা এসে অজুহাত দেখাবে যে, আমরা ঘর-বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে আপনার সঙ্গে যেতে পারিনি।


৮. অর্থাৎ তোমরা তো এই মনে করেই ঘরে থেকে গিয়েছিলে যে, ঘরে থাকাতেই ফায়দা। আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে যাওয়া ক্ষতিকর। অথচ লাভ-ক্ষতি সব আল্লাহ তাআলারই হাতে। তিনি কারও উপকার বা ক্ষতি করার ইচ্ছা করলে তা ঠেকানোর সাধ্য নেই কারও।


১২


بَلۡ ظَنَنۡتُمۡ اَنۡ لَّنۡ یَّنۡقَلِبَ الرَّسُوۡلُ وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِلٰۤی اَہۡلِیۡہِمۡ اَبَدًا وَّزُیِّنَ ذٰلِکَ فِیۡ قُلُوۡبِکُمۡ وَظَنَنۡتُمۡ ظَنَّ السَّوۡءِ ۚۖ وَکُنۡتُمۡ قَوۡمًۢا بُوۡرًا


বাল জানানতুম আল্লাইঁ ইয়ানকালিবার রাছূলুওয়ালমু’মিনূনা ইলাআহলীহিম আবাদাওঁ ওয়া ঝুইঁনিয়া যা-লিকা ফী কুলূবিকুম ওয়া জানানতুন জান্নাছছাওই ওয়া কুনতুম কাওমাম বূরা-।


Mufti Taqi Usmani

But you thought that the Messenger and the believers would never ever return to their families, and it seemed good to your hearts, and you thought an evil thought and became a people who are ruined (by their selfishness).”


মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত তোমরা মনে করেছিলে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং অন্যান্য মুসলিমগণ কখনও তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে আসতে পারবে না। ৯ আর এ কথাই তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল এবং তোমরা নানা রকম কু-ধারণা করেছিলে। বস্তুত তোমরা ছিলে এক ধ্বংসমুখী সম্প্রদায়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

বরং তোমরা ধারণ করেছিলে যে, রসূল ও মুমিনগণ তাদের বাড়ী-ঘরে কিছুতেই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের জন্যে খুবই সুখকর ছিল। তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

না, তোমরা ধারণা করেছিলে যে, রাসূল ও মু’মিনগণ তাদের পরিবার-পরিজনের নিকট কখনই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল ; তোমরা মন্দ ধারণা করেছিলে, তোমরা তো ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায় !


মাওলানা জহুরুল হক

না, তোমরা ভেবেছিলে যে রসূল ও মুমিনগণ আর কখনো তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরে আসতে পারবে না, আর এইটি তোমাদের অন্তরে প্রীতিকর মনে হয়েছিল, আর তোমরা ভ্রান্তধারণা ধারণা করেছিল, আর তোমরা তো ছিলে এক ধ্বংসমুখী জাতি।


তাফসীরঃ

৯. মুনাফেকদের ধারণা ছিল মুসলিমগণ উমরা পালনের উদ্দেশ্যে গেলেও, কুরাইশের লোকজন তাদেরকে বাধা না দিয়ে ছাড়বে না। ফলে যুদ্ধ অবধারিত। আর যুদ্ধ যদি হয়ই, তবে কুরাইশ বাহিনীর শক্তি এমন অমিত যে, মুসলিমগণ তাদের সামনে টিকবে না। তারা বেঘোরে প্রাণ হারাবে। কেউ জান নিয়ে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবে না।


১৩


وَمَنۡ لَّمۡ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ فَاِنَّاۤ اَعۡتَدۡنَا لِلۡکٰفِرِیۡنَ سَعِیۡرًا


ওয়া মাল্লাম ইউ’মিম বিল্লা-হি ওয়া রাছূলিহী ফাইন্নাআ‘তাদনা-লিলকা-ফিরীনা ছা‘ঈরা-।


Mufti Taqi Usmani

If one does not believe in Allah and His Messenger, then We have prepared a blazing fire for the disbelievers.


মুফতী তাকী উসমানী

কেউ আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান না আনলে (সে জেনে রাখুক), আমি কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি জ্বলন্ত আগুন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনে না, আমি সেই সব কাফিরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।


মাওলানা জহুরুল হক

আর যে কেউ আল্লাহ্‌তে ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস করে না আমরা তো অবশ্যই অবিশ্বাসীদের জন্য তৈরি করেছি জ্বলন্ত আগুন।


১৪


وَلِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ یَغۡفِرُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَیُعَذِّبُ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا


ওয়ালিল্লা-হি মুলকুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদি ইয়াগফিরু লিমাইঁ ইয়াশাউ ওয়াইউ‘আযযিবুমাইঁ ইয়াশাউ ওয়া কা-নাল্লা-হু গাফূরার রাহীমা-।


Mufti Taqi Usmani

To Allah belongs the kingdom of the heavens and the earth. He forgives whomsoever He wills, and punishes whomsoever He wills. And Allah is Most-Forgiving, Very-Merciful.


মুফতী তাকী উসমানী

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর গোটা রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে চান শাস্তি দেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সর্বময় কর্তৃত্ব আল্লাহ্ র ই, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


মাওলানা জহুরুল হক

আর মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্‌র। তিনি যাকে ইচ্ছা করেন পরিত্রাণ করেন এবং শাস্তি দেন যাকে ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল, অফুরন্ত ফলদাতা।


১৫


سَیَقُوۡلُ الۡمُخَلَّفُوۡنَ اِذَا انۡطَلَقۡتُمۡ اِلٰی مَغَانِمَ لِتَاۡخُذُوۡہَا ذَرُوۡنَا نَتَّبِعۡکُمۡ ۚ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّبَدِّلُوۡا کَلٰمَ اللّٰہِ ؕ قُلۡ لَّنۡ تَتَّبِعُوۡنَا کَذٰلِکُمۡ قَالَ اللّٰہُ مِنۡ قَبۡلُ ۚ فَسَیَقُوۡلُوۡنَ بَلۡ تَحۡسُدُوۡنَنَا ؕ بَلۡ کَانُوۡا لَا یَفۡقَہُوۡنَ اِلَّا قَلِیۡلًا


ছাইয়াকূলুল মুখাল্লাফূনা ইযানতালাকতুমইলা-মাগা-নিমা লিতা’খুযূহা-যারূনানাত্তাবি‘কুম ইউরীদূ না আইঁ ইউবাদ্দিলূকালা-মাল্লা-হি কুল্লান তাত্তাবি‘ঊনা-কাযালিকুম কা-লাল্লা-হু মিন কাবলু ফাছাইয়াকূলূনা বাল তাহছু দূ নানা- বাল কা-না লাইয়াফকাহূনা ইল্লা-কালীলা-।


Mufti Taqi Usmani

Those who remained behind will say, when you will proceed to the spoils (of war) to receive them, “Let us follow you.”They wish to change the words of Allah. Say, “You shall not follow us. Allah had said like this beforehand.” Then they will say, “No, but you are jealous of us.” On the contrary, they do not understand (the reality) but a little.


মুফতী তাকী উসমানী

(হে মুসলিমগণ!) তোমরা যখন গণীমতের মাল সংগ্রহের জন্য যাবে, তখন (হুদায়বিয়ার সফর থেকে) যারা পেছনে থেকে গিয়েছিল তারা বলবে, তোমরা আমাদেরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও। ১০ তারা আল্লাহর কথা পাল্টে দিতে চাবে। ১১ বলে দিও, তোমরা কিছুতেই আমাদের সাথে যাবে না। আল্লাহ আগেই এ রকম বলে রেখেছেন। ১২ তখন তারা বলবে, প্রকৃতপক্ষে তোমরা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ কর। ১৩ না; বরং তারা বড় অল্পই বোঝে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ ধন-সম্পদ সংগ্রহের জন্য যাবে, তখন যারা পশ্চাতে থেকে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ আমাদেরকেও তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও। তারা আল্লাহর কালাম পরিবর্তন করতে চায়। বলুনঃ তোমরা কখনও আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না। আল্লাহ পূর্ব থেকেই এরূপ বলে দিয়েছেন। তারা বলবেঃ বরং তোমরা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছ। পরন্তু তারা সামান্যই বোঝে।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সংগ্রহের জন্যে যাবে তখন যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল তারা বলবে, ‘আমাদেরকে তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও।’ এরা আল্লাহ্ র প্রতিশ্রুতি পরিবর্তন করতে চায়। বল, ‘তোমরা কিছুতেই আমাদের সঙ্গী হতে পারবে না। আল্লাহ্ পূর্বেই এইরূপ ঘোষণা করেছেন।’ এরা অবশ্যই বলবে, ‘তোমরা তো আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছো।’ বস্তুত এদের বোধশক্তি সামান্য।


মাওলানা জহুরুল হক

তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ সম্পদের উদ্দেশ্যে যাত্রা কর তা হস্তগত করার জন্যে তখন পেছনে-পড়ে-থাকা লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলবে -- "আমাদের অনুমতি দাও যাতে আমরা তোমাদের অনুগমন করতে পারি।" তারা আল্লাহ্‌র কালাম বদলাতে চায়। তুমি বলো -- "তোমরা কিছুতেই আমাদের অনুগমন করবে না, আল্লাহ্ ইতিপূর্বেও এমনটাই বলেছিলেন।" তাতে তারা সঙ্গে সঙ্গে বলবে -- "বরং তোমরা আমাদের ঈর্ষা করছ।" বস্তুত তারা যৎসামান্য ছাড়া বোঝে না।


তাফসীরঃ

১০. হুদায়বিয়ার সফরে সাহাবায়ে কেরাম যে ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন, তার পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করেছিলেন, মক্কা বিজয়ের আগে তাদের আরও একটি বিজয় অর্জিত হবে এবং সে বিজয়ে তাদের প্রচুর গনীমত লাভ হবে। তার দ্বারা ইশারা ছিল খায়বার বিজয়ের প্রতি। সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ৭ম হিজরীতে খায়বার অভিযানের জন্য রওয়ানা হচ্ছিলেন, তখন সাহাবায়ে কেরামের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তাআলার ওয়াদা অনুসারে খায়বার অবশ্যই বিজিত হবে এবং তাতে প্রচুর গনীমতও লাভ হবে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, সেই সময় যখন আসবে, হুদায়বিয়ার সফরে যেসব মুনাফেক নানান ছল-ছুতায় ঘরে থেকে গিয়েছিল, তারাও কিন্তু তখন সঙ্গে যেতে চাইবে। কেননা তোমাদের মত তাদেরও বিশ্বাস থাকবে যে, খায়বার অবশ্যই বিজিত হবে এবং তাতে প্রচুর গনীমত অর্জিত হবে। কিন্তু মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলা হচ্ছে, তাদের এ খাহেশ পূরণ করবেন না এবং তাদেরকে আপনার সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেবেন না।


১১. আল্লাহ তাআলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আগেই হুকুম দিয়েছিলেন, খায়বার অভিযানে যেন কেবল যারা হুদায়বিয়ার সফরে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদেরকেই যোগদানের অনুমতি দেন। এ আয়াতে ‘আল্লাহর কথা’ বলে সেই হুকুমের দিকেই ইশারা করা হয়েছে।


১২. প্রকাশ থাকে যে, ‘যারা হুদায়বিয়ার সফরে অংশগ্রহণ করেছিল, খায়বার অভিযানে কেবল তারাই যোগদান করবে’ আল্লাহ তাআলার এ হুকুমের কথা কুরআন মাজীদের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। মূলত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহীর মাধ্যমেই এ হুকুম দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তা মানুষের কাছে প্রকাশ করেছিলেন। এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কুরআনের বাইরেও ওহী নাযিল হত এবং সেই ওহী মারফত যে হুকুম দেওয়া হত, তাও আল্লাহ তাআলারই হুকুম মত। কাজেই ‘হাদীছ অস্বীকারকারী সম্প্রদায়’ যে বলে, কুরআন ছাড়া অন্য কোন ওহীর কোন প্রমাণ নেই, এ আয়াত সুস্পষ্টভাবে তা খণ্ডন করছে।


১৩. অর্থাৎ তোমরা হিংসাবশতই আমাদেরকে গনীমতের মালে অংশীদার বানাতে চাও না।


১৬


قُلۡ لِّلۡمُخَلَّفِیۡنَ مِنَ الۡاَعۡرَابِ سَتُدۡعَوۡنَ اِلٰی قَوۡمٍ اُولِیۡ بَاۡسٍ شَدِیۡدٍ تُقَاتِلُوۡنَہُمۡ اَوۡ یُسۡلِمُوۡنَ ۚ فَاِنۡ تُطِیۡعُوۡا یُؤۡتِکُمُ اللّٰہُ اَجۡرًا حَسَنًا ۚ وَاِنۡ تَتَوَلَّوۡا کَمَا تَوَلَّیۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ یُعَذِّبۡکُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا


কুল লিলমুখাল্লাফীনা মিনাল আ‘রা-বি ছাতুদ‘আওনা ইলা-কাওমিন ঊলী বা’ছিন শাদীদিন তুকা-তিলূনাহুম আও ইউছলিমূনা ফাইন তুতী‘ঊ ইউ’তিকুমুল্লা-হু আজরান হাছানাওঁ ওয়া ইন তাতাওয়াল্লাও কামা-তাওয়াল্লাইতুম মিন কাবলুইউ‘আযযি বকুম ‘আযা-বান আলীমা-।


Mufti Taqi Usmani

Say to those of the Bedouins who remained behind, “You will be called against a people possessed of strong fighting power; you will have to fight them until they submit. So if you obey, Allah will give you a good reward, and if you turn away, as you had turned away earlier, He will punish you with a painful punishment.


মুফতী তাকী উসমানী

যে সকল দেহাতী পেছনে থেকে গিয়েছিল, তাদেরকে বলে দিও, অচিরেই তোমাদেরকে এমন এক সম্প্রদায়ের দিকে (যুদ্ধের জন্য) ডাকা হবে, যারা অত্যন্ত কঠিন লড়াকু হবে। হয় তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে অথবা তারা আনুগত্য স্বীকার করবে। ১৪ তখন তোমরা (জিহাদের এ নির্দেশের সামনে) আনুগত্য করলে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, যেমন পূর্বে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তি দান করবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর, তবে আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যেসব মরুবাসী পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল তাদেরকে বল, ‘তোমরা আহ‚ত হবে এক প্রবল-পরাক্রান্ত জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে; তোমরা এদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না এরা আত্মসমর্পণ করে। তোমরা এই নির্দেশ পালন করলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দান করবেন। আর তোমরা যদি পূর্বানুরূপ পৃষ্ঠ প্রদর্শন কর, তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন।


মাওলানা জহুরুল হক

বেদুইনদের যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিল তাদের বল -- "শীঘ্রই তোমাদের ডাক দেওয়া হবে এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির বিরুদ্ধে, তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আ‌ত্মসমর্পণ করে, তখন যদি তোমরা আজ্ঞাপালন কর, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের প্রদান করবেন এক উত্তম প্রতিদান। কিন্তু যদি তোমরা ফিরে যাও যেমন আগের দিনে তোমরা ফিরে যেতে, তাহলে তিনি তোমাদের শায়েস্তা করবেন মর্মন্তুদ শাস্তিতে।


তাফসীরঃ

১৪. যে সকল দেহাতী হুদায়বিয়ার সফরে শরীক হয়নি, তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তোমাদের জন্য খায়বারে অভিযানে যোগদানের তো অনুমতি নেই, তবে এর পরে আরেকটা সময় আসছে, যখন তোমাদেরকে এক কঠিন লড়াকু গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য ডাকা হবে। তখন যদি তোমরা সাচ্চা মুমিন হয়ে ধৈর্য-স্থৈর্যের পরিচয় দিতে পার, তবে তোমাদের এখনকার এ গুনাহ ধুয়ে যাবে এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে প্রভূত সওয়াব দান করবেন। এ আয়াতে যে লড়াকু গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে, এর দ্বারা বিশেষ কোন গোষ্ঠীকে বোঝানো উদ্দেশ্য নয়; বরং পরবর্তীকালে মুসলিমগণ যে সকল বড়-বড় শক্তির সাথে মুকাবেলা করেছে এবং তাতে অংশগ্রহণের জন্য দেহাতীদেরকে ডাকা হয়েছে, এ রকম প্রতিটি যুদ্ধই এর অন্তর্ভুক্ত। সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত সিদ্দীকে আকবর ও ফারূকে আযম (রাযি.)-এর যুগে মুসায়লিমা কাযযাব, কায়সার ও কিসরার বিরুদ্ধে যেসব অভিযান পরিচালিত হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণের জন্য দেহাতী লোকদেরকে ডাকা হয়েছিল এবং কোন কোন দেহাতী তাওবা করে তাতে অংশগ্রহণও করেছিল।


১৭


لَیۡسَ عَلَی الۡاَعۡمٰی حَرَجٌ وَّلَا عَلَی الۡاَعۡرَجِ حَرَجٌ وَّلَا عَلَی الۡمَرِیۡضِ حَرَجٌ ؕ  وَمَنۡ یُّطِعِ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ یُدۡخِلۡہُ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۚ  وَمَنۡ یَّتَوَلَّ یُعَذِّبۡہُ عَذَابًا اَلِیۡمًا ٪


লাইছা ‘আলাল ‘আমা-হারাজূওঁ ওয়ালা-‘আলাল আ‘রাজি হারাজূওঁ ওয়ালা-‘আলাল মারীদিহারাজূও ওয়া মাইঁ ইউতি‘ইল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূইউদখিলহু জান্না-তিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহা-রু ওয়া মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লা ইউ’আযযিবহু ‘আযা-বান আলীমা-।


Mufti Taqi Usmani

There is no blame on the blind, nor is there any blame on the lame, nor is there any blame on the sick. Whoever obeys Allah and His Messenger, He will admit him to the gardens beneath which rivers flow. But whoever turns away, He will punish him with a painful punishment.


মুফতী তাকী উসমানী

(যুদ্ধ না করাতে) অন্ধের জন্য কোন গুনাহ নেই, খোঁড়া ব্যক্তির জন্য কোন গুনাহ নেই এবং রুগ্ণ ব্যক্তির জন্যও কোন গুনাহ নেই। যে-কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবহমান থাকবে নহর। আর যে-কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাকে যন্ত্রণাময় শাস্তি দেবেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে যে, ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

অন্ধের জন্যে কোন অপরাধ নেই, খঞ্জের জন্যে কোন অপরাধ নেই এবং পীড়িতের জন্যে কোন অপরাধ নেই; এবং যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে আল্লাহ্ তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত ; কিন্তু যে ব্যক্তি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তিনি তাকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন।


মাওলানা জহুরুল হক

অন্ধের জন্য কোনো অপরাধ নেই, আর খোঁড়ার জন্যেও কোনো অপরাধ নেই, আর রোগীর জন্যেও কোনো দোষ নেই। আর যে কেউ আল্লাহ্‌র ও তাঁর রসূলের আজ্ঞাপালন করে তাদের তিনি প্রবেশ করাবেন বাগানসমূহে যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি, কিন্তু যে কেউ ফিরে যায় তিনি তাকে শায়েস্তা করবেন মর্মন্তুদ শাস্তিতে।


১৮


لَقَدۡ رَضِیَ اللّٰہُ عَنِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اِذۡ یُبَایِعُوۡنَکَ تَحۡتَ الشَّجَرَۃِ فَعَلِمَ مَا فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ فَاَنۡزَلَ السَّکِیۡنَۃَ عَلَیۡہِمۡ وَاَثَابَہُمۡ فَتۡحًا قَرِیۡبًا ۙ


লাকাদ রাদিয়াল্লা-হু ‘আনিল মু’মিনীনা ইযইউবা-ই‘ঊনাকা তাহতাশশাজারাতি ফা‘আলিমা মা-ফী কুলূবিহিম ফাআনঝালাছ ছাকীনাতা ‘আলাইহিম ওয়া আছা-বাহুম ফাতহান কারীবা-।


Mufti Taqi Usmani

Allah was pleased with the believers when they were pledging allegiance with you (by placing their hands in your hands) under the tree, and He knew what was in their hearts, so He sent down tranquility upon them, and rewarded them with a victory, near at hand,


মুফতী তাকী উসমানী

নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের প্রতি খুশী হয়েছেন, যখন তারা গাছের নিচে তোমার কাছে বায়আত গ্রহণ করছিল। তাদের অন্তরে যা-কিছু ছিল সে সম্পর্কেও তিনি অবগত ছিলেন। ১৫ তাই তিনি তাদের উপরে অবতীর্ণ করলেন প্রশান্তি এবং পুরস্কারস্বরূপ তাদেরকে দান করলেন আসন্ন বিজয়। ১৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ তো মু’মিনগণের ওপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বায়‘আত গ্রহণ করল, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন; তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে পুরস্কার দিলেন আসন্ন বিজয়


মাওলানা জহুরুল হক

আল্লাহ্ তো মুমিনদের প্রতি সন্তষ্ট হয়েই ছিলেন যখন তারা গাছতলাতে তোমার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করল, আর তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি জানতেন, সেজন্য তাদের উপরে তিনি প্রশান্তি বর্ষণ করলেন, আর তিনি তাদের পুরস্কার দিয়েছিলেন এক আসন্ন বিজয়, --


তাফসীরঃ

১৫. এ আয়াতের ইশারা বায়আতে রিযওয়ানের প্রতি, যা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ায় অবস্থানকালে সাহাবায়ে কেরাম থেকে গ্রহণ করেছিলেন এবং সূরাটির পরিচিতিতে যা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলছেন, তারা সে বায়আত আন্তরিকভাবে দৃঢ় সংকল্পের সাথে করেছিলেন। তারা মুনাফেকদের মত মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দাতা ছিলেন না।


১৬. ইশারা খায়বার বিজয়ের প্রতি। এর আগে মুসলিমগণ দক্ষিণ ও উত্তর দুই দিক থেকেই আশঙ্কাগ্রস্ত ছিল। দক্ষিণ দিক থেকে ভয় ছিল যে, কুরাইশ কাফেরগণ যে কোনও সময় মদীনায় হামলা চালাতে পারে। হুদায়বিয়ার সন্ধির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সে পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। আর উত্তর দিকে ছিল খায়বারের ইয়াহুদীগণ। তারা সর্বদাই মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনত। আল্লাহ তাআলা বলছেন, হুদায়বিয়ায় মুসলিমগণ আত্মোৎসর্গ ও আনুগত্যের যে জযবা দেখিয়েছে, তার পুরস্কার হিসেবে আমি তাদেরকে খায়বারের বিজয় দান করলাম। এর দ্বারা উত্তর দিক থেকে হামলারও পথ বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে প্রচুর গনীমতের মাল অর্জিত হবে। ফলে আর্থিক দিক থেকে তাদের স্বচ্ছলতা লাভ হবে।


১৯


وَّمَغَانِمَ کَثِیۡرَۃً یَّاۡخُذُوۡنَہَا ؕ وَکَانَ اللّٰہُ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا


ওয়া মাগা-নিমা কাছীরাতাইঁ ইয়া’খুযূনাহা- ওয়া কা-নাল্লা-হু ‘আঝীঝান হাকীমা-।


Mufti Taqi Usmani

and many spoils that they would receive. And Allah is Mighty, Wise.


মুফতী তাকী উসমানী

এবং বিপুল পরিমাণ গনীমতের মালও, যা তারা হস্তগত করবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এবং বিপুল পরিমাণে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা লাভ করবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ও বিপুল পরিমাণ যুদ্ধে লভ্য সম্পদ, যা এরা হস্তগত করবে ; আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।


মাওলানা জহুরুল হক

আর প্রচুর যুদ্ধেলব্ধ সম্পদ, তারা তা হস্তগত করবে। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।


২০


وَعَدَکُمُ اللّٰہُ مَغَانِمَ کَثِیۡرَۃً تَاۡخُذُوۡنَہَا فَعَجَّلَ لَکُمۡ ہٰذِہٖ وَکَفَّ اَیۡدِیَ النَّاسِ عَنۡکُمۡ ۚ  وَلِتَکُوۡنَ اٰیَۃً لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَیَہۡدِیَکُمۡ صِرَاطًا مُّسۡتَقِیۡمًا ۙ


ওয়া ‘আদাকুমুল্লা-হুমাগা-নিমা কাছীরাতান তা’খুযূনাহা-ফা‘আজ্জালা লাকুম হা-যিহী ওয়া কাফফা আইদিয়ান্না-ছি ‘আনকুম ওয়া লিতাকূনা আ-ইয়াতালিললমু’মিনীনা ওয়া ইয়াহদিইয়াকুম সিরা-তাম মুছতাকীমা-।


Mufti Taqi Usmani

Allah had promised you many spoils that you would receive, so He gave these to you sooner, and stopped the hands of the people from (harming) you. And (He did this) so that it becomes a sign for believers, and so that He guides you to the right path.


মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রচুর গনীমতের, যা তোমরা হস্তগত করবে। ১৭ তিনি তোমাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে এই বিজয় দান করেছেন এবং মানুষের হাতকে তোমাদের থেকে নিবারিত করেছেন, ১৮ যাতে এটা মুমিনদের জন্য হয় এক নিদর্শন এবং যাতে তিনি তোমাদেরকে পরিচালিত করেন সরল পথে।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি তোমাদের থেকে শত্রুদের স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে এটা মুমিনদের জন্যে এক নিদর্শন হয় এবং তোমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

আল্লাহ্ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যুদ্ধে লভ্য বিপুল সম্পদের যার অধিকারী হবে তোমরা। তিনি এটা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করেছেন এবং তিনি তোমাদের হতে মানুষের হস্ত নিবারিত করেছেন যেন এটা হয় মু’মিনদের জন্যে এক নিদর্শন এবং আল্লাহ্ তোমাদেরকে পরিচালিত করেন সরল পথে;


মাওলানা জহুরুল হক

আল্লাহ্ তোমাদের জন্য ওয়াদা করছেন প্রচুর যুদ্ধেলব্ধ সম্পদ, তোমরা তা হস্তগত করবে, আর তোমাদের জন্য তিনি ত্বরান্বিত করেছেন এইটি, ফলে লোকেদের হাত তোমাদের থেকে তিনি ঠেকিয়ে রেখেছেন, আর যেন এটি মুমিনদের জন্য একটি নিদর্শন হতে পারে, আর যাতে তিনি তোমাদের পরিচালিত করতে পারেন সহজ-সঠিক পথে, --


তাফসীরঃ

১৭. এর দ্বারা খায়বার ছাড়া অন্যান্য বিজয়সমূহের দিকে ইশারা করা হয়েছে।


১৮. অর্থাৎ এ বিজয়ে খায়বারের ইয়াহুদী ও তাদের মিত্রগণ যে বাধার সৃষ্টি করতে পারত আল্লাহ তাআলা তা ঠেকিয়ে রেখেছেন।


২১


وَّاُخۡرٰی لَمۡ تَقۡدِرُوۡا عَلَیۡہَا قَدۡ اَحَاطَ اللّٰہُ بِہَا ؕ وَکَانَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرًا


ওয়া উখরা-লাম তাকদিরূ‘আলাইহা-কাদ আহা-তাল্লা-হু বিহা- ওয়াকা-নাল্লা-হু ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন কাদীরা-।


Mufti Taqi Usmani

And (there is) another (victory) that has not come within your power as yet, (but) Allah has encompassed it. And Allah is Powerful over every thing.


মুফতী তাকী উসমানী

আছে আরও একটি বিজয়। যাতে তোমরা এখনও পর্যন্ত সক্ষম হওনি, আল্লাহ তা নিজ আয়ত্তাধীন রেখে দিয়েছেন। ১৯ আল্লাহ সর্ববিষয়ে পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আর ও একটি বিজয় রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসেনি, আল্লাহ তা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এবং আরও রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসে নাই, তা তো আল্লাহ্ আয়ত্তে রেখেছেন। আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।


মাওলানা জহুরুল হক

আর অন্যান্য যে গুলোর উপরে তোমরা এখনও কবজা করতে পার নি, আল্লাহ্ এগুলোকে ঘিরে রেখেছেন। আর আল্লাহ্ সব- কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান ।


তাফসীরঃ

১৯. এর দ্বারা মক্কা বিজয় এবং তার পরবর্তী হুনায়ন ও অন্যান্য স্থানের বিজয়সমূহ বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা জ্ঞাত রয়েছেন যে, মুসলিমগণ যদিও এখন মক্কা মুকাররমা জয় করার মত অবস্থায় নেই, কিন্তু সেদিন দূরে নয়, যখন কুরাইশ কাফেরগণ নিজেরাই হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে মুসলিমদের জন্য মক্কা বিজয়ের পথ খুলে দেবে। তারপর হুনায়ন প্রভৃতিও জয় হয়ে যাবে।


২২


وَلَوۡ قٰتَلَکُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوَلَّوُا الۡاَدۡبَارَ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡنَ وَلِیًّا وَّلَا نَصِیۡرًا


ওয়া লাও কা-তালাকুমুল্লাযীনা কাফারূলাওয়াল্লাউল আদবা-রা ছু ম্মা লা-ইয়াজিদূনা ওয়ালিয়াওঁ ওয়ালা-নাসীরা-।


Mufti Taqi Usmani

Had the disbelievers fought you, they would have certainly turned their backs, then they would have found neither a supporter nor a helper-


মুফতী তাকী উসমানী

কাফেরগণ যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত, তবে অবশ্যই তারা পেছন ফিরে পালাত। অতঃপর তারা কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী পেত না ২০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

যদি কাফেররা তোমাদের মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত। তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

কাফিররা তোমাদের মুকাবিলা করলে এরা অবশ্যই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করত, তখন এরা কোন অভিভাবক ও সাহায্য-কারী পেত না।


মাওলানা জহুরুল হক

আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যদিও বা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তবে নিশ্চয় তারা পিঠ ফেরাবে, তারপরে তারা পাবে না কোনো বন্ধুবান্ধব, আর না কোনো সাহায্যকারী।


তাফসীরঃ

২০. অর্থাৎ হুদায়বিয়ায় যে কাফেরদের সাথে সন্ধি স্থাপিত করানো হয়েছে, তার কারণ মুসলিমদের দুর্বলতা নয়। বিষয়টা এমন নয় যে, যুদ্ধ হলে মুসলিমদেরকে পরাজয় বরণ করতে হত। বরং যুদ্ধ হলে কাফেরগণই পরাস্ত হত এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাত। আসল ব্যাপার হচ্ছে, সন্ধির ভেতর বহুবিধ মঙ্গল নিহিত ছিল, যা আল্লাহ তাআলা জানতেন আর সে কারণেই তিনি যুদ্ধ আটকে দিয়ে সন্ধি স্থাপিত করিয়েছেন। সামনে ২৫ নং আয়াতে সন্ধি স্থাপনের একটা ফায়দা বর্ণিত হবে।


২৩


سُنَّۃَ اللّٰہِ الَّتِیۡ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلُ ۚۖ وَلَنۡ تَجِدَ لِسُنَّۃِ اللّٰہِ تَبۡدِیۡلًا


ছুন্নাতাল্লা-হিল্লাতী কাদ খালাত মিন কাবলু ওয়া লান তাজিদা লিছুন্নাতিল্লা-হি তাবদীলা-।


Mufti Taqi Usmani

- according to the consistent practice of Allah that went on since before, and you will never find a change in Allah’s consistent practice.


মুফতী তাকী উসমানী

এটাই আল্লাহর নিয়ম, যা পূর্ব হতে চলে আসছে। তুমি আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না। ২১


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এটাই আল্লাহ্ র বিধান-প্রাচীন কাল হতে চলে আসছে, তুমি আল্লাহ্ র বিধানে কোন পরিবর্তন পাবে না।


মাওলানা জহুরুল হক

আল্লাহ্‌র নিয়ম-নীতি যা ইতিপূর্বে গত হয়ে গেছে, আর আল্লাহ্‌র নিয়ম-নীতিতে তোমরা কখনো কোনো পরিবর্তন পাবে না।


তাফসীরঃ

২১. প্রাচীন কাল থেকে আল্লাহ তাআলার এই নিয়ম চলে আসছে যে, যারা সত্যের উপর থাকে এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সাহায্যপ্রাপ্তির শর্তাবলী পূরণ করে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বাতিলপন্থীদের উপর বিজয় দান করেন। কোথাও যদি বাতিলপন্থীদেরকে বিজয়ী হতে দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে, সত্যপন্থীদের বিশেষ কোন ত্রুটি ছিল, যার পরিণামে তারা আল্লাহ তাআলার সাহায্য থেকে বঞ্চিত থেকেছে।


২৪


وَہُوَ الَّذِیۡ کَفَّ اَیۡدِیَہُمۡ عَنۡکُمۡ وَاَیۡدِیَکُمۡ عَنۡہُمۡ بِبَطۡنِ مَکَّۃَ مِنۡۢ بَعۡدِ اَنۡ اَظۡفَرَکُمۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ وَکَانَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرًا


ওয়াহুওয়াল্লাযী কাফফা আইদিয়াহুম ‘আনকুম ওয়াআইদিয়াকুম ‘আনহুম ব্বিাতনি মাক্কাতা মিম বা‘দি আন আজফারাকুম ‘আলাইহিম ওয়া কা-নাল্লা-হু বিমা-তা‘মালূনা বাসীরা-।


Mufti Taqi Usmani

And He is the One who restrained their hands from you and your hands from them in the valley of Makkah after He had let you prevail over them, and Allah is watchful over what you do.


মুফতী তাকী উসমানী

আল্লাহই মক্কা উপত্যকায় তাদের হাতকে তোমাদের পর্যন্ত পৌঁছা হতে এবং তোমাদের হাতকে তাদের পর্যন্ত পৌঁছা হতে নিবৃত্ত রেখেছেন, তাদের উপর তোমাদেরকে ক্ষমতা দান করার পর। ২২ তোমরা যা-কিছু করছিলে আল্লাহ তা দেখছিলেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনি মক্কা উপত্যকায় এদের হাত তোমাদের হতে এবং তোমাদের হাত এদের হতে নিবারিত করেছেন, এদের ওপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ্ তা দেখেন।


মাওলানা জহুরুল হক

আর তিনিই সেইজন যিনি মক্কা উপত্যকায় তাদের হাতগুলো তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাতগুলো তাদের থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, তাদের উপরে তিনি তোমাদের বিজয় দান করার পরে। আর তোমরা যা করছ আল্লাহ্ সে-সবের সম্যক দ্রষ্টা।

(ads1)

(getButton) #text=(আল কোরআন বাংলা অনুবাদ সহ এক সাথে ) #icon=(link) #color=(#f50707)

তাফসীরঃ

২২. হযরত উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন মক্কা মুকাররমায় গিয়ে কুরাইশদেরকে সন্ধির প্রস্তাব দিচ্ছিলেন, তখন মক্কা মুকাররমার কাফেরগণ একটি দূরভিসন্ধি এঁটেছিল। তারা গোপনে তাদের পঞ্চাশজন লোককে এই মতলবে পাঠিয়েছিল যে, তারা গুপ্ত আক্রমণ চালিয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শহীদ করে ফেলবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের সে দূরভিসন্ধি নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তিনি সে দলটিকে মুসলিমদের হাতে গ্রেফতার করিয়ে দেন। কুরাইশরা যখন তাদের গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার খবর শুনল, তারা হযরত উসমান (রাযি.) ও তাঁর সঙ্গীদেরকে মক্কায় আটকে ফেলল। মুসলিমগণ তখন সেই পঞ্চাশজনকে হত্যা করলে পাল্টা জবাবে কুরাইশগণও হযরত উসমান (রাযি.) ও তার সঙ্গীদেরকে হত্যা করত। আর তার ফল হত অনিবার্য যুদ্ধ। সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের মনোভাবকে বন্দী হত্যা না করার অনুকূল করে দিলেন এবং তাদের হাতকে বন্দীদের হত্যা করা হতে নিবৃত্ত রাখলেন। অথচ বন্দীগণ তাদের আয়ত্তাধীন ছিল এবং মুসলিমগণ তাদেরকে হত্যা করতে পরিপূর্ণ সক্ষম ছিল। অপর দিকে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করা হতে কুরাইশদের হাতকে আল্লাহ তাআলা এভাবে রুখে দিলেন যে, তিনি তাদের অন্তরে মুসলিমদের প্রতি ভীতি সঞ্চার করলেন। ফলে তারা যুদ্ধের পরিবর্তে সন্ধিতেই রাজি হয়ে গেল, অথচ তারা হযরত উসমান (রাযি.)কে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল যে, কিছুতেই সন্ধি করবে না।


২৫


ہُمُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَصَدُّوۡکُمۡ عَنِ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ وَالۡہَدۡیَ مَعۡکُوۡفًا اَنۡ یَّبۡلُغَ مَحِلَّہٗ ؕ وَلَوۡلَا رِجَالٌ مُّؤۡمِنُوۡنَ وَنِسَآءٌ مُّؤۡمِنٰتٌ لَّمۡ تَعۡلَمُوۡہُمۡ اَنۡ تَطَـُٔوۡہُمۡ فَتُصِیۡبَکُمۡ مِّنۡہُمۡ مَّعَرَّۃٌۢ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ۚ لِیُدۡخِلَ اللّٰہُ فِیۡ رَحۡمَتِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ لَوۡ تَزَیَّلُوۡا لَعَذَّبۡنَا الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡہُمۡ عَذَابًا اَلِیۡمًا


হুমুল্লাযীনা কাফারূওয়া সাদ্দূকুম ‘আনিল মাছজিদিল হারা-মি ওয়াল হাদইয়া মা‘কূফান আইঁ ইয়াবলুগা মাহিল্লাহূ ওয়ালাও লা-রিজা-লুম মু’মিনূনা ওয়া নিছাউম মু’মিনা-তুল্লাম তা‘লামূহুম আন তাতাঊহুম ফাতুসীবাকুম মিনহুম মা‘আররাতুম বিগাইরি ‘ইলমিন লিইউদখিলাল্লা-হু ফী রাহমাতিহী মাইঁ ইয়াশাউ লাও তাঝাইয়ালূলা‘আযযাবনাল্লাযীনা কাফারূমিনহুম ‘আযা-বান আলীমা-।


Mufti Taqi Usmani

They are those who disbelieved and prevented you from the Sacred Mosque (Al-Masjid-ul-Harām ), and (prevented) the sacrificial animals that were detained from reaching their due place. And (Allah would have allowed you to fight,) had there not been believing men and believing women whom you did not know that you might have trampled them, and thus a painful situation might have arisen for you because of them unknowingly; (This situation was avoided) so that Allah may admit to His mercy whom He wills.And if they (the believing men and women) had moved (from Makkah), We would surely have punished those of them who disbelieved with a painful punishment.


মুফতী তাকী উসমানী

এরাই তো তারা, যারা কুফর অবলম্বন করেছে, তোমাদেরকে মসজিদুল হারাম থেকে নিবৃত্ত করেছে এবং আবদ্ধ অবস্থায় দাঁড়ানো কুরবানীর পশুগুলিকেও যথাস্থানে পৌঁছতে বাধা দিয়েছে। ২৩ যদি (মক্কায়) কিছু মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী না থাকত, যাদের সম্পর্কে তোমরা জান না যে, তোমরা তাদেরকে পিষে ফেলতে, ফলে তাদের কারণে তোমরা অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে ২৪ (তবে আমি ওই কাফেরদের সাথে সন্ধির পরিবর্তে তোমাদেরকে যুদ্ধে লিপ্ত করতাম। কিন্তু আমি যুদ্ধ রোধ করেছি) এজন্য যে, আল্লাহ যাকে চান নিজ রহমতের ভেতর দাখিল করেন। ২৫ (অবশ্য) সেই মুসলিমগণ যদি সেখান থেকে সরে যেত তবে আমি তাদের (অর্থাৎ মক্কাবাসীদের) মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তি দিতাম। ২৬


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তারাই তো কুফরী করেছে এবং বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌছতে। যদি মক্কায় কিছুসংখ্যক ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী না থাকত, যাদেরকে তোমরা জানতে না। অর্থাৎ তাদের পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, অতঃপর তাদের কারণে তোমরা অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে, তবে সব কিছু চুকিয়ে দেয়া হত; কিন্তু এ কারণে চুকানো হয়নি, যাতে আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করে নেন। যদি তারা সরে যেত, তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শস্তি দিতাম।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

এরাই তো কুফরী করেছিল এবং নিবৃত্ত করেছিল তোমাদেরকে মসজিদুল-হারাম হতে ও বাধা দিয়েছিল কুরবানীর জন্যে আবদ্ধ পশুগুলিকে যথাস্থানে পৌঁছতে। তোমাদেরকে যুদ্ধের আদেশ দেওয়া হত যদি না থাকত এমন কতক মু’মিন নর ও নারী যাদেরকে তোমরা জান না, তোমরা তাদেরকে পদদলিত করতে অজ্ঞাতসারে, ফলে তাদের কারণে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে। যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয় নাই এজন্যে যে, তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ অনুগ্রহ দান করবেন। যদি এরা পৃথক হত, আমি এদের মধ্যে কাফিরদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিতাম।


মাওলানা জহুরুল হক

এরাই তারা যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছিল এবং তোমাদের বাধা দিয়েছিল পবিত্র মসজিদ থেকে, আর উৎসর্গীকৃত পশুদের বাধা দিয়েছিল তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে। আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা যদি না থাকতো তাহলে তাদের তোমরা না-জেনে তাদের দলিত করতে, ফলে তাদের কারণে অজানিতভাবে এক নিন্দনীয় অপরাধ তোমাদের পাকড়াতো, এ-জন্য যে আল্লাহ্ যেন যাকে ইচ্ছা করেন তাঁর করুণার মধ্যে দাখিল করতে পারেন। তারা যদি আলাদা হয়ে থাকত তাহলে তাদের মধ্যের যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের আমরা নিশ্চয় শাস্তি দিতাম মর্মন্তুদ শাস্তিতে।


তাফসীরঃ

২৩. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম যেহেতু উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন, তাই কুরবানী করার উদ্দেশ্যে সাথে পশুও নিয়েছিলেন, যেগুলোকে হরমে পৌঁছে কুরবানী করা বিধেয় ছিল। কাফেরদের বাধার কারণে সেগুলোকে হুদায়বিয়াতেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যে স্থানে নিয়ে কুরবানী করার কথা, সেখানে সেগুলোকে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।


২৪. মুসলিমদের যে সকল হিত বিবেচনায় তখন যুদ্ধকে সমীচীন মনে করা হয়নি, আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে তার একটা বর্ণনা করেছেন। বলা হচ্ছে যে, তখন মক্কা মুকাররমায় বহু মুসলিম অবস্থান করছিল। সবশেষে হযরত উসমান (রাযি.) ও তাঁর সঙ্গীগণও সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ হলে তো পুরোপুরিভাবেই হত এবং সেই ঘোরতর লড়াইয়ের ভেতর মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত মুসলিমদের খোদ মুসলিমদেরই হাতে তাদের অজ্ঞাতসারে কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারত, যদ্দরুণ পরবর্তীতে খোদ মুসলিমদেরই অনুশোচনা করতে হত। মুসলিমদের যেন এহেন ক্ষতির শিকার হতে না হয় এবং সেই ক্ষতির জন্য পরবর্তীতে গ্লানিবোধ করতে না হয়, তাই আল্লাহ তাআলা যুদ্ধ রুখে দেন ও সন্ধি স্থাপিত করেন।


২৫. আল্লাহ তাআলা মক্কা মুকাররমার মুসলিমদের প্রতি রহমত করেন যে, তাদেরকে হতাহতের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করলেন আর মদীনা মুনাওয়ারার মুসলিমদের প্রতিও রহমত করেন যে, তাদের হাতকে তাদের দীনী ভাইদের রক্তে রঞ্জিত হওয়া ও পরবর্তীতে সেজন্যে অনুতপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত রাখলেন।


২৬. অর্থাৎ মুক্কা মুকাররমায় যে সকল মুসলিম কাফেরদের হাতে জুলুম-নির্যাতন ভোগ করছিল, তারা যদি সেখান থেকে অন্য কোথাও চলে যেত, তবে আমি কাফেরদের সাথে মুসলিমদেরকে যুদ্ধে লিপ্ত করতাম। ফলে মুসলিমদের হাতে তাদের শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হত।


২৬


اِذۡ جَعَلَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ قُلُوۡبِہِمُ الۡحَمِیَّۃَ حَمِیَّۃَ الۡجَاہِلِیَّۃِ فَاَنۡزَلَ اللّٰہُ سَکِیۡنَتَہٗ عَلٰی رَسُوۡلِہٖ وَعَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَاَلۡزَمَہُمۡ کَلِمَۃَ التَّقۡوٰی وَکَانُوۡۤا اَحَقَّ بِہَا وَاَہۡلَہَا ؕ  وَکَانَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا ٪


ইযজা‘আলাল্লাযীনা কাফারূফী কুলূবিহিমুল হামিইইয়াতা হামিইয়াতালজা-হিলিইইয়াতি ফাআনঝালাল্লা-হু ছাকীনাতাহূ‘আলা-রাছূলিহী ওয়া আলাল মু’মিনীনা ওয়া আলঝামাহুম কালিমাতাততাকওয়া-ওয়া কা-নূআহাক্কা বিহা-ওয়া আহ লাহা- ওয়া কা-নাল্লা-হু বিকুল্লি শাইয়িন ‘আলীমা-।


Mufti Taqi Usmani

When the disbelievers developed in their hearts indignation, the indignation of ignorance; then Allah sent down tranquility from Himself upon His Messenger and upon the believers, and made them stick to the word of piety, and they were very much entitled to it and competent for it. And Allah is All-Knowing about every thing.


মুফতী তাকী উসমানী

কাফেরগণ যখন তাদের অন্তরে অহমিকাকে স্থান দিল যা ছিল জাহেলী যুগের অহমিকা, তখন আল্লাহ তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের উপর নিজ প্রশান্তি বর্ষণ করলেন ২৭ এবং তাদেরকে তাকওয়ার বিষয়ে স্থিত করে রাখলেন ২৮ আর তারা তো এরই বেশি হকদার ও এর উপযুক্ত ছিল। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

যখন কাফিররা তাদের অন্তরে পোষণ করত গোত্রীয় অহমিকা-অজ্ঞতার যুগের অহমিকা, তখন আল্লাহ্ তাঁর রাসূল ও মু’মিনদেরকে স্বীয় প্রশান্তি দান করলেন ; আর তাদেরকে তাক্ওয়ার বাক্যে সুদৃঢ় করলেন, এবং তারাই ছিল এটার অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ ্ সমস্ত বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন।


মাওলানা জহুরুল হক

যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যখন তাদের অন্তরে গোঁ ধরেছিল -- অজ্ঞতার যুগের গোঁয়ার্তুমি -- তখন আল্লাহ্ তাঁর প্রশান্তি বর্ষণ করেছিলেন তাঁর রসূলের উপরে ও মুমিনদের উপরে, আর ধর্মনিষ্ঠার নীতিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখলেন, বস্তুত তারা এর জন্য নায্য দাবিদার ছিল ও এর উপযুক্ত ছিল, আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।


তাফসীরঃ

২৭. কুরাইশ পক্ষ যদিও শেষ পর্যন্ত সন্ধি স্থাপনে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু যখন সন্ধিপত্র লেখার সময় আসল, তখন তারা কেবল জাহেলী অহমিকা ও আত্মম্ভরিতার কারণে এমন কিছু বিষয়ে বাড়াবাড়ি করছিল, যা সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে চরম অপ্রীতিকর ছিল। যেমন সন্ধিপত্রের শুরুতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামبِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ লিখিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তাতে আপত্তি করল এবং গোঁ ধরে বসল যে, بِاسْمِكَ اللّٰهُمَّ লিখতে হবে। এমনিভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের সাথে رسول الله লেখা হয়েছিল। তারা তা মোছানোর জন্য জোরাজুরি করল। এসব কারণে সাহাবায়ে কেরাম খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু সন্ধি স্থাপিত করাই যেহেতু ছিল আল্লাহ তাআলার অভিপ্রেত, তাই আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে বাড়তি সহিষ্ণুতা সঞ্চার করলেন। সেই সহিষ্ণুতাকেই এখানে ‘সাকীনা’ (প্রশান্তি) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।


২৮. ‘তাকওয়ার বিষয়’ ছিল এটাই যে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করা হবে, তাতে আনুগত্যের বিষয়টি যতই অপ্রীতিকর হোক না কেন। সাহাবায়ে কেরাম তাই করেছিলেন।


২৭


لَقَدۡ صَدَقَ اللّٰہُ رَسُوۡلَہُ الرُّءۡیَا بِالۡحَقِّ ۚ لَتَدۡخُلُنَّ الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ اٰمِنِیۡنَ ۙ مُحَلِّقِیۡنَ رُءُوۡسَکُمۡ وَمُقَصِّرِیۡنَ ۙ لَا تَخَافُوۡنَ ؕ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُوۡا فَجَعَلَ مِنۡ دُوۡنِ ذٰلِکَ فَتۡحًا قَرِیۡبًا


লাকাদ সাদাকাল্লা-হু রাছূলাহুর রু’ইয়া-বিলহাক্কি লাতাদখুলুন্নাল মাছজিদাল হারা-মা ইন শাআল্লা-হু আ-মিনীনা মুহালিলকীনা রুঊ’ছাকুম ওয়া মুকাসসিরীনা লা-তাখাফূনা ফা‘আলিমা মা-লাম তা‘লামূফাজা‘আলা মিন দূ নি যা-লিকা ফাতহান কারীবা-।


Mufti Taqi Usmani

Indeed, Allah has made true to His Messenger the dream (shown) with truth: You will definitely enter the Sacred Mosque inshā’allāh (if Allah wills,) peacefully, with your heads shaved, and your hairs cut short, having no fear. So He knew what you did not know, and He assigned before that a victory, near at hand.


মুফতী তাকী উসমানী

বস্তুত আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যা ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত। আল্লাহ চান তো তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে নিরাপদে প্রবেশ করবে, এমন অবস্থায় যে, তোমরা (কিছু সংখ্যক) মাথা কামানো থাকবে এবং (কিছু সংখ্যক) থাকবে চুল ছাঁটা। ২৯ তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না, আল্লাহ এমন সব বিষয় জানেন, যা তোমরা জান না। সুতরাং সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগে স্থির করে দিলেন এক আসন্ন বিজয়। ৩০


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন, আল্লাহ্ র ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মস্জিদুল-হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে-তোমাদের কেউ কেউ মস্তক মুণ্ডিত করবে আর কেউ কেউ কেশ কর্তন করবে। তোমাদের কোন ভয় থাকবে না। আল্লাহ্ জানেন তোমরা যা জান না। এটা ছাড়াও তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন এক সদ্য বিজয়।


মাওলানা জহুরুল হক

আল্লাহ্ আলবৎ তাঁর রসূলের জন্য দৈবদর্শনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করেছেন। তোমরা সুনিশ্চিত পবিত্র মসজিদে ইন-শা আল্লাহ্ প্রবেশ করবে নিরাপত্তার সাথে, তোমাদের মস্তক মুন্ডন ক’রে ও চুল কেটে, তোমরা ভয় না ক’রে। কিন্তু তিনি জানেন যা তোমরা জান না, সেজন্য এইটি ছাড়াও তিনি সংঘটিত করেছেন এক আসন্ন বিজয়।


তাফসীরঃ

২৯. সূরার পরিচিতিতে বলা হয়েছে যে, হুদায়বিয়ার সফরের আগে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বপ্নে দেখেছিলেন, তিনি উমরার উদ্দেশ্যে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছেন। এ স্বপ্নের পরেই তিনি সমস্ত সাহাবীকে উমরার জন্য রওয়ানা হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু হুদায়বিয়ায় পৌঁছার পর যখন সন্ধি স্থাপিত হল এবং উমরা আদায় ছাড়াই সকলকে ইহরাম খুলতে হল, তখন কারও কারও মনে খটকা লাগল যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্বপ্ন তো ওহী হয়ে থাকে, কিন্তু এখন উমরা আদায় ব্যতিরেকে ফিরে যাওয়ার সাথে সেই স্বপ্নের মিল কোথায়? এ আয়াতে তার জবাব দেওয়া হয়েছে যে, সে স্বপ্ন নিঃসন্দেহে সত্য ছিল। কিন্তু তাতে মসজিদুল হারামে প্রবেশের কোন সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি। এখনও সে স্বপ্ন সত্যই আছে। এ সফরে যদিও উমরা পালন করা যায়নি, কিন্তু ইনশাআল্লাহু তাআলা সে স্বপ্ন পূরণ হবেই। সুতরাং পরবর্তী বছর তা পূরণ হয়েছিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ নির্বিঘ্নে, নিরাপদে উমরা পালন করেছিলেন।


৩০. ইশারা খায়বার বিজয়ের প্রতি। ১৮ নং আয়াত ও তার টীকায় তা বর্ণিত হয়েছে।


২৮


ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَہٗ بِالۡہُدٰی وَدِیۡنِ الۡحَقِّ لِیُظۡہِرَہٗ عَلَی الدِّیۡنِ کُلِّہٖ ؕ  وَکَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا ؕ


হুওল্লাযীআরছালা রাছূলাহূবিলহুদা-ওয়া দীনিল হাক্কিলিইউজহিরাহূ‘আলাদ্দীনি কুল্লিহী ওয়া কাফা-বিল্লা-হি শাহীদা-।


Mufti Taqi Usmani

He is the One who has sent His Messenger with Guidance and the religion of truth, so that He makes it prevail over all religions. And enough is Allah for being a witness (to His promise).


মুফতী তাকী উসমানী

তিনিই নিজ রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন, অন্য সমস্ত দীনের উপর তাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর (এর) সাক্ষ্য দানের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

তিনিই তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, অপর সমস্ত দীনের ওপর এটাকে জয়যুক্ত করার জন্যে। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।


মাওলানা জহুরুল হক

তিনিই সেইজন যিনি তাঁর রসূলকে পাঠিয়েছেন পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মের সাথে যেন তিনি একে প্রাধান্য দিতে পারেন ধর্মের -- তাদের সবক’টির উপরে। আর সাক্ষীরূপে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট।


২৯


مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ  وَالَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانًا ۫  سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ  ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ  وَمَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ  کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ  وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّاَجۡرًا عَظِیۡمًا ٪


মুহাম্মাদুর রাছূলুল্লা-হি ওয়াল্লাযীনা মা‘আহূআশিদ্দাউ ‘আলাল কুফফা-রি রুহামাউ বাইনাহুম তারা-হুম রুক্কা‘আন ছুজ্জাদাইঁ ইয়াবতাগূনা ফাদলাম মিনাল্লা-হি ওয়া রিদওয়ানান ছীমা-হুম ফী উজূহিহিম মিন আছারিছছু জূদ যা-লিকা মাছালুহুম ফিততাওরা-তি ওয়া মাছালুহুম ফিল ইনজিলি কাঝার ‘ইন আখরাজা শাতআহূ ফাআ-ঝারাহূফাছতাগলাজা ফাছতাওয়া-‘আলা-ছূকিহী ইউ’জিবুঝঝুররা-‘আ লিইয়াগীজা বিহিমুল কুফফা-রা ওয়া ‘আদাল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানূওয়া ‘আমিলুসসা-লিহা-তি মিনহুম মাগফিরাতাওঁ ওয়া আজরান ‘আজীমা-।


Mufti Taqi Usmani

MuaHmmad is the messenger of Allah, and those who are with him are hard on the disbelievers, compassionate among themselves; you will see them bowing down in Rukū‘, prostrating themselves in Sajdah, seeking grace from Allah, and (His) good pleasure; their distinguishing feature is on their faces from the effect of Sajdah (prostration). This is their description in Torah; and their description in Injīl is: like a sown crop that brings forth its shoot, then makes it strong, then it grows thick and stands straight on its stem, looking good to the farmers, so that He may enrage the disbelievers through them. Allah has promised forgiveness and a huge reward to those of them who believe and do good deeds.


মুফতী তাকী উসমানী

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। ৩১ তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং আপসের মধ্যে একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। তুমি তাদেরকে দেখবে (কখনও) রুকুতে, (কখনও) সিজদায়, আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি সন্ধানে রত। তাদের আলামত তাদের চেহারায় পরিস্ফুট, সিজদার ফলে। এই হল তাদের সেই গুণাবলী, যা তাওরাতে বর্ণিত আছে। ৩২ আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত এই, যেন এক শস্যক্ষেত্র, যা তার কুঁড়ি বের করল, তারপর তাকে শক্ত করল। তারপর তা পুষ্ট হল। তারপর তা নিজ কাণ্ডের উপর এভাবে সোজা দাঁড়িয়ে গেল যে, তা কৃষকদেরকে মুগ্ধ করে ফেলে। ৩৩ এটা এইজন্য যে, আল্লাহ তাদের (উন্নতি) দ্বারা কাফেরদের অন্তর্দাহ সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে মাগফিরাত ও মহা পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


মাওলানা মুহিউদ্দিন খান

মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।


ইসলামিক ফাউন্ডেশন

মুহাম্মদ আল্লাহ্ র রাসূল ; তাঁর সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভ‚তিশীল ; আল্লাহ্ র অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুক‚‘ ও সিজ্দায় অবনত দেখবে। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজ্দার প্রভাবে পরিস্ফুটিত থাকবে ; তওরাতে তাদের বর্ণনা এইরূপ এবং ইঞ্জীলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয়, এরপর এটা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের ওপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্যে আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ্ মু’মিনদের সমৃদ্ধি দিয়ে কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।


মাওলানা জহুরুল হক

মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রসূল, আর যারা তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তারা অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে কোমলভাবাপন্ন, তুমি তাদের দেখতে পাবে তারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে করুণাভান্ডার ও সন্তষ্টি কামনা ক’রে রুকু করছে সিজদা করছে। তাদের পরিচায়ক হচ্ছে তাদের মুখমন্ডলের উপরে সিজদার ছাপের মধ্যে। এমনটাই তাদের উদাহরণ তওরাতে এবং তাদের উদাহরণ ইঞ্জিলেও, -- বপন করা শস্যবীজের মতো যা তার অঙ্কুর উদগত করে, তারপর তাকে শক্ত করে, তারপর তা পুষ্ট হয়, তারপর তা খাড়া হয় তার কান্ডের উপরে, -- বপনকারীদের আনন্দবর্ধন করে, তিনি যেন তাদের কারণে অবিশ্বাসীদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে আল্লাহ্ তাদের মধ্যের লোকজনকে ওয়াদা করেছেন পরিত্রাণ ও এক মহান প্রতিদান।


তাফসীরঃ

৩১. পূর্বে ২৭ নং টীকায় বলা হয়েছে যে, সন্ধিপত্র লিপিবদ্ধ করার সময় কাফেরগণ আপত্তি করেছিল যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লেখা যাবে না। শেষ পর্যন্ত লিখতে হয়েছিল ‘মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলে ইশারা করেছেন যে, কাফেরগণ স্বীকার করুক আর নাই করুক মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূলই। এটা বাস্তব সত্য। আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এ সত্যের উপর কিয়ামত পর্যন্তের জন্য সীলমোহর করে দিয়েছেন।


৩২. যদিও তাওরাতে অনেক পরিবর্তন-পরিবর্ধন ঘটেছে, কিন্তু তারপরও তাতে এখনও পর্যন্ত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের এসব গুণের উল্লেখ পাওয়া যায়। বাইবেলের যেসব পুস্তককে ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় ‘তাওরাত’ বলে স্বীকার করে এবং উভয় ধর্মেই যা ‘তাওরাত’ নামে অভিহিত, তার মধ্যে একখানি পুস্তকের নাম হল ‘দ্বিতীয় বিবরণ’। এ পুস্তকের (৩৩:২-৩) একটি স্তবক সম্পর্কে বেশ জোর দিয়েই বলা যায় যে, কুরআন মাজীদের ইশারা সেদিকেই। তাতে আছে, ‘প্রভু সিনাই থেকে আসলেন সেয়ীর থেকে তাদের উপর আলো দিলেন এবং পারন পাহাড় থেকে তাঁর আলো ছড়িয়ে পড়ল। তিনি দশ হাজার ভক্ত পরিবৃত হয়ে আসলেন। তার ডান হাতে তাদের জন্য রয়েছে আগুন ভরা আইন। তিনি নিঃসন্দেহে জাতিসমূহকে ভালোবাসেন। তার পবিত্র লোকসমূহ তার অধীন এবং তারা সবাই তাঁর পায়ে নত হয়ে আছে। তারই কাছে তারা হুকুম পায়।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৩:২-৩) প্রকাশ থাকে যে, এটা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের শেষ বক্তৃতা। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলার ওহী সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে সিনাই পাহাড়ে। এ ওহী দ্বারা তাওরাত বোঝানো হয়েছে। তারপর অবতীর্ণ হবে সেয়ীর পাহাড়ে। এটা ইনজিলের প্রতি ইঙ্গিত। কেননা সেয়ীর ছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের প্রচার কেন্দ্র। বর্তমানে এর নাম ‘জাবাল আল-খালীল’। তারপর বলা হয়েছে, তৃতীয় ওহী অবতীর্ণ হবে পারন পর্বতে। এর দ্বারা কুরআন মাজীদ বোঝানো হয়েছে। কেননা পারন বলে হেরা পাহাড়কে। এর গুহায়ই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সর্বপ্রথম ওহী নাযিল হয়েছিল। মক্কা বিজয় কালে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী সংখ্যা ছিল বার হাজার। সুতরাং ‘তিনি দশ হাজার ভক্ত-পরিবৃত্ত হয়ে আসলেন’-এর দ্বারা সাহাবায়ে কেরামের দিকেই ইশারা করা হয়েছে। (উল্লেখ্য তাওরাতের প্রাচীন মুদ্রণসমূহে সংখ্যা বলা হয়েছে দশ হাজার, কিন্তু বর্তমানে কোন কোন মুদ্রণে তা পরিবর্তন করে ‘লাখণ্ডলাখ’ শব্দ লেখা হয়েছে।) কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে, ‘সাহাবীগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর’। দ্বিতীয় বিবরণে বলা হয়েছে, ‘তার হাতে তাদের জন্য রয়েছে আগুন ভরা আইন’। কুরআন মাজীদে আছে, ‘তারা আপসের ভেতর একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র।’ আর দ্বিতীয় বিবরণে বলা হয়েছে, ‘তিনি নিঃসন্দেহে জাতিসমূহকে ভালোবাসেন।’ সুতরাং এ ধারণা মোটেই অবান্তর নয় যে, কুরআন মাজীদের ইশারা তাওরাতের উপরিউক্ত স্তবকটিরই দিকে, যা পরিবর্তন হতে হতে ‘দ্বিতীয় বিবরণ’-এর বর্তমান রূপে পৌঁছেছে।


৩৩. মার্কের ইনজিলে এই একই উপমা এভাবে প্রদত্ত হয়েছে যে, প্রভুর রাজত্ব এ রকম, একজন লোক জমিতে বীজ বপণ করল। তারপর সে রাতে ঘুমিয়ে ও দিনে জেগে থেকে সময় কাটাল। ইতোমধ্যে সেই বীজ হতে চারা গজিয়ে বড় হল। কিন্তু কিভাবে হল তা সে জানল না। জমি নিজে নিজেই ফল জন্মাল প্রথমে চারা, পরে শীষ এবং শীষের মাথায় পরিপূর্ণ শস্যের দানা। দানা পাকলে পর সে কাস্তে লাগাল। কারণ ফসল কাটার সময় হয়েছে (মার্ক ৪:২৬-২৯)। অনুরূপ উপমা লুক (১৩-১৮, ১৯) ও মার্ক (১৩-৩১)-এর ইনজিলেও আছে।

Post a Comment

0 Comments